অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১)(পর্ব-২) সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয়: পাকিস্তান : রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও বৈষম্য
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
৩.০৫. পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈষম্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি যে রাজনৈতিক নীতিসমূহ গ্রহণ করা হয়েছিল তা আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর বাঙালির প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈষম্য ছিল চরম পর্যায়ে। পশ্চিম পাকিস্তানিরা মনে করতো বাঙালিরা কিছু জানে না, বুঝে না। তারা কোনো কিছুর যোগ্য নয়। তাদের মতে নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব, রাষ্ট্রপরিচালনার মতো গুরুদায়িত্ব একমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্যই।
এ উপলব্ধি থেকেই তারা সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এ বৈষম্য ছিল সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈষম্য : পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে দুর্বল করার জন্য এবং শোষণ ও শাসন করার জন্য রাজনৈতিক বৈষম্য ও নিপীড়ন শুরু করে।
নিম্নে তাদের রাজনৈতিক বৈষম্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. লাহোর প্রস্তাবের দাবি উপেক্ষা : ১৯৪০ সালে উত্থাপিত মূল লাহোর প্রস্তাবে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র (ঝঃধঃবং) প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন মুসলিম লীগ সভাপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কূটকৌশল অবলম্বন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র (ঝঃধঃব) গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যাতে বাঙালিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
২. পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপকৌশল : পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী পূর্ববাংলার হওয়া সত্ত্বেও তাদের রাজনৈতিকভাবে মর্যাদা না দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের মুখাপেক্ষী করা হয়।
এমনকি রাষ্ট্রের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ও রাজধানী করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। তারা কৌশল ঠিক করেছিল কেন্দ্রীয়ভাবে সমস্ত রাজনৈতিক কার্যাবলিই পশ্চিম পাকিস্তানে করা হবে।
- অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১
- অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ২
- অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ৩
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-২)*
৩. প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে : তৎকালীন সময়ে মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাঙালি ছিলেন মাত্র ৯৫ জন। আর ৯ জন সরকার প্রধানের মধ্যে ৩ জন ছিলেন পূর্ববাংলার এবং এর মধ্যে নাজিমুদ্দীন ছিলেন উর্দু ভাষী যদিও মাত্র ১ বছরের মাথায় প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা তাকে অপসারণ করেন।
আর সময়ের হিসেবে ২৪ বছরের মধ্যে ৬ বছর (২৫% সময়) বাংলদেশের নাগরিক কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছে। জেনারেল আইয়ুব খানের আমলে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হলেও তার শাসনামলে মন্ত্রিসভার মোট ৬২ জন মন্ত্রীর মধ্যে বাঙালি ছিলেন মাত্র ২২ জন (৩৫.৪৮%)।
আর এসব বাঙালিদের মধ্যে কেউ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাননি।
৪. সংবিধান প্রণয়নে অনীহা : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচিত হয় ১৯৫৬ সালে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি পাকিস্তানের অনীহার কারণে প্রথম সংবিধান রচিত হতে সময় লেগেছিল ৯ বছর।
এ সংবিধানে পূর্ববাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান নাম দেওয়া হয়। এ সংবিধানে সমস্ত ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানিদের পশ্চিমাদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয় ।
৫. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাব : মুসলিম লীগের দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা, বাঙালি-অবাঙালি বৈষম্য নীতি ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পূর্ববাংলার সচেতন মধ্যবিত্ত শ্রেণি তথা কতিপয় উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা ১৯৪৯ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি করে মুসলিম লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে।
তারা চেয়েছিল যাতে বাঙালিদের কোনো প্রতিনিধি রাজনীতিতে আসতে না পারে। কিন্তু তাদের এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে তারা আরও বৈষম্যমূলক নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-২)*
৬. পূর্ববাংলার জনপ্রতিনিধির প্রতি অবহেলা : ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্ট ৩০৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পায় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি আসন।
