কোরবানির দোয়া ও নিয়ত আরবি ।। ত্যাগের মহিমা নিয়ে বছর ঘুরে আবার এলো মুসলমানদে অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আজহা। এই ঈদে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দিয়ে থাকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
অনেকেই কোরবানির পশু বাছাই, শরীকানা থেকে পশু জবাইয়ের সঠিক নিয়ম জানেন না। অথচ কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ তাকওয়া সমৃদ্ধ একটি ইবাদত। তাই আমাদের উচিত সঠিক নিয়ম জেনে সেই অনুযায়ী পশু কোরবানি করা।
কোরবানির পশু: ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট এই ছয় ধরনের পশু কোরবানি করা যায়। এর বাইরে অন্য কোনো পশু কোরবানি বৈধ নয়। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে এক বছর বয়সের হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে।
শরিকানা কোরবানি: ছাগল, ভেড়া, দুম্বার ক্ষেত্রে কেবল একজনের নামেই কোরবানি দিতে হবে। গরু, মহিষ, উটে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারেন। মৃত ব্যক্তির নামেও কোরবানি হতে পারে। যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব তার নামেই কোরবানি দিতে হবে। নিজের নামে দেওয়ার পর আত্মীয়-স্বজনের নাম যোগ করা যাবে। তবে নিজের নাম না দিয়ে অন্যের নামে কোরবানি করা ঠিক নয়।
পশু জবাই: হাদিসে কোরবানির পশু জবাই সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। পশু কোরবানি নিজ হাতে করাই উত্তম। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে উল্লেখ রয়েছে, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিজের কুরবানির পশু তাঁর নিজ হাতে জবাই করেছেন।”
এছাড়া, বিভিন্ন হাদিস থেকে যার যার কুরবানি তার নিজ হাতে করার উৎসাহ পাওয়া যায়। তবে অন্যের মাধ্যমে কোরবানি করা হলেও তাতে কোনো সমস্যা নেই। নিজের পশু কোরবানির সময় পাশে উপস্থিত থাকলেও চলবে।
কোরবানির পশু জবাইয়ের নিয়ম ও পদ্ধতি: অনেকেই কোরবানি নিয়ম ও পদ্ধতি জটিল ভাবলেও আদতে তা একেবারেই সহজ। নিম্নোক্ত নিয়ম মানলেই সহীহ শুদ্ধভাবে কোরবানি আদায় হয়ে যাবে:
– জবাই করার সময় পশুকে কিবলামু্খী করে শুইয়ে “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে জবাই করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যেন পশু জবাই না করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
– জবাই করার সময়ে পশুর কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী এবং উভয় পাশের দুটি রগ অর্থাৎ মোট চারটি রগ কাটতে হবে।
– ধারালো ছুরি দিয়ে পশু জবাই করতে হবে যেন জবাইয়ের সময় পশুর কষ্ট না হয়। হাদিসে রয়েছে- “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পশু জবাই করার আগে ছুরি-চাকুতে ভালোভাবে ধার দিয়ে নেওয়া।” (মুসলিম)
– অন্য পশুর সামনে জবাই না করা এবং পশুর সামনে ছুরি-চাকু বা অন্য অস্ত্রে ধার না দেয়া। কারণ এতে পশু ভয় পেয়ে যায়, যা পশুকে কষ্ট দেয়ার সমতুল্য।
কোরবানির দোয়া:
কোরবানির পশুকে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে কিবলামুখী করে শোয়ানোর পর নিচের দোয়াটি পড়তে হয়-
ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
কেউ এ দোয়াটি না পারলে ছোট্ট এ অংশটুকু পড়তে পারে- বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।
কোরবানির পশু জবাই করার পর এই দোয়া পড়তে হবে- আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাতা ওয়াস সালাম।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, কেউ যদি একা কোরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে “মিন্নি” আর অন্যের কোরবানির পশু জবাই করার সময় “মিনকা-মিনকুম” বলে যারা কোরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।