অষ্টম শ্রেণি: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়‘র জীবনী ও সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ।।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য ভাষা ও সাহিত্য হতে গুরুপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করতে যাচ্ছি ।সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর অষ্টম শ্রেণি- JSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অতিথির স্মৃতি
লেখক-পরিচিতি
নাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
জন্ম পরিচয় জন্ম সাল : ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দ; জন্মস্থান : পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রাম।
পিতৃ-মাতৃ পরিচয় পিতার নাম : মতিলাল চট্টোপাধ্যায়। মাতার নাম : ভুবনমোহিনী।
শিক্ষাজীবন এফএ (এইচএসসি) শ্রেণি পর্যন্ত।
পেশা/কর্মজীবন ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে রেঙ্গুনে (মায়ানমার) কেরানি পদে চাকরি করেন। পরবর্তীতে সাহিত্য রচনাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।
সাহিত্য সাধনা উপন্যাস : বড়দিদি, বিরাজবৌ, রামের সুমতি, দেবদাস, বিন্দুর ছেলে, পরিণীতা, প-িত মশাই, মেজদিদি, পল্লীসমাজ, বৈকুণ্ঠের উইল, শ্রীকান্ত, গৃহদাহ, চরিত্রহীন, দত্তা, পথের দাবি, দেনা-পাওনা, শেষ প্রশ্ন; ছোটগল্প : মহেশ, বিলাসী, সতী, মামলার ফল। নাটক : ষোড়শী, রমা; প্রবন্ধ : তরুণের বিদ্রোহ, স্বদেশ ও সাহিত্য প্রভৃতি।
পুরস্কার ও সম্মাননা ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ প্রাপ্তি । ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট উপাধি লাভ।
জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ : ১৬ই জানুয়ারি, ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ।
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন -১ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
মহেশ। দরিদ্র বর্গাচাষি গফুরের অতি আদরের একমাত্র ষাঁড়। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে ওকে ঠিকমতো খড়-বিচুলি খেতে দিতে পারে না। জমিদারের কাছে সামান্য খড় ধার চেয়েও পায় না। নিজে না খেয়ে থাকলেও গফুরের দুঃখ নেই। কিন্তু মহেশকে খাবার দিতে না পেরে তার বুক ফেটে যায়। সে মহেশের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেÑ মহেশ, তুই আমার ছেলে। তুই আমাদের আট সন প্রতিপালন করে বুড়ো হয়েছিস। তোকে আমি পেট পুরে খেতে দিতে পারিনে, কিন্তু তুইতো জানিস আমি তোকে কত ভালোবাসি। মহেশ প্রত্যুত্তরে গলা বাড়িয়ে আরামে চোখ বুজে থাকে।
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দেওঘরে গিয়েছিলেন কেন?
খ. অতিথি কিছুতে ভিতরে ঢোকার ভরসা পেল না কেন?
গ. উদ্দীপকে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন।
খ. নতুন পরিচয়ের সংকোচে অতিথি কিছুতে ভিতরে ঢোকার ভরসা পেল না।
হাওয়া বদলের জন্য দেওঘরে গিয়ে পথে এক কুকুরের সঙ্গে লেখকের পরিচয় হয়। পথ চলতে চলতে কুকুরের সঙ্গে লেখকের হৃদ্যতা সৃষ্টি হলেও লেখক বাড়িতে পৌঁছে গেট খুলে দিলে সে ভেতরে ঢুকতে ভয় পায়। কারণ অচেনা কুকুর বাড়ির ভেতরে ঢুকলে অনেক সময় তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। তাই ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পেরে লেখকের আমন্ত্রণ সত্ত্বেও অতিথি কুকুরটি ভেতরে ঢোকার সাহস পায়নি।
গ. উদ্দীপকে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথির প্রতি লেখকের ভালোবাসার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