কৃষক শ্রমিক পার্টির প্রধান এ. কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র এ মন্ত্রিসভাকে সফল হতে দেয়নি। ২ মাসের মধ্যেই মন্ত্রিসভাকে বাতিল করে পূর্ববাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে ।
৭. বাঙালি নেতৃবৃন্দের প্রতি কঠোর দমন নীতি : প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান গণতন্ত্র ও পূর্ব পাকিস্তান বিরোধী ছিলেন। তিনি যে দশ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ নেতাই কারাগারে আটক ছিলেন।
১৯৬০ এর দশকের শেষার্ধে পূর্ববাংলায় গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে কঠোরহস্তে দমন করার জন্য নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে জেলে রাখেন। শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয়ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তাদেরকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি।
তারা এভাবে বাঙালি। নেতৃবৃন্দের প্রতি কঠোর নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদেরকে দমন করতে চেষ্টা করে ।
৮. গুরুত্বপূর্ণ পদ : বাঙালিদের ষাটের দশকে প্রবল আন্দোলনের কারণে ১৯৬৪ সালে দুই জন বাঙালিকে প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিষদ সচিবালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব করা হয়। আবার ১৯৬৬ সালের ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন শুরু হলে আরও চারজন বাঙালিকে সচিব নিযুক্ত করা হয়।
তবে বাঙালিদের স্বরাষ্ট্র, অর্থ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি ।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-২)*
৯. কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়োগ : পাকিস্তানি শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের প্রত্যেকটি বিভাগেই বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছিল। যেমন বেসামরিক উচ্চপদ ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও বাঙালি প্রতিনিধিত্ব একদিকে যেমন কম ছিল, অন্যদিকে তেমনি তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও ছিল সামান্য।
১৯৬৬ সালের এক হিসাব থেকে এ বৈষম্যের চিত্র আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। ১৩টি কর্পোরেশনের মধ্যে মাত্র একটির চেয়ারম্যান ছিলেন বাঙালি। অন্যদিকে, ১৯৬৩ সালের এক পরিসংখ্যানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মাত্র ৩.৪% বাঙালি নিযুক্তির তথ্য পাওয়া যায় ।
১০. বিদেশি মিশন : বিদেশে পাকিস্তানি মিশনগুলোতেও পূর্ব পাকিস্তানিরা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হয়। বিদেশে পাকিস্তানি মিশনগুলোতে ৮৫% কর্মকর্তা কর্মচারী পশ্চিম পাকিস্তানি এবং ১৫% ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানি। বিদেশে পাকিস্তানি ৬৯ জন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ৬০ জন দূত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি।
১০৪ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার মধ্যে ৩০ জন ছিলেন বাঙালি দ্বিতীয় শ্রেণির নন-গেজেটেড ২০৪ জনের মধ্যে বাঙালি ছিলেন ৫৫ জন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বাঙালিদের জনসংখ্যা অনুপাতে কমসংখ্যক নিয়োগ ছাড়াও প্রশাসনিক হেডকোয়ার্টার্স পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত হওয়ায় নিয়োগ, বদলি ও বেতনের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানিদের নানাভাবে হয়রানি করা হতো।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে পূর্ব পাকিস্তানিদের প্রতি বৈষম্যের কালো ছায়া লক্ষ করা যায়। পূর্ববাংলার জনগণ যে পরিমাণ বৈষম্যের শিকার হন তা ছিল অবর্ণনীয়। প্রশাসনিক বৈষম্য বাঙালিদেরকে আন্দোলনের পথ অনুসরণ করতে প্ররোচিত করে।
তারা তাদের অধিকারসমূহ আদায় করতে সচেষ্ট হয়। শুধু তাই নয় বৈষম্যের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অধিকার হতে বঞ্চিত করে।
৩.০৬. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য পর্যালোচনা কর।
অথবা, পাকিস্তানি শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ববাংলার ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানা রকম অত্যাচার, অবিচার ও বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে। বাঙালি যে স্বপ্ন দেখে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিল সে স্বপ্ন পুরোটাই যে মিথ্যা ছিল, অতি দ্রুতই তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক সবক্ষেত্রেই যেন পশ্চিম পাকিস্তানি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা হয়। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালিদের সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি প্রশাসনিক ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়েছিল ।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য : নিম্নে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য পর্যালোচনা করা হলো :
