নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১৮-২৫ | PDF: বাংলা প্রথম পত্রের সিরাজউদ্দৌলা নাটক হতে গুরুত্বপূর্ণ সব সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা প্রথম পত্রের সিরাজউদ্দৌলা নাটক এর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর গুলো নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
প্রশ্ন\ ১৮\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জমিদার আদিত্য নারায়ণ সারাক্ষণ সুরা, নারী নিয়ে মেতে থাকেন। আর প্রজাদের উপর নানা রকম কর চাপিয়ে উৎপীড়ন করে, জুলুম করে রাজ্যে ত্রাসের সৃষ্টি করেন। প্রজারা তাকে একেবারেই ভালোবাসে না, শ্রদ্ধা করে না। তিনি শাসক হয়েও প্রজাদের সুখ দুঃখের খোঁজখবর রাখেন না এজন্যে প্রজারা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
ক. সিরাজউদ্দৌলার মায়ের নাম কী?
খ. সিরাজউদ্দৌলা একটি দিনের জন্যেও কেন সুখে নবাবি করতে পারেননি?
গ. উদ্দীপকের জমিদারের সাথে সিরাজের চরিত্রের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটি বিচার কর।
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১-৮ | PDF
সিরাজউদ্দৌলা | সিকান্দার আবু জাফর | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ৯-১৭ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ১৮-২৫ | PDF
নাটকঃ সিরাজউদ্দৌলা | সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর ২৬-৩১ | PDF
HSC | বাংলা ২য় | সংলাপ রচনা ১১-২০ | PDF Download
১৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সিরাজউদ্দৌলার মায়ের নাম আমেনা বেগম।
খ. চারদিকে ষড়যন্ত্রের দেয়াল, নিজের অমাত্যবর্গের বিশ্বাসঘাতকতা, আত্মীয়ের প্রতিহিংসার আগুন সব মিলিয়ে সিরাজ একদিনের জন্যেও সুখে নবাবি করতে পারেননি।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা মসনদে বসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা প্রকারের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তার সাথে যোগ দেয় সুযোগ সন্ধানী ইংরেজরা। যার কারণে নবাবকে সদা সতর্কভাবে চলতে হয়। হিসাব-নিকাশ করে পরিকল্পনামাফিক কাজে অগ্রসর হতে হয়।
একেতো বয়সে তরুণ তার উপর ঘরের কোণেই ষড়যন্ত্রকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের বসবাস। এজন্যে সারাটি সময় তাকে শঙ্কার মধ্যে অতিবাহিত করতে হয়। এজন্যে নবাব সিরাজ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একটি দিনের জন্যেও সুখে নবাবি করতে পারেননি।
গ. উদ্দীপকের জমিদারের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
চরিত্র মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিকতা, মানবিকতা সুন্দর চরিত্র গঠনে অপরিহার্য। এসব গুণ লক্ষ করা যায় নবাব সিরাজের মাঝে। যা উদ্দীপকের জমিদারের মাঝে অনুপস্থিত।
উদ্দীপকের জমিদার আদিত্য নারায়ণ একজন অনৈতিক চরিত্রের অধিকারী মানুষ। তিনি সারাক্ষণ সুরা নারী নিয়ে মশগুল থাকেন, আর প্রজাদের উপর নানা রকম কর, খাজনা চাপিয়ে তাদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন করেন।
এজন্যে প্রজারা তাকে মোটেও ভালোবাসে না, শ্রদ্ধা করে না। চরিত্রের এই অনৈতিক দিকগুলি নবাব সিরাজের মাঝে অনুপস্থিত। তিনি সৎ, নীতিবান, দৃঢ়চেতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ। প্রজাদের তিনি ভালোবাসেন। প্রজারাও তাকে ভালোবাসে। উভয় চরিত্রের মধ্যে বৈসাদৃশ্য এখানেই পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ভাবার্থের দর্পণ।” মন্তব্যটি মোটেও যথার্থ নয়।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকটি বহুমুখীতায় ঋদ্ধ। নাট্যকার সচেতনভাবেই ইতিহাসকে আশ্রয় করে বিভিন্ন ভাবেই অবতারণা ঘটিয়েছেন নাটকের জমিনে। যেখানে উদ্দীপকে মাত্র একটি দিকই উপস্থাপিত হয়েছে যা নাটকের একটি মাত্র দিককে নির্দেশ করেছে।