শুধু মানুষের সঙ্গে মানুষেরই যে মমতার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে এমন নয় বরং অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের মমতার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। পশুর প্রতি মানুষের এ মমত্ববোধের বিষয়টিই ফুটে উঠেছে উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথি হলো একটি কুকুর। সে লেখকের বেড়াতে যাওয়ার সঙ্গী। লেখক কুকুরটিকে যে বাড়িতে অবস্থান করছেন সে বাড়ির মালিকে খাবার দিতে বলেছেন। কিন্তু কুকুরটিকে খাবার দেয়া হয়নি বলে তারও খুব কষ্ট হয়। অতিথির চোখের জল দেখে লেখকের বুকে হাহাকার ওঠে। অন্যদিকে উদ্দীপকের মহেশ একটি ষাঁড়। মহেশের মালিক গফুর তাকে নিয়মিত যতœ করে, তাকে ভালোবাসে। দারিদ্র্যের কারণে নিজে খেতে না পারলেও সে মহেশকে ঠিকই খাওয়ায়। মহেশের প্রতি গফুরের এ মমতার অশ্রু ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কুকুরের প্রতি লেখকের মমত্ববোধকেই ইঙ্গিত করে।
উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে জীবের প্রতি মানুষের স্নেহ-ভালোবাসার বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠলেও উদ্দীপকের পটভূমিতে কিছুটা ভিন্নতা উঠে এসেছে। এখানে জমিদারের অন্যায় শোষণে শোষিত দরিদ্র বর্গাচাষি গফুরের অসহায় জীবনের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অসুস্থ লেখকের সাথে অতিথি কুকুরের সখ্যের সম্পর্ক নানা প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে এগিয়ে যায়। মালি-বৌয়ের নির্মমতার পরাজয় ঘটে তাদের সখ্যের কাছে। কিন্তু বাস্তবতার নিষ্ঠুরতায় তাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত আবার বিচ্ছেদ ঘটে। নির্দিষ্ট সময় শেষে অতিথি কুকুরের স্মৃতি পেছনে ফেলে লেখক ফিরে আসেন তার পুরনো আস্তানায়। এভাবেই ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি লেখকের অসুস্থতার প্রেক্ষাপটে শেষ হয়েছে।
উদ্দীপকে অভাবক্লিষ্ট গফুর জীবনের কাছে পরাজিত এক অসহায় সৈনিক। যেখানে দারিদ্র্যের সাথে প্রতিনিয়ত তার যুদ্ধ। এর মধ্যেও পোষা ষাঁড় মহেশের প্রতি তার ভালোবাসার কমতি নেই। প্রভাবশালী জমিদারের রাজত্বে নিজে দু’মুঠো খেতে না পারলেও মহেশের জন্য খাবারের চিন্তায় সে ব্যাকুল হয়। তার এ ব্যাকুলতার মধ্যে অভাবক্লিষ্ট জীবনের প্রতিচ্ছবিই ভেসে ওঠে, যা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের ভিন্নতা তৈরি করেছে।
প্রশ্ন -২ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শেরপুরের নাইমুদ্দিন প্রায় ১০ বছর ধরে তার পোষাহাতি কালাপাহাড়কে দিয়ে লাকড়ি টানা, চাষ করা, সার্কাস দেখানো ইত্যাদি কাজ করে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে দারিদ্র্যের কারণে হাতির খোরাক জোগাড় করতে না পেরে একদিন সে কালাপাহাড়কে বিক্রি করে দিল। ক্রেতা কালাপাহাড়কে নিতে এসে ওর পায়ে বাঁধা রশি ধরে হাজার টানাটানি করে একচুলও নাড়াতে পারল না। কালাপাহাড়ের দুচোখ বেয়ে শুধু টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। পরদিন খদ্দের আরও বেশি লোকজন সাথে করে এসে কালাপাহাড়কে নিয়ে যাবে বলে চলে যায়। কিন্তু ভোরবেলা নাইমুদ্দিন দেখেÑ কালাপাহাড় মরে পড়ে আছে। হাউমাউ করে সে চিৎকার করে আর বলেÑ ‘ওরে আমার কালাপাহাড়, অভিমান করে তুই চলে গেলি!’
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন পদক লাভ করেন?
খ. লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন কেন?
গ. কালাপাহাড়ের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তার বর্ণনা দাও।
ঘ.‘উদ্দীপকের নাইমুদ্দিনের অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতিএকইধারায়উৎসারিত’মন্তব্যটিরযথার্থতাবিচারকর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক লাভ করেন।
খ. অতিথির প্রতি মমতার টানে লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে দিন দুই দেরি করলেন।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে এলে একটি কুকুর তার বেড়াতে যাওয়ার একমাত্র সঙ্গী হয়। প্রতিদিন কুকুরটি বাড়ির গেটের সামনে অপেক্ষা করে লেখকের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। কুকুরটির এরূপ আচরণে লেখকের মনে তার জন্য অকৃত্রিম মমত্ববোধ জেগে ওঠে। তাই দেওঘর থেকে ফিরতে নানা অজুহাতে লেখক দিন দুই দেরি করলেন।
গ. কালাপাহাড়ের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সঙ্গে অতিথি তথা কুকুরটির আচরণের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক দেওঘরে থাকাকালীন বেড়াতে বের হলে তার প্রতিদিনের পথের সঙ্গী হয় একটি কুকুর। হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতার কারণে লেখক দুদিন বেড়াতে যেতে পারলেন না। দুদিন না দেখার কারণে কুকুরটি লেখককে দেখতে আসে। আবার বিদায়ের দিন কুকুরটি কুলিদের সঙ্গে ক্রমাগত ছোটাছুটি করে খবরদারি করতে লাগল, কোথাও যেন কিছু খোয়া না যায়। ট্রেন থেকে লেখক দেখলেনÑ স্টেশনের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে চেয়ে আছে অতিথি। এতেও লেখকের প্রতি কুকুরটির ভালোবাসাই ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ক্রেতা কালাপাহাড়কে নিতে এসে ওর পায়ে বাঁধা রশি ধরে হাজার টানাটানি করে একচুলও সরাতে পারল না। কালাপাহাড়ের দুচোখ বেয়ে শুধু টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ল। অবশেষে কাঁদতে কাঁদতে অভিমানে সে দুনিয়া থেকেই বিদায় নেয়। এতে মনিবের প্রতি কালাপাহাড়ের প্রবল ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের প্রতি অতিথি তথা কুকুরটির আচরণের দিকটি প্রকাশ করে।
ঘ. “মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিক থেকে উদ্দীপকের নাইমুদ্দিনের অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত” মন্তব্যটি যথার্থ।
আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও গৃহে অসংখ্য অবলা প্রাণী বাস করে। এদের সাথে কখনো কখনো মানুষের হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্ক কখনো এতটাই প্রবল হয় যে, এদের সাথে বিচ্ছেদের ব্যথা মানুষ কিছুতেই মেনে নিতে চায় না। উদ্দীপকের নাইমুদ্দিন এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতিতে এ বিষয়টিরই প্রকাশ ঘটেছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের প্রতি কুকুরটির আচরণে লেখকের মনে তার জন্য অকৃত্রিম মমত্ববোধ জেগে ওঠে। তাই দেওঘর থেকে বিদায় নেওয়ার দিন এসে পড়লেও কুকুরটিকে ছেড়ে যেতে খারাপ লাগার কারণে লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন। এর মূল কারণ ছিল কুকুরটির প্রতি লেখকের অকৃত্রিম ভালোবাসা। উদ্দীপকে দেখা যায়, পোষা হাতি কালাপাহাড়ের সাথে নাইমুদ্দিনের দীর্ঘ ১০ বছরের সম্পর্ক। অভাবের তাড়নায় একসময় সে কালাপাহাড়কে বিক্রি করে দেয়। এতে অভিমানে কালাপাহাড় এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিলে নাইমুদ্দিন গভীরভাবে শোকাহত হয়।
উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
নির্বাচিত সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন -৩ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ায় ফারহান ঢাকা চলে যাচ্ছে। ট্রেন ছেড়ে দেয়ার মুহূর্তেও সে দেখে টমি তার বগির জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। মাত্র মাস খানেক আগে এ কুকুরটা তাদের বাড়িতে আসে। অত্যন্ত ক্ষুধার্ত মনে হওয়ায় ফারহান কুকুরটাকে খাবার দিয়েছিল। আর সেই থেকেই কুকুরটা সারাক্ষণ তার আশেপাশে ঘুর ঘুর করে। ফারহানের কেমন মায়া পড়ে যায় কুকুরটার উপর। সে নিয়মিত ওকে খাবার দিতে যায়। আর আদর করে ওর নাম দেয় টমি।
ক. ‘বড়দিদি’ উপন্যাস কোন পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়? ১
খ. চাকরদের দরজা খোলার শব্দ শুনে অতিথি ছুটে পালিয়েছিল কেন? ২
গ. উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ.“উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না”Ñ মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। ৪
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘বড়দিদি’ উপন্যাসটি সর্বপ্রথম ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
লেখক তার প্রিয় অতিথিকে খেতে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন বাড়ির মালি বউকে। চাকরদের তাতে ভীষণ আপত্তি ছিল। কারণ বেঁচে যাওয়া খাবারের অংশীদার ছিলেন তিনি। তাই মালি বউ লেখকের অতিথিকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময় সুযোগ পেয়ে অতিথি লেখকের দুয়ারে এসে নীরব ভাষায় অভিযোগ জানায় আর মালি বউয়ের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে পুনরায় যেন আবার মার খেতে না হয় সেজন্য ছুটে পালায়।
গ. উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রতিফলিত দিক হচ্ছে মানবেতর প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক দেওঘর ছেড়ে আসার সময় অতিথি কুকুরের জন্য তীব্র টান অনুভব করেন; ঠিক একইভাবে উদ্দীপকের ফারহান ঢাকা ছাড়ার সময় প্রিয় কুকুর টমির জন্য তীব্র টান অনুভব করেন। গল্পকার এবং উদ্দীপকের ফারহান উভয়েই মানবেতর প্রাণীর সাথে এক আত্মীক ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে যান।
লেখক যেরূপভাবে তার অতিথিকে ভালোবেসেছিলেন, অতিথির আঘাত পাওয়ায় মর্মাহত হয়েছিলেন এবং অতিথির সাহচর্যে আনন্দিত হয়েছিলেন, উদ্দীপকের ফারহানও তার প্রিয় কুকুর টমির উপর একই রূপ টান অনুভব করে ট্রেন ছেড়ে যাবার সময়। তাই বলা যায় ভালোবাসার দিকটি উদ্দীপক এবং গল্পে সমানভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমগ্রভাবকে ধারণ করে না” মন্তব্যটি যথাযথ।
লেখক দেওঘর যাবার পর তার একাকীত্বের অবসান ঘটে মানবেতর একটি প্রাণীর আন্তরিক সাহচর্যে। এই প্রাণীটি কুকুর কিন্তু লেখক তাকে অভিহিত করেন অতিথি হিসেবে। তবে লেখক তার অতিথিকে আদর-আপ্যায়ন করার দিক দিয়ে বেশ অসহায়ত্বের পরিচয় দিয়েছেন। মালি বউ লেখকের অতিথিকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছেন, লেখক এহেন কার্যের কোনো প্রতিবাদ করেননি।
অপরদিকে ফারহান তার প্রিয় টমিকে নিয়মিত খাবার দিত, আদর-যতœ করত। আর টমিও তার প্রতিদান স্বরূপ সর্বক্ষণ তার পাশে পাশে থাকত। তাই ফারহান যখন টমিকে ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে তখন খুব খারাপ লাগে তার।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক বায়ু পরিবর্তন করতে গিয়ে কুকুরের সাথে অন্তরঙ্গতায় জড়ান। আর ফারহান তার নিজ বাড়িতে কুকুরটির সাক্ষাৎ পান। লেখক কুকুরের তেমন যতœ নিতে না পারলেও ফারহান পেরেছে। তাই বলা যায় উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমগ্রভাবকে ধারণ করে না।
প্রশ্ন -৪ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
লোপা কবুতর খুব ভালোবাসে। তার দুটো কবুতর আছে। একটির নাম হীরা, অন্যটির নাম মানিক। হীরা-মানিক বলে ডাকলেই উড়ে এসে লোপার ঘাড়ে-মাথায় বসে ‘বাক-বাকুম’ ‘বাক-বাকুম’ শব্দ করে। নিজের হাতে ওদের খাইয়ে দেয় লোপা। লোপার মা বলে, “কবুতর নিয়ে এত বাড়াবাড়ি আমার ভালো লাগে না।” মার কথা শুনে চুপ করে থাকে লোপা।
ক. পা-ুর শব্দের অর্থ কী? ১
খ. লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন কেন? বুঝিয়ে লেখ। ২
গ. উদ্দীপকে লোপার মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন চরিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়? Ñব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ.“উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব একই।” Ñউক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। ৪
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পা-ুর শব্দের অর্থ বিবর্ণ।
খ. গল্পকথক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন।
বায়ু পরিবর্তন বলতে খোলামেলা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কিছুদিনের জন্য ভ্রমণকে বোঝায়। এর ফলাফল সম্পর্কে গল্পকথকের ধারণা খুব ইতিবাচক ছিল না। তবু চিকিৎসকের নির্দেশ পালনের জন্য তিনি দেওঘর নামক জায়গাটিতে গিয়েছিলেন।
লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য এবং সুস্থ হওয়ার আশায় দেওঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকাকালীন অবস্থায় একটি কুকুরের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। কুকুরটি লেখক বাইরে বের হলেই সংকেত দিত, লেখকের প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ শুনত। যেমনটি আমরা উদ্দীপকের লোপার মধ্যে লক্ষ করি। লোপার প্রিয় কবুতরগুলো লোপার ডাকে সাড়া দিয়ে মাথায় এসে বসত। বাকুম-বাকুম ডাকত।
উদ্দীপকের লোপা এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক উভয়েই পাখি এবং প্রাণীর প্রতি নিজের অজান্তেই অনুরক্ত হয়েছেন। পাখি এবং পশুর সাহচর্য উভয়কে আনন্দ দিয়েছে। তাই পশুপ্রীতি ও আনন্দ পাওয়ার দিক থেকে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব একই”।Ñ উক্তিটি যথাযথ।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে আমরা দেখি লেখক তার অতিথির (কুকুর) উপর খুবই প্রীত হন। যে বিষয়টি বাড়ির মালিনী ভালো চোখে দেখত না। উদ্দীপকের লোপার মাও লোপার কবুতর প্রীতিকে ভালো চোখে দেখত না।
লেখক দেওঘর গিয়ে কুকুরের অন্তরঙ্গতা ও সান্নিধ্যে মুগ্ধ হন এবং মালি বউকে তার প্রিয় কুকুরকে খাবার দেখার অনুরোধ করেন। মালি বউ কুকুরটিকে একেবারেই সহ্য করতে পারত না এবং তাকে মেরে তাড়িয়ে দিত। লেখক পরবর্তী সময় মালি বউয়ের এ আচরণ সম্পর্কে জানতে পেরে হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করেছিলেন। উদ্দীপকের লোপাও কবুতরের কারণে মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে একইরূপ কষ্ট অনুভব করেছে।
তাই উপর্যুক্ত আলোচনায় শেষে বলা যায় প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা এবং কষ্ট অনুভব করার দিক দিয়ে উদ্দীপক এবং অতিথির স্মৃতি গল্পের মূলভাব একই।
প্রশ্ন -৫ ল্ফ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জামাল একটি ছাগল পোষে, তার নাম পুটু। জামাল তার নিজের খাবার এবং বাজার থেকে ভালো ভালো খাবার কিনে এনে খাইয়ে তাকে নাদুস-নুদুস করে তুলেছে। সে পুটুকে খুবই ভালোবাসে। চোরেরা একদিন পুটুকে চুরি করে নিয়ে গেলে পুটুর শোকে জামাল অসুস্থ হয়ে যায়।
ক. ভজন শুরু হয় কখন? ১
খ. কুকুরটি ভিতরে ঢোকার ভরসা পেল না কেন? ২
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটির সাদৃশ্য আছে তা বর্ণনা কর। ৩
ঘ.“উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সামগ্রিক দিকটি তুলে ধরেনি” Ñবিশ্লেষণ কর। ৪
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. রাত তিনটে থেকে ভজন শুরু হয়।
খ. ১নং অনুশীলনী প্রশ্নের ‘খ’ নং উত্তর দ্রষ্টব্য।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের পশুপ্রেমের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দেখা যায় যে, দেওঘরে গিয়ে লেখকের একটা কুকুরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। কুকুরের আনুগত্য ও ভালোবাসার কারণে লেখক কুকুরটাকে ‘অতিথি’ হিসিবে সম্বোধন করতেন। এছাড়াও লেখক একজন ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু দেওঘর থেকে আসার সময় তাঁর মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল কুকুরটির জন্য। পশুপ্রেমের এই দৃষ্টান্তের সাথেই উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে।
উদ্দীপকের দেখা যায়, জামাল পুটু নামক ছাগলটিকে খুবই ভালোবাসে। বাজার থেকে ভালো খাবার কিনে এনে পুটুকে খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলে এবং চোরেরা পুটুকে চুরি করে নিয়ে গেলে জামাল পুটুর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এটিও পশুর প্রতি প্রেমের একটা বিরল দৃষ্টান্ত।
ঘ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে যতগুলো দিক প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকে তার সবগুলো দিক প্রকাশিত হয়নি।
যেসব পশু লোকালয়ে বাস করে অভ্যস্ত, তাদের সাথে মানুষের এক প্রকার অদৃশ্য সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এসব পশু লোকালয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে অবস্থান করে। যেমন : কুকুর, বিড়াল, ছাগল, ময়ূর ইত্যাদি। এসব প্রাণীর প্রতি অনেক মানুষের ভালোবাসা রয়েছে।
উদ্দীপকে পশুর প্রতি প্রেমের এক দারুণ দৃষ্টান্ত প্রকাশিত হয়েছে। জামাল তার ছাগল পুটুকে এই মাত্রায় ভালোবাসে যে পুটুর জন্য জামাল অসুস্থ হয়ে পড়ে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে পশুর প্রতি আন্তরিকতার এ বিষয়টি বেশ স্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের জীবনে অতিথি মাত্র কয়েকদিন ছিল। লেখক দেওঘরে অতিথি তথা কুকুরটাকে নিয়ে আসেননি। আবার কুকুরটার জন্য লেখক যে পরিমাণ খাবার বরাদ্দ করেছেন, তা কুকুরটা ঠিকমতো পেয়েছে কিনা, এসব বিষয়ে তার খেয়াল ছিল মনে মনে। এসব বিষয় উদ্দীপকে নেই। এসব দিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ হয়েছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।