রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি): ২য় অধ্যায় পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ২ – রাষ্ট্র(State)
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০৭. “ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয় ।” – ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়, কাম্যও নয়।” উক্তিটির যথার্থ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ক্ষমতা অর্জন। মানুষ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হবার পরই ক্ষমতা রাজনীতির এক ব্যাপক আলোচ্য বিষয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা একদিকে সরকারকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। অন্যদিকে, নাগরিক স্বাধীনতাও খর্ব করে।
তাই সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা ও নাগরিকের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি তত্ত্বের উদ্ভাবন করেন । গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রবর্তন করেন । আধুনিক কালে মন্টেস্কু এ নীতির প্রবর্তন করেন এবং ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
“ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়” : রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি আলোড়ন সৃষ্টি করলেও এ তত্ত্ব ভীষণভাবে সমালোচনার সম্মুখীন হয়। অনেকেই এ তত্ত্বের সমালোচনা করে বলেন যে, আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDF)
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. সরকারের বিভাগগুলো একে অপরের ওপর নির্ভরশীল : আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় কোনো এক বিভাগকে অন্য বিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব নয়। কারণ সরকারের বিভাগগুলো পরস্পরের সাথে এমনভাবে জড়িত যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের সুষ্ঠু নীতি অনুযায়ী সংবিধানকে কার্যকর রাখা সম্ভব নয়। যদি পৃথকীকরণ সম্ভব হতো তাহলে পৃথিবীর কোনো না কোনো রাষ্ট্রে পরিপূর্ণ পৃথকীকরণ অবশ্যই দেখা যেত।
২. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণে রাষ্ট্র নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ বা পৃথকীকরণ মোটেই সম্ভব নয়, এ সম্পর্কে ব্রুন্টসলি একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, জীবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন পরস্পরের সাথে রক্তমাংসের সম্পর্কে আবদ্ধ তেমনি সরকার এর তিনটি বিভাগও পরস্পরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।” এর একটিকে অপরটি হতে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করলে সরকারের অপমৃত্যু ঘটে। ফলে রাষ্ট্র নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে।
৩. রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ফলে সরকারের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে না। জন, স্টুয়ার্ট মিল বলেন, “সরকারের প্রতিটি বিভাগ যদি নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র হয় তাহলে একে অপরের কাজ হস্তক্ষেপ করবে এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।
” অধ্যাপক লাস্কি এর মতে, “সরকারের তিনটি বিভাগকে পৃথক করা হলে প্রতিটি বিভাগই নিজ নিজ দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা করবে। ফলে শাসনব্যবস্থায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে।”
৪. সরকার অখন্ড ও অবিচ্ছেদ্য : আধুনিক কালে সরকারের কোন বিভাগই কেবল নিজস্ব বিভাগীয় কার্য সম্পন্ন করে না বরং তাদের অন্যান্য বিভাগীয় কাজেও হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায়, সরকার এক, অখণ্ড কোনোভাবেই একে পৃথক সমীচীন নয় ও অবিচ্ছেদ্য সত্তা।
৫. জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অনুপযোগী : কয়েকজন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমালোচকের মতে, “জনকল্যাণকর রাষ্ট্রে জনকল্যাণকর নীতির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকর করা সম্ভব নয়।” কারণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির জটিলতা কল্যাণকর রাষ্ট্রের আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে।
৬. ফাইনারের অভিমত : অধ্যাপক ফাইনার বলেন, “পরিপূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগ করলে সরকার কখনো মূর্ছিত হবে, কখনো হাত পা ছুড়তে থাকবে।” যারা শাসনকার্যে নিযুক্ত আছেন তারাই উপলব্ধি করতে পারেন কিরূপ আইন প্রয়োগ করলে তাদের দায়িত্ব পালনে সুবিধা হবে। আইন প্রণয়নে যদি তাদের নিজস্ব ক্ষমতা না থাকে তাহলে শাসনকার্য পরিচালনা করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে।
৭. ভ্রান্ত নীতি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ধারণা ভ্রান্ত। ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ ব্যতীত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য রক্ষিত হতে পারে না-এ অভিমত যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও তা একমাত্র উপাদান নয় বরং জাগ্রত জনমত এবং জনগণের সতর্ক দৃষ্টিই ব্যক্তিস্বাধীনতার শ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ।
৮. ক্ষমতার পৃথকীকরণে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা সৃষ্টি : অধ্যাপক লাস্কি বলেন, “আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ যদি সম্পূর্ণ পৃথকভাবে কাজ করে তাহলে প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্বশীলতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হবে। ফলে স্বতন্ত্র বিভাগগুলো পরস্পরের মধ্যে সংঘাত আনবে এবং সংঘাত থেকে বিপ্লব সৃষ্টি হবে।”
৯. কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতির কঠোর প্রয়োগ সরকারের বিভাগগুলোর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে। ফলে এতে ঐক্যের মনোভাব ক্ষুণ্ণ হয় এবং সরকারের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। ম্যাকাইভার এর মতে, “এ নীতিকে কঠোরভাবে প্রয়োগের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য সৃষ্টি হবে।” তাই ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য অবাঞ্ছনীয়ও বটে ।
১০. সরকার তিনটি বিভাগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় : অনেক লেখক এ অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, সরকারের কাজ কেবল এ তিনটি বিভাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আচার গুডনার্ড ও অন্যান্য লেখকের মতে, সরকারের কাজ দুই শ্রেণির যথা আইন প্রণয়ন করা এবং আইন অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করা।
১১. সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় গতিশীল নয় : বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশেই সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় আইন ও শাসন বিভাগের ক্ষমতা মন্ত্রিসভার হাতে থাকে। তাই এক্ষেত্রে ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অভিপ্রেতও নয়, সম্ভবও নয়।
১২. মন্টেস্কুর ধারণা সংকীর্ণ ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করার একটি প্রতিষ্ঠানগত উপায় উদ্ভাবন করতে গিয়ে মন্টেস্কু ব্রিটেনের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিল।
অধ্যাপক ফাইনারের মতে, মন্টেস্কু দুটি মূল বিষয়ের প্রস্তাব করেন যেগুলোর মধ্যে কোনো অপরিহার্য যোগসূত্র নেই। প্রথমত, সরকারের বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা রয়েছে এবং দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতা লাভ করতে হলে ক্ষমতাকে কোনো প্রকারেই কেন্দ্রীভূত করা যাবে না।”
১৩. অবাস্তব নীতি : পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রেই ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ পরিপূর্ণ রূপ লাভ করেনি। মন্টেস্কু তার মত ব্যক্ত করার সময় বার বার ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন। কিন্তু ব্রিটেনে সরকারের বিভাগগুলো আলাদা হলেও ক্ষমতার একত্রীকরণ লক্ষণীয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যগণই মন্ত্রিসভার সদস্য এবং লর্ডসভা বিচারসংক্রান্ত সর্বোচ্চ আপিল আদালত ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির যথার্থ প্রয়োগ দেখা যায় বটে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে অবাস্তব প্রমাণ করেছে। রাষ্ট্রপতি, কংগ্রেস ও সুপ্রিম কোর্ট পরস্পর পরস্পরকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ মূলত অবাস্তব নীতি ।
১৪. আইন বিভাগের প্রাধান্য: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে মানতে হলে প্রত্যেক বিভাগকে ক্ষমতাসম্পন্ন করা দরকার। কিন্তু আধুনিক গণতন্ত্রে আইন বিভাগের স্থানই সকলের ঊর্ধ্বে। শাসন বিভাগের ওপর আইন বিভাগের অল্প বা অধিক নিয়ন্ত্রণ আছে । ব্রিটেনে অধিক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অল্প !