উদ্দীপকে একজন নীতিহীন লম্পট জমিদারের কথা উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি সারাক্ষণ সুরা নারী নিয়ে মেতে থাকেন। প্রজাদের উপর নানা রকম খাজনা ও কর চাপিয়ে দিয়ে উৎপীড়নের মাত্রা বড়িয়ে দেন। প্রজারা এতে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। উদ্দীপকের এই ভাবটি শুধু প্রজাবৎসল নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রজাদরদী চেতনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে মনে করিয়ে দেয় মাত্র নাটকের অন্যান্য দিকের কোনো ভাব উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বহুমুখী ভাবের অবতারণা ঘটেছে। ইংরেজদের এদেশে আগমন ঘটে এদেশের ধন-সম্পত্তির লোভে। একে একে তারা এদেশে ক্ষমতার জাল বিস্তার করতে থাকে। এজন্যে তারা নবাবের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং প্রথমে পরাজিত হয়।
আরও বর্ণিত হয়েছে নবাবের চারপাশের স্বার্থাম্বেষী মানুষের চক্রান্ত, আত্মীয়দের প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্র, সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতায় যুদ্ধে পরাজয় ও নবাবের নির্মম মৃত্যু প্রভৃতি। এসকল ভাবের একটিও উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়নি। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য একেবারেই অযৌক্তিক।
প্রশ্ন\ ১৯\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জোহরা : আর একদিন কি দুদিন। তারপরেই সে ঘোর সময় শুরু হবে। তুমি ফিরে এসো। আমার সঙ্গে ফিরে চলো।
কার্দি : যে ফিরে যাবে সে আমি হবো না। সে হবে বিশ্বাসঘাতক। সে হবে ইব্রাহিম কার্দির লাশ। তাকে দিয়ে তুমি কী করবে। …….. আমার সংকটের দিনে যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে, কর্মে নিযুক্ত করেছে, ঐশ্বর্য দান করেছে সে মারাঠাদের বিপদের দিনে আমি চুপ করে বসে থাকবো? পদত্যাগ করবো? দল ত্যাগ করবো? সে হয় না জোহরা।
ক. রায়দুর্লভের পিতার নাম কি?
খ. “এসেছ শয়তান। ধাওয়া করেছো আমার পিছু।” বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের কার্দি এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. “উদ্দীপকের কার্দির মতো ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাবের সেনাপতি বিশ্বস্ত থাকলে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুণœ থাকতো।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
১৯ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. করায়দুর্লভের পিতার নাম জানকীরাম।
খ. উক্ত কথাটি বলেছেন ঘসেটি বেগম সিরাজকে উদ্দেশ্য করে।
সিরাজ নবাব হওয়ার পর থেকে তার খালা ঘসেটি বেগম প্রতিহিংসায় জ্বলতে থাকেন। তিনি কোনো ভাবেই সিরাজের ক্ষমতা গ্রহণকে মেনে নিতে পারেন না। এজন্যে তিনি নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
এ কথা সিরাজ জানতে পেরে খালাকে নজরবন্দি করে রাখেন। এতে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। সিরাজ তাকে অনুসরণ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উক্ত উক্তিটি করেন। যাতে তার প্রতিহিংসা ও ঘৃণার ভাব প্রকাশিত হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের কার্দি এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফর চরিত্রের সাথে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
জগৎ-সংসারে নানা ধরনের মানুষ রয়েছে। কেউ নিজের দায়িত্ব কর্তব্যকে জীবন দিয়ে হলেও পালন করে আবার কেউ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে বিপথে চালিত হয়।
উদ্দীপকের কার্দি একজন দায়িত্বশীল বিশ্বস্ত সেনানায়ক। তিনি উপকারীর উপকার স্বীকার করেন তাইতো নিশ্চিত পরাজয় জেনেও একসময় সাহায্যকারীর পক্ষ তিনি কাপুরুষের মতো ত্যাগ করেননি। তার এই একনিষ্ঠ বিশ্বস্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিপরীত রূপ দেখতে পাই নাটকের মিরজাফর চরিত্রে।
তিনি হীনস্বার্থ উদ্ধারের জন্যে এক সময়ের আশ্রয়দাতা তথা দেশের শাসকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন প্রধান সেনাপতি হওয়া সত্তে¡ও। তার এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে বাংলা তার স্বাধীনতা হারায়। উভয় চরিত্রে বৈসাদৃশ্য এখানেই।
