PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ও PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: পর্ব:- ১ (প্রাচীন যুগ ) অধ্যায় ১, গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা
পর্ব – ১ ( প্রাচীন যুগ )
অধ্যায় ১ – গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৩
গ – বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০১. রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস আলোচনা কর ।
অথবা, রাষ্ট্রচিন্তা বিকাশের ইতিহাস মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ভূমিকা : মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও বিকাশ সাধনে রাষ্ট্র সর্বাপেক্ষা সর্বজনীন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মনীষীদের ভাবনা, চিন্তা ও দর্শনের আলোকে আজকের এই রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে।
মূলত প্রাচীন গ্রিস ছিল সভ্যতার চারণভূমি। বিশেষ করে গণতন্ত্র, ন্যায়বোধ, শিল্পকলা, স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয় ছিল গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার মৌলিক দিক।
বর্তমানে সমাজবিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি, বিশ্বজনীনতাবাদ, রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন, নিত্যনতুন পদ্ধতির সংযোজন রাষ্ট্রচিন্তাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে ।
রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস রাষ্ট্রচিন্তা একটি ব্যাপকভিত্তিক ধারণা এবং পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া। রাষ্ট্রচিন্তা বলতে আমরা বুঝি রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দার্শনিক বা চিন্তাবিদদের মতবাদ ।
রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা এই ইতিহাসকে প্রধানত তিন পর্যায়ে বিভক্ত করতে পারি। যথা : ক. প্রাচীন যুগ, খ. মধ্যযুগ এবং গ. আধুনিক যুগ। নিম্নে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
ক. প্রাচীন যুগ : খ্রিস্টপূর্ব ৬৩০ থেকে ৪০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে প্রাচীন যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রাচীন যুগের রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসের মধ্যে গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাচীন গ্রিস ছিল ছোট ছোট নগররাষ্ট্রের সমষ্টি। এথেন্স ও স্পার্টা ছিল এর মধ্যে অন্যতম। এই দুটি নগররাষ্ট্র ছিল বিজ্ঞান ও শিল্পকলায় সমৃদ্ধ।
বর্তমান বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের উৎপত্তি ও বিকাশ প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাবধারারই অংশ। এ সম্পর্কে আর্নেস্ট বার্কার (Ernest Barker) বলেন, “গ্রিকদের মাধ্যমেই রাষ্ট্রচিন্তার সূচনা ঘটে এবং সমৃদ্ধি লাভ করে।”
এ যুগের রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো নৈতিকতা ও যুক্তিবাদের সমন্বয়সাধন। রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে প্রাচীন যুগে যেসব চিন্তাবিদ ও মনীষী অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, পলিবিয়াস, সিসেরো প্রমুখ নিম্নে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো,
১. সক্রেটিস : সক্রেটিসকে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে প্রথম দার্শনিক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সক্রেটিসের রাষ্ট্রচিন্তার মূল ভিত্তি হলো “Virtue is knowledge” তথা সদগুণই জ্ঞান। তার মতে, “রাজা হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধিস্বরূপ।
রাজাকে নির্বাচন করা হয় জনগণের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি সাধনের জন্য, নিজ স্বার্থ অর্জনের জন্য নয়।” সক্রেটিস মনে করেন, যিনি শাসন কার্যে অধিষ্ঠিত হবেন তাকে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান থাকতে হবে।
তাই প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলোতে যে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বিদ্যমান ছিল তিনি তার ঘোর বিরোধিতা করেন এবং গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন।
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রুশো: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-(ফ্রি PDF) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
