লালসালু | সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১৭-২৫ | PDF : বাংলা প্রথম পত্রের লালসালু উপন্যাস হতে গুরুত্বপূর্ণ সব সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা প্রথম পত্রের লালসালু উপন্যাস এর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
প্রশ্ন\ ১৭\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
৬৩০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ‘বিদায় হজ্জ’-এ মহানবি (স) সমগ্র মানবজাতিকে উলেখ করে বলেন, “শ্রবণ কর। মূর্খতা যুগের সমস্ত কুসংস্কার, সমস্ত অন্ধবিশ্বাস এবং সকল প্রকারের অনাচার আজ আমার পদতলে দলিত মথিত অর্থাৎ রহিত ও বাতিল হইয়া গেল। …….ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করিও না। ইহার অতিরিক্ততার ফলে তোমাদিগের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হইয়া গিয়াছে।”
ক. করিমগঞ্জে কী আছে?
খ. মজিদের মন থমথম করে কেন?
গ. উদ্দীপকে উলিখিত ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে?
ঘ. “মূর্খতা যুগের সমস্ত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং অনাচারের আদর্শ ভূমি ‘লালসালু’র মহব্বতনগর।” মন্তব্য বিষয়ের সাথে কি তুমি একমত ? তোমার মতামতের পক্ষে যুক্তি দাও।
১৭ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. করিমগঞ্জে একটি হাসপাতাল আছে।
খ. মহব্বতনগরের আশপাশে আওয়ালপুরে আগত জাঁদরেল পীরের আনাগোনায় মজিদের মন থমথম করে।
সে ভীতসন্ত্রস্ত। কারণ সে বুঝে গেছে যে, লোকজন মজিদের চেয়ে ঐ পীরকে বেশি শ্রদ্ধা ও ভক্তি করে। নতুন পীর সাহেব আসার পর মাজারেও লোকজন কম আসা-যাওয়া করে। লোকজন ছোট আওয়ালপুরের পীর সাহেবের কাছে। তাকে একটু দেখতে চায়, তার পায়ে একটু চুমু দিতে চায়। এসব দেখে শুনে মজিদ গম্ভীর হয়ে যায়। মাজারে মন থমথম করে।
গ. উদ্দীপকে উলিখিত ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের আওয়ালপুরের পীরের সাথে সৃষ্ট দ্ব›দ্ব সংঘাতকে ইঙ্গিত করে।
মজিদ নিজে প্রতারক, ভন্ড ও ধর্মব্যবসায়ী। আওয়ালপুরের পীর সাহেবকেও সে বুঝেছে। সবচেয়ে বড় কথা নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি জিইয়ে রাখতে হলে মহব্বতনগর গ্রামবাসী যারা আওয়ালপুরের পীর সাহেবের কাছে গিয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
তাই মজিদ আওয়ালপুরের পীরের কারসাজি ধরিয়ে দিয়ে নিজের প্রভাব রক্ষার জন্যে আওয়ালপুরে যায়। সহজ কথায় মহব্বতনগরের গ্রামবাসী মজিদকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে, সম্মান করেছে। এখন তারাই আবার আওয়ালপুরে ছুটছে, যা মজিদের জন্যে হুমকিস্বরূপ। তাই সে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখার জন্যে আওয়ালপুরে যায়।
উদ্দীপকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স:)- এর বিশ্ব মানবতার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বিদায় হজ্জের ভাষণের সংকলিত অংশে দেখা যায়, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “সাধারণ! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করিও না।” অথচ স্বীয় স্বার্থ নিষ্কন্টক রাখার স্বার্থে উদ্দীপকের মজিদ আওয়ালপুরের পীর সাহেবের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়।
আওয়ালপুরের পীর সাহেবের নির্দেশে জোহরের নামাজের সময় বহুক্ষণ আগে শেষ হওয়ার পরও এক লোক সবাইকে কাতার বন্দি হতে বলে। নামাজ শেষ হওয়ার পরে মজিদ চিৎকার করে প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, জোহরের নামাজের সময় বহু আগে পার হয়েছে।
পীরের লোকেরা লাঠি দিয়ে সূর্যের ছায়া মেপে দেখে মজিদের কথা ঠিক। মজিদ তখন মহব্বতনগরের লোকদের তার সাথে ফিরে আসার জন্য বলে। লোকজনও তার সঙ্গে চলে আসে।
ঘ. হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মহব্বতনগরকে যে মূর্খতা যুগের সমস্ত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং অনাচারের আদর্শ ভূমি বলা হয়েছে তার সাথে আমি একমত।
সমাজচেতন ঔপন্যাসিক এবং জীবন ঘনিষ্ঠ শিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাস চলিশের দশকের বাংলার প্রচলিত সমাজব্যবস্থার একটি নির্মম দর্পণ। গ্রাম-বাংলার ধর্মান্ধতার সুযোগে অন্তঃসারশূন্য একটি কবরকে কেন্দ্র করে মজিদ নামক জনৈক ভন্ডপীরের জীবনকাহিনীই এর মুখ্য বর্ণনার বিষয় হলেও তৎকালীন পলী বাংলায় মুসলিম সমাজজীবনের অতি বাস্তব চিত্র নিখুঁতভাবে চিত্রিত হয়েছে এখানে।
উদ্দীপকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:)- এর সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বিদায় হজ্জের ভাষণের সংকলিত অংশ দেওয়া হয়েছে।
এখানে মহানবী (স:) বিশ্ব মানবতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “শ্রবণ কর। মূর্খতা যুগের সমস্ত কুসংস্কার, সমস্ত অন্ধবিশ্বাস এবং সকল প্রকারের অনাচার আজ আমার পদতলে দলিত মথিত অর্থাৎ রহিত ও বাতিল হইয়া গেল।” ‘অথচ ‘লালসালু’ উপন্যাসে আমরা মহব্বতনগর গ্রামের অন্ধবিশ্বাস এবং অনাচারের আদর্শভূমি রূপে দেখি।
তৎকালে এদেশের সামাজিক অবস্থা ছিল শিক্ষাবর্জিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে গ্রামের মানুষকে প্রতারিত করত। গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর মধ্যে ছিল অন্ধ পীরভক্তি, স্বার্থবাদী ভন্ডপীরেরা গ্রামের লোকদের এ সরলতার সুযোগই গ্রহণ করত।
পীরের কথা ছিল তাদের নিকট দ্বৈববাণীর মতো। এ কারণে ভন্ডপীর মজিদের কথায় খালেক ব্যাপারী তার নির্দোষ স্ত্রী আমেনা বিবিকে তালাক দিয়ে প্রচলিত বিশ্বাসের স্রোতে সে আপনাকে ভাসিয়ে দিয়েছে।
ওপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে, ‘লালসালু’ তৎকালীন সমাজের পীরভক্তি, ধর্মীয় ভন্ডামি, কুসংস্কার, মানুষের অজ্ঞতা ও মূর্খতার এক বাস্তব চিত্র। মহব্বতনগর গ্রামে আছে বহু মানুষের হৃদয়ের হাহাকার, আছে অনেকের ব্যর্থতার করুণ কাহিনী, ‘লালসালু’র রক্ত রঙিন আবরণে ঢাকা রয়েছে বহু বেদনা, বহু বঞ্চনার কাহিনী, বহু ব্যর্থ কামনার এক অবর্ণনীয় ইতিহাস।
প্রশ্ন\ ১৮\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বহিপীর=(দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে) এতক্ষণে ঝড় থামিল। তাহারা গিয়াছে, যাক। তা ছাড়া তো আগুনে ঝাঁপাইয়া পড়িতে যাইতেছে না। তাহারা তাহাদের নতুন জীবনের পথে যাইতেছে। আমরা কী করিয়া তাহাদের ঠেকাই। আজ না হয় কাল যাইবেই।
ক. ‘লালসালু’ উপন্যাসের শেষ বাক্যটি কী?
খ. মজিদ না ঘুমিয়ে দাওয়ার ওপর বসে থাকে কেন?
