চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | প্রবন্ধ রচনা ১১-১৪ | PDF Download: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা প্রবন্ধ রচনা লিখন অংশ হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবন্ধ রচনা গুলো আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
১১. মহীয়সী রোকেয়া
সূচনা : সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম সংগ্রাম করেছিলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তাই তাঁকে বলা হয় ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত’। নারীর স্বাধীনতা ও শিক্ষার প্রসারে তিনি সারাজীবন লড়াই করেছেন।
জন্ম : রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালের ৯ই ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পারিবারিক পরিচয় : রোকেয়া ছিলেন সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারের সদস্য। তাঁর বাবা জহীরুদ্দীন মুহম্মদ আবু আলী সাবের ছিলেন একজন জমিদার। অবশ্য রোকেয়ার জন্মের সময় সেই জমিদারি পড়তির দিকে। রোকেয়ার পরিবারে মেয়েদের ঘরের বাইরে তো দূরের কথা, কারো সামনে যাওয়াও ছিল নিষিদ্ধ। এককথায় যাকে বলা হয় অবরোধপ্রথা।
শিক্ষাজীবন : লেখাপড়ার প্রতি রোকেয়ার ছিল অদম্য আগ্রহ। কিন্তু সে সময়ে মেয়েদের লেখাপড়া করার স্বাধীনতা না থাকায় তাঁকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বাড়িতে প্রথমে কোরআন শেখার পর তিনি উর্দু শিখলেন। বড় বোনের কাছে তিনি শিখলেন বাংলা, আর অন্যান্য বিষয় বড় ভাইয়ের কাছে। তাঁকে পড়ালেখা করতে হতো গোপনে, গভীর রাতে। অবশ্য বিয়ের পর স্বামী সাখাওয়াত হোসেন পড়ালেখার ব্যাপারে তাঁকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।
নারী জাগরণে তাঁর অবদান : রোকেয়া বুঝতে পেরেছিলেন যে, মেয়েদের উন্নতির জন্য লেখাপড়া শিখতেই হবে। যে কারণে কলকাতায় স্বামীর নামে মেয়েদের একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি মেয়েদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসতেন বলে অনেকের কটূবাক্য শুনেছেন। কিন্তু পিছপা হন নি।
সাহিত্যচর্চা : শত প্রতিক‚লতার মধ্যে থাকার পরও রোকেয়া নারীর উন্নয়নের লক্ষ্যে সাহিত্যচর্চা করেছেন। বেশিরভাগ রচনায় তিনি নারীশিক্ষা, নারী উন্নয়ন ও নারী অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন। বেশ কিছু গ্রন্থও রচনা করেছেন। ‘অবরোধবাসিনী’, ‘মতিচুর’ ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত রচনা।
মৃত্যু : ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর রোকেয়া মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার : সমাজের সার্বিক উন্নতির কথা ভেবেই রোকেয়া নারী শিক্ষার প্রতি জোর দিয়েছিলেন। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর অবদান অতুলনীয়। তাঁর কর্মই তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
১২. বাংলাদেশের পাখি
সূচনা : পাখিরা বাংলাদেশের প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভোরবেলা পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙে। বাংলাদেশে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের অসংখ্য পাখির অবস্থান থাকায় এ দেশকে বলা হয় পাখির দেশ।
পাখিদের বৈচিত্র্য : বাংলাদেশে প্রায় ৬৪টি প্রজাতির ৬০০ রকমের পাখির বাস। এর মধ্যে ৪০০ রকমের পাখি সারাবছর বাংলাদেশে অবস্থান করে। আর বাকিরা শীতের সময়ে অতিথি হয়ে এদেশে আসে। এখানে বাংলাদেশের নানারকম পাখির পরিচয় তুলে ধরা হলো