২. প্লেটো : প্লেটো ছিলেন রাষ্ট্রচিন্তায় প্রথম সফল রাষ্ট্রদার্শনিক। প্লেটো ছিল সক্রেটিসের অন্যতম শিষ্য। প্লেটো রচিত বিখ্যাত গ্রন্থের নাম হলো ‘The Republic’. এতে তিনি তার ন্যায়বিচার তত্ত্ব ও আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করেন। তার মতে, “কেবল আদর্শ রাষ্ট্রের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।”
৩. এরিস্টটল : প্লেটোর পর রাষ্ট্রচিন্তায় পূর্ণতা পেয়েছিল তার অন্যতম শিষ্য এরিস্টটলের হাত ধরে। এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তা ছিল বিজ্ঞানভিত্তিক ও বিশ্লেষণধর্মী। সেজন্যই তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করা হয়। তার সর্বোৎকৃষ্ট গ্রন্থ হলো ‘The Politics’. এতে তিনি তার রাষ্ট্রদর্শনের স্বাতন্ত্র্যভাব ফুটিয়ে তুলেছেন।
এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক পদ্ধতির ব্যবহার, বিপ্লবের কারণ নির্ণয় করেন এবং ১৫৮টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে একটি সর্বোৎকৃষ্ট সংবিধান প্রণয়ন করেন। এরিস্টটল পলিটি বা মধ্যতন্ত্রকে সর্বোৎকৃষ্ট সরকার বলে অভিহিত করেন।
খ. মধ্যযুগ : খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালকে মধ্যযুগ বলে অভিহিত করা হয়। গ্রিক নগররাষ্ট্রের পতনের পর মধ্যযুগের রাষ্ট্রদর্শন ছিল ধর্মীয় এবং রাজনীতি বিবর্জিত।
ধর্মীয় আধিপত্য, পোপতন্ত্র, স্টোয়িকবাদের প্রভাব, সামন্তবাদ, বিশ্বজনীনতাবাদ, গির্জা ও রাষ্ট্রের মতবিরোধ প্রভৃতি ছিল মধ্যযুগীয় রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
ধর্মীয় প্রাধান্যের এ যুগে রাষ্ট্রচিন্তা এতটা প্রসার লাভ করতে পারেনি। সেন্ট অগাস্টিন, সেন্ট টমাস একুইনাস, মার্সিলিও অব পাদুয়া ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম রাষ্ট্রচিন্তাবিদ । নিম্নে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. সেন্ট অগাস্টিন : সেন্ট অগাস্টিন রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এক যুগসন্ধিক্ষণের চিন্তানায়ক। পোপপন্থি দার্শনিক সেন্ট অগাস্টিন দীর্ঘ ১৩ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ‘The City of God’ গ্রন্থটি রচনা করেন। অগাস্টিন প্লেটোবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ন্যায়বিচার সম্পর্কে মৌলিক ও তত্ত্ববহুল ধারণা প্রদান করেন।
২. সেন্ট টমাস একুইনাস : সেন্ট টমাস একুইনাস এরিস্টটলের দর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে এক সফল দার্শনিক হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন । এজন্য তাকে মধ্যযুগের এরিস্টটল বলা হয়। তার মতে, “আইন সার্বভৌম এবং সরকার আইনের চাকর।” একুইনাসের রাষ্ট্রচিন্তা শুধু মধ্যযুগের নয়, বর্তমান যুগের রাষ্ট্রচিন্তাকেও গভীরভাবে আলোড়িত ও প্রভাবিত করে।
৩. মার্সিলিও অব পাদুয়া : মার্সিলিও অব পাদুয়া ছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম দার্শনিক। তিনি রাষ্ট্রদর্শন বিচারবিশ্লেষণে এরিস্টটলের মতাদর্শ অনুসরণ করেন। তার মতে, রাষ্ট্র হলো মানুষের বিভিন্নমুখী চাহিদা পূরণের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ সংস্থা। আইন সম্পর্কিত আলোচনায় পাদুয়া বলেন, আইন প্রণেতা হবে সমগ্র সম্প্রদায়ের ফলপ্রসূ অংশ।
গ. আধুনিক যুগ : পঞ্চদশ শতাব্দীতে পরিষদ আন্দোলনের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের অবসান ঘটে এবং ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমদিকে আধুনিক যুগের সূত্রপাত ঘটে। এই যুগে গির্জার প্রভাব সম্পূর্ণরূপে হ্রাস পায় এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার
প্রসার ঘটে। ফরাসি বিপ্লব, রেনেসাঁ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আধুনিক যুগের সূচনা হয়। যেসব দার্শনিক চিন্তাচেতনার দ্বারা আধুনিক যুগকে প্রভাবিত করেন। নিম্নে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি : মধ্যযুগের শেষভাগে এবং আধুনিক যুগের শুরুতে রাষ্ট্রদর্শনের অন্যতম দিকপাল ছিলেন নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি। ম্যাকিয়াভেলির সর্বাপেক্ষা আলোচিত গ্রন্থটি হলো ‘The Prince’।
ম্যাকিয়াভেলিই প্রথম জাতীয় রাষ্ট্র বা স্টেট এর ধারণা দেন এবং ধর্ম ও নৈতিকতা থেকে রাষ্ট্রদর্শনকে পৃথক করেন। এজন্য ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
২. টমাস হবস : ইংরেজ দার্শনিক টমাস হবস ইউরোপের রাষ্ট্রদর্শনে ব্যাপক সাড়া জাগায়। হবস সমাজের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, আবেগ-অনুভূতি, ধর্ম ও নৈতিকতা প্রভৃতিকে বস্তুবাদের মানদণ্ডে বিচারবিশ্লেষণ করেন এবং সামাজিক চুক্তি মতবাদের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন ।
