পঞ্চম শ্রেণি | বাংলা ব্যকরণ | প্রবন্ধ রচনা ১১-১৫ | PDF: পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়টির প্রবন্ধ রচনা অংশ হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা সমুহ নিয়ে আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
১১. স্বাধীনতা দিবস
সূচনা : স্বাধীনতা মানে মুক্তি, বন্ধনহীনতা। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ছিলাম পরাধীন একটি জাতি। ১৯৭১ সালে ২৬-এ মার্চ তারিখে সেই শৃঙ্খল থেকে চিরতরে মুক্তির লড়াই শুরু হয়। শত্রæর হাত থেকে স্বদেশ ভ‚মি তখনও মুক্ত না হলেও মনে মনে আমরা নিজেদের সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবতে শুরু করি এদিন থেকেই। তাই ২৬-এ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস।
ঐতিহাসিক পটভূমি : স্বাধীনতা দিবসের গৌরব লাভের পেছনে রয়েছে বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের পর হতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বর্তমান বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অধীন। তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান।
এ দীর্ঘ সময় ধরে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক- সকল দিক দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে শোষণ করে আসছিল। এর প্রতিবাদে বাঙালিরা রুখে দাঁড়ায়। ১৯৪৭-৭১ পর্যন্ত পুরোটা সময়ই বাঙালি তার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত থেকেছে, ঝরেছে অনেক রক্ত।
স্বাধীনতার চূড়ান্ত সংগ্রাম : ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দেন। এরপর আসে ২৫-এ মার্চ কালো রাত। পাকিস্তানি হানাদাররা এ রাতে ঢাকা শহরে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়।
২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং দেশকে শত্রæমুক্ত করার নির্দেশ দেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই সর্বস্তরের বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। অনেক রক্তক্ষয়ের পর অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি ।
স্বাধীনতা দিবসের চেতনা : আমরা সবাই স্বাধীন একটি দেশের নাগরিক। স্বাধীনতা দিবসে এ বিষয়টি আমরা আরও ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারি। এ দেশের জন্য শহিদদের অবদানের মূল্য বুঝতে পারি। দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হই।
উদ্যাপন : প্রতি বছর নানা আয়োজনে দেশের মানুষ এই দিনটি উদযাপন করে। সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো সভা, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করে। স্কুলগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সর্বস্তরের মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানায়।
উপসংহার : মুক্তির যে বার্তা আমরা ২৬-এ মার্চ তারিখে পেয়েছিলাম তা পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হয়েছে অনেক তাজা প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে। তাই এই অর্জনকে আমরা বৃথা যেতে দেব না। দেশকে ভালোবাসব, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সদা সচেষ্ট থাকব।
১২. বিজয় দিবস
সূচনা : কাল যেখানে পরাজয়ের কালো সন্ধ্যা হয়,
আজ সেখানে নতুন করে রৌদ্র লেখে জয়।
বাঙালির জাতীয় জীবনে ১৬ই ডিসেম্বর এক মহিমান্বিত দিন। এ দিনটি আমাদের বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম শেষে এই দিনেই আমরা চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা লাভে সক্ষম হই।
পটভূমি : ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের দীর্ঘ ২০০ বছরের শাসনের অবসান ঘটলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তান আবার দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ নতুন করে পরাধীন হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে। তাদের অত্যাচারে আমাদের মৌলিক অধিকারসমূহ ভুলুণ্ঠিত হয়। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ওপরও তারা আঘাত হানে।
এমনকি আমাদের মুখের ভাষা পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়। বাংলার সংগ্রামী জনতা তাদের সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয় লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমগ্র দেশবাসীকে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার আহŸান জানান। ২৫-এ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা নিরীহ বাঙালির ওপর হামলা চালায়। অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের সেই ধ্বংসযজ্ঞ চলে পরবর্তী নয় মাস ধরেই।
সর্বস্তরের বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধাগণ দেশের ভেতরে ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকেন। তাঁরা পাক-হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করেন।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য : দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিসংগ্রাম চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের মুখে পাকবাহিনী দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর হানাদাররা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। ২৬-এ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলেও সেই দিনই আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয় নি। আমরা জয়লাভ করেছি ১৬ই ডিসেম্বরে। তাই ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।
বিজয় দিবসের চেতনা : বিজয় দিবস আমাদের দেশপ্রেমকে শাণিত করে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে লড়াই করার প্রেরণা পাই। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই।
উপসংহার : লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের সেই গৌরবের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
১৩. একুশে ফেব্রুয়ারি
সূচনা : “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?”
