ফ্রি PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও ফ্রি PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: পর্ব:- ১ (প্রাচীন যুগ ) অধ্যায় ১, গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা
- পর্ব – ১ ( প্রাচীন যুগ )
- অধ্যায় ২ – সক্রেটিস
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৩
খ – বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. সক্রেটিসের পরিচয় দাও।
অথবা, সক্রেটিস সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : সক্রেটিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের সর্বপ্রথম দার্শনিক। যাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তিদের অন্যতম বলে গণ্য করা হয় তিনি হলেন গ্রিক চিন্তাজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তাকে পশ্চিমা দর্শনের ভিত্তি স্থাপনকারী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। জ্ঞান, বিজ্ঞান, যুক্তি, দর্শন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখার কারণে সক্রেটিসকে রাষ্ট্রদর্শনের আদি পিতা বলে সম্বোধন করা হয়।
সক্রেটিসের পরিচয় : নিম্নে সক্রেটিসের পরিচয় উল্লেখ করা হলো, জন্ম ও বংশ পরিচয় : সক্রেটিস খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৯ অব্দে (মতান্তরে ৪৭০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দ) গ্রিসের এথেন্স নামক নগররাষ্ট্রে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সফ্রোনিসকস। তিনি ছিলেন একজন ভাস্কর। তার মায়ের নাম ছিল ফেনারিটি। পেশায় ছিলেন একজন ধাত্রী।
- আরো পড়ুন:- PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রুশো: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-(ফ্রি PDF) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
শৈশব ও শিক্ষালাভ : সক্রেটিসের শৈশব সম্পর্কে খুব বেশি জানা না গেলেও এটি মনে করা হয় যে, তিনি পিতার কাজে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করেননি। তিনি মনে করতেন, দর্শনের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানই মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে পারে।
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই যাবতীয় দর্শনীয় জিনিসের সৃষ্টির রহস্য নিয়ে একনিষ্ঠভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। আর ২০ বছর বয়সেই তিনি আত্মার সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশ ও জীবনের উদ্দেশ্যকে জাগ্রত করতে নিজেকে সমর্পণ করেন।
যৌবনকাল : সক্রেটিস যৌবনকালে এথেন্সের সামরিকবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি পিলোপনেশিয় যুদ্ধে অংশগ্রহণপূর্বক সাহসিকতার পরিচয় দেন। পরবর্তীতে তিনি রাজনৈতিক পদেও অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যে রাজনীতি ছেড়ে তিনি তার দর্শন চর্চায় আত্মনিয়োগে করে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।
পারিবারিক জীবন : সক্রেটিসের পারিবারিক জীবনে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান ছিল। তার স্ত্রীর নাম ছিল জানথিপি। তার স্ত্রী নাকি খুবই বদমেজাজি ছিল, তবে এর কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। তার তিন সন্তানের নাম ছিল ল্যাস্কোক্লিস, সফ্রোনিকস ও মিনিক্সিনস। মৃত্যুকালে তার একজন সন্তান ছাড়া বাকি দুজন ছিলেন নাবালক ।
অবদান : দর্শনে সক্রেটিসের অবদান অত্যাধিক, যদিও তিনি কোনো বই লিখে যাননি। তার দুটি বিখ্যাত উক্তি হলো “Know thyself” এবং “Virtue is knowledge.