ঘ. উদ্দীপকের কার্দির মতো ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজের সেনাপতি বিশ্বস্ত থাকলে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুণœ থাকতো।” মন্তব্যটি সঠিক।
কাছের মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা করলে, ষড়যন্ত্র করলে তার পতন অনিবার্য। শত ক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও সে টিকে থাকতে পারবে না। ইতিহাস এই সত্যকেই প্রমাণ করে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
উদ্দীপকের কার্দি একজন বিশ্বস্ত দায়িত্বশীল সেনানায়ক। তাঁর একনিষ্ঠতা সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করে। তিনি জানেন আসন্ন যুদ্ধে তার বাহিনীর পরাজয় অবধারিত। তারপরেও তিনি কাপুরুষের মতো একসময়ের সাহায্যকারীর পক্ষ ত্যাগ করেননি। তার মতো এমন একজন বিশ্বস্ত সেনাপতি যদি থাকতো তবে বাংলার ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো।
বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের প্রধান সেনাপতি ছিলেন মিরজাফর। তিনি ছিলেন নীচ মানসিকতার অধিকারী। হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করেন নবাবের সাথে, জাতির সাথে। যার জন্যে বাংলা তার স্বাধীনতা হারায়। যদি উদ্দীপকের ‘কার্দির মতো নবাবের সেনাপতি বিশ্বস্ত হতেন তবে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুণœ থাকতো’ মন্তব্যটি তাই যথার্থই বলা যায়।
প্রশ্ন\ ২০\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শাকিলা ও নাজমা আহাদ সাহেবের জমজ দুই মেয়ে। দুবোন একই সাথে বেড়ে ওঠে। পরিণত বয়সে তাদের বিয়ে দেন। শাকিলার একটা ছেলে হলেও নাজমা নিঃসন্তান। আহাদ সাহেব তার সম্পত্তির সিংহভাগ অংশ শাকিলার ছেলের নামে উইল করে দেন। নাজমাকে দেন সামান্য অংশ। এতে নাজমা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। অনবরত শাকিলা এবং তার ছেলের ধ্বংস কামনা করে। অন্যের সাথে ষড়যন্ত্র করতে থাকে কীভাবে শাকিলা তার ছেলেকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা যায়।
ক. আমেনা বেগম ঘসেটি বেগমের সম্পর্কে কী হন?
খ. ঘসেটি বেগম কেন সিরাজের ধ্বংস কামনা করেন?
গ. উদ্দীপকের শাকিলার সাথে‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের নাজমা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগম চরিত্রের প্রতিভূ।” মন্তব্যটি বিচার কর।
২০ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. আমেনা বেগম ঘসেটি বেগমের ছোটবোন।
খ. নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে এবং বহুদিন লালিত প্রতিহিংসার কারণে ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজের ধ্বংস কামনা করেন।
নবাব আলিবর্দী খাঁ মৃত্যুর আগে তার দৌহিত্র সিরাজকে বাংলার মসনদের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করে যান। এবং তার মৃত্যুর পর সিরাজ নবাব হন। যা তার আত্মীয় পরিজনরা, বিশেষ করে যারা মসনদের স্বপ্ন দেখতো তারা মোটেও মেনে নিতে পারছিল না।
এমনকি তার বড় খালা ঘসেটি বেগম তার এই ক্ষমতা গ্রহণে যারপর নাই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এজন্যে তিনি সারাক্ষণ সিরাজের ধ্বংস কামনা করতেন। তিনি চাইতেন সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে। এজন্যেই তিনি সিরাজের ধ্বংস চাইতেন।
গ. উদ্দীপকের শাকিলার সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আমেনা বেগমের সাদৃশ্য রয়েছে।
ভাইবোনের সম্পর্ক দুনিয়ার সবচেয়ে পবিত্রতম। এই সম্পর্কের মধ্যেও যখন স্বার্থ এসে দাঁড়ায় তখন একে অপরের শত্র“ হয়ে পড়ে। উদ্দীপকের শাকিলা ও নাজমা এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আমেনা ও ঘসেটি বেগমের মধ্যে বোনের সম্পর্ক থাকলেও ব্যক্তিস্বার্থ ও প্রতিহিংসা তাদের মধ্যে দেয়াল তুলে দিয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায় আহাদ সাহেবের দুই মেয়ে শাকিলা ও নাজমা। এই শাকিলার ছেলেকে যখন আহাদ সাহেব তার সম্পত্তির সিংহভাগ দান করেন তখন শাকিলা এবং তার ছেলে নাজমার রোষানলে পড়ে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আমেনা বেগম অর্থাৎ নবাব সিরাজের মা এই একই পিরিস্থিতির স্বীকার হন।