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৫২ সালের এ দিনটিতে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন করেছিল হাজার হাজার বাঙালি। ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ নাম না জানা অনেকে। তাই এই দিনটি আমাদের জন্য একই সাথে গৌরবের ও বেদনার।
একুশে ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপট : ১৯৫২ সালের ২৬-এ জানুয়ারি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এক জনসভায় একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে বাংলার ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ডাক দেয়। ১৯৫২ সালের ২১-এ ফেব্রুয়ারি এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।
দিনটিতে সর্বস্তরের বাঙালি সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালালে শহিদ হয় অনেকে। হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে গোটা দেশের ছাত্র-জনতা। আন্দোলন আরও তীব্র হয়। এর ফলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
শহিদ মিনার : প্রতি বছর ২১-এ ফেব্রুয়ারি আমরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২১-এ ফেব্রুয়ারি শহিদ হওয়া আবুল বরকত যে স্থানে শহিদ হয়েছিলেন সেখানে ২৩-এ ফেব্রুয়ারি একটি শহিদ মিনার নির্মিত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতারাতি ইট দিয়ে স্মৃতিফলকটি গড়ে তোলেন। ২৬ তারিখ পুলিশ সেটি ভেঙে দেয়। অবশেষে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের কাজ শরু হয়। ১৯৬৩ সালে শহিদ আবুল বরকতের মা এটি উদ্বোধন করেন।
একুশের চেতনা : বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালি লড়াই করে তার অধিকার আদায় করেছে। তাই এ দিনটি আমাদের মাঝে অধিকার চেতনা নিয়ে আসে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনাও ঘটে ভাষা আন্দোলন থেকেই। তাই এ দিনে আমরা সুন্দর দেশ গড়ার প্রেরণা পাই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়ার সাহস পাই।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : একুশে ফেব্রুয়ারি আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এ দিনটি পৃথিবীর সব ভাষার মানুষ মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
একুশে ফেব্রুয়ারি পালন : প্রতি বছর নানা আয়োজনে এ দিনটি সরকারি ও বেসরকারিভাবে পালন করা হয়। সারা দেশের শহিদ মিনারগুলোতে ভোরবেলা শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হয়। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এদিন খালি পায়ে হেঁটে শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দেয়।
উপসংহার : একুশ আমাদের অহংকার। এ দিনটি মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা দেশের জন্য কাজ করব।
১৪. সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি
অথবা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
সূচনা : “যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা বহমান,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।”
আপন কীর্তিতে বাংলার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির আসনটি চিরকালের জন্য অধিকার করে নিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। আমাদের জাতির জনক।
জন্ম ও শৈশব : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আদর করে বাবা তাঁর নাম রাখেন খোকা। শৈশব থেকেই গরিব মানুষদের প্রতি তাঁর ছিল অসামান্য টান। মানুষের দুঃখে-কষ্টে তাদের নানাভাবে সাহায্য করতেন তিনি।
ছাত্রজীবন : সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু ভর্তি হন গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪২ সালে শেখ মুজিব কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শেখ মুজিব সবসময় থাকতেন সামনের সারিতে।
রাজনৈতিক জীবন : ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে যুক্ত হন। ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে তাঁকে বহুবার গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করতে হয়। কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে থাকাকালীন তৎকালীন মুসলিম লীগে যোগ দেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে শেখ মুজিবকে করা হয় দলের যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি জেলে বন্দি অবস্থায় অনশন পালন করেন।
