HSC | বাংলা ২য় | ব্যকরণিক: উচ্চারণ রীতি | PDF Download: বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যকরণিক অংশ হতে সমাস নির্ণয় অধ্যায় হতে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির ব্যকরণিক অংশ হতে সমাস নির্ণয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
আলোচ্য বিষয়: উচ্চারণ রীতি
উচ্চারণ কী?
উচ্চারণ হচ্ছে একটি বাচনিক প্রক্রিয়া। চলিত বাংলা কথ্য বাচনভঙ্গির বিভিন্ন বৈচিত্রের একটি সমন্বিত উচ্চারণ মানকে প্রমিত বাংলা উচ্চারণ বলা হয়।
উচ্চারণ রীতি কী?
শব্দের যথাযথ উচ্চারণের জন্য নিয়ম বা সূত্রের সমষ্টিকে উচ্চারণরীতি বলে।
স্বরবর্ণ
বাংলা ভাষার স্বরবর্ণের প্রথম বর্ণই হচ্ছে ‘অ’। এটাকে আমরা বলে থাকি ‘স্বরে-অ’, আসলে এর নাম ‘অ’। এই ‘অ’ নিয়ে শুরু বাঙলা উচ্চারণের অন্তহীন সমস্যা। কারণ এ-বর্ণটি শব্দ বা পদের আদ্য-মধ্য বা অন্তে ব্যবহৃত হ’য়ে কখনো উচ্চারিত হয় ‘অ’ রূপে, কখনো ‘ও’-কার বা ‘অর্ধ-ও-কার’ রূপে।
নিচে আদ্য-মধ্য ও অন্ত ‘অ’-এর উচ্চারণের কিছু নিয়ম আলোচনা করা হল।
আদ্য-অ-
১. শব্দের শুরুতে যদি ‘অ’ থাকে [সেটা স্বাধীন (‘অ’) কিংবা ব্যঞ্জনে যুক্ত (ক্+অ=ক, ম্+অ=ম ইত্যাদি) উভয়ই হতে পারে] তারপর হ্রস্ব ই-কার, দীর্ঘ ঈ-কার, হ্রস্ব উ-কার বা দীর্ঘ ঊ-কার থাকে তাহলে সে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’-কারের মতো হয়। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
অধিক | ওধিক্ |
খচিত | খোচিতো |
মধুর | মোর্ধু |
মনুষ্য | মোনুশ্শো |
বধূ | বোধু |
তরী | তোরী |
২. শব্দের আদ্য ‘অ’ এর পর ‘ক্ষ’ বা ‘জ্ঞ’ থাকলে তাহলে সে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’-কারের মতো হয়। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
রক্ষা | রোক্খা |
লক্ষ | লোক্খো |
যজ্ঞ | জোগ্গোঁ |
৩. শব্দের আদ্য ‘অ’ এর পর যদি ‘ঋ-কার’ যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকে তাহলে সে আদ্য ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’-কারের মতো হয়। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
মসৃণ | মোসৃন্ |
কর্তৃকারক | র্কোতৃকারোক্ |
যকৃত | যোকৃতো |
৪. শব্দের আদ্য ‘অ’ এর পর য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে তাহলে সে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’-কারের মতো হয়। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
কন্যা | কোন্না |
গদ্য | গোদ্দো |
পদ্য | পোদ্দো |
৫. উপরে আমরা যে নিয়মগুলো আলোচনা করেছি তার একটি প্রধান ব্যতিক্রম আছে । যদি আদ্য-‘অ’ না-বোধক হয় তবে সে ‘অ’ এর উচ্চারণ অবিকৃত থাকবে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
অবিরাম | অবিরাম্ |
অবিনাশী | অবিনাশি |
অসুখ | অসুখ্ |
অশুভ | অশুভো |
অকৃত্রিম | অকৃত্ত্রিম্ |
অন্যায় | অন্ন্যায়্ |
