রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিভাগঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ১ – রাষ্ট্রবিজ্ঞান(Political Science)
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
খ-বিভাগঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর –
১) রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে?
উত্তরঃ ভূমিকাঃ সামাজিক বিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মাধ্যমেই মানবসমাজের রাজনৈতিক বিচারবিশ্লেষনের সূত্রপাত ঘটে।
রাষ্ট্র যেরূপ মানুষের সামাজিক জীবনযাপনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্রের গঠন, বিকাশ, কাঠামো, কার্যপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করার কারণে ক্রমান্বয়ে এর গুরুত্ব বাড়ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Political Science । এর উদ্ভব হয়েছে গ্রিক শব্দ Polis থেকে। Polis শব্দের অর্থ নগররাষ্ট্র (City State) । অর্থাৎ তৎকালে City State নিয়ে গবেষণা, আলোচনা করাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হতো।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান, যা রাষ্ট্র ও সরকারের উদ্ভব, বিকশ, গঠন, কাঠামো ও কার্যক্রম সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন মতবাদ, আদর্শ বা নীতির গ্রহনযোগ্যতা, সমালোচনাও রাষ্ট্রবিজ্ঞান করে থাকে।
রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রমানয় সংজ্ঞাঃ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল এর মতে, “রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমন একটি বিষয় – একটি সুসংগঠিত, স্বয়ংসম্পূর্ণ নগররাষ্ট্রে আদর্শ জীবনযাপনের সাথে সম্পর্কিত সব বিষয়ই যার অন্তর্ভুক্ত।“
অধ্যাপক লাস্কি বলেন, “সংগঠিত রাষ্ট্রের পরিপ্রেক্ষিতে মানব্জীবনের আলোচনাই হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান।“
অধ্যাপক ডব্লিউ. ডব্লিউ. উইলোবি এর মতে, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার প্রকৃতি নির্ণয় করে এদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ও যোগসূত্র স্থাপন করে থাকে।“
রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ম্যাক্স ওয়েবার এর মতে, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান একাধারে দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের আচরণকে নিয়ে আলোচনা করে।“
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লিকক বলেন, “Political science deals with Government,” অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সরকারকে নিয়ে আলোচনা করে।
অধ্যাপক গার্নার বলেন, “Political science begins and ends with the state.”
গেটেল বলেন, “এটা সত্য যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাজনৈতিক সংগঠন ও তত্ত্বের অতীত, বর্তমানে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে।“
বিখ্যাত লেখক পল জানে বলেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অংশ যা রাষ্ট্রের ভিত্তি ও নীতিসমূহের পর্যালোচনা করে।“
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা রাষ্ট্র ও সরকারের যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা করে থাকে। রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলির আলোচনা, সরকারের গঠন, কার্যক্রমের আলোচনা প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।
২) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভুমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। রাষ্ট্রের উদ্ভব, বিকাশ, কাঠামো, কার্যক্রম প্রভৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান তার উদ্ভব থেকে বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে তার প্রকৃতির ও পরিবর্তন হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি নির্ণয় করা মোটেই সহজসাধ্য ব্যাপার নয়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নির্দিষ্ট কোনো প্রকৃতি নির্ধারণ করা সম্ভব না। তবে প্রকৃতি আলোচনা করে তার ধারণা পাওয়া সম্ভব। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি আলোচনা করা হলো-
১. রাষ্ট্র সম্পর্কিত আলোচনাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র সম্বন্ধীয় যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। J.W. Garner বলেন, “Political Science begins and ends with the state.” অর্থাৎ রাষ্ট্রের সকল বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
২. সরকারিবিষয়ক আলোচনাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সরকারের কার্যাবলির আলোচনা ও সমালোচনা করে থাকে। Leacock বলেন, “Political Science deals with government.” অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সরকারকে নিয়ে আলোচনা করে।
৩. ক্ষমতা সম্পর্কিত আলোচনাঃ মানুষ তার ইচ্ছার দ্বারা তাড়িত হয়। তার ক্ষমতায় প্রভাব খাটানর ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রক করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভিন্ন তত্ত্বের তদ্ভব ঘটায়। এভাবে মানুষের ক্ষমতার বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশ্লেষণ করে থাকে।
রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
৪. রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানঃ রাষ্ট্রের যতগুলো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এসবের গঠন ও কার্যাবলির ব্যাখ্যা রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রদান করে থাকে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন – সংসদ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, নির্বাচন কমিশন প্রভৃতি।
৫. তুলনামূলক রাজনীতিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হতে হলে তুলনামূলক রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। বর্তমান রাষ্ট্রবিজ্ঞান তুলনামূলক রাজনীতি অধ্যয়নের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বরোপ করে।
৬. আচরণবাদ ও আচরণতন্ত্রঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আচরণতন্ত্রের চেয়ে আচরণবাদকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আচরণবাদের মাধ্যমে যেকোন বিষয়ের পরীক্ষালব্ধ ও পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা করে তত্ত্ব উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়।
৭. মনস্তাত্ত্বিক আলোচনাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ সম্পর্কে বর্ণনা করতে গেলে এর মনস্তাত্তিক গবেষণা যা অধ্যয়নের বিষয়কে আলোচনায় নিয়ে আসতে হবে। মানুষের মানসিক চাহিদা এবং তদনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি, বিশ্বের অর্থনইতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের সমগ্র রাজনৈতিক কার্যাবলির আলোচনা করে থাকে। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, দল, সংগঠন সম্পর্কে সামগ্রিক আলোচনা করে। এভাবে নাগরিকএর সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
৩) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি আলোচনা কর।
উত্তরঃ রাজনীতি সমাজের মতো সুপ্রাচীন কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান তুলনামূলকভাবে নবীন। এই নবীন পঠিতব্য বিষয়টি বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সমাজজীবনের চারদিকে নানাভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান তার ক্ষেত্রে বিস্তৃত করেছে। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যতিত আধুনিক সমাজের অনেক মৌল সমস্যা অনুধাবন সম্ভব না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিঃ নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো –
১. রাষ্ট্র বিষয়ক আলোচনাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনার কেন্দবিন্দু হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের উদ্ভব, গঠন, কার্যপদ্ধতি, প্রকারভেদ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশদ্ভাবে আলোচনা করে।
রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত নীতি বা তত্ত্বের ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগের বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রধান করে। রাষ্ট্রের উপাদা, সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রত্যেক রাষ্ট্রকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার মূল উদ্দেশ্য।
২. সরকার বিষয়ক আলোচনাঃ অধ্যাপক লিকক বলেন, “Political science deals with government.” অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সরকারের কার্যক্রম ও গঠনপ্রণালি নিয়ে আলোচনা করে। রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদানসমূহের মধ্যে সরকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের গঠন, উপাদান, প্রকারভেদ, কার্যক্রম নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশদ আলোচনা করে। সরকার পদ্ধতি নিয়ে এরিস্টটল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সকল রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সুচিন্তিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ঐসব মতামতের সংরক্ষণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত করে।
৩. জনগণঃ রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হলো জনগণ। জনগণ ব্যতিরেকে কোন রাষ্ট্রের কথা কল্পনা করা যায় না। আর জনগনের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ, রাষ্ট্রের জনগনের ভূমিকা কী হওয়া দরকার তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে।
জনগণকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই আলোচনা সুনাগরিক হওয়ার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৪. সার্বভৌমত্বঃ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সামরিক নীতি, কূটনীতি, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ আবশ্যক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এসব নীতি নির্ধারণের জন্য যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
এতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির আবশ্যকীয়তা প্রকাশ পায়।
৫. আইন বিভাগঃ একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপুর্ণ বিভাগ হলো আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে আইন বিভাগের গতিশীলতা অনেক বেশি কার্যকরী।
আইনের উদ্ভব, বিবর্তন, প্রয়োগ ও বাস্তবায়নেকেন্দ্রিক যাবতীয় বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে।
৬. শাসন বিভাগঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ হচ্ছে রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ। শাসঙ্কার্য পরিচালনার যাবতীয় উপাদান, পদ্ধতি অবলম্বন, প্রয়োগ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে। শাসন বিভাবের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের বিষয়েও রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।
৭. বিচার বিভাগঃ দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন আদালতের গঠন, কার্যপ্রনালি নিইয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে। বিভার বিভাগের স্বাধীনতা যেকোন কল্যাণ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। আর বিচার বিভাগ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আবশ্যকীয় আলোচ্য বিষয়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে শুধু যে ব্যাপক তাই নয়, বরং দিন দিন তা ব্যাপক হতে ব্যাপকতর হচ্ছে। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ও বাইরে যে ব্যাপারেই রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা আছে, সে বিষটিই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সকল বিষয়ই অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে।
৪) রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে যুক্তি দেখাও।
উত্তরঃ ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান কি না সে বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান কি না এ বিষয়ে তীব্র মতবিরোধ লক্ষ করা যায়।
অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে অন্যান্য ভৌত ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞান বলতে নারাজ, আবার অনেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে পর্যবেক্ষণমূলক বিজ্ঞান বলতে সচেষ্ট। এ বিষয়ে উভয়পক্ষেই যথেষ্ট যুক্তির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান কিনাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিজ্ঞান কিনা এর পক্ষে ও বিপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষের যুক্তিসমূহ তুলে ধরা হলো-
১. বিজ্ঞানসম্মত গবেষণাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রকে নিয়ে গবেষণা করে থাকে। যেমন – পদার্থবিজ্ঞান ভৌত অবস্থা নিয়ে পর্যবেক্ষন করে থাকে। পর্যবেক্ষণ, গবেষণা, তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করার কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা যায়।
২. পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণঃ বিজ্ঞানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ করা (Methdological observation)। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আচরণবাদের প্রভাবে আমরা পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণের উপস্থিতি লক্ষ করি।
৩. গবেষণা অবলম্বনঃ প্রাকৃতিক বা ভৌতবিজ্ঞানের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানও গবেষণার মাধ্যেম তত্ত্ব উদ্ভাবন করে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণাগার হিসেবে ইতিহাসকে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ ইতিহাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণাগার হিসেবে কাজ অরে।
৪. ভবিষ্যদ্বিষয়ক পূর্বাভাস দানঃ Samuel P.Huntington- এর লেখা ‘সভ্যতায় সংকট’ গ্রন্থটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বিষয়ক পূর্বাভাসের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এছাড়াও Edward রচিত ‘Orientalism’ গ্রন্থও এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। সুতরাং রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার যথার্থ বা যৌক্তিকতা বিদ্যমান।
রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান না বলার পক্ষে যুক্তিসমূহঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে যেমন বিজ্ঞান বলার পিছনে অনেক যুক্তি রয়েছে তেমনি বিজ্ঞান না বলার পিছনেও যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। নিম্নে এসব যুক্তিসমূহ তুলে ধরা হলো-
১. সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের অভিমতঃ অনেক বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞান হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এদের মধ্যে বাকলে, অগাস্ট কোঁৎ এবং এফ.ডব্লিউ. মেইটল্যান্ড উল্লেখযোগ্য। বাকলে বলেন, “বর্তমান জ্ঞানের পরিধিতে রাজনীতি বিজ্ঞান থেকে বহুদূরে এবং পশ্চাৎমুখী কলা শিক্ষা।“
২. সমরূপতার অভাবঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের বিভিন্ন শাখা- প্রশাখার মধ্যে সমরূপতার অভাব লক্ষনীয়। একেক শাখায় অধ্যয়ন হয় একেক পদ্ধতিতে। অনেক সময় একই বিষয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করে থাকে।
৩. তত্ত্বে পক্ষপাতদুষ্টতাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নিজস্ব প্রভাব বলয়ের বাহিরে গিয়ে চিন্তা করার চেয়ে নিজস্ব ভাবধারাকে প্রাধান্য দেয়। যার ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রভাবে তত্বে প্রতীয়মান হয়।
৪. যথার্থতা ও নিরঙ্কুশতার অভাবঃ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা বা গবেষণার ফলাফল বা তত্ত্বে যথার্থতা ও নিরঙ্কুশতার অভাব প্রত্যিয়মান হয়। অথচ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো এরুপ থাকলেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো এত প্রকট আঁকারে নেই। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার যৌক্তিকতা হারায়।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অন্যান্য প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো সূক্ষতার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞান বলা না গেলেও একে পর্যবেক্ষণমূলক বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা যায়। এ প্রসজ্ঞে লর্ড ব্রাইস বলেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান অসম্পূর্ণ বিজ্ঞান হলেও এটি একটি গতিশীল বিজ্ঞান।“ বৃহত্তর সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যথেষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে।
- আরও পড়ুনঃ মাস্টার্স উচ্চতর সামাজিক গবেষণা ও পরিসংখ্যান প্রশ্নোত্তর
- আরও পড়ুনঃ মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার সামাজিক প্রশাসন সাজেশন ও বই (ফ্রি)
৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতিগুলো আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভুমিকাঃ ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক চিন্তাভাবনার সূচনা হয়। মানবসমাজের গতিশীল প্রকৃতি নিয়েই রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে।
কিন্তু চরিত্র যথাযথভাবে অনুধাবন করার মতে সর্বজনবিদিত কোনো অনুসন্ধান পদ্ধতি উদ্ভাবন করা অসম্ভব অনুসন্ধান পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতানইকাও হয়। এই বিতর্ক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যনের পদ্ধতিগুলোঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যদিও এসব পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের কতিপয় পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. ঐতিহাসিক পদ্ধতিঃ অতীত জ্ঞান ও বর্তমানের পর্যালোচনা ভবিষ্যৎ নির্দেশক আলোচনার পথকে প্রসারিত করে রাষ্ট্রনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানার আগে এর উদ্ভব ক্রমবিবর্তনের ধারা সম্পর্কেও জ্ঞান রাখা আবশ্যক। ঐতিহাসিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এই ধারণা লাভ করা সম্ভব।
২. পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতিঃ এ পদ্ধতিতে প্রথমে বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরিসংখ্যান ও গবেষণামূলক পদ্ধতির সাহায্যে সংগৃহীত তথ্য থেকে আহরিত হয় যথার্থ সত্য। এরিস্টটল ১৫৮ টি রাষ্ট্রের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। দিক বলতে মূলত ভৌগলিক অবস্থান, সামগ্রিক পরিবেশ, নাগরিক আচরণ ইত্যাদিকে বুঝানো হয়।
৩. পরীক্ষামূলক পদ্ধতিঃ অনেক সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা পরীক্ষামূলক পদ্ধতিও অবলম্বন করে থাকেন। সদ্য স্বাধীন দেশ রাষ্ট্রের সরকার গঠনের জন্য গবেষনা চালানো হয়। নতুন নতুন আইনকানুন, ন্যায়নীতির ধারণা ও তথ্য ও দর্শনের পরীক্ষামূলক আলোচনাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পর্যালোচনা।
রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
পরীক্ষার মাধ্যমেই নতুন নতুন রীতিনীতি সিদ্ধিলাভ করে। মূলত রাজনৈতিক জীবনে পরীক্ষানিরীক্ষা অব্যাহত।
৪. দার্শনিক পদ্ধতিঃ দার্শনিক পদ্ধতি অনুসারে কিছু বিষয়কে অনুমানের ভিত্তিতে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেওয়া হয় এবং অবরোহণ পদ্ধতিতে কতকগুলো সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রের প্রকৃতি, কার্যাবলি, ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ইত্যাদি দার্শনিক উপায়ে সমাধান করা হয়।
৫. তুলনামূলক পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতি অনুসারে অতীত ও বর্তমানের রাজনৈতিক ঘটনাবলি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে তুলনা করা হয়। তুলনামূলক বিচারবিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরিস্টটল রাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরিস্টটল রাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন ১৫৮ টি রাষ্ট্রের সংবিধানের তুলনামূলক বিশ্লেষণের পরিপূরক। সমকালীন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এটি গুরুত্বপূর্ণ।
৬. অভিজ্ঞতামূলক পদ্ধতিঃ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এই পদ্ধতি ব্যবহার প্রবণতা বেশি। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কলাকৌশল অবলম্বন করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষণায় এই পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে।
তত্ত্ব ও গবেষণার মাঝে সামঞ্জস্য আনার জন্য সংখ্যায়ন ও পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতির সাহায্যে নিতে হয়। জনমন, জনসংখ্যা, ভোটদান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে এ পদ্ধতি অত্যাবশ্যক।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের ক্ষেত্রে উপরিলিখিত সকল পদ্ধতিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় নতুন রীতিনীতি, সিদ্ধান্ত, সূত্র, তত্ত্ব। তাই এসব পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হতে হবে এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হয়।
৭) রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আধুনিক পদ্ধতিসমূহ লেখ।
উত্তরঃ ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি গতিশীল বিজ্ঞান। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়ন পদ্ধতি, পরিধি, বিষয়বস্তু পরিবর্তন হয়। সনাতন পদ্ধতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকলেও বর্তমানে বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন ও আধুনিক চাহিদা, আধুনিক পদ্ধতিসমূহ অবলম্বনের পথকে প্রশস্ত করছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আধুনিক পদ্ধতিসমূহঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে ইতিহাস নির্ভরতা আদর্শের প্রভাব, তুলনামূলক আধ্যয়ন সহায়তা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সনাতন পদ্ধতি সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে গৃহীত আধুনিক পদ্ধতিসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. আচরণবাদঃ আচরণবাদ আধুনিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পথকে উন্মুক্ত করেছে। আচরণবাদের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপকে গভেষণার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এভাবে কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সামগ্রিক অবস্থা অধ্যয়নের আওতাভুক্ত হয়ে যায়।
২. সংঘ বা গ্রুপ তত্তবঃ আর্থার এফ. বেন্টলি তার গ্রন্থে গ্রুপ এর প্রথম প্রয়োগ ঘটান। এ পদ্ধতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আদর্শগত ভাবগম্ভীর পরিবেশ থেকে পরীক্ষালব্ধ ও প্রয়োগযোগ্য ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটানো হয়েছে। সংঘ তত্তের বিশ্লেষন কেন্দ্র হচ্ছে সমষ্টি। কেননা সম্মিলিত প্রচেষ্টা রাজনৈতিক লক্ষ সাধনের জন্য উপযোগী।
রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
৩. এলিট তত্ত্বঃ সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে এলিটতত্তের গুরুত্ব অনেক। এই তত্ত্বের মূল কথা হলো প্রত্যেক রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুটি স্তর রয়েছে। এদের এক স্তর শাসন করে, অপর স্তর শাসিত হয়। যারা শাসন করে তারাই রাজনৈতিক এলিট। এদেরকে গুরুত্ব দিয়েই রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা যায়।
৪. শ্রেনিতত্তবঃ কার্ল মার্কস, ম্যাক্স ওয়েবার, মার্শাল প্রমুখ দার্শনিক ও লেখকগণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের এই তত্ত্বের উদ্ভব ও বিকাশ ভূমিকা রাখেন। তৃতীয় বিশ্বে শ্রেনিতত্ত্ব ব্যপক অর্থপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত শ্রেনিবিভাগ রাজনৈতিক পরিমন্ডলে যেমন ভূমিকা রাখছে, তেমনি তা রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে বিকাশ সাধন করছে।
৫. মনস্তাত্তিক বিশ্লেষন পদ্ধতিঃ এরিকসন, হেজেন, লুসিয়ান পাই প্রমুখ মনীষীগণ মনস্তাত্তিক বিশ্লেষন পদ্ধতির সাথে জড়িত। মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উন্নয়নমূলক প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে নতুন এক বিশ্লেষন সূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক পদ্ধতিসমূহ অবলম্বনের ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ক্রমান্বয়ে যুগোপযোগী বিষয়ে বিশ্লেষণ ও গবেষণার গ্রহণযোগ্যতা লাভ করছে।
সনাতন পদ্ধতির সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এখন অত্যাধুনিক বিষয় হিসেবে সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।সংকীর্ণতা পরিহার করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিস্তৃতি এখন সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করছে।
৮) আচরণবাদ কী?
উত্তরঃ ভূমিকাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে আচরণবাদের জনপ্রিয়তা সাম্প্রতিককালে উল্লেখযোগ্য দিক। আচরণবাদ প্রয়োগের সাথে জে.বি. ওয়াটসনের নাম বিশেষভাবে জড়িত রয়েছে। তিনি বিজ্ঞানসম্মত গবেষণায় আচরণবাদের প্রবর্তন করেন।
ডেভিড ইস্টনের মতে, “আচরণবাদের অধ্যয়ন ও অনুশীলন সাম্প্রতিককালের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতীক ও জ্ঞান অনুশীলনের আন্দোলনে রূপলাভ রয়েছে।“
আচরণবাদঃ ব্যক্তি ও গোষ্ঠির রাজনৈতিক আচরণকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করাই হচ্ছে আচরণবাদ। অন্যভাবে বলা যায়, আচরণবাদ হলো মানুষের আচরণকে পর্যালোচনার মাধ্যমে রাজনীতিকে যথাযথ ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস।
আরও সহজভাবে বলা যায়, পরীক্ষালব্ধ ও প্রয়োগযোগ্য তত্ত্ব উদ্ভাবন, রীতিসিদ্ধ বিশ্লেষন ও তাদের সত্যাসত্য যাচাইয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যক্রমের সুসম্নিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ অনুসন্ধানকেই আচরণবাদ বলে।
রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রামান্য সংজ্ঞাঃ
রবার্ট ডাল বলেন, “আচরণবাদ হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে একটি প্রতিবাদ আন্দোলন বিশেষ। এটি ব্যক্তির পর্যবেক্ষণশীল এবং পর্যবেক্ষিত আচার-আচরনের মাধ্যমে রাজনিতিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান আধুনিক মনসবত্তব, সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত ও অর্থনীতির তত্ত্ব, পদ্ধতি, সিদ্ধান্ত ও অভিজ্ঞতার সাহায্যে নিজেকে পরিপুষ্ট করার উদ্যোগ নেয়।“
রাষ্ট্রবিজ্ঞাণী গ্রাহাম ওয়ালাস বলেন, “ব্যক্তির মনোদইহিক আচরণ বিশ্লেষণ ব্যতীত রাজনীতি অধ্যয়ন হলো অর্থহীন ও প্রানহীন।
ডেভিড ইস্টন বলেন, “আচরণবাদ হচ্ছে একটি বৌদ্ধিক প্রবণতা এবং সুনির্দিষ্ট শিক্ষা বিষয়ক আন্দোলন।“
বিল ও হার্ডগ্রেড বলেন, “আচরণবাদ বলতে অভিজ্ঞতাভিত্তিক তত্ত্ব গঠন, কৌশলগত বিশ্লেষণ এবং তা যাচাই-বাছাই করার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক কাঠামোর পদ্ধতিগত বিশ্লেষণকে বুঝায়।“
ডেভিড চার্লস ওয়ার্থ তার গ্রন্থে বলেন, “আচরণবাদ শুধু ব্যক্তির কার্যাবলির সাথে জড়িত নয়; বরং এটি তার অবধারণজনিত, অনুভূতিজনিত ও মূল্যায়নমূলক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।“
জে. বি. ওয়াটসন এর মতে, “আচরণবাদ হচ্ছে একটি বৌদ্ধিক প্রবণতা এবং রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে এক অভিজ্ঞতাবাদী ও স্থায়ী তত্ত্ব গঠনের প্রচেষ্টা।“
ডেভিড ট্রুম্যান বলেন, “আচরণবাদ হচ্ছে একটি বৌদ্ধিক প্রবণতা এবং সুনির্দিষ্ট শিক্ষা বিষয়ক আন্দোলন।“
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আচরণবাদের পরীক্ষা নির্ভরতার কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের অনুমাননির্ভরতা ও কল্পনাসমূহ মতবাদের প্রভাব ক্ষীয়মাণ হচ্ছে। এর পরিবর্তে বাস্তবভিত্তিক বিষয়ভিত্তিক আলোচনার দ্বারা উন্মুক্ত হচ্ছে। যদিও অনুমানের দ্বারস্থ কেউ কেউ হয়। তবে যথার্থ পরীক্ষালব্ধ তথ্যের দ্বারা সত্যাসত্য নির্ধারণ করাকে আচরণবাদ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
৯) ডেভিড ইস্টনের আচরণবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী?
উত্তরঃ ভূমিকাঃ আচরণবাদ আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। আচরণবাদ বা সাম্প্রতিককালে আলোচনার বিষয়। আচরণবাদ বা সাম্প্রতিককালে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্রত্যয়।
প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডেভিড ইস্টন আচরণবাদ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন এবং কিছু বৈশিষ্ট্যও উল্লেখ করেছেন। ডেভিড ইস্টনের আচরণবাদ আলোচনার পূর্বে আচরণবাদ সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিৎ।
আচরণবাদঃ ব্যক্তি ও গোষ্ঠির রাজনৈতিক আচরণকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করাই হচ্ছে আচরণবাদ। অন্যভাবে বলা যায়, আচরণবাদ হলো মানুষের আচরণকে পর্যালোচনার মাধ্যমে রাজনীতিকে যথাযথ ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস ।
আরও সহজভাবে বলা যায়, পরীক্ষালব্ধ ও প্রয়োগযোগ্য তত্ত্ব উদ্ভাবন, রিতিসিদ্ধ বিশ্লেষণ ও তাদের সত্যাসত্য যাচাইয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যক্রমের সুসমনবিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ অনুসন্ধানকেই আচরণবাদ বলে।
ডেভিড ইস্টনের আচরণবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ ডেভিড ইস্টন আচরণবাদ সম্পর্কে তার গ্রন্থে লিখেছেন। তার মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আচরণবাদের যে আন্দোলন তা আটটি বৈশিষ্ট্যের প্রতি আকর্ষন ও অনুরাগ দ্বারা স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে।“ নিম্নে ডেভিড ইস্টনের আচরণবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরা হলো-
রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ১ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১. একরূপতাঃ রাজনৈতিক আচরণ ও কার্যাবলিতে একরূপতা নিহিত আছে। সাধারণ সূত্র বা তত্ত্বের আঁকারে একে প্রকাশ করা যায়। সাধারণ সুত্র বা তত্ত্ব দিয়ে শুধুমাত্র ব্যাখ্যা করাই নয়, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বক্তব্য রাখাও সম্ভব।
২. যাচাইঃ রাজনৈতিক আচরণের একরুপতা সম্পর্কে যে সূত্রগুলো আছে তা অবশ্যই পরীক্ষাযোগ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট আচরণের প্রেক্ষিতে সেই সূত্রের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়।
৩. পদ্ধতিঃ রাজনৈতিক আচার আচরণ সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যাখ্যা করার জন্য যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আর এক্ষেত্রে যত্নসহকারে ও সূক্ষভাবে পদ্ধতিগুলো আবিষ্কার করতে হবে।
৪. সংখ্যাভিত্তিক পরিমাপঃ তথ্য বা উপাত্ত লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সূক্ষতা ও যথাযর্থতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সংখ্যাভিত্তিক পরিমাপ।
৫. সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনাঃ গবেষণার ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল ও প্রণালিবদ্ধ। সুশৃঙ্খল ও সমন্বিত জ্ঞানের দুটি অংশ হলো গবেষণা ও তত্ত্ব।