রাজনৈতিক বৈষম্য : নিম্নে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈষম্য পর্যালোচনা করা হলো :
১. লাহোর প্রস্তাবের দাবি উপেক্ষা : ১৯৪০ সালে উত্থাপিত মূল লাহোর প্রস্তাবে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র (ঝঃধঃবং) প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন মুসলিম লীগ সভাপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কূটকৌশল অবলম্বন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র (ঝঃধঃব) গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যাতে বাঙালিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
২. পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপকৌশল : পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ – অধিবাসী পূর্ববাংলার হওয়া সত্ত্বেও তাদের রাজনৈতিকভাবে মর্যাদা না দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের মুখাপেক্ষী করা হয় এমনকি রাষ্ট্রের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ও রাজধানী করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
তারা কৌশল ঠিক করেছিল কেন্দ্রীয়ভাবে সমস্ত রাজনৈতিক কার্যাবলিই পশ্চিম পাকিস্তানে করা হবে ।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-২)*
৩. পূর্ববাংলার জনপ্রতিনিধির প্রতি অবহেলা : ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্ট ৩০৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পায় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পায় মাত্র ৯টি আসন।
কৃষক শ্রমিক পার্টির প্রধান এ. কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠন করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র এ মন্ত্রিসভাকে সফল হতে দেয়নি। ২ মাসের মধ্যেই মন্ত্রিসভাকে বাতিল করে পূর্ববাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
৪. বাঙালি নেতৃবৃন্দের প্রতি কঠোর দমন নীতি : প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান গণতন্ত্র ও পূর্ব পাকিস্তান বিরোধী ছিলেন। তিনি যে দশ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ নেতাই কারাগারে আটক ছিলেন ।
১৯৬০ এর দশকের শেষার্ধে পূর্ববাংলায় গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে কঠোরহস্তে দমন করার জন্য নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে জেলে রাখেন। শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয়ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তাদেরকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি।
তারা এভাবে বাঙালি নেতৃবৃন্দের প্রতি কঠোর নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদেরকে দমন করতে চেষ্টা করে।
৫. গুরুত্বপূর্ণ পদ : বাঙালিদের ষাটের দশকে প্রবল আন্দোলনের কারণে ১৯৬৪ সালে দুই জন বাঙালিকে প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিষদ সচিবালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব করা হয়।
আবার ১৯৬৬ সালের ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন শুরু হলে আরও চারজন বাঙালিকে সচিব নিযুক্ত করা হয়। তবে বাঙালিদের স্বরাষ্ট্র, অর্থ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি ।
- অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১
- অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ২
- অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ৩
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-২)*
প্রশাসনিক বৈষম্য : রাজনৈতিক ক্ষেত্রের ন্যায় বাঙালি প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তান সীমাহীন বৈষম্যের শিকার হন। নিম্নে প্রশাসনিক বৈষম্যের বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো :
১. সিভিল সার্ভিস ও সামরিক বাহিনী : পাকিস্তানি শাসকরা সিভিল সার্ভিস ও সামরিক বাহিনীতে বাঙালির প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের স্বার্থে গড়ে তোলেন ক্ষমতা ব্যবহার ও ভোগকারী এলিট শ্রেণি। যার সিংহভাগই ছিলেন পাঞ্জাবি । মন্ত্রীদের পরই ক্ষমতাধর ছিলেন এ এলিট শ্রেণি। কিন্তু এসব ক্ষমতাধর ও এলিট শ্রেণিতে বাঙালিদের অবস্থান এক রকম ছিল না বললেই চলে ।
২. নিয়োগের ক্ষেত্রে : তৎকালীন পাকিস্তানের মন্ত্রিপরিষদ, পররাষ্ট্র, কৃষি, সংস্থাপন, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, শিল্প, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, তথ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মোট ৬৯ জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার মধ্যে ৪৫ জনই ছিলেন পাঞ্জাবি। বাঙালি ছিলেন মাত্র ৩ জন।
বেসামরিক উচ্চপদস্থ সিএসপি কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৯৪৮- ৬৩ পর্যন্ত ৩৪৬ জনের মধ্যে মাত্র ১২৬ জন ছিলেন বাঙালি। অথচ পশ্চিম পাকিস্তানি ছিল ২১৮ জন। সবক্ষেত্রেই তারা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ ।