৬. সহিত-অর্থে বা সহার্থে ‘স’ (স্+অ=স) যদি শব্দের আদিতে থাকে তবে তার উচ্চারণ অবিকৃত থাকে। অর্থাৎ আদ্য-‘স’-এর পরে হ্রস্ব ই-কার, দীর্ঘ ঈ-কার, হ্রস্ব উ-কার বা দীর্ঘ ঊ-কার যায় থাকুক না কেনো সহার্থের ‘স’-এর উচ্চারণ ‘অ’-কারন্তই হবে ‘ও’-কারন্ত হবে না। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ |
সবিনয় | শবিনয়্ | |
সস্ত্রীক | শস্ত্রিক্ | |
সজ্ঞান | সজ্ঞান | শগ্গ্যাঁন্ |
মধ্য-অ
১. শব্দমধ্যস্থিত ‘অ’ (সর্বত্র ব্যঞ্জনবর্ণে যুক্ত), আদ্য-‘অ’-এর মতোই হ্রস্ব ই-কার, দীর্ঘ ঈ-কার, হ্রস্ব উ-কার, দীর্ঘ ঊ-কার ঋ-কার, ক্ষ, জ্ঞ বা য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের আগে থাকলে সে ‘অ’-এর উচ্চারণ ‘ও’-কারের মতো হয়। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ |
পরিহরি | পোরিহোরি | ধরণী | ধরোনি | রজনী | রজোনি |
সমভূমি | শমোভূমি | বিশেষজ্ঞ | বিশেশোগ্গোঁ | ||
আত্মরক্ষা | আত্তোঁরোক্খা | ||||
বিপক্ষ | বিপোক্খো | ||||
রাজকন্যা | রাজকোন্না | ||||
অরণ্য | অরোন্নো |
২. তিন বা তার অধিক বর্ণে গঠিত শব্দের মধ্য-‘অ’-এর আগে যদি অ, আ, এ এবং ও-কার থাকে তবে সে-ক্ষেত্রে সে ‘অ’-এর উচ্চারণে ‘ও’-কার প্রবণতা থাকে সমধিক। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ |
বচন | বচোন্ | ||
রতন | রতোন্ | ||
কানন | কানোন্ | ||
রাবণ | রাবোন্ | ||
কেতন | কেতোন | শোভন | শোভোন্ |
শোষণ | শোষোণ্ | ||
কোমল | কোমোল্ | ||
গোপন | গোপোন্ |
বিশেষ দ্রষ্টব্য : তবে এ সূত্রে আদ্য-‘অ’ যদি না-বোধক হয় কিংবা সহার্থের ‘স’ (স্+অ=স) হয়, তবে কিন্তু সে-‘অ’ বা ‘স’-এর পরের মধ্য-‘অ’ প্রমিত উচ্চারণে অবিকৃত উচ্চারিত হওয়ায় বাঞ্ছনীয়। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
অচল | অচল্ |
অমর | অর্ম |
সচল | শচল্ |
সদল | সদল্ |
সরস | শরশ্ |
অশক্ত | অশক্তো |
অন্ত্য-‘অ’
শব্দ বা পদ-শেষের ‘অ’ বাংলা ভাষায় প্রায়শ উচ্চারিত হয় না (যেমন : নাক্, কান্, জলোর্ধ, ধান্ ইত্যাদি), অর্থাৎ অন্তিম ‘অ’ হসন্তরূপে উচ্চারিত হয় সাধারণত। কিন্তু সর্বত্র এ-নিয়ম প্রযোজ্য নয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই অন্ত্য-‘অ’ কেবল রক্ষিত নয়, স্পষ্ট ও-কারন্ত উচ্চারিত হয়। এভাবে আমরা অন্ত্য-‘অ’-এর ও-কারন্ত উচ্চারণের কয়েকটি নিয়ম আলোচনা করবো।
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ |
পরিহরি | পোরিহোরি | ধরণী | ধরোনি | রজনী | রজোনি |
সমভূমি | শমোভূমি | বিশেষজ্ঞ | বিশেশোগ্গোঁ | ||
আত্মরক্ষা | আত্তোঁরোক্খা | ||||
বিপক্ষ | বিপোক্খো | ||||
রাজকন্যা | রাজকোন্না | ||||
অরণ্য | অরোন্নো |
১. শব্দ-শেষের সংযুক্তবর্ণের ‘অ’ সাধারণত রক্ষিত হয় এবং সংযুক্তবর্ণের প্রথমটি হসন্ত ও পরেরটি ‘ও-কারন্ত’ উচ্চারণ হয়ে থাকে। যেমন:
শব্দ | উচ্চারণ |
পদ্ম | পদ্দোঁ |
গন্ধ | গন্ধো |
নষ্ট | নশ্টো |
যুদ্ধ | জোদ্ধো |
বিভক্ত | বিভক্তো |
বিপন্ন | বিপন্নো |
২. ‘ত’ (ক্ত) এবং ‘ইত’ প্রত্যয়যোগে সাধিত বা গঠিত বিশেষণ বা ক্রিয়াপদের অন্ত্য-‘অ’ উচ্চারণে অনেকটা ‘ও-কারন্ত” হ’য়ে থাকে। যেমন:
