পঞ্চম শ্রেণি | বাংলা ব্যকরণ | প্রবন্ধ রচনা ২১-২৫ | PDF: পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়টির প্রবন্ধ রচনা অংশ হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা সমুহ নিয়ে আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
২১/ নায়াগ্রা জলপ্রপাত
ভূমিকা : নায়াগ্রা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। এর অতুলনীয় সৌন্দর্য এবং আলাদা বিশেষত্ব মানুষকে একই সাথে মুগ্ধ ও অভিভ‚ত করে।
জলপ্রপাত কী : জলপ্রপাত বলতে বোঝায় এমন একটি প্রাকৃতিক স্থান যেখানে অনেক ওপর থেকে পানি নিচে পড়ে। জলপ্রপাতে সাধারণত পর্বত থেকে নিচের গভীর খাদে পানি ঝরে পড়ে।
নায়াগ্রার অবস্থান : নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মূল অবস্থান কানাডায়। এর কিছু অংশ পড়েছে আমেরিকার মধ্যে।
নায়াগ্রার বিশেষত্ব : বিশ্বে যতগুলো প্রাকৃতিক বিস্ময় আছে নায়াগ্রা তার মধ্যে অন্যতম। জলপ্রপাতের যেভাবে উৎপত্তি এবং জলের পতন হয়, নায়াগ্রা তার থেকে একেবারেই আলাদা। সাধারণ জলপ্রপাত পাহাড় থেকে পানি নিচে যায় বা সমতলে পড়ে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, নায়াগ্রা জলপ্রপাত পাহাড় থেকে নামেনি।
নায়াগ্রার জলধারা সৃষ্টি হয়েছে খরস্রোতা এক নদী থেকে। নদীটি যে মাটির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তার দু দিকের মাটির মাঝে রয়েছে বিশাল এক ফাটল। একটি নদী যতখানি চওড়া হতে পারে সেটি ঠিক ততখানি বিস্তৃত।নায়াগ্রার জল ঐ ফাঁকের ভেতর চলে যায়।
আরো দেখুন
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সৌন্দর্য : নায়াগ্রার সৌন্দর্য বড়ই মনোরম। এর বিস্ময়কর সৌন্দর্য সবাইকেই মুগ্ধ করে। তা দেখতে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক ছুটে যায়।
উপসংহার : প্রকৃতির খেয়ালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত নায়াগ্রা সৃষ্টি হয়েছে এক বিস্ময় হিসেবে। বিশ্ব-ভ‚মন্ডল যে কত বিচিত্র তা নায়াগ্রাকে দেখলেই বোঝা যায়। আর এর নয়নাভিরাম রূপ উপভোগ করতে পারাটা যে কোনো সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের জন্যই অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়।
২২. আমার প্রিয় শিক্ষক
সূচনা : ছাত্রজীবনে যারা আমাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে আলোর পথ দেখান তাঁরাই আমাদের শিক্ষক। বিশেষ কিছু গুণের কারণে কোনো কোনো শিক্ষক আমাদের মনে আলাদাভাবে স্থান করে নেন। হয়ে ওঠেন আমাদের প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় মানুষ। আমারও তেমনি একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন।
আমার প্রিয় শিক্ষক : আমার সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষকের নাম খন্দকার আকরাম হোসেন। স্কুলে তিনি আকরাম স্যার নামে সবার কাছে পরিচিত। তাঁর সততা, নিষ্ঠা ও ব্যক্তিত্ব তাঁকে সবার কাছে অনুসরণীয় করে তুলেছে।
প্রিয় হওয়ার কারণ : আকরাম স্যার আমাদের গণিত পড়ান। গণিতে আমি খুব দুর্বল ছিলাম। গণিত পরীক্ষার আগের দিন ভয়ে কাঁপতাম। আকরাম স্যারের ক্লাস করার পর থেকে সে সমস্যা কেটে গেছে। এটি ছাড়াও ছাত্রদের সাথে তিনি যেভাবে খোলা মন নিয়ে মেশেন সেটিও আমাকে আকৃষ্ট করে।
পাঠদান পদ্ধতি : আকরাম স্যারের পাঠদান পদ্ধতি খুবই চমৎকার। তিনি কখনই দেরি করে ক্লাসে আসেন না। খুব সুন্দরভাবে ছাত্রদের অংকগুলো বুঝিয়ে দেন। কে কতখানি বুঝতে পারল সেটিও যাচাই করেন। কেউ না বুঝলে তাকে বকা দেন না। বোঝানোর ক্ষেত্রে নানা ধরনের উদাহরণ ব্যবহার করেন।
চারিত্রিক গুণাবলি : আকরাম স্যার খুব নম্র ও ভদ্র মানুষ। তাঁকে কখনোই রাগতে দেখা যায় না। কাউকে কোনো কাজ দেওয়ার আগে কীভাবে করতে হবে তা ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন। ছাত্রছাত্রীদের তিনি নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করেন। এককথায়, একজন ভালো শিক্ষক ও ভালো মানুষ হওয়ার জন্য যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, তার সবই তাঁর চরিত্রে রয়েছে।
