পঞ্চম শ্রেণি | বাংলা ব্যকরণ | প্রবন্ধ রচনা ৬-১০ | PDF: পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বিষয়টির প্রবন্ধ রচনা অংশ হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা সমুহ নিয়ে আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
৬. বাংলাদেশের নদ-নদী
সূচনা : বাংলাদেশের বুক জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত শত নদী। এই নদীগুলো বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলার মানুষের জীবনযাপনের সাথে এগুলো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশকে তাই বলা হয় নদীমাতৃক দেশ।
প্রধান নদ-নদী : বাংলাদেশে শাখা-প্রশাখাসহ নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ২৩০টি। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী।
পদ্মা : পদ্মা বাংলাদেশের প্রধান নদী। ভারতের ওপর দিয়ে গঙ্গা নামে প্রবাহিত হয়ে রাজশাহী অঞ্চল দিয়ে পদ্মা নাম ধারণ করে এটি আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে।
মেঘনা : মেঘনা বাংলাদেশের আরেকটি প্রধান নদী। ভারতের বরাক নদীটি সুরমা ও কুশিয়ারা নামের দুটি শাখায় ভাগ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। চাঁদপুরের কাছে এসে এ দুটি নদী মিলিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করেছে।
যমুনা : তিব্বতের সানপু নদীটি আসামের মধ্য দিয়ে যমুনা নাম নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ধরলা, তিস্তা ও করতোয়া যমুনার প্রধান উপনদী। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী যমুনার প্রধান শাখানদী।
ব্রহ্মপুত্র : হিমালয় পর্বতের কৈলাশ শৃঙ্গের মানস সরোবর হ্রদ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি। নদীটি তিব্বত ও আসামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের কাছে এসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
অন্যান্য নদী : এ নদীগুলো ছাড়াও আমাদের দেশে রয়েছে আরও অনেক নামকরা নদ-নদী। সেগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী, কুশিয়ারা, বুড়িগঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, মধুমতি, সুরমা, তিস্তা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আরো দেখুন
নদীর সৌন্দর্য : বাংলাদেশের নদীগুলোর সৌন্দর্য তুলনাহীন। নদীর বুকের সোনালী স্রোত, পাল তুলে ভেসে চলা নৌকা, নদীর পাড়ের ছবির মতো ঘরবাড়ি ও গাছপালা সবকিছু মিলে অসাধারণ দৃশ্য সৃষ্টি করে। নদীর দু ধারের কাশবন, বাড়ি-ঘর সবকিছু ছবির মতো লাগে। বর্ষায় পানিতে ভরে গেলে নদ-নদীগুলো আরও প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে।
উপকারিতা : নদ-নদীগুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। আমরা নদীর পানি নানা কাজে ব্যবহার করি। নদীপথে নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমারে করে অতি সহজে ও কম খরচে যাতায়াত করা যায়। বিভিন্ন নদ-নদীতে মাছ ধরে জেলেরা জীবিকা নির্বাহ করে। নদীর পলিমাটি ফসলি জমিগুলোকে উর্বর করে।
অপকারিতা : অতি বর্ষণে কিছু নদীর পানি বেড়ে অনেক সময় বন্যা হয়। ফলে এসব নদীর দুপাশের ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত ডুবে যায়। নদীভাঙনে গৃহহীন হয় অনেক পরিবার।
উপসংহার : বাংলাদেশ নদীর দেশ। তাই এদের বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। নদ-নদীর অবদানেই আমাদের এ বাংলাদেশ সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা হয়েছে।
৭. বাংলাদেশের মৃৎশিল্প
অথবা, শখের মৃৎশিল্প
ভূমিকা : বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পকলার পরিচয় পাওয়া যায় মৃৎশিল্প বা মাটির শিল্পে। এটি আমাদের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির অংশ। মাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়।
মৃৎশিল্প কী : যে কোনো কিছু সুন্দরভাবে করাকেই বলা হয় শিল্প। এতে আমাদের রুচি ও ভালোলাগার প্রকাশ ঘটে। মাটির তৈরি শিল্পের কাজকে বলা হয় ‘মাটির শিল্প’ বা মৃৎশিল্প।
মৃৎশিল্পের উপকরণ : মৃৎশিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি। তবে সব ধরনের মাটি দিয়ে এ শিল্পের কাজ চলে না। মৃৎশিল্পের জন্য প্রয়োজন হয় পরিষ্কার এঁটেল মাটি। কাঠের চাকায় মাটির তাল লাগিয়ে নানা আকার-আকৃতির মাটির জিনিস তৈরি করা হয়।
নানা ধরনের মৃৎশিল্প : বাংলাদেশের কুমোররা তাদের হাতের নৈপুণ্য আর কারিগরি দক্ষতার মিশেলে তৈরি করেন নানা ধরনের মৃৎশিল্প। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাসন-কোসন, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, শখের হাঁড়ি, নানা রকমের খেলনা পুতুল ইত্যাদি। বিভিন্ন লোকজ মেলায় এগুলোর পশরা নিয়ে তাঁদের বসতে দেখা যায়।
পোড়ামাটির ঐতিহ্য : ‘টেরাকোটা’ একটি ল্যাটিন শব্দ। ‘টেরা’ শব্দের অর্থ মাটি আর ‘কোটা’ শব্দের অর্থ পোড়ানো। পোড়ামাটির তৈরি মানুষের ব্যবহারের সবরকম জিনিস টেরাকোটা হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলার অনেক পুরনো শিল্প, আমাদের দেশের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই টেরাকোটা। এদেশে কয়েকশ বছর আগেই টোরাকোটা বা পোড়ামাটির কাজ শুরু হয়।
আমাদের দেশের এতিহ্যবাহী প্রাচীন সভ্যতার নির্দশন শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধস্তূপ ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরে টেরাকোটা বা পোড়ামাটির কাজ রয়েছে। বাগেরহাট ষাটগম্বুজ মসজিদে পাওয়া গেছে পোড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ। স¤প্রতি নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরেও মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে নানা ধরনের সুন্দর মাটির পাত্র আর ফলক। টেরাকোটা বা পোড়ামাটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব।
বর্তমান অবস্থা : একটা সময় মাটির তৈরি জিনিসপত্র ছিল বাঙালির গৃহস্থালীর অপরিহার্য উপাদান। তবে প্লাস্টিক, স্টীল ইত্যাদিতে নির্মিত সামগ্রী এসে পড়ায় মৃৎশিল্পের কদর কমতে থাকে। তবে বর্তমানে আমাদের দেশে এ শিল্পের চাহিদা বেড়েছে। মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বিদেশী ক্রেতাগণও। তবে যথাযথ সরকারি সাহায্য পেলে মৃৎশিল্পের আরও স¤প্রসারণ সম্ভব।
উপসংহার : মৃৎশিল্প আমাদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। আমাদের দেশের মানুষের মন যে শিল্পীর মন তা এই শিল্পের কাজ দেখলেই বোঝা যায়। এ শিল্পের উন্নতির জন্য আমাদের সবাইকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে।
৮. বাংলাদেশের প্রাণিজগৎ
সূচনা : প্রাণিজগৎ নানা চমক আর বিস্ময়ে ভরা। পৃথিবীর সব স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা প্রজাতির অসংখ্য প্রাণী। বাংলাদেশেও অনেক ধরনের প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের গৃহপালিত প্রাণী : বাংলাদেশের গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, ঘোড়া, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি। বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য কিংবা সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা শখের বশে হাতি, ঘোড়া ইত্যাদিও বাড়িতে পোষেন।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী : বাংলাদেশের প্রকৃতির কোলে অনেক প্রাণী স্বাধীনভাবে বিচরণ করে। ভাওয়াল অঞ্চল ও পার্বত্যাঞ্চলের বনভ‚মি এবং সুন্দরবন বাংলাদেশের প্রধান বন। এসব বনে হাতি, বানর, হনুমান, বনমোরগ, সাপ ইত্যাদি প্রাণী বাস করে। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীখ্যাত।
হরিণ সুন্দরবনের সৌন্দর্য। তাছাড়া বানর, অজগর, কুমির ইত্যাদিও আছে সুন্দরবনে। এককালে গণ্ডার, ওলবাঘ, চিতাবাঘ ইত্যাদির বিচরণ থাকলেও সময়ের বিবর্তনে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের পাখি : পাখি বাংলাদেশের প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভোরবেলা পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙে। বাংলাদেশে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের অসংখ্য পাখির অবস্থান থাকায় এ দেশকে বলা হয় পাখির দেশ। বাংলাদেশে প্রায় ৬৪টি প্রজাতির ৬০০ রকমের পাখির বসবাস।
এর মধ্যে ৪০০ রকমের পাখি সারা বছর বাংলাদেশে অবস্থান করে। আর বাকিরা শীতের সময়ে অতিথি হয়ে এদেশে আসে। দোয়েল, ময়না, টিয়া, শালিক, ঘুঘু, চড়–ই, ফিঙ্গে, মাছরাঙা, আবাবিল, কাক, কোকিল, বাবুই ইত্যাদি আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য পাখি।
বাংলাদেশের জলজপ্রাণী : বাংলাদেশের খাল-বিল ও সাগরে রয়েছে অসংখ্য জলজপ্রাণী। বৈচিত্র্যপূর্ণ এসব জলজপ্রাণীদের মধ্যে অন্যতম হলো মাছ। বাংলাদেশে দুধরনের মাছ পাওয়া যায়। যথা- স্বাদু বা মিঠা পানির মাছ ও লোনা পানির মাছ। সামুদ্রিক লোনা পানির মাছের মধ্যে ইলিশ প্রধান। এটি আমাদের জাতীয় মাছ।
এছাড়া রয়েছে রূপচান্দা, ছুরি, লইট্যা, লাক্ষা প্রভৃতি। মিঠা পানির বড় মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, শোল, বোয়াল, চিতল, গজার ইত্যাদি সুপরিচিতি। আর ছোট মাছের মধ্যে কৈ, চিংড়ি, শিং, মাগুর, পুঁটি, মিনি, পাবদা, টাকি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য জলজপ্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কচ্ছপ, শামুক, কাঁকড়া, গুঁইসাপ, শুশুক ইত্যাদি।
উপকারিতা : গৃহপালিত প্রাণীদের থেকে আমরা মাংস, ডিম, দুধ, চামড়া ইত্যাদি পেয়ে থাকি। পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে জলজপ্রাণীদের ভ‚মিকা অনন্য। বন্যপ্রাণীসমূহ আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
উপসংহার : বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। এদেশের প্রাণিজগৎ সেই সম্পদেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে আমাদের অসচেতনতার ফলে দিন দিন এদেশের প্রাণিজগৎ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির নিয়ম রক্ষায় ও আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এদের টিকিয়ে রাখতে সবাইকে যথাযথ ভ‚মিকা রাখতে হবে।
৯. সুন্দরবনের প্রাণী
সূচনা : অপার প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার আমাদের এই বাংলাদেশ। সে ঐশ্বর্যের অন্যতম অংশ সুন্দরবন। এ বনে রয়েছে নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণীর বসবাস।
সুন্দরবনের অবস্থান : বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে সুন্দরবনের অবস্থান। এর আয়তন প্রায় ৪,১১০ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন।
সুন্দরবনের প্রধান প্রাণীসমূহ : সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। এটি আমাদের জাতীয় পশু। এর সৌন্দর্যের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এ বনের হরিণের সৌন্দর্যও নজর কাড়ার মতো। সুন্দরবনের নদীতে রয়েছে অনেক প্রজাতির মাছ ও কুমির। গাছে গাছে আছে অনেক প্রজাতির পাখি। এ বনের অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঘড়িয়াল, অজগর, বানর, উল্লুক, শুকর, বন বিড়াল ইত্যাদি।
সুন্দরবনের অবলুপ্ত প্রাণীসমূহ : এক সময় সুন্দরবনে আরও অনেক ধরনের প্রাণী দেখা যেত। গণ্ডার, হাতি, চিতাবাঘ, ওলবাঘ ইত্যাদি প্রাণীসমূহে একসময় এ বন পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু মানুষের লোভের কারণে এগুলো অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
সুন্দরবণের প্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা : নির্বিচারে জীব ধ্বংসের ফলে দিন দিন সুন্দরবনের প্রাণীকুল বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ঘড়িয়াল, বন বিড়ালসহ এ বনের অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব এখন হুমকির সম্মুখীন।
সুন্দরবনের সমস্ত প্রাণীই আমাদের জাতীয় সম্পদ। এদের রক্ষা না করতে পারলে পরিবেশের স্বাভাবিক নিয়ম ধ্বংস হবে। তাই আমাদের উচিত এই প্রাণীগুলো সংরক্ষণে ভ‚মিকা রাখা।
উপসংহার : সুন্দরবনের প্রাণিকল আমাদের জীববৈচিত্র্যের অমূল্য ভাণ্ডার। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের অবদান রয়েছে। তাই এদের রক্ষার ব্যাপারে সকল মহলের সদিচ্ছা ও সহায়তা প্রয়োজন।
আরো পড়ুনঃ
-
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ভাবুক ছেলেটি গল্প প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | অবাক জলপান নাটকটির প্রশ্ন উত্তর | PDF
১০. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতীয় জীবনের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। মহান এই সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি প্রমাণ করেছে যে তারা কোনো অন্যায়ের সামনেই মাথা নত করে না। আর এর ফলাফল হিসেবে আমরা পেয়েছি স্বাধীন স্বদেশ ভ‚মি।
পটভূমি : ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গেলে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিল- পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী অর্থাৎ বাঙালিদের উপর নানাভাবে শোষণ ও নির্যাতন চালাত। সব ক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চিত করত।
নিরীহ বাঙালি ধীরে ধীরে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলেও পাকিস্তানি সামরিক সরকার শাসনভার হস্তান্তর করল না। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন।
মুক্তিযুদ্ধের বিবরণ : ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানিরা বর্বর আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১০ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। ১১টি সেক্টরে দেশকে ভাগ করে কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-পুলিশ, আনসার সবাই মিলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
৪ঠা ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনী আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিলিত হয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তাদের সম্মিলিত আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরাজয় বুঝতে পেয়ে তারা দেশদ্রোহী রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের সহায়তায় এদেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা : মুক্তিযুদ্ধের ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বীকৃতি। পেয়েছি আমাদের ন্যায্য অধিকার। তবে এতসব অর্জনের মাঝে হারানোর বেদনাও আমাদের রয়েছে। স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন ত্রিশ লক্ষ দেশপ্রেমিক জনতা। নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য মা-বোন। তাই মুক্তিযুদ্ধ আমাদের একই সাথে গর্বের ও বেদনার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
উপসংহার : মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায়। এর চেতনাকে নিজেদের মাঝে ধারণ করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারব।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।