স্বামী-স্ত্রী সহবাস করাও হারাম! ।। বিয়ের মাধ্যমে বেগানা নারী-পুরুষ একে অপরের জন্য হালাল হয়। তাদের সহবাস ও বংশ বৃদ্ধিকে আল্লাহ তাআলা সওয়াবের কাজে পরিণত করেছেন। তবে এমন কিছু সময় ও পন্থা রয়েছে, যখন স্ত্রীর সঙ্গেও যৌন সম্ভোগে লিপ্ত হওয়া হারাম। নিচে অবস্থা ও পন্থাগুলো তুলে ধরা হলো।
১) হায়েজ-নেফাস অবস্থায়
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡمَحِیۡضِ ؕ قُلۡ هُوَ اَذًی ۙ فَاعۡتَزِلُوا النِّسَآءَ فِی الۡمَحِیۡضِ ۙ وَ لَا تَقۡرَبُوۡهُنَّ حَتّٰی یَطۡهُرۡنَ ۚ فَاِذَا تَطَهَّرۡنَ فَاۡتُوۡهُنَّ مِنۡ حَیۡثُ اَمَرَکُمُ اللّٰهُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَهِّرِیۡنَ ‘আর তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে হায়েজ (ঋতু) সম্পর্কে। বলে দিন, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী-গমন থেকে বিরত থাক।
তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।’ (সুরা বাকারা: ২২২)
স্বামী-স্ত্রীরে সঙ্গেও সহবাস করা হারাম!
- আরো পড়ুন: সহবাসের দোয়া
- আরো পড়ুন: নারী-পুরুষ: বীর্য বা ধাতুর জন্মকথা
নেফাসের সর্বোচ্চ মেয়াদ ৪০ দিন। সর্বনিম্ন নির্ধারিত মেয়াদ নেই। হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় সহবাসে লিপ্ত না হয়ে স্ত্রীর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ বাদ দিয়ে বাকী অঙ্গ দিয়ে উপভোগ করা জায়েজ আছে। কিন্তু নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশে উপভোগ করা সম্পূর্ণ হারাম।
২) রোজা অবস্থায়
আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে ফজর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও যৌনসঙ্গম হতে বিরত থাকার নাম রোজা। কেউ যদি রোজা অবস্থায় সহবাস করে, তাহলে সে অনেক বড় পাপে লিপ্ত হলো।
এতে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে কাজা ও কাফফারা দিতে হবে।’ (ফাতহুল বারি: ৪/১৩২) তবে, রমজানে রাতের বেলা অর্থাৎ- ইফতার থেকে নিয়ে সেহেরি পর্যন্ত স্ত্রী-সহবাস জায়েজ।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, اُحِلَّ لَکُمۡ لَیۡلَۃَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰی نِسَآئِکُمۡ ‘আর সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৭)
আর নফল রোজা অবস্থায় সহবাস করে ফেললে কোনো কাফফারা নেই। তবে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কাজেই স্বামীর উচিত, ধৈর্যধারণ করা এবং রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
৩) স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস হারাম
অনেক বিকৃত মানসিকতার মানুষ হালাল পন্থা ছেড়ে বিকৃত পন্থায় সহবাসে লিপ্ত হয়। এটি অতীব নোংরাও নিকৃষ্ট কাজ। এই কাজটি তো হারামই, এমনকি কাজটি হাদিসের ভাষায় ‘কুফুরির নামান্তর’।
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ ‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুমতীর সঙ্গে মিলিত হয় কিংবা কোনো মহিলার পায়ুপথে সঙ্গম করে অথবা কোনো গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে।’ (তিরমিজি: ১৩৫; ইবনে মাজাহ: ৬৩৯; মুসনাদে আহমদ: ৯২৯০)
অন্য হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, لَا يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَى رَجُلٍ أَتَى امْرَأَةً فِي الدُّبُرِ ‘যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পায়ুপথে সহবাস করে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না।’ (তিরমিজি: ১১৬৫) আরও ইরশাদ হয়েছে, مَلْعُونٌ مَنْ أَتَى امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَ ‘যে ব্যক্তি স্ত্রীর সাথে নিতম্বে সহবাস করে সে লানতপ্রাপ্ত।’ (আবু দাউদ: ২১৬২)
দোয়টি এই- بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখ। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে, তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখ।’
ফজিলত : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আপন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন উক্ত দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয়। এ মিলনে যদি তাদের কিসমতে কোনো সন্তান আসে, সে সন্তানকে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)।
হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি সহবাসের ইচ্ছা করে, তার নিয়্যাত যেন এমন হয় যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবো। আমার মন এদিক ওদিক ছুটে বেড়াবে না আর জন্ম নেবে নেককার ও সৎ সন্তান। এই নিয়্যাতে সহবাস করলে তাতে সওয়াব তো হবেই সঙ্গে সঙ্গে নেক উদ্দেশ্যও পূরণ হয়।
স্ত্রী সহবাসের রয়েছে কতিপয় নিয়ম/স্বামী-স্ত্রীরে সঙ্গেও সহবাস করা হারাম!
ইসলামে সহবাসের উত্তম পদ্ধতি অবলম্বনের কিছু নিয়মাবলী.
স্বামী-স্ত্রী উভয়ই পাক পবিত্র থাকবে।
‘বিসমিল্লাহ’ বলে সহবাস শুরু করা মুস্তাহাব। ভুলে গেলে যদি বীর্যপাতের পূর্বে স্মরণ হয় তাহলে মনে মনে পড়ে নিতে হবে।
সহবাসের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা। যা আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত।
সব ধরনের দুর্গন্ধ জাতীয় জিনিস পরিহার করা। উল্লেখ্য যে, ধূমপান কিংবা অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। আর এতে কামভাব কমে যায়। আগ্রহের স্থান দখল করে নেয় বিতৃষ্ণা।
কেবলামুখি হয়ে সহবাস না করা।
একেবারে উলঙ্গ না হওয়া।
স্ত্রীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দান করার পূর্বে বিচ্ছিন্ন না হওয়া।
বীর্যপাতের সময় মনে মনে নির্ধারিত দোয়া পড়া। কেন না যদি সে সহবাসে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে সন্তান শয়তানের প্রভাব মুক্ত থাকবে।
স্ত্রীর হায়েজ-নেফাসের (ঋতুকালীন) সময় সহবাস না করা।
চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে মিলিত না হওয়া।
স্ত্রীর জরায়ুর দিকে চেয়ে সহবাস না করা।
বিদেশে বা সফরে যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রী সহবাস না করা।
সহবাসের সময় স্ত্রীর সহিত বেশি কথা না বলা।
জোহরের নামাজের পরে স্ত্রী সহবাস না করা।
ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস না করা।
উল্টাভাবে স্ত্রী সহবাস না করা।
স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস না করা।
রাত্রি দ্বি-প্রহরের আগে সহবাস করবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র ও হালাল পন্থা অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। দ্বীন ইসলাম বুঝে-শুনে সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।