বাসর রাতের দোয়া ।। বাসর রাত নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই। বাসর রাতে কি করতে হয়, বাসর রাতে কোনো বিশেষ নামাজ আছে কিনা, বাসর রাতে কোন দোয়া পড়তে হয়, বাসর কিভাবে শুরু করতে হয়, বাসর রাত নিয়ে এমন হাজারও প্রশ্ন ঘুরো।
কিন্তু লোক লজ্জা ও সংকোচের কারণে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না কারও থেকে। তাই আমি আজ আপনাদের জানাবো বাসর রাতের বাসর রাতের দোয়া ও বিশেষ নামাজ সম্পর্কে।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক বিয়ে কি। কারণ বাসর ঘরের পূর্ব শর্ত বিয়ে করা।
বিয়ে হলো একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু’জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিয়ের দিন স্বামী-স্ত্রীকে এক ঘরে থাকতে হয়। আর সেই রাতকে বাসর রাত বলা হয়। বাসর রাত সম্পর্কে সবার মনে বিশেষ কৌতুহল কাজ করে।
বিয়ের পর বাসর রাতে কী করবেন কী করবেন না? এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে? বাসর রাত সবার জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ রাত। জীবনে এমন রাত একবারই আসে। চলুন ইসলামের দৃষ্টিতে বাসর রাত সম্পর্কে জেনে নিই।
বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী দু রাকাত নামায পড়ার পর বরকতের জন্য যে দোয়াটি করতে হয় সেটি কখন পড়বে? নামাযে থাকা কালীন সময়ে নাকি সালাম ফিরানোর পর?
সহবাসের পূর্বে যে দুআটি পড়তে হয় সেটা কি স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই পড়তে হবে নাকি শুধু স্বামীকে পড়লেই যথেষ্ট হবে?
স্বামী-স্ত্রী বাসর রাতে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদিস পাওয়া না গেলেও এ ব্যাপারে সাহাবী এবং পূর্বসূরীদের আমল রয়েছে।
সুতরাং কেউ যদি তা পড়ে তাহলে তাতে আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ। অনেক আলেম এ দু রাকআতকে মুস্তাহাব বলেছেন।
বাসর রাতে স্ত্রী-পরিবারের বরকত ও কল্যাণের দুআ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, স্ত্রী স্বামীর কাছে গেলে স্বামী দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পিছনে দাঁড়াবে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করবে এবং বলবে:
اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِىْ أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ، اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍ و فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বা-রিকলী ফী আহলী, ওয়া বা-রিক লাহুম ফিইয়্যা, আল্লাহুম্মাজমা’ বাইনানা মা জামা’তা বিখাইর, ওয়া ফাররিক বাইনানা ইযা ফাররাকতা ইলা খাইর।
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন এবং আমার ভিতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ! আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযিক দিন আর আমার থেকে তাদেরকেও রিযিক দিন।
বৃষ্টির সময় দোয়া আরবী সহ বাংলা
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্রে রাখুন। আর আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটান।” (তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৯০০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৭৫৪৭; সিলসিলাতুল আছার আছ-ছহীহাহ হা/৩৬১; আদাবুয যিফাফ, পৃঃ ২৪।)
হাদীসের ভাষা থেকে বুঝা যায়, বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী দু জনে দু রাকআত নফল সালাত আদায় করার পর স্বামী এ দুআটি পাঠ করবে।
বাসর রাতে স্ত্রীর কপালে হাত রেখে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত.
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি।
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর মধ্যকার কল্যাণ এবং এর মাধ্যমে কল্যাণ চাই এবং তার মধ্যে নিহিত অকল্যাণ ও তার মাধ্যমে অকল্যাণ থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।” (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ: বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিধান, হা/ ২১৬০, সনদ: হাসান)
বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রীর জন্য আলাদা কোন দুআ হাদীসে বর্ণিত হয় নি। তবে তারা নিজেরা নিজের দাম্পত্য জীবনের কল্যাণ ও বরকত কামনা মহান রবের দরবারে দুআ করতে পারে।
দুজনে এক সাথে হাত উঠিয়েও করতে পারে আবার নিজে নিজে আলাদাভাবেও করতে পারে ইনশাআল্লাহ। তবে এটি সুন্নাহ-এমনটি ভাবা যাবে না বরং দুআ করার বিষয়টি যেহেতু উন্মুক্ত সে হিসেবে তারা তাদের প্রয়োজন তুলে ধরে দুআ করতে পারে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
যদি রাতের বেলায় উক্ত নামায পড়া হয় তাহলে একটু উঁচু স্বরে আর দিনের বেলায় পড়লে নিম্ন স্বরে পড়বে। সাধারণ যে কোন নফলের ক্ষেত্রে এটিই সাধারণ সুন্নত। সুতরাং এ বিধান এখানেও প্রযোজ্য ইনশাআল্লাহ।
সহবাসের পূর্বে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া সুন্নত :
” ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ، ﻭَﺟَﻨِّﺐْ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ ”
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ্। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাক্বতানা।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান হতে বাঁচান এবং আমাদেরকে যদি কোন সন্তান দেন তাকেও শয়তান হতে বাঁচান। [বুখারী হা/ ৬৩৮৮ ও মুসলিম হা/ ১৪৩৪)]
স্বামী যেমন শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে এবং নবজাতক সন্তানকে বাঁচাতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে অনুরূপভাবে স্ত্রীও তাই করবে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।