৩. জন লক : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে টমাস হবসকে বলা হয় আধুনিকতার প্রধান কারিগর, আর জন লককে বলা হয় মানবতার অগ্রদূত। জন লক ছিলেন একজন অভিজ্ঞতাবাদী ও বাস্তববাদী দার্শনিক। ‘
Two Treatises of Civil Government’ গ্রন্থটি রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বাইবেল হিসেবে বিবেচ্য। সম্পত্তি তত্ত্ব, সামাজিক চুক্তি মতবাদ, সরকার সম্পর্কে ধারণা, প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে ধারণা লকের রাষ্ট্রদর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য।
৪. জ্যা জ্যাক রুশো : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে ফরাসি দার্শনিক জ্যা জ্যাক রুশোর অবদান অপরিসীম। ‘The Social Contract’ তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম। রুশোর রাজনৈতিক দর্শনের একটি উল্লেখযোগ্য মতবাদ হলো “Man is born free but every where he is in chains.” অর্থাৎ মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন, কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত।
রুশো তার ‘Social Contract’ নামক গ্রন্থে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য অত্যন্ত সতর্কতা ও নিপুণতার সাথে নির্ধারণ করেন । তার মতে, “প্রকৃতির রাজ্য ছিল সুখ সমৃদ্ধি, স্বাধীনচেতা ও সমতার রাজ্য।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমানে আমরা রাষ্ট্র নামক যে প্রতিষ্ঠানটি দেখতে পাই তা একদিনে গড়ে উঠেনি । যুগে যুগে বিভিন্ন মনীষী ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের ভাবনাচিন্তা ও দর্শনের আলোকে আধুনিক রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।
আর এই রাষ্ট্রচিন্তার মূল ধারক ও বাহক হচ্ছে গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তা। গ্রিকদের রাষ্ট্রদর্শনের ওপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে আলোচনা ও তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। তবে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার মূলভিত্তি স্থাপিত হয় নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির মাধ্যমে।
০২. প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমান পৃথিবীতে যে রাষ্ট্রচিন্তার প্রসার ঘটেছে, তা মূলত প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স ও স্পার্টা নগররাষ্ট্রের রাষ্ট্রচিন্তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। প্রাচীনকালে ভারতবর্ষ, চীন ও মিসরে রাষ্ট্রদর্শনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও তা গ্রিসের মতো এতটা সুসংহত ও বিস্তৃত ছিল না।
মূলত গ্রিক সভ্যতা থেকেই বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছে। এ সমাজ থেকেই ন্যায়বিচার, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, যুক্তিবাদিতা, সমাজ ও নগররাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আর্নেস্ট বার্কার বলেন, “গ্রিসীয় যুক্তিবাদের শান্ত পরিবেশের মাধ্যমেই রাষ্ট্রচিন্তার সূত্রপাত ঘটে।”
প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ : প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তায় যেসব স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো,
১. রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র : প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তায় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হতো।
গ্রিকদের মধ্যে রাজনৈতিক স্বাধীনতার যে স্পৃহা পরিলক্ষিত হয় তা পূর্ববর্তী প্রাচ্যদেশীয় রাষ্ট্রচিন্তা কিংবা পরবর্তী রোমান সাম্রাজ্যের কোথাও পরিলক্ষিত হয়নি।
২. শ্রেণি শাসন : গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো শ্রেণিগত শাসন। গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোতে সংখ্যালঘু অভিজাত শ্রেণি ও সংখ্যালঘু দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে সংঘাত পরিলক্ষিত হয়।
অভিজাত শ্রেণির নগররাষ্ট্রের বৃহত্তম দাস জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন নির্যাতনসহ সাধারণ জনগণের ওপর শোষণের নীতি অব্যাহত রাখত, এ কারণে প্লেটো ও এরিস্টটল তাদের লেখনীতে শ্রেণি শাসন সম্পর্কে আলোচনা করেন।
৩. প্রাকৃতিক আইন : গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলো ছিল প্রাকৃতিক আইনের ওপর নির্ভরশীল। গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন অনুযায়ী মানুষ যেমন প্রকৃতির দান তেমনি রাষ্ট্র হচ্ছে প্রকৃতির সন্তান। প্রাকৃতিক আইনের নিয়মানুযায়ী মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব হিসেবে বসবাস করবে। মানুষ প্রকৃতির আজ্ঞাবাহী হবে এবং প্রকৃতির নিয়ম মেনে বসবাস ও জীবনধারণ করবে।
৪. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদিতা : গ্রিস রাষ্ট্রচিন্তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদিতা। গ্রিক দার্শনিকগণ মনে করতেন যে, ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ হলে জাতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
এজন্য ব্যক্তির সর্বাধিক কল্যাণ কামনার জন্য তারা নানাবিধ সুপারিশ করে গেছেন। একটি আদর্শ রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ সাধন করা ।
৫. ধর্মীয় অনুশাসন : প্রাচীন গ্রিসের অনেক মনীষীগণেরা মনে করতেন তখনকার সমাজ ছিল অনেকটাই ধর্মীয় অনুশাসন দ্বারা প্রভাবিত। সে সময় সমাজের সর্বক্ষেত্রেই ধর্মীয় আনুগত্য পরিলক্ষিত হতো। আর এই ধর্মীয় অনুশাসন আইন বিষয়ক বিভিন্ন কার্যাবলি পরিচালনা করতো।
৬. বিজ্ঞানভিত্তিক ও গবেষণামূলক : প্রাচীন গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন ছিল বিজ্ঞানভিত্তিক ও গবেষণামূলক। এ কারণে গ্রিকদের চিন্তাধারায় অদৃষ্টবাদ, বর্ণপ্রথা, ঈশ্বরভীতি প্রভৃতি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি যা আধুনিক বা বর্তমানকালের রাষ্ট্রচিন্তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
৭. সমন্বয়সাধন : প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তার সমন্বয়সাধন ছিল একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়সাধন প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়।
প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের বর্ণনায় স্পার্টা ও এথেন্সের ভালো দিকগুলোর মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন। এরিস্টটল তার উত্তম সংবিধান এবং আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা প্রদানে নগররাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যাবলির বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন।
৮. আইনের শাসন : গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন থেকেই আইনের শাসনের ধারণাটি উদ্ভূত। তারা রাষ্ট্রকেও আইনের অধীনে মনে করতেন। তারা ভাবতেন আইন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আইন সরকারের অধীন নয়; বরং সরকারই আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ সরকার আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিলক্ষিত।
৯. যুক্তিবাদিতা : প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকগণ ছিলেন যুক্তিবাদিতায় বিশ্বাসী। অযৌক্তিক কোনো কিছুকে প্রাধান্য দিয়ে তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেন না। তারা মনে করতেন জীব ও জগৎ যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই প্রতিটি মানুষ ঘটনাকে যুক্তি দিয়ে বিচারবিশ্লেষণ করার সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন ।
১০. জনমতের ওপর গুরুত্বারোপ : প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক চর্চাকে গতিশীল ও প্রাণবন্ত করে তুলেছিলেন। এথেন্সের অধিবাসীরা তাদের সংবিধানকে গণতান্ত্রিক বলে আখ্যায়িত করেন। এজন্য গ্রিসের রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ থাকত।
১১. সময়োপযোগী : প্রাচীন গ্রিসের রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রচিন্তা সম্প্রসারিত হয়। যে কারণে প্লেটো ও এরিস্টটল উভয়েই নগররাষ্ট্রকে সবচেয়ে কার্যকর রাষ্ট্র কাঠামো হিসেবে অভিহিত করেন। তারা তৎকালীন গ্রিসের গণতন্ত্রের দূরবস্থা দেখে গণতন্ত্রের সমালোচনা করেন।
উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রাচীন • গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তায় যেসব কারণে এত উৎকর্ষ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল তন্মধ্যে যুক্তিবাদী, সাম্যবাদী, মৈত্রী, কুসংস্কারমুক্ত রাষ্ট্রচিন্তা ও নৈতিকতার সম্পৃক্ততা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখযোগ্য ।
গ্রিক দার্শনিকদের চিন্তাচেতনা সকল যুগের রাজনৈতিক আদর্শের সূচনায় অনন্য অবদান রাখে। গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পরিপূর্ণতা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
০৩. গ্রিক নগররাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, গ্রিক নগররাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তায় তৎকালীন নগররাষ্ট্র যা শুধুমাত্র নগরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রচিন্তার যে প্রসার ঘটেছে তাও মূলত প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।
এসব নগররাষ্ট্রের মধ্যে এথেন্স, স্পার্টা, থিব প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব নগররাষ্ট্রগুলো বর্তমান রাষ্ট্রের মতো এতটা বৃহৎ ও জনবহুল ছিল না। এগুলো ছিল প্রাচীর বেষ্টিত ক্ষুদ্রাকৃতির এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
গ্রিক নগররাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য : গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলো ছিল স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। নিম্নে এর বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো,
১. ক্ষুদ্র আয়তন ও স্বল্প জনসংখ্যা : গ্রিক নগররাষ্ট্রসমূহের বৈশিষ্ট্য হলো ক্ষুদ্র আয়তন ও স্বল্প জনসংখ্যা বিশিষ্ট আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের তুলনায় গ্রিক নগররাষ্ট্রসমূহ শুধু আয়তনেই ক্ষুদ্র ছিল না, এর জনসংখ্যাও ছিল স্বল্প পরিসরে।
নগররাষ্ট্র এথেন্সের জনসংখ্যা ছিল মাত্র প্রায় তিন লক্ষ এরিস্টটলের মতে, জনসংখ্যা ও আয়তনের দিক থেকে বাস্তব রাষ্ট্রসমূহ হবে এথেন্স ও স্পার্টার মতো। তিনি উত্তম রাষ্ট্র বলতে ক্ষুদ্র আয়তন ও স্বল্প জনসংখ্যা সংবলিত রাষ্ট্রকে বুঝিয়েছেন।
২. সংঘবদ্ধ জীবন ব্যবস্থা : গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সংঘবদ্ধ জীবন ব্যবস্থা। এখানে কৃষিজীবী, দাসশ্রেণি, সাধারণ নাগরিক প্রভৃতি শ্রেণি পেশার মানুষ একত্রে বসবাস করলেও তাদের স্বতন্ত্র কোনো জীবন ব্যবস্থা ছিল না।
জীবন প্রণালি সংঘবদ্ধ হওয়ায় সকলে সকলের সাথে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। অধ্যাপক বার্কার বলেন, “নগররাষ্ট্রের নাগরিকবৃন্দ পরস্পরের সাথে একীভূত ছিল। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বাস করলেও তাদের স্বতন্ত্র কোনো জীবনবোধ ছিল না।”
৩. অভিন্ন জীবন ব্যবস্থা : আধুনিক জাতিরাষ্ট্রগুলোতে যেমন শহর ও গ্রামে ভিন্নমুখী জীবন ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয় গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোতে তা পরিলক্ষিত হয় না। এসব নগররাষ্ট্রগুলোর জীবন ব্যবস্থা ছিল এক ও অভিন্ন। বর্তমান সমাজে গ্রাম যেমন
কৃষিপ্রধান এবং শহর শিল্প ও ব্যবসা প্রধান, গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলো তেমন ছিল না। সেখানে একটি পরিবারের দুখণ্ড জমি থাকত, একখণ্ড থাকত নগরের অভ্যন্তরে, অন্যখণ্ড নগরের বাইরে।
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ফ্রি PDF
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
৪. নাগরিক মর্যাদা : গ্রিক নগররাষ্ট্রের নাগরিকের মর্যাদা ছিল সর্বোৎকৃষ্ট। নগররাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অধিকার শুধুমাত্র তাদেরই ছিল। নগররাষ্ট্রের সকল নাগরিকই নগরসভার সদস্য হিসেবে বিবেচিত হতেন। তাদের অবস্থান ছিল বিদেশি ও ক্রীতদাসের ঊর্ধ্বে।
৫. নগরসভা : গ্রিসের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নগরসভা ছিল সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান। নগররাষ্ট্রের ২০ বছর বয়স্ক পুরুষ নাগরিকের সমন্বয়ে এ নগরসভা গঠিত হতো। বছরে দশবার নিয়মিতভাবে এর অধিবেশন বসত।
৬. জনগণের সভা : গ্রিসের স্পার্টা নগররাষ্ট্রে ত্রিশ বছর বয়স্ক সকল নাগরিকদের নিয়ে জনগণের সভা গঠিত হতো। সিনেটের সদস্য এবং কর্মচারীবৃন্দের নির্বাচন ছিল এর অন্যতম কার্য। স্পার্টার আরেকটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হলো সিনেট যা দুইজন রাজাসহ ষাট বছর বয়স্ক ২৮ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হতো । এর মেয়াদ ছিল আজীবন।
৭. পুরুষের একচেটিয়া অধিকার : প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলোতে নারীর কোনো রাজনৈতিক অধিকার না থাকায় পুরুষেরা একচেটিয়া অধিকার ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো। এখানে নারীর কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না বলেই নারীরা রাষ্ট্রীয় কোনো কাজেই পুরুষদের সহযোগিতা করতে পারত না।
৮. পৌর প্রকৃতির রাষ্ট্রব্যবস্থা : গ্রিক নগররাষ্ট্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল সেখানে নগর ও পল্লি অঞ্চল বলে আলাদা কিছু ছিল না। অনেকে মনে করেন, এর মূল কারণ গ্রিসের ভৌগোলিক অবস্থান ছিল নদী, পাহাড় দ্বারা বিভক্ত।
কিন্তু আজও তাদের ভৌগোলিক অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এরপরও তারা জাতীয় রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে। গ্রিকরা একই বংশে জন্মগ্রহণ করলেও তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রে বাস করতো এবং এরূপ জীবন ব্যবস্থাকে সুশাসিত হওয়ার উত্তম উপায় বলে মনে করতেন।
৯. রাষ্ট্র ও সরকারের অভিন্নতা : গ্রিক নগররাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। গ্রিকদের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কার্যাবলি ছিল রাষ্ট্র বা সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এবং এগুলো সামগ্রিকভাবে উদযাপিত হতো। অর্থাৎ সকল নাগরিকের সমবেত রাষ্ট্রীয় কার্যাবলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতো। ফলে তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোর সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনের উৎপত্তি। বর্তমান পৃথিবীতে যে গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসন পরিলক্ষিত হয় তা মূলত গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তারই ফসল।
প্রাচীন গ্রিসের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান যুগের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো এত শক্তিশালী না হলেও আজকের যুগের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি প্রাচীন গ্রিসের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিহিত ছিল।
০৪. রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান মূল্যায়ন কর ।
অথবা, রাষ্ট্রদর্শনে গ্রিকদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রচিন্তার যে প্রসার ঘটেছে তা মূলত প্রাচীন গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের রাষ্ট্রচিন্তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে আর্নেস্ট বার্কার বলেন, “গ্রিসের যুক্তিবাদের শান্ত পরিবেশে রাষ্ট্রচিন্তার প্রথম সূত্রপাত।” |
প্রাচীনকালে ভারতবর্ষ, চীন ও মিসরে রাষ্ট্রদর্শনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও তা গ্রিসের মতো এত সুদৃঢ় ও বিস্তৃত ছিল না। মূলত গ্রিক সভ্যতা থেকেই বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছে। এ সমাজ থেকেই ন্যায়বিচার, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, যুক্তিবাদী সমাজ ও নগররাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। রাষ্ট্রদর্শনে গ্রিকদের অবদান সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ।
রাষ্ট্রচিন্তায় গ্রিকদের অবদান : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে গ্রিকদের অবদান অবিস্মরণীয়। নিম্নে এদের অবদান আলোচনা করা হলো-
১. রাজনৈতিক স্বাধীনতা : প্রাচীন গ্রিকদের স্বাধীনতার প্রতি সম্মাননা আধুনিক যুগের রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। গ্রিক রাষ্ট্রদার্শনিকদের মধ্যে রাজনৈতিক স্বাধীনতার যে স্পৃহা তা পূর্ববর্তী প্রাচ্য ও পরবর্তী রোম সাম্রাজ্যের কোনোটিতেই পরিলক্ষিত হয়নি।
গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোর এক একটি স্বায়ত্তশাসিত ইউনিট স্বাধীনতার মন্ত্রে এমনভাবে উজ্জীবিত হয়ে গণতন্ত্রের চর্চা করেছে, যা সকল যুগকে হার মানায়। গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার সবচেয়ে বড় অবদান হলো স্বাধীনতা রক্ষা ও স্বাধীনতার প্রাধান্য দেওয়া।
২. ব্যক্তিস্বাধীনতা : গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম অবদান হলো ব্যক্তিস্বাধীনতা। বর্তমানের ব্যক্তি স্বাধীনতা গ্রিক চেতনা থেকে উদ্ভূত। গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তায় ব্যক্তিস্বাধীনতাকে হস্তক্ষেপ করা হয়নি।
এখানে ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর এত বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যার ফলে সেখানে স্বৈরতন্ত্র কিংবা ধনিকতন্ত্র কোনোটিই প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এরিস্টটল যদিও রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করেছেন তথাপি তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতাকে অবমূল্যায়ন করেননি।
৩. আইনের অনুশাসন : আধুনিক যুগে আইনের শাসন বলে যে তত্ত্বটির ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে তা মূলত গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তা থেকেই উৎপত্তি হয়েছে। প্লেটো তার দার্শনিক রাজা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা তত্ত্বে যে আইনের শাসনের কথা বলেছেন তাতে মানবসমাজের কোনো ব্যক্তির প্রাকৃতিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে না।
‘The Politics’ গ্রন্থে এরিস্টটল বলেন, “বিধিসম্মত উপায়ে গঠিত আইনের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের মধ্যেই ব্যক্তির যথার্থ স্বাধীনতা ও মুক্তি নিহিত।”
৪. রাষ্ট্রের উৎপত্তি : রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত আধুনিক মতবাদ হলো বিবর্তনবাদ। আর রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত এই মতবাদ সর্বপ্রথম গ্রিকরাই প্রবর্তন করেন। এরিস্টটলের মতে, “রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়নি; বরং ক্রমবিকশিত সত্তা।” প্লেটো, এরিস্টটল কেউই মনে করেনি যে চুক্তির ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।
৫. রাষ্ট্র সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী : গ্রিক দার্শনিকরাই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রের কাছে চরম ক্ষমতা দেওয়ার কল্পনা করেন। যা সাম্প্রতিককালের আধুনিক বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো চরম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে লক্ষ করা যায়।
প্লেটো তার দার্শনিক রাজাকে স্ত্রী-সন্তান ও সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাষ্ট্রের নিকট চরম ক্ষমতা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছেন গ্রিক দার্শনিকেরা ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন ।
৬. গণতন্ত্রের বিকাশ : গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তায় গণতন্ত্রের ক্রমবিকাশে গ্রিকদের অবদান অপরিসীম। গ্রিক নাগরিকদের রাজনৈতিক ও সামাজিক উভয় জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর।
এথেন্সীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ ছিল অপরিহার্য। ফলে তাদের সামাজিক জীবন ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। গণতন্ত্রের বিকাশে গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনের অবদান ছিল নিঃসন্দেহে প্ৰশংসনীয় ।
৭. রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি বৃদ্ধি : গ্রিক দার্শনিকেরা জনগণের সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যাবলিকে ন্যায়সংগত সরকারি কাজ বলে অভিহিত করেন। রাষ্ট্রীয় কার্যাবলির ক্ষেত্রে গ্রিকরা কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে সংকুচিত করার পক্ষপাতী ছিলেন না। বর্তমানে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলোতে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের অন্যতম একটি অবদান।
৮. ন্যায়বিচারের ধারণা : গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনে আইন, ন্যায়বিচার যুক্তিবাদিতা প্রভৃতি ধারণাকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়। – গ্রিকরা জিউসকে সর্বজনীন ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করতো এবং তার নির্দেশ অমান্য করা মানে ন্যায়বিচার লঙ্ঘন করা ও সমাজবিরোধী বলে উল্লেখ করেন ।
৯. প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা : প্রাচীন গ্রিসে প্রকৃতিকে আইনের একমাত্র উৎস হিসেবে মনে করা হতো। অবশ্য পরে এ ধারণার পরিবর্তন ঘটে। গ্রিকদের মতে, প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে সঠিক প্রজ্ঞার ওপর নির্ভর করে মানুষের জীবনযাপন করা উচিত। প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনের উন্নতি সাধন করা মানুষের একমাত্র কর্তব্য।
১০. মত প্রকাশের স্বাধীনতা : গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম একটি অবদান হলো মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গ্রিক নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা পরবর্তীতে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানব সভ্যতার অগ্রগতি ও বিকাশ সাধনে রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে।
আধুনিক বিশ্বে আমরা যে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র ও আইনের শাসন লক্ষ করি তা মূলত গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনেরই ক্রমবিবর্তনের ফল। যার ফলে গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন নগররাষ্ট্র ও আধুনিক রাজনৈতিক মতাদর্শ বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
Comments ১