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান যুগে শাসন ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পুরোপুরি প্রয়োগ সম্ভব নয়। কারণ নানাভাবে সরকারের ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় প্রত্যেক বিভাগকেই একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে কাজ করতে হয়।
মূলত শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক রেখে কোনো সরকারই গঠন করা যায় না। ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ কোনো আধুনিক রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় সম্ভবও নয় এবং যুক্তিযুক্তও নয়। সুতরাং সরকারের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে পৃথক করার প্রয়োজন নেই। বরং এদের সুবিন্যস্ত এবং দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করাই বাঞ্ছনীয়।
০৮. রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর ।
অথবা, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীনকালে রাষ্ট্র ও সমাজ ছিল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলো ছিল একাধারে সমাজ ও রাষ্ট্র। আধুনিককালে রাষ্ট্র ও সমাজকে দুটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। সমাজ মানুষের সামাজিক সম্পর্কের একটি সামগ্রিক রূপ। রাষ্ট্র সমাজের অন্তর্ভুক্ত। তাই রাষ্ট্রের ও সমাজের উভয়ের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা : রাষ্ট্র ও সমাজের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগত সম্পর্কের ভিত্তিতে তুলনামূলক আলোচনা নিম্নে তুলে ধরা হলো—
রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক : রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে যেসব সাদৃশ্য বিদ্যমান তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো—
১. একে অপরের নিয়ন্ত্রক : রাষ্ট্র সমাজজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ সমাজের অন্তর্ভুক্ত সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি সামাজিক সংগঠনের অস্তিত্ব ও কার্যকলাপ রাষ্ট্রের ইচ্ছা ও নির্দেশের ওপর নির্ভরশীল ।
অপরদিকে, সমাজজীবনের কতকগুলো মূলনীতি রয়েছে। যেমন— মৌলিক প্রথা, রীতিনীতি ইত্যাদি। এসব মূলনীতিকে রাষ্ট্র শ্রদ্ধা করে। এগুলোকে উপেক্ষা করলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এভাবে সমাজ রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
২. উভয়কে উভয় সহযোগিতা করে : সমাজ ও রাষ্ট্র এক না হলেও উভয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে অবস্থান করতে পারে না। টিকে থাকার জন্য উভয়েই উভয়কে সহযোগিতা করে। রাষ্ট্র সামাজিক রীতিনীতি, প্রথাপ্রতিষ্ঠান, নীতিধর্ম ইত্যাদি যেমন অস্বীকার করতে পারে না তেমনি সমাজও রাষ্ট্রের নিয়মনীতি ও আইনকানুন অস্বীকার করতে পারে না।
৩. উদ্দেশ্যগত সম্পর্ক : উদ্দেশ্যের দিক থেকে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্র মানুষের কল্যাণময় জীবনের প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে অনুরূপভাবে সমাজের লক্ষ্য মানুষের জীবনকে সুন্দর করে তোলা ।
৪. আইন ও নীতির সম্পর্ক : রাষ্ট্রীয় আইন সাধারণভাবে সমাজের নীতিবোধের বিরোধী হতে পারে না। সুদীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি ও প্রথার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় আইন প্রণীত হয় । রাষ্ট্রীয় আইন যদি সামাজিক স্বার্থের বিরোধী হয় তাহলে সমাজ রাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে সে আইন পরিবর্তনে বাধ্য করে ।
৫. উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় : উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক সাদৃশ্য। রাষ্ট্র ও সমাজের যৌথ প্রচেষ্টাতেই কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সেখানকার জনগণের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় ।
রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য : রাষ্ট্র ও সমাজ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দুটি মৌলিক প্রত্যয়। নিম্নে উভয়ের মধ্যকার পার্থক্য তুলে ধরা হলো-
১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য : রাষ্ট্র বলতে এমন একটি জনসমষ্টিকে বুঝায় যারা একটি সুসংগঠিত সরকারের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাস করে। পক্ষান্তরে, সমাজ হলো পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিবর্গের সামাজিক বন্ধন যেখানে মানুষ কোনো সাধারণ উদ্দেশ্যে একসাথে বসবাস করে।
