HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | ভাষণ ও বক্তব্য ১১-১৫ | PDF Download : বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব ভাষণ ও বক্তব্য গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু ভাষণ ও বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
HSC ● বাংলা দ্বিতীয় পত্র ● বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
১১. ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপনের জন্য একটি ভাষণ তৈরি কর।
শ্রদ্ধেয় সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি, সম্মানিত বিশেষ অতিথি ও আমার সাথি আলোচকবৃন্দ আস্সালামু আলাইকুম।
সুধীমন্ডলী,
‘নিরাপদ সড়ক চাই’– এ দাবি সময়ের দাবি। এ দাবি অনেক দিনের। যখন থেকে আমরা সড়কপথের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, যান্ত্রিক যানবাহনের ওপর ভরসা করছি, তখন থেকেই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর দাবি অব্যাহত রয়েছে। কেননা সড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ, যান্ত্রিক যান এখন তার ইন্ধন, আর যারা যানচালক তারা মৃত্যুদূত।
শ্রোতামন্ডলী,
একসময় আমাদের দেশে ছোটবড় নদী-নালা, খাল-বিল জালের মতো ছড়িয়ে ছিল। গ্রাম থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে যেতে হলে নৌকাই ছিল একমাত্র মাধ্যম। ঝড় ছাড়া সে সময় নৌকাডুবি হতো না। কিন্তু এখন খাল-বিল শুকিয়ে গেছে, নদী-নালার অবস্থাও শোচনীয়। যে কারণে যাতায়াতের সুবিধার জন্য তৈরি হয়েছে জালের মতো সড়কপথ। সড়কপথে চলছে নানা রকম অসংখ্য যানবাহন। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে দুর্ঘটনা।
প্রতিদিন নিহত বা আহত হচ্ছে শত শত মানুষ। উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে বহু পরিবার অসহায় ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে। শিশু ও নারী মৃত্যুর কারণে পরিবারে নেমে আসছে হাহাকার। হতাশ ও দুর্বিষহ পরিবেশে পরিবার সক্ষমতা হারিয়ে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। সড়কপথের চরম নিরাপত্তাহীনতার কারণেই আজ মানুষ সোচ্চার হয়েছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশের অধিকাংশ সড়ক পর্যাপ্ত চওড়া নয়। সড়কে রয়েছে ভুতুড়ে বাঁক। আর এমন সড়কে প্রশিক্ষণবিহীন বা স্বল্প প্রশিক্ষিত চালকরা অসহায় কথহায় ও অকালমৃত্যু কারও কাম্য নয়। ট্রাফিক ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং ট্রাফিকের অবহেলাও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সংশ্লিষ্ট দফতর কখনো কখনো ব্যবস্থা নিচ্ছে, কিন্তু তা যথাযথ ও পর্যাপ্ত নয়।
সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে নানাভাবে। কিন্তু তারপরও ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। কাজেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আর উপায় নেই। মৃত্যুর দৃশ্য দেখতে দেখতে আর মৃত্যুর সংবাদ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। অর্থাৎ নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি আমরা সবাই। এর জন্য সামাজিক সচেতনতা দরকার। আসুন, গ্রামে-গঞ্জে, দফতরে, সরকারি মহলে সোচ্চার দাবি উত্থাপন করি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
১২. ‘নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের অন্তরায়’ শিরোনামে একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, ‘নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের অন্তরায়’ শিরোনামে প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।
শ্রদ্ধেয় সভাপতি,
মাননীয় প্রধান অতিথি, সম্মানিত বিশেষ অতিথি, বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ ও সুধীমÐলী আসসালামু আলাইকুম ।
মানুষের মানবিক গুণগুলোর মধ্যে নৈতিক গুণাবলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মানুষের নৈতিক বোধের সঙ্গে মানবিক গুণাবলি বিশেষভাবে সম্পর্কিত। প্রত্যেকটি মানুষই সুনির্দিষ্ট নীতি-আদর্শ মেনে চলে, সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। যার প্রতিফলন ঘটে সমাজে ও রাষ্ট্রে। গঠনমূলক অর্থাৎ ইতিবাচক নীতিবোধ নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনে যেমন সহায়ক, তেমনি কল্যাণকর সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠনেও সহায়ক।
