পঞ্চম শ্রেণি | প্রাথমিক বিজ্ঞান | অধ্যায় ১ | বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর | PDF: পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক বিজ্ঞান বিষয়টির ১ম অধ্যায়টি হতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
৩. বর্ণনামূলক প্রশ্ন :
প্রশ্ন \ ১ \ খাদ্যশৃঙ্খলে কীভাবে সাপ এবং ঈগল একই রকম তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : খাদ্য শৃঙ্খলে সাপ এবং ঈগল উভয়ই মাংসাশী প্রাণী বলে তারা একই রকম অর্থাৎ একই স্তরের খাদক।
সকল প্রাণীই শক্তির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। সবুজ উদ্ভিদ থেকেই প্রতিটি খাদ্য শৃঙ্খলের শুরু। উদ্ভিদ সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে।
বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তি প্রবাহের এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে খাদ্য শৃঙ্খল বলে। পোকামাকড় উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার ব্যাঙ পোকামাকড়কে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। একইভাবে সাপ ব্যাঙ খায় ও ঈগল সাপ খায়। সুতরা সাপ ও ঈগল উভয়ই মাংসাশী প্রাণী এবং উভয়ই সর্বোচ্চ স্তরের খাদক। তাই খাদ্য শৃঙ্খলে সাপ ও ঈগল একই রকম।
প্রশ্ন \ ২ \ নিচের শব্দগুলো নিয়ে গঠিত খাদ্য শৃঙ্খলের সঠিক ক্রম ব্যাখ্যা কর।
ঈগল, সূর্য, ঘাস, পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ।
উত্তর : ঈগল, সূর্য, ঘাস, পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ-এ শব্দগুলো নিয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খলের সঠিকক্রম হলো :
সূর্য—-ঘাস—-পোকামাকড়—-ব্যাঙ—-সাপ—-ঈগল
সকল শক্তির মূল উৎস সূর্য। সকল প্রাণীই শক্তির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। ঘাস সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। আবার, পোকামাকড় খাদ্য হিসেবে ঘাস খায়। ব্যাঙ পোকামাকড় খায়। একইভাবে, সাপ ব্যাঙ খায় এবং ঈগল সাপ খায়। এভাবে খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে শক্তি প্রবাহ সূর্য থেকে ঈগল পর্যন্ত সঞ্চারিত হয়।
প্রশ্ন \ ৩ \ জীব কীভাবে বায়ুর উপর জীব কীভাবে নির্ভরশীল তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বেঁচে থাকার জন্য জীব বিভিন্ন জড় বস্তুর উপর নির্ভর করে। তার মধ্যে বায়ু অন্যতম। জীব (উদ্ভিদ ও প্রাণী) শ্বসন প্রক্রিয়ায় খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের জন্য বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। আবার সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরিতে বায়ু থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। এভাবেই জীব বেঁচে থাকার জন্য বায়ুর উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন \ ৪ \ উদ্ভিদের জন্য বীজের বিস্তরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাতৃউদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্থানে বীজের ছড়িয়ে পড়াই হলো বীজের বিস্তরণ এ বিস্তরণ নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বিভিন্ন পশু-পাখি এ বীজ বিস্তরণে মুখ্য ভ‚মিকা পালন করে। বীজের বিস্তরণ না ঘটলে কোনো উদ্ভিদ শুধু একটি নির্দিষ্ট স্থানেই জন্মাত।
এতে কোনো অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটলে কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ বীজ বিস্তরণের ফলে পরিবেশে উদ্ভিদের অস্তিত্ব টিকে আছে। তাই উদ্ভিদের জন্য বীজের বিস্তরণ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন \ ৫ \ তোমার টেবিলের উপরে রাখা গাছটি মারা যাচ্ছে। তোমার বন্ধুরা গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে রাখার পরামর্শ দিল। কেন?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় টেবিলে রাখা মরণাপন্ন গাছটির খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য বন্ধুরা গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে রাখার পরামর্শ দিল।