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ |
মÐিত | মোন্ডিতো | ||
বিকশিত | বিকোশিতো | ব্যথিত | বেথিতো |
৩. ‘তর’ এবং ‘তম’ প্রত্যয়যোগে গঠিত বিশেষণ পদের অন্তিম-‘অ’ সাধারণত ‘ও-কারন্ত” উচ্চারিত হয় । যেমন:
শব্দ | উচ্চারণ |
উচ্চতর | উচ্চোতরো |
শেষতম | শেষ্তমো |
যোগ্যতম | জোগ্গোতমো |
৪. শব্দ শেষের ‘অ’-এর আগে যদি ‘ং(অনুস্বার)’ বা ‘ঙ’, ঋ-কার, র-ফলা, ঐ-কার বা ঔ-কার থাকে, তবে অন্তিম-‘অ’ সাধারণত ‘ও-কারন্ত” উচ্চারিত হয় । যেমন:
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ |
হংস | হঙশো | শঙ্খ | শঙখো | অমৃত | অমৃতো |
দৈব | দোইবো | যৌথ | জোউথো | গ্রহ | গ্রোহো |
৫. ইব, -ইল, -ইতেছ, ইয়াছ, ইতেছিল, ইয়াছিল, ইত্যাদি প্রত্যয়যোগে গঠিত ক্রিয়াপদের অন্ত্য-‘অ’, সাধারণত বিলুপ্ত হয় না এবং উচ্চারণে ওই ‘অ’ প্রায়শ ও-কারন্ত হয়ে থাকে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ |
প্রকাশিল | প্রোকাশিলো | আসিব | আশিবো | বুঝেছ | বুঝেছো |
৬. বাংলা সংখ্যাবাচক শব্দের ১১ থেকে ১৮ পর্যন্ত শব্দের (এগুলোও বিশেষণ-জ্ঞাপক) অন্ত্য-‘অ’, সাধারণত বিলুপ্ত হয় না এবং উচ্চারণে ওই ‘অ’ ও-কারন্ত হয়ে থাকে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ |
এগার | এ্যাগারো | তের | ত্যারো | পনের | পনেরো |
যুক্তব্যঞ্জনবর্ণ বা ‘ফলা’
বাংলা ভাষায় বেশকিছু যুক্তবর্ণ বা ‘ফলা’ ব্যবহৃত হয়। এ-গুলোর বানান যেমন বিচিত্র, তেমনি উচ্চারণও বৈচিত্র্যময়। ছাত্র-ছাত্রীদের এ-সব ‘ফলা’র উচ্চারণ নিয়ে প্রায়শ বিভ্রান্ত হতে হয়। কারণ পদের প্রথমে ব্যবহৃত ‘ফলা’ বা যুক্তবর্ণের উচ্চারণ এক রকম , পদ-মধ্যে বা অন্তে হয় অন্যরকম। নিচে কিছু ‘ফলা’-র উচ্চারণ সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।
‘ব’-ফলা
১. পদের আদ্য বা প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ব’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত সে-‘ব’ ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না, তবে ব-ফলাযুক্ত বর্ণটির উচ্চারণে স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য ঝোঁক বা শ্বাসঘাত পড়ে থাকে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ |
স্বপ্ন | শপ্নো | ||
ত্বরা | তরা | স্বস্তি | শোস্তি |
২. বাংলা উচ্চারণের ধারা-অনুসারে পদের মধ্যে কিংবা শেষে ‘ব’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত সংযুক্তের বর্ণের উচ্চারণ-দ্বিত্ব ঘটে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
ভূস্বামী | ভুশ্শামি |
ভাস্বর | ভাশ্শর |
বিশ্ব | বিশ্শো |
৩. উৎ (উদ্) উপসর্গযোগে গঠিত শব্দের ‘ব-ফলা’র উচ্চারণ সাধারণত অবিকৃত থাকে। অর্থাৎ ‘উদ’-এর ‘দ’-এর দ্বিত্ব না হয়ে বাঙালা উচ্চারণে ‘ব’-এর উচ্চারণ হয়ে থাকে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
উদ্বেল | উদ্বেল্ |