৩. দপ্তর বণ্টন : ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও ১৯৬৪ সালে দুইজন বাঙালিকে প্রথম বারের মতো জাতীয় পরিষদ সচিবালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব করা হয়। ৬৬ সালে আরও চার জনকে সচিব করা হয়। তবে বাঙালিদের স্বরাষ্ট্র, অর্থ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৯ মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি ।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-২)*
৪. কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বেসামরিক উচ্চপদ : পাকিস্তানের বেসামরিক উচ্চপদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও বাঙালি প্রতিনিধিত্বের পরিমাণ যেমন কম ছিল তেমনি তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও কম ছিল।
১৯৬৬ সালের এক হিসাব থেকে অবগত হওয়া যায় ১৩টি কর্পোরেশনের মধ্যে মাত্র একটিতে বাঙালি চেয়ারম্যান ছিল বাদবাকি ১২টি পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ । আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মাত্র ৩৪% বাঙালি নিয়োগ করা হয় ।
৫. বিদেশি মিশনের ক্ষেত্রে বৈষম্য : পশ্চিম পাকিস্তানিরা বিদেশি মিশনের ক্ষেত্রে বৈষম্য করতেও ছাড়েনি। বিদেশে পাকিস্তানি মিশনগুলোতেও বৈষম্য ছিল। বিদেশে পাকিস্তানি মিশনগুলোতে ৮৫% কর্মচারী ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি এবং ১৫% ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানি ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শুরু থেকেই পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী পূর্ববাংলার জনগণকে তাদের প্রাপ্য অধিকার হতে বঞ্চিত করতে থাকে। তারা বাঙালিদেরকে প্রশাসনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদ হতে দূরে রাখতে চেয়েছিল যাতে করে বাঙালি কোনোদিনও তাদের ন্যায্য অধিকার পেতে না পারে।
প্রশাসনিক দিক দিয়েও বাঙালিদেরকে শোষণের চূড়ান্ত নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বাঙালিরা অধিকার সচেতন হলে তাদের এ আশা দুরাশায় পর্যবসিত হয় ।
৩.০৭ শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যসমূহ লেখ।
অথবা, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের দিকগুলো বর্ণনা কর।
উত্তর ভূমিকা : ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের পরিসমাপ্তির পর বর্তমান বাংলাদেশ দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে কথিত স্বাধীনতার নামে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়। বস্তুত এই অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির আশায় পাকিস্তান আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল।
যে মুক্তির আশায় বাঙালিরা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর ঠিক তার উল্টোটা দেখতে পেল । পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলার মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। তারা বাঙালিদেরকে সর্বদিক দিয়ে বৈষম্যের মুখোমুখি করে। বিশেষ করে শিক্ষা ও সামাজিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে ।
শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্য : নিম্নে শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. শিক্ষাক্ষেত্রে : শিক্ষাক্ষেত্রেও বাঙালিরা বৈষম্যের স্বীকার হতো। শিক্ষা জাতির মেধা, বুদ্ধি ও মানসিকতা বিকাশের একমাত্র পন্থা। সেখানে সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে এ সুযোগ দিতে শুধু ব্যর্থই হননি অশিক্ষিত মূর্খ করে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বৈষম্যমূলক নীতি বাস্তবায়ন করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল বাঙালিদের অশিক্ষিত করে রেখে তাদের ক্ষমতার মসনদকে পাকাপোক্ত করে রাখা তাদের ভয় ছিল বাঙালিরা শিক্ষিত হলে চাকরিসহ প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে এবং দেশ শাসনে অংশীদারিত্ব দাবি করবে।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-২)*
এজন্য পূর্ব পাকিস্তানের নিরক্ষরতা দূরীকরণের লক্ষ্যে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। উপরন্তু এ অঞ্চলের শিক্ষার প্রসারতার গতিকে স্তিমিত করে রাখার লক্ষ্যে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নেয় ।
২. বৈষম্যের ধরন : পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল । পাকিস্তান সরকার তার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এ বৈষম্য তৈরি করে।
১৯৫৫-৫৬ থেকে ১৯৬৬-‘৬৭ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষাখাতে ২,০৮৪.৪ মিলিয়ন রুপি বরাদ্দ হলেও পূর্ব পাকিস্তানে হয়েছিল মাত্র ৭৯৭.৬ মিলিয়ন রূপি অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ মাত্র। শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে এরূপ বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করার ফলে পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষা প্রসারে গতি ছিল অত্যন্ত শ্লথ।
ফলে এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ।
৩. বৈজ্ঞানিক গবেষণা : পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রকৃতপক্ষে কিছুই করেননি। এক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ দেখলেই বিষয়টি আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারব।
১৯৫৪-‘৬৪ সাল পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যয় ছিল যথাক্রমে ২০% ও ৮০%।
পাকিস্তানের ১৬টি গবেষণা কেন্দ্রের ১৩টিই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে আবার ১৯৬৩-৬৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষা দপ্তর কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত সর্বমোট ৩৫টি বৃত্তির মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানি ছাত্রদের ৩০টি বৃত্তি দেওয়া হয়েছিল এবং বাকি মাত্র ৫টি পেয়েছিল বাঙালি ছাত্ররা ।
৪. উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি রুদ্ধ : উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯৪৭-৪৮ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল পূর্ব পাকিস্তানে একটি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ২টি। ১৯৬১-‘৬২ সালে দুই অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে পূর্ব পাকিস্তানে ৪টি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ৬টি ।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-২)*
অথচ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে দেখা যায় ১৯৪৭–৪৮ সালে পূর্ববাংলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল ১,৬২০ জন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে মাত্র ৫৪৬ জন। পূর্ববাংলার ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও পশ্চিম পাকিস্তানে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম ।
৫. সামাজিক প্রতিষ্ঠান : পূর্ব পাকিস্তানিরা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের চক্রান্তে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হতো। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, ডাকঘর, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও উপকরণে বাঙালিদের সাথে বিরাট বৈষম্যের সূচনা করা হয়।
৬. সামাজিক সেবা : পশ্চিম পাকিস্তানিদের সেবার লক্ষ্যে সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে উঠেছিল। যুবসমাজের উন্নতির জন্য পূর্ব পাকিস্তানে কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ফলে সার্বিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানিদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত ছিল ।
পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৫০ লক্ষ আর পূর্ব পাকিস্তানে জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৫০ লক্ষ। পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য ডাক্তার সংখ্যা ছিল ১২,৪০০ জন আর পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার জন্য ডাক্তার ছিল ৭,৬০০ জন।
পশ্চিম পাকিস্তানের রোগীর জন্য বেড ছিল ২৬ হাজার আর পূর্ব পাকিস্তানের রোগীর জন্য বেড সংখ্যা ছিল ৬ হাজার। পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল ৩২৫টি আর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল ৮৮টি। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে শহর সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র ছিল ৮১টি আর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য শহর সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র ছিল ৫২টি।
আর এখান থেকে বুঝা যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা সেসময় সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকার পরও সামাজিক সুবিধাগুলো তাদের থেকে অনেক কম করা হয়, যা প্রকাশ্য সামাজিক বৈষম্যের দৃষ্টান্ত ।
অনার্স ১মঃ ৩য় অধ্যায় রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (২১১৫০১) (পর্ব-২)*
৭. কৃষিক্ষেত্রে : তৎকালীন সময় থেকেই বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এদেশের কৃষকদের ঋণ দেওয়া হয় সমবায় সমিতির মাধ্যমে এবং কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে। ১৯৪৭-‘৪৮ সালে সমবায় সমিতির মাধ্যমে বাংলাদেশে বিশ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল ।
১৯৬০ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানে কৃষিতে ঋণ দেওয়া হয়েছে ২১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানকে দেওয়া হয় মাত্র ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকার কিছু বেশি মাত্র । এমনিভাবে বাংলাদেশের প্রধান আয়ের উৎস কৃষিতে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানে সামাজিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে। তারা ক্ষমতার লোভ সামলাতে না পেরে সারাজীবন বাঙালিদের দূরে সরিয়ে রাখার অপকৌশল গ্রহণ করে।
তারা মনে করতো বাঙালিদের ক্ষুধা, দরিদ্র, মূর্খ ও অশিক্ষিত করে রাখতে পারলে পূর্ব পাকিস্তানিরা কখনোই পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আর তাদের আজীবন ক্ষমতা ভোগ করা সহজ হবে ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।