৬. খাটি বিজ্ঞানঃ এখানে তত্ত্ব ও ব্যাখ্যাদানই বেশি মুল্যবান। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আদৌ কার্যকর কি না সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা উদাসীন।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আচরণবাদী গবেষক ও পন্ডিতরা উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যের যেকোন একটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে পথ রচনা করে। আচরণবাদের এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে যদিও কিছু মতবিরোধ রয়েছে তবুও এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ তত্ত্ব ব্যাপক প্রসার লাভ করলেও রাজনীতি বিশ্লেষণে এ তত্ত্বটির প্রথম প্রয়োগ ঘটে উনিশ শতকের তৃতীয় দশকে।
১০) গোষ্ঠী তত্ত্ব কী?
উত্তরঃ ভূমিকাঃ বিশ্লেষণ তত্ত্ব হিসেবে গোষ্ঠী তত্ত্ব রাজনীতি অধ্যয়নের সনাতন প্রাতিষ্ঠানিক ও রীতিসিদ্ধ পদ্ধতির প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ। রাজনৈতিক বিশ্লেষণকে আদর্শগত ভাবগম্ভীর পরিবেশ থেকে পরীক্ষালব্ধ ও প্রয়োগযোগ্য ক্ষেত্রে উত্তরণ হচ্ছে গোষ্ঠী তত্ত্বের আর এক অভিব্যক্তি।
গোষ্ঠীঃ প্রচলিত অর্থে গ্রুপ হচ্ছে একটি জনগোষ্ঠী, যার কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রে মিলিত হয়। আর জনসমষ্টি একত্রে মিলিত হয় তাদেরকে রাজনৈতিক গ্রুপ বলে। গ্রুপ তত্ত্বের প্রবক্তা এর মতে, ব্যক্তির স্বতন্ত্র কোন অস্তিত্ব নেই। তার গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যাক্তি যে গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত সে গ্রুপেই তার স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রমান সংজ্ঞাঃ
আর্থার এফ.বেন্টলি এর মতে, “A group is mass of activity that tends to more for some definite course of conduct.”
Bill and Hardgrave Jr. – এর মতে, “A Group may be defined as an aggregate of individuals who interact in varying degree perssuance of a common interest.” অর্থাৎ গোষ্ঠী বলতে ঐসব ব্যক্তিবর্গের সমষ্টিকে বুঝি যারা একই ধরনের স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়।
বারট্রাম লোথাম বলেন, “সমাজ হলো একটি গোষ্ঠী জগত। এখানে গোষ্ঠীসমূহ একত্রিত হয়, ভেজ্ঞে যায়, বিরামহীন অবস্থায় ক্ষমতার জোট গঠন করে এবং একত্রে অবস্থান করে। গোষ্ঠীর বিরোধ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে সমাজের গতি অক্ষুণ্ণ থাকে।“
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, গোষ্ঠীতত্ত একইরূপ স্বার্থকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জনসমষ্টি। গোষ্ঠী হচ্ছে কোন সাধারণ স্বার্থ অর্জনের জন্য যখন ব্যক্তি সমষ্টি সম্মিলিতভাবে কর্মরত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আধুনিক পদ্ধতির এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। গোষ্ঠী তত্ত্ব অধ্যায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা সংঘের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায়।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
Comments ১