সিরাজকে যখন আলীবর্দী খাঁ বাংলার মসনদের জন্যে মনোনীত করেন তখন আমেনা বেগম এবং তার ছেলে সিরাজ ঘসেটি বেগমের রোষানলে পতিত হন। উদ্দীপকের শাকিলা চরিত্রের সাথে এখানেই আমেনা বেগম চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের নাজমা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগম চরিত্রের প্রতিভূ।” মন্তব্যটি যথার্থ।
স্বার্থচিন্তা মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। তখন আত্মীয় পরিজনের কথাও মনে থাকে না। সে সর্বক্ষণ চিন্তায় থাকে কীভাবে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করবে। উদ্দীপকের নাজমা বেগম এবং নাটকের ঘসেটি বেগম এ ধরনের মানসিকতার অধিকারী।
উদ্দীপকের নাজমা ব্যক্তিস্বার্থে বিভোর একজন নারী। শাকিলা তার আপন বোন। সেই বোন এবং তার ছেলেকে তার পিতা সম্পত্তির সিংহভাগ যখন দান করে যান তখন সেটাকে সে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। প্রতিহিংসায় সবসময় নিজের ছোট বোনের এবং তার ছেলের সর্বনাশ কামনা করেন।
অন্যের সাথে ষড়যন্ত্র করেন কীভাবে আপন ছোটবোন এবং ছেলেকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে তাদের সম্পত্তি হস্তগত করা যায়। এমনই একটি চরিত্র ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগম। তিনিও ছিলেন আপন বোন এবং তার ছেলের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ।
সিরাজউদ্দৌলাকে যখন নবাব আলীবর্দী খাঁ বাংলার মসনদের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করে যান তখন থেকেই ঘসেটি বেগম সিরাজ এবং তার মা আমেনা বেগমের প্রতি ক্ষুব্ধ। আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর সিরাজ ক্ষমতা গ্রহণ করলে তিনি প্রতিহিংসায় উন্মাদিনী হয়ে যান।
কারণ তিনিও চেয়েছিলেন তার পোষ্যপুত্র সিংহাসনে বসুক এবং তিনি রাজ্য পরিচালনা করেন। এজন্যে তিনি সিরাজের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। যেমনটি দেখা যায় উদ্দীপকের নাজমা চরিত্রের মাঝে। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
প্রশ্ন\ ২১\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জমিদার : [সাহেবের পা জড়িয়ে ধরল] আমাকে বাঁচান হুজুর। আপনি আমার জন্মদাতা পিতা, আমি ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে কসম করছি, চিরদিন গোলাম হয়ে থাকব। ….
সাহেব : জমিদার মেরাজ আলী আমার পদ ছাড়–ন। উত্থান করুন ……
জমিদার : আমি আপনার অনুগত ভৃত্য হুজুর।
ক. ছোট-বড় মিলিয়ে নবাবের পক্ষে কতটি কামান ছিল?
খ. ‘বৃদ্ধ নবাবকে ছলনায় ভুলিয়ে সিংহাসন দখল করেছ” Ñ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের জমিদার ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি সম্পর্কে তোমার মতামত উপস্থাপন কর।
২১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ছোট-বড় মিলিয়ে নবাবের পক্ষে মোট দশটি কামান ছিল।
খ. উক্ত কথাটি বলেছেন সিরাজের বড়খালা ঘসেটি বেগম, সিরাজের মা আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে।
নবাব আলিবর্দী খাঁ সিরাজকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করার পর থেকে সিংহাসনের অন্যতম প্রার্থী ঘসেটি বেগম হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরতে থাকেন। এবং সিরাজ যখন বাংলার মসনদে বসেন তখন তিনি প্রতিনিয়ত সিরাজের ধ্বংস কামনা করতেন।
আমেনা বেগমকে তিনি বলেন, সিরাজ নবাব হওয়াই তার সবচেয়ে বড় ক্ষতি। তার মতে বৃদ্ধ নবাব আলীবর্দী খাঁকে ছলনায় ভুলিয়ে সিরাজ ক্ষমতা দখল করে। আর এজন্যেই তার সমস্ত রাগ হিংসা ঘৃণা সিরাজ এবং তার মায়ের উপর।