গ. উদ্দীপকের বহিপীরের অনুধাবনের অনুরূপ অনুধাবন মজিদ চরিত্রে তুলে ধর।
ঘ. “উদ্দীপকের বহিপীরের অনুধাবনের অনুরূপ অনুধাবন মজিদের ভিতর ক্ষণিকের জন্যে এলেও তা মজিদকে পাল্টাতে পারেনি।” মন্তব্য বিষয়ে মতামত তুলে ধর।
১৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে-চোখ।
খ. নিজের প্রভাব বজায় রাখার জন্যে মজিদ জোর করে অন্ধকার মাজার ঘরে জমিলাকে নিয়ে য়ায়। তারপর সে জমিলাকে একটা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখে। তাকে বলে এক রাত মাজার পাকের কাছে থাকলে দুষ্ট আত্মা বাপ বাপ করে পালাবে এবং এভাবে জমিলার মনে খোদাভীতি ও স্বামীভক্তি আসবে।
জমিলাকে মাজার ঘরে আটকে রেখে মজিদ ঘরের ভেতরের দাওয়ায় বসে থাকে। তার ধারণা জমিলার তীক্ষè আর্তনাদ একটু পরে শোনা যাবে। তাই সে না ঘুমিয়ে দাওয়ার ওপর বসে থাকে। কিন্তু জমিলার তীক্ষè আর্তনাদ দূরে থাক কোনো টু-শব্দ পর্যন্ত শোনা যায় না ।
গ. সংজ্ঞাহীন জমিলাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার পর মজিদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তারই মাঝে উদ্দীপকের বহিপীরের অনুধাবনের অনুরূপ লক্ষণীয়।
জমিলাকে মাজার ঘরে আটকে রেখে মজিদ তার আর্তনাদ শোনার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সারা রাতে অপেক্ষা করার পরও তার সে আশা পূরণ হয়নি। সারা রাত ধরে ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থামলে রহিমার কথা মতো জমিলাকে আনতে যায় মজিদ।
মাজারের ঝাপটা খুলে মজিদ দেখে জমিলা সালু কাপড়ে ঢাকা কবরের পাশে হাত-পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। তার চোখ বোজা, বুকে কাপড় নেই। আর মেহেদি দেওয়া একটি পা কবরের গায়ের সঙ্গে লেগে আছে। জমিলা সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন। মজিদ তাকে পাজাকোলে করে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়। রহিমা তাকে চেয়ে চেয়ে দেখে। তারপর প্রবল আবেগের বশে জমিলার দেহে হাত বুলোতে থাকে। অদূরে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মজিদ।
উদ্দীপকে সংকলিত বহিপীরের সংলাপ থেকে আমরা ধারণা করতে সক্ষম হই যে, তীব্র এক দ্ব›দ্ব-সংগ্রামমুখর অবস্থা পেরিয়ে বহিপীর পরিবর্তনকে অনুধাবন করেছেন। উদ্দীপকের অনুরূপ পরিবর্তন ক্ষণিকের জন্যে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের মধ্যেও দেখা যায়।
শুশ্র“ষারত রহিমা ও সংজ্ঞাহীন জমিলার দিকে তাকিয়ে মজিদের মনে হয়, মুহূর্তের মধ্যে যেন কেয়ামত হবে, নিমিষের মধ্যে তার ভেতরটা ওলটপালট হয়ে যাবার উপক্রম। একটা বিচিত্র জীবন আদিগন্ত উন্মুক্ত হয়ে ক্ষণকালের জন্যে প্রকাশ পায় তার চোখের সামনে। আর একটা সত্যের সীমানায় পৌঁছে জন্ম-বেদনার তীক্ষè যন্ত্রণা অনুভব করে মনে মনে।
ঘ. “উদ্দীপকের বহিপীরের অনুধাবনের অনুরূপ অনুধাবন মজিদের ভিতর ক্ষণিকের জন্যে এলেও তা মজিদকে পাল্টাতে পারেনি।” প্রশ্নোক্ত এ মন্তব্যের সাথে আমি একমত।
উদ্দীপকে সংকলিত বহিপীরের সংলাপ থেকে আমরা ধারণা করতে সক্ষম হই যে, তীব্র এক দ্ব›দ্ব-সংগ্রামমুখর অবস্থা পেরিয়ে বহিপীর পরিবর্তনকে অনুধাবন করেছেন।
উদ্দীপকের অনুরূপ পরিবর্তন ক্ষণিকের জন্যে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের মধ্যেও দেখা যায়। শুশ্র“ষারত রহিমা ও সংজ্ঞাহীন জমিলার দিকে তাকিয়ে মজিদের মনে হয়, মুহূর্তের মধ্যে যেন কেয়ামত হবে, নিমিষের মধ্যে তার ভেতরটা ওলটপালট হয়ে যাবার উপক্রম।
একটা বিচিত্র জীবন আদিগন্ত উন্মুক্ত হয়ে ক্ষণকালের জন্যে প্রকাশ পায় তার চোখের সামনে। আর একটা সত্যের সীমানায় পৌঁছে জন্ম- বেদনার তীক্ষè যন্ত্রণা অনুভব করে মনে মনে।
ইতোমধ্যে আবার শিলাবৃষ্টিতে ধানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এই দৃশ্য দেখে গ্রামের লোকেরা হাহুতাশ করতে লাগল। একজন বলে ওঠে, “সবইতো গেল। এইবার নিজেই বা খামু কি, পোলাপাইনদেরই বা দিমু কি? তখন মজিদ গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে বলে, “নাফরমানি করিও না, খোদার ওপর তোয়াক্কল রাখো।”
ধর্ম-ব্যবসায়ী মজিদ মানুষকে ঠকানোর উদ্দেশ্যেই সান্ত্বনার বাণী ছড়ায়। মজিদ চরিত্রের এই দিকটি উদঘাটিত হয়ে যাওয়ায় একটি বিষয় আলোকিত হয়ে ওঠে যে, মজিদ শেষ পর্যন্ত মজিদই থাকে, মানুষ হয়ে আর ওঠে না। উপন্যাসে মজিদ চরিত্রের কোনো প্রকার উত্তরণ ঘটে না।
উপন্যাসের প্রথমে যে মজিদের আবির্ভাব হয়েছিল, মধ্যবর্তী অবকাশে, নানাবিধ ঘটনা ঘটবার পরও উপন্যাসের সমাপ্তিতে সে সেই মজিদই থেকে যায়।
প্রশ্ন\ ১৯\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সতীন সফুরার কাছে বিয়ের দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল চৌদ্দ বছর বর্ষীয়া জুলেখা। “বুঝলানি ভইব, আমিতো পেরথম মনে করছিলাম, তানি বুঝি দুলার চাচা, খালু”। একথা বলেই জুলেখা বিচিত্রভাবে হাসতে থাকে। ঝরনার অনাবিল গতির মতো ছন্দময় দীর্ঘ সমাপ্তিহীন জীবন্ত সে হাসির শব্দ কানে যেতেই প্রায় ষাট বছর বয়সী জুলেখার স্বামী কলিম ফরাজি খেউ খেউ করতে করতে হাজির হলো। বেশরম, বে-শরিয়তি হাসির জন্য জুলেখাকে তীব্র ভর্ৎসনা করলো। ফরাজির আচরণে আগে থেকে দানা বাঁধা কষ্টের নুড়িতে জুলেখা যেন এক কঠিন পাথর বনে গেল।
ক. সে হঠাৎ জমিলাকে বুকে টেনে নেয় কপালে আস্তে চুমা খায়?
খ. মজিদের মনটা তৃপ্তিতে ভরে উঠে কেন?
গ. উদ্দীপকের জুলেখা ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি?