উদ্বিগ্ন | উদ্বিগ্নো |
উদ্বেগ | উদ্বেগ |
৪. বাংলা শব্দে ‘ক্’ থেকে সন্ধির সূত্রে সাধারণত ‘গ’ আসে এবং সেই আগত ‘গ’-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে, সে-ক্ষেত্রে ‘গ’-এর উচ্চারণ (শব্দমধ্যে কিংবা অন্তে) দু’বার হয় না, ‘ব’-ই অবিকৃত অবস্থায় উচ্চারিত হয়ে থাকে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
দিগ্বধূ | দিগ্বোধূ |
দিগ্বিজয়ী | দিগ্বিজোয়ি |
দিগ্বসনা | দিগ্বশোনা |
৫. পদ-মধ্যে কিংবা অন্তে অবস্থিত ‘ম’-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে , সে-ক্ষেত্রে ‘ব’ অবিকৃত অবস্থায় উচ্চারিত হয়ে। অর্থাৎ এ-ক্ষেত্রে ‘ম’-এর দ্বিত্ব-উচ্চারণ না হয়ে ‘ম’-এর পরে ‘ব’-এর উচ্চারণ হয়। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
অম্বর | অম্বর |
সম্বল | শম্বোল্ |
বারম্বর | বারোম্বার |
৬. বাংলা ভাষায় যদি যুক্তব্যাঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ব-ফলা (বা যে কোনো ফলা) সংযুক্ত হয় তবে সে-ক্ষত্রে উচ্চারণে ব-ফলার কোনো ভূমিকা থাকে না; অর্থাৎ কোনো বর্ণকে দ্বিত্বও করে না বা ফলাটিও উচ্চারিত হয় না। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
আমসত্ত¡ | আম্শত্তো |
উজ্জ্বল | উজ্জোল |
পার্শ্ববর্তী | র্পাশোর্বোতি |
‘ম’-ফলা
১. পদের আদ্য বা প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ম’-ফলা সংযুক্ত হলে সাধারণত সে-‘ম’ ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না; তবে প্রমিত-উচ্চারণে ম-ফলাযুক্ত বর্ণটি অতি-সামান্য নাসিক্য প্রভাবিত হ’য়ে থাকে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
স্মরণ | শঁরোন্ |
শ্মুশ্রুধর | শোঁস্স্রুধর্, |
শ্মশান | শঁশান্ |
২. পদের মধ্যে কিংবা শেষে ‘ম’-ফলা সংযুক্তবর্ণ সাধারণত দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়ে থাকে। তবে এই ‘ম’ যেহেতু বর্গের পঞ্চম বর্ণ বা অনুনাসিক ধ্বনি সেজন্য দ্বিত্ব উচ্চারিত শেষ বর্ণটি প্রমিত-উচ্চারণে সামান্য নাসিক্য প্রভাবিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
বিস্ময় | বিশ্শঁয়্ |
আত্মা | আত্তাঁ |
অকস্মাৎ | অকশ্শাঁত্ |
৩. বাংলা ভাষায় পদের মধ্যে কিংবা শেষে সর্বত্র কিন্তু ‘ম-ফলা’-যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় না। বিশেষ করে গ, ঙ, ট, ণ, ন এবং ল-এর সঙ্গে ম-ফলা সংযুক্ত হলে ‘ম-ফলা’র উচ্চারণে ‘ম’ অবিকৃত থাকে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
যুগ্ম | জুগ্মো |
উন্মুক্ত | উন্মোক্তো |
বল্মীক | বল্মিক্ |
৪. যুক্ত-ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে সংযুক্ত ‘ম-ফলা’র কোন উচ্চারণ হয় না। তবে এ-ক্ষেত্রেও ব্যঞ্জনবর্ণের শেষ বর্ণটিকে প্রমিত উচ্চারণে সামান্য অনুনাসিক করে করে তোলে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
ল²ণ | লক্খোঁন্ |
য²া | জক্খোঁ |
ল²ী | লোক্খিঁ |
