HSC | বিড়াল | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় | বাংলা ১ম পত্র | PDF : বাংলা ১ম পত্রের বিড়াল গল্পটি হতে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা ১ম পত্রের বিড়াল গল্পটি হতে গুরুপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
বিড়াল | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
পাঠ-পরিচিতি
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। তিন অংশে বিভক্ত এই গ্রন্থটিতে যে কটি প্রবন্ধ আছে, তার মধ্যে বিশেষভাবে উলেখযোগ্য রচনা ‘বিড়াল’। একদিন কমলাকান্ত নেশায় বুঁদ হয়ে ওয়াটারলু যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন। এমন সময় একটা বিড়াল এসে কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলে।
ঘটনাটা বোঝার পর তিনি লাঠি দিয়ে বিড়ালটিকে মারতে উদ্যত হন। তখন কমলাকান্ত ও বিড়ালটির মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথন চলতে থাকে। এর প্রথম অংশ নিখাদ হাস্যরসাত্মক, পরের অংশ গূঢ়ার্থে সন্নিহিত।
বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনা যুক্তিগ্রাহ্য সাম্যতাত্তি¡ক সৌকর্যে উচ্চারিত হতে থাকে, “আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি?
খাইতে পাইলে কে চোর হয়? দেখ, যাঁহারা বড় বড় সাধু, চোরের নামে শিহরিয়া উঠেন, তাঁহারা অনেকে চোর অপেক্ষাও অধার্মিক।” মাছের কাঁটা, পাতের ভাত যা দিয়ে ইচ্ছে করলেই বিড়ালের ক্ষিধে দূর করা যায়,
লোকজন তা না করে সেই উচ্ছিষ্ট খাবার নর্দমায় ফেলে দেয়, … যে ক্ষুধার্ত নয়, তাকেই বেশি করে খাওয়াতে চায়, ক্ষুধাকাতর-শ্রীহীনদের প্রতি ফিরেও তাকায় না, এমন ঘোরতর অভিযোগ আনে বিড়ালটি।
বিড়ালের ‘সোশিয়ালিস্টিক’, ‘সুবিচারিক’, ‘সুতার্কিক’ কথা শুনে বিস্মিত ও যুক্তিতে পর্যুদস্ত কমলাকান্তের মনে পড়ে আত্মরক্ষামূলক শ্লেষাত্মক বাণী “বিজ্ঞ লোকের মত এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবে, তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে” এবং তিনি সে-রকম কৌশলের আশ্রয় নেন।
সাম্যবাদবিমুখ, ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষের একজন সরকারি কমকর্তা হয়েও, বঙ্কিমচন্দ্র একটা বিড়ালের মুখ দিয়ে শোষক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু-চোরের অধিকারবিষয়ক সংগ্রামের কথা কী শ্লেষাত্মক, যুক্তিনিষ্ঠ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন তা এ প্রবন্ধ পাঠ করে উপলব্ধি করা যায়।
লেখক পরিচিতি
নাম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
জন্ম ও পরিচয় জন্মতারিখ : ২৬ জুন, ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দ।
জন্মস্থান : কাঁঠালপাড়া, চব্বিশ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ।
পিতৃ-পরিচয় পিতার নাম : যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
পেশা : ডেপুটি কালেক্টর।
শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : এন্ট্রান্স (১৮৫৭), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
উচ্চতর : বিএ (১৮৫৮), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়; বিএল (১৮৬৯), প্রেসিডেন্সি কলেজ।
কর্মজীবন ও পেশা পদবি : ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (১৮৫৮-১৮৯১ খ্রি.)।
কর্মস্থল : যশোর, খুলনা, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, মেদিনীপুর, বারাসাত, হাওড়া, আলীপুর প্রভৃতি।
সাহিত্য সাধনা উপন্যাস : দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল, রজনী, আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরাণী, সীতারাম প্রভৃতি।
প্রবন্ধ : লোকরহস্য, বিজ্ঞানরহস্য, কমলাকান্তের দপ্তর, সাম্য, কৃষ্ণচরিত্র, ধর্মতত্ত¡ অনুশীলন প্রভৃতি।
কৃতিত্ব তাঁর রচিত ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫) বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত।
উপাধি
ও সম্মাননা ‘সাহিত্য সম্রাট’Ñ সাহিত্যের রসবোদ্ধাদের কাছ থেকে উপাধিপ্রাপ্ত।
‘ঋষি’Ñ হিন্দু ধর্মানুরাগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত খেতাব।
মৃত্যু মৃত্যু তারিখ : ৮ এপ্রিল, ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দ।
উৎস পরিচিতি
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। তিন অংশে বিভক্ত এ গ্রন্থটিতে যে ক’টি প্রবন্ধ আছে, তার মধ্যে বিশেষভাবে উলেখযোগ্য রচনা ‘বিড়াল’।
বস্তুসংক্ষেপ
‘বিড়াল’ প্রবন্ধটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত রম্যব্যঙ্গ রচনা সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’-এর অন্তর্গত। বাংলা সাহিত্যে এক ধরনের হাস্যরসাত্মক রঙ্গব্যঙ্গমূলক রচনার ভিতর দিয়ে তিনি পরিহাসের মাধ্যমে সমকালীন সমাজ, ধর্ম, সভ্যতা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন ত্র“টি-বিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতার তীব্র সমালোচনা করেছেন। ‘বিড়াল’ নকশা জাতীয় ব্যঙ্গ রচনা।
এতে লেখক একটি ক্ষুধার্ত বিড়াল আফিংখোর কমলাকান্তের জন্য রেখে দেয়া দুধ চুরি করে খেয়ে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য এবং সমাজের নানা অসঙ্গতিকে ইঙ্গিত করেছেন।
দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার, ধনীর ধনে গরিবের অধিকার, ক্ষুধার্ত অবস্থায় মানুষের আচরণ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক উপস্থাপন করে লেখক সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন।
বিড়ালকে প্রহার করার জন্য উদ্যত হয়ে কমলাকান্ত নিজেই দুর্বল ক্ষুধার্ত বিড়ালের পক্ষ অবলম্বন করে যুক্তিতর্ক দাঁড় করেছেন। খাবার মাত্রেই ক্ষুধার্তের অধিকার আছে।
তা ধনীর কি দরিদ্রের সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। যদি ধনীর হয় তবে তা স্বেচ্ছায় না দিলে ক্ষুধার্ত তা যেকোনো উপায়ে সংগ্রহ করবে, প্রয়োজনে চুরি করে খাবে, তাতে বিশেষ কোনো দোষ নেই। বিড়ালের এই যুক্তিকে শেষ পর্যন্ত কমলাকান্ত অস্বীকার করতে পারেন নি।
বিড়াল তাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয় যে, এ সংসারে ক্ষীর, সর, দুগ্ধ, দধি, মৎস্য, মাংস সবকিছুতেই তাদের অধিকার আছে। এ কথায় পৃথিবীজুড়ে যত ধন-সম্পদ আছে তাতে দরিদ্র মানুষের অধিকারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। বিড়াল সাধ করে চোর হয় নি।
তার জিজ্ঞাসা খেতে পেলে কে চোর হয়? বড় বড় সাধু চোর অপেক্ষা যে অধার্মিক সে বিষয়ে বিড়াল তার যুক্তি তুলে ধরেছে। বিড়ালের স্পষ্ট উচ্চারণÑ অধর্ম চোরের নয়, চোরে যে চুরি করে সে অধর্ম কৃপণ ধনীর।
কমলাকান্ত নিজেই নিজের মনে বিড়ালের পক্ষে এবং নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। বিড়ালের কথাগুলো সোশিয়ালিস্টিক, সমাজ বিশৃঙ্খলার মূল। এভাবে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে দুই পক্ষের মাধ্যমে সমন্বয় সাধনের প্রধান অন্তরায়গুলো আমাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র।
তিনি সমাজে নিম্নশ্রেণির উপর উচ্চশ্রেণির অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার ও দোষ চাপানোর বিষয়টিকে ব্যঙ্গ করেছেন ‘বিড়াল’ রচনায়।
এই রচনায় বিড়াল নিম্নশ্রেণির দরিদ্র ভুখা মানুষের প্রতিনিধি আর কমলাকান্ত যতক্ষণ পর্যন্ত ধনীর ধনবৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দেখান ততক্ষণ পর্যন্ত মনুষ্য সমাজের অন্যায়কারী ধনী চরিত্রের প্রতিনিধি হিসেবে চিিহ্নত। ‘বিড়াল’ রচনায় লেখক ‘কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই’, ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া’ প্রভৃতি প্রবাদ বাক্য ব্যবহার করে শ্রমিকরা কীভাবে ফল ভোগ থেকে বঞ্চিত হয় সে দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
মূলত জগৎসংসারে ধর্মের দোহাই দিয়ে, অন্যায়-প্রতিকারের বিধান দিয়ে মানুষের কল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। জগতের মানুষের কল্যাণ করতে হলে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের অবসান করে মানবকল্যাণে আত্মনিবেদন করতে হবে। এই বিশেষ আবেদনই ‘বিড়াল’ রচনায় হাস্যরসের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
নামকরণের সার্থকতা যাচাই
নামকরণ : ‘বিড়াল’ গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে গল্পের মূল চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে। গল্পের মূল চরিত্র ‘বিড়াল’। বঙ্কিমচন্দ্রের এ গল্পটি প্রতীকধর্মী নকশা জাতীয় রম্যরচনা ‘কমলাকান্তের দপ্তর’-এর অন্তর্গত। বিড়ালের প্রতীকে লেখক এখানে নিম্নশ্রেণির গরিব মানুষের ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’ এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে হাস্যরসের মধ্যদিয়ে চোরের চুরি করার মূল কারণ এবং তা সমাধানের জন্য পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে।
আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে কমলাকান্ত যখন ওয়াটারলুর যুদ্ধে ব্যূহ রচনায় ব্যস্ত তখন তার জন্য রাখা দুধ বিড়াল খেয়ে ফেলে। বিড়ালের এ কাজটি ন্যায়সঙ্গত কি না তা নিয়েই এ রচনার কাহিনী। নিজের জন্য রাখা দুধ বিড়াল এসে খেয়ে ফেলেছে, সে ক্ষোভে কমলাকান্ত শাস্তি দিতে চান বিড়ালটিকে। মারতে গিয়েও কমলাকান্ত পারেন নি। কারণ দুধে তার যে অধিকার, বিড়ালেরও তাই। কেননা, দুধ মঙ্গলা গাভীর, খাওয়ার জন্যই সেখানে রাখা ছিল।
যার প্রয়োজন সে খেলেই হলো তাছাড়া বিড়ালের ক্ষুধা-তৃষ্ণা এবং তারও খাওয়ার অধিকার সম্পর্কে কমলাকান্ত ভাবে। বিড়াল যদি সে অধিকারে দুধ খেয়ে থাকে তাহলে সমাজের দৃষ্টিতে তা চুরি। কারণ সে কাউকে জানিয়ে দুধ খায় নি। ক্ষুধার্ত বলে সে ক্ষুধা নিবারণের দিকটিই বিবেচনা করেছে; চুরি, অন্যায় অপরাধের দিক বিবেচনা করে নি। লেখক এখানে ক্ষুধায় অন্ন পায় না বলে গরিবের অন্যায়ভাবে ক্ষুধা নিবারণের দিকটি বুঝাতে চেয়েছেন।
বিড়াল এখানে অভাবী মানুষের প্রতীক। ধনীরা তাকে সাহায্য করলে তো সে চুরি করত না। তারা যে খাদ্য নষ্ট করে বা ফেলে দেয় তা যদি তারা বিড়াল-এর মতো ক্ষুধার্ত অভাবীদের দিয়ে দিত তাহলে তাদের চুরি করতে হতো না। অথচ তারা তা দেয় না, উল্টো চুরি করতে বাধ্য হলে শাস্তি দেয়। এ কারণে বিড়াল যুক্তি দেখায় যে, চোর দোষী হলে কৃপণ ধনী তারচেয়ে বেশি দোষী। সে ক্ষেত্রে কৃপণ ধনীরও কার্পণ্যের দণ্ড হওয়া উচিত বলে সে মনে করে।
কিন্তু তারা তা না করে কীভাবে তেলা মাথা তেল ঢালে যাদের খাদ্যের অভাব নেই তাদের জন্য ভোজের আয়োজন করে। এখানে অসাম্য ও অমানবিক দিকটি ‘বিড়াল’ গল্পে কমলাকান্তকে দেখিয়ে দেয়। কারণ কমলাকান্ত ধনীদের প্রতীক; আফিমখোর হলেও সত্যবাদী। চোর কেন চুরি করে সেটা তারা অনুভব করতে চায় না। ধনীর জন্য আয়োজিত খাদ্যের উচ্ছিষ্টটুকু দরিদ্রদের দিলেই তারা বেঁচে যায়। এ কারণে বিড়াল প্রস্তাব দেয়Ñ “যে বিচারক চোরকে সাজা দিবেন।
তিনি আগে তিন দিবস উপবাস করিবেন। তাহাতে যদি তাহার চুরি করিয়া খাইতে ইচ্ছা না করে, তবে তিনি স্বচ্ছন্দে চোরকে ফাঁসি দিবেন।” এ যুক্তির পর কমলাকান্ত বিজ্ঞের মতো তাকে ধর্মোপদেশ দেয় এবং ছানার সমান ভাগ দেয়ার লোভ দেখায়। কিন্তু কথায় না ভুলে সে নিজের যুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। গল্পের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিড়ালের দুধ চুরির অপরাধ খণ্ডনের বিষয়ের প্রাধান্য থাকায় এর নামকরণ ‘বিড়াল’ যথার্থ হয়েছে।
সার্থকতা :
‘বিড়াল’ গল্পের মূল চরিত্র হচ্ছে ‘বিড়াল’। তাকে কেন্দ্র করেই গল্পের মূল বিষয় আবর্তিত হয়েছে এবং পরিণতি পেয়েছে। ‘বিড়াল’ নিম্নশ্রেণির অভাবী মানুষের প্রতীক যারা ক্ষুধা নিবারণে চুরি করতে বাধ্য হয়। হাস্যরসের মধ্যদিয়ে চোর আত্মপক্ষ সমর্থন করে এতে তার যুক্তি তুলে ধরেছে। মারাত্মক ক্ষুধার জ্বালায় সে অন্য কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে চুরি করে। তাকে চোর বানিয়েছে কৃপণ ধনীরা, তারা তাকে কোনো রকম সাহায্য করে না।
অথচ তেলা মাথায় তেল দেয়, দরিদ্রদের দিকে তাকায় না। কাজেই চোরের শাস্তি হলে, কৃপণ ধনীদেরও শাস্তি হওয়া উচিত। কমলাকান্ত তাকে ধর্মের কথা শুনিয়ে পাপ থেকে দূরে থাকতে উপদেশ দিয়েছে। বিড়াল তাকে উল্টো শুনিয়েছে, যে বিচারক চোরের বিচার করবেন তাকে তিন দিন উপবাস থেকে তারপর রায় দিতে হবে। এসব দিক বিবেচনায় গল্পের নামকরণ ‘বিড়াল’ রাখা সার্থক হয়েছে।
শব্দার্থ ও টীকা
চারপায় ¬ টুল বা চৌকি।
প্রেতবৎ – প্রেতের মতো।
নেপোলিয়ন -ফরাসি স¤্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯১৮২১) প্রায় সমগ্র ইউরোপে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিলেন। ১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দে ওয়াটারলু যুদ্ধে ওয়েলিংটনের ডিউকের হাতে পরাজিত হয়ে তিনি সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত হন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
ওয়েলিংটন – বীর যোদ্ধা। তিনি ডিউক অফ ওয়েলিংটন নামে পরিচিত (১৭৬৯-১৮৫৪)।
ওয়াটারলু যুদ্ধে তাঁর হাতে নেপোলিয়ন পরাজিত হন।
ডিউক -ইউরোপীয় সমাজের বনেদি বা অভিজাত ব্যক্তি।
মার্জার -বিড়াল।
ব্যূহ রচনা – প্রতিরোধ বেষ্টনী তৈরি করা, যুদ্ধের জন্য সৈন্য সাজানো।
প্রকটিত -তীব্রভাবে প্রকাশিত।
ষষ্টি – লাঠি।
দিব্যকর্ণ – ঐশ্বরিকভাবে শ্রবণ করা।
ঠেঙ্গালাঠি -প্রহার করার লাঠি।
শিরোমণি -সমাজপতি, সমাজের প্রধান ব্যক্তি।
ন্যায়ালংকার – ন্যায়শাস্ত্রে পণ্ডিত।
ভার্যা – স্ত্রী, বউ।
সতরঞ্চ খেলা – নিচে (মাটিতে) বিছিয়ে যে খেলা খেলতে হয়; পাশা খেলা, দাবা খেলা।
লাঙ্গুল – লেজ, পুচ্ছ।
সোশিয়ালিস্টিক – সমাজতান্ত্রিক, সমাজের সবাই সমান এমন একটি রাজনৈতিক মতবাদ।
নৈয়ায়িক -ন্যায়শাস্ত্রে পণ্ডিত ব্যক্তি।
কস্মিনকালে -কোনো সময়ে।
মার্জারী মহাশয়া -স্ত্রী বিড়াল।
জলযোগ – হালকা খাবার, টিফিন।
সরিয়া ভোর -ক্ষুদ্র অর্থে (উপমা) স্বল্প পরিমাণ।
পতিত আত্মা -বিপদগ্রস্ত বা দুর্দশাগ্রস্ত আত্মা। এখানে বিড়ালকে বোঝানো হয়েছে।
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | আনিসুজ্জামান | বাংলা ১ম পত্র | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৬-৯ | বাংলা ১ম | PDF
HSC | জাদুঘরে কেন যাব | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৫ | বাংলা ১ম | PDF
বানান সতর্কতা
চঞ্চল, প্রেতব্য, ব্যূহ, পাষাণবৎ, মনুষ্যকুল, স্বরূপ, বাঞ্ছনীয়, ক্ষুৎপিপাসা, শয্যাশায়ী, মূলীভূত, পণ্ডিত, ক্ষুধা, দরিদ্র, ভার্যা, মূর্খা, কুশ, অস্থি, মৎস্য, কৃষ্ণ, শুষ্ক, ক্ষীণ, কার্পণ্য, দূরদর্শী, সঞ্চয়, নির্বিঘœ, নৈয়ায়িক, কস্মিনকাল, স্বচ্ছন্দ, দুশ্চিন্তা, ধর্মাচর
রিভিশন অংশ
আলোচ্য অংশে জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার জন্য বাড়ির কাজ, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকণিকা, জ্ঞানমূলক এবং অনুধাবনমূলক আরও কিছু প্রশ্নোত্তর উলেখ করা হয়েছে। এ অংশটি অনুশীলনের মাধ্যমে পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি ও জবারংরড়হ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
বাড়ির কাজ
‘বিড়াল’ রচনার আলোকে রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
‘বিড়াল’ রচনায় ক্ষুধার যে সর্বজনীন রূপ চিত্রিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ কর।
‘বিড়াল’ রচনায় বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার যে আকাক্সক্ষা ব্যক্ত হয়েছে তার যৌক্তিক বিশ্লেষণ কর।
‘বিড়াল’ রচনায় সমাজের মানুষের প্রতি বিড়ালের অভিযোগসমূহ ব্যাখ্যা কর।
বিড়ালের বক্তব্যে ক্ষুধার্ত ও অবহেলিতের প্রতি যে সমবেদনার প্রকাশ ঘটেছে তা ব্যাখ্যা কর।
‘বিড়াল’ রচনায় বিড়াল চুরি করে দুধ খাওয়ার পক্ষে যেসব যুক্তি উত্থাপন করেছে তা মূল্যায়ন কর।
বিড়ালের বক্তব্য অনুযায়ী খাবারমাত্রেই ক্ষুধিতের অধিকার আছেÑ এ বিষয়টির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর।
‘বিড়াল’ রচনায় উলিখিত ‘পরোপকারই পরম ধর্ম’ কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
‘বিড়াল’ রচনা অনুযায়ী সমাজে প্রচলিত নৈতিকতার ধারণা, অপরাধপ্রবণতা ও বিচার ব্যবস্থার ত্র“টি বিশ্লেষণ কর।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকণিকা
দুধ খাওয়ার অপরাধে কমলাকান্ত বিড়ালকে লাঠি হাতে তাড়া করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর আপনমনে বিড়ালের সাথে কল্পনায় কথোপকথন শুরু করেন।
ক্ষুধিত চুরি করলে দোষী সাব্যস্ত হয় অথচ যার অঢেল খাবার ও সম্পদ আছে কিন্তু কৃপণতা করে, তাকে কেন দোষী সাব্যস্ত করা হয় না?Ñ এটাই ছিল বিড়ালের অভিযোগ।
পৃথিবীর কেউ ক্ষুধার জ্বালায় মৃত্যুবরণ করতে চায় না বরং এর চেয়ে চুরি করাই জীবনের জন্য শ্রেয় বলে বিড়াল দাবি করেছে।
মানুষ খাবার ধ্বংস করে, পানিতে বা নর্দমায় ফেলে দেয়, কিন্তু অভুক্ত বিড়ালকে কিছুই দেয় না, এজন্যই ক্ষুধার্ত বিড়াল খাবার চুরি করে।
তেলা মাথায় তেল দেয়া মানুষের চারিত্রিক রোগ, অভুক্তকে কেউ খেতে দেয় না। বরং যার অনেক খাবার আছে তাকে খাবারের জন্য জোর করা হয়।
পৃথিবীতে জ্ঞানী, মূর্খ, পশু, মানুষ সকলের খাবার পাওয়ার আধিকার আছে। বিড়ালের এরূপ কথোপকথনে সমাজতান্ত্রিক চেতনা প্রকাশ পায়।
ধন বৃদ্ধি ব্যতীত সমাজের উন্নতি নেই। কিন্তু কেউ যদি না খেতে পায়, সমাজের উন্নতি তার কোনো কাজে আসে না।
বিড়ালের মতে, চুরির অপরাধে চোরকে ফাঁসি দিক কিন্তু তার আগে বিচারকের তিন দিন উপবাস করা আবশ্যক। বিড়ালের বিশ্বাস, তিন দিন উপবাসের কষ্ট সহ্য না করতে পেরে বিচারকও চুরির দায়ে ধরা পড়বেন।
‘বিড়াল’ রচনায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বিড়ালের মুখ অত্যন্ত কৌশলে ও সমাজের ধনীক শ্রেণির অপচয়, কৃপণতা ও অন্যায়ের প্রতি ব্যঙ্গ প্রকাশ করেছেন।
টেক্সট বুক অ্যানালাইসিস
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।