শুধু ইংরেজি বা আরবি ভাষায় নয় যে কোন বিষয়ে পারদর্শী তৈরি করতে প্রয়োজন ।।মুহাম্মদ আল্-হেলাল।। শুধু ইংরেজি বা আরবি ভাষায় নয় যে কোন বিষয়ে পারদর্শী তৈরি করতে প্রয়োজন সঠিক পরিবেশ
অথবা
শ্রেণিভিত্তিক নয় বিষয়ভিত্তিক কক্ষ প্রয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদেরকোন নির্দিষ্ট বিষয়ে পারদর্শী তৈরি করতে।
সদ্য আর্ন্তজাতিক সর্ম্পকবিভাগ থেকে মাস্টার্স ভাইবা দিলাম ফলাফল দিতে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরই মধ্যে একটি স্থানীয় এনজিও যাদের সাথে পরিচয় ঘটেছিল এক বন্ধুর মাধ্যমে তারা তাদের প্রশিক্ষণ প্রকল্পের ম্যাটেরিয়াল গুলো ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ বা বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদএবং নিউজিল্যান্ড থেকে যে প্রশিক্ষক ট্রিশ সামার ফিল্ড আসবেন তার সার্বক্ষনিক সহযোগি অর্থাৎ দোভাষী কাম ট্যুরিস্ট গাইড হিসাবে কাজ করতে হবে এমন দায়িত্ব দেয়আমাকে।
আমার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করছে যদিও আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই মনে হতো কর্মজীবনে শুধু আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে বিদেশিদের সাথে কাজ করতে হবেযেটি বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনায় অলীক কল্পনা মাত্র।
দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা শুরু করলাম প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরুর দিনক্ষন এগিয়ে আসছে এরই মধ্যে ইসলামিক রিলিফ, ইউকে নামকএকটি আইএনজিও অর্থাৎ আর্ন্তজাতিকএনজিওর ঢাকার বারিধারা অফিস থেকে রুমেনা নামক একজন গনসংযোগ কর্মকর্তা ফোন করেন তাদের অফিসে গিয়ে কিভাবে তাদের সাথে কাজ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কারন তাদের সাথে কাজ করার জন্য আগেই আবেদন করেছিলাম।
আমার ধারনা ছিল একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করলে সেই চাকরি ছাড়া যায়না তাই ঐ জনসংযোগকর্মকর্তাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম অলরেডি একটি স্থানীয় এনজিও কে কমিটমেন্ট দিয়েছি তাদের সাথে কাজ করার জন্য।
আমি নিশ্চিত ঐ কর্মকর্তা আমাকে বোকা বলেই ধরে নিয়েছেন যদিও পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে ১০/১২ টি কর্মস্থল বদল করেছি। ঐ প্রশিক্ষণ কর্মশালা থেকে যে বেতন পেয়েছিলাম তা দিয়ে অফিসে যাওয়া আসার খরচও হয়নি। যদিও নিয়োগ কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন চলতে পারবেন এই বেতন দিয়ে যাকে এখনও প্রতারক হিসাবেই কাউন্ট করি যদিও তার সাথে এখন যোগাযোগ নেই।
ইতোমধ্যে প্রশিক্ষক ট্রিশ সামার ফিল্ড তার কর্মস্থল ভিয়েতনাম থেকে উড়ে এসে ঢাকা হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরেঅবতরন করলেন। আমরা ট্রিশকে উষ্ণ সম্বর্ধনা দিয়ে বনানীর শ্রীলংকান হোটেল রয়েল পার্কে রাখার ব্যবস্থা করলাম।
ট্রিশের সাথে টাইম ঠিক হলো আমি প্রতিদিন সকাল ৮ টায় একটি প্রাইভেট কার নিয়ে উত্তরা থেকে এসে ট্রিশকে নিয়ে মোহাম্মদপুর অফিসে যাব এবং তার সাথে সর্বক্ষণ থাকব তার যেকোন সহযোগিতার জন্য। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে আমি আবার বনানী রেখে উত্তরা চলে যাব। এভাবে চলতে থাকল যদিও একদিন আমার ২ মিনিট দেরি হলে তিনি নিজেই গাড়ি ঠিক করে চলে গিয়েছিলে অফিসে।
একদিন বনানী থেকে মোহাম্মদপুর যাওয়ার সময় তিনি বললেন হেলাল ভাই I want to take some curry powder from your country আমি উত্তর দেওয়ার পূর্বেই আমাদের গাড়ীর চালক উত্তর দিলেন It’s not possible on the way আমি চালকের উত্তর শুনে অবাক হয়ে গেলাম। উল্লেখ্য ট্রিশ আমাকে হেলাল ভাই বলতেন কারণ তার ১৮ দিনের বাংলাদেশ সফরে আমি তাকে কিছু বাংলা শেখাতে পেরেছিলাম।
তারপর থেকে ট্রিশ এবং চালক ঢাকা শহরের বিভিন্ন বিষয়ে অনবরত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন আর আমি শ্রোতার ভূমিকা পালন করছিলাম এবং মাঝে মাঝে একটু কথা বলছিলাম। এবার অফিসে পৌছানোর পর চালক কে লেখাপড়া কতটুকুকরেছেন জিজ্ঞাসা করলে চালক যে উত্তর দিলেন তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।আমি মারাত্মকভাবে অবাক হয়েছিলাম কারন তিনি যে জবাব দিয়েছিলেন তা হলো তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কোন রকম বিদ্যালয়ে গিয়েছেন যেটাকে বলে নামকাউয়াস্তে।
তিনি বসবাস করছেন বস্তি এলাকায় তার বেড়ে ওঠাও বস্তি এলাকায়।তার সম্পর্কে জানার আরো আগ্রহ বেড়ে গেল। জানতে চাইলাম ইংরেজি কিভাবে শিখলেন তিনি বললেন হলুদ ট্যাক্সি চালাই উত্তরা, বনানী, গুলশান এলাকায় আরবেশির ভাগ বিদেশি যাত্রীদের গাড়ীতে উঠাই। তারা গাড়ীর মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা করেন আমি তাদের আলোচনা শুনি মাঝে মাঝে দুই একটা উত্তর দেই এভাবে ইংরেজি শিখেছি।
আরেকটি বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পূর্বে রোকেয়া স্মরণীতে আমার বাসা ছিল। রোকেয়া স্মরণী দিয়ে দেখতাম লাল সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ী চলতে এবং আমার মনের মধ্যে তীব্র বাসনা জাগতো এই গাড়ীর লিগ্যাল যাত্রী হওয়ার জন্য। পরবর্তীতে অবশ্য উভয় গাড়ীর লিগ্যাল যাত্রী হওয়ার সুযোগ হয়।
একদিন সবুজ গাড়ীতে দেখলাম লাল গাড়ীর ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষার্থী এবং সবুজ গাড়ীর বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী দুজন বন্ধু আমার সামনের আসনে বসে ব্যক্তিগত, জাতীয়, আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন বিষয়ে ইংরেজিতে কথা বলছেন। আমি লক্ষ্য করছিলাম যিনি বাংলার শিক্ষার্থী তুলনামূলক তিনি ইংরেজিতে ভাল পারদর্শী। লাল গাড়ী হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সবুজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ী।
অন্য আরেকটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করতে চাই সেটি হলোআমি কর্মজীবনে শিক্ষা মন্ত্রালয়ের অধীনে কিছুদিন মাধ্যমিক পর্যায়ের ইংরেজি টিচারদের প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। আমার পদবী ছিল “Resource Teacher-English ”মন্ত্রনালয় থেকে আমাদের বলা হতো আপনারা ট্রেইনার নয় সহকর্মী মুডে থাকবেন তানাহলে টিচাররা অস্বস্তি বোধ করতে পারেন অর্থাৎ ছদ্মবেশী প্রশিক্ষক।
যাহোক অভিজ্ঞতায় যা দেখলাম আমাদের টিচাররা ইংরেজি ক্লাসেই ইংরেজিতে কথা বলতে স্বস্তিবোধ করেন না, অভ্যস্ত নয় অথবা পারদর্শী নয়। সেটি প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা কোন পর্যায়ই নয়।যে কয়েকজন আছেন সেটি ব্যতিক্রম।
প্রশিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন কালে আমি নবম অথবা দশম কোন একটি শ্রেণির ইংরেজি ক্লাসে উপস্থিত।উক্ত ইংরেজি টিচারআমার উপস্থিতে একজন শিক্ষার্থীকে বলছেন “এই তুমি নিজের সম্বন্ধে কিছু ইংরেজিতে বল” কিন্তু শিক্ষার্থী বলতে পারছেনা বা অস্বস্তিবোধ করছে। তখন আমি টিচারকে বললাম Sir first make the environment telling him please tell me something about yourself then learner would be inspired to speak in English
যাহোক টিচার কিছুটা অস্বস্তিবোধ করলেও সেটি উদ্দেশ্য ছিলনা। উদ্দেশ্য ছিল আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন ইংরেজি লেখা, পড়ার পাশাপাশি বলা এবং শুনে বুঝার দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
অর্থাৎ ভাষার যে চারটি দক্ষতা আছে তা আমাদের দেশে অনেকটা ৎবধফরহম, ৎিরঃরহমএর মধ্যেইসীমাবদ্ধ। সেটিকে উন্নীত করেপ্রকৃত পক্ষে ভাষার দক্ষতা বলতেযে ৪টি দক্ষতা listeing, speaking, reading and writing বুঝায় তা অর্জনকরতে হলে কিছু করনীয় আছে তাহলো:
ক. শ্রেণিকক্ষে ইংরেজিভাষা হোক বা আরবি ভাষা হোক বলার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের শ্রেণিভিত্তিক যে কক্ষ আছে সেগুলিকে বিষয়ভিত্তিক যেমন ইংরেজি, আরবি, গণিত, বিজ্ঞাণ, কুরআন প্রত্যেক বিষয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কক্ষ তৈরি করতে হবে।
এবং উক্ত কক্ষগুলোকে নির্দিষ্ট বিষয় বা ভাষার বিভিন্ন শ্লোক বা ফরমুলা লিখে সজ্জিত করতে হবে। যেন শিক্ষার্থী উক্ত রুমে প্রবেশের সাথে সাথে উক্ত বিষয়ের মধ্যেই প্রবেশ করতে পারে।
যেমন কুরআনের কক্ষগুলোতে কুরআনের মানবসমাজের বর্তমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান রয়েছে এমন আয়াতগুলো লেখা থাকবে। আরবি কক্ষগুলোতে আহমদ শওকী, ইমরুল কায়েসের মত বিভিন্ন লেখকদের লেখা থাকবে দেওয়াল গুলোতে। তদ্রুপ ইংরেজি কক্ষে সেক্সপিয়ার, মিল্টন, ওয়াডসওয়ার্থ ইত্যাদির লেখাগুলো থাকবে। বিজ্ঞান কক্ষে বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার ইত্যাদি থাকবে।
খ. প্রত্যেক বিষয়ের জন্যই ইংরেজি ভাষায় বা আরবি ভাষায়দক্ষ এমন টিচার নিয়োগ দিতে হবে।
গ. মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর রচনা, দরখাস্ত, চিঠি শেখানো বন্ধ করে শিক্ষার্থীকে তার বাস্তব জীবনে প্রায়োগিক বা পরিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী করে তুলতে হবে যেমন জীবন ঘনিষ্ট ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।
ঘ. সাগর পাড়ের শিক্ষার্থীদের পাহাড়ের আর পাহাড়ী শিক্ষার্থীদের সাগরের রচনা শেখানো বন্ধ করতে হবে। তানাহলে তারা বাজার থেকে গাইড বই কিনে মুখস্ত করবে ভিতরের বিষয়গলো না বুঝেই।
ঙ. গাইড বই নিষিদ্ধ করে প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি ভাষা বা আরবি ভাষায় দক্ষ এমন প্রশিক্ষক দিয়ে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে টিচারদের আগে দক্ষ করে তুলতে হবে।
চ. প্রত্যেক শ্রেণিতে কমপক্ষে প্রথম ৬ মাস বা একটি নির্দিষ্ট সময় শুধুমাত্র ইংরেজি বা আরবি ভাষায় ক্লাস পরিচালনা করতে হবে। সম্ভব হলে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখতে হবে।
একটি বিষয় লক্ষণীয় আমাদের দেশের প্রবাসী শ্রমিকরা বেশিরভাগ মধ্যপ্রাচ্যে যায় সেখানে আরবি ভাষায় কথা বলতে হয়।আরবি ভাষা তেমন শিখে যায় না কিন্তু বিদেশে গিয়ে ঐ দেশের ভাষায় কথা বলতে বাধ্য হয় বা একটি পরিবেশ পায় ফলে বলতে বলতে এবং শুনতে শুনতে তারা বিদেশি ভাষা মাতৃভাষার মতোই শিখে যায় ১/২ মাস বা সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে।
তারা এই দেশ থেকে আরবি বলা শিখে যেতে পারেনা কারণ এই দেশে ইংরেজি বলা শেখানোর জন্য কিছু লোক পাওয়া গেলেও আরবি শেখানোর লোক পাওয়া যায় না বললেই চলে।
সুতরাং উপরিউক্ত করনীয় অনুস্বরণ করলে আমরা শুধু ইংরেজি, আরবিতে পারদর্শী নয় বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক পারদর্শী তৈরি করতে পারব আমাদের ব্যবস্থাপনা থেকেএবং বিশ্বায়নের যুগে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে আমাদের শিক্ষার্থীরা আগামীতে নেতৃত্ব দিতে পারবে ইনশা আল্লাহ।
মুহাম্মদ আল্-হেলাল
এমফিল গবেষক(এবিডি)
আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
.শুধু ইংরেজি বা আরবি ভাষায় নয় যে কোন বিষয়ে পারদর্শী তৈরি করতে প্রয়োজন
লেখক এর আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন।
- ১.সড়ক ও রেলপথের ক্ষতিপূরণ থাকলেও পানিপথের জমির জন্য নেই কোন ব্যবস্থা
- ২. মাহফিল-মসজিদ-মাজার বা কবরস্থানের জন্য সামাজিক ভিক্ষা আর নয়
- ৩. শুধু ইংরেজি বা আরবি ভাষায় নয় যে কোন বিষয়ে পারদর্শী তৈরি করতে প্রয়োজন