২. উৎপত্তিগত পার্থক্য : রাষ্ট্র গঠনের পূর্বেই সমাজের জন্ম ও বিকাশ হয়েছে। কিন্তু সমাজ গঠনের পরে রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটেছে। সমাজ গঠনের পর মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য সমাজবদ্ধভাবে মানুষের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে।
৩. পরিধিগত পার্থক্য : সমাজের পরিধি অনেক ব্যাপক। সমাজের পরিধি রাষ্ট্রের পরিধির তুলনায় ব্যাপক। যেমন— মুসলিম সমাজ কিছু রাষ্ট্র সমাজের একটি অংশবিশেষ। সমাজের মধ্যেই রাষ্ট্রের অবস্থান এবং সমাজের মধ্যেই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান।
৪. উদ্দেশ্যগত পার্থক্য : সমাজের উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক বন্ধন ও সহানুভূতি বৃদ্ধি করা। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো সংঘবদ্ধ মানুষের কল্যাণসাধন। এছাড়া রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য অনেকটা। রাজনৈতিক কিন্তু সমাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে সামাজিক।
৫. প্রতিষ্ঠানগত পার্থক্য : আইনগত উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে রাষ্ট্র হলো একটি সংগঠিত প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সমাজ হলো বহু সংগঠনের সমষ্টি। মানুষ তার বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একাধিক সংগঠনের সদস্য হতে পারে।
৬. সংঘগত পার্থক্য : বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংঘের সমন্বয়ে সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংঘের যাবতীয় সামাজিক কার্যাদি সমাজের অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য সংঘের মতে রাষ্ট্রও সমাজের একটি অন্যতম সংঘ।
৭. রাজনীতিগত রাষ্ট্র হচ্ছে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান । জনসমাজের রাজনৈতিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটির জন্ম। কিন্তু সমাজে তেমন কোনো রাজনৈতিক প্রভাব দেখা যায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য উভয়ই বিদ্যমান। রাষ্ট্র যেমন সমাজের সহায়ক, ঠিক তেমনি সমাজও রাষ্ট্রের সহায়ক। সমাজ ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
আবার রাষ্ট্রই সমাজজীবনকে সংগঠিত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রাষ্ট্র আছে বলেই সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা অটুট রয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্কার বলেন, “রাষ্ট্রের দ্বারাই সমাজ সুসংঘবদ্ধ হয়। রাষ্ট্রের দ্বারা এভাবে সংঘবদ্ধ না হলে সমাজ টিকে থাকতে পারে না।
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি পিডিএফ) অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ফ্রি পিডিএফ
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ৪টি ফ্রি পিডিএফ
০৯ রাষ্ট্রের উৎপত্তিসংক্রান্ত মতবাদসমূহ কী কী?
অথবা, রাষ্ট্রের উৎপত্তিসংক্রান্ত মতবাদসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্র সমাজের একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, রাষ্ট্র ও সমাজ একসাথে গড়ে ওঠেনি। রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রের উৎপত্তিসংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তবে আজকাল নৃতত্ত্ব, প্রতœতত্ত্ব, সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তির ঐতিহাসিক ধারা মোটামুটি অনুমান করা সম্ভবপর।
রাষ্ট্রের উৎপত্তিসংক্রান্ত মতবাদসমূহ রাষ্ট্রের উৎপত্তিসংক্রান্ত মতবাদসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো—
১. বিধাতার সৃষ্টিমূলক বা ঐশ্বরিক মতবাদ : বিধাতার সৃষ্টিমূলক বা ঐশ্বরিক মতবাদের মূল কথা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তাই রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু সৃষ্টির মূলে রয়েছেন তিনি। তিনি রাষ্ট্রকে সৃষ্টি করে তার প্রতিনিধির হাতে রাষ্ট্রের শাসনভার ন্যস্ত করেন।
বিধাতার সৃষ্টিমূলক বা ঐশ্বরিক মতবাদের বৈশিষ্ট্য : ঐশ্বরিক মতবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :
ক. অনুমোদিত : সমাজের তথা রাষ্ট্রের শাসন পদ্ধতি হিসেবে একমাত্র রাজতন্ত্রই ঈশ্বর কর্তৃক অনুমোদিত।
খ. দায়বদ্ধতা : রাজা শুধু ঈশ্বরের নিকট তার কার্যাবলির জন্য দায়বদ্ধ। প্রজাগণের কাছে তার কোনো জবাবদিহিতা থাকে না।
গ. আদেশ পালন : রাষ্ট্রের জনগণ কোনোরকম অজুহাত ছাড়াই রাজা কর্তৃত্ব প্রণীত সব ধরনের আদেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকে।
ঐশ্বরিক মতবাদের গুরুত্ব : ঐশ্বরিক মতবাদের গুরুত্ব নিম্নরূপ :
ক. নৈতিকতার অনুশাসন মান্য ধর্মীয় নীতির মাধ্যমে এ মতাবাদ সবাইকে নৈতিকতার অনুশাসন মান্য করতে উদ্বুদ্ধ করতো। গিলক্রিস্ট বলেন, ঐশ্বরিক মতবাদ রাজনীতিতে নৈতিকতার গুরুত্বকে স্থান দেয়।
খ. মননশীল পরিবেশ সৃষ্টি ঐশ্বরিক মতবাদে রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি প্রদত্ত হওয়ায় এর দ্বারা একটা মননশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতো। বস্তুত এসব কারণেই এর গুরুত্ব অত্যধিক।
গ. ধর্মীয় মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করে : বিধাতার সৃষ্টি মতবাদ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। গেটেল বলেন, ঐশ্বরিক মতবাদ রাষ্ট্রের বিকাশে ধর্মের গুরুত্বকে তুলে ধরে।
ঐশ্বরিক মতবাদের সমালোচনা সমালোচনাসমূহ নিম্নরূপ :
ক. অবাস্তব : বিধাতা যে রাজার হাতে ক্ষমতা অর্পণ করেছেন তার কোনো বাস্তব প্রমাণ নেই। কেবল ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে ঐশ্বরিক মতবাদ প্রচার করা হয়।
খ. রাজতন্ত্রের সমর্থক : ঐশ্বরিক মতবাদ মূলত রাজতন্ত্রের সমর্থক। কারণ এ মতবাদ রাজতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে। এ মতবাদের ফলে রাজা চরম ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রজাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে।
গ. গণতন্ত্রবিরোধী : ঐশ্বরিক মতবাদ অনুসারে শাসক তার কাজের জন্য বিধাতার কাছে দায়ী থাকেন, জনগণের নিকট নন । পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে বিবেচিত। শাসক তার কাজের জন্য জনগণের নিকট দায়ী থাকেন।
২. বল বা শক্তিপ্রয়োগ মতবাদ বলপ্রয়োগ মতবাদের মূল কথা হলো বলই রাষ্ট্রের ভিত্তি এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। এ মতবাদে বলা হয় যে, ক্ষমতালিপ্সা ও আত্মশক্তি প্রকাশ-এ দুটি মানুষের আদিম প্রবৃত্তি ।
বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদের গুরুত্ব বলপ্রয়োগ মতবাদের গুরুত্ব নিম্নরূপ :
ক. শাসন বজায় রাখা : অতীত এবং বর্তমানে দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে বলপ্রয়োগ মতবাদ শাসন বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে।
খ. শক্তির সমর্থনযোগ্যতা : কোনো রাষ্ট্রই শক্তির সমর্থন ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। নিয়মিত সেনাবাহিনী শক্তির সমর্থন জুগিয়ে থাকে
গ.. অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বিধানের জন্য এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ হতে রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য সামরিক শক্তির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগে শক্তি মতবাদ লক্ষ করা যায়।
বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদের সমালোচনা : বল বা শক্তি মতবাদের সমালোচনাসমূহ নিম্নরূপ : প্রয়োগ
ক. মানবতাবিরোধী : বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদের বিরুদ্ধে প্রথম যে অভিযোগটি ওঠে সেটি হচ্ছে এটি সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী এ মতবাদে মানুষের প্রতি পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও স্নেহ, মায়া-মমতা প্রভৃতি দিকগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।
খ. স্বৈরতন্ত্রের সমর্থক : পাশবিক শক্তি বা বলের ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে গিয়ে এ মতবাদের সমর্থকগণ মূলত স্বৈরতন্ত্রকেই সমর্থন করেছেন। এ মতবাদ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অস্বীকার করেছে। কেননা গণতন্ত্রে জনমত ও জনসম্মতির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয় ।
গ. বিপজ্জনক: বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদেরকে উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ধাবিত করে। ফলে রাষ্ট্রের সংহতি বিনষ্ট হতে পারে।
৩. পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক মতবাদ : পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক মতবাদ নিম্নরূপ :
পিতৃতান্ত্রিক মতবাদ : পিতৃতান্ত্রিক মতবাদ অনুযায়ী রাষ্ট্র পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের একটি স্বাভাবিক সম্প্রসারণ মাত্র।
মাতৃতান্ত্রিক মতবাদ : মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রবক্তাগণ মনে করেন যে, মাতৃতান্ত্রিক পরিবারই প্রাচীনতম সামাজিক সংগঠন।
পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক মতবাদের সমালোচনা : পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক মতবাদের সমালোচনা নিম্নরূপ :
ক. অবিশ্বাসযোগ্য : যেভাবে পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের উৎপত্তির বিবরণ দেওয়া হয়েছে আধুনিক প্রতিষ্ঠান জন্মের দিকে তাকালে তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না।
খ. ঐতিহাসিকতার অভাব : পিতৃতান্ত্রিক পরিবার মানবসমাজের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে; কিন্তু তাই বলে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার যে রাষ্ট্র সৃষ্টির একমাত্র ও প্রধান উপাদান এ কথার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই ।
খ. ঐতিহাসিকতার অভাব : পিতৃতান্ত্রিক পরিবার মানবসমাজের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে; কিন্তু তাই বলে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার যে রাষ্ট্র সৃষ্টির একমাত্র ও প্রধান উপাদান এ কথার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই ।
গ. ভ্রান্ত মতবাদ : পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক মতবাদ ভ্রান্ত বলে সমালোচিত হয়েছে। কারণ, কতকগুলো পরিবার নিয়ে বরং কতকগুলো উপজাতি নিয়ে প্রাচীন সমাজ গঠিত হয় ।
৪. সামাজিক চুক্তি মতবাদ : সামাজিক চুক্তি মতবাদের মূল কথা হলো রাষ্ট্র বিধাতার ইচ্ছায় বা বলপ্রয়োগে সৃষ্টি হয়নি, বরং সমাজে জনগণের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের ফলেই রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। টমাস হবস, জন লক, জ্যা জ্যাক রুশো প্রমুখ এ মতবাদের সমর্থক।
সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রভাব : সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রভাব নিম্নরূপ :
ক. গণতন্ত্র প্রসার : সামাজিক মতবাদ গণতন্ত্রের প্রসারে এক বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্র জনসাধারণের সম্মতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ সত্য যুগে যুগে জনসাধারণকে অধিকার এবং স্বাধীনতার আদর্শে অনুপ্রাণিত করে।
খ. সত্য উদঘাটন সম্ভবপর : সামাজিক চুক্তিবাদের আলোচনায় কয়েকটি মহান সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। রাষ্ট্রই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সার্বভৌমিকতা যে এক অবিভাজ্য এবং চিরস্থায়ী তাও পরিস্ফুট হয় এ মতবাদে।
গ. মোক্ষম হাতিয়ার : সামাজিক চুক্তিবাদ কুশাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এ মতবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজার অত্যাচার থেকে প্রতিরোধ করার প্রয়াস পেয়েছে।
৫. ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ : ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ মতে, রাষ্ট্র হঠাৎ একদিন ঈশ্বরের কৃপায় সৃষ্টি হয়নি। মানুষের চুক্তির ফলেও না। রাষ্ট্র ঐতিহাসিক বিবর্তনের ফলে উদ্ভব হয়েছে। নিম্নে এই মতবাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো—
ক. রক্তের সম্বন্ধ : রক্তের সম্বন্ধই ছিল অতীতে মানবসমাজে যোগসূত্র স্থাপনের পন্থা !
খ. ধর্মের বন্ধন : ধর্ম এবং ধর্মবোধ আদিম সমাজের আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
গ. বলপ্রয়োগ এবং যুদ্ধ : বলপ্রয়োগ বা যুদ্ধবিগ্রহ রাষ্ট্রের উৎপত্তির মূলে খুব কম প্রয়োজনীয় ছিল না। আইন ও রীতি এবং প্রথার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ প্রভৃতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় জীবন শুরু করেছে।
ঘ. ব্যক্তিগত সম্পত্তি : রাষ্ট্রের উৎপত্তিতে অর্থনৈতিক কার্যাবলি এবং ধন-সম্পত্তি রক্ষার জন্য একটি প্রধান কারণ ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাষ্ট্রের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনকে নিয়ে প্রাচীনকালে যেমন তৎপরতার শেষ ছিল না তেমনি বর্তমানেও কমতি নেই।
বিভিন্ন চিন্তাবিদ নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্বন্ধে আমাদের আরও প্রণিধানযোগ্য সূত্র প্রদানে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পঠিত হচ্ছে এবং অবদান রাখছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি:রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)