সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি), ৪র্থ অধ্যায় এর অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৪ : রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের ধারণা
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও ।
অথবা, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম একটি শাখা হলো রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান। বিজ্ঞানকেন্দ্রিক আলোচনার সূত্র ধরেই সমাজবিজ্ঞানে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আবির্ভাব ঘটে।
সামাজিক পটভূমিতে ক্ষমতা নিয়ে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে তাকে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলে। মূলত ঐতিহাসিক বিবর্তনের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীদের সংযোজিত চিন্তার সাম্প্রতিককালের পরিণত রূপই হচ্ছে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান ।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান : রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলতে সেই বিজ্ঞানকে বুঝায়, যা মানুষের রাজনৈতিক জীবনের সামাজিক পটভূমি এবং সামাজিক জীবনের রাজনৈতিক কারণগুলো আলোচনা করে। অন্যভাবে বলা যায়, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রপঞ্চের আন্তঃপারস্পরিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্র হলো রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
থিওডর ক্যাপলাউ (Theodor Caplow) তার ‘Elementary Sociology’ শীর্ষক গ্রন্থে বলেন, “শ্রেণি কাঠামো এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার মধ্যকার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে যা আলোচনা করে তাকে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বলে।”
ডব্লিউ. সি. মিশেল ( W. C. Metchell) এ প্রসঙ্গে বলেন, “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীগণ যা করেন বা করেছেন বলে দাবি করেন তাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।”
- আরো পড়ুন:-রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৪:রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা অতিসংক্ষিপ্তত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:(ফ্রি PDF) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অধ্যায় ৩:মৌলিক ধারণাসমূহ:সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
টি. বি, বটোমর (T. B. Bottomore ) বলেন, “Political sociology is concerned with power in it’s social context.” এরিক এ নর্ডালিঙ্গার (Eric A. Nordlinger) তার ‘Political Sociology’ গ্রন্থে বলেছেন “সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রপঞ্চের পারস্পরিক সম্পর্কের অধ্যয়ন হচ্ছে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।”
গিয়োভান্নি সাত্তরি (Giovanni Sartori) রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে সর্বোত্তম সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন “রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান এমন একটি আন্তঃবিষয়ক মিশ্রণ যা সামাজিক ও রাজনৈতিক চলকগুলোর মধ্যে সমন্বয়সাধনের চেষ্টা করে।”
স্যামুয়েল কোনিগ (Samuel Koenig) এর ভাষায় সমাজ, “রাষ্ট্র, সামাজিক কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনাই হলো রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।”
ডি. কে. বিশ্বাস (D. K. Biswas) এর মতে, “যা মূলত সমাজ ও রাজনীতির মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে তাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।”
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান মূলত এমন একটি বিজ্ঞান যা সমাজের ক্ষমতা, দ্বন্দ্বের উৎস ও ভিত্তিকে জানা ও ব্যবস্থাপনাকে বুঝায় রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় বিষয় হলো সামাজিক ক্ষমতা। যার উপর ভিত্তি করে সামাজিক পটভূমি তৈরি হয়।
সুতরাং বলা যায় যে, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সমাজ, রাষ্ট্র, সামাজিক কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান রাজনৈতিক বিশ্লেষণের একটি প্রায়োগিক বিষয়। সমাজের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার পর্যালোচনা করে থাকে। তাই বলা যায়, যে, সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতির সামাজিক ভিত্তিই হলো রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান।
০২. রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু আলোচনা কর ।
অথবা, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের পরিধি আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান একটি গতিশীল, অগ্রসরমান ও আধুনিক সামাজিক বিজ্ঞান। এর বিষয়বস্তুও নিয়মমাফিক পরিবর্তনশীল। তাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ করা খুব সহজ বিষয় নয়। এ ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন মতবাদ ব্যক্ত করেছেন। সমাজবিজ্ঞানীদের এ শাস্ত্রটির ব্যাপারে যথেষ্ট মতপার্থক্য লক্ষ করা যায়।
রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু :
নিম্নে রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. অরাজনৈতিক রাজনীতি : রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো অরাজনৈতিক রাজনীতি সমাজ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক অস্বীকার করে এ অরাজনৈতিক রাজনীতি। সামাজিক উপাদান বা সামাজিক প্রক্রিয়া প্রণালি এক্ষেত্রে প্রাধান্য পায়।
২. রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আলোচনা : রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সম্পর্কে সাবেকি ধারণা হলো রাষ্ট্রকেন্দ্রিক। রাষ্ট্রের সংগঠন, প্রকৃতি ও বৈধতার শর্তসমূহ এবং বিভিন্ন উপ-একক ও রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্কের আলোচনা করা হয়।
৩. ক্ষমতার আলোচনা : রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম বিষয়বস্তু হলো সমাজকেন্দ্রিক ক্ষমতার আলোকপাত করা। যার পটভূমিতে সমাজ সামাজিক ক্ষেত্র তৈরি হয় সমাজে ক্ষমতাবান ব্যক্তিবর্গ নিজেকে অন্যের
ওপর প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে অন্যদেরকে কিছু সুনির্দিষ্ট কার্যধারা অনুসরণ করার জন্য বাধ্য করে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হলো সমাজে ক্ষমতাবান এবং যাদের ওপর এ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় তাদের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা করা।
৪. রাজনৈতিক অংশগ্রহণ : প্রচলিত রাজনীতিকে স্থিতিশীল রাখার জন্য অন্যতম অর্থবহ উপায় হলো রাজনীতিতে জন অংশগ্রহণ। সমাজবিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। শাসক ও শাসিতের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ সম্পর্কে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে।
৫. সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন : সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিষয় সম্পর্কে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে। তাছাড়া সমাজের অভ্যন্তরে সংগঠিত বিক্ষোভ, বিদ্রোহ, বিপ্লব, দ্বন্দ্ব বা সংঘাত প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তারতম্য হলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। তাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা এ পরিবর্তনের মধ্যে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী।
৬. সামাজিক গোষ্ঠীসমূহের রাজনীতি : সমাজে বিদ্যমান অনেকগুলো ছোটখাটো গোষ্ঠী তাদের প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, পরিবার প্রভৃতির ওপর নিজের পছন্দমতো প্রভাব বিস্তার করতে চায় ৷
যেখানে ক্ষমতা ও প্রভাব প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয় সেখানেই রাজনীতি বর্তমান। সুতরাং সমাজস্থ সংগঠন, ক্লাব, ছাত্র সংগঠন বা শিক্ষক সংগঠনের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনাই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান শুধু সমাজ বা রাষ্ট্র নিয়ে আলোচনা করে না; বরং সামাজিক সংগঠন ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও সম্যক ধারণা প্রদান করে।
এতে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় নতুন নতুন মাত্রা সংযোজিত হচ্ছে। আর এ প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত আলোচনায় রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় ফুটে উঠেছে।
০৩. রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি কী?
অথবা, রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ ভূমিকা : সংস্কৃতি হলো মানুষের আচরণ বিধি। যার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে উন্নত করতে পারে। আর রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে বুঝায় রাজনীতি সম্পর্কে জনসাধারণের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতির এক সমন্বিত অভিব্যক্তি যার মাধ্যমে সে রাজনৈতিক বিষয়াবলিতে এক গোষ্ঠীর সাথে আরেকটি গোষ্ঠীর পার্থক্য প্রতীয়মান হলে রাজনৈতিক উপসংস্কৃতির সৃষ্টি হয়।
রা
জনৈতিক উপসংস্কৃতি : রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি সাধারণ সংস্কৃতির একটি মৌলিক রূপ। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি প্রকৃতি ও স্বাতন্ত্র্যবোধের কারণে পৃথক হয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো রাজনৈতিক জীবনের বিশ্বাস, অনুভূতি ও মূল্যবোধের সমষ্টি।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
অধ্যাপক অ্যালান আর. বল (Alan R. Ball) এ প্রসঙ্গে বলেন, “একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে আর একটি গোষ্ঠীর পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলে তাকে রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি বলে ।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি বলতে সুনির্দিষ্ট ধরনের মনোভাব, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সমন্বিত রূপকে বুঝায় না। তবে অন্যান্য উপসংস্কৃতির সাথে সেসব নির্দিষ্ট ধরনের মনোভাব, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের কিছু কিছু অংশ সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে থাকে।
আলমন্ড ও পাওয়েল (Almond and Powell ) এর মতে, “বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে নির্দিষ্ট এক ধরনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পৃথকভাবে প্রতিপন্ন হলে তাকে রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি বলে।”
ডেনিস ক্যাভাং (Dennis Kavanagh)) বলেন, “Political subculture is the over all distribution of citizen’s orientation of political objectives.”
রবার্ট ই. স্কট (Robert E. Scott) বলেন, “বিভিন্ন গোষ্ঠীর অস্তিত্ব এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেই বলে রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি।”
অধ্যাপক অমল কুমার মুখোপাধ্যায়, (Prof. Amal Kumer Mukhopadhyay) এ প্রসঙ্গে বলেন, “These subculture sometimes play a very significant role and in case of some nations it is impossible to understand the character of a political system without a through knowledge of these subcultures.”
উদাহরণ : রাজনৈতিক উপসংস্কৃতির উদাহরণ দিতে গেলে ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বলতে হয়। ভারতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে উপসংস্কৃতিগত পার্থক্য বিরোধ বিতর্কের ঊর্ধ্বে।
যেমন শিখ জঙ্গীদের পৃথক খালিস্থানের জন্য উগ্রপন্থি কার্যকলাপ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক বা গোষ্ঠীগত অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় উপসংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতি, ধর্ম, ভাষা, অঞ্চল, সম্প্রদায় প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য ভারতের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সমজাতীয়তার মাত্রার হ্রাস ঘটায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক উপসংস্কৃতিতে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি, ধর্ম, জাতি, ভাষাগত পার্থক্যের ভিত্তিগত বিভিন্ন সম্প্রদায়, বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠী প্রভৃতির অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। এসব সম্প্রদায়ের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য প্রতীয়মান হলে তাকে বলা হয় রাজনৈতিক উপসংস্কৃতি।
০৪. রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ ।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে আলোচনা কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো কতকগুলো রাজনীতির মনোভাব, বিশ্বাস ও সামগ্রিক অনুভূতির সমষ্টি। যেকোনো দেশের রাজনীতির মূলনীতি ফুটে ওঠে সংস্কৃতির মাধ্যমে। সামাজিক জীবনে মানুষের যেমন সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা আছে অনুরূপভাবে মানুষেরও রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম ।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব : একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিহার্য। এতে সামাজিক জীবনে মানুষের মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো—
১. জাতি গঠন : রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে জাতি গঠন সম্ভব। তাই জাতি গঠন ও জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির জ্ঞান অপরিহার্য।
২. জাতীয় আদর্শ সমুন্নত : রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যাখ্যার মাধ্যমে জাতীয় আদর্শ সমুন্নত করা সম্ভব। প্রতিটি দেশ ও জাতির একটি স্বকীয় আদর্শ বিদ্যমান। কেননা রাজনৈতিক অবস্থা পরীক্ষা না করে একদেশ অন্য দেশের সাথে বিনিয়োগ বা বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী হয় না ।
৩, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন। রাজনৈতিক উন্নয়ন আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়।
৪. রাজনৈতিক কাঠামো ব্যাখ্যা : রাজনৈতিক কাঠামো ব্যাখ্যায় রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যবস্থায় রাজনৈতিক কাঠামোকে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। রাজনৈতিক কাঠামো দ্বারা জন আচরণকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর ফলে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
৫. সুশৃঙ্খল রাজনীতি : সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরিতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভূমিকা ব্যাপক। রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাজনীতির মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখে। সংস্কৃতির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দূর করা যায়।
৬. ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন : ব্যক্তিত্বের উন্নয়নেও রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি মানব শিশু সাধারণত সংস্কৃতি ছাড়া বেড়ে উঠতে পারে না। সংস্কৃতি মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনে।
৭. নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি : নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। উপসংহার পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জনসাধরণের রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও মনোভাবের ওপর রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই মানুষের সার্বিক জীবনে রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম।
০৫. রাজনৈতিক উন্নয়নের সংজ্ঞা দাও ।
অথবা, রাজনৈতিক উন্নয়ন বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা রাজনৈতিক উন্নয়ন হলো একটি গতিশীল প্রক্রিয়া, যা প্রথমে রাষ্ট্রনেতা বা রাষ্ট্রের কর্ণধারই ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এ ধারণার সূত্রপাত ঘটে।
বিশ্বের বিভিন্ন অনগ্রসর দেশ ও জাতির সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের ব্যাপারে আধুনিকায়নে রাষ্ট্রচিন্তাবিদরা রাজনৈতিক উন্নয়ন ব্যাখ্যাবিশ্লেষণে আত্মনিয়োগ করেন। উন্নয়নমূলক পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় রাজনৈতিক উন্নয়ন।
রাজনৈতিক উন্নয়নের সংজ্ঞা : রাজনৈতিক উন্নয়ন একটি জটিল ধারণা। এর সংজ্ঞা নিয়ে চিন্তাবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ্যণীয়। রাজনৈতিক উন্নয়ন পদ্ধতি প্রক্রিয়া এবং এ প্রক্রিয়ার ফলাফল ও কাম্যতা প্রসঙ্গেও ব্যাপক মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়। তবে এক কথায় বলতে গেলে বলা যায় রাজনৈতিক জীবন কাঠামো কার্যাবলি ও প্রক্রিয়ার পরিবর্তনই হলো রাজনীতিক উন্নয়ন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
রস্টো ও পাই (Rostow and Pye) এ প্রসঙ্গে বলেন, Political development seeks national unity and brooding of the base of political participation.” এ প্রসঙ্গে কার্ল ডুয়েশ্চ ((Karl Deutsch) অনুরূপ অভিমত পোষণ করে বলেন, “সমকালীন রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নের উপায় বলতে পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশসমূহের রীতিনীতি ও পন্থা পদ্ধতিকে বুঝায়।”
এডওয়ার্ড শিলস (Edward Shils) তার ”On the Comparative Study of New States’ শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেন, “কার্জনৈতিক বিষয়ে ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ হলো রাজনৈতিক উন্নয়নের একটি বিশেষ লক্ষণ।
ড্যানিয়েল লার্নার (Daniel Larner) তার The Passing of the Traditional Societies’ শীর্ষক গ্রন্থে এ অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, “পাশ্চাত্যের উন্নয়ন সম্পর্কিত মডেলটি হলো সর্বজনীন।” পাশ্চাত্যের এ মডেলের মাধ্যমে উন্নয়নের কতকগুলো লক্ষণ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় যে, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পর্যালোচনার ব্যাপারে অনেকেই পক্ষপাতী।
জি. এ. অ্যালমন্ড (G. A. Almond) অভিমত ব্যক্ত করেন, “Political development is the acquisiton of new capability in the sense of a specialized role, structure and differentiated orientation which together give a political system the range of problems.”
আইসেন স্টোড (Eisenstadt) বলেন, “সবরকম নতুন ধরনের রাজনৈতিক চাহিদা ও সংগঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের ব্যাপারে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সক্ষমতাই হলো রাজনৈতিক উন্নয়ন বা রাজনৈতিক বিকাশ সুতরাং এক কথায় বলা যায় যে, রাজনৈতিক পরিবর্তন হলো উন্নয়নের ধাপ এবং এর মাধ্যমে একটি অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় উপনীত হওয়া যায়। উন্নয়নমূলক পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকেই বলা হয় রাজনৈতিক উন্নয়ন ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক উন্নয়ন হলো এমন একটি রাজনৈতিক জীবন কাঠামো কার্যাবলি ও প্রক্রিয়ার পরিবর্তন, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীল ও অস্থিতিশীল উভয় ধরনের উন্নয়ন করা যার। রাজনৈতিক উন্নয়ন হলো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা প্রক্রিয়ার বিকাশ যার মাধ্যমে রাজনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব ।
০৬. মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি কী?
অথবা, মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা সংস্কৃতি হলো মানুষের অর্জিত আচরণ বিধি যার মাধ্যমে মানুষ তার জীবন প্রণালিকে উন্নত করে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য থেকে মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণা পাওয়া যায়।
সংকীর্ণতাবাদী নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নিষ্ক্রিয় অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং সংকীর্ণতাবাদী অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি— এ তিন ধরনের সংস্কৃতি মিলেই মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতির উৎপত্তি ।
মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি : রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণিবিভাজন সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে পাওয়া যায় মিশ্র রাজনৈতিক
১ সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম একটি প্রকার হলো নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির – তাত্ত্বিক বিচারবিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এই মর্মে উপনীত হওয়া যায় যে, প্রত্যেক রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কোনো দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই সমজাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখা যায় না। মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে চিন্তাবিদরা বিভিন্ন মতভেদ ব্যক্ত করেছেন।
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি,অধ্যায়৩:মৌলিক ধারণাসমূহ
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
অ্যালান আর. বল (Alan R. Ball) e‡jb, “In most societies they will be found in mixed form and the degree of emphasis the particular values and attitudes receive will provide the key to the overall cultural pattern.”
সি. এফ. বারগহুন (F. C. Barghoorn) তার ”Politics in the U. S.S.R” শীর্ষক গ্রন্থে অধ্যাপক অ্যালান আর. বলের সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্বতন উদাহরণ উল্লেখ করেন। তিনি দেখাতে চেয়েছেন ক্ষেত্র বিশেষ সংকীর্ণতাকারী রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটে।
এ ধরনের মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতির অস্তিত্ব আফ্রিকার কোনো কোনো রাষ্ট্রে পরিলক্ষিত হয়। আবার সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক সংস্কৃতির মিশ্রণও দেখা যায়।
ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ করা যায় আবার, অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিষ্ক্রিয় রাজনীতির অস্তিত্ব ফ্রান্স ও গ্রেট পা ব্রিটেনে বর্তমান।
অধ্যাপক অ্যালমন্ড ও পাওয়েল (Almond and Powell) বলেন, “সাবেকি ও আধুনিক নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক ব্যবস্থাতে মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি লক্ষ করা যায়।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি শ্রেণিবিভাজন আলোচনা করার মাধ্যমে মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। মূল কথা হলো সংকীর্ণতাবাদীর অংশগ্রহণমূলক এবং নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যে মিশ্র রাজনৈতিক অস্তিত্বের প্রভাব দেখা যায়।
০৭ রাজনৈতিক সংস্কৃতি কী?
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা : একটি দেশের মূল রাজনৈতিক মূল্যবোধের প্রতীক হলো সেদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি । রাজনীতি সম্পর্কে জনসাধারণের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতির এক সমন্বিত অভিব্যক্তি হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিক বিষয়াবলিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। এটি দেশবাসীর জন্য একটি ভাবগত ধারণা, মানসিক অনুভূতি তথা একটি বিশেষ মনোবৃত্তি।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি : সাধারণ সংস্কৃতির অন্যতম একটি মৌলিক রূপ হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাজনৈতিক জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। অন্যভাবে বলা যায় যে,
রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো সাধারণ সংস্কৃতির সেই অংশ যা রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের বিশ্বাস, অনুভূতি ও আদর্শ সম্পর্কে জ্ঞানদান করে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
অমল কুমার মুখোপাধ্যায় ((Amal Kumar Mukhopadhyay) তার প্রণীত ”Political Sociology’ শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, ”
Political culture is composed of attitudes and orientations which people in a given society develop toward objects within their political system.”
অ্যালান আর. বল ( Allan R. Ball ) এর মতে, “A political culture is composed of the attitudes, beliefs, emotions and values of society that related to the political system and to political issues.”
ভাবা ও অ্যালমন্ড ((Verba and Almond) বলেন, “রাজনৈতিক সংস্কৃতি কথাটি দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে কতিপয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বুঝায় যার দ্বারা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি নিজের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হয়।”
লুসিয়ান পাই (Lucyn Pye)) তার ”Aspects of Political Development’ গ্রন্থে বলেন, “Political culture is set of attitudes beliefs and sentiments.” আর. সি. ম্যাকরিডেস (R. C. Macrides) এর মতে, “Political culture is the commonly shared goals and commonly accepted norm’s.”.”
অ্যালমন্ড ও পাওয়েল (Almond and Powell ) বলেন, “রজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে বিশেষ জাতির লোকদের মধ্যে রাজনৈতিক মনোভাব, মূল্যবোধ, অনুভূতি তথ্য এবং দক্ষতার এক বিশেষ বণ্টন ।”
রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল নিহিত থাকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং মানুষের জীবনধারার বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে। বস্তুত রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে ব্যক্তিবর্গের এক অভিজ্ঞতাবাদী বিশ্বাসকে বুঝায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সুস্পষ্ট জ্ঞান, সচেতনমূলক মূল্যবোধ ও আদর্শের সমষ্টি। যার মাধ্যমে মানুষ তার রাজনৈতিক জীবনকে উন্নত করতে পারে ।
এমনকি একজন ব্যক্তি তার নিজের ব্যাপারে সচেতন হতে পারে এবং ব্যক্তিজীবনে আচার আচরণ, চলাফেরা, চিন্তাচেতনা বিশ্বাস, আবেগ অনুভূতি ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞানলাভের মাধ্যমে তা প্রচার করতে পারে।
০৮. সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি কী?
অথবা, সংকীর্ণবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংজ্ঞা দাও ।
উত্তরঃ ভূমিকা : রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো ব্যক্তির মনোভাব, বিশ্বাস ও অনুভূতির সমষ্টি। যা তার নিজস্ব ধারাতে অগ্রসর হচ্ছে। সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মনোভাব দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক শ্রেণিবিভাজন করা হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম একটি প্রকার হলো সংকীর্ণতাবাদী বা সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ”The Civic Culture” শীর্ষক গ্রন্থে অ্যালমন্ড ও ভার্বা রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রকার আলোচনা করেছেন। তার মধ্যে সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো অন্যতম। নিম্নে সংক্ষেপে সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
রাজনীতিতে জনগণের অনীহাকে বলা হয় সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি। একটি অনুন্নত দেশে এবং বিদ্যমান সনাতন সমাজব্যবস্থায় রাজনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে জনসাধরণের মধ্যে যে চেতনা, আগ্রহের অভাব ও ব্যাপক উদাসীনতা দেখা যায় তাই সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
এ ধরনের অনীহা ও উদাসীনতা থেকেই সংকীর্ণতাবাদী বা সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির সৃষ্টি সমাজে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কেও জনগণের মাঝে অভাব পরিলক্ষিত হয় যার অন্যতম কারণ সংকীর্ণতাবাদ । এ সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতির মনোভাব অবসানের জন্য শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ও রাজনৈতিক যোগাযোগের প্রসারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, এশিয়া ও আফ্রিকার এ দুটি মহাদেশে এখনো অনেক অনুন্নত অঞ্চল আছে যারা রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে উদাসীন। যারা রাজনীতিতে প্রবল অনীহা প্রকাশ করে এবং শিক্ষার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষাবিস্তার করার মাধ্যমে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার উৎসাহ দিতে হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণে র উদাসীন মনোভাব ও অনীহাকে বলা হয় সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। যা বিভিন্ন দেশে এখনো বিদ্যমান।
মোট কথা সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনসাধারণের উদাসীন মনোভাব ও অনীহা। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সমাজের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় না।
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDF)
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০৯. রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকারভেদ উল্লেখ কর।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো সাধারণ সংস্কৃতির একটি মৌলিক রূপ। রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে এমন কতকগুলো মনোভাব, বিশ্বাস ও অনুভূতিকে বুঝায় যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার রাজনৈতিক জীবন প্রণালিকে উন্নত করতে পারে। জনসাধারণের রাজনৈতিক মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গিকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকারভেদ তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকারভেদ : রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকারভেদ সম্পর্কে অধ্যাপক অ্যালান আর, বল তার ”The Civic Culture” গ্রন্থে সর্বপ্রথম আলোচনা করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “”Political cultures can be classified according to whether members of society and expect benefits from governmental activity, or whether there is a passive relationship in which individuals know very little about government activity and do not expect to share in the decision making process.” G. A. Almond রাজনৈতিক সংস্কৃতির তিনটি শ্রেণি উল্লেখ করেন। যথা :
১. সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি, ২ অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ৩. নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
নিম্নে এদের পরিচয় দেওয়া হলো—
১.. সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকারভেদগুলোর মধ্যে প্রধান ও প্রথম হলো সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি। সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে বুঝায় বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনসাধারণের চেতনা ও আগ্রহের অভাব বা ব্যাপক উদাসীনতা।
রাজনৈতিক জীবন প্রক্রিয়া ও জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে দেশবাসীর প্রবল অনীহাই সংকীর্ণতাবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতির সৃষ্টি করে। এ থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য শিক্ষাবিস্তারও রাজনৈতিক যোগাযোগের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে।
২ অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি : রাজনীতিতে জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সক্রিয় অংশগ্রহণ করে প্রত্যেক নাগরিক রাজনৈতিক বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।
একটি দেশের রাজনীতিতে ব্যক্তি মাত্রই সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির অংশগ্রহণ ও মূল্যায়ন এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম ও গরুত্বপূর্ণ প্রকার হলো নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জনগণের ভূমিকা খুবই গুরত্বপূর্ণ এতে বিদ্যমান রাজনীতিতে জ্ঞানীগণ রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের প্রভাব
প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন থাকে। রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণের মধ্যে এ প্রবণতার জন্য এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জ্ঞানীগণ তাদের রাজনৈতিক জীবনকে উন্নত করতে পারে। সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণিবিভাগ করে এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বলা সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই বলা যায়, যেকোনো দেশের জনগণকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি অর্জন করতে হলে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
১০. অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি কী?
অথবা, অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিচয় দাও ।
সমাজের সদস্য হিসেবে অর্জিত
উত্তর ভূমিকা : আচরণবিধিকে বলা হয় সংস্কৃতি। আর রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো রাজনীতি সম্পর্কে জনসাধারণের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতির এক সমন্বিত অভিব্যক্তি যার মাধ্যমে সে রাজনৈতিক বিষয়াবলিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। অধ্যাপক অ্যালমন্ড ও ভার্বা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যার অন্যতম একটি হলো অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ।
অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি : প্রচলিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণিবিভাজন করা হয়।
অধ্যাপক অ্যালমন্ড ও ভার্বা ”The Civic Culture” শীর্ষক গ্রন্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতির তিনটি শ্রেণির উল্লেখ করেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি শ্রেণি হলো অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
রাজনীতিতে প্রত্যেক নাগরিকের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করাকে অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে । এতে প্রত্যেক নাগরিক রাজনীতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। একটি দেশের নাগরিক মানেই সে ঐ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার একজন সক্রিয় সদস্য।
প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তির অংশগ্রহণ ও মূল্যায়ন এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যক্তি মাত্রই অধিক, ক্ষমতা ও কর্তব্য সম্পর্কে সতত সচেতন থাকে। অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনা ও মূল্যায়নের কথা বলা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে ডেভিস ও লুইস বলেন, “Evaluation and criticism of the system exist of levels and if is generally accepted as discernible that political activity should be under the close scrutiny of individuals and groups within society.”
তবে এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাব অনুকূল হতে পারে আবার প্রতিকূলও হতে পারে। অর্থাৎ অংশগ্রহণকারী বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংরক্ষণের ব্যাপারে সক্রিয় হতে পারে আবার অনুরূপভাবে আমূল পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির মনোভাব, বিশ্বাস ও অনুভূতি প্রভৃতির রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলা ও তাৎপর্য দান করে। আর অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিদ্যমান ।
রাজনৈতিক সমাজব্যবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণ তাদের অধিকার, কর্তব্য ও ক্ষমতা সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকে। তাছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)