৫. বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ‘ম-ফলা’যুক্ত কতিপয় সংষ্কৃত শব্দ আছে (কৃতঋণ শব্দ), যেগুলোর বানান এবং উচ্চারণে সংষ্কৃত রীতি অনুসৃত। অর্থাৎ বাংলা উচ্চারণবিধি অনুসারে উচ্চারিত না হয়ে সংষ্কৃত উচ্চারণেই প্রচলিত। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
উষ্মা | উশ্মা |
চক্ষুষ্মান | চক্খুশ্মান |
কুষ্মাÐ | কুশ্মান্ডো |
‘ল’-ফলা
১. পদের আদ্য বা প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ল’-ফলা সংযুক্ত হ’লে সাধারণত সে-বর্ণের উচ্চারণ-দ্বিত্ব হয় না; তবে বর্ণটির সঙ্গে সংযুক্তাবস্থায় ‘ল-ফলা’র উচ্চারণ হ’য়ে থাকে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ | শব্দ | উচ্চারণ |
গøানি | গøানি | ক্লান্ত | ক্লান্তো |
¤øান | ¤øান্ |
২. পদের মধ্যে কিংবা অন্ত্য-বর্ণের সঙ্গে ‘ল-ফলা’ সংযুক্ত হ’লে সে-বর্ণের উচ্চারণ-দ্বিত্ব হয় এবং ল-এর উচ্চারণও অবিকৃত থাকে। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
মহাক্লান্ত | মহাক্ক্লান্তো |
অশ্লীল | অস্সিল |
অ¤ø | অম্¤েøা |
‘হ’-সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ
বাংলা ভাষায় ‘হ’ বর্ণটি যখন স্বাধীন বা স্বতন্ত্র-বর্ণরূপে পদে ব্যবহৃত হয়, তখন উচ্চারণে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু এ-বর্ণটি যে-মুহূর্তে ঋ-কার, ণ, ন, ম, য-ফলা, র-ফলা, ব, ল ইত্যাদির সাথে যুক্ত হ’য়ে পদে সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের মতো ব্যবহৃত হয়, তখন উচ্চারণে নানাবিধ সমস্যা অনিবার্য হ’য়ে ওঠে। ফলে আমরা ‘হ’-যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ-বৈশিষ্ট্য উদাহরণ সহযোগে আলোচনা করবো।
প্রথমেই মনে রাখা প্রয়োজন, ‘হ’-যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণকে, ‘হ’ প্রায়শ মহাপ্রাণতা দান করে থাকে। যেখানে ব্যঞ্জনবর্ণটির নিজস্ব মহাপ্রাণবর্ণ নেই, সেখানে ‘হ’ সেই-বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হ’য়ে উচ্চারণে মহাপ্রাণ-প্রবণতা এনে দেয়। আবার বহুক্ষেত্রে (পদের মধ্যে বা অন্তে) ‘হ’ উচ্চারণ স্থান পরিবর্তন ক’রে, যুক্তবর্ণের দ্বিত্ব-উচ্চারণ ঘটিয়ে দ্বিতীয়টিকে মহাপ্রাণবোধক করে তোলে। স্বতন্ত্র দৃষ্টান্তের সাহায্যে প্রাগুক্ত প্রস্তাবনা স্পষ্টতর হতে পারে।‘হ’-এর সঙ্গে ণ বা ন যুক্ত হলে-
হ-এর সঙ্গে ‘ণ’ কিংবা ‘ন’-যুক্ত হলে সে উচ্চারণ হয় তা কোনো মতেই ‘হ’ এবং ‘ন’-এর যুক্তধ্বনি নয়। এর উচারণ হয় অনেকটা ‘ন্হ’ এর মতো। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
চিহ্ণ | চিন্নোহ |
বহ্ণি | বন্নিহ্ |
বহ্ণ্যুৎসব | বোন্নুহ্ত্শব |
‘হ’-এর সঙ্গে ‘ম’ যুক্ত হলে
হ এবং ম-এর যুক্তরূপ ‘হ্ম’ চিহ্ণটিকেও ‘ম’-এর মহাপ্রাণরূপ বলা যায়। বাংলা ভাষায়’হ্ম’-এর ব্যবহার মূলত কতিপয় তৎসম (সংষ্কৃত) শব্দের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। নিচের কিছু দৃষ্টান্ত থেকে এর উচ্চারিত রূপ তুলে ধরতে চেষ্টা করব। যথা-
শব্দ | উচ্চারণ |
ব্রহ্মাÐ | ব্রোম্মাহ্ন্ডো |
ব্রহ্মা | ব্রোম্মাহ্ |
ব্রহ্মদেশ | ব্রোম্মোহ্দেশ্ |
এখানে হ্ম বর্ণে ‘হ’ যথাস্থানে উচ্চারিত না হয়ে অল্পপ্রাণ ‘ম’-কে দ্বিত্ব এবং মহাপ্রাণ করে তুলেছে। (শেষ ‘ম’-এর সংঙ্গে অর্ধ বা সিকি পরিমাণ ‘হ’ যুক্ত হয়ে।)
‘হ’-এর সঙ্গে ‘য-ফলা’ যুক্ত হলে
হ-এর সঙ্গে ‘য-ফলা’ যুক্ত হ’লে ‘হ’-এর নিজস্ব কোনো উচ্চারণই থাকে না; তবে ‘য’-এর (উচ্চারিত রূপ বাংলায় সর্বত্র ‘জ’) দ্বিত্ব-উচ্চারণ হ’য়ে থাকে। প্রথমটি ‘জ’ এবং দ্বিতীয়টি ‘ঝ’ (যেহেতু ‘হ’নিজে উচ্চারণে বিলুপ্ত হ’লেও সংযুক্ত বর্ণটির দ্বিত্ব-উচ্চারণে মহাপ্রাণতা দিয়ে যায়) এর মতো উচ্চারিত হয়। দৃষ্টান্তের সাহায্যে বিষয়টি স্পষ্টতর হতে পারে।
শব্দ | উচ্চারণ |
বাহ্য | বাজ্ঝো |
উহ্য | উজ্ঝো |
দাহ্য | দাজ্ঝো |
হ-এর সঙ্গে ‘ঋ-কার’ এবং ‘র-ফলা’ যুক্ত হলে
‘ন’ এবং ‘ম’-এর মতো ‘হৃ’ বা ‘হ্র’ মূলত ‘র’-এরই মহাপ্রাণ ধ্বনিরূপ। এর উচ্চারণ খুবই জটিল, এর উচ্চারণ-বিভ্রান্তি আমদের শিক্ষিত-স¤প্রদায়কেও বিপর্যস্ত করে তোলে। দৃষ্টান্তের সাহায্যে বিষয়টি স্পষ্টতর হতে পারে।
শব্দ | উচ্চারণ |
হৃদয় | রিহ্দয় |
হৃৎপিÐ | রিহ্ত্পিন্ডো |
অপহৃত | অপোরিহ্তো |
‘হ’-এর সঙ্গে ‘ল’ যুক্ত হলে
‘হ’ এবং ‘ল’-এর যুক্তরূপ ‘হ্ল’ চিহ্ণটিকেও ‘ল’-এর মহাপ্রাণরূপ বলা যায়। এখানেও ‘ল’-এর দ্বিত্ব-উচ্চারণ হ’য়ে থাকে। প্রথম ‘ল’-টি অল্পপ্রাণ, দ্বিতীয়টি মহাপ্রাণ (শেষ ‘ল’-এর সঙ্গে অর্ধ বা সিকি পরিমাণ ‘হ’ যুক্ত হয়।)। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
আহ্লাদ | আল্লাহ্দ্ |
প্রহ্লাদ | প্রোল্লাহ্দ্ |
আহ্লাদিনী | আলাহ্দিনি |
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৬১-১৮৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৪১-১৬০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১২১-১৪০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | বোর্ড ভিত্তিক অনুবাদ ১০১-১২০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | অনুবাদ ৬১-৮০ | Onubad | PDF Download
‘হ’-এর সঙ্গে ‘ব’ যুক্ত হলে
‘হ’-এর সঙ্গে যে ‘ব’ যুক্ত হয়, সংষ্কৃতভাষায় সে-‘ব’ অন্তস্থ ‘ব’ হলেও বাংলা ভাষায় উচ্চারণে তা বর্গীয় ‘ব’-এরই অনুরূপ। আবার তা বিশুদ্ধ ‘ব’-এর মতোও উচ্চারিত হয় না। ফলে ‘হŸ’-এর উচ্চারণ পদ্ধতিতে কিছুটা বৈচিত্র দেখা যায়। এখানেও ‘হ’-এর উচ্চারণ বিলুপ্ত হয়ে ‘ব’-এর দ্বিত্ব-উচ্চারণ হ’য়ে থাকে। এখানে প্রথম ‘ব’-টির উচ্চারণ অনেকটা ‘ও’-এর মতো হয়ে যায় এবং আগের মতোই দ্বিতীয় ‘ব’-টি উচ্চারণের সময়ে মহাপ্রাণরূপ ‘ভ’-এর মতো হয়ে যায়। আবার যদি ‘হŸ’-এর পূর্বের বর্ণেই যদি হ্রস্ব ই-কার থাকে তাহলে প্রথম ‘ব’-এর উচ্চারণ ‘ও’-এর মতো না হয়ে ‘উ’-কারের মতো হয়। যথা:
শব্দ | উচ্চারণ |
জিহŸা | জিউ্ভা |
আহŸান | আও্ভান্ |
গহŸর | গর্ও্ভ |
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।