সবুজ উদ্ভিদ পাতায় থাকা ক্লোরোফিলের সাহায্যে মাটিস্থ পানি, বায়ুস্থ কার্বন ডাইঅক্সাইড ও সূর্যালোকের উপস্থিতিতে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। বাস্তুসংস্থানে থাকা উপাদানগুলোর মধ্যে একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই খাদ্য উৎপাদক। কিন্তু সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে এ প্রক্রিয়াটি বন্ধ থাকে। তাই টেবিলে রাখা গাছটি মারা যাচ্ছিল। গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে এলে তা আবার সজীব হয়ে উঠবে।
কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন ও উত্তর
যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন :
প্রশ্ন \ ১ \ উদ্ভিদ কোন প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে? উদ্ভিদ কীভাবে প্রাণীকে সাহায্য করে তার একটি উদাহরণ লেখ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তোমার এলাকায় উদ্ভিদ সংরক্ষণের তিনটি উপায় লেখ।
উত্তর : উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে।
প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। উদ্ভিদ সূর্যের আলো, মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন করে প্রাণীকে সাহায্য করে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমার এলাকায় উদ্ভিদ সংরক্ষণের ৩টি উপায় হলো :
পরিবেশ সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা জরুরি। যদি বৃক্ষ নিধন করা হয় তবে ১টি কাটলে ২টি লাগাতে হবে।
বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের মাধ্যমে উদ্ভিদ সংরক্ষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা সম্ভব।
প্রশ্ন \ ২ \ তুমি কিছু গাছ রোপণ করবে। গাছের বৃদ্ধির জন্য তোমাকে মাটি, পানি এবং পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করতে হবে। গাছটি অন্ধকারে রাখলে কী ঘটবে? গাছটিতে পানি না দিলে কী ঘটবে? বালিতে রোপণ করলে কী ঘটবে তা তিনটি বাক্যে লেখ।
উত্তর : গাছটি অন্ধকারে রাখলে মারা যাবে, কারণ উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে সূর্যালোকের প্রয়োজন।
পানি না দিলে গাছটি অল্প দিনেই মারা যাবে। কারণ, সূর্যালোকের উপস্থিতিতে খাদ্য তৈরি করতে পানির দরকার।
বালিতে রোপণ করলে গাছটি ধীরে ধীরে মারা যাবে কারণ বালিতে তুলনামূলকভাবে পানির পরিমাণ কম। গাছটি খাদ্য তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পানি পাবে না।
প্রশ্ন \ ৩ \ পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অক্সিজেনের সমতা রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ কী ভ‚মিকা রাখে?
উত্তর : বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ ২০.৬% এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ০.০৩%। এ শতকরা পরিমাণ মোটামুটিভাবে সমান থাকে এবং এর জন্য সালোকসংশ্লেষণের ভ‚মিকা অপরিসীম। পুরো জীবগোষ্ঠী শ্বাসকার্য চালানোর জন্য বাতাসের অক্সিজেন ব্যবহার করে এবং তার পরিবর্তে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে।
এ ঘটনা যদি ক্রমাগত চলতে থাকে তবে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যেত এবং পরিবেশ দূষিত হয়ে অক্সিজেনের অভাবে জীবক‚ল বেঁচে থাকত না। প্রকৃতপক্ষে তা ঘটে না।
সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে এবং বাতাসে অক্সিজেন ত্যাগ করে। ফলে বায়ুতে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমতা বজায় থাকে।
প্রশ্ন \ ৪ \ বাস্তুসংস্থান কী? পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণের ৪টি প্রয়োজনীয়তা লেখ।
উত্তর : কোনো স্থানের সকল জীব ও জড় এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক ক্রিয়াই হলো ওই স্থানের বাস্তুসংস্থান।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণের ৪টি প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলো :
১. উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির সময় কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে ও বায়ুতে অক্সিজেন ছাড়ে। প্রাণী শ্বাসকার্যে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে। এতে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
২. প্রাণী মারা গেলে তার দেহ মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এগুলো উদ্ভিদের বাঁচার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
৩. বিভিন্ন প্রাণী উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্য করে।
৪. বিভিন্ন প্রাণী ও কীটপতঙ্গের আবাসস্থল উদ্ভিদ।
প্রশ্ন \ ৫ \ উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণে আমাদের করণীয় আলোচনা কর।
উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে আমরা খাদ্য ও ওষুধসহ বেঁচে থাকার নানা উপকরণ পাই। আমাদের জীবনধারণের জন্য এগুলো অপরিহার্য। এগুলো সংরক্ষণে আমাদের করণীয়গুলো হলো :
১. পরিবেশ দূষিত হয় এমন ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
২. বসতবাড়ি ও বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. গাছপালা কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। অধিক পরিমাণ বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
৪. উদ্ভিদ ও পশুপাখির যতœ নিতে হবে।
৫. পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে নিজ এলাকায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
প্রশ্ন \ ৬ \ তুমি কী কী কারণে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল, ৫টি বাক্যে লেখ।
উত্তর : আমি যেসব কারণে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল তা হলো
১. উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যে অক্সিজেন ত্যাগ করে আমি তা শ্বাসকার্যের মাধ্যমে গ্রহণ করে বেঁচে থাকি।
২. আমি উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক তন্তু নির্মিত পোশাক পরিধান করি।
৩. উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ যেমন কাণ্ড, শাখা ও ফলমূল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি।
৪. বাসস্থান বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরিতে আমি উদ্ভিদ ব্যবহার করি।
৫. আমি উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ওষুধ রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করি।
প্রশ্ন \ ৭ \ বাস্তুসংস্থান কী? এর উপাদানগুলোর উপর মানুষ নির্ভরশীল কেন? একটি বাস্তুসংস্থানে ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
উত্তর \ বাস্তুসংস্থান হলো কোনো স্থানের সকল জীব ও জড় এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক ক্রিয়া।
মানুষ বাস্তুসংস্থানের জীব ও জড় উপাদানের উপর খাদ্য ও বেঁচে থাকার বিভিন্ন নিয়ামকের জন্য নির্ভরশীল। যেমন খাদ্যের জন্য মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন জড় উপাদানের মধ্যে শ্বাস গ্রহণের জন্য বায়ু, পান করার জন্য পানি, পুষ্টির জন্য খাদ্য প্রয়োজন। ফসল ফলানো ও বাসস্থানের জন্য প্রয়োজন মাটি। আবার জীবনযাপনের জন্য বাসস্থান, আসবাবপত্র, পোশাক ইত্যাদি প্রয়োজন।
একটি বাস্তুসংস্থানের খাদ্যজালে থাকা ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে ঈগল যেসব প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত সেগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাবে। ঈগল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে ইঁদুর, সাপ, কাঠবিড়ালি ইত্যাদি। তাই ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এতে ইঁদুর ফসলের ক্ষতিসাধন করবে। তৃণজাতীয় উদ্ভিদের পরিমাণ কমে যাবে যা ঘাসফড়িং, খরগোশ ও অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীদেরকে প্রভাবিত করবে। আবার ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে সাপের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এতে খরগোশের জীবন বিপন্ন হবে।
সাধারণ প্রশ্ন :
প্রশ্ন \ ৮ \ খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজালের মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য লেখ।
উত্তর : খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্যজালের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ :
খাদ্যশৃঙ্খল
১. ছোট প্রাণী থেকে শুরু করে বড় প্রাণী পর্যন্ত শৃঙ্খল আকারে শক্তি প্রবাহের যে সরল ধারাবাহিকতা দেখা যায়, তাকে খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয় ।
২. উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা প্রকাশ করে।
২. বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।
৩. খাদ্যশৃঙ্খল শুরু হয় ছোট প্রাণী দিয়ে আর এর সমাপ্তি ঘটে সবচেয়ে বড় প্রাণী দিয়ে।
৪. প্রকৃতিতে একটি অঞ্চলে একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল থাকতে পারে।
৫. খাদ্যশৃঙ্খলের একটি উদাহরণ হলো :তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ—-ঘাস
খাদ্যজাল
১. সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো খাদ্যশৃঙ্খলকে একত্রে বলা হয় খাদ্যজাল।
২. বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।
৩. খাদ্যজাল শুরু হয় একটি খাদ্যশৃঙ্খল দিয়ে আর এর সমাপ্তি ঘটে বেশ কয়েকটি খাদ্যশৃঙ্খল দিয়ে।
৪. সাধারণত একটি বাস্তুসংস্থানে একটি খাদ্যজালের সৃষ্টি করে।
৫. খাদ্যজালের একটি উদাহরণ হলো :ফড়িং—-ব্যাঙ
প্রশ্ন \ ৯ \ উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য কেন মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ? পাঁচটি বাক্যে লেখ।
উত্তর : পরিবেশের মাটি, পানি ও বায়ু সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে।
সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী মাটিতে জšে§, চলাফেরা করে এবং মাটিতে উৎপাদিত প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে।
পানি ছাড়া কোনো উদ্ভিদ ও প্রাণী বাঁচতে পারে না, কারণ উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাণী তার খাদ্য পরিপাক ও অবসন্নতা দূর করতে পানি পান করে।
উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ু থেকে গ্রহণ করে খাদ্য তৈরি করে এবং প্রাণী বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্বাসকার্য চালায়।
সুতরাং বলা যায়, প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
প্রশ্ন \ ১০ \ পরিবেশের জড় ও জীবের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা কর।
উত্তর : পরিবেশে জীব ও জড়ের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। পরিবেশের প্রধান জড় উপাদানগুলো হলো পানি, বায়ু, মাটি, খনিজ উপাদান, আলো এবং তাপমাত্রা। এ উপাদানগুলো ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না। যেমন : উদ্ভিদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য সূর্যালোক, পানি এবং বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করার সময় সমপরিমাণ অক্সিজেন বায়ুতে ত্যাগ করে।
পরিবেশের এই অক্সিজেন গ্রহণ করে প্রাণী শ্বাসক্রিয়া চালায় এবং গৃহীত অক্সিজেনের সমপরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। এ কার্বন ডাইঅক্সাইড উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের কাঁচামাল রূপে ব্যবহার করে। প্রাণীরা খাদ্য গ্রহণ করে সবুজ উদ্ভিদ থেকে। পুষ্টির জন্য উদ্ভিদ মাটি থেকে বিভিন্ন খনিজ উপাদান সংগ্রহ করে। জীবের মৃত্যুর পর দেহের পচনে এ জড় উপাদানগুলো আবার পরিবেশে ফিরে আসে।সুতরাং জীব ও জড় উপাদান একটি নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
প্রশ্ন \ ১১ \ খাদ্যশৃঙ্খল সম্বন্ধে কী জান লেখ।
উত্তর : সকল প্রাণীই শক্তির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। পোকা-মাকড় তৃণজাতীয় উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার ব্যাঙ পোকা-মাকড়কে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। একইভাবে সাপ ব্যাঙ খায় এবং ঈগল সাপ খায়। এভাবেই শক্তি উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে প্রবাহিত হয়। বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তি প্রবাহের এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হলো খাদ্যশৃঙ্খল। সবুজ উদ্ভিদ থেকেই প্রতিটি শৃঙ্খলের শুরু।
প্রশ্ন \ ১২ \ উদ্ভিদ কীভাবে প্রাণীর উপর নির্ভরশীল? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : উদ্ভিদ তার খাদ্য তৈরি, বৃদ্ধি , পরাগায়ন ও বীজের বিস্তরণের জন্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য প্রাণীর ত্যাগ করা কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে। পুষ্টি উপাদানের জন্যও উদ্ভিদ প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। প্রাণীর মৃত দেহ প্রাকৃতিক সারে পরিণত হয়। এ সার পুষ্টি হিসেবে ব্যবহার করে উদ্ভিদ বেড়ে উঠে।
