স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয়: ভাষা আন্দোলন ও বাঙ্গালির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
৪.০১ পূর্ববাংলার জন্মলগ্নের দলসমূহ সম্পর্কে আলোচনা কর ।
অথবা, ১৯৪৭ সালের রাজনৈতিক দলসমূহের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির পূর্বে অখণ্ড বাংলার ক্ষমতায় ছিল বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা প্রাপ্তির সময় যেসব রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম বাংলায় চালু ছিল সেগুলোর মধ্যে মুসলিম লীগ ছিল অন্যতম। মুসলিম লীগ ছাড়াও এসময় আরও কতিপয় রাজনৈতিক দলসমূহ বিদ্যমান ছিল।
এসব রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ তৎকালীন সময়ে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এসব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড ভারতের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
পূর্ববাংলার জন্মলগ্নের দল : দেশভাগের পূর্বে ও পরে মুসলিম লীগের সরকার বিরোধী অংশের নেতাকর্মীরা নতুন কতকগুলো দল গঠন করে । নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. গণআজাদী লীগ : তৎকালীন পাকিস্তানে নাজিমুদ্দিন বিরোধী অংশটি মূলত তরুণ কর্মীদের নিয়ে গড়ে ওঠে। বাম রাজনীতির সাথেও এরা কিছুটা যুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই তারা একটি আলাদা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে।
আর এ সংগঠনটি গঠিত হয় ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে যা ‘গণআজাদী লীগ’ নামে পরিচিত এবং এর আহ্বায়ক নিযুক্ত হয়েছিলেন কমরুদ্দিন আহমদ কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগে নেতৃত্বের বিরোধিতা করার উদ্দেশ্যেই এ সংগঠনের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু এ সংগঠন বেশিদিন টিকতে পারেনি।
২. পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ : পূর্ববাংলার তরুণযুবক রাজনৈতিক কর্মীদল তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে ১৯৪৭ সালের ৬-৭ সেপ্টেম্বর ‘পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ’ নামক সংগঠন গঠন করে এটি গঠিত হয় ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস চেয়ারম্যান খান সাহেব আবুল হাসনাতের বেচারাম দেউরির বাসভবনে।
৩. তমদ্দুন মজলিশ তমদ্দুন মজলিশ নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সূচনায় এ সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
৪. অন্যান্য দল : পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘রেল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’, ‘রেল কর্মচারী লীগ’ ইত্যাদি ব্রিটিশ আমল থেকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও কৃষক সভা নামক একটি সহযোগী কৃষক সংগঠনও এর সাথে যুক্ত ছিল।
কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের চাপের মুখে এসব দলের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়ে যায় ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
৫. আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা : ঢাকাস্থ কে. এম. দাস লেনের বিখ্যাত রোজগার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন পূর্ববাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কর্মী সদস্যদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান।
এ সম্মেলনে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয় ১৯৪৯ সালের মে মাস থেকে পূর্ববঙ্গে খাদ্যের অভাব, ঢাকা শহরে পানির অভাব, নিত্যব্যবহার্য পণ্যের চড়া মূল্য ইত্যাদি সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এছাড়াও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, গ্রামে গ্রামে কৃষক বিদ্রোহ, কমিউনিস্টদের তৎপরতা, রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক ইত্যাদি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এমতাবস্থায় ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামক একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এ দলটির সভাপতি ছিলেন ।
৬. কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী দল, যুবলীগ : পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির শাখা হিসেবে ‘পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি’ গঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ৩ মার্চ। কিন্তু এ পার্টির নেতৃত্বে হাজং এর কৃষক আন্দোলন এবং তেভাগা আন্দোলন চলছিল। যার ফলে পূর্ববাংলা সরকার এ পার্টির নেতাকর্মীদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালায়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
ফলে অনেক মুসলমান নেতাকর্মী পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেন। আর এ সংগঠনের ৩৭ জন নেতাকর্মীর মধ্যে ৯ জনই ছিলেন কমিউনিস্ট।
এরপর ১৯৫১ সালের মার্চ মাসে ‘পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ’ নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ধর্ম নিরপেক্ষতা, সাম্রাজ্যবাদ এবং সামন্তবাদ বিরোধিতা, গণতন্ত্র, বিশ্বশান্তি, সকলের জন্য চাকরির সুযোগ ইত্যাদি ছিল এ দলের মূলমন্ত্র।
এ যুবলীগ সংগঠন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই পরবর্তীতে এর বিভিন্ন নেতাকর্মীকে নানারকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এসময় যুবলীগ নামে কাজ করাটা তখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে ১৯৫২ সালের এপ্রিলে ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’ নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা পায় এবং ৩১ ডিসেম্বর গণতন্ত্রী দল নামক একটি রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে।
৭. ন্যাপ গঠন : ঢাকায় একটি মহাসম্মেলনে ১৯৫৭ সালের ২৫ জুলাই আওয়ামী লীগভুক্ত বামপন্থি নেতৃবৃন্দ, লুপ্ত হয়ে যাওয়া গণতন্ত্রী দলের সদস্যরা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ন্যাপ (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি) নামক একটি নতুন পার্টি গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ন্যাপ এবং পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী।
এ সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে সাম্প্রদায়িকতা এবং শোষণ মুক্ত একটি রাষ্ট্রে পরিণত করা, জনসাধারণের আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধন করা, স্বায়ত্তশাসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
৮. কৃষক-শ্রমিক পার্টি : এ. কে. ফজলুল হক ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর ১৯৫৩ সালের ২৩ আগস্ট তার কৃষক-প্রজা পার্টিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তখন এ পার্টির নামকরণ করা হয় ‘কৃষক শ্রমিক পার্টি’।
এ দলটি গঠিত হয় ১৯৫৪ সালের পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে। কিন্তু ১৯৫৮ সালের পর এ দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যায় ।
৯. পাকিস্তান ন্যাশনাল কংগ্রেস : ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পূর্ববাংলা কংগ্রেস দলীয় সদস্যরা তাদের পার্টিকে ‘পাকিস্তান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
এসময় পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে সুপরিচিত ছিল তাই সংখ্যালঘু হিন্দুদের এ রাষ্ট্রে বসবাস করা দুরূহ হয়ে উঠেছিল। আর তাই ইসলামি দেশ পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষাই ছিল এ দলের উদ্দেশ্য ।
১০. খিলাফতে রব্বানী পার্টি : ‘খেলাফতে রব্বানী পার্টি’ গঠিত হয় ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। অনেকের ধারণা ১৯৫২ সালের ২০ এপ্রিল এ পার্টি গঠিত হয়। এ পার্টির একান্ত এবং প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শোষণহীন ইসলামি সমাজজীবন কায়েম করা।
১১. নেজামে ইসলাম : এ পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালের ১ আগস্ট। কুরআন এবং সুন্নাহর শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে কুরআন এবং সুন্নাহর শিক্ষামূলক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এ পার্টির মূলমন্ত্র ।
১২. জামায়াতে ইসলাম : এ দলটি ব্রিটিশ আমলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধী ছিল। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে এ দল পাকিস্তানকে দলীয় আদর্শ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমর্থন দিয়েছে। এ দলটি মূলত আদর্শভিত্তিক দল ছিল।
যার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হয় বলে এ দলটি আপামর জনসাধারণের জনপ্রিয়তা লাভ করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু তারপরেও ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানি নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে এ দল প্রথম জয়লাভ করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্বাধীনতাপূর্ব অবিভক্ত বাংলা এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উপরে উল্লিখিত রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু স্বভাবতই নবীন রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তথা অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়।
যার কারণে বিভক্ত বাংলা বার বার প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু তারপরেও স্বাধীন বাংলার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাময়িক আনাগোনা বাংলার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে ।
৪.০২. মুসলিম লীগের পতনের কারণ সম্পর্কে আলোচনা।
অথবা, মুসলিম লীগের পতন সম্পর্কে আলোচনা কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিল অধিবেশনে প্রথম নিখিল ভারত মুসলিম লীগ বিভক্ত করে পাকিস্তান মুসলিম লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ মুসলিম লীগ তৎকালীন সময়কার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল।