গ. উদ্দীপকের জমিদার ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফর চরিত্রের প্রতিনিধি।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নাট্যকার অতি সচেতনভাবে ইতিহাসকে ব্যবহার করেছেন। এখানে বাংলার স্বাধীনতা হারানোর জন্যে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছেন। তাদের চরিত্রের নেতিবাচকতা নাটকের নায়ক সিরাজকে আরও উজ্জ্বল ও বেগবান করেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায় জমিদার মেরাজ আলী একজন ইংরেজদের পদহেলনকারী জানোয়ার। তার ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই। নিজের অপকর্মকে ঢাকার জন্যে ইংরেজদের পা ধরে অনুরোধ করে এবং জন্মদাতা বলে স্বীকার করে। সে এতই নীচ মানসিকতার মানুষ যে বাঁচার জন্যে ধর্মকেও বিসর্জন দিতে চায়।
ঠিক এ ধরনের মানসিকতা লক্ষ করি নাটকের মিরজাফর চরিত্রে। তার ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই। নেই কোনো মানসিকতা বোধ। সেনাপতি হয়েও সে নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বাংলার মসনদে বসে এবং ইংরেজদের হাতের পুতুল হয়ে নবাবি চালায়।
সে এতটাই ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ যে ইংরেজদের হাত ধরে ছাড়া মসনদে বসে না। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সম্পূর্ণ ভাবকে ধারণ করেছে।” মন্তব্যটি আমার মতে যথার্থ নয়।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে রয়েছে বহুমুখী ভাবের সমাবেশ। সেখানে মাত্র একটি ভাবের দ্বারা নাটকের সম্পূর্ণ বিষয়কে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। প্লট বা কাহিনী অনুযায়ী আলোচনা বা বর্ণনা ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে কোনো বর্ণনা বা বিষয় উপস্থাপন করলে নাটকের মূলভাবকে প্রকাশ করা যায় না।
উদ্দীপকে দেখা যায় মেরাজ আলী নামের এক অত্যাচারী লম্পট জমিদার তার অপকর্মকে চাপা দেয়ার জন্যে ক্ষমতাধর ইংরেজদের হাতে পায়ে ধরে। পিতা বলে পরিচয় দেয়। চিরদিন ইংরেজের গোলাম হয়ে থাকার কথা স্বীকার করে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে। পা ধরে পড়ে থাকে। এটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের বহুমুখী দিকের মধ্যে একটি মাত্র দিক। এর পাশাপাশি বিচিত্র সব ভাব ও বিষয়ের সমাবেশ ঘটেছে নাটকের জমিনে।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রথমে দেখি বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ইংরেজরা এদেশে আসলেও ক্রমে তারা এদেশ শাসনের স্বপ্ন দেখে। এজন্যে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে।
সাধারণ মানুষের প্রতি অত্যাচার করে, নাটকে আরও রয়েছে এদেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের ইংরেজদের পক্ষে যোগদান এবং নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তার পতন ত্বরান্বিত করা, সেনাপতি ও পরিজনদের বিশ্বাসঘাতকতা, যুদ্ধে নবাবের পরাজয়, বন্দী হওয়া এবং নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা, ইংরেজদের হাতের পুতুল হিসেবে মিরজাফরের ক্ষমতা গ্রহণ ইত্যাদি যা উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি। তাই আমার মতে প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ নয়।
প্রশ্ন\ ২২\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জমিদার : আমি জমিদার। প্রজারা বলে আমি হায়ওয়ান আলী।
২। সুন্দরবনের বাঘ। রক্ত ছাড়া খাদ্য নাই।
আবু : আমারে মাফ করে দেন, বাড়ি ঘর ছেড়ে দিলেম, কাল সকালে বৌ এর হাত ধরে যেখানে হয় চলে যাব।
জমিদার : চলে যাবি?
১। উঃ আবার বৌ নিয়ে। মগের মুলুক।
জমিদার : জামাল। ওর হাতে চৌদ্দপোয়া করে ইট চাপিয়ে দে। যতক্ষণ টাকা না দেয়, চাবুক চালাবি। গুদাম ঘরে বন্দী।
আবু : মালিক, ঘরে আমার বৌ একলা। আতঙ্কে জীবন দিয়ে দিবে।
ক. দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে কোন স্থানের কথা উলেখ আছে?
খ. ‘আমাকে শেষ করে দিয়েছে হুজুর’ Ñ কে, কেন এ কথা বলেছে?