ঘ. “জুলেখার পাথর বনে যাওয়া আর জমিলার ঠাটাপড়া মানুষের মতো হয়ে যাওয়া, একই অনুভূতি থেকে উৎসারিত আঘাতের পরিণতি।” মূল্যায়ন কর।
১৯ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. রহিমা হঠাৎ জমিলাকে বুকে টেনে নেয় কপালে আস্তে চুমা খায়।
খ. মজিদের মনটা তৃপ্তিতে ভরে উঠে, কারণ মজিদ দেখে তার মিথ্যে গল্পের একটা ফল হয়েছে। জমিলার চোখে ভীতির ছায়া দেখা যায়। মজিদ তখন ধারণা করে তার শিক্ষা সার্থক হয়েছে। মজিদ আরো তৃপ্ত হয় তখন যখন সে দেখে জমিলা অনেকক্ষণ ধরে নামাজ পড়ে। রহিমা ঘরের কাজ করে আসার পরও দেখা যায় জমিলা নামাজ পড়ছে। এতে মজিদ বেজায় খুশি হয়।
গ. উদ্দীপকের জুলেখা উপন্যাসের জমিলা চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। বাংলা সাহিত্যের অপ্রতিদ্ব›দ্বী ঔপন্যাসিক সৈয়দ ওয়ালীউলাহÍ ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলার হাসির রূপ এখানে ব্যক্ত করা হয়েছে।
জামিলা মজিদের দ্বিতীয় বউ হিসেবে এ বাড়িতে এসেছে। মজিদের সঙ্গে তার বয়সের বিরাট ব্যবধান। মজিদ তার পিতার বয়সী। কিন্তু এর সঙ্গে তার বিয়ে হওয়াই হাসির বিষয়। সে কথা রহিমাকে বলতে গিয়ে জমিলা দারুণভাবে হেসে উঠে।
উদ্দীপকে আমরা দেখি, সতীন সফুরার কাছে বিয়ের দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল চৌদ্দ বছর বর্ষীয়া জুলেখা। সে বলে সে প্রথমে মনে করেছিল তার স্বামীটি বুঝি দুলার চাচা বা খালু। একথা বলেই জুলেখার মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলাও হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়েছে।
হাসি আর থামে না। তার হাসি জীবন্ত। ঝরনা যেমন স্বচ্ছ গতিতে ছন্দময় ভঙ্গিতে এগিয়ে চলে এবং আসলে জমিলার এ হাসি তার জীবনের প্রতি একটি প্রচণ্ড কৌতুক।
আশাহতের, বঞ্চিতের যে শোক তা উদ্দীপকের জুলেখাকে পাথর বানিয়েছে আর ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলাকে বানিয়েছে ঠাটাপড়া মানুষের মতো।
উপন্যাসের জমিলা মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী। অল্পবয়সী একটি বালিকা। তার জীবনে বাসনা-কামনা আছে। কিন্তু সে জীবনকে যেভাবে ভেবেছিল তার জীবন সেভাবে হলো না।
তাকে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হলো পিতার বয়সী এক বুড়ো লোকের সঙ্গে। যার এক বউ আগে থেকেই আছে। সব মিলিয়ে তার জীবন তার কাছেই কৌতুককর মনে হয়।
ঘ. উদ্দীপকে আমরা দেখি, সতীন সফুরার কাছে বিয়ের দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল চৌদ্দ বছর বর্ষীয়া জুলেখা সে বলে সে প্রথমে মনে করেছিল তার স্বামীটি বুঝি দুলার চাচা বা খালু। একথা বলেই জুলেখা বিচিত্রভাবে হাসতে থাকে।
ঝরনার অনাবিল গতির মতো ছন্দময় দীর্ঘ সমাপ্তিহীন জীবন্ত সে হাসি। কিন্তু এমনি সহজ সচ্ছন্দময় হাসিও স্বামীর বিধি-নিষেধ ও রক্তচক্ষুর আঘাতে স্তব্ধ হয়ে যায়। ফলে সে আগে থেকে দানা বাঁধা কষ্টের নুড়িতে এক কঠিন পাথর বনে যায়। উদ্দীপকের জুলেখার মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা প্রাণ খুলে হাসতেও পারে না। মজিদের শাসন চলে সর্বক্ষণ। খ্যাংটা বুড়ির ছেলের জন্য জমিলারও মন খারাপ হয়।
মজিদ ওসব বোঝে না। মন খারাপ হলে দুনিয়াদারির কাজ কি চলবে না। কিন্তু জমিলা পাথরের মতো হয়ে গেছে। কোনোদিকে তার হুঁশ নেই। বজ্রাহতের মতো হয়ে গেছে সে। জীবনের প্রতি সুতীব্র অভিমানে যে হাসি তা অনেক সময় তীরের ফলার চেয়েও ধারাল এবং বেদনাদায়ক।
জীবনের আশা-আকাক্সক্ষা সব শেষ হয়ে যাওয়ায় উদ্দীপকের জুলেখা এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা পাথর বনে যায়, বনে যায় ঠাটাপড়া মানুষ যাদের কোনো স্বপ্ন নেই।
প্রশ্ন\ ২০\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
রাসু ডাকাত যেমন নৃশংস তেমনি দুর্ধর্ষ। নিজ দল ও এলাকায় তার অপ্রতিহত কর্তৃত্ব। প্রথম বিয়ের প্রায় বিশ বছর পর ডাকাতি করতে গিয়ে নরম লাজুক দেখতে এক ঘোড়শী সুন্দরী কন্যাকে লুট করে এনে বিয়ে করে রাসু ডাকাত। দেখতে নরম লাজুক মেয়েটিই একদিন থানার পুলিশ ডেকে এনে রাসু ডাকাতকে গ্রেফতার করায়। হতভম্ভ রাসু ডাকাত প্রথমা স্ত্রী রাশিদাকে উদ্দেশ্য করে বলল, এ কারে বিয়া করলাম? বিবি, তুমি বদদোয়া দিছিলা নি? রাশিদা বিয়ের দীর্ঘদিন পরে তাকিয়ে নতুন এক রাসুকে দেখে।
ক. কে ল্যাট মেরে বসেই থাকে?
খ. মজিদ আমেনা বিবির প্রতি ক্ষুব্ধ কেন?
গ. রাশিদার চোখে দেখা নতুন রাসু ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে?
ঘ. “রাসুর জিজ্ঞাসা আর মজিদের জিজ্ঞাসা একই সুতোয় গাঁথা।” মন্তব্যটি তুমি সমর্থন কর কি? মতের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর।
২০ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জমিলা ল্যাট মেরে বসেই থাকে।
খ. সন্তানহীনা আমেনা বিবি আওয়ালপুরের পীরের পানি পড়া খেতে চেয়েছিল সন্তান কামনায়। এ ঘটনা জানতে পেরে মজিদ ভীষণ ক্ষেপে যায়। মজিদ বুঝতে পারে সে মহব্বতনগরবাসীর মনে যে বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাতে যদি একবার ফাটল ধরে তবে আর রক্ষা নেই।
এছাড়া আমেনা বিবি মজিদকে অবিশ্বাস করে আওয়ালপুরের পীরের পানি পড়া খেতে চেয়েছে বলে মজিদ মনে করে। তাই মজিদ আমেনা বিবির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়।
গ. রাশিদার চোখে দেখা নতুন রাসু ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমার চোখে দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলার প্রতিবাদে হতবুদ্ধি ও অসহায় এক নতুন মজিদকে দেখার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে। বাংলা সাহিত্যের এক ভিন্ন স্বাদের উপন্যাস ‘লালসালু’। মজিদ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। উপন্যাসের এক পর্যায়ে নতুন এক মজিদকে দেখে তার স্ত্রী রহিমা।
মজিদ হাড়সর্বস্ব ছোটখাটো মানুষ হলে কি হবে, সে খুব প্রতাপশালী। মহব্বতনগরে সে হলো সবচেয়ে শক্তিমান লোক। তার স্ত্রী রহিমা বিশালদেহী, কিন্তু সে স্বামীকে খুব ভয় করে। স্বামীর প্রতি সে তার আনুগত্য অটুট রেখেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ের দীর্ঘ বিশ বছরেও রাসু ডাকাতের প্রথমা স্ত্রী রাশিদা যা পারেনি, দ্বিতীয় স্ত্রী বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তা পেরেছে। সে পুলিশকে দিয়ে রাসু ডাকাতকে গ্রেফতার করায়। হতভম্ব রাসু ডাকাত প্রথমা স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তার অসহায়ত্তের কথা জানায়, এতে করে সে বিয়ের দীর্ঘ দিন পরে এক নতুন রাসুকে আবিষ্কার করে।
উদ্দীপকের রাসুর দ্বিতীয় স্ত্রীর অনুরুপ মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা মজিদকে মানতে চায় না। সে ঘোমটা খুলে সকলের সামনে বেরিয়ে আসে, জিকিরের সময় তাই হয়েছে। জমিলাকে বিয়ে করে মজিদ ভুল করেছে কিনা এটিই রহিমার কাছে মজিদের জিজ্ঞাসা।
মজিদকে বড় অসহায় মনে হয়। রহিমার ওপর মজিদ নির্ভরতা খুঁজে পায় যেন। খুব কোমল কন্ঠে পরমাত্মীয়ের মতো সে রহিমার কাছে তার দুঃখ প্রকাশ করে। মজিদের এ নতুন রূপ। কখনো মজিদকে সে এমন রূপে পায় নি, এমনভাবে কথা বলতে দেখেনি। উপন্যাসের এ পর্যায়ে এসে মজিদকে একজন অসহায় মানুষ হিসেবে পাওয়া যায়।
মানুষ ভাবে এক হয় আর এক। এ কারণে মানুষ কখনো কখনো তার কৃতকর্মের ভুল আবিষ্কার করে এবং তার জন্যে অনুতপ্ত হয়।
ঘ. উদ্দীপকের রাসু এবং ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের জিজ্ঞাসা এমনি অনুতাপ বোধে গাঁথা। মজিদের ধারণা ছিল জমিলাকে বিয়ে করলে সংসারে আনন্দ ও বৈচিত্র্য বাড়বে।
কিন্তু মজিদের এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। অল্পবয়সী উচ্ছল স্ত্রী জমিলাকে সে একেবারেই বশ করতে পারেনি। মজিদের বয়স এ মাজারের পরিবেশের সঙ্গে জমিলা মোটেও খাপ খাওয়াতে পারেনি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ের দীর্ঘ বিশ বছরেও রাসু ডাকাতের প্রথমা স্ত্রী রাশিদা যা পারেনি, দ্বিতীয় স্ত্রী বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তা পেরেছে। সে পুলিশকে দিয়ে রাসু ডাকাতকে গ্রেফতার করায়। হতভস্ব রাসু ডাকাত প্রথমা স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তার সে অসহায়ত্তের কথা জানায়, এতে করে সে বিয়ের দীর্ঘ দিন পরে এক নতুন রাসুকে আবিষ্কার করে।
উদ্দীপকের রাসুর দ্বিতীয় স্ত্রী অনুরূপ মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা মজিদকে মানতে চায় না। সে ঘোমটা খুলে সকলের সামনে বেরিয়ে আসে, জিকিরের সময় তাই হয়েছে। মজিদ জমিলার ব্যবহারে খুব ক্রুব্ধ হয় ও দুঃখ পায়। সে বোঝে জমিলা তার কথামতো চলবে না।
এ রকম একটা মেয়েকে সে কেন বিয়ে করলো এ অনুতাপে তার মন ভেঙে যায় এবং এ কথা সে রহিমাকে বলে। রহিমা তার প্রথমা স্ত্রী। প্রথমা স্ত্রী থাকতে আরেকটা বিয়ে করাতে রহিমা তাকে বদদোয়া দিয়েছে নিশ্চয়ই তা না হলে জমিলা এমন অবাধ্য কেন?
মজিদের উক্তিতে এটি বোঝা যায় জমিলার ব্যাপারে সে খুব অসহায়। উপন্যাসের এ পর্যায়ে এসে মজিদকে একজন অসহায় মানুষ হিসেবে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন\ ২১\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
গত শীতে মিরা তার বান্ধবী রোজির গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়াছিল। বান্ধবীর বাবা খোনকার সাব। এলাকার ছোট হুজুর হিসেবে পরিচিত। একদিন গ্রামের এক তরুণীর দুষ্ট জিনের আছর ছাড়াতে খোনকার সাব বাড়িতে দরবার বসান। প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ দুর্বোধ্য আরবি-ফার্সি বা উর্দু জবানে নানা ছন্দময় বুলির জেকের হলো। নতুন বলে মিরার কাছে পুরো ব্যাপারটা অস্বস্তিকর ও বিভ্রান্তিকর মনে হয়। দিশেহারা মিরা বান্ধবীর মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়। কিন্তু স্বামীর প্রতি মহিলার আনুগত্য ধ্র“বতারার মতো অনড়, বিশ্বাস পর্বতের মতো অটল।
ক. কীসের পর জিকির শুরু হয়?
খ. জমিলা এশার নামাজ পড়তে এবং রাতের খাবার খেতে পারে না কেন?
গ. উদ্দীপকের মিরা ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন চরিত্রের অনুরূপ তা নিরূপণ কর।
ঘ. “স্বামীর প্রতি মহিলার আনুগত্য ধ্র“বতারার মতো অনড়, বিশ্বাস পর্বতের মতো অটল” ‘লালসালু’ উপন্যাসের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
২১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যথেষ্ট দোয়া দরুদ পাঠের পর জিকির শুরু হয়।
খ. মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা বয়সে তরুণী। সে একটু ঘুমকাতুরে মেয়ে। সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দু চোখ ঘুমে জড়িয়ে যায়। মাগরিবের নামাজ কোনো রকমে পড়তে পারলেও এশার নামাজ সে পড়তে পারে না। রাতের খাবার খেতে পারে না এ কারণে। জমিলার ঘুম কাঠের মতো অর্থাৎ জমিলা একবার ঘুমালে আর উঠবার নাম করে না।
গ. উদ্দীপকের মিরা ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলার অনুরূপ। মাজারে এক সন্ধ্যায় জিকির হয়। এ উপলক্ষে খিচুড়িও রান্না করা হয়। রান্নার দায়িত্বে থাকে মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমা।
দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলা রহিমার রান্নাবান্নার কাজ দেখে। বাইরে থেকে জেকেরের আওয়াজ আসতে থাকে। প্রথমে জেকের চলে আস্তে আস্তে, পরে তা বহু মানুষের সম্মিলিত আওয়াজে প্রচণ্ড গতি পায়। এতে জমিলার মনের মধ্যে কেমন একটা ভয় জাগে।
উদ্দীপকের মিরা তার বান্ধবী রোজির গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দুষ্ট জিনের আছর ছাড়াতে কথিত দরবারের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। দরবারে বেশ কিছুক্ষণ দুর্বোধ্য আরবি-ফার্সি বা উর্দু জবানে নানা ছন্দময় বুলির জেকের হয়। নতুন বলে মিরার কাছে পুরো ব্যাপারটা অস্বস্তিকর ও বিভ্রান্তিকর ঠেকে। সে দিশেহারা হয়ে উঠে।
উদ্দীপকের মিরার অনুরূপ মজিদের জেকেরের আওয়াজে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলাও সচকিত হয়ে উঠে। ঝড়ের সমুদ্্েরর এক একটা ঢেউ যেমন তীরে আঘাত হানে, ঠিক তেমনি জেকেরের ঘন ঘন ধ্বনি জমিলার হৃদয়ে আঘাত হানে, জমিলার হৃদয় সমুদ্রের তীরের মতো শক্ত নয়।
রহিমার মধ্যে বরং কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। রহিমা বহুবার জেকের শুনেছে। কিন্তু জমিলা কখনও জেকের শোনে নি। সে জন্যে প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন জেকের জমিলাকে দিশেহারা করে তোলে, সে বিভ্রান্ত হয়ে রহিমার দিকে তাকায়।
ঘ. প্রশ্নোক্ত মন্তব্য উদ্দীপকের মিরার বান্ধবীর মায়ের ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের প্রথম স্ত্রী রহিমার মতো স্বামীভক্তি সম্পর্কে সুন্দর একটা বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
মহব্বতনগর গ্রামে এসে মজিদ স্থায়ীনিবাস গড়েছে এবং রহিমাকে বিয়ে করেছে। চওড়াদেহী রহিমা তেমন সুন্দর নয়, কিন্তু সে শান্তশিষ্ট কর্মনিপুণা এক মহিলা। তাছাড়া স্বামীর মুখের ওপর সে কখনো কথা বলেনি। রহিমা সেবাযতœ ও পরিশ্রম দিয়ে সংসারকে আগলে রেখেছে; মজিদের মেজাজ-মর্জি সবই সে ভালো করে বোঝে এবং সেভাবে চলে। মজিদ পরে অল্পবয়সী তরুণী জমিলাকে বিয়ে করে।
জমিলার রূপ যৌবনে আকৃষ্ট হয়ে সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। মজিদ আশা করেছিল জমিলাকে বিয়ে করে সে আরো বেশি আনন্দ পাবে কিন্তু সে অচিরেই তার ভুল বুঝতে পারে। উদ্দীপকের মিরা তার বান্ধবী রোজির গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দুষ্ট জিনের আছর ছাড়াতে কথিত দরবারের অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
দরবারে বেশ কিছুক্ষণ দুর্বোধ্য আরবি-ফার্সি বা উর্দু জবানে নানা ছন্দময় বুলির জেকের হয়। নতুন বলে মিরার কাছে পুরো ব্যাপারটা অস্বস্তিকর ও বিভ্রান্তিকর ঠেকে। সে দিশেহারা হয়ে উঠে।
উদ্দীপকের মিরার অনুরূপ মজিদের জেকেরের আওয়াজে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলাও জিকিরের সময় রীতিনীতি ভয় উপক্ষো করে ঘরের বাইরে চলে আসে। ঝড়ের সময় সমুদ্রের তীরের মতো শক্ত নয়। রহিমার পার্থক্য বোঝা যায়। মজিদ অনুভব করে, এমন একটি মেয়েকে সে কেন বিয়ে করলো এ প্রশ্ন জাগে।
তখন রহিমার সঙ্গে জমিলার পার্থক্য বোঝা যায়। মজিদ অনুভব করে, রহিমা এমন একটি মেয়ে যায় উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করা যায়। স্বামীর প্রতি রহিমার ভক্তি বিশ্বাস কখনো টলেনি এবং সব সময় সে স্বামীর প্রতি অনুগত থেকেছে। স্বামীর প্রতি রহিমার আনুগত্য ধ্র“বতারর মতো অনড়, বিশ্বাস পর্বতের মতো অটল।
প্রদত্ত উদ্দীপকের মিরার বান্ধবীর মায়েরও স্বীয় স্বামীর প্রতি এমনটিই দৃশ্যমান। এটি আবহমান বাংলার স্ত্রীদের তাদের স্বামীর প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাসের চিরন্তন রূপ।
প্রশ্ন\ ২২\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
কুসুমি গ্রামের এক চপলা ষোড়শী। একটু ডানপিটে বলেও তার বদনাম রয়েছে। ডানপিটে মেয়ের বিয়ে দিতে সমস্যা হবে বলে হিতৈষীজনদের কথায় হরিকৃষ্ণপুরের হারেজ ফকিরকে আনা হয়েছে কুসুমির জিনের আছর তাড়াতে। ফকিরের দরবার বা আসনে কুসুমি সহজভাবেই বসল। হারেজ ফকির চোখ দুটো ভাটার মতো লাল করে মেঘগর্জনে বলে ওঠল দ্যাশের তাবৎ দুষ্ট জিন আমার নাম শুনলে বাপ বাপ করে পালায়। আমার সর্ষে বাণ, মরিচে বাণ, ঝাড়– দাওয়া আর পানি পড়ায় ভূত-পেতিœ থরথর করে কাঁপে। ফকিরের মিথ্যাচার ও বাগাড়ম্বরের এমনি পর্যায়ে কুসুমি বিরক্তি ও ঘৃণায় ফকিরের মুখে একদলা থুথু ছিটায়। স্তম্ভিত হতভম্ব ফকিরের কুসুমের মতো দেখতে কুসুমির প্রতি এক অজনা ভীতি দুর্দান্ত হয়ে উঠল।
ক. মাজারে জমিলাকে বেঁধে রেখে মজিদ কোন সুরাটি পাঠ করেছিল?
খ. জমিলা বেঁকে বসে কেন?
গ. কুসুমির প্রতি হারেজ ফকিরের মিথ্যা বাগাড়ম্বরতা ‘লালসালু’ উপন্যাসের কোন ঘটনার অনুরূপ?
ঘ. “কুসুমের মতো দেখতে কুসুমির প্রতি দুর্দান্ত হয়ে ওঠা এক অজানা ভীতি ফকিরের মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদকেও প্রকম্পিত করে তুলেছিল।” যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
২২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মাজারে জামিলাকে বেঁধে রেখে মজিদ সুরা ফালাক পাঠ করেছিল।
খ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা একমাত্র প্রত্যক্ষ প্রতিবাদী চরিত্র। প্রথমে সে বোঝেনি যে তাকে মাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে যখন বুঝলো তখন সে বেঁকে বসে। এর কারণ মাজার সম্পর্কে তার ভীতি।
প্রথমত, সে মাজারের ত্রিসীমানায় কখনো ঘেঁষেনি; দ্বিতীয়ত, মজিদ আজ যে গল্প বলেছে তাতে তার ভয় আরো বেড়ে গেছে। সে জন্যে মজিদের শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়।
গ. কুসুমির প্রতি হারেজ ফকিরের মিথ্যা বাগাড়মাম্বরতা ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলাকে শায়েস্তা করা কালে মজিদের মিথ্যা বাগাড়ম্বরতার অনুরূপ।
ভণ্ড, প্রতারক ও ধর্মব্যবসায়ী মজিদ জমিলাকে পাজাকোলা করে সোজা মাজার ঘরে নিয়ে আসে। মাজার ঘর অন্ধকার। জমিলা ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে অসাড় হয়। সে যেন চোখে কিছু দেখে না। চারদিকে চোখ হাতড়ায়।
আলো দেখার একটা তীব্র ব্যাকুলতা তার মধ্যে জাগে। কিন্তু অন্ধকারের পর্দা আরো গাঢ় হয়। সব মিলিয়ে মাজার ঘরে এক ভৌতিক পরিবেশে জমিলার অবস্থা তথৈবচ।
উদ্দীপকে আমরা হারেজ ফকিরকে কুসুমির কাছে মিথ্যা বাগাড়ম্বরতা করতে দেখি। সে বলে, তার নাম শুনলে দেশের তাবৎ দুষ্ট জীন বাপ বাপ করে পালায়। তার সর্ষে বাণ, ঝাড়ু দাওয়া আর পানি পড়ায় ভূত- পেতিœ থরথর করে কাঁপে।
উদ্দীপকের হারেজ ফকিরের মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ নিজের প্রভাব বজায় রাখার জন্যে জমিলাকে বলে সে যেভাবে বলবে জমিলা যেন সেভাবে কাজ করে।
দুনিয়ার মানুষেরা সবাই মজিদকে মানে, এমনকি জীন-পরীরাও তাকে ভয় করে, কিন্তু জমিলা তার অবাধ্য। মনে হয় তার ওপর কিছুর আছর রয়েছে। মজিদ জমিলাকে এও জানায় যে, তার জন্যে মায়া হয়।
জমিলাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে তারও মনে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মজিদ নিরুপায়। তবে মজিদ জিনের আছর ছাড়ানোর জন্যে জমিলাকে বিশেষ কষ্ট দিতে চায় না। শুধু এক রাতের জন্যে তাকে মাজারে বেঁধে রাখবে। তাহলে জমিলা দুষ্ট আত্মা থেকে মুক্ত হবে এবং আগামীকালই দেখা যাবে জমিলার মনে খোদার ভয় ও স্বামীভক্তি এসে গেছে।
ঘ. “কুসুমের মতো দেখতে কুসুমির প্রতি দুর্দান্ত হয়ে ওঠা এক অজানা ভীতি ফকিরের মতো ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদকেও প্রকম্পিত করে তুলেছিল।” প্রশ্নোক্ত ঐ মন্তব্যটি সঙ্গত কারণেই যথার্থ বলে আমি মনে করি।
মজিদের মুখে থুথু ফেলার পর মজিদ যখন জমিলাকে পাঁজাকোলা করে মাজারের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তখনকার জমিলার অবস্থা দেখে মজিদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা-ই প্রশ্নোক্ত অংশে বর্ণিত হয়েছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখি, কথিত জিনের আছর ছাড়াতে এসে হারেজ ফকির কুসুমির ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্যে মিথ্যা বাগাড়ম্বরতা শুরু করে। বিরক্তি ও ঘৃণায় কুসুমি ফকিরের মুখে একদলা থুথু ছিটায়। স্তম্ভিত হতভম্ব ফকিরের কুসুমের মতো দেখতে কুসুমির প্রতি এক অজানা ভীতি দুর্দান্ত হয়ে ওঠে।
উদ্দীপকের অনুরূপ ‘লালসালু’ উপন্যাসে জমিলা এক সন্ধ্যায় মজিদের কথামতো নামাজ পড়তে শুরু করে। কিন্তু নামাজ পড়তে গিয়ে জমিলা জায়নামাজে ঘুমিয়ে পড়ে। এতে ভীষণ রাগ করে মজিদ জমিলাকে টেনে হিঁচড়ে মাজারে নিয়ে যেতে চায়।
কিন্তু মাজারে যেতে জমিলার দারুণ ভয়। মজিদের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পেরে সে মজিদের মুখের ওপর থুথু নিক্ষেপ করে। এতে মজিদ হতভম্ব হয়ে পড়ে। পরে থুথু মুছে সে জমিলাকে পাঁজকোলা করে তুলে নিয়ে মাজারের দিকে যেতে থাকে।
এবার দেখা যায় জমিলা কোনো প্রতিবাদ করছে না কিংবা হাত ছাড়াতেও চাইছে না। সে নিস্তেজ হয়ে থাকে। মজিদের ইচ্ছে হয় তার লইট্টা মাছের মতো নরম দেহকে সম্পূর্ণ পিষে ফেলতে। কিন্তু খুব সতর্ক থাকে। এ প্রতিবাদী মেয়েটিকে তার ভয় হয়। কখন সে কি করে বসবে তা বোঝার উপায় নেই।
মজিদ জমিলাকে বিষাক্ত সাপের সঙ্গে তুলনা করে। এখন চুপচাপ থাকলেও যে কোনো মুহূর্তে ফণা তুলতে পারে। সুতরাং, তার নিস্তেজ ভাব দেখে খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই বরং ভয়ের আশঙ্কাই বেশি।
প্রশ্ন\ ২৩\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
২০১৪ সাল। মনতোষ রায়ের স্ত্রী মারা গেছে মাস তিনেক হলো। তিনি দুই পুত্রের পিতা। বড় ছেলের বয়স আটারো বছর, ছোটটির বয়স নয়। কৃষ্ণপুর নিবাসী দরিদ্র নমঃশূদ্র হরিহর শীলের চৌদ্দ বছর বয়সী কন্যা নমিতাকে বিবাহ করতে গিয়ে মনতোষ বাবু গ্রামবাসীর গণধোলাই খেয়েছেন।
ক. জমিলা ঘরে আসার পরে রহিমা কোথায় শয়ন করে?
খ. মহব্বতনগর গ্রামের মানুষ মজিদকে মান্য করে কেন?
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের মহব্বতনগর গ্রাম এবং উদ্দীপকের কৃষ্ণপুর গ্রামের মধ্যে তুলনা কর।
ঘ. ‘লালসালু’ উপন্যাসে তৎকালীন সমাজ কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে?
২৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জমিলা আসার পরে রহিমা বারান্দার মতো ঘরটায় শয়ন করে।
খ. মহব্বতনগর গ্রামের মানুষ মজিদকে মান্য করে ভয় থেকে শ্রদ্ধা বা ভক্তি থেকে নয়। মজিদের পেছনে গ্রামবাসী মাছের পিঠের মতো তথাকথিত মোদাচ্ছের পীরের মাজার দেখতে পায়। গ্রামবাসীর ধারণা, তিনি ‘জিন্দা পীর’।
তিনি সব কিছু দেখেন এবং শুনতে পান। বলাবাহুল্য, এসবই কুসংস্কার। এ ধরনের চিন্তাভাবনা ইসলামবিরোধীও বটে। গ্রামবাসী মনে করতো, মজিদ যেহেতু ওই পীরের একনিষ্ঠ খাদেম, সুতরাং তাকে মান্যগণ্য করা অবশ্য কর্তব্য।
এই মনমানসিকতা থেকে মহব্বতনগর গ্রামের ধনী গরিব সবাই তাকে মেনে চলতো। মহব্বতনগর যেন লাল সালু-কাপড়ে আবৃত একটি গাম।
সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে কোনো সাহিত্যকর্ম বা সাহিত্যিককে মূল্যায়ন করবার সময় তাই দেশ-কাল-পরিপ্রেক্ষিত পর্যালোচনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
গ. সৈয়দ ওয়ালীউলাহর ‘লালসালু’ উপন্যাস রচিত হয়েছে বিশ শতকের প্রথমার্ধে; কিন্তু উদ্দীপকের সূচনাতেই বলে দেওয়া হয়েছে যে এর কালসীমা একুশ শতকের প্রথমার্ধ। সুতরাং কালগত ব্যবধান এক শতক। সমাজে এই এক শতকের পার্থক্য আমরা দেখতে পাবো।
বিশ শতকের প্রথমার্ধে ‘লালসালুতে মজিদ পৌঢ় বয়সে কিশোরী জমিলাকে বিয়ে করেছিল; কোনো সমস্যাই তার হয় নি। অপরদিকে উদ্দীপকে, একুশ শতকের প্রথমার্ধে মনতোষ রায় পৌঢ় বয়সে কিশোরী একটি মেয়েকে বিয়ে করতে গিয়ে গ্রামবাসীর কাছে গণধোলাই খেয়েছেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ব্যাপকভাবে বদলে গেছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। মহব্বতনগর গ্রামের মানুষেরা ছিল অন্ধ। তাদের কাছে সমাজবিধিই ছিল একমাত্র বিধান যে বিধানের জোরে পুরুষ হয়ে ওঠে নারীর ভাগ্যবিধাতা। অপর দিকে একুশ শতকে পরিবর্তিত সমাজ কাঠামোতে আমরা দেখি, মানুষ জেগে উঠেছে।
সমাজবিধিকে চ্যালেঞ্জ করে মানুষ ভাবতে শিখেছে, জাগ্রত করেছে তার বিবেককে সবার ওপরে যদিও দুই সামাজে মহব্বতনগরে এবং কৃষ্ণপুরে রয়ে গেছে সেই একই রকম আদিম মানুষ, আদিম প্রবৃত্তির তাড়না। তবু বলা যায়, সময়ের সাথে সাথে সমাজ এগিয়ে গেছে কিছুটা হলেও; যার প্রমাণ এই উদ্দীপক।
সাহিত্য হচ্ছে সময়ের দর্পণ, কালের নিরপেক্ষতম ইতিহাস। সাহিত্যে সময়কালের অমোছনীয় ছাপ রয়ে যায়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসে বিশ শতকের প্রথমার্ধের গ্রামীণ বাঙালি সমাজের রূপরেখা নিপুণভাবে অঙ্কিত হয়েছে।
ঘ. ‘লালসালু’ উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বিশেষ একটি দেশ-কাল-পরিপ্রেক্ষিতের ফ্রেমে মানুষের অবয়ব আঁকতে চেয়েছেন, যে মানুষ অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে হক-নাহক যে কোনো উপায়ে বাঁচার চেষ্টা করে এবং ক্রমশ তার অপকর্ম মাত্রা ছড়িয়ে যায়। এই ব্যক্তিটি মজিদ। যে নিজেই অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগেছে একদা, সে নিজেই কিনা পরবর্তীতে অন্যদের অস্তিত্বের জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মহব্বতনগর গ্রামের বাস্তবতার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমাজের একটি বিশ্বস্ত ছবি আমরা পাই যা মালার মতো মজিদের যাবতীয় কর্মের সঙ্গে যুক্ত। তৎকালীন সমাজ ছিল কৃষিপ্রধান, প্রাতিষ্ঠানিক সীমাহীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন, ধনবৈষম্যপূর্ণ, পুরুষতান্ত্রিক, মোলাশাসিত, পীরভক্ত, শ্রেণিবৈষম্যপূর্ণ, ধর্মবিশ্বাসী, কলহপরায়ণ, জীবনরসিক……।
মহব্বতনগরের মানুষ কৃষিকাজ করে। এ গ্রামের লোক সবাই-ই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন ব্যতিক্রম কেবল আক্কাস। কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ বলেই মজিদ এখানকার রাজাধিরাজ সেজে বসে আছে। মহব্বতনগর গ্রামে ধনবৈষম্য খুবই স্পষ্ট। একমাত্র ধনী ব্যক্তি খালেক ব্যাপারী। মজিদের অবস্থা দ্বিতীয়।
বাকিদের অবস্থা কহতব্য নয়। তৎকালীন সমাজ পুরুষতান্ত্রিক ছিল বলেই রহিমাকে দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে হয়; জমিলাকে কিশোরী বয়সে স্ত্রী হয়ে যেতে হয় বৃদ্ধ মজিদের ঘরে এবং সহ্য করতে হয় শারীরিক মানসিক নানা নির্যাতন; হাসুনির মার ঠাঁই হয় না।
মোলাশাসিত সমাজে শাসক সেজে বসে থাকে ভন্ড ধর্মীয় নেতা। আওয়ালপুরে পীর এলে তাকে নিয়ে শুরু হয় মাতামাতি। মহব্বতনগরে মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে আশরাফ-আতরাফ ভেদ পরিলক্ষিত হয়েছে। সে সমাজের সবাইকে দেখি ধর্মের প্রতি প্রবল বিশ্বাস।
কলহপরয়ণতা গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। ফলে মহব্বতনগর ও আওয়ালপুরের গ্রামবাসীর সঙ্গে মারপিটও বেঁধেছিল। এতকিছুর পরেও ‘লালসালু’র সমাজের মানুষ জীবনরসিক। মাঠে ফসল ফললে তারা গান গেয়ে ওঠে গলা ছেড়ে।
বস্তুত, ‘লালসালু’ উপন্যাস তৎকালীন গার্হস্থ্য জীবনের অনুপম আখ্যান।
প্রশ্ন\ ২৪\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
কার্ল মার্কসের তত্ত¡ অনুযায়ী অর্থই সমাজের মূল নিয়ন্তা। অর্থ যার কাছে থাকবে, সেই শাসন করবে সমাজ এবং সে তার পছন্দ মতো ঢেলে সাজিয়ে নেবে সমাজ, সংস্কৃতি এমনকি ধর্মও। এই কারণে মার্কস তাঁর বিখ্যাত মূলধন তত্তে¡ অর্থকাঠামোকে বলেছেন ‘ইন্টার স্ট্রাকচার’, আর সমাজ-সংস্কৃতি ও ধর্মকে বলেছেন ‘সুপার স্ট্রাকচার’।
ক. আক্কাসের বাবার নাম কী?
খ. আক্কাস কেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়?
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের বাস্তবতার সাথে উদ্দীপকের তত্ত¡ কতখানি সঙ্গতিপূর্ণ?
ঘ. সৈয়দ ওয়ালীলাহ্ কী বাস্তববাদী লেখক?
২৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. আক্কাসের বাবার নাম মোদাব্বের মিঞা।
খ. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তাঁর ‘লালসালু’ উপন্যাসে অনগ্রসর একটি গ্রামের আখ্যান রূপায়িত করেছেন।
এই গ্রামটির নাম মহব্বতনগর। এই গ্রামের মানুষকে ধর্মপ্রাণ না বলে কুসংসঙ্কারাচ্ছন্ন বলাই সংগত। তারা আধুনিক এবং যুগোপযোগী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বলেই তাদের এমন অবস্থা হয়েছে।
ওই গ্রামের মোদাব্বের মিঞার ছেলে আক্কাস কিছুটা ইংরেজি শিক্ষার সংস্পর্শে আসার কারণে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। সে বুঝতে পারে, গ্রামবাসীকে সচেতন করে তুলতে হলে তাদের মনে আধুনিক শিক্ষার দীপশিক্ষা জ্বালিয়ে দিতে হবে। তাই সে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের বাস্তবতার সঙ্গে উদ্দীপকের বাস্তবতা সঙ্গতিসম্পন্ন নয়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে অর্থ সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র ‘লালসালু’ উপন্যাসে আমরা দেখি অর্থ নয়, সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করেছে ধর্ম নামধারী প্রচলিত কুসংস্কার।
মার্কসের তত্ত¡ অনুযায়ী সমাজের শাসক হওয়ার কথা খালেক ব্যাপারীর; মজিদ থাকবে তার সহযোগী বা সম্পূরক শক্তি হিসেবে। কিন্তু এ উপন্যাসে আমরা ঠিক বিপরীত ব্যাপারটি লক্ষ করি। সমাজ শাসন করছে মজিদ, তাকে সহযোগিতা করছে খালেক ব্যাপারী।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন কেন হলো? কারণ হতে পারে দুটি। প্রথমত, অভিজাত এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন বলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র প্রকৃতপ্রস্তাবে গ্রামীণ বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করার বা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়তো সেভাবে হয়ে ওঠেনি।
যার অনিবার্য প্রভাব পড়েছে তাঁর সাহিত্যে। দ্বিতীয় কারণটি ঔপন্যাসিকের পরিকল্পনাগত। লেখক তাঁর এই উপন্যাসে ধর্মীয় কুসংস্কার কীভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
এই উপন্যাস পাঠ করবার সময় পাঠক আঁচ করতে পারে, ধর্ম সম্পর্কে লেখকের এক ধরনের বৈরাগ্য, বিতৃষ্ণা আছে যা তিনি লুকিয়ে রাখতে পারেন নি।
মজিদ নিঃসন্দেহে ধর্মজীবী, অসৎ, ভন্ড তাকে সমর্থন করার কোনো প্রশ্নই আসে না কিন্তু কখনও কখনও ধর্মীয় পরিমণ্ডলকে তিনি শ্লেষের মতো করে উপস্থাপন করেছেন। আমাদের মনে হয়েছে, ‘লালসালু’ উপন্যাসে যে বাস্তবতা, সেটা প্রকৃত বাস্তবতা নয়, বফরঃবফ বাস্তবতা। তাই তা উদ্দীপকের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় নি।
ঘ. বাস্তবতা একটি আপেক্ষিক ধারণা। এই অর্থে একজনের কাছে যেটি বাস্তব, অন্য জনের কাছে সেটি বাস্তব না-ও হতে পারে। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, সর্বজনীন বাস্তববাদ বলে কি কিছু নেই তাহলে? সেটি তাহলে কী?
বাস্তবতা বলতে আমরা সর্বজনীন বাস্তবতাকেই বুঝে থাকি। সর্বজনীন বাস্তবতা হচ্ছে ওই বাস্তবতা সবার কাছেঅন্তত বেশিরভাগ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। আমরা এই মানদণ্ডে যাচাই করে দেখতে চাই, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ বাস্তববাদী লেখক ছিলেন কিনা।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ নিশ্চয়ই বাস্তববাদী লেখকই ছিলেন, তবে সর্বজনীন বাস্তববাদী লেখক তাঁকে বলা সংগত হবে না। তিনি নির্দিষ্ট একটি তত্ত¡কে কাহিনির প্যাটার্নে দাঁড় করাতে চেয়েছেন, সেটি হচ্ছে অস্তিত্ববাদী তত্ত¡। এই অর্থে তিনি তাত্তি¡ক লেখক, দার্শনিক লেখক। নির্দিষ্ট দার্শনিক তত্তে¡র আদর্শে তিনি তাঁর গল্প-উপন্যাস-নাটক রচানা করেছেন সমাজ চিত্র অঙ্কন তাঁর লক্ষ ছিল না।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র উপন্যাসে এই কারণে সমাজচিত্রে নানারকম অসঙ্গতি দেখা যায়। অল্প কিছু নমুনা এখানে তুলে ধরা যাক : (ক) মহব্বতনগর এমনিতেই প্রত্যন্ত গ্রাম কিন্তু তার বিলের পাশেই ‘মতিগঞ্জের সড়ক’। বাস্তবে অজ পাড়াগাঁতে ওই আমলে পাকা সড়কের অস্তিত্ব অকল্পনীয় বিশেষ করে তা-ও আবার বিলের পাশ।
(খ) মজিদ গ্রামে ঢুকেই খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে গিয়ে ধমকা ধমকি শুরু করে দেয়। শুরুতেই এত সাহস সে পেল কিসের ভিত্তিতে? (গ) খালেক ব্যাপারীকে পাঠক বুঝতে পারে যে সে মোটেই বোকা কিছিমের মানুষ নয়,
বিশেষ করে ধলা মিঞাকে গোপনে পানিপড়া আনতে পাঠিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার পর সে যেভাবে মজিদকে মোকাবেলা করে, তাতে বোঝা যে সে যথেষ্ট চিকন বুদ্ধির লোক; তাহলে সে কেন মজিদের ভন্ডামি বুঝতে পারে না? কেন সে মজিদের প্রভুত্ব মেনে নেয়? (ঘ) এ উপন্যাসে গ্রামীণ প্রকৃতির বাস্তবোচিত বর্ণনা নেই। (ঙ) এ উপন্যাসে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের ভাষার মিশ্রণ দেখা যায়……।
আসলে সৈয়দ ওয়ালীউলাহ বাহ্য বাস্থবতাকে মুখ্য না করে অন্তর্বাস্তবতাকে হয়তো প্রধান করে তুলতে চেয়েছেন। তাই তাঁর উপন্যাসের রসপরিণতি এ-রকম দেখতে পাই। এটিই হয়তো তাঁর পরিকল্পনার অংশ।
প্রশ্ন\ ২৫\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আম্বিয়া বিবির মুখের ঝাঁজ খুব বেশি। পাড়া-পড়শিরা আড়ালে আবডালে বলাবলি করে যে, তার জন্মের সময় নাকি তার বাবা-মা মুখে মধু দেয়নি। আঠারো বছর বয়সে স্বামীর ঘরে এসেছিলেন কিন্তু গত ছয় বছর হলো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। রোগে-শোকে ভুগে কী না কী বলেন, তার ঠিক আছে নাকি? স্বামী হাসমত আলী গতবার ষোলো বছরের জয়নাবকে বিয়ে করে ঘরে এনেছেন। বলা যায়, হাসমত-জয়নব দম্পতি দরিদ্রগৃহেই সুখে আছে শুধু ওই আম্বিয়া বিবির বিরামহীন গালমন্দটুকু ছাড়া।
ক. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র শেষ কর্মস্থল কোথায় ছিল?
খ. তাহের-কাদেরের বাবা এত তিক্ত স্বভাবের কেন?
গ. ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা এবং উদ্দীপকের জয়নাবের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হাসমত আলী চরিত্রটিকে তুমি কীভাবে মূল্যায়ন করবে?
২৫ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র শেষ কর্মস্থল ছিল প্যারিস।
খ. একজন মানুষের স্বভাব কেমন হবে সেটা নির্ভর করে নানা বিষয়ের ওপর : এর ভেতরে রয়েছে তার বংশীয় উত্তরাধিকার, আর্থ-সামাজিক পটভূমি, বয়স, পারিপার্শ্বিক প্রভাব ইত্যাদি।
তাহের-কাদেরের বাবা এত তিক্ত স্বভাবের কেন হলো তার কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা তিনটি কারণ দেখতে পাই। প্রথমত, তার আর্থিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে গেছে। এক সৎ ভাইয়ের সাথে জায়গা জমি, সম্পত্তি নিয়ে মারামারি, মামলা-মকদ্দমা করে সে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
এদিক থেকে তার মনে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, তার স্ত্রী তার সাথে দিনরাত অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে যা তার জন্যে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অসম্মানের। বৃদ্ধ বয়সে না পারে সে গর্জন করতে, না পারে সে সহ্য করতে। ছেলেদের তাই সে উসকে দিয়ে বলে, ‘ঠ্যাঙ্গা বেটিকে ঠ্যাঙ্গা’।
তাহের-কাদেরের বাবার তিক্ত মেজাজের পেছনে তৃতীয় যে কারণ লুক্কায়িত ছিল, সেটা খুব সূ²। মজিদ যখন মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশ করে, তখন তার ভন্ডামি আর কেউ বুঝতে না পারলেও তাহের-কাদেরের বাবাই একমাত্র তা বুঝতে সমর্থ হয়েছিল।
তাই তার মেজাজ আরও বেশি তিক্ত হয়ে যায়। কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারেনি। অবদমিত এই ক্রোধের কারণে সে এক পর্যায়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েও যায়।
গ. সৈয়দ ওয়ালীউলাহর ‘লালসালু’ উপন্যাসের জমিলা এবং উদ্দীপকের জয়নাব চরিত্র দুটির মধ্যে আমরা কিছু মিল এবং বেশ কিছু অমিল লক্ষ করি। প্রথমে মিলের দিকটি আলোচনা করা যাক এরপরে আমরা আলোচনা করবো অমিলের ক্ষেত্রসমূহ।
মিল এই যে, জমিলার বিয়ে হয়েছে মজিদের সাথে; উদ্দীপকের জয়নাবের বিয়ে করেছিল, তেমনি উদ্দীপকের হাসমত আলীও তার প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থাতেই দ্বিতীয় বিবাহ করেছে। জমিলা এবং জয়নাব দুজনেই শ্বশুর-বাড়িতে এসেছে সতীন হিসেবে। আর একটি মিল আমরা দেখতে পাই, দুটো বিয়েই হয়েছে পারিবারিক সম্মতি হিসেবে।
এবারে দুটি চরিত্রের ভেতর যে পার্থক্যগুলো রয়েছে আমরা তা দেখানোর চেষ্টা করবো। প্রথম অমির এবং বলা যায় সবচেয়ে বড় অমিল এই যে, স্বামীর ঘরে জমিলা সুখে দিনযাপন করে নি; অপরদিকে উদ্দীপকের জয়নাব হাসমত আলীর ঘরে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে এলেও সে স্বামীর সুখে সোহাগিনী হয়েছে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, জমিলা দুখিনী নারী, জয়নাব সুখী। প্রশ্ন হতে পারে একই সমাজ কাঠামোতে একই পরিবার ব্যবস্থা একই ধরনের অর্থনৈতিক বৃত্তে থেকেও জমিলা কেন দুঃখ পেল চিন্তা-চেতনা আশা-আকাক্ষার মধ্যে ছিল দুস্তর ব্যবধান এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক টিকে থাকার জন্যে ন্যূনতম যে শ্রদ্ধাবোধ ভালোবাসা থাকা জুরুরি মজিদ-জামিলা দম্পতির ভেতর তা ছিল না।
অপরদিকে হাসমত আলী-জয়নাব দম্পতির মধ্যে এগুলোর কোনোটারি কোনো রকম অভাব ছিল না। দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবেই হয়ত জয়নাব স্বামীর ঘরে এসেছিল কিন্তু স্বামীর কাছ থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীসুলভ ব্যবহার সে কখনও পায় নি হাসমত আলী তাকে ভালোবেসেছিল সেও ভালোবেসেছিল হাসমত আলীকে তাই তার সুখের পথে কোনো অন্তরায় সৃষ্টি হয়নি।
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৮ | PDF
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৯-১৭ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১৮-২৫ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ২৬-৩১ | PDF
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১১-২০ | PDF Download
ঘ. দেখবার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এক একজন ব্যক্তির মূল্যায়ন একেক রকম লাল চশমা পরে তাকালেই সবকিছু যেমন লাল মনে হয়, সবুজ চশমায় সবুজ, নীল চশমায় নীল। কোনো চরিত্র মূল্যায়নের সময় পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী চরিত্রটি হয়ে উঠতে পারে পাঠকীয়, আবার তেমনই হয়ে যেতে পারে বিরক্তকরও।
সাহিত্যতত্তে¡র এই সূত্রটি উদ্দীপকের হাসমত আলী চরিত্রটি মূল্যায়নের সময়েও প্রযোজ্য হবে। হাসমত আলী আমার চোখে কেমন হয়ে ধরা পড়েছে সেটি আমি লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।
হাসমত আলীকে আমার স্বার্থপর, দায়িত্বহীন, লোলুপ, কৃত্রিম, পাষাণ প্রকৃতির মানুষ মনে হয়। কারও কারও কাছে হাসমত আলী হয়ত দুর্দান্ত স্বামী কিন্তু আমার কাছে তাকে সেরকম মনে হয়নি।
উদ্দীপকের মধ্যে রয়ে গেছে বেশ কিছু চোরা স্রোত। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, হাসমত আলী প্রথম স্ত্রী অম্বিয়া বিবির ঝগড়াঝাটিতে ত্যাক্তবিরক্ত হয়ে বুঝি দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছে, ব্যাপারটা আসলে সেরকম নয়।
উদ্দীপকটি খুব সচেতনভাবে পাঠ করলে দেখা যাবে, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে যাওয়ার পর থেকেই আম্বিয়া বিবির জীবনে তীক্ততা শুরু হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে তার মুখের ভাষায়।
উদ্দীপকের এক জায়গায় বলা আছে, “ রোগে- শোকে ভুগে কী না কী বলেন, তার ঠিক আছে নাকি? ” আম্বিয়া বিবির মুখের যে ঝাঁজ তার কারণ দুটো একটি হলো তার শারীরিক অসুস্থতা, অন্যটি হলো মাত্র তেইশ বছর বয়সে সতীন ঘরে আসার জন্যে তার নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা।
আম্বিয়া বিবি প্রথম জীবন থেকেই তীক্ত স্বভাবের, এমন কোনো কথা উদ্দীপকে উলেখ করা হয়নি। তার জীবন শুরু হয়েছিল অন্য দশজন স্বাভাবিক নারীর মতোই। অসুস্থ’ হয়ে যাবার পরে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় এবং তার স্বামী আবার বিয়ে করলে এবং তার চোখের সামনে সতীনকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমা যাপন করলে তার সহ্য হয় না। তাই তার এই চিৎকার।
হাসমত আলী তার অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করেছে অথবা নিয়মিত সেবা-যন্ত্র করেছে অথবা নিতান্ত বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এমন কোনো প্রমাণ উদ্দীপকে নেই। তার চেয়েও বড় কথা হাসমত আলী তার অসুস্থ স্ত্রীর সামনেই নিতান্ত অসভ্য এবং অমানবিকভাবে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে মধুচন্দ্রিমায় ব্যস্ত থেকেছে যা কোনো ভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়।
সুতরাং, আমার কাছে হাসমত আলীকে একজন সুবিধাবাদী, নির্মম, অমানবিক মানুষ মনে হয়। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সে যে ব্যবহার করেছে প্রয়োজনবোধে সে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে একই ব্যবহার করবে। হাসমত আলীর এই আন্তরিকতা কৃত্রিম।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।