এ রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে অন্যান্য অনেক সংগঠন যেমন— গণআজাদী লীগ, পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ ইত্যাদি রাজনৈতিক দলগুলো গড়ে ওঠে। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিলতার সম্মুখীন হয়ে ধীরে ধীরে মুসলিম লীগের অবক্ষয় ঘটে ।
মুসলিম লীগের পতনের কারণ : নিম্নে মুসলিম লীগের পতনের কারণসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. লিয়াকত আলী খানের নিয়ন্ত্রণ : ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির পর এক কাউন্সিল অধিবেশনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত হয় কিন্তু এসময় সোহরাওয়ার্দী মুসলিম লীগকে অসাম্প্রদায়িক দলে পরিণত করার প্রস্তাব রাখেন।
কিন্তু তাঁর এ প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয় পাকিস্তান মুসলিম লীগের গণতন্ত্র প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে একটি কমিটি গঠন করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। তিনি ছিলেন এ কমিটির আহ্বায়ক।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
জিন্নাহর জীবদ্দশায় মুসলিম লীগ তার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তার মৃত্যুর পর লিয়াকত আলী খান এ দলকে নিয়ন্ত্রণ করেন, যা মুসলিম লীগের অবক্ষয়ের একটি প্রধান কারণ ।
২. দলে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তকরণ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সময় মুসলিম লীগে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তকরণ স্থগিত রাখা হয়েছিল কিন্তু লিয়াকত আলী খান তথা পাকিস্তানি নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে যখন মুসলিম লীগ ছিল তখন তাদের কাউন্সিলের ৪৬৫ জন সদস্যের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত করা হয় মাত্র ১৮০ জনকে যা ছিল পাকিস্তানি নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতা ।
এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রগতিশীল কর্মী এবং নেতাদের মধ্যে দারুণ ক্ষোভের জন্ম হয়। এসময় দলের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন, বগুড়ার মোহাম্মদ আলীকে বেছে নেওয়া হয় ।
যার ফলে দলে গণতন্ত্র চর্চা ব্যাহত হয় এবং দল সরকারের অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আলাদা আলাদা দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন।
৩. আওয়ামী লীগ গঠন : পশ্চিম পাকিস্তানে ১৯৪৯ সালের মে মাসে মানকী শরীফের পিরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নামক একটি নতুন দল গঠিত হয়। আর এ দল গঠনের সাথে সাথে মুসলিম লীগের পতনের সূচনা ঘটে। পূর্ববাংলার মুসলিম লীগ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে ।
৪. আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন : মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের জুন মাসে পূর্ববাংলায় আওয়ামী মুসলিম লীগ নামক একটি সংগঠন গঠিত হয়। এ সংগঠনটি গঠিত হওয়ার সাথে সাথে মুসলিম লীগ আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এ দলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
৫. টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে পরাজয়ঃ মুসলিম লীগের নেতা খুররম খান পন্নী ১৯৪৯ সালের টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামসুল হকের নিকট বিপুল ভোটে পরাজিত হন। আর তাই এ পরাজয়ে শাসকগোষ্ঠী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পূর্ববাংলা প্রাদেশিক পরিষদের ৩৪টি আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে দেন।
যার ফলে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী মুসলিম লীগ ত্যাগ করে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন।
৬. মওলানা আকরম খাঁর পদত্যাগ : মুসলিম লীগের নেতাকর্মীবৃন্দ দল ত্যাগ করলে দলের মধ্যে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ. বিশৃঙ্খলা এমন পর্যায় পৌঁছায় যে, পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগ সভাপতি মওলানা আকরম খাঁ ১৯৫১ সালের জানুয়ারি মাসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এছাড়া ১৯৫১ সাল পর্যন্ত পূর্ববাংলায় মুসলিম লীগের কোনো প্রকার কাউন্সিল অধিবেশন বসেনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
৭. ভাষা আন্দোলনের প্রভাব : মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা ভাষা আন্দোলনে অনেকটা কমে আসে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মুসলিম লীগ পূর্ববঙ্গ হতে চিরকালের জন্য বিতাড়িত হয়।
এসময় দলের সভাপতি নূরুল আমীন পদত্যাগ করেন। তার সাথে আরও পদত্যাগ করেন পার্টির সহ-সভাপতি খাজা হাবিবুল্লাহ, ট্রেজারার এম. এ. সলিম, শাহ আজিজুর রহমান, মঈনুদ্দীন চৌধুরী এবং সবুর খান ।
৮. কেন্দ্রীয় কোন্দল : এসময় মুসলিম লীগের কেন্দ্রেও বিভিন্ন ধরনের কোন্দল সৃষ্টি হয়। কারণ তখন মুসলিম লীগ কৃষক শ্রমিক পার্টির সাথে কোয়ালিশন করতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালের ২৮-২৯ জানুয়ারি পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে আবদুর রব নিশতার সভাপতি নির্বাচিত হন।
এসময় ইস্কান্দার মির্জার অনুগত একটি দল মুসলিম লীগের কিছু সদস্যদের সমন্বয়ে ১৯৫৬ সালের মে মাসে রিপাবলিকান পার্টি গঠন করে । যার ফলে পশ্চিম পাকিস্তান মুসলিম লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেন।ফলে প্রথমবার মুসলিম লীগ কেন্দ্রীয় ক্ষমতা হারায় ।
৯. আইয়ুব খানের নিয়ন্ত্রণ : আইয়ুব খান ১৯৬৩ সালে কনভেনশনে মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করে। তার তত্ত্বাবধায়নে ফজলুল কাদের চৌধুরী, সবুর খান, মোনেম খানও কনভেনশন মুসলিম লীগে যোগদান করেন। কিন্তু আইয়ুব এবং আইয়ুবের অনুগতরা কেউই দলের উন্নতি সাধনের জন্য সচেষ্ট ছিলেন না।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
মুসলিম লীগ আইয়ুবের স্বেচ্ছাচারিতার কোনো প্রতিবাদ না করে বরং প্রশ্রয় দিয়েছে যার ফলে এ দল আরও পিছিয়ে গিয়েছে।
১০. কাউন্সিল মুসলিম লীগ গঠন : কনভেনশন মুসলিম লীগ গ গঠনের পরপরই কাউন্সিল মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। এ সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে মুসলিম লীগ আরও দুর্বল হয়ে যায় ১৯৬২ সালের ২৭ নভেম্বর এ দলটি গঠিত হয়।
১১. আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন মূলত পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের সমন্বয়ে কাউন্সিল মুসলিম লীগ দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ সময় খাজা খয়েরউদ্দিন পূর্ব পাকিস্তানের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। কাউন্সিল মুসলিম লীগ এবং এর নেতাকর্মীরা আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিল । ১৯৬৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এ সংগঠন মিস ফাতিমা জিন্নাহর পক্ষে ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট; যেমন— পিডিএম, ডাক ইত্যাদি এ দলের সাথে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ দল সর্বদা পশ্চিম পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছে যা মুসলিম লীগের জন্য মারাত্মক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
১২. কাইয়ুমপন্থি দলের উদ্ভব : মুসলিম লীগ যখন একেবারেই স্থবির হয়ে যায় এবং বিভক্ত হয় তখন কাইয়ুমপন্থি নামক একটি দলের উদ্ভব ঘটে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ দলও কাউন্সিল মুসলিম লীগের ন্যায় মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কাজ করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক উত্থানপতনের মুখে পড়ে মুসলিম লীগ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এ দলের বিভক্তিকরণের মাধ্যমে পরবর্তীকালে পূর্ববাংলায় বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়।
পূর্ববাংলার সার্বিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণ, তথা রাজনৈতিক দলসমূহের উন্নতি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলিম যুবলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সর্বোপরি বাংলার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অবক্ষয়ের জন্য মুসলিম লীগের পতন ঘটেছে ।
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)
- অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-১)
৪.০৩. আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি ব্যাখ্যা কর ।
অথবা, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা প্রাপ্তির পূর্বে অবিভক্ত বাংলার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিল মুসলিম লীগ।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক এবং একপেশে কার্যকলাপের জন্য জনগণ নতুন রাজনৈতিক প্লাটফরম খোঁজার চেষ্টা করছিলেন। ঠিক সেসময় বাংলার কিছু দরদি নেতা নতুন একটি রাজনৈতিক দলের পতাকা নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হলেন। তারা জনগণকে নতুন পথ দেখাতে প্রতিষ্ঠা করলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ।
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি নিম্নে আওয়াী লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা করা হলো :
১. ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের অপব্যাখ্যা : ১৯৪০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে মুসলিম লীগের এক সম্মেলনে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য আলাদা আলাদা রাষ্ট্র গঠন সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করেন ।
তিনি এ প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। কিন্তু মুসলিম লীগের কায়েমি স্বার্থবাদী নেতারা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে এ প্রস্তাবকে ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ বলে প্রচার করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
১৯৪৬ সালের দিল্লিতে মুসলিম লীগের এক কনভেনশনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ লাহোর প্রস্তাবের ‘স্টেটস’ এর পরিবর্তে ‘স্টেট’ কথাটি বসিয়ে মূল লাহোর প্রস্তাবের পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেন। এর ফলে পূর্ববঙ্গ, আসাম এবং উত্তর পশ্চিম পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান নিয়ে একটিমাত্র রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করা হয় ।
২. পূর্ববাংলার নেতাদের অবমূল্যায়ন : হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে অসামান্য অবদান রাখলেও তারা তার অবদানের কোনো মূল্যায়ন করেনি। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে খাজা নাজিমুদ্দিন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিকট হেরে গিয়ে রাজনীতিতে নীরব ভূমিকা পালন করে।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর শাসকগোষ্ঠী তাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম গভর্নরের পদে এবং ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পরও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গভর্নর না করে খাজা নাজিমুদ্দিনকে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল পদে বসিয়েছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
৩. গভর্নর জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রীর পদ কুক্ষিগত : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের সর্বপ্রথম গভর্নর জেনারেলের পদ গ্রহণ করলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি “কায়েদে আজম’ উপাধি ধারণ করেন। আর পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন উত্তর ভারত থেকে আগত লিয়াকত আলী খান।
পূর্ববাংলায় শতকরা ৫৬ ভাগ লোক বাস করলেও এখান থেকে গভর্নর জেনারেল বা প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়নি। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। এছাড়া শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাব অনুসারে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও তাকে অবহেলা করা হয়।
পূর্ববাংলার সমস্ত যোগ্য রাজনীতিবিদ যারা পাকিস্তানের জন্য নিজেদের উৎসর্গ পর্যন্ত করতে প্রস্তুত ছিলেন তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতার ধারেকাছেও আসতে দেওয়া হয়নি।
৪. রাজধানী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালত পশ্চিম পাকিস্তানে স্থাপন : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর এর রাজধানী স্থাপন করা হয় করাচিতে। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ পূর্ববাংলায় বাস করা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গে রাজধানী স্থাপন করা হয়নি। এছাড়া সকল সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য সকল গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সদর দপ্তর করাচিসহ পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে স্থাপন করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
৫. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি অগ্রাহ্যকরণ : বাংলা ছিল তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা। আর মাত্র ৩.২৭% অর্থাৎ সংখ্যালঘু মানুষ উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তা সত্ত্বেও আইন ব্যবস্থা, শিক্ষাক্ষেত্র, অফিস-আদালত ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে এ ভাষা অর্থাৎ উর্দু ভাষাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো।
এমনকি পাকিস্তানের পাবলিক সার্ভিসের বিষয় তালিকা থেকে এবং নৌবিভাগ এবং অন্যান্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বাংলা ভাষাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ সময় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক কাজ তথা বিভিন্ন বিভাগের যেমন— আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে উর্দু এবং ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি সরকারি ভাষার মর্যাদা প্রদানের প্রস্তাব করেন। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবনার ওপর একটি আলোচনা ন অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
এ আলোচনা চলাকালীন সময়ে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। কিন্তু তিনি অমুসলিম বলে মুসলিম নেতৃবৃন্দ তাঁর এ প্রস্তাবের মাঝে প্রাদেশিকতার ছায়া দেখতে পায়। আর তাই তার প্রস্তাবকে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
৬. মোঘলটুলি ওয়ার্কাস ক্যাম্প পাকিস্তানের রাজনীতিতে মুসলিম লীগের প্রচণ্ড দাপট এবং প্রশাসনিক অবস্থা থেকে সুবিধা নেওয়ার কারণে রাজনৈতিক নেতারা দলের প্রতি তেমন নজর দিতে পারেনি। তাই দলীয় কোন্দল নানাভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এসব কারণে খাজা নাজিমউদ্দিনের অনুগতদের মধ্যে র স্বভাবতই দারুণ বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
১৯৪৭ সালে একটি ক্ষুদ্র এবং বিক্ষোভরত অংশ ঢাকার মোঘলটুলিতে ‘ওয়ার্কস ক্যাম্প’ নামক একটি গ্রুপ গঠন করে। এ স্থানে দলের সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বসংঘাতের সৃষ্টি হয়। এমনকি দলের সভাপতি মাওলানা আকরম খাঁ সেখানে থেকেও ন সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
আর তখন ক্যাম্প গ্রুপ মুসলিম লীগ সভাপতি খালেকুজ্জামান ও তার সিদ্ধান্তের ওপর গুরুত্ব ਗੈ দেন । কিন্তু সেই সিদ্ধান্তও পরবর্তী সময়ে কোনো কাজে আসেনি । এভাবে বিভিন্ন অদলীয় কর্মকাণ্ড ও অন্তর্কোন্দল মুসলিম লীগের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল করে তোলে ।
৭. রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলন : ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলির কে. এম. দাস লেনের রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হয় এক রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলন। এ সম্মেলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সম্মেলনে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনার এক পর্যায়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব পাস হয়। সেই প্রস্তাব অনুসারে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হয়।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নবগঠিত এ দলটি শুরু থেকে পাকিস্তানকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে সচেষ্ট হয় । পাশাপাশি দলটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার অঙ্গীকার করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে।
শেখ মুজিবুর রহমানের সঠিক নেতৃত্ব দলকে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করেছে। অর্থাৎ বলা যায় আওয়ামী লীগের উত্থানপতন এবং কর্ম পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে পূর্ববাংলার মানুষ নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।
৪.০৪ আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা এবং বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর ।
অথবা, আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি ও বিকাশ আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্তির পূর্বে অবিভক্ত বাংলার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিল মুসলিম লীগ। আর স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরে মুসলিম লীগের অবক্ষয়ের সাথে সাথে পূর্ববাংলার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ স্থান দখল করে নেয়।
তবে মুসলিম লীগে সুবিধাবাদী শ্রেণির সদস্যরাই মূলত আওয়ামী মুসলিম লীগ দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ আওয়ামী মুসলিম লীগই পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দলের নেতৃত্বেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।
আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা এবং বিকাশ : নিম্নে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা : মাত্র দুই বছর পর থেকেই এ দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা চলে আসে। কারণ দলের মধ্যে তখন এক শ্রেণির সুবিধাবাদী লোক তাদের স্বার্থোদ্ধারের নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে। আর পূর্ববাংলার প্রশাসনিক ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ চলে যায় অবাঙালিদের দখলে। ফলে তারা বিভিন্ন দাবি থেকে সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে থাকে।
আর তাই নাজিমুদ্দিনের অনুগতদের মধ্যে স্বভাবতই বিক্ষোভের উদ্ভব ঘটে। ১৯৪৭ সালে এ ক্ষুব্ধ অংশটুকু ঢাকার মোগলটুলিতে ‘ওয়ার্কার্স ক্যাম্প’ নামক একটি গ্রুপ গঠন করে। কিন্তু খুব শীঘ্রই এ গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।
তখন ক্যাম্প গ্রুপ মুসলিম লীগ সভাপতি খালিকুজ্জামানও তার সিদ্ধান্তের ওপরই গুরুত্ব প্রদান করেন। এরই প্রতিবাদে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন ঢাকার কে. এম. দাস লেনের রোজগার্ডেনে এক সম্মেলনে প্রথম ওয়ার্কার্স ক্যাম্প গ্রুপ গঠিত হয়
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
এ সম্মেলনে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামক নতুন একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। মূলত পূর্ববঙ্গের খাদ্যাভাব, পানির অভাব, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি, কৃষক বিদ্রোহ, কমিউনিস্টদের তৎপর ভূমিকা, রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক প্রভৃতি সংকট নিরসনের উদ্দেশ্যে এ দলটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সূচনালগ্নে এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। নবগঠিত এ দল পাকিস্তানকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এ দলটি পূর্ববাংলার উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করে এবং এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিসমূহ হলো আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, পূর্ববাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জমিদারি প্রথাকে বিলুপ্ত করা, পাটশিল্পকে জাতীয়করণ করা ইত্যাদি।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
কিন্তু জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ পূর্ব পাকিস্তানের বিরোধী দল হিসেবে কাজ করেছে। তবে পরবর্তীতে তৎকালীন সময়ে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রগতিশীল সদস্যগণ দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা মনে করতেন ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিলে এ পার্টি ধর্মনিরপেক্ষ পার্টি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
১৯৫৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয় । এক কাউন্সিল মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আর তখন থেকেই এ পার্টির নাম হয় ‘আওয়ামী লীগ’। এ দলটি তখন ধর্মবর্ণনির্বিশেষে একটি সর্বসম্মত জনসাধারণের কল্যাণে নিয়োজিত একটি সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।
২. আওয়ামী মুসলিম লীগের বিকাশ : আওয়ামী মুসলিম লীগের সমসাময়িক পূর্ব পাকিস্তানে ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং হিন্দু তফসিলি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি ঘটে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে এসব রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তানে বিকশিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
যার ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের প্রভাব দ্রুতভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আবার এসময় পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুবের দল কনভেনশন মুসলিম লীগও ততটা বিকাশ লাভ করেনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
ফলে আওয়ামী লীগ একক শক্তিশালী দল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে রাজত্ব করে। এছাড়াও ন্যাশনাল কংগ্রেস এবং হিন্দু তফসিলি সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক দলগুলো ভেঙে যাওয়ার কারণে এদের অধিকাংশ সদস্য আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
ফলে আওয়ামী লীগের প্রভাব আরও বেড়ে যায়। এছাড়াও বাঙালিরা অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার হওয়ায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী দলগুলো তথা বামপন্থি দলগুলোও তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। কারণ বাঙালি জাতি ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকল মানুষকে একইভাবে মূল্যায়ন করেছে। ১৯৬০ সালে মওলানা ভাসানী আইয়ুব খানের ঘোর বিরোধিতা করেন।
আর এ ঘোর বিরোধিতা পূর্ববাংলার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে । বাঙালি জাতি আবার ঘোর অমানিশার অতল গহ্বরে তলিয়ে যায়। তিনি বামপন্থি রাজনীতিকেও মারাত্মকভাবে প্রশ্রয় দেন। যার ফলে তিনি ন্যাপকে শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হন। তখন দুই ধরনের ন্যাপ গঠিত হয়েছিল। যেমন-
১. মোজাফফর ন্যাপ বা মস্কোপন্থি ন্যাপ ও
২. ভাসানী ন্যাপ বা চীনাপন্থি ন্যাপ
কিন্তু এ ন্যাপের ভাঙনের ফলে আওয়ামী লীগের বিস্তারের সুযোগ আরও বৃদ্ধি পায়। আর ১৯৭০ সালের নির্বাচনই এর বড় প্রমাণ ।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬২টি সাধারণ আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ছয়দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়লাভের প্রধান কারণ ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বেই এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।
এ নির্বাচনে জয়লাভ করার পর ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এ সংগঠনটি নেতৃত্ব দেয় এবং বাংলাদেশ নামক স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। শেখ মুজিবুর রহমানের সঠিক নেতৃত্ব এ দলকে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করেছে। নানা উত্থানপতন এবং প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এ দল পূর্ববাংলায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস(অধ্যায়৪)রচনামূলক-১ *
শেখ মুজিবুর রহমান শক্ত হাতে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন এবং তিনি আওয়ামী লীগকে বাংলায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। আর এসব কিছুর জন্যই তিনি বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যতগুলো রাজনৈতিক দল বাংলার ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আলো ছড়িয়েছে তার মধ্যে আওয়ামী লীগ দলটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ দল একদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
বহু ঘাতপ্রতিঘাত উপেক্ষা করে, বহু কণ্টকময় পথ অতিক্রম করে আজ এ দল সারা পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে টিকে আছে । তাই আওয়ামী লীগের জন্মকালের সত্তর বছর পরেও এ দল বাংলাদেশের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।