পঞ্চম শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ২ | বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর: পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়টির ২য় অধ্যায়টি হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
অধ্যায় ২ – ব্রিটিশ শাসন কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন ও উত্তর
যোগ্যতাভিত্তিক
প্রশ্ন-১ : কত সালে পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল? পলাশির যুদ্ধ কেন হয়েছিল? পলাশির যুদ্ধের তিনটি ফলাফল লেখ।
উত্তর : ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল।
পলাশি যুদ্ধের কারণ : নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহনের পর থেকেই নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হতে থাকেন। নানা কারণে নবারের সাথে ইংরেজ বনিকদের বিরোধ দেখা দেয়। ইংরেজদের সাথে নবাব বিরোধী শক্তিগুলো একজোট হয়ে ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়। এসবের জের ধরে পলাশির প্রান্তরে নবাবের সৈন্যদের সাথে ইংরেজ শক্তির যুদ্ধ হয়।
পলাশির যুদ্ধের তিনটি ফলাফল :
১. বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পরাজিত হন ও পরে তাকে হত্যা করা হয়।
২. বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সূচনা হয়।
৩. বাংলায় ইংরেজদের একচেটিয়া ব্যবসায়ে আর কোনো বাধা থাকে না।
এই বিভাগে আরো পড়ুন
প্রশ্ন-২ : বাংলায় নব জাগরণের ফলাফল কী ছিল? পাঁচটি বাক্যে লিখ।
উত্তর : নবজাগরণের ফলে উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে। এরই ফলে ১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ নামক রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। বাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালে তৎকালীন বাংলা প্রদেশেকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পুর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে বাংলায়।
প্রশ্ন-৩ : পলাশির যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের কারণ কী? এ যুদ্ধের ফলাফল কী ঘটছিল?
উত্তর : নবাব আলিবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর ১৭৫৬ সালে সিরাজ-উদ-দৌলা মাত্র ২২ বছর বয়সে বাংলার নবাব হন। কিন্তু সিংহাসনে আরোহণ করেই তরুণ নবাবকে নানারকম বিরোধী শক্তির মুখোমুখি হতে হয়। একদিকে ছিল ইংরেজদের ক্রমবর্ধমান শক্তি, আর অন্যদিকে খালা ঘসেটি বেগম, সেনাপতি মীর জাফর, রায়দুর্লভ ও জগৎশেঠের মতো লোকদের ষড়যন্ত্র। এরই ফলশ্রæতিতে ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের মাধ্যমে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতন ঘটে।
যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের ফলে বাংলার শাসন ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। ইংরেজদের শাসনের নামে শোষণের সূচনা হয়।
প্রশ্ন-৪ : তিতুমীর কোথায় এবং কীভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন?
উত্তর : জমিদার ও ইংরেজদের শোষণ থেকে এদেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষকে রক্ষা করাই ছিল তিতুমীরের প্রধান উদ্দেশ্য। ইংরেজদের বন্দুক-কামানের বিরুদ্ধে তিতুমীর বারাসতের কাছে নারকেলবাড়িয়ায় একটি বাঁশের কেল্লা বা দুর্গ নির্মাণ করে যুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু ইংরেজদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে তিনি তার বাঁশের কেল্লা রক্ষা করতে পারেননি। ১৮৩১ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও নিহত হন।
প্রশ্ন-৫ : ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের গুরুত্ব পাঁচটি বাক্যে লেখ।
উত্তর : ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের মাধ্যমে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। মূলত এটি ছিল প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম। ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে এ বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি কঠোরভাবে সিপাহি বিদ্রোহ দমন করলেও এই বিদ্রোহের ফলেই ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের শাসনের অবসান ঘটে। শুরু হয় ব্রিটিশরাজ তথা রানি ভিক্টোরিয়া শাসন।
প্রশ্ন-৬ : ইংরেজরা এদেশে কীভাবে শাসন কাজ পরিচালনা করে?
উত্তর : শাসনকাজে অভিজ্ঞতা না থাকায় ইংরেজ বণিকরা সাথে সাথেই নিজেদের হাতে শাসনভার তুলে নেয়নি। তাদের কথা শুনবে এমন দেশীয় লোকদের দ্বারা শাসন কাজ চালায়। তারা প্রথমে মীর জাফর ও পরে মীর কাশিমকে সিংহাসনে বসায়। মীর কাশিম ছিলেন কিছুটা স্বাধীনচেতা। ফলে ইংরেজদের সাথে তাঁর দুবার যুদ্ধ হয়। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন। এরপর থেকেই ইংরেজরা পুরোপুরি ক্ষমতা দখলে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে।
১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত একশ বছর এদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন চলে, যা ইতিহাসে কোম্পানির শাসন নামে পরিচিত। প্রায় একশ বছর পর ১৮৫৭ সালে কোম্পানির নীতি ও শোষণের বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহ দেখা দেয়। কোম্পানির শাসন রদ করে ১৮৫৮ সালে বাংলাসহ ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ সরকার সরাসরি নিজ হাতে তুলে নেয়, যা চলে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত।
প্রশ্ন-৭ : বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের স্বরূপ কেমন ছিল?
উত্তর : স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ১৯০৮ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত বাংলায় বিভিন্ন পর্যায়ে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল। বিপ্লবীদের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ ছিল সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। বিপ্লবীরা শক্তি ও বল প্রয়োগ করে এদেশ থেকে ব্রিটিশ শক্তিকে উৎখাত করতে চেয়েছিল। স্বাধীনতা অর্জনের জন্যই বিপ্লবীরা যেকোনো অবস্থাতে জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আন্দোলন চালিয়েছিল।
ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেয়ার কারণে ক্ষুদিরাম ও মাস্টারদাকে ফাঁসি দেয়া হয়। আর সফল অভিযান শেষে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়া এড়ানোর জন্য প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আত্মহুতি দিয়েছিলেন। বিপ্লবীরা জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করে জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বেগবান করতে ভ‚মিকা রেখেছে।
প্রশ্ন-৮ : বাংলার শিক্ষা ও অর্থনীতিতে ব্রিটিশদের প্রভাব পাঁচটি বাক্যে লেখ।
উত্তর : বাংলার শিক্ষা ও অর্থনীতিতে ব্রিটিশ শাসনের কিছু খারাপ প্রভাব ও কিছু ভালো প্রভাব পড়েছিল। ব্রিটিশ শাসনের প্রভাবে বাংলার অনেক কারিগর বেকার ও অনেক কৃষক গরিব হয়ে যায়। অল্পসংখ্য জমিদার শ্রেণি অনেক জমির মালিক হন। আবার নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হয়। এর প্রভাবে উনিশ শতকে বাংলায় নবজাগরণ ঘটে।
আরো পড়ুনঃ
-
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | ভাবুক ছেলেটি গল্প প্রশ্ন উত্তর | PDF
- ৫ম শ্রেণি | বাংলা | অবাক জলপান নাটকটির প্রশ্ন উত্তর | PDF
সাধারণ
প্রশ্ন-৯ : তিতুমীরের বিদ্রোহ সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে ১৯ শতকে তিতুমীরের বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। বারাসতের কাছে নারকেলবাড়িয়া গ্রামে ইংরেজ ও জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেতে, বিদ্রোহী নেতা তিতুমীর একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। সেখানে ইংজেরদের সাথে তাঁর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধরত অবস্থায় তিনি মারা যান।
প্রশ্ন-১০ : বাংলার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইংরেজ শাসনের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ইংরেজদের এদেশে শাসনভার গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য ছিল শোষণ ও নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি। এতে করে দেশের অর্থনৈতিক খাত কৃষি ও তাঁত শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়।
ইংরেজ বণিকদের প্রাধান্যের কারণে দেশীয় ব্যবসা পর্যুদস্ত হয়। শিল্প বাণিজ্য নানাভবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসংখ্য কারিগর বেকার হয়ে পড়ে। কৃষক গরিব হয়ে যায়। তাছাড়া ১৭৭০ সালে দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। তাদের শাসনকালে প্রচুর অর্থ ও সম্পদ এদেশ থেকে পাচার হয়ে যায়।
প্রশ্ন-১১ : বাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে ইংরেজ শাসনামলের প্রভাব বর্ণনা কর।
উত্তর : ইংরেজ শাসনামলে বাংলার অধিকাংশ মানুষ ছিল কৃষক ও দরিদ্র। অল্পসংখ্যক মানুষ ছিল ধনী ও বিশেষ সুবিধাভোগী, নারীদের অবস্থা একেবারে পিছিয়ে ছিল। এমন অবস্থা উত্তরণের জন্য ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন হয়।
শিক্ষা বিস্তারে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রমে একটা শিক্ষিত শ্রেণি গড়ে ওঠে। ইংরেজ শাসন বাংলার শিক্ষা ক্ষেত্রে তাই বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। ইংরেজ শিক্ষার প্রভাবে বাংলার রাজনৈতিক জীবনেও পরিবর্তন ঘটেছিল।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।