আমাদের দেশে বরাবরই নীতি ও নৈতিকতাবোধ ছিল প্রবল। যে কারণে সমাজে কোথাও কোনো দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ বা কোনো অন্যায় আবদারের চর্চা ছিল না। মানুষ অন্যায়কে এড়িয়ে চলত। কিন্তু ইদানীং এ নেতিবাচক বিষয়গুলোর চর্চা এমন ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে যে, মানবিক গুণাবলি যেন জিম্মি হয়ে গেছে। সরকারি তো বটেই, বেসরকারি পর্যায়েও এগুলো মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ফলে সৎ মানুষ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে আর ভালো মানুষ শুধু বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে। মেধাবীরা হচ্ছে অবহেলিত আর মেধাহীনরা হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত। তাদের প্রতিবাদ, তাদের লেখালেখি কোনো কাজে লাগছে না।
নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে মানুষের মধ্যকার সহযোগিতা, সহানুভূতিবোধ ক্রমশ লোপ পাচ্ছে। সেখানে জেগে উঠছে লোভ, লালসা, স্বার্থপরতা এবং পরস্ব গ্রাস করার জঘন্য প্রবণতা। ফলে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরে সন্ত্রাসী মনোভাব, উগ্র-উদ্ধত মনোভাব বেড়ে গিয়ে সুখ-শান্তি, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাÐ। কেননা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো জোর করে কেড়ে নিচ্ছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজরা। অসহায় ঠিকাদাররা তাদের কথামতো চাঁদা বা ভাগ দিয়ে কাজ করছে। এতে কাজের গতি মন্থর হচ্ছে, কাজের মান খারাপ হচ্ছে।
অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় কোনো কোনো কাজ পড়ে থাকছে দীর্ঘদিন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অনিয়ম জেঁকে বসেছে। আমরা আমাদের নৈতিকতা ধরে রাখতে পারলে কোনো অনিয়ম হতো না। সঠিক ব্যক্তিরা সঠিক কাজ পেত এবং উন্নয়নকর্মের মান ভালো হতো। যার ফল ভোগ করত জনগণ, দেশ ক্রমশ উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যেত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি।
শিক্ষাঙ্গনে দলবাজি, রাজনৈতিক প্রভাব, শিক্ষকদের মধ্যে অনৈক্য ও শিক্ষাদানে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে, তাদের ক্ষতি করছে। শিল্প ও ব্যবসায় ক্ষেত্রে শ্রমিকরা নানা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা তাদের প্রকৃত দায়িত্ব ভুলে অনৈতিকভাবে হাসপাতালের বাইরে তাদের নিজস্ব চেম্বারে চিকিৎসা কাজে ব্যস্ত থাকছেন।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র সবার চোখের সামনেই হচ্ছে। এ সবই নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে হচ্ছে। তাই নৈতিক অবক্ষয় উন্নয়নের পথে প্রবল বাধা সৃষ্টি করছে। নৈতিক অবক্ষয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। একই সাথে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষকে নৈতিকতা তথা নীতি-আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে প্রত্যেকটি কথায় ও কাজে।
রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মধ্যে নৈতিকতার চর্চা করে চরিত্রে সংশোধন আনতে হবে। তাহলেই নৈতিক অবক্ষয় কমে আসবে এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আসুন আমরা সবাই নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করি।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
১৩. ‘সা¤প্রদায়িক সহিংসতা অমার্জনীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার জন্য একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, ‘স¤প্রদায়গত স¤প্রীতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের উপযোগী একটি ভাষণ তৈরি কর।