মৃত্যু : তৎকালীন এথেন্সের সরকার দার্শনিক ও শিক্ষক সক্রেটিসকে সহ্য করতে না পেরে যুবসম্প্রদায়কে বিপথগামী করার অভিযোগে খ্রিস্টপূর্ব ৩৯৯ অব্দে ৭০ বছর বয়সে হেমলক নামক বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সক্রেটিস তার দর্শনের জন্য মানব ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। আর তার অবিনাশী দর্শন আজও বিশ্ববাসীকে আলোকিত করছে।
গ্রিক চিন্তাজগতে তিনি ছিলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব তার দার্শনিক চিন্তার দ্বারা গ্রিক দর্শন এক নতুন দিগন্তের সন্ধান পায়। দর্শনশাস্ত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র সক্রেটিস তার জ্ঞানতত্ত্ব, রাষ্ট্রদর্শন ও নীতিতত্ত্ব সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
০২. “নিজেকে জানো।” এর যথার্থতা লেখ।
অথবা, “নিজেকে জানো।” সক্রেটিসের উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সক্রেটিস ছিলেন আধুনিক বিজ্ঞানের আদিপুরুষ ও জ্ঞানের পিতা হিসেবে সমধিক পরিচিত। যার হাত ধরে প্রাচীন গ্রিসে দর্শন চর্চা শুরু হয় এবং পরবর্তী দুই হাজার বছর পশ্চিমা সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তার দর্শনের মূলে ভিত্তি ছিল জ্ঞান। তিনি মনে করতেন, মানুষের চিন্তাই নতুন জ্ঞানের সন্ধান দিতে পারে; যার মাধ্যমে মানুষ তার নিজস্ব বিকাশ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
“নিজেকে জানো” এর যথার্থতা : সক্রেটিসের দর্শনের মূলকথাই ছিল “Know thyself.” অর্থাৎ, নিজেকে জানো। তার দর্শনের এ মূলকথার আলোকেই তিনি মানুষের আচরণ তত্ত্ব বা চরিত্র নীতিতেই সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন।
মানবজীবনের উদ্দেশ্য কী, আর সেই উদ্দেশ্য সাধনে মানুষের করণীয় কী, এগুলো ছিল তার দর্শনের মূল আলোচ্য বিষয়। সক্রেটিসের বক্তব্য হলো আমরা প্রত্যয়ের মাধ্যমে সব জ্ঞান অর্জন করি। এর অর্থ হলো বিচারবুদ্ধিই সব জ্ঞান লাভের উপায়। তিনি মনে করতেন, বুদ্ধি, যা সূত্র বলে গ্রহণ করবে তাই সত্যি।
তিনি আরও মনে করতেন, মানুষ তার নিজের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হলে জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি শিক্ষাকে দুই ভাগে ভাগ করেন। যথা : ১. প্রকৃত শিক্ষা ও ২. অপ্রকৃত শিক্ষা। তার মতে, প্রকৃত শিক্ষা অপরিবর্তনশীল কিন্তু অপ্রকৃত শিক্ষা ‘পরিবর্তনশীল । প্রকৃত শিক্ষার জন্য মনকে সর্বপ্রকার কালিমা ও অপ্রামাণিক বিশ্বাস থেকে মুক্ত করা দরকার।
সক্রেটিসের মতে, “আত্মজ্ঞান অর্জন” (Earning self knowledge) বা নিজেকে জানাই মানুষের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য । আত্মজ্ঞানই মানুষের পরম কাম্য। জ্ঞানের খাতিরে জ্ঞান নয়; ন্যায় ও সুনীতি পরিকল্পিত যথার্থ জীবনযাপনের ব্যবহারিক প্রয়োজনেই জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন ।
সক্রেটিস মনে করেন, জ্ঞানই মানুষের ভালোমন্দের নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। একজন সত্যিকারের জ্ঞানী মানুষ সর্বদাই ভালোকে ভালো হিসেবে অনুধাবন ও মন্দকে মন্দ হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। আর এ জ্ঞানই ব্যক্তিকে সদগুণ অর্জনে পরিচালিত করে।
আর এভাবেই জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে জানে এবং নিজেকে জানার মাধ্যমে ভালোমন্দের বিচার করার ক্ষমতা অর্জন করে। আর এ গুণ মানুষকে সৎপথে সত্যের সাথে পরিচালিত হতে সহায়তা করে। সুতরাং সক্রেটিসের মূল দর্শনই ছিল নিজেকে জানার মাধ্যমে বিশ্বকে জানা ও জ্ঞানের পরিধি বিস্তার করানো ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নিজেকে জানার মধ্যেই প্রকৃত যথার্থতা নিহিত। কেননা যে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে পারে না সে কীভাবে বিশ্বকে চিনবে? যে নিজের কল্যাণ বুঝে না, সে কী করে মানুষের কল্যাণ বুঝবে? নিজের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার মাধ্যমেই প্রকৃত উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা যায়।
