JSC : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়‘র জীবনী ও সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর।।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য ভাষা ও সাহিত্য হতে গুরুপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করতে যাচ্ছি ।সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর অষ্টম শ্রেণি- JSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অতিথির স্মৃতি
লেখক-পরিচিতি
নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
জন্ম পরিচয় জন্ম সাল : ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দ; জন্মস্থান : পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রাম।
পিতৃ-মাতৃ পরিচয় পিতার নাম : মতিলাল চট্টোপাধ্যায়। মাতার নাম : ভুবনমোহিনী।
শিক্ষাজীবন এফএ (এইচএসসি) শ্রেণি পর্যন্ত।
পেশা/কর্মজীবন ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে রেঙ্গুনে (মায়ানমার) কেরানি পদে চাকরি করেন। পরবর্তীতে সাহিত্য রচনাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।
সাহিত্য সাধনা উপন্যাস : বড়দিদি, বিরাজবৌ, রামের সুমতি, দেবদাস, বিন্দুর ছেলে, পরিণীতা, প-িত মশাই, মেজদিদি, পল্লীসমাজ, বৈকুণ্ঠের উইল, শ্রীকান্ত, গৃহদাহ, চরিত্রহীন, দত্তা, পথের দাবি, দেনা-পাওনা, শেষ প্রশ্ন; ছোটগল্প : মহেশ, বিলাসী, সতী, মামলার ফল। নাটক : ষোড়শী, রমা; প্রবন্ধ : তরুণের বিদ্রোহ, স্বদেশ ও সাহিত্য প্রভৃতি।
পুরস্কার ও সম্মাননা ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ প্রাপ্তি । ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট উপাধি লাভ।
জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ : ১৬ই জানুয়ারি, ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ।
প্রশ্ন -৬ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
নানাবাড়ি থেকে সাদা রঙের ছাগলের বাচ্চা উপহার হিসেবে পায় সাকিব। বাচ্চাটি পেয়ে সে খুব খুশি হয়। সারাক্ষণ সে বাচ্চাটিকে যতেœ রাখে। ছাগল ছানাটিও সাকিবের পিছু ছাড়ে না। দেখতে দেখতে ছানাটি হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠল। একদিন ভোরবেলা দেখা গেল ছাগল ছানাটি মরে পড়ে আছে। বিষাক্ত সাপের কামড়ে ছানাটির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সাকিব খুব মুষড়ে পড়ে।
ক. কত সালে ‘বড়দিদি’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ১
খ. লেখকের সত্যিকার ভাবনা ঘুচে গেল কীভাবে? ২
গ. উদ্দীপকে ছাগল ছানাটির ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অতিথির মধ্যে বিদ্যমান সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলো চিহ্নিত কর। ৩
ঘ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অতিথি উদ্দীপকের ছাগল ছানাটির মতো ততটা জীবনঘনিষ্ঠ নয়Ñ মন্তব্যটি গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯০৭ সালে ‘বড়দিদি’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়।
খ. ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের ‘খ’ নং উত্তর দ্রষ্টব্য।
গ. অতিথি ও ছাগলছানা দুটি প্রাণীই প্রভুভক্তির পরিচয় দিয়েছে। ইতর প্রাণী হয়েও মানুষের সঙ্গে তাদের চমৎকার সম্পর্ক রচিত হয়েছে। কিন্তু তাদের করুণ পরিণতি আমাদের বেদনাহত করে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দেওঘরে বেড়াতে গিয়ে লেখকের সঙ্গে পথের অচেনা কুকুরের সাথে অতিথির এক মধুর সম্পর্ক রচিত হয়। অতিথিও লেখকের ভালোবাসার মূল্য দিতে কার্পণ্য করেনি। লেখকের বিদায়ের দিন তাকে অনুসরণ করে অতিথি রেল স্টেশন পর্যন্ত চলে যায়। কিন্তু প্রিয়জনকে কোনো বাঁধনে বেঁধে রাখতে পারেনি অতিথি। কর্তব্যের টানে লেখক অতিথিকে ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ান। উদ্দীপকের সাকিবের সঙ্গেও তার পোষা ছাগলছানার ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাগলছানার সঙ্গে সাকিবের চিরবিচ্ছেদ ঘটে যায়। সাপের কামড়ে ছাগল ছানাটি অকালে মারা যায়।
উদ্দীপক এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে সাকিব ও লেখক একইভাবে ইতর প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে। অপরদিকে উভয় ক্ষেত্রে ভিন্ন পরিণতি দৃষ্টিগোচর হয়। উদ্দীপকের প্রিয় ছাগলছানাটি সাপের কামড়ে মারা যায় আর গল্পের লেখক দেওঘরে প্রিয় কুকুরটিকে ছেড়ে চলে আসেন।
অষ্টম শ্রেণি: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়‘র জীবনী ও সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
ঘ. “‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অতিথি উদ্দীপকের ছাগলছানাটির মতো ততটা জীবন ঘনিষ্ঠ নয়” Ñ মন্তব্যটি যথাযথ।
চিকিৎসকের পরামর্শে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক একবার দেওঘরে যান এবং সেখানে একটি মানবেতর প্রাণী অর্থাৎ কুকুরের সঙ্গে তার মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সেই সম্পর্ক স্থায়ী রূপ পেতে বাধাগ্রস্ত হয় নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে। কিন্তু লেখক দেওঘর ছেড়ে আসার সময়ও কুকুরটিকে ভুলতে পারেননি এবং কুকুরটিও তাকে রেলস্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিল।
গল্পে দেখা যায়, অসুস্থ লেখক দেওঘরে গিয়ে একটি মানবেতর প্রাণীর সঙ্গে মমত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলেও সেখানকার নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাকে যথার্থ আদর-আপ্যায়ন করতে পারেননি। কিন্তু সাকিবকে তেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। সাকিব তার পোষা ছাগলছানাটিকে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে ভালোবেসেছিল। সাদা ছাগলছানাটিও তার প্রতিদান দিয়েছিল। সবসময় সে সাকিবের গা ঘেষে থাকত।
তাই উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে দেখা যায়, সাকিব তার ছাগলছানাটিকে ছোট থেকে লালন-পালন করে বড় করে এবং সবসময় তার খেয়াল রাখে। যদিও ছাগলছানাটির শেষ পরিণতি হয় সাপের কামড়ে মৃত্যু। কিন্তু সাকিবের জীবনে ছাগলছানাটি ছিল ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। যে অনুভূতি আমরা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের মধ্যে দেখতে পাই না। লেখক অতিথির জন্য তীব্র মমতা উপলব্ধি করলেও তার জন্য বেশি কিছু করতে পারেননি।
প্রশ্ন -৭ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গাড়িটা থামতেই লোকটা ছুটে এলো। যেন এক্ষুণি কেঁদে ফেলবে, এমন একটা ভাব। ছুটে এসে কেমন করুণ গলায় বলল, আপনাদের কাছে স্যার রক্ত বন্ধ করার কোনো ওষুধ আছে? রীতিমতো অবাক হবার পালা। মেজদা জিজ্ঞেস করলেন, কেন, কী দরকার? স্যার, একটা খরগোশ মানে একটা খরগোশ খুব আঘাত পেয়েছে। খুব রক্ত পড়ছে ওটার পা থেকে। আমি খরগোশটাকে ওখানে রেখে এসেছি, স্যার। ওষুধ লাগাতে পারলে হয়তো বাঁচাতে পারতাম।
ক. সবচেয়ে ভোরে ওঠে কোন পাখি? ১
খ. লেখকের অতিথির চোখ দুটো ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল কেন? ২
গ. উদ্দীপকের লোকটির আকুতি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কার অনুভূতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ.“প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল সুরই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে”Ñ মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। ৪
৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সবচেয়ে ভোরে ওঠে দোয়েল পাখি।
খ. অতিথিশালার লোকদের কাছে নিগৃহীত হয়ে লেখকের কাছে নালিশ জানাতে এসে কুকুরটির চোখ ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল।
লেখকের নির্দেশমতো খাদ্য পাওয়ার পরিবর্তে কুকুরটির কপালে জুটেছিল মারধর। তাই একদিন দুপুরে বাড়ির চাকরদের অগোচরে কুকুরটি নালিশ জানাতে সমব্যথীর কাছে নিজের দুর্ভাগ্যের কথা জানাতে গিয়ে তার চোখ দুটি ভিজে ভিজে হয়ে যায়।
গ. উদ্দীপকে লোকটির আকুতির সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অনুভূতির পুরোপুরি সাদৃশ্য রয়েছে।
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি কুকুরের সঙ্গে অসুস্থ লেখকের কয় দিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মমত্বের সম্পর্ক প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকেরও মূলবিষয় পশুপাখির মতো তুচ্ছ জীবের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম মমত্ববোধ।
উদ্দীপকে প্রাণিপ্রেমিক লোকটি পাখিদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। আহত খরগোশকে সুস্থ করার জন্য রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ওষুধ খোঁজে। খরগোশের কষ্ট যেন তাকেও সমান কষ্ট দেয়। অনুরূপ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে বেড়াতে গেলে কুকুরটির সঙ্গে তার দেখা হয় এবং উভয়ের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ক কদিনেই অত্যন্ত গভীর হয়। দেওঘর থেকে বিদায় নেয়ার দিনে লেখক কুকুরটির কথা ভেবে ব্যথিত হন।
ঘ. “প্রেক্ষাপটে ভিন্ন হলেও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল সুরই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।” -উক্তিটি যথাযথ।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি অচেনা কুকুরের সঙ্গে লেখকের মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে। আর উদ্দীপকে দেখতে পাই বন্য পশুপাখিদের প্রতি লোকটির মমত্ববোধ।
উদ্দীপকে বর্ণিত প্রাণিপ্রেমিক লোকটি পশুপাখিদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য ব্যস্ত। অসুস্থ ও আহত প্রাণীদের সুস্থ করার জন্য সে ওষুধ খুঁজে বেড়ায় এবং চিকিৎসা করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের সঙ্গে পথের কুকুরটির সখ্য গড়ে ওঠে। এমনকি বিদায় নেয়ার দিনে কুকুরটাকে ছেড়ে আসতে লেখকের মন সায় দিচ্ছিল না।
উভয় দৃষ্টান্ত বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাই, উদ্দীপকের লোকটি ছিল প্রাণিপ্রেমিক। প্রাণীদের দুঃখ-কষ্ট ও অসুস্থতায় তার দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তেমনি আলোচ্য গল্পের লেখকও ছিলেন মানবেতর প্রাণীর প্রতি সহমর্মী। তুচ্ছ একটি জীবের প্রতি লেখকের মনের মধ্যে যে দুর্নিবার আকর্ষণ, তাই এ গল্পের মূল উপজীব্য। এভাবে উদ্দীপকের প্রাণিপ্রেমিক লোকটির মধ্যে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল সুরকে প্রতিফলিত করেছে।
প্রশ্ন -৮ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রতন প্রচ-ভাবে ভালোবাসে তার পোষা ময়নাটিকে। ময়নার প্রতি রতনের এমন দরদ দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে তারই প্রতিবেশী রানা। একসময় রানা রাতের আঁধারে ময়নাকে মেরে ফেলে। ময়নার শোকে নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেল রতন। তার অজান্তেই অশ্রু গড়িয়ে পড়ে দুচোখ বেয়ে।
ক. প্রাচীরের ধারের গাছটির নাম কী? ১
খ. ‘সত্যিকারের একটা ভাবনা ঘুচে গেল’ কীভাবে? ২
গ. রানার সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে কাকে মেলানো যায় ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ.“উদ্দীপকের রতনের মাঝে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখককে খুঁজে পাওয়া যায়।” উক্তিটি বিচার কর। ৪
৮নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাচীরের ধারের গাছটির নাম ইউক্যালিপটাস।
খ. হলদে রঙের বেনে-বৌ পাখি দুটিকে আবার দেখতে পেয়ে লেখকের সত্যিকারের ভাবনাটা ঘুচে গেল।
প্রতিদিন সকালে দেওঘরে ইউক্যালিপটাস গাছে এক জোড়া হলদে রঙের বেনে-বৌ পাখি এসে বসত এবং লেখক তা দেখতেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন পাখি দুটি না আসায় লেখক ভাবলেন, হয়তো কেউ পাখি দুটিকে শিকার করেছে। কিন্তু তিন দিনের দিন পাখি দুটি আবার ফিরে আসে। তা দেখে লেখকের সত্যিকার একটা ভাবনা ঘুচে যায়।
গ. রানার সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালির বৌ মালিনীকে মেলানো যায়।
আমাদের গৃহে ও চারপাশের পরিবেশে অসংখ্য অবলা প্রাণী বাস করে। এদের সাথে কখনো কখনো মানুষের হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু এ সম্পর্ক স্থায়ীরূপ পেতে অনেক সময় মানবীয় আচরণ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিছু মানুষ তাদের হীনম্মন্যতার কারণে এ বাধার সৃষ্টি করে। এমনই দুটি চরিত্র হলো উদ্দীপকের রানা ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালির বৌ।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক যে বাড়িতে উঠেছিলেন সে বাড়িতে মালির স্ত্রী সর্বদা নিজের স্বার্থোদ্ধারে তৎপর থাকত। প্রাণীর প্রতি সামান্যতম মমত্বও তার মধ্যে ছিল না। তাইতো লেখক বেচে যাওয়া খাবার কুকুরটিকে দিতে বললেও সে দেয় না। বরং কুকুরটিকে মেরে তাড়িয়ে দেয়। উদ্দীপকেও দেখা যায় রতন তার পোষা ময়নাকে অত্যন্ত ভালোবাসে। কিন্তু বিষয়টি সহ্য হয় না রানার। প্রাণীর প্রতি সামান্য মমত্বও তার নেই। তাই ঈর্ষান্বিত হয়ে ময়না পাখিটিকে হত্যা করে সে। তাই বলা যায়, এখানে রানার সঙ্গে গল্পের মালিনী সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের রতনের মাঝে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখককে খুঁজে পাওয়া যায়” মন্তব্যটি যথার্থ।
আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও গৃহে অসংখ্য অবলা প্রাণী বাস করে। এদের সাথে কখনো কখনো মানুষের হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্ক কখনো এতটাই প্রবল হয় যে, এদের সাথে বিচ্ছেদ মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে চায় না। উদ্দীপকের রতন ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মধ্যে এ বিষয়টির প্রবল প্রকাশ লক্ষণীয়।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের মধ্যে প্রাণীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। পথের কুকুরকে তিনি ভালোবেসেছেন গভীরভাবে। কুকুরটিকে তিনি অতিথি বানিয়েছেন। কুকুরটিকে খাওয়ানোর জন্য তার বাড়ির লোককে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি কুকুরটির জন্য দেওঘর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় দুঃখ প্রকাশ করেন। উদ্দীপকের রতনের মাঝেও প্রাণিপ্রীতি বিদ্যমান। সে একটি ময়না পাখি পোষে। পাখিটির প্রতি তার অসীম দরদ রয়েছে। তাইতো পাখিটি মারা গেলে সে শোকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এমনকি নিজের অজান্তেই চোখের কোণে নেমে এসেছে জল।
উল্লিখিত আলোচনায় প্রমাণিত হয়, প্রশ্নোক্ত, মন্তব্যটি যথার্থ।
অতিরিক্ত সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন -৯ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রুবা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সে ঢাকায় থাকে। মাঝে মধ্যে গ্রামে যায়। ঢাকার যানজট পেরিয়ে গ্রামের শ্যামল প্রান্তরে গেলেই তার মন ভালো হয়ে যায়। গ্রামের প্রত্যেকটি জিনিস সে উপভোগ করে। গাছপালা, নদী, বন-জঙ্গল সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখে আর সৌন্দর্য উপভোগ করে। তার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে পাখিদের কলকাকলি। পাখিদের জন্য তার খুব মায়া। প্রতিদিন চড়–ই পাখির ডাকে তার ঘুম ভাঙে। চড়–ই পাখির বাসাটি ছিল ঘরের চালের কোণে। একদিন চড়ুই পাখিকে না দেখলে তার মন খারাপ লাগে।
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি কে লিখেছেন? ১
খ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে নালিশ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. রুবার মন খারাপের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কী মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ.‘রুবার সৌন্দর্য চেতনা আর লেখকের সৌন্দর্য চেতনা একই সূত্রে গাঁথা’Ñ মন্তব্যটি বিচার কর। ৪
৯নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি লিখেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
খ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে নালিশ বলতে মালিনীর প্রতি অবলা কুকুরটির অভিযোগসুলভ অভিব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
গল্পে অতিথি কুকুরটি ভেজাভেজা চোখে গল্পকারের কাছে মালিনী ও চাকরদের দুর্ব্যবহারের জন্য অভিযোগ প্রকাশ করছে নীরব ভাষায়। কুকুরটির এ নির্বাক চাহনিকে লেখক নালিশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গ. রুবার মন খারাপের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতির চমৎকার একটি মিল পাওয়া যায়।
মানুষের প্রতি মানুষের যেমন ভালোবাসা, ভালো লাগা তৈরি হয় তেমনি প্রকৃতিতে বাস করে এমন অনেক প্রাণীর প্রতিও মানুষের ভালোবাসা, ভালো লাগা তৈরি হয়। প্রকৃতির এসব প্রাণীর মধ্যে পাখির প্রতি অনুরক্তির বিষয়টি উদ্দীপকের রুবা ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতিতে ফুটে উঠেছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক যখন দেওঘরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য গিয়েছিলেন তখন পাখিদের মায়ায় পড়ে যান। একজোড়া বেনে-বৌ পাখি প্রত্যহ এসে বসত ইউক্যালিপটাস গাছের উঁচু ডালে। কিন্তু পরপর দুদিন পাখিরা না এলে লেখক ভাবনায় পড়ে যান। লেখকের এই মানসিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের রুবার মধ্যে। রুবার পাখিদের কলকাকলি খুব ভালো লাগে। প্রতিদিন চড়–ই পাখির ডাকে তার ঘুম ভাঙে। একদিন চড়–ই পাখি না দেখলে তার মন খারাপ লাগে। তাই বলা যায়, রুবার মন খারাপের এ দিকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের পাখির জন্য মন খারাপের বিষয়টিকেই নির্দেশ করে।
ঘ. ‘রুবার সৌন্দর্যচেতনা আর লেখকের সৌন্দর্যচেতনা একই সূত্রে গাঁথা।’ মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রকৃতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। প্রকৃতির প্রায় প্রতিটি অনুষঙ্গের মধ্যেই কিছু মানুষ পরম সৌন্দর্য খুঁজে পান। এই সৌন্দযানুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে উদ্দীপকের রুবা ও লেখকের মধ্যে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুসন্ধানী চোখ শুধু প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়িয়েছে। তিনি দেখেছেন প্রকৃতির রূপ। কোন গাছে কোন পাখি থাকে। তারা কখন গান করে। তারা কীভাবে সময় কাটায়। গায়ের রং, অবস্থান, অঙ্গভঙ্গি সবকিছু মনোযোগ সহকারে দেখেছেন। উদ্দীপকের রুবা শহরের মেয়ে। গ্রামে এসেছে বেড়াতে। লেখকও শহর থেকে দেওঘরে গিয়েছেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। লেখক ও রুবার সৌন্দর্যচেতনা এক হলেও উদ্দেশ্য ভিন্নমুখী। রুবা গ্রামে এসেছে বেড়াতে। প্রকৃতি তার খুব ভালো লাগে। প্রকৃতির প্রত্যেকটি বস্তু তাকে টানে। ঘুরে ঘুরে গাছপালা দেখে। পাখিদের কলকাকলিতে সে উদ্বেল হয়ে ওঠে। প্রকৃতির মাঝে সে হারিয়ে যায়।
উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও রুবার সৌন্দর্য চেতনা ও লেখকের সৌন্দর্য চেতনা একই সূত্রে গাঁথা।
প্রশ্ন -১০ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
দীর্ঘদিন রোগভোগের কারণে সিয়ামের স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে। ডাক্তারের নির্দেশে তখন সিয়ামকে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান এলাকায় পাঠানো হয়। কিছুদিন থাকার ব্যবস্থা করা হয় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। সেখানে বিচিত্র পাখির কলকাকলি, প্রকৃতির সবুজ পরিবেশ ও ভিন্ন আবহাওয়ায় সিয়াম বেশ সুস্থবোধ করে।
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য কোথায় গিয়েছিলেন। ১
খ. ‘পাখি চালান দেয়াই তাদের ব্যবসা’ কোন প্রসঙ্গে এ কথাটি বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। ২
গ. উদ্দীপকের সিয়ামের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কার সাদৃশ্য রয়েছে? ৩
ঘ.মানুষের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর। ৪
১০নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন।
খ. পাখি শিকারিদের প্রসঙ্গে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
চিকিৎসকের পরামর্শে লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন। সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে তিনি নানা জাতের পাখি দেখতে পান। এদের মধ্যে ছিল হলদে রঙের একজোড়া বেনে-বৌ পাখি। ইউক্যালিপটাস গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটাতে বসে তারা প্রত্যহ হাজিরা হেঁকে যেত। হঠাৎ দিন দুয়েক এ পাখি জোড়াকে আসতে না দেখে লেখকের মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তার মনে সন্দেহ জাগে, ব্যাধেরা হয়তো তাদের ধরে বিক্রি করে দিয়েছে।
গ. উদ্দীপকের সিয়ামের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সাদৃশ্য রয়েছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে দেওঘরে যান। সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ লেখককে মুগ্ধ করে। সে পরিবেশের সাথে তিনি একাত্ম হয়ে যান। বারান্দায় বসে পাখপাখালির সাথে তিনি স্নেহপূর্ণ ভাবাবেগ আদান-প্রদান করেন।
উদ্দীপকের সিয়াম দীর্ঘদিন রোগভোগের কারণে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই ডাক্তারের নির্দেশে তাকে সুস্থ করে তোলার উদ্দেশ্যে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে পাঠানো হয়। কয়েক দিনের মধ্যে সেখানকার বিচিত্র পাখপাখালির প্রতি সিয়ামের মনে প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সিয়াম ও লেখকের মানসিকতার মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. মানুষের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম, যা উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের আবেগ-অনুভূতির উদয় হয় কখনোবা মনের মধ্যে জন্ম দেয় সুখের অনুভূতি আবার কখনো প্রকৃতির অনুষঙ্গেই মন বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে। মানুষের ওপর প্রকৃতির এই প্রভাবই উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে ফুটে উঠেছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পবির্তনের উদ্দেশ্যে দেওঘরে যান। সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। সেখানে লেখকের ঘুম ভাঙে দোয়েলের গানে। পাশের বাড়ির আমগাছে, পথের ধারে অশ্বত্থ গাছের মাথায় বসে বিভিন্ন ধরনের পাখি কলকাকলিতে মেতে ওঠে। পরিবেশের প্রতিটি অনুষঙ্গ লেখকের মনে মায়ার বন্ধন তৈরি করে।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, দীর্ঘদিন রোগভোগের পর সিয়ামের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। ডাক্তারের নির্দেশে তখন সিয়ামকে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানে পাঠানো হয়। সেখানকার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, বিচিত্র পাখির কলকাকলি, প্রকৃতির ছায়াঘেরা মনোমুগ্ধকর আবহাওয়ায় সিয়াম বেশ সুস্থ বোধ করে।
উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, মানুষের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।