শ্রদ্ধেয় সভাপতি, উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ও সুধীমÐলী, আসসালামু আলাইকুম। ‘সা¤প্রদায়িক সহিংসতা অমার্জনীয়’ শীর্ষক আজকের এই জনগুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভার ব্যবস্থা করায় আমি প্রথমেই আয়োজকদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।
সুধীমন্ডলী,
আজ আমাদের মাতৃভূমি এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সমাজের চারদিকে আজ বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস, সর্বোপরি অরাজকতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক হানাহানির ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দুঃসহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সা¤প্রদায়িক সহিংসতা। তাই দেশটা আজ ন্যুব্জ, কলঙ্কিত। এতে করে দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, অর্থনৈতিক মেরুদÐ ভেঙে যাচ্ছে, সর্বোপরি বিশ্বদরবারে আজ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থা আর চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না।
সুধীবৃন্দ,
আপনারা জ্ঞাত আছেন, আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ‘সা¤প্রদায়িক সহিংসতা অমার্জনীয়’। নিঃসন্দেহে একটি যুগোপযোগী ও জ্বলন্ত বিষয়কে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা হয়েছে। এজন্য আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার পূর্বের বক্তারা কেউ কেউ বাংলাদেশে সা¤প্রতিক সময়ে সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস কী রূপ ধারণ করেছে, তার চিত্র তুলে ধরেছেন।
কেউ বা আবার সা¤প্রদায়িক সহিংসতা কেন ছড়িয়ে পড়ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করেছেন। আমি আর সেদিকে যাচ্ছি না। আমি বরং সা¤প্রদায়িকতা কী এবং কীভাবে আমরা সা¤প্রদায়িক সহিংসতামুক্ত সমাজ তথা বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি, সেই সম্পর্কে দুটি কথা বলতে চাই।
বন্ধুগণ,
যে সা¤প্রদায়িক বিষবৃক্ষের হলাহল থেকে বেঁচে থাকার প্রয়াসে ভারতবর্ষ ভেঙে পাকিস্তান, তারপর পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস— আমরা আজও সেই হলাহল থেকে মুক্তিলাভ করিনি। প্রকৃত প্রস্তাবে ধর্ম ও সা¤প্রদায়িকতা দুটি স্বতন্ত্র বিষয়। ধর্মের লক্ষ্য মানবিক কল্যাণ; সা¤প্রদায়িকতার লক্ষ্য অন্য স¤প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ এবং বৈষয়িক স্বার্থ হাসিল। ঘৃণা, বিদ্বেষ ও বিচ্ছিন্নতাই সা¤প্রদায়িকতা ও সা¤প্রদায়িক সহিংসতার মূলকথা।
প্রেম, মৈত্রী ও করুণা সব ধর্মেরই মূলকথা— যা সব ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা, সা¤প্রদায়িক সহিংসতার বিরোধী। সাধারণভাবে একই স¤প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ অভিন্ন— এই ধারণা থেকেই সা¤প্রদায়িকতার, সা¤প্রদায়িক সহিংসতার উৎপত্তি। এই মনোভাব সংকীর্ণ স্বার্থবুদ্ধি প্রণোদিত। কোনো সুস্থ চেতনাসম্পন্ন মানুষ, সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা তা বরদাস্ত করতে পারে না। তাই এ প্রবণতা, অর্থাৎ সা¤প্রদায়িক সহিংসতা এক অমার্জনীয় অপরাধ।
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | ভাষণ ও বক্তব্য ৫-১০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | দিনলিপি লিখন ১-১০ | PDF Download
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
ধর্মের নামে গড়ে তোলা পাকিস্তানি রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সা¤প্রদায়িকতাকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ অর্জন করেছে তার কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। অসা¤প্রদায়িক রাষ্ট্রের স্বপ্ন স্বাধীনতার সোপান হলেও স্বার্থান্বেষীদের নানা চক্রান্ত আজ সে গৌরবকে কালিমালিপ্ত করছে। স্বাধীনতার সোপানের, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এ অপচেতনা ও গর্হিত কর্মের কোনো ক্ষমা নেই।
আপনাদের সবার প্রতি আমার উদাত্ত আহŸান সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে এ দুষ্কর্ম ও দুষ্টচক্রকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। প্রতিটি মানুষকে যথার্থ শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে হবে। সা¤প্রদায়িক সহিংসতার যথার্থ প্রতিকারের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের এ বাংলায় সা¤প্রদায়িক সহিংসতার ঠাঁই নেই।
পরিশেষে, এই জনগুরুত্বপূর্ণ সুন্দর অনুষ্ঠানটি যারা আয়োজন করেছেন এবং নেপথ্যে থেকে সুচারুভাবে যারা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন, তাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের আবারও শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আজ আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ সকল প্রকার সা¤প্রদায়িকতামুক্ত হোক, সকল প্রকার সহিংসতা নিপাত যাক, মানবতা মুক্তি পাক।
১৪. “ইভটিজিং প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনারে বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, “ইভটিজিং প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য প্রধান বক্তা হিসেবে একটি মঞ্চভাষণ প্রস্তুত কর।
“ইভটিজিং প্রতিরোধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনারের শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, উপস্থিত সুধীজন আসসালামু আলাইকুম।
প্রিয় সুধী,
আপনারা জানেন, ইভটিজিং মানে নারীদের বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করা। সাধারণত মেয়েদের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেওয়া কিশোর-তরুণদের বিভিন্ন মন্তব্য, শিস বাজানো, চোখে ইশারা করা, ওড়নার আঁচল ধরে টান দেওয়া, ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা দেওয়া, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা ইত্যাদিকে বলা হয় ইভটিজিং। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধনের ফলে মোবাইলে ছবি তুলে বিরক্ত করা, মিসকল বা আপত্তিকর মেসেজ পাঠানো এবং ই-মেইল বা ফেসবুকের মাধ্যমে মেয়েদের টিজ করাও ইভটিজিংয়ের পর্যায়ভুক্ত। এ অবস্থাকে কেন্দ্র করে দেশে আত্মহননের ঘটনা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে। অবিলম্বে এর প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সুধীবৃন্দ,
নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই ইভটিজিংয়ের মূল উৎস। কাজেই ইভটিজিং প্রতিরোধে নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করা উচিত। এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে আমাদের ছাত্রসমাজ। তারা নিজেরা সচেতন হয়ে অন্যদের সচেতন করে একটি সুন্দর সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে আমি তাদের অতীত ঐতিহ্য ও সুনামের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
ছাত্ররাই এদেশের ভাষা, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র প্রভৃতি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবার আগে এগিয়ে গিয়েছেন, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের অফুরন্ত প্রাণশক্তির প্রয়োগে আমাদের সমাজদেহ থেকে ইভটিজিংই শুধু নয়, যেকোনো বিষবাষ্প দূর হওয়া সম্ভব।
সুধীমন্ডলী,
ছাত্রসমাজ দেশের ভবিষ্যৎ, জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। জাতির সমৃদ্ধি, সম্মান আর মর্যাদার সঙ্গে আজকের ছাত্রসমাজ একদিন সম্পৃক্ত হবে। জাতির গৌরব বৃদ্ধির সুমহান দায়িত্ব একদিন তাদের ওপর বর্তাবে। তাদের কৃতকর্মের সফলতার ওপরই নির্ভর করবে জাতির ভবিষ্যৎ। ইভটিজিং একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। কাজেই জাতীয় স্বার্থে ইভটিজিং প্রতিরোধে ছাত্রদের এগিয়ে আসা উচিত।
আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর ও শান্তিময় দেশ গড়ে তুলতে চাই। এ আশাবাদ ব্যক্ত করে আমার বক্তব্য শেষ করছি। বন্ধ হোক ইভটিজিং, জয় হোক তারুণ্য শক্তির, জয় হোক ছাত্রসমাজের। সবাইকে ধন্যবাদ।
১৫. ‘ মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থাপন করার জন্য একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, “মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে” যুবসমাজের উদ্দেশে একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, “মাদকের অপর নাম মৃত্যু” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের উপযোগী একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, ‘মাদকাসক্তির কুফল’ সম্পর্কে আয়োজিত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনের জন্য প্রধান অতিথির একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, কোনো সেমিনারে উপস্থাপনের জন্য ‘মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, মাদকদ্রব্য সেবনের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরি কর।
শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়, বিশেষ অতিথি ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন। মাদকাসক্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে ইতোমধ্যে আপনারা অবগত হয়েছেন। এই সর্বনাশা মরণ নেশার দানবীয় থাবায় পড়ে জাতি আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সুধীমন্ডলী,
আমরা সকলেই অবহিত যে বিশ্বব্যাপী মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে বিপ্লব শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরাও সেই আন্দোলন সংগ্রামে শামিল। মাদকের নেশা সর্বনাশা নেশা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এ নেশা বাংলাদেশের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ জাল বিস্তার করেছে। তরুণ সমাজ আজ এই মরণ নেশার ছোবলে পড়ে সর্বস্বহারা হচ্ছে এবং জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। তারা নেশার টাকা জোগাতে নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। হাইজ্যাক, খুন, জখম, সন্ত্রাস এসব নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানুষ বুদ্ধিবৃত্তির পূজারি, ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। তাই আমরা পারি সব রকম অন্যায়-অবিচার, মন্দ কাজ ত্যাগ করে সুখে-শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখতে। চাই পৃথিবীর মৃদু বাতাসে দাঁড়িয়ে নিশ্বাস নিতে, সবুজ বনবনানীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিন্তু শত হতাশা, ব্যর্থতা ও অশুভ ছায়া আমাদের এ আকাঙ্ক্ষাকে গলাটিপে হত্যা করে।
বিশেষ করে আমাদের যুবসমাজ আজ হতাশা ও ব্যর্থতার বালুচরে ডুবে নীতিহীন ও বিবেকবর্জিত হয়ে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, আফিম, পেথেডিন, চরস, হেরোইন, ফেনসিডিলের মতো মরণ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তির জন্য হতাশা, নিঃসঙ্গতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কুসংসর্গও কম দায়ী নয়।
সুধীবৃন্দ,
আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই মাদকদ্রব্যের অবাধ ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার লক্ষ করা যায়। ফলে সব বয়সের, সব পেশার লোকদের মধ্যে এ সর্বনাশা নেশা বিস্তার লাভ করেই চলেছে। অনিবার্য ধ্বংস জেনেও নেশাগ্রস্তরা এ পথ পরিহার করছে না।
আমাদের যুবসমাজের বড় একটি অংশ মাদকাসক্ত হওয়ার ফলে আমাদের জনশক্তি ক্রমশ দুর্বল ও নির্জীব হয়ে পড়ছে। চিন্তার রাজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সম্পর্কের ক্রমাবনতি ঘটেছে। সমাজ তথা গোটা জাতি ধুঁকে ধুঁকে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রিয় সুধী,
আপনাদের সকলের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, সমাজ থেকে এ দুষ্ট চক্রকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। প্রতিটি মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যাধি মাদকাসক্তির যথার্থ প্রতিকারের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে পারিবারিক প্রতিরোধ আরও জোরদার করতে হবে।
ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করতে হবে, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবে ন্যায়বিচার, মানবিক চেতনা ও আদর্শবাদ। ফিরে পাবে বাঙালি তথা মানবসভ্যতার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। গোটা জাতি রক্ষা পাবে এ সর্বনাশা মরণ নেশার কবল থেকে।
এই প্রত্যয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি। আল্লা হাফেজ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।