তাই সক্রেটিস যথার্থই বলেছেন, “Know thyself.” (নিজেকে জানো)। এটিই ছিল তার দর্শনের মূলকথা। এরিস্টটলের রচনা থেকে সক্রেটিসের দর্শন সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য জানা যায়।
০৩. রাষ্ট্রদর্শনে সক্রেটিসের অবদান লেখ।
অথবা, রাষ্ট্রদর্শনে সক্রেটিসের অবদান সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : সক্রেটিস ছিলেন গ্রিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সর্বপ্রথম দার্শনিক। গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল অত্যধিক। ‘সত্য জ্ঞান’ ও ‘সত্য শাসন’ এ দুটি নীতির ভিত্তিতেই মূলত তিনি তার রাষ্ট্রদর্শন প্রতিষ্ঠিত করেন।
গ্রিসে সোফিস্টদের কূটতর্কের দরুন গ্রিক সমাজে যে সততা ও নৈতিকতার ধস নেমেছিল তাকে স্বীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্রেটিসের জ্ঞান সাধনা ও প্রচেষ্টা গ্রিক দর্শনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
রাষ্ট্রদর্শনে সক্রেটিসের অবদান : রাষ্ট্রদর্শনে সক্রেটিসের অবদান অপরিসীম। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো, ১. দর্শন আলোচনা পদ্ধতি : সক্রেটিস তার দর্শনের জ্ঞান মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য কথোপকথন বা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ব্যবহার করতেন এ পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি সমাজের জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে সত্য জ্ঞান প্রদান করতেন ।
২. গণতন্ত্রে অনীহা : তৎকালীন এথেন্সে যে ধরনের গণতন্ত্রের প্রচলন ছিল সক্রেটিস তার বিরোধী ছিলেন। কারণ সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন এ শাসনব্যবস্থা আত্মিক জ্ঞানের গভীরে গ্রোথিত নয় এবং দর্শনের জ্ঞানের ভিত্তিতে পরিচালিত নয় ।
৩. আত্মজ্ঞান অর্জন : সক্রেটিসের মতে, আত্মজ্ঞান অর্জন বা “Know thyself” (নিজেকে জানো) প্রতিটি মানুষের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য। কেননা যে নিজেকে জানতে পারে না, সে কী করে জগত সম্পর্কে জানবে?
৪. আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল : সক্রেটিস গণতন্ত্রের বিরোধিতা করলেও আইনের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নাগরিকের সব দায়দায়িত্ব মেনে চলতেন। এর প্রমাণ রেখে যান তিনি তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ সাদরে গ্রহণ করার মাধ্যমে।
৫. আত্মার অমরত্ব : জ্ঞানতাপস সক্রেটিস আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করতেন। তিনি মনে করতেন, আত্মা দেহের ভিতর বন্দি অবস্থায় থাকে এবং মানব দেহের মৃত্যুর পর তার মুক্তি ঘটে।
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ফ্রি PDF
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
৬. ধর্মমত : সক্রেটিসের নিজস্ব একটি ধর্মমত ছিল। তিনি তৎকালীন গ্রিসের বহু দেবতায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি একক ও শাশ্বত ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, একক ঐশ্বরিক শক্তির মাধ্যমেই সব পরিচালিত হয়।
৭. নৈতিক শিক্ষা : সক্রেটিস নৈতিক শিক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। তিনি মনে করতেন, সব জ্ঞানের মূলে রয়েছে নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক জ্ঞানই পারে মানুষকে কল্যাণের পথ ও পুণ্যের পথে পরিচালিত করতে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রদর্শনে সক্রেটিসের অবদান অপরিসীম। মানব ইতিহাসে সক্রেটিস একজন অমর আত্মার অধিকারী ছিলেন, যার আলো আজও বিশ্ববাসীকে আলোকিত করছে।
আর তার কর্মের মাধ্যমে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন পৃথিবীর বুকে। দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি যে অমূল্য অবদান রেখে গেছেন তা আড়াই হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতার চেতনাকে প্রভাবিত করেছে।
০৪. “সদগুণ বা পুণ্যই জ্ঞান।” সংক্ষেপে উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “সদগুণ বা পুণ্যই জ্ঞান।” উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞান বিকাশে সর্বপ্রথম যিনি চিন্তা করেন তিনি হলেন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস। তার হাত ধরেই জ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়। তাকে সর্বকালের জ্ঞানী ব্যক্তিদের আদিপুরুষ বলা হয়। তার দর্শন পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে আড়াই হাজার বছর প্রভাবিত করেছে।
জ্ঞানতত্ত্বই ছিল তার দর্শনের মূলকথা। তিনি বলেন, “জ্ঞানই হচ্ছে জিজ্ঞাসা ও অন্বেষা।” তিনি জ্ঞানের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানে ছিলেন পারদর্শী।
“সদগুণ বা পুণ্যই জ্ঞান” – উক্তিটির ব্যাখ্যা : সক্রেটিসের সার্বিক দর্শন জ্ঞানতত্ত্ব ‘Theory of Knowledge’ নির্ভর। “সদগুণই জ্ঞান” (Virtue is knowledge) বহুল উচ্চারিত এ প্রবাদই সক্রেটিসের দর্শনের মূলমন্ত্র।
সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন, অন্যায়, অনাচার ও কুসংস্কারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো সার্বিক জ্ঞান লাভ। তার মতে, জ্ঞান হচ্ছে জিজ্ঞাসা ও অন্বেষা তিনি মানুষের জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ মনে করতেন ।
সক্রেটিস বলেছেন, জ্ঞান ছাড়া আর কোনো পুণ্য নেই। যথার্থ জ্ঞানের উপলব্ধিই প্রকৃত মানবিক উৎকর্ষ সাধনের উপায়। তাই একে সক্রেটিসের দর্শনের মূলভিত্তি বলা যেতে পারে।
সক্রেটিসের মতে, ভালোমন্দের নির্ধারক হলো জ্ঞান। একজন প্রকৃত জ্ঞানী কোনটা আসল আর নকল ও ভালোমন্দের পার্থক্য করতে পারে। তখন জ্ঞানই হয়ে যায় মঙ্গল ও শুভ। জ্ঞান হলো ব্যক্তির সদগুণাবলি অর্জন ও বাস্তবায়নের অবলম্বন।
জ্ঞানই ব্যক্তিকে সঠিক পুণ্যের পথ দেখায় সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন, জ্ঞানী ব্যক্তি কখনোই সজ্ঞানে অন্যায় করতে পারেন না। তাই যে যত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে সে তত বেশি পুণ্য অর্জন করতে পারবে।
সেজন্যই সক্রেটিস বলেন যে, “সদগুণই জ্ঞান বা পুণ্যই জ্ঞান” সক্রেটিসের মতে, “I tell you that virtue is not given by money, but that from virtue comes money and every other good of man; public as well as private.”
সক্রেটিস তার জ্ঞানের এ মহান উক্তির মাধ্যমে বহু মানুষকে আকৃষ্ট করেন। বিশেষ করে গ্রিসের তরুণ সমাজের ওপর তার প্রভাব ছিল অত্যধিক। যার ফলে পরবর্তীতে তাকে তার জীবন বিসর্জন দিতে হয়।
মূলত তার জীবন বিসর্জনের মাধ্যমে তিনি জ্ঞানের অপার মহিমা প্রকাশ করে গেছেন এবং তার মৃত্যুকে তিনি জ্ঞান অর্জনের পথে পুণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, “জ্ঞানই পুণ্য” কথাটি যথার্থ। কেননা একমাত্র জ্ঞানই পারে মানুষকে মন্দ পথ থেকে দূরে রাখতে এবং সঠিক পথে পরিচালিত করতে।
তাই তিনি বলেছেন, “Virtue is knowledge. ‘ ” সক্রেটিসের এ নীতি এথেন্সের রাজনৈতিক জীবনকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। প্লেটোর সমগ্র রাজনৈতিক চিন্তাধারা সক্রেটিসের এ মতবাদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।
০৫. “সক্রেটিসের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ছিল আলোচনা ও কথোপকথনভিত্তিক। ” – সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “সক্রেটিসের আলোচনা পদ্ধতি ছিল দ্বান্দ্বিক ও কথোপকথনভিত্তিক।” সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : গ্রিসের সর্বপ্রথম দার্শনিক সক্রেটিস ছিলেন একজন নৈতিক দার্শনিক। সক্রেটিস মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, সৃষ্টিকর্তা একটি মহান উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর তা হলো জ্ঞান প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক পথ দেখানো ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করা।
তিনি জ্ঞান প্রচার ও অর্জনকে পুণ্যের কাজ বলে মনে করতেন। আর তাই বলেছেন, “Virtue is knowledge. অর্থাৎ, জ্ঞানই পুণ্য।
“সক্রেটিসের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ছিল আলোচনা ও কথোপকথনভিত্তিক।”- উক্তিটির ব্যাখ্যা : সক্রেটিস যে পদ্ধতির মাধ্যমে তার জ্ঞান প্রচার করতেন তাকে দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি (Dialectic Method) বলা হয়।
তার এ দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ছিল কথোপকথন ও আলোচনাভিত্তিক। তিনি মনে করতেন, নিয়মমাফিক আলোচনা ও কথোপকথনের মাধ্যমেই সঠিক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব।
তিনি যখন কোনো একটি বিষয়ে বিতর্ক আরম্ভ করতেন; তখন সে বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে না পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বিতর্ক চালিয়ে যেতেন ।
একে সক্রেটিসের আইরনি বা শ্লেষ (Irony of Socrates) বলা হতো সক্রেটিস তার আলোচনা ও কথোপকথন পর্বটি একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে শুরু করতেন।
তার দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হলো তিনি কারো নিকট কোনো প্রশ্ন করার আগে নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করে নিতেন এবং সততা, ন্যায়নীতি, সুন্দর, কল্যাণ, প্রেম ও নৈতিকতা প্রভৃতি অতি পরিচিত বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে বলতেন।
এভাবে তিনি তার সাধারণ বিষয়ে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন করতে থাকতেন, যা ঐ উত্তরদাতার পক্ষে উত্তর দেওয়া কঠিন বলে মনে হতো। এভাবে প্রশ্ন করার মাধ্যমে তৎকালীন বুদ্ধিজীবী শ্রেণির জ্ঞানের স্বল্পতা প্রমাণিত হয়ে যেত ।
সক্রেটিসের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে প্রথমে প্রতিপক্ষের মত স্বীকার করা হয় এবং পরে যৌক্তিক উপায়ে খণ্ডন করা হয়। সক্রেটিস প্রশ্ন উত্তরের আকারে আলোচনা করতেন এবং আলোচনার সময় এমন ব্যবহার করতেন যেন তিনি ঐ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তিনি তার প্রজ্ঞার মাধ্যমে তর্ক বা আলোচনার ফাঁদ পাততেন এবং যতক্ষণ না তার প্রতিপক্ষ পরাজয় বরণ করে নিজের ভল স্বীকার না করতেন। ততক্ষণ তিনি তার আলোচনা চালিয়ে যেতেন।
সক্রেটিস জ্ঞানার্জনের এ পদ্ধতিকে “একজন জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত ধাত্রীর প্রসূতিতন্ত্রের সাথে তুলনা করেছেন” এবং নামকরণ করেছেন দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সক্রেটিসের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি জ্ঞানবিজ্ঞান বিকাশের এক দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করেছে। তার দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ছিল আলোচনা ও কথোপকথনভিত্তিক,
যা তাকে আজও ইতিহাসে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে। তিনি এ পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের প্রভূত উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে সক্ষম হন ফলে গ্রিসের মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
০৬. সক্রেটিস ও সোফিস্টদের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