লোকালয়ের পাখি : লোকালয়ের পাখি বলতে আমরা বুঝি যেসব পাখি মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে তাদেরকে। এসব পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাক, বুলবুলি, চড়–ই, কোকিল, টুনটুনি, বাবুই, শালিক ইত্যাদি। এদের ভেতর দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। এ পাখিগুলো সাধারণত কীটপতঙ্গ, ফুলের মধু ইত্যাদি খেয়ে থাকে।
বুনো পাখি : যে সকল পাখি সচরাচর লোকালয়ে আসতে পছন্দ করে না তাদেরকে বুনো পাখি বলে। যেমনঃ ফিঙে, আবাবিল, বাঁশপাতি, বেনে বউ, জলময়ূর প্রভৃতি।
জলচর পাখি : জলচর পাখিদের বিচরণ পুকুর, খাল-বিল ইত্যাদি স্থানে। এদের মধ্যে বেশি চোখে পড়ে মাছরাঙা, বক, পানকৌড়ি ইত্যাদি। ছোট মাছ, শামুক, গুগলি ইত্যাদি এদের প্রিয় খাবার।
অন্যান্য পাখি : উপরে উল্লেখিত পাখিগুলো ছাড়াও আমাদের দেশে রয়েছে আরও অনেক পাখি। যেমন : টিয়া, ধনেশ, শ্যামা, ডাহুক, ঘুঘু, ময়না, শকুন, গাঙচষা ইত্যাদি। ময়না ও টিয়া পাখিকে মানুষ শখ করে পোষে।
উপকারিতা : পাখিরা নানাভাবে আমাদের উপকার করে। চড়–ই, টুনটুনি, বুলবুলি ইত্যাদি পাখি ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে। ফুলে ফুলে মধু খেয়ে পাখিরা পরাগায়ণে ভ‚মিকা রাখে। কাক, শকুন ইত্যাদি পাখিরা ক্ষতিকর বর্জ্য খেয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখে।
উপসংহার : পাখিরা আমাদের পরম বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের ভ‚মিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বন্ধুর মতো এই পাখিদের ভালোবাসব, তাদের রক্ষা করব।
১৩. মা/আমার মা/আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব
সূচনা : ‘হেরিলে মায়ের মুখ,
দূরে যায় সব দুখ।’
আমাদের সবার জীবনে ‘মা’ একটি মধুমাখা নাম। পৃথিবীতে তিনিই সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। আমিও আমার মাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।
সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা : পৃথিবীতে মায়ের কাছে সবচেয়ে দামি তাঁর সন্তান। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর সকল ভাবনা সন্তানদের নিয়ে। সন্তান কিসে ভালো থাকবে, নিরাপদ থাকবে তিনি সবসময় কেবল সে ভাবনাই ভাবেন। মায়ের আশিস পেলে সন্তানের দুঃখ দূর হয়। মায়ের মমতা আমাদের চলার পথের পাথেয়।
আমার মা : আমার মা আমাকে অনেক স্নেহ করেন। সবসময় কাছে কাছে রাখেন। আমার অসুখ করলে মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। রাত-দিন জেগে তিনি আমার সেবা করেন। আমার খুশির জন্য যা যা করা দরকার তার সবই মা করেন।
বন্ধু হিসেবে মা : মা আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমি মায়ের কাছে কোনো কিছুই গোপন করি না। তিনি আমার সব ভালো কাজে উৎসাহ দেন। মন্দ কাজ করলে বুঝিয়ে বলেন। কখনোই বকুনি দেন না। মায়ের কাছেই আমার যত আবদার।
অভিভাবক হিসেবে মা : মা আমাকে মানুষের মতো মানুষ হতে বলেন। তিনি আমার সেরা শিক্ষক। আমার পড়া তৈরিতে মা সাহায্য করেন। কঠিন বিষয়গুলো মা খুব সহজেই বুঝিয়ে দেন।
উপসংহার : মা-ই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। আমি মা-কে কষ্ট দিই না। নানা কাজে তাঁকে সাহায্য করি। সবসময় তাঁর কথামতো চলতে চেষ্টা করি।
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | পাঠান মুলুকে | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | কাজলা দিদি | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | পাখির জগৎ | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
১৪. পাহাড়পুর/একটি ঐতিহাসিক স্থান
সূচনা : গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগত কারণে ইতিহাসে মর্যাদা পাওয়া যে কয়টি স্থান বাংলাদেশে রয়েছে তার মধ্যে পাহাড়পুর অন্যতম। এটি বাংলাদেশের এমনকি দুনিয়ার একটি বিখ্যাত স্থান। যা মূলত একটি সুপ্রাচীন বৌদ্ধবিহার।
অবস্থান : পাহাড়পুর বিহারটি বর্তমান রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার ‘পাহাড়পুর’ গ্রামে অবস্থিত। এর আরেক নাম ‘সোমপুর বিহার’ বা ‘সোমপুর মহাবিহার’।
আবিষ্কারের ইতিহাস : আজ থেকে প্রায় ১৪শ বছর আগে বিহারটি নির্মাণ করা হয়। রাজা দ্বিতীয় ধর্মপাল এটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় এটি খালি পড়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়নি।
অনেকে মনে করেন, যুগ যুগ ধরে উড়ে আসা ধুলোবালি ও মাটি এর চারদিকে জমতে থাকার কারণে এক সময় মাটির স্তূপে ঢাকা পড়ে এটি পাহাড়ের মতো হয়ে যায়। সেই থেকে এর নাম হয়ে যায় ‘পাহাড়পুর’। দীর্ঘকাল পরে ১৮৭৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম এটি আবিষ্কার করেন।
নির্মাণশৈলী ও বিবরণ : সুপ্রাচীন এ বিহার এলাকাটি প্রায় ৪০ একর জায়গা জুড়ে লালচে মাটির ভ‚মিতে বিস্তৃত। ২৭ একর জমির ওপর এর বিশাল দালান। মাটির নিচের অংশে এটি চারকোণা আকারের। বাইরের দেয়ালের গায়ে পোড়ামাটি দিয়ে নানা রকম ফুল-ফল, পাখি, পুতুল, মূর্তি ইত্যাদি বানানো আছে।
উত্তর দিকের ঠিক মাঝখানে মূল দরজা। তারপরেই রয়েছে অনেকগুলো ছোটবড় হলঘর। দেয়ালের ভেতরে সুন্দর সার বাঁধা ১৭৭টি ছোট ছোট ঘর। সামনের দিকে আছে লম্বা বারান্দা। বিহারটিতে আরও আছে পুকুর, স্নানঘাট, ক‚প, স্নানঘর, রান্নাঘর, খাবার ঘর ও টয়লেট। সব মিলিয়ে বিহারটিতে ৮০০ মানুষের থাকার ব্যবস্থা ছিল।
অন্যান্য দর্শনীয় স্থাপনা : বিহারের ভিতর বিশাল উঠানের মাঝখানে বড় এক সুন্দর মন্দির। ধাপে ধাপে উঁচু করে বড় মন্দিরটা বসানো হয়েছে। পোড়ামাটির দুই হাজার ফলকের চিত্র দিয়ে মন্দিরের বাইরে আর ভেতরে সাজানো। একই রকম ছোটছোট মন্দির পুরো বিহারের নানান জায়গায় আছে।
বিহারটির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে দেয়ালের বাইরে একটা বাঁধানো ঘাট আছে। ওটাকে বলা হয় ‘সন্ধ্যাবতীর ঘাট’। পাহাড়পুর বিহারের পাশে আছে দেখার মতো একটা জাদুঘর। সেখানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা আছে খনন করে পাওয়া অনেক পুরাতন আর দুর্লভ জিনিসপত্র। এই এলাকার একটু দূরেই আছে ‘সত্যপীরের ভিটা’। সেখানে অনেকেই ভক্তিভরে প্রার্থনা করে, মানত করে।
গুরুত্ব : বাংলার ধর্মীয় ইতিহাসে পাহাড়পুর এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এটি ছিল বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। এখানে প্রাপ্ত প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনগুলো থেকে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
উপসংহার : পাহাড়পুর বিহারের প্রতœতাত্তি¡ক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। আমাদের সকলেরই উচিত একবারের জন্য হলেও পাহাড়পুর ঘুরে আসা।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।