১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ঘটলে শেখ মুজিব মন্ত্রী হন। ১৯৬৬ সালে তিনি বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৯৬৮ সালে জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়।
১৯৬৯ সালে প্রবল আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। ২৩-এ ফেব্রুয়ারি ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র-জনতার বিশাল জনসভায় তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বিশাল বিজয় অর্জন করে।
৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ : ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রায় দশ লাখ লোকের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে জাতিকে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণের আহŸান জানান। তিনি দৃঢ়চিত্তে বলেন :
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।
এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
স্বাধীনতার ঘোষণা : ১৯৭১ সালে ২৫-এ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই বাংলার মানুষ লড়াই করে দেশকে শত্রæমুক্ত করে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন : ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় দেশবাসীর কাছে ফিরে আসেন। এ পর্যায়ে তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের সংগ্রাম।
মৃত্যু : মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহিদ হন।
উসংহার : বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন তিনি। শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের সকল মানুষের জন্যই তাঁর আদর্শ চিরস্মরণীয়।
আরো পড়ুনঃ
-
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ভাবুক ছেলেটি গল্প প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | অবাক জলপান নাটকটির প্রশ্ন উত্তর | PDF
১৫. একজন বীরশ্রেষ্ঠ
অথবা, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা
অথবা, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ
সূচনা : বীরদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যাঁরা, তাঁরাই বীরশ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরের মতো লড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের মধ্যে বিশেষ অবদানের কারণে কয়েকজন পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠর মর্যাদা। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ তেমনই একজন।
জন্ম ও ছেলেবেলা : মুন্সী আবদুর রউফের জন্ম ১৯৪৩ সালে। জন্মস্থান ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি উপজেলার সালামতপুর গ্রাম। ছেলেবেলায় ছিলেন দারুন দুরন্ত। নদীতে-খালে সাঁতার কেটে আর মাঠে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়ে দিন কাটত তাঁর। সাংসারিক সমস্যার কারণে তিনি বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেন নি।
কর্মজীবন : মুন্সী আবদুর রউফ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ (ই.পি.আর)-এ সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণে তিনি খুব দ্রæত ল্যান্স নায়েক পদে উন্নীত হন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান : ১৯৭১ সালের হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ করতে মুক্তিবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ন মহালছড়ির চিংড়ি খালের দুই পাশে অবস্থান নেন। ল্যান্সনায়েক মুন্সী আবদুর রউফ ছিলেন সেই দলে। হানাদাররা সাতটি স্পিডবোট ও দুটি লঞ্চ নিয়ে এগিয়ে আসছিল। তাদের সাথে ছিল আধুনিক অস্ত্র। ফলে তাদের আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাগণ দিশেহারা হয়ে পড়েন। তবে তাঁরা মনোবল হারালেন না।
মেশিনগান চালক আবদুর রউফ নির্ভুল নিশানায় হানাদার বাহিনীকে রুখে দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাদের সাতটি স্পিডবোটই ডুবে গেল। মারা গেল অনেক পাকিস্তানি সৈনিক। যারা বাঁচল, তারা দুটি লঞ্চ নিয়ে পালিয়ে গেল। এসময় তারা মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ করতে লাগল। হঠাৎ একটা গোলা এসে আঘাত করল আবদুর রউফের বুকে। তাঁর তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো বাংলার মাটি। তিনি শহিদ হলেন।
উপসংহার : রাঙামাটির বোর্ড বাজারের কাছে নানিয়ারচরের চিংড়িখালের কাছাকাছি অন্তিম শয়ানে শায়িত আছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ। তাঁর মতো বীরদের আত্মত্যাগের কারণেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। তিনি আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।