পঞ্চম শ্রেণি | বাংলা ব্যকরণ | প্রবন্ধ রচনা ৩১-৩৬ | PDF: পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়টির প্রবন্ধ রচনা অংশ হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা সমুহ নিয়ে আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
৩১. ধান
সূচনা : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল হলো ধান। এটি আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য।
চাষের অঞ্চল : আমাদের দেশে গ্রামের মাঠে মাঠে ধান চাষ করা হয়। হাওর, খাল, বিল এবং নদীর চরেও ধানের চাষ হয়।
বৈশিষ্ট্য : ধান গাছ তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা চিকন ও দীর্ঘ। কাঁচা ধান গাছ সবুজ থাকে। ধান পাকলে ধানসহ গাছের রং সোনালি হয়।
উৎপাদন : পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ধান জন্মায়। তবে এশিয়া মহাদেশ বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ধানের জন্যে বিখ্যাত। বাংলাদেশের বরিশাল ও দিনাজপুর জেলায় বেশি ধান উৎপাদিত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত চার প্রকারের ধান উৎপন্ন হয়। যথাÑ আউশ, আমন, বোরো ও ইরি।
চাষের সময় : আউশ ধান চৈত্র-বৈশাখ মাসে বুনতে হয় এবং আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাটা হয়। আমন ধান আষাঢ়Ñশ্রাবণ মাসে বুনতে হয় এবং কার্তিকÑঅগ্রহায়ণ মাসে কাটা হয়। অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয় এবং চৈত্রÑবৈশাখ মাসে কাটা হয়। ইরি ধানের চাষ বছরের বিভিন্ন সময়ে করা হয়।
ধানজাত দ্রব্য : ধান থেকে চাল হয়। চাল দিয়ে ভাত রান্না করা হয়। এছাড়া চাল থেকে চিড়া, মুড়ি, খই ইত্যাদি খাবার তৈরি হয়। ধানের খড় গরু-মহিষের খাদ্য।
উপসংহার : আমাদের দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ধানের উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। চাষাবাদের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে তা করা সম্ভব।
৩২. জাতীয় ফল কাঁঠাল
সূচনা : অজস্র মজাদার ফলে বাংলার প্রকৃতি ভরপুর। এসব ফলের রয়েছে বিচিত্র নাম, ভিন্ন রূপ, নানা স্বাদ ও গন্ধ। গ্রীষ্মের ফল কাঁঠাল। এ ফল গন্ধ ও স্বাদে বাঙালির অতিপ্রিয়। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল।
পরিচিতি : কাঁঠাল আকৃতিতে বেশ বড়। গায়ে থাকে কাঁটার আবরণ। কাঁচা কাঁঠাল সবুজ বা সবুজাভ হলুদ কিংবা হলদেটে রঙের হয়ে থাকে। কাঁঠাল গাছ মাঝারি থেকে বড় হয়ে থাকে। একটি গাছে ধরে অনেক অনেক কাঁঠাল। গাছের গোড়া থেকে শাখা পর্যন্ত কাঁঠাল ফলে।
প্রাপ্তিস্থান : কাঁঠাল বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়। তবে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ময়মনসিংহ এবং যশোর অঞ্চলে এর ফলন বেশি হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ে বিশেষ আকার ও স্বাদের কাঁঠাল জন্মে।
চাষপদ্ধতি : কাঁঠাল উঁচু জমির ফল। যেখানে বৃষ্টির পানি জমে না, সেখানে কাঁঠাল গাছ ভালো জন্মে। বীজ এবং কলমের মাধ্যমে কাঁঠাল গাছের বংশবৃদ্ধি ঘটানো যায়। বীজ থেকে চারা উৎপন্ন করলে সেই চারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে রোপণ করলে উৎপাদন ভালো হয়।
আরো দেখুন
পুষ্টিগুণ : কাঁঠালের ভেতর অসংখ্য কোষ হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় তা কেটে রান্না করে খাওয়া হয়। কাঁঠালের সব অংশই ব্যবহার করা যায়। পাকা কাঁঠালের কোষ মানুষের উপাদেয় ও পুষ্টিকর খাবার। এর ছাল গবাদিপশুর খাবার। কাঁঠালের বিচি ভেজে কিংবা রান্না করে খাওয়া যায়। কাঁঠালই ফলের মধ্যে সবচেয়ে আমিষ সমৃদ্ধ ফল।
অপকারিতা : মুখরোচক হলেও কাঁঠাল একটি গুরূপাক খাদ্য। অর্থাৎ এটি সহজে হজম হয় না। তাই বেশি কাঁঠাল খেলে পেটের পীড়া হতে পারে। কাঁঠালের আঠা খুবই বিরক্তিকর।
উপসংহার : কাঁঠাল অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। এটি বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এটি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কাঁঠালের উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত।
৩৩. আমার প্রিয় শখ
ভূমিকা : প্রতিদিন নানা ধরনের কাজ করে আমাদের শরীর ও মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে আমরা বিভিন্ন রকম শখের কাজ করে থাকি। শখের কাজ আমাদের দেহ ও মনকে প্রফুল্ল করে।
আমার শখ : মানুষের মাঝে শখ সম্পর্কে নানা রকম বৈচিত্র্য দেখা যায়। কারও শখ বাগান করা, কারও ডাকটিকিট সংগ্রহ, কেউ ছবি আঁকে কেউবা আবার ভ্রমণ করে। আমার শখ বাগান করা।
পছন্দের কারণ : গাছপালা আমার খুবই পছন্দ। গাছের সবুজ পাতা বা ডালে ডালে ফুটে থাকা বাহারী ফুলের সৌন্দর্য তুলনাহীন। তাছাড়া বাগানে কাজ করার মাধ্যমেও অত্যন্ত আনন্দ লাভ করা যায়।
আমি যা যা করি : আমাদের বাড়ির সামনে খানিকটা খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে আমি একটি ছোট বাগান করেছি। বাগানে আছে কয়েক রকমের ফুল আর সবজির গাছ। প্রতিদিন ভোরে ও বিকেলে আমি বাগানে কাজ করি। পানি, সার ইত্যাদি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করাসহ গাছগুলোর নানা রকম যতœ নিই।
উপকারিতা : প্রতিটি মানুষের জীবনেই অবসর যাপনের প্রয়োজন রয়েছে। আর শখের কাজগুলো করার মাধ্যমেই অবসর সময়গুলো সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। এ ধরনের কাজ আমাদের শরীর ও মনের ক্লান্তি ও জড়তা দূর করে। বাগানে কাজ আমি অত্যন্ত আনন্দ পাই। ফুলের গাছগুলোতে যখন ফুল ফোটে বা কোনো সবজির গাছে ফলন হতে দেখি তখন মনটা খুশিতে ভরে যায়। তাছাড়া বাগান থেকে পাওয়া তাজা সবজিগুলোও আমাদের কাজে আসে।
উপসংহার : গাছপালা মানুষের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তাই এদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা থাকতে হবে। বাগান করার মাধ্যমে আমি আমার শখ পূরণের পাশাপাশি এ দিকটার প্রতিও খেয়াল রাখি। শরীর ও মনকে সুস্থ-সতেজ রাখার জন্য সবারই উচিত কোনো কোনো শখের কাজ করা।
৩৪. বৈশাখী মেলা
সূচনা : পয়লা বৈশাখ হলো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। পুরাতনকে ভুলে গিয়ে এদিন বাঙালি আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠে। পয়লা বৈশাখে নানা রকমের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো বৈশাখী মেলা।
মেলার স্থান : সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ মেলা সাধারণত খোলা আকাশের নিচে বসে। গ্রামের হাট, নদীর তীর, শহরের বড় মাঠ ইত্যাদি স্থানে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক সময় বড় কোনো গাছকে ঘিরেও বৈশাখী মেলা বসে।
মেলার বর্ণনা : বৈশাখ মাসের যেকোনো সময়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা যায়। এ মেলা কখনো হয় দিনব্যাপী, কখনো আবার কয়েক দিন জুড়ে। সকল শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষ অত্যন্ত উৎসাহের সাথে বৈশাখী মেলায় যোগ দেয়। মেলায় ওঠে কাঠ, মাটি, লোহা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা নানা ধরনের তৈজসপত্র ও খেলনা। নানা রকম অলংকার ও গ্রামীণ পোশাকও পাওয়া যায়। মুড়ি-মুড়কি, খই, বাতাসা, জিলিপি ও নানা ধরনের ফলমূলের দোকান বসে। এছাড়া মেলায় থাকে পুতুল নাচ, যাত্রাপালা, জারিগান ইত্যাদির আয়োজন।
মেলার গুরুত্ব : নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্যই বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। সব বয়সের মানুষ বিশেষভাবে শিশুদের জন্য এ মেলা খুবই আনন্দদায়ক। মানুষ এ মেলা থেকে নানা রকম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে। মেলায় এসে প্রিয় মানুষদের সাথে আমাদের দেখা হয়। সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়।
উপসংহার: বৈশাখী মেলা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্যই এটি আনন্দ বয়ে আনে।
৩৫. বর্ষাকাল
সূচনা : সকাল দুপুর
টাপুর টুপুর
রিমÑঝিমাÑঝিম বৃষ্টি।
আকাশ উপুড়
ঝাপুর ঝুপুর
বন্ধ চোখের দৃষ্টি।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষা আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সাজে। গ্রীষ্মের পরই বর্ষার আগমন ঘটে। আষাঢ়Ñশ্রাবণ এ দুই মাস মিলে বর্ষাকাল।
বর্ষার আবহাওয়া : বর্ষাকালে আকাশ ঢাকা থাকে কালো মেঘে। ঘন ঘন বৃষ্টি হয়। একটানা কয়েকদিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস বয়। বিদ্যুৎ চমকায়, কখনো প্রবল ঝড় হয়। টানা বর্ষণের ফলে অনেক সময় বন্যা হয়।
বর্ষার প্রকৃতি : বর্ষার আগমনে প্রকৃতি থেকে মুছে যায় গ্রীষ্মের ধূসর ক্লান্তি। গাছপালা যেন প্রাণ ফিরে পায়। মাঠ-ঘাট, খাল-বিল, ডোবা-পুকুর, নদী-নালা পানিতে ডুবে যায়। নদীতে ভেসে চলে পালতোলা নৌকা, ডিঙি আর কলা গাছের ভেলা। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক স্থানে লোকজনের চলাচলে খুবই সমস্যা হয়।
বর্ষার ফুল : বর্ষাকালে আমাদের ঝিলে-বিলে ফোটে পদ্ম, শাপলা, কলমিসহ কত ধরনের ফুল। ডাঙায় ফোটে কদম, হিজল, কেয়া, গন্ধরাজ, বেলি ইত্যাদি। মনে হয় চারদিক জুড়ে যেন তখন ফুলের মেলা বসে।
বর্ষার ফল : বর্ষাকালে এদেশে হরেক জাতের ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ জাম, পেয়ারা, আমড়া, লটকন, আতা, বাতাবি লেবু ইত্যাদি।
বর্ষার অবদান : বর্ষাকালে প্রকৃতি যেন ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যায়। এ সময় নদীর পানির সাথে আসা পলিমাটি জমির উর্বরতা বাড়ায়। ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার : কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বর্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঋতু। অতি বৃষ্টির কারণে বন্যা হওয়ার বিষয়টি বাদ দিলে বর্ষাকাল অবশ্যই আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
৩৬. শীতের সকাল
সূচনা : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। শীতকাল তার মধ্যে অন্যতম ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। শীতের সকাল অন্যসব ঋতু থেকে আলাদা।
প্রকৃতির চিত্র : শীতের সকাল থাকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। সূয্যিমামার দেখা পাওয়াই ভার। একটু দূরের জিনিসও দেখা যায় না ঘন কুয়াশার কারণে। সকাল থেকেই থাকে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠাণ্ডা।
গ্রামীণ জীবনে শীত : শীতের সকালের প্রকৃত আনন্দ পাওয়া যায় গ্রামীণ জীবনেই। বাংলার গ্রামগুলোতে শীতের সকাল হয় খুব মনোরম ও আনন্দময়। প্রচণ্ড শীত থাকলেও গ্রামের কর্মঠ মানুষেরা ভোরেই মাঠ-ঘাটে কাজের জন্য চলে যায়। বৃদ্ধ ও ছোট ছেলে-মেয়েরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে। ঘরে ঘরে পিঠা-পুলি ও খেজুরের রসের পায়েস তৈরির ধুম পড়ে যায়।
শহরে শীতের সকাল : শহুরে জীবনে শীতের সকাল ততটা আনন্দময় নয়। শীত উপেক্ষা করেই ব্যস্ত মানুষ ছুটে যায় কর্মস্থলে। রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে মানুষের ভিড় লক্ষ করা যায়। বৃদ্ধ মানুষেরা বারান্দায় খবরের কাগজ হতে রোদ পোহান।
আরো পড়ুনঃ
-
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ভাবুক ছেলেটি গল্প প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | অবাক জলপান নাটকটির প্রশ্ন উত্তর | PDF
সুবিধা-অসুবিধা : শীতের সকালের নির্মল প্রকৃতি মনকে আনন্দে ভরে দেয়। মজাদার পিঠা-পুলি ও তাজা শাক-সবজির স্বাদ নেওয়া যায়। কিন্তু দরিদ্র মানুষদের জন্য এ সময়টা অত্যন্ত কষ্টের। শীতবস্ত্রের অভাবে তাদের দুর্দশার শেষ থাকে না। শীতের সকালে শরীরে অলসতা ভর করে। বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না।
উপসংহার : শীতের সকাল ক্ষণস্থায়ী হলেও ভিন্ন আমেজের। সব বয়সের মানুষের মনে এটি আনন্দ বয়ে আনে। তবে গরিব-দুঃখীদের জন্য এটি খুব কষ্টদায়ক।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।