উপসংহার : আকরাম স্যারকে আমি মন থেকে অনেক শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। তাঁকে অনুসরণ করে আমি নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
২৩. আমার প্রিয় বই
সূচনা : বই হচ্ছে জ্ঞানের ভাণ্ডার। বইয়ের পাতায় অনেক সুন্দর চিন্তা-ভাবনার কথা বলা থাকে। বই পড়ে আমরা স্বপ্ন দেখতে শিখি। একটি ভালো বই পাঠকের মনে স্থায়ী একটা ছাপ রেখে যায়। বারবার সে বইটি পড়তে ইচ্ছে করে। আমারও তেমনি একটি পছন্দের বই আছে।
আমার প্রিয় বই : আমার প্রিয় বইয়ের নাম ‘কাকের নাম সাবানি’। বইটির লেখক হচ্ছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।
বইয়ের কাহিনী : বইটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে সাবানি নামক একটি কাককে ঘিরে। সাবান খেতে ভালোবাসে বলে তার নাম সাবানি বেগম। সাবানির স্বপ্ন সে বড় একজন শিল্পী হবে। সেই লক্ষ্যে মফস্বলের মায়া কাটিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য উড়াল দেয় সে। সেই ভ্রমণ আর সাবানির জীবনের নানা অভিজ্ঞতার বিবরণে পরিপূর্ণ বইটি।
ভালো লাগার কারণ : কিছু বই আছে যেগুলো পড়লে আনন্দ পাওয়ার পাশাপাশি অনেক কিছু শেখা যায়। ‘কাকের নাম সাবানি’ ঠিক তেমনই একটি বই। এ বইয়ের কাহিনীটি অসাধারণ। আর কাহিনীর ভেতরেই রয়েছে শেখার মতো অনেক উপাদান। সাবানি আর তার বন্ধু কোকিলের মধ্যকার ভালোবাসা আমাকে সত্যিকারের বন্ধুত্ব সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। ‘মধুকণ্ঠী’ নামক কোকিলটি মারা গেলে সাবানি খুব দুঃখ পায়।
তার কষ্টের কথা পড়ে আমারও কান্না পেয়ে গিয়েছিল। শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করার জন্য সাবানিকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছিল। তার ডানা কাটা পড়েছিল, এমনকি জেলেও যেতে হয়েছিল তাকে। তারপরও প্রবল আত্মবিশ্বাসের জোরে সাবানি একসময় সফল হয়। শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে পুরস্কারও পায়।
একতাবদ্ধ হওয়ার গুরুত্ব, পরোপকার, লোভ না করা ইত্যাদি অনেক কিছুই লেখক এই বইটিতে গল্পচ্ছলে উল্লেখ করেছেন। গল্পে সাবানি বেগমের মজার সব কাণ্ডকারখানাও আমাকে প্রচণ্ড আকর্ষণ করেছে। এসব কারণেই বইটি আমার এত ভালো লেগেছে।
উপসংহার : ‘কাকের নাম সাবানি’ বইটি একবার পড়া ধরলে শেষ না করে ওঠা যায় না। কয়েক বার পড়া হয়ে গেলেও আমার ইচ্ছা হয় বইটি আবার পড়ি। বইটি আমাকে অপরিসীম আনন্দ দিয়েছে।
২৪. ফুটবল খেলা
অথবা, আমার প্রিয় খেলা
ভূমিকা : ফুটবল অত্যন্ত চমৎকার একটি উত্তেজনাপূর্ণ খেলা। এ খেলার সূচনা হয় চীনে। বর্তমানে সারা বিশ্বে এ খেলাটি তুমুল জনপ্রিয়। আমার প্রিয় খেলাও ফুটবল।
ফুটবল মাঠের বর্ণনা : একটি সমতল মাঠে ফুটবল খেলা হয়। মাঠের চারদিক সীমারেখা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। লম্বালম্বি দু বিপরীত প্রান্তে দুটি গোলপোস্ট থাকে।
খেলার বর্ণনা : একটি বল মাঠের মাঝামাঝি স্থাপন করা হয়। দুটি দলের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকে। তাদের ভেতর একজন করে গোলরক্ষক থাকে গোলপোস্ট পাহারায়। মাঝের দশ মিনিট বিরতি ছাড়া ৪৫ মিনিট করে মোট ৯০ মিনিট খেলা হয়। সময় শেষে যে দল গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকে তারাই জয়ী হয়।
পরিচালক : যিনি ফুটবল খেলা পরিচালনা করেন তাঁকে বলা হয় রেফারি। খেলার সকল ব্যাপারে তাঁর সিন্ধান্তই চূড়ান্ত। তাঁর নির্দেশে খেলা আরম্ভ এবং শেষ হয়। কোনো খেলোয়াড় নিয়ম ভঙ্গ করলে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে তাঁর নির্দেশ প্রদান করেন। মাঠের দুপাশে দুজন লাইন্সম্যান তাঁর কাজে সাহায্য করেন।
খেলার নিয়মকানুন : ফুটবল খেলার কতকগুলো নিয়ম আছে। গোলরক্ষক ছাড়া অন্য কেউ হাত দিয়ে বল ধরলে ‘হ্যান্ড বল’ ধরা হয়। বল সীমানার বাইরে চলে গেলে ‘আউট’ ধরা হয়। অন্যপক্ষের খেলোয়াড়কে অহেতুক ধাক্কা দিলে বা পা লাগিয়ে ফেলে দিলে ‘ফাউল’ ধরা হয়।
কোনো পক্ষ নিজ গোলপোস্টের সীমানায় হ্যান্ডবল করলে বা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ফাউল করলে ‘পেনাল্টি’ দেওয়া হয়। আর প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে বল যদি নিজ গোলপোস্টের পার্শ্ব সীমানার বাইরে চলে যায় তবে অপরপক্ষ ‘কর্নার’ লাভ করে। বল গোলপোস্টে প্রবেশ করলে সেটিকে ‘গোল’ হিসেবে ধরা হয়।
উপকারিতা : ফুটবল খেলা বেশ আনন্দদায়ক। এ খেলা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। এতে দেহের সকল অংশ উত্তমরূপে পরিচালিত হয় বলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ সবল ও দৃঢ় হয়। খেলোয়াড়দের কতগুলো নিয়ম মেনে খেলতে হয় বলে তারা নিয়মানুবর্তিতা, কর্মতৎপরতা এবং একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করার শিক্ষা লাভ করে।
উপসংহার : ফুটবল খুবই আনন্দময় ও উপকারী খেলা। এ খেলা খেলোয়াড় ও দর্শক উভয়ের উত্তেজনা বাড়ায়। যে কোনো বয়সী মানুষের জন্য এটি একটি ভালো ব্যায়াম। এ খেলা সহযোগিতা ও শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষা দেয়। তাই ফুটবল আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা।
আরো পড়ুনঃ
-
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ভাবুক ছেলেটি গল্প প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | অবাক জলপান নাটকটির প্রশ্ন উত্তর | PDF
২৫. আমার জীবনের লক্ষ্য
সূচনা : একটি সফল ও সার্থক জীবন পাওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ। মানুষের জীবন ছোট কিন্তু তার কর্মক্ষেত্র অনেক বড়। এ ছোট জীবনে উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করতে হলে প্রত্যেক মানুষকে জীবনের শুরুতেই সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়।
লক্ষ্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা : জীবন গঠনের জন্য জীবনের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। লক্ষ্যহীন জীবন হলো হালবিহীন নৌকার মতো। তাই লক্ষ্যস্থির না করলে সফলতা পাওয়া অসম্ভব। প্রতিটি মানুষকে জীবনের শুরুতে সঠিক চিন্তা ভাবনা করে লক্ষ্য ঠিক করে সেটাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে।
আমার জীবনের লক্ষ্য : আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। আমার ইচ্ছা বড় হয়ে আমি একজন ক্রিকেটার হব।
লক্ষ্য নির্ধারণের কারণ : সাধারণত মানুষের জীবনের লক্ষ্য থাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক ইত্যাদি হওয়া। কিন্তু মানুষের যে কাজটি ভালো লাগে সেটির চালিয়ে গেলেই বেশি সফলতা পাওয়া যায়। ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার ভালোলাগা অত্যন্ত প্রবল। ক্রিকেটারদের দেশপ্রেম, মনোবল ও সুশৃঙ্খল জীবন আমাকে অত্যন্ত আকর্ষণ করে।
এ কারণেই আমি ক্রিকেটার হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছি। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেটে বাংলাদেশেরও একটি শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এখন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে।
লক্ষ্য পূরণে করণীয় : জীবনের লক্ষ্য পূরণে আমাকে এখন থেকেই মনোযোগী হতে হবে। শুধু ভালো ক্রিকেট খেললেই ভালো ক্রিকেটার হওয়া যায় না। সেই সাথে পড়াশোনায়ও ভালো হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই ক্রিকেটের সব আধুনিক দিকগুলো ঠিকঠাক বুঝতে পারব। এখন থেকেই ক্রিকেটের সব খুঁটিনাটি বিষয়ে আমাকে জানতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।
উপসংহার : বাংলাদেশের ক্রিকেট অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। একজন আদর্শ ক্রিকেটার হয়ে আমি সে সম্ভাবনাকে সত্যে পরিণত করতে চাই। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে চাই।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।