স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয় : মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
৯.০৫. মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর।
অথবা, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল মুজিবনগর সরকার।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল এ সরকার শপথ গ্রহণ করে। এ সরকারের প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ হয় মুজিবনগর এবং অস্থায়ী সরকারও মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। যুদ্ধে গতিবেগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এ সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। নিম্নে মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা করা হলো :
১. ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সৃষ্টি : মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালির ওপর যে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তারই পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। কিন্তু এ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা সংগঠিত না থাকায় অচিরেই এ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হানাদার বাহিনীর আক্রমণে ভেঙে পড়ে ।
এমতারস্থায় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। মুজিবনগর সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করে এবং দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলায় প্রথম প্রয়াস চালায় ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
২. যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় : ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর যুদ্ধে তুমুল গতি সঞার হয়। পূর্বে যে বিক্ষিপ্ত আক্রমণ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল তা ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছিল অস্থায়ী বা প্রবাসী সরকার প্রতিষ্ঠার পর মুক্তিযুদ্ধে গতি সঞ্চারিত হয়।
প্রতিষ্ঠিত সরকার তার প্রশাসনতন্ত্রের মাধ্যমে এক সংগঠিত অভিযান পরিচালনা করতে থাকে। এ সরকার নিয়মিত ও অনিয়মিত বাহিনী প্রতিষ্ঠা করে যুদ্ধকে দুইভাবে পরিচালনা করতে থাকে। নিয়মিত বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আর অনিয়মিত বাহিনী গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে পাকবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে । এর মাধ্যমে যুদ্ধের গতি বেড়ে যায়।
৩. পরিকল্পনামাফিক সংগ্রাম পরিচালনা : মুজিবনগরের অস্থায়ী সরকার বিক্ষিপ্ত যুদ্ধকে একটি পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসে এবং সুনির্দিষ্ট নীতি ও কৌশল অবলম্বন করে যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকে।
যুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। প্রধান সেনাপতি ছিলেন কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী, সেনাপ্রধান ছিলেন লে. কর্নেল আব্দুর রব।
বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চলকে এ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে ৩টি ব্রিগেডও গঠিত হয়। এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই সার্বিক মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ধাপে ধাপে যুদ্ধকে পরিচালনা করে এ মন্ত্রণালয় যা যুদ্ধজয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল ।
৪. শরণার্থীদের প্রতি দৃষ্টিদান : স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল শরণার্থী সমস্যা যা মোকাবিলা করা হয়। যুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে । ব্যাপক পরিমাণ শরণার্থীদের আশ্রয় ব্যবস্থা ও খাদ্য সরবরাহ করা ছিল মুজিবনগর সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
এ লক্ষ্যে একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শরণার্থীদের কল্যাণে শরণার্থী কল্যাণ বোর্ড কার্যকর ছিল, যা শরণার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তাদের কল্যাণের লক্ষ্যে কর্মসূচি সাজিয়েছিল ।
৫. বৈশ্বিক সমর্থন আদায় : প্রবাসী বা মুজিবনগর সরকার শুধু যুদ্ধ পরিচালনা করেই শান্ত ছিল না। এ সরকার বিশ্ব জনমত গঠন র্ণ করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দূত প্রেরণ, রাষ্ট্রদূত নিয়োগ, দূতাবাস স্থাপন করে সেসব দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে।
মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালির প্রতি বিশ্বব্যাপী যে সহানুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল তা বহির্বিশ্বে মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার ফসল। এসব তৎপরতার ক্ষেত্রে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যুদ্ধকালে প্রতিষ্ঠিত অস্থায়ী সরকার তথা মুজিবনগর সরকার দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং যুদ্ধের পক্ষে বহির্বিশ্বে জনমত নি গঠনের লক্ষ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফলে মুক্তিযুদ্ধ ম সুসংগঠিত ও সুপরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হয়, একই সাথে বিশ্বের আপামর জনসাধারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠে। মুজিবনগর সরকারের এ তৎপরতার কারণেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্বল্প সময়ের মধ্যে সাফল্য লাভ করে। তাই মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা অপরিসীম।
৯.০৬. মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা কর।
অথবা, মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে মুজিবনগর সরকারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়ন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভিত্তি পায় এবং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
এ ঘোষণাপত্রে যুদ্ধের যৌক্তিক কারণ তুলে ধরার পাশাপাশি যুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটি গণপরিষদ গঠনের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে এ ঘোষণাপত্রের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয় তা ন মুক্তিযুদ্ধকে যৌক্তিক করে তোলে। নিম্নে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. স্বাধীনতা যুদ্ধের যৌক্তিকতা নির্ণয় : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নিকট বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। এ ঘোষণাপত্রে বলা হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে হিসেবে ১৬৭টি আসন পাওয়া আওয়ামী লীগের গণপরিষদ গঠন করার কথা ছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ গণপরিষদের অধিবেশন আহবান করেন। কিন্তু ১ মার্চ এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ আহুত অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন এবং আলোচনা চলা অবস্থায় বাঙালিদের ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেন।
তাই এরূপ বিশ্বাসঘাতকতা মূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানকে প্রতিরোধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই বাঙালিদের সম্মান ও সংহতি রক্ষার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল যৌক্তিক ও সময়ের দাবি।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
২. বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার স্বীকৃতি দান : ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা ও অচল অবস্থার সৃষ্টি হয় তারই পরিপ্রেক্ষিতে পাক সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে এবং সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
২৬শে মার্চের এ ঘোষণায় তিনি বলেন, “আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো।” এতদিন এ ঘোষণা স্বীকৃতরূপ লাভ করেনি।
কিন্তু ১০ এপ্রিল প্রণীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে এর ভূমিকা ছিল অত্যধিক ।
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-অতিসংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-সংক্ষিপ্ত)
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-১
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-২
- স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৬ষ্ঠ-রচনামূলক)-৩
৩. সংগ্রামের সাংগঠনিক রূপ প্রদান : অপারেশন সার্চলাইটের পর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা সংগঠিত কোনো যুদ্ধ ছিল না। ফলে পাকবাহিনীর আক্রমণে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এ স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এমতাবস্থয়ে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি হয়।
যেখানে সরকারকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় যুদ্ধকে নিজের কর্তৃত্বে এনে সংহত ও সংগঠিত করার। ফলে যুদ্ধ সাংগঠনিক রূপে আত্মপ্রকাশ করে। তাই যুদ্ধকে সাংগঠনিক রূপ প্রদান করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. অস্থায়ী সরকার গঠন : যুদ্ধের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব একটি বড় বিষয় হিসেবে কাজ করে। নাবিক ছাড়া জাহাজ যেমন বেশিদূর অগ্রসর হতে পারে না, তেমনি দক্ষ নেতৃত্ব ছাড়া যুদ্ধও সঠিক পথে অগ্রসর হতে পারে না। প্রথমদিকে বাঙালিদের প্রতিরোধ যুদ্ধ হলেও তা নেতৃত্বের অভাবে দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
কিন্তু ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে গণপরিষদ গঠনের কথা বলা হয় তা যুদ্ধকে সঠিক পথে পরিচালনা করার নেতৃত্ব খুঁজে পায়। এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমরা যারা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ওপর যে দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলনে আমরা একটি গণপরিষদ গঠন করলাম।
আর গণপরিষদ দক্ষ নাবিকের মতো মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সঠিক পথ নির্দেশ করে ।
৫. বিশ্ববাসীর সমর্থন : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত যুদ্ধের যৌক্তিকতা দ্বারা এবং স্বাধীনতার স্বীকৃতি এবং সর্বোপরি একটি সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত বিশ্ববাসীর কাছে এ যুদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরে। তারা এ যুদ্ধের জন্য দায়ী দোষী গোষ্ঠীকে ঘৃণা করতে শুরু করে এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
আর বিশ্ববাসীর এ সমর্থন বাংলাদেশের বিজয়ের পিছনে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। কেননা বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের পক্ষে না থাকলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা সহজ হতো না ।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ঘোষণাপত্রে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং যুদ্ধকে যৌক্তিক করে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হয়।
স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গঠিত সরকার সুশৃঙ্খলভাবে সংগ্রাম পরিচালনা ও বিজয় অর্জনের জন্য যথাযথ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। একথা অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলে ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
৯.০৭. স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি উল্লেখ কর।
অথবা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি লেখ।
উত্তরঃ ভূমিকা : পৃথিবীতে যেসব দেশ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিয়ে যুদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
যদিও ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা হয়, কিন্তু ১০ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদের বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্বের তারিখ দিয়ে ১০ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে ইংরেজিতে প্রণীত প্রক্লেমেশন অভ ইন্ডিপেনডেন্স ঘোষণা ও জারি করা হয় এবং ২৩ মে ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ।
“স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (অনূদিত)”
মুজিবনগর, বাংলাদেশ
১০ এপ্রিল, ১৯৭১
যেহেতু একটি সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ১৯৭০ সনের ৭ই ডিসেম্বর হইতে ১৯৭১ সনের ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এবং যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯ জন প্রতিনিধির মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জনকে নির্বাচিত করেন,
এবং
যেহেতু সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণকে ১৯৭১ সনের ৩রা মার্চ তারিখে মিলিত হইবার জন্য আহ্বান করেন,
এবং
যেহেতু এই আহূত পরিষদ সভা স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনীভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়,
এবং
যেহেতু পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ তাহাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার পরিবর্তে এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণের সহিত আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় একটি অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধের ঘোষণা করে,
এবং
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
যেহেতু এইরূপ বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ তারিখে ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান,
এবং
যেহেতু একটি বর্বর ও নৃশংস যুদ্ধ পরিচালনায় পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ, অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশের বেসামরিক ও নিরস্ত্র জনগণের উপর নজিরবিহীন নির্যাতন ও গণহত্যার অসংখ্য অপরাধ সংঘটন করিয়াছে এবং এখনও অনবরত করিয়া চলিতেছে,
এবং
যেহেতু পাকিস্তান সরকার একটি অন্যায় যুদ্ধ চাপাইয়া দিয়া, গণহত্যা করিয়া এবং অন্যান্য দমনমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণের পক্ষে একত্রিত হইয়া একটি সংবিধান প্রণয়ন এবং নিজেদের জন্য একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করিয়া তুলিয়াছে,
এবং
যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাহাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী উদ্দীপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের উপর তাহাদের কার্যকর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করিয়াছে,
এবং
যেহেতু আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ,
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী জনগণ কর্তৃক আমাদিগকে প্রদত্ত কর্তৃত্বের মর্যাদা রক্ষার্থে, নিজেদের সমন্বয়ে যথাযথভাবে একটি গণপরিষদ রূপে গঠন করিলাম এবং পারস্পারিক আলোচনা করিয়া,
এবং
বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম এবং তদ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ইতিপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করিলাম, এবং এতদ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকিবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি থাকিবেন,
এবং
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (৯ম-রচনামূলক)পর্বঃ২ *
রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের সকল সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হইবেন, ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাসহ প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন, একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং তাঁহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ ক্ষমতার অধিকারী হইবেন কর আরোপণ ও অর্থ ব্যয়ন ক্ষমতার অধিকারী হইবেন, গণপরিষদ আহ্বান ও মুলতবিকরণ ক্ষমতার অধিকারী হইবেন,
এবং
বাংলাদেশের জনগণকে একটি নিয়মতান্ত্রিক ও ন্যায়ানুগ সরকার প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সকল কার্য করিতে পারিবেন।
আমরা বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, কোন কারণে রাষ্ট্রপতি না থাকা বা রাষ্ট্রপতি তাঁহার কার্যভার গ্রহণ করতে অসমর্থ হওয়া বা তাঁহার ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে অসমর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রপতির উপর এতদ্বারা অর্পিত সমুদয় ক্ষমতা, কর্তব্য ও দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপতির থাকিবে এবং তিনি উহা প্রয়োগ ও পালন করিবেন ।
আর আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, জাতিমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে আমাদের উপর যে দায় ও দায়িত্ব বর্তাইবে উহা পালন ও বাস্তবায়ন করার এবং জাতিসংঘের সনদ মানিয়া চলার প্রতিশ্রুতি আমরা দিতেছি ।
এবং আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সনের ২৬ শে মার্চ তারিখে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হবে।
এছাড়াও আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, এই দলিল কার্যকর করার লক্ষ্যে এবং রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির শপথ পরিচালনার জন্য অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে আমাদের যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নিয়োগ করিলাম।
অধ্যাপক ইউসুফ আলী
বাংলাদেশ গণপরিষদের ক্ষমতাবলে ও
তদধীনে যথাযথভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ।
[সংবিধান থেকে উদ্ধৃত ]
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারীকরণ ছিল ইতিহাসের একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা, এটি বিশ্বের বুকে একটি অনন্য নজির স্থাপন করে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এ ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে আজও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে অধ্যয়ন করা হয় ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।