পরাগায়নের ফলে উদ্ভিদের বীজ সৃষ্টি হয়। এই বীজ থেকে আবার নতুন উদ্ভিদ জন্মায়। বিভিন্ন প্রাণী যেমন পাখি, মৌমাছি ইত্যাদি এই পরাগায়নে সাহায্য করে। মাতৃউদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্থানে বীজের ছড়িয়ে পড়াই হলো বীজের বিস্তরণ। বীজের বিস্তার নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। আর এই বিস্তরণেও প্রাণীর ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। এভাবেই পরিবেশে উদ্ভিদ প্রাণীর উপর নির্ভর করে।
আরো পড়তে পারেনঃ
পঞ্চম শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ১ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
পঞ্চম শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ২ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
পঞ্চম শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ৩ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
পঞ্চম শ্রেণি | বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ৫ | সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন \ ১৩ \ প্রাণী ও উদ্ভিদ কীভাবে জড় বস্তুর উপর নির্ভর করে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সকল প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য বায়ু, পানি ও খাদ্যের মতো জড় বস্তুর প্রয়োজন হয়। আবার মাটি ও পানি অনেক প্রাণীর বাসস্থান। যেমন : অনেক পোকা-মাকড়, কেঁচো ইত্যাদি মাটিতে বাস করে। আবার মাছ পানিতে বাস করে। অন্যদিকে উদ্ভিদও বেঁচে থাকার জন্য জড় বস্তুর উপর নির্ভরশীল।
যেমন : সূর্যের আালো, মাটি, পানি বায়ু ইত্যাদি জড় বস্তু ছাড়া উদ্ভিদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। উদ্ভিদ সূর্যের আলো, পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। পানি আবার বিভিন্ন উদ্ভিদের আবাসস্থল। যেমন : শাপলা, কচুরিপানা ইত্যাদি। এভাবেই মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ বেঁচে থাকার জন্য জড় বস্তুর উপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন \ ১৪ \ মানুষ কীভাবে জড় বস্তুর উপর নির্ভরশীল?
উত্তর : পরিবেশের অন্যতম উপাদান হলো জড়। মাটি, পানি, বায়ু, গাড়ি, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি হলো জড় বস্তু। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য এসব জড় বস্তুর উপর নির্ভর করে। যেমন মানুষের শ্বাস গ্রহণের জন্য বায়ু, পান করার জন্য পানি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য খাবার প্রয়োজন। ফসল ফলানো ও বাসস্থান তৈরির জন্য মানুষের মাটি প্রয়োজন।
এ ছাড়াও জীবন যাপনের জন্য বাসস্থান, আসবাবপত্র, পোশাক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রয়োজন। যার সবই জড়বস্তু। আর এভাবেই মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে জড় বস্তুর উপর নির্ভর করতে হয়।
প্রশ্ন \ ১৫ \ শ্বাসকার্য পরিচালনায় উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের উপর নির্ভরশীল কেন?
উত্তর : শ্বাসকার্যের আবশ্যকীয় উপাদান অক্সিজেন, উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় বলে শ্বাসকার্য পরিচালনায় উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সকল জীবিত বস্তুর শ্বাসকার্য অক্সিজেন প্রয়োজন। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির পাশাপাশি পরিবেশে অক্সিজেন ছাড়ে।
সকল জীব শ্বসন প্রক্রিয়ায় এই অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত করে। সবুজ উদ্ভিদ উক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইডকে খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করে। এভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণী অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের আদান-প্রদানের মাধ্যমে শ্বাসকার্য পরিচালনা করে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।