গ. উদ্দীপকের আবু ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের জমিদারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী একটি চরিত্র ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজ।” মন্তব্যটি বিচার কর।
২২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে নবাবের দরবারের কথা উলেখ আছে।
খ. কথাটি বলেছে ইংরেজদের অত্যাচারে সর্বস্বান্ত উৎপীড়িত ব্যক্তি।
ইংরেজরা এদেশে বাণিজ্য করতে এসে এদেশের সাধারণ জনগণের উপর নানা জুলুম অত্যাচার শুরু করে। নবাব সিরাজের কাছ থেকে লবণের ইজারা নিয়ে তারা লবণ উৎপাদন শুরু করে।
তারা প্রজাদের দাদন দিয়ে লবণ উৎপাদন করায় এবং কম দামে লবণ কিনে মজুদ করে এবং এক সময় দশ গুণ বেশি দামে সেই প্রজাদের কাছেই বিক্রয় করে। কোনো প্রজা যদি লবণ না বিক্রয় করে তখন তাদের উপর অত্যাচার করা হয়। সেই রকম অত্যাচারে অত্যাচারিত এক ব্যক্তি উক্ত উক্তিটি করে।
গ. উদ্দীপকের আবু ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের উৎপীড়িত ব্যক্তির প্রতিনিধি।
দুর্বলরা চিরদিনই সবলের কাছে নির্যাতিত হয়ে আসছে। বর্তমান সভ্যতার চরম উৎকর্ষের যুগেও এই ধারার পরিবর্তন ঘটেনি। উদ্দীপকে দেখা যায় দুর্বল প্রজার উপর জমিদার এবং নাটকে ইংরেজরা সাধারণ জনগণের উপর অত্যাচার করছে।
উদ্দীপকের চিত্রে দেখা যায় ‘আবু’ সাধারণ একজন চাষী। সে ঠিকমতো খাজনা দিতে না পারায় জমিদারের রোষানলে পড়ে। জমিদারের হুকুমে তাকে আটকে রাখা হয় এবং হাতে ইট দিয়ে দাঁড়িয়ে রেখে চাবুক মারার নির্দেশ দেয়া হয় যতক্ষণ না খাজনার টাকা দেয়। এরকম জঘন্য অত্যাচারের চিত্র রয়েছে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে।
এদেশের সাধারণ চাষীরা ইংরেজদের কাছে নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচারিত হতো। যার বাস্তব প্রমাণ নাটকের উৎপীড়িত ব্যক্তি। সাহেবদের কাছে লবণ বিক্রি না করার অপরাধে ইংরেজরা তার ঘর জ্বালিয়ে দেয়। তার স্ত্রীকে হত্যা করে। এই উৎপীড়িত ব্যক্তির সাথে সাদৃশ্য রয়েছে উদ্দীপকের আবুর চরিত্রের।
ঘ. “উদ্দীপকের জমিদার চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী চরিত্র ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজ।” মন্তব্যটি যথার্থ।
নাট্যকার নতুন মূল্যবোধের তাগিদে, ইতিহাসের বিভ্রান্তি এড়িয়ে ঐতিহ্য ও প্রেরণার উৎস হিসেবে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রটি আবিষ্কার করেছেন। ইতিহাসের কাছাকাছি থেকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি পদক্ষেপে ইতিহাসকে অনুসরণ করে তিনি সিরাজ চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন।
উদ্দীপকের জমিদারের চরিত্রে অঙ্কিত হয়েছে একজন অত্যাচারী, লম্পট, লোভী, দেশ শাসকের চিত্র। সে প্রজাদের উপর নিষ্ঠুর আচরণ করে। খাজনা দিতে না পারলে চাবুক চালায়। সে নিজেকে প্রজাদের রক্তখেকো বাঘ মনে করে। প্রজারা তাই তাকে বলে হায়ওয়ান আলী। জমিদারের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী চরিত্র নাটকের সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রটি।
নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র নবাব সিরাজ। তিনি একজন সৎ, নির্ভীক, দেশপ্রেমিক প্রজাপালক দেশ শাসক। তিনি দেশকে ভালোবাসতেন, প্রজাদের ভালোবাসতেন। সুখে দুঃখে প্রজাদের খোঁজখবর নিতেন। নৈতিক আদর্শে বলিয়ান এ দেশনেতার চরিত্রে ছিল দৃঢ়তা এবং মানবীয় সদ্গুণাবলিতে পূর্ণ। এজন্যে তিনি দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, দেশের মানুষের কল্যাণের প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন\ ২৩\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
শফিক সাহেবের কাছে এসে আশ্রয় চায় আট বছর বয়সী আকরাম। সে প্রায় বিশ বছর আগের ঘটনা। তখন থেকেই তিনি আকরামকে স্নেহ ভালোবাসায় বড় করে তোলেন। আকরাম শিক্ষিত হলেও তার মনটা ছোট। সে সুযোগ খোঁজে আশ্রয়দাতার সমস্ত সম্পত্তি হস্তগত করার। কোনো একদিন অস্ত্রের মুখে শফিক সাহেবকে তার সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিতে বাধ্য করে এবং নিজ হাতে আশ্রয়দাতাকে হত্যা করে।
ক. কোন কয়েদখানায় সিরাজকে বন্দি করে রাখা হয়?
খ. ক্লাইভ কেন সিরাজকে হত্যা না করা পর্যন্ত স্বস্তি পায় না?
গ. উদ্দীপকের আকরাম নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের শফিক সাহেব এবং নবাব সিরাজের করুণ পরিণতির কারণ একই।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
২৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জাফরাগঞ্জের কয়েদখানায় সিরাজকে বন্দি করে রাখা হয়।
খ. কারণ ক্লাইভ জানে প্রজারা সিরাজকে ভালোবাসে এবং যে কোনো সময় বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে। তাই তিনি তাড়াতাড়ি চান সিরাজকে হত্যা করতে।
পলাশী যুদ্ধে সিরাজ পরাজিত হওয়ার পর পাটনা যাওয়ার পথে ভগবানগোলায় বন্দি হন।
তাকে রাখা হয় জাফরাগঞ্জের কয়েদখানায়। কর্নেল ক্লাইভ সিরাজকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় না। সিরাজের মৃত্যু নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তার স্বস্তি নেই, কারণ সে জানে সিরাজ প্রজাদের খুব ভালোবাসতেন। প্রজারাও তাকে ভালোবাসতো। তাই প্রজারা ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করার আগে সে সিরাজকে হত্যা করতে চায়।
গ. উদ্দীপকের আকরাম ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মোহাম্মদি বেগ চরিত্রের প্রতিনিধি।
যে উপকারীর উপকার স্বীকার করে না সে নরকের কীটেরও অধম। তার মাঝে মনুষ্যত্ব বলতে কিছু থাকে না। যে মানুষ নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে এ ধরনের জঘন্য কাজ করে সে কখনোই কারো ভালোবাসা পায় না। উদ্দীপকের আকরাম এবং নাটকের মোহাম্মদি বেগ এ ধরনের চরিত্রের মানুষ।
উদ্দীপকের আকরাম ছোটবেলায় শফিক সাহেবের কাছে আশ্রয় চায়। দয়ালু শফিক সাহেব তাকে আশ্রয় দেন এবং তাকে আদর স্নেহ দিয়ে বড় করে তোলেন। কিন্তু কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। আকরামের হীন মানসিকতার জন্যে সে আশ্রয়দাতার সম্পদের লোভে তাকে হত্যা করে সমস্ত সম্পত্তি হস্তগত করে।
‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে এমনই একটা চরিত্র মোহাম্মদি বেগ। সে ছোটবেলা থেকে সিরাজের মায়ের স্নেহছায়ায় আশ্রয় লাভ ও বড় হয়েছে। সামান্য কিছু টাকার জন্যে সে সিরাজকে হত্যা করে। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই।
ঘ. “উদ্দীপকের শফিক সাহেব এবং সিরাজউদ্দৌলার করুণ পরিণতির কারণ একই।” মন্তব্যটি যথার্থ।
অর্থ-সম্পদের লোভ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। একবার সেদিকে দৃষ্টি গেলে মানুষের সমস্ত নৈতিকতা, মূল্যবোধ হারিয়ে যায়। মানুষ তখন অমানুষে পরিণত হয়। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সে তখন বিরাট পাপ কাজ করে বসে। সেই পরিস্থিতির স্বীকার হয় সমাজের নিষ্পাপ ভালো মানুষগুলো।
উদ্দীপকের শফিক সাহেব এমনই একজন নরপশুর আক্রমণের শিকার। যাকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন, কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন সেই তার বুকে চরম আঘাত হানে। তার মৃত্যুর কারণ তার সম্পত্তি। এই সম্পত্তির লোভে তারই আশ্রিত এবং পালিত আকরাম তাকে হত্যা করে। এমনই পরিণতির শিকার হতে দেখি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে।
সিরাজউদ্দৌলা নবাব হবার পর তার আত্মীয় পরিজন ক্ষমতা ও ধন সম্পত্তির লোভে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সম্পদ হস্তগত করার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। এর জন্যে তারা বিদেশি ইংরেজদের সাথে হাত মেলায়।
এক পর্যায়ে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে যুদ্ধে তার পরাজয় ঘটে। শেষ পর্যায়ে তাদেরই আশ্রিত এবং তার মায়ের কাছে পালিত মোহাম্মদি বেগ টাকার লোভে তাকে হত্যা করে। তাই বলা যায় উভয়ের পরিণতির কারণ একই।
প্রশ্ন\ ২৪\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে বাঙালিরা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বাংলার স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনে। তিনি বাংলার মানুষের শান্তির জন্যে, কল্যাণের জন্যে আজীবন কাজ করে গেছেন। অথচ দেশ স্বাধীন হবার পর এদেশেরই কিছু সেনা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
ক. নবাব সিরাউদ্দৌলাকে প্রথম কী দ্বারা আঘাত করা হয়?
খ. ‘নিশ্চিন্ত হোক বাংলার প্রত্যেকটি নরনারী’- বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের প্রতীক? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের পরিণতি একই” মন্তব্যটি বিচার কর।
২৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে প্রথম লাঠি দ্বারা আঘাত করা হয়।
খ. উক্ত বাক্যটি দ্বারা নবাব সিরাজউদ্দৌলার গভীর দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার ভাবটি প্রকাশিত হয়েছে।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের সেনার হাতে বন্দি হয়ে জাফরাগঞ্জ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। তাঁকে বাঁচিয়ে রাখাটা শত্র“পক্ষের কাছে ভীতিজনক হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু বন্দি হয়েও নির্ভিক সিরাজ অবিচল।
তিনি আলাহর দরবারে মোনাজাত করেন এদেশের মঙ্গল কামনায়। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তিনি এদেশের জন্যে এদেশের জনগণের জন্যে মোনাজাত করেন। কারণ তিনি ছিলেন প্রজাদরদী দেশপ্রেমিক নেতা।
গ. উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্রের প্রতীক।
একজন যোগ্য নেতাই পারে জাতিকে রক্ষা করতে। সঠিক পথে চালনা করতে। দেশ ও জাতির দুর্যোগময় মুহূর্তে তার হাত ধরেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়। উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নাটকের নায়ক সিরাজ এমনই দেশনেতা।
উদ্দীপকে দেখা যায় দেশনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর আহŸানে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনে। তিনি এদেশের জন্যে এদেশের মানুষের জন্যে সারাজীবন নিরলস পরিশ্রম করেছেন।
কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারই কতিপয় সেনার হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এমনই একটা চরিত্র নাটকের সিরাজউদ্দৌলা। তিনিও প্রজাবৎসল দেশপ্রেমিক নেতা। দেশের কল্যাণের জন্যে তিনি কখনও কারও সাথে আপোষ করেননি। অথচ এদেশের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে তিনি পরাজিত ও নিহত হন। উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য এখানেই লক্ষণীয়।
ঘ. “উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের পরিণতি একই”। মন্তব্যটি সার্থক।
একজন সাহসী ও মহান নেতার হাত ধরেই একটি দেশ বা জাতি সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন এ ধরনেরই দেশনেতা। অথচ এদেশের বিপথগামী কিছু মানুষ তা না বুঝে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে।
উদ্দীপকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নেতা। তাঁর হাত ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং জয় লাভ করে। অথচ হাজার বছরের এই শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে কতিপয় বাঙালি সেনার হাতেই নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়। এমনই পরিণতি বরণ করতে দেখি নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা এ দেশের জন্যে এদেশের মানুষের জন্যে কী না করেছেন। জীবনের সমস্ত আয়েস বিসর্জন দিয়ে নিরন্তর দেশের কল্যাণের চিন্তায় মশগুল থেকেছেন।
তিনি বাস্তবেই ছিলেন প্রজাবৎবল দেশ শাসক। অথচ ক্ষমতার লোভে ও প্রতিহিংসায় এদেশের মানুষের ষড়যন্ত্রে আটকা পড়ে তার করুণ মৃত্যু ঘটে। নিজের সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি পরাজিত হন এবং আশ্রিত মোহাম্মদি বেগের হাতে মৃত্যুবরণ করেন। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
প্রশ্ন\ ২৫\ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সাহেব : সো নেটিভ জমিদার, বিদায় হও। আমি তোমাকে রক্ষা করিব। নিদ্রা যাও আর মুখ দ্বারা নাসিকা গর্জন কর।
[জমিদার সেলাম করতে করতে বিদায় নিল]
লেডিস এ্যান্ড জেন্টