HSC | বাংলা ২য় পত্র | গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা ৩১-৩৫ | PDF Download: বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবন্ধ রচনা গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
৩১. গ্রন্থাগার
ভ‚মিকা : শিক্ষান্বেষী মানুষের কাছে গ্রন্থাগার এক চির-কাক্সিক্ষত জ্ঞান-তীর্থ, সেখানে সে তার মুক্তির সন্ধান পায়। খুঁজে পায় এক দুর্লভ ঐশ্বর্যের খনি। গ্রন্থাগারেই পাঠক সভ্যতার এক শাশ্বত ধারার স্পর্শ পায়, অনুভব করে মহাসমুদ্রের শত শত বছরের হৃদয় কল্লোল, শুনতে পায় জগতের এক মহা ঐকতান ধ্বনি। দেশে দেশে হৃদয়ে হৃদয়ে রচিত হয় অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ।
গ্রন্থাগারের সংজ্ঞা : গ্রন্থাগারের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘খরনৎধৎু’-এর উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ খরনবৎ থেকে। যার অর্থ ‘পুস্তক’। খরনবৎ শব্দটি এসেছে খরনৎধরঁস শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘পুস্তক রাখার স্থান’। অ্যাংলো ফ্রেঞ্চ শব্দ খরনৎধৎরব অর্থ হলো পুস্তকের সংগ্রহ।
গ্রন্থাগার এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে পাঠক-গবেষকদের ব্যবহারের জন্য বই, পত্র-পত্রিকা, পাণ্ডুলিপি, সাময়িকী, জার্নাল ও অন্যান্য তথ্যসামগ্রী সংগ্রহ ও সংরক্ষিত করে রাখা হয়। প্রাচীনকালে গ্রন্থাগার রাজন্যবর্গ ও অভিজাতগণ ব্যবহার করতেন। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। সময়ের বিবর্তন, মুদ্রণযন্ত্র ও কাগজ-কালির আবিষ্কার, গ্রন্থের সহজলভ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রন্থাগারের চর্চা সাধারণ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে তথ্য ও গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অনেক।
গ্রন্থাগারের ইতিহাস : মুদ্রণ প্রযুক্তি আবিষ্কারের আগে বই-পুস্তক, চিঠিপত্র, দলিলাদি লেখা হতো গাছের পাতা ও বাকল, পাথর, মাটির পাত্র, পশুর চামড়া প্রভৃতির ওপর। এসব উপাত্ত-উপকরণ গ্রন্থাগারে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হতো। মেসোপটেমিয়া বা বর্তমান ইরাক অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রায় ৩০ হাজার পোড়ামাটির ফলক নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলো প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। মেসোপটেমীয় উপত্যকায় যথাক্রমে সুমেরীয় ব্যাবিলনীয় এবং এশিরীয়রা বসতি গড়ে তোলে এবং সে সময়ে গ্রন্থাগার স্থাপন করে তারা সভ্যতার অগ্রগতিতে অবদান রাখে।
বাংলাদেশে গ্রন্থাগারের ইতিহাস : বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকে পুথি-পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের প্রথা ছিল। ১৭৮০ সালে শ্রীরামপুর মিশন মুদ্রিত গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপির গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করে। এরপরই কলকাতা মাদ্রাসা ও বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পুথি ও মুদ্রিত গ্রন্থের সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়।
১৯২০-এর দশক থেকে গ্রন্থাগার একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এখানে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার গড়ে ওঠে। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় বেসরকারি গণগ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের এক জরিপে দেখা যায় সারা দেশে প্রায় ১,৬০০ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার আছে।
গ্রন্থাগারের প্রকারভেদ : গ্রন্থাগার বলতে বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থের সংগ্রহশালা বোঝায়। এ সংগ্রহ ব্যক্তিগত হতে পারে আবার জনসাধারণ বা রাষ্ট্রেরও হাতে পারে। গ্রন্থাগার তিন প্রকারÑ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সাধারণ। ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ব্যক্তিমনের খেয়ালমতো গড়ে ওঠে। তা হয়ে ওঠে ব্যক্তিমনের প্রতিবিম্ব।
ব্যক্তিগত সংগ্রহে তাই বিশেষ ধরনের গ্রন্থের প্রতি পক্ষপাতিত্ব থাকা স্বাভাবিক। পারিবারিক গ্রন্থাগার পরিবারের অন্তর্গত ব্যক্তিসমূহের সমষ্টিগত ইচ্ছার প্রতিচ্ছায়া। দশজনের রুচির দিকে নজর রেখেই এ গ্রন্থাগার সাজাতে হয়। আর সাধারণ গ্রন্থাগার আধুনিক জিনিস। এর গ্রন্থ নির্বাচনে বহুজনের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে হয়। তাই এ ধরনের লাইব্রেরিতে গ্রন্থের বৈচিত্র্য ও সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে।
গ্রন্থাগারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা : একটি লাইব্রেরির বার্ষিক সভায় পঠিত প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি লাইব্রেরিকে স্কুল-কলেজের ওপরে স্থান দিই এই কারণে যে, এ স্থলে লোকে স্বেচ্ছায় স্বচ্ছন্দচিত্তে স্বশিক্ষিত হবার সুযোগ পায়। লাইব্রেরি হাসপাতালের চাইতে কম উপকারী নয়, তার কারণ আমাদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থায় লাইব্রেরি হচ্ছে একরকম মনের হাসপাতাল।’ গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব পর্যায়ক্রমে তা তুলে ধরা হলো।
১. জ্ঞানের সংগ্রহশালা : গ্রন্থাগার হলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের সংরক্ষণাগার। এখানে এসে জ্ঞানপিপাসু মানুষ খুব সহজেই তার পিপাসা মেটাতে পারে। একজন মানুষের পক্ষে সকল বিষয়ের গ্রন্থ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা কঠিন। মানুষ যাতে সহজেই বই সংগ্রহ করে জ্ঞানার্জন করতে পারে সেজন্যই গড়ে তোলা হয় গ্রন্থাগার।
২. বর্তমান ও ইতিহাসের সেতুবন্ধ : গ্রন্থাগার অনন্তকালের সাক্ষী। অতীতের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা, রহস্য, আবিষ্কার সমস্ত কিছুই গ্রন্থাগারে রাখা বইয়ের কাগজে বাঁধা পড়েছে। সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আমরা নির্মাণ করে আমাদের আগামী। এভাবেই লাইব্রেরি অতীত ও ভবিষ্যতের মাঝে যোগসূত্র রচনা করে।
৩. আলোকিত মানুষ গড়ার হাতিয়ার : আলোকিত ব্যক্তি গঠন করতে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই। গ্রন্থাগারে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যচিত্তে নিজের রুচিমাফিক বই পড়তে পারে। এভাবে মানুষ স্বশিক্ষিত তথা সুশিক্ষিত হয়। মানুষের মাঝে মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটে। মনুষ্যত্বের উদ্দীপ্ত মানুষেরাই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর কাজে ব্রতী হয়।
৪. পরিবার গঠনে ভ‚মিকা : কোনো পরিবারে যদি গ্রন্থাগার থাকে, তাহলে সেই পরিবারের মানুষের চালচলনে এর একটি প্রভাব লক্ষ করা যায়। সন্তানের মানসিক বিকাশের জন্য চাই বই। ভালো মানের বই। সন্তানের অবসর সময় কাটানোর জন্য বই হতে পারে তার ভালো বন্ধু। হাতের কাছে বই থাকলে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছাই হোক সে বই পড়বেই। জানার ক্ষুধা সবারই আছে। ছোটদের মধ্যে নতুনকে জানার ইচ্ছা আরও প্রবল। একটি পারিবারিক গ্রন্থাগার আদর্শ পরিবার গঠনে ভ‚মিকা রাখে।
৫. চিন্তার জগৎ প্রসারিত হয় : বই পড়লে মানুষের চিন্তার জগৎ প্রসারিত হয়। মানুষ ভালো গুণাবলি আয়ত্ত করার কৌশল শেখে। একজন সৎ মানুষ আরও সৎ হয়। মানুষের সচেতনতা বাড়ে, দায়িত্বশীল ও জ্ঞানী মানুষ হিসেবে সে গড়ে ওঠে। একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার মানুষকে সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
৬. চরিত্র গঠনের ভ‚মিকা পালন করে : একটি ভালো বই শিক্ষকের ভ‚মিকা পালন করে। আদর্শ চরিত্রবান মানুষ তৈরি করতে বইয়ের ভ‚মিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। একটা সময় পর মানুষ স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় না। কিন্তু গ্রন্থাগারের দুয়ার সব বয়সের মানুষের জন্য খোলা।
৭. সমাজ বিপ্লবের হাতিয়ার : সমাজ থেকে অজ্ঞতা, কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করতে গ্রন্থাগার বাতিঘরের ভ‚মিকা পালন করে। আর অজ্ঞতা কুসংস্কার দূর করতে না পারলে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব নয়।
৮. দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করে : আদর্শ চরিত্রবান দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি করতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতা অর্থবহ ও ফলপ্রসূ হবে না। সম্ভব হবে না দেশের প্রতিটি নাগরিকের মুখে হাসি ফোটানো। আর এজন্য শিক্ষিত ও চরিত্রবান নাগরিক তৈরির কোনো বিকল্প নেই। মানুষকে সুশিক্ষিত ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দরকার তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ব্যাপ্ত করা।
উপসংহার : গ্রন্থাগার জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান। অজ্ঞানতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এর বিকল্প নেই। তাই এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন প্রতিটি মানুষের জন্যই অপরিহার্য। বর্তমানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সাথে সাথে গ্রন্থাগারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তরুণ সমাজের একটা বড় অংশ গ্রন্থাগারে নিয়মিত যাতায়াত করছে। আমাদের দেশে শহর ও গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার দিকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে মনোযোগী হতে হবে। তাহলেই আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক আধুনিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যেতে পারব।
৩২. পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য
[ব. বো. ১৩, ঢা. বো. ১০]
ভ‚মিকা : স্রষ্টার পরেই প্রতিটি মানুষের জন্য তার সৃষ্টির উৎস হলো পিতা-মাতা। তাদের কারণেই আমরা পৃথিবীর আলো-বাতাস গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে পারি। পিতা-মাতা ছাড়া আমাদের অস্তিত্বই কল্পনাতীত। তাই পিতা-মাতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলাই বাহুল্য।
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য : সন্তানের প্রতি পিতা-মাতা যেভাবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন তেমনি তাদের প্রতিও প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও এ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছেÑ ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না এবং মাতাপিতার সাথে উত্তম আচরণ কর।’ মহানবি হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।
’ হিন্দুশাস্ত্রে বলা হয়েছেÑ ‘জননী জন্মভ‚মি স্বর্গাদপী গরীয়সী’। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছেÑ ‘মাতা-পিতার সেবা করাই সবচেয়ে উত্তম।’ ধর্মগ্রন্থগুলো সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করার নির্দেশনা প্রদান করে। পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য করা থেকে কখনও বিরত হওয়া উচিত নয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের জীবনের সবচেয়ে বৃহৎ অংশজুড়ে থাকে পিতা-মাতা। কোনো অবস্থাতেই তাদের সাথে অসদাচারণ করা উচিত নয়।
পিতা-মাতার মনে কষ্ট দিলে সে অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না। এ সম্পর্কে মহানবি (সা.) বলেন, “আল্লাহতায়ালা তার ইচ্ছামতো বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দেন। কিন্তু পিতা-মাতার অবাধ্যতার গুনাহ মাফ করেন না বরং এই গুনাহগারকে পার্থিব জীবনে মৃত্যুর পূর্বেই শাস্তি দিয়ে থাকেন।”
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১-৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ৬-১০ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১০-১৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | প্রতিবেদন রচনা ১৬-২১ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১-১০ | PDF Download
সন্তানের কাছে পিতা-মাতার প্রত্যাশা : প্রত্যেক পিতা-মাতাই সর্বদা তাদের সন্তানের কল্যাণ কামনা করেন। সন্তানকে সুখে রাখতে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেন। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই পিতা-মাতার মনে সন্তানের মঙ্গলের চিন্তা ঠাঁই পেয়েছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় বিখ্যাত কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের সেই বিখ্যাত উক্তিতেÑ ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।
’ পিতা-মাতা নিজে না খেয়ে সন্তানকে খাওয়ান, তাদেরকে আরাম আয়েশে রাখার সকল ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বিনিময়ে সন্তানের কাছে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিছুই প্রত্যাশা করেন না। সন্তানের সুখেই তারা সুখী হন। পিতা-মাতার এসব অবদানের পরিবর্তে তাদের প্রতি সন্তানের কর্তব্য হয়ে ওঠে সীমাহীন।
পিতা-মাতার ভালোবাসার কোনো বিনিময় মূল্য হয় না। কিন্তু সন্তানের ভালোবাসা তাদেরকে যে মানসিক প্রশান্তি দিতে পারে তা অমূল্য। তাই পিতা-মাতার প্রত্যাশাকে পূরণ করতে প্রত্যেক সন্তানেরই তৎপর থাকা উচিত।
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যের ধরন : সন্তানরা পিতা-মাতার প্রতি নানাভাবে কর্তব্য পালন করতে পারে। তারা যেভাবে পিতা-মাতার প্রতি নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হলো
(১) পিতা-মাতার প্রতি অনুগত থাকা : প্রতিটি সন্তানের অন্যতম কর্তব্য হলো পিতা-মাতার প্রতি অনুগত থাকা। কোনো অবস্থাতেই তাদের অবাধ্য হওয়া উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, পিতা-মাতা কখনো আমাদের খারাপ পরামর্শ দেন না। তাই তাদের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা উচিত।
(২) পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা : আমাদের ছোট থেকে বড় করে তোলার পেছনে পিতা-মাতার অবদান অপরিসীম। তারা যেভাবে আমাদের সকল দায়িত্ব নিয়ে বড় করে তোলেন তেমনি আমাদেরও উচিত তাদের ভরণÑপোষণের ব্যবস্থা করা, তাদের সুস্থতা বিধান করা এবং যেকোনো বিপদে-আপদে সাহায্য করা। কোনো অবস্থাতেই পিতা-মাতার দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যাবে না।
(৩) পিতা-মাতার বৃদ্ধকালীন পরিচর্যা : ছোটবেলায় প্রতিটি শিশু অসহায় থাকে। সে সময় পিতা-মাতা আমাদের আদর-যতœ ও ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখেন। পিতা-মাতা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তারাও তেমনি অসহায় হয়ে পড়েন।
এ সময় আমাদেরও উচিত পিতা-মাতাকে আগলে রাখা। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে দোয়া প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে যে, “হে আল্লাহ, আমার পিতা-মাতা শৈশবে যেমন স্নেহ-মমতা দিয়ে আমাকে লালন-পালন করেছিলেন, আপনি তাঁদের প্রতি তেমনি সদয় হোন।”
(৪) পিতা-মাতার সন্তুষ্টি বিধান : সর্বাবস্থায় পিতা-মাতার সন্তুষ্টি বিধান করা প্রত্যেক সন্তানের পরম কর্তব্য। তাদেরকে কোনো অবস্থাতেই রাগান্বিত করা যাবে না। পিতা-মাতার মনে কষ্ট দিলে সন্তানের মঙ্গল হয় না। তাই তাদের মনে আঘাত দিয়ে কোনো কথা বলা অনুচিত। সর্বদা তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করতে হবে।
(৫) পিতা-মাতার দেখানো পথ অনুসরণ করা : পিতা-মাতা আমাদের জীবনে সবচেয়ে উত্তম পথপ্রদর্শক। তাদের দেখানো পথ কখনো ভুল হয় না। তাই সবসময় তাদের কথামতো পথ চলতে হবে যেন সুন্দরভাবে জীবন কাটানো যায়।
মহান ব্যক্তিদের পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনের দৃষ্টান্ত : এই বিশ্ব চরাচরে যাঁরা মহামানব এবং জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি তাঁরা সকলেই পিতা-মাতার প্রতি অনুগত ছিলেন। হযরত বায়োজিদ বোস্তামি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, হযরত আবদুল কাদির জিলানী, হাজি মুহম্মদ মহসীন, জর্জ ওয়াশিংটন, আলেকজান্ডার প্রমুখ ব্যক্তিগণ পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনের অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমাদেরও উচিত এ সকল মহান ব্যক্তির অনুসৃত পথে চলা এবং পিতা-মাতার প্রতি যথাযথ কর্তব্য পালন করা।
উপসংহার : পিতা-মাতা এই পৃথিবীতে স্রষ্টার প্রতিনিধি হিসেবে থাকেন। তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করলে স্রষ্টার প্রতিই দায়িত্ব পালন করা হয়। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, “যে ব্যক্তি পিতা-মাতাকে পেল, অথচ তাদের সেবা করে বেহেশত লাভ করতে পারল না, সে ধ্বংস হোক।” পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনে কখনো অবহেলা করা ঠিক না। সেদিনই পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য পালনের সার্থকতা প্রকাশ পাবে যেদিন সকল বৃদ্ধাশ্রমে তালা ঝুলবে। ইহলোক ও পরলোকের সুখ নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হতে হবে।
৩৩. শৃঙ্খলা অথবা নিয়মানুবর্তিতা
ভ‚মিকা : শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতার মাঝেই লুকিয়ে আছে মুক্তি আর সাফল্যের চাবিকাঠি। এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে চলছে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়মের ছকে। পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, তারা নিজ নিজ কক্ষপথে চলছে সুশৃঙ্খলভাবে। এর একটু ব্যত্যয় ঘটলেই শুরু হবে মহাপ্রলয়। শৃঙ্খলা আর নিয়মের সমষ্টিই হলো এই জীবন আর জগতের অস্তিত্ব।
নিয়মানুবর্তিতা কী? মানুষ সামাজিক জীব বিধায় সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে হলে অবশ্যই কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। নিয়মের কারণেই মানুষ সমাজ সৃষ্টি করে একত্রে বসবাস করতে অভ্যস্ত হয়েছে। সমাজজীবনে যেমন ব্যক্তিজীবনেও তেমনি নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজন। জগতের প্রতিটি কাজের জন্যই রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন। এ নিয়মকেই বলা হয় শৃঙ্খলা।
নিয়ম মেনে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করাকেই নিয়মানুবর্তিতা বলে। ব্যক্তির কল্যাণে, জাতির কল্যাণে এবং দেশের কল্যাণে নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজন। নিয়মানুবর্তিতা শৃঙ্খলাবোধের জন্ম দেয় এবং মানুষকে কর্তব্য পালনে সচেতন করে তোলে। আমরা যদি বাল্যকাল হতেই নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা লাভ করি, তাহলে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা কষ্টকর নয়।
নিয়মানুবর্তিতা সফলতার সিঁড়ি : একজন মানুষ নিয়মানুবর্তিতার সিঁড়ি বেয়েই সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছতে পারে। আর সত্যিকারের আনন্দ সফলতা ছাড়া আসে না। শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনই আসলে সত্যিকার আনন্দের, উপভোগ্য জীবন। শৃঙ্খলাহীন ও পরিকল্পনাহীন আনন্দ বা বিনোদনের মানে উচ্ছৃঙ্খল জীবন। যার পরিণতি বিষণœতা, একঘেয়েমি, বিরক্তি। শৃঙ্খলা ছাড়া সাফল্য দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। সুশৃঙ্খল জীবনের গুরুত্ব কবির ভাষায়,
‘নিয়মের পথ ধরে গড়লে জীবন
সফলতা নিয়ে আসে সুখের স্বপন।
গুণাবলি ফুটে ওঠে ছড়ায় যে খ্যাতি
কতনা সুনাম পায় দেশ ও জাতি।’
প্রকৃতি জগতে শৃঙ্খলা : শৃঙ্খলা প্রাকৃতিক, বিশৃঙ্খলা কৃত্রিম। মহাবিশ্বের সর্বত্র শৃঙ্খলা বিরাজমান। সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহ, নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষপথে চলছে। তাদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ নেই, কোনো বিরোধ নেই।
আমাদের শরীরট্ওা শৃঙ্খলার বন্ধন মেনে চলছে। যেমনÑ ফুসফুস, হৃদপিণ্ড একই ছন্দে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে। খাবারের পুষ্টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্তের মাধ্যমে কোষে কোষে পৌঁছে যাচ্ছে। পাকস্থলী খাবার হজম করছে। এই কাজগুলোর মধ্যে কোনো বিরতি নেই, বিশৃঙ্খলা নেই, কোনো সিস্টেম লস নেই। একটু অনিময় করলেই শরীর বিদ্রোহ করে। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
ছাত্রজীবনে নিয়মানুবর্তিতা : ছাত্রজীবন হলো মানবজীবনের ভিত্তি গড়ার সময়। ছাত্রজীবনের শিক্ষার আলোকে একজন মানুষের বাকি জীবন পরিচালিত হয়। কর্মজীবনেও তার প্রভাব থাকে। লেখাপড়ার সাথে সাথে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজন ছাত্রকে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এই নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার প্রতি যে ছাত্র যত বেশি নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক থাকে সে ছাত্রজীবনে যেমন সফল হয় কর্মজীবনেও সাফল্যের বিজয়মালা তার গলায় শোভা পায়।
নিয়মানুবর্তিতা ভঙ্গের কারণ : প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মানুষ ইচ্ছা ও পছন্দের স্বাধীনতার অপব্যবহার করে নিয়মানুবর্তিতা ভেঙে নিজেই নিজের সর্বনাশ যেভাবে করে তা তুলে ধরা হলো :
১. খেয়ালিপনা : সাময়িক সুখ ভোগের জন্য মানুষ খামখেয়ালিপনার মাধ্যমে বাস্তবতাকে ভুলে থাকতে চায়। কিন্তু এর মাধ্যমে বাস্তবতাকে ভুলে থাকা বা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যেকোনো বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে সাফল্য একদিন আসবেই এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু উদ্দেশ্যহীনতায় ভেসে বেড়ানো কিংবা যা খুশি তাই করার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ অনুসরণীয় আদর্শ হতে পারবে না।
২. পরিকল্পনাহীন জীবন : একটি সুন্দর পরিকল্পনা হচ্ছে যেকোনো কাজ সুন্দরভাবে শেষ করার অর্ধেক। পরিকল্পনা ছাড়া অনেক কাজ হয় তো করা যায়। কিন্তু কাজের ফসল পরিপূর্ণভাবে ঘরে তোলা যায় না। তাই সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা। পরিকল্পনাহীন জীবন ব্যর্থতাকেই ডেকে আনে।
৩. সময়ের মূল্য বুঝতে না পারা : এই পৃথিবীতে প্রতিটি কাজের একটি উদ্দেশ্য, একটা কাল ও একটা সময় আছে। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ শেষ করতে হবে তা না হলে শেষে কাঁদলে কাজ হবে না। এই উপলব্ধির অভাবে মানুষ বিশৃঙ্খলভাবে সময় নষ্ট করে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনে।
নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব : পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, জাতীয় জীবন অর্থাৎ জীবনের সব ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম। কলকারখানা, দোকান, খেলার মাঠ, হাসপাতাল, সর্বত্রই নিয়মানুবর্তিতা একান্ত প্রয়োজন। নিয়ম-শৃঙ্খলা না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠানই গড়ে উঠতে পারে না। সুশৃঙ্খল নিয়ম জাতিকে উন্নত করে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাব যে, সুশৃঙ্খল নিয়মই তাদের উন্নতির প্রধান কারণ। নিয়মের অভাবের ফলে ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় জীবনও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে অস্তিত্বও বিপন্ন হতে পারে। তাই মানুষের জীবনে নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম।
নিয়মানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনার উপায় :
১. কাজের পরিকল্পনা করতে হবে : গুরুত্ব অনুসারে প্রতিদিনের কাজের তালিকা তৈরি করে সবার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে হবে। ধীরস্থিরভাবে একে একে কাজগুলো শেষ করলে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ শেষ হবে। কাজে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
২. আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে রাখা যাবে না : প্রতিদিনই মানুষের কিছু না কিছু কাজ করতে হয়। তাই প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করার অভ্যাস করতে হবে। তা না হলে ধীরে ধীরে কাজের বোঝা বেড়ে যাবে। অলসতা ও ভয় ঘিরে ধরে ব্যর্থতাকে ডেকে আনবে।
৩. অলসতা পরিহার করতে হবে : কবির ভাষায়,
‘অলস অবোধ যারা
কিছুই পারে না তারা।’
অলস লোকদের জীবনে কোনো শৃঙ্খলা থাকে না। অলসতা আর সফলতা একসাথে থাকতে পারে না। তাই জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনতে হলে অলসতাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
৪. কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে : শুধু অলসতা পরিত্যাগ করলেই হবে না। সাথে সাথে কঠোর পরিশ্রমীও হতে হবে। শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতাপূর্ণ জীবন অনুশীলন ছাড়া হঠাৎ অর্জন করা যায় না। অনুশীলন কঠোর পরিশ্রমের বিষয়।
৫. অধ্যবসায়ী হতে হবে : অধিকাংশ মানুষের বড় সমস্যা হলো তারা কাজ শুরু করে কিন্তু লেগে থাকতে পারে না। উল্টা-পাল্টা চিন্তা এবং অলসতা তাকে গ্রাস করে। এই জাল ছিন্ন করতে নিজেকে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ হতে হবে। তাহলে সাফল্য একদিন আসবেই।
উপসংহার : কথায় আছে, সাধনায় অসাধ্য লাভ হয়। বিনা সাধনায় কিছুই পাওয়া যায় না। জীবনকে নিয়মানুবর্তিতার ছকে পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই কঠোর সাধনা করতে হবে। শাস্তির ভয়ে নয়, সুখী-সমৃদ্ধশালী জীবন গড়ার প্রত্যাশায় আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতায় অভ্যস্ত হতে হবে। শাস্তি দিয়ে সাময়িক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা গেলেও সুযোগ পেলেই মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তখন অতীতের সকল অর্জন রসাতলে যায়। তাই ইতিবাচক বোধ থেকেই উন্নত জীবন গঠন করে মানবসমাজে নিজেকে অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার চর্চা করতে হবে।
৩৪. ইন্টারনেট ও বাংলাদেশ
ভূমিকা : মানুষের যোগাযোগে ইন্টারনেট একটি আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা। এই প্রযুক্তির কল্যাণে সারা বিশ্বই চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এর সাহায্যে মানুষ উন্নীত হয়েছে এমন এক স্তরে যেখানে সারা বিশ্বের সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একটি সমাজে পরিণত হয়েছে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ সময় ও দূরত্বকে কমিয়ে এনেছে। ফলে মানুষ বর্তমানে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে যেকোনো জায়গায় যোগাযোগ করতে পারে এর মাধ্যমে। বাংলাদেশেও বর্তমানে ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগে বেড়েছে গতি।
ইন্টারনেটের ধারণা : ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস ইন্টারনেট নামে পরিচিত। এটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কসমূহের একটি বিশ্বব্যবস্থা। কেনো নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের সঙ্গে অন্য নেটওয়ার্কযুক্ত কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাই ইন্টারনেটের কাজ। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক একত্র হয়ে পৃথিবীব্যাপী যে নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি হয় তাকেই ইন্টারনেট বলে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের আরেকটি কম্পিউটারে ছবিসহ যাবতীয় তথ্য দ্রæত সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। বিশ্বের লাখ লাখ বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ কোটি কোটি লোকের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ইন্টারনেট।
ইন্টারনেটের জন্মকথা : ইন্টারনেটের উদ্ভবের ইতিহাস বেশি দিনের নয়। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে। প্রতিরক্ষা বিভাগের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা চারটি কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তোলে প্রথম অভ্যন্তরীণ এক নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ যোগাযোগ ব্যবস্থার নাম ছিল ‘ডপার্নেট’। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ‘ডপার্নেটের’ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘অর্পানেট’।
ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য এ রকম অন্য একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে। এর নাম রাখা হয় ‘নেস্ফোনেট’। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ‘নেস্ফোনেট’-এর বিস্তার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
ইতোমধ্যে গড়ে ওঠে আরো অনেক ছোট মাঝারি ‘নেটওয়ার্ক’। ফলে এ ব্যবস্থাপনায় কিছুটা হলেও অরাজকতা দেখা দেয়। এ অরাজকতা থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রয়োজনেই গড়ে তোলা হয় ‘কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক’। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে এ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। বিশ্ববাসী পরিচয় লাভ করে ইন্টারনেট নামক এক বিস্ময়কর ধারণার সঙ্গে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার : স¤প্রতি বাংলাদেশ সম্পৃক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রবাহের সাম্রাজ্য ইন্টারনেটের সঙ্গে। ১৯৯৩ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়। শুরুরদিকে ইন্টারনেট অফলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা ছাড়াও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মেইন সার্ভিস দিয়ে আসছিল।
১৯৯৬ সালের ৪ জুনে ঠঝঅঞ চালুর মাধ্যমে প্রথম অনলাইন ইন্টারনেট চালু করে ওঝঘ (ওহভড়ৎসধঃরড়হ ঝবৎারপব ঘবঃড়িৎশ), এরপর গ্রামীণ সাইবার নেট ইউঙঘখওঘঊ, ইজঅঈ ইউগঅওখ, চজঅউঊঝঐঞঅ ঘঊঞ, অএঘও ঝণঝঞঊগ ইত্যাদি সংস্থাসহ মোট ২২টি সংস্থা বর্তমানে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ইন্টারনেটের ভূমিকা : তরুণ সমাজ দেশের প্রাণ ও ভবিষ্যৎ। এ তরুণ সমাজকে কম্পিউটার ও আইসিটি বিষয়ে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৬৪ জেলার ১২৮টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৬টি কম্পিউটার, ২টি প্রিন্টার, ১টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগসহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আমদানি-রপ্তানি, সরকারি-বেসরকারিসহ সকল কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হবে অটোমেটিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে। তথ্য প্রযুক্তিসেবায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যবিমোচন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে দেশের ৫টি এলাকায় কমিউনিটি ই-সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
কমিউনিটি ই-সেন্টারের উল্লেখযোগ্য সেবাসমূহ হচ্ছে : কম্পিউটার ব্যবহার, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ওয়েবসাইট ব্রাউজিং, কৃষিস্বাস্থ্য ও শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য, ইন্টারনেট বা অনলাইন ভিডিও কনফারেন্স, কৃষিপণ্যের বাজারসংক্রান্ত তথ্য, চাকরিসংক্রান্ত তথ্য ইন্টারনেট বা অনলাইনে আবেদনপত্র জমা, সরকারি বিভিন্ন ফরম, হজসংক্রান্ত ফরম, জাতীয় পরীক্ষার ফল, অনলাইনে পণ্য বেচাকেনা, দেশি-বিদেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য, ডিজিটাল ফটো ও ভিডিও এবং শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ।
এসব কার্যক্রম পরিচালনায় সরকারি পর্যায়ে ১৪টি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র, ২০টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগকেন্দ্র এবং ২১টি মৎস্য তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রসহ সারা দেশে এখন হাজারেরও বেশি অনুরূপ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলার মধ্যে নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য ‘গভনেট’ প্রকল্প চালু হয়েছে। এর আওতায় মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা ও ৬৪টি উপজেলার মধ্যে নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সমগ্র বাংলাদেশকে পরিণত করা হবে ডিজিটাল বাংলাদেশে।
ইন্টারনেটের সুফল : ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। ইন্টারনেটে নিউজগ্রæপ ব্যবহার করে বিশ্বের খবরাখবর জানা যায়। গবেষণাধর্মী বইয়ের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসে বিশ্বের যেকোনো লাইব্রেরির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় এবং দু®প্রাপ্য তথ্যাদি জানা যায়।
এর সাহায্যে এক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্পর্কিত লেনদেন সম্পাদন করা যায়। জটিল কোনো মামলার ক্ষেত্রে আইনের পরামর্শের জন্য বিদেশের আইনজ্ঞদের শরণাপন্ন হয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই যেকোনো পরামর্শ লাভ করা যায়।
ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ইন্টারনেট অত্যন্ত সহজ সন্ধান এনে দিয়েছে। অফিসের হাজারো ফাইলের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় ফাইলটি খুঁজে বের করা যায় ইন্টারনেটের ‘অৎপযর’ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে। ইন্টারনেটের সুবাদে ঘরে বসেই উন্নত চিকিৎসা লাভ করা যায়।
বর্তমানে ব্যাংকেও ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের খেলা, গান শোনা, সিনেমা দেখা, রান্না শেখা, ফ্যাশন সম্পর্কে জানা এমনকি বিয়ের সম্পর্কও করা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এভাবেই ইন্টারনেট বিভিন্ন কাজের এক সহজ মাধ্যম হিসেবে সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
ইন্টারনেটের কুফল : সকল জিনিসেরই ভালো খারাপ দুটো দিক রয়েছে। ইন্টারনেটেরও ভালো দিকের পাশাপাশি কিছু খারাপ দিক রয়েছে। এর মাধ্যমে কিছু অসাধু ব্যবহারকারী বা ভোক্তা মিথ্যা তথ্য প্রদান, পর্নোগ্রাফির চিত্র আদান-প্রদান, কিংবা জুয়া খেলার মতো অনুচিত কাজ করে থাকে। কেউ কেউ কম্পিউটারে ভাইরাস তৈরি করে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এর ফলে বিশ্বের লাখ লাখ কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ১৯৮৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ‘ইন্টারনেট ওয়ার্ম’ নামক ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে কয়েক হাজার কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত করে। ‘চেরোনোবিল ভাইরাস’ ইন্টারনেট ভাইরাস বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে আক্রমণ চালিয়ে সারা বিশ্বে লাখ লাখ কম্পিউটার অকেজো করে দেয়।
উপসংহার : ইন্টারনেট আধুনিক প্রযুক্তির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। এটি বিজ্ঞানের আধুনিক জয়যাত্রায় সৃষ্টি করেছে নতুন মাত্রা। ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহার আজ মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। জীবনকে করেছে স্বাচ্ছন্দ্যময়, পৃথিবীকে করেছে ছোট থেকে ছোটতর। তাই তো ইন্টারনেট এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জয়মাল্য পরিধান করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।
৩৫. চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
[কু. বো. ১৫, রা. বো. ১২, সি. বো. ১০]
ভূমিকা : মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম। মানুষ তার মেধা ও মননশীলতাকে কাজে লাগিয়ে আবিষ্কার করেছে অনেক কিছু। এ আবিষ্কার আর বিজ্ঞান অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই মানুষ চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ব্যবহার করে এক অভ‚তপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রাচীনকালের চিকিৎসা ব্যবস্থা : মানুষের রোগ আরোগ্যের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে। প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানুষ কখনো ঝাড় ফুঁক, গুণীন কিংবা বৈদ্য কবিরাজদের শরণাপন্ন হতো। চিকিৎসার অভাবে তখন কলেরা বসন্ত প্রভৃতির মতো রোগেও শত শত এমনকি হাজার হাজার লোক মারা গিয়ে উজাড় হয়ে যেত গ্রামের পর গ্রাম চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তখন গাছ-গাছড়া, পানি পড়া, ঝাড় ফুঁক প্রভৃতির মাধ্যমে এসব রোগের চিকিৎসা করা হতো।
চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি : ক্রমে ক্রমে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নয়ন ঘটেছে। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের যুগ যুগ ধরে গবেষণার ফসল হলো আজকের আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান।
রোগ চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ বর্তমান চিকিৎসায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিজ্ঞান চিকিৎসার এই দিকটিতে বিরাট সাফল্য বয়ে এনেছে। নানা প্রকার টিকা আর ভ্যাকসিন নানা জটিল ও ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধে এখন সাফল্যজনকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। য²া, হাম, হুপিংকাশি, বসন্ত, কলেরা, ডিপথেরিয়া আজ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার : আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা আবিষ্কার ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে বিজ্ঞান বিরাট ভ‚মিকা রাখছে। বর্তমানে এক্সরে, ইসিজি, এনজিও গ্রাম প্রভৃতির আবিষ্কার মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকেও আশা দেখায়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদানের ফলে বৈদ্য কবিরাজের চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তে হোমিওপ্যাথিক ও অ্যালোপ্যাথিক আর সার্জারির মতো আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছে। বিজ্ঞানের অবদানে পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্টেপ্টোমাইসিন ইত্যাদি কঠিন সব ব্যাধির ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে।
রোগ নির্ণয়ে বিজ্ঞান : চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সঠিকভাবে রোগ নির্র্ণয় করতে পারলে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করে রোগীকে সুস্থ করা যায়। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান অভিনব আবিষ্কারের সাহায্যে রোগ নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করছে। এক্সরে, ইসিজি, সিটিস্ক্যান, মাইক্রোস্কোপ, আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই ইত্যাদি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে পরীক্ষা করে শরীরের রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে ও মানুষের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে।
রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান : রোগ নিরাময়ে আধুনিককালে বিজ্ঞান যে সাফল্য অর্জন করেছে তার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। আধুনিক শল্য চিকিৎসা বা সার্জারির এখন এক বিস্ময়কর ব্যাপার। আধুনিক বিশ্বে এখন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব হচ্ছে।
মানবদেহে হৃৎপিণ্ড, কিডনি প্রভৃতি সংযোজন করা হচ্ছে বর্তমানে। ক্যান্সারজাতীয় ভয়ংকর সব রোগের চিকিৎসাও বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে। রেডিয়াম ব্যবহার করে বর্তমানে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা হচ্ছে রেডিও থেরাপির মাধ্যমে। ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে আধুনিককালে চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে।
শরীরে ছোট্ট একটি ছিদ্র করে বড় বড় অপারেশন হচ্ছে বর্তমানে। এইডস রোগ কয়েক দিন আগেও ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের সামনে একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। কিন্তু অধুনা সেই এইডসেরও ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান জিনের গঠন তত্ত¡ আবিষ্কার করেছে। এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের একটি বড় অবদান। বিজ্ঞান চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি নতুন সংযোজন ঘটিয়েছে। কস্মেটিক সার্জারির মাধ্যমে মানুষের দেহের অসুন্দর অংশকে বর্তমানে সুন্দর করা সম্ভব হচ্ছে।
বিজ্ঞান জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা জগৎকে নিয়ে এসেছে এক আধুনিক জগতে। ভবিষ্যতে এর মাধ্যমে বিশ্বে চিকিৎসা জগতে আরো নতুন নতুন ঘটনা আমরা দেখতে পাব। আধুনিক বিজ্ঞান ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে চিকিৎসা জগৎকে অনেক রহস্যের সমাধান করতে দিয়েছে।
উপসংহার : বিজ্ঞানের আশীর্বাদে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। পূর্বে যা চিকিৎসকদের কাছে অসম্ভব ছিল বর্তমানে তা সম্ভব। তাই বিজ্ঞান কোনো একসময় সব ধরনের রোগ ব্যাধিকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে একথা বললে বেশি হবে না। মানুষের গড় আয়ু আজ সারা বিশ্বেই বেড়ে গেছে, কমেছে শিশুমৃত্যু হারসহ নানা জটিল রোগও। তাই এ কথা বলা যায় যে, বিজ্ঞান চিকিৎসা জগৎকে এক উন্নত ও আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।