অথবা, সক্রেটিস ও সোফিস্টদের মধ্যে বৈসাদৃশ্যসমূহ সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : সক্রেটিস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের সর্বপ্রথম দার্শনিক। তার দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই পশ্চিমা বিশ্ব আড়াই হাজার বছর তাদের জ্ঞান সাধনা চালিয়ে যায়। তার সময়ে গ্রিসে সোফিস্ট নামে এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী সমাজ ছিল যারা জ্ঞান ও বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ ও বিচক্ষণ ছিল। সেই জ্ঞানী সমাজের সাথে সক্রেটিসের পার্থক্য তৈরি হয়। কারণ সক্রেটিস সবকিছুর সার্বিকতায় বিশ্বাস করতেন।
অপরদিকে, সোফিস্টরা ছিলেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর শ্রেণির। সক্রেটিস তার জ্ঞানের দর্শন দ্বারা তাদের তিনি পরাজিত করতে সক্ষম হন এবং তার অমর বাণী উচ্চারণ করেন, “Virtue is knowledge.” অর্থাৎ, জ্ঞানই পুণ্য।
সক্রেটিস ও সোফিস্টদের মধ্যে পার্থক্য : সক্রেটিস ও সোফিস্ট বা যুক্তিদর্শনবিদদের মধ্যে কিছু মিল থাকলেও পার্থক্যই ছিল বেশি। নিম্নে পার্থক্যসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. সক্রেটিস দর্শনের মূলকথাই ছিল নৈতিক অধঃপতন থেকে মানুষকে রক্ষা করা। অপরদিকে, সোফিস্ট দর্শনের মূলকথাই ছিল মানুষের ব্যবহারিক প্রয়োজন মিটানো ।
২. সক্রেটিস তার জ্ঞানতত্ত্বে সার্বিক জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। অপরদিকে, সোফিস্টরা ব্যক্তিগত জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন।
৩. সক্রেটিসের মতে, সত্যের সার্বিক মানদণ্ড রয়েছে। সব মানুষ যা ভালো মনে করেন তাই সার্বিকতা। অপরদিকে, সোফিস্টদের মতে, সত্যের কোনো সার্বিক মানদণ্ড নেই।
৪. সক্রেটিসের মতে, প্রকৃতি ও প্রথা পরস্পর সম্পর্কিত। কিন্তু সোফিস্টদের মতে, প্রকৃতি ও প্রথা পরস্পরবিরোধী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ।
৫. সক্রেটিসের দর্শন ছিল “Know thyself.” অর্থাৎ, নিজেকে জানো। অন্যদিকে, সোফিস্টরা মানুষকে বলত, “নিজেকে জাহির করো” ।
৬. সক্রেটিস তার জ্ঞানতত্ত্ব প্রচারে মানুষের নিকট হতে কোনো অর্থ গ্রহণ করতেন না। অপরদিকে, সোফিস্টগণ তাদের জ্ঞানতত্ত্ব প্রচার করার জন্য মানুষের নিকট হতে অর্থ গ্রহণ করতেন।
৭. সক্রেটিস জ্ঞানের ক্ষেত্রে বুদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। পক্ষান্তরে, সোফিস্টরা জ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিতেন।
৮. সক্রেটিস বলেন, ভালো অবশ্যই নৈতিকতার ভিত্তিতে সার্বিক হতে হবে কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্নে সোফিস্টরা বলত একজন ব্যক্তি যা ভালো মনে করে সেটিই তার জন্য ভালো ।
৯. সক্রেটিস তার জ্ঞানতত্ত্বে আত্মা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। অন্যদিকে, সোফিস্টরা আত্মা সম্পর্কে কোনো আলোচনা করতেন না।
১০. সক্রেটিস মনে করেন, জ্ঞানের ধারণা সার্বিক। তার মতে, জ্ঞান বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, সোফিস্টদের সব দর্শন হলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এরা মনে করতো জ্ঞান ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নৈতিকতা, সততা, জ্ঞানের দর্শনে সক্রেটিস ও সোফিস্টদের মধ্যে ছিল বিস্তর পার্থক্য তিনি সবকিছু সার্বিকতায় বিশ্বাস করতেন। পক্ষান্তরে, সোফিস্টরা ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
তাই বলা যায়, সক্রেটিস দর্শনের মূলেই ছিল মানুষের কল্যাণসাধন আর সোফিস্টদের দর্শনের মূলে ছিল ব্যক্তিগত লোভলালসা। সোফিস্ট চিন্তাধারার কোনো কোনো দিকের সাথে সক্রেটিসের চিন্তাধারার মিল থাকলেও প্রকৃতপক্ষে উভয় রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে পার্থক্যই ছিল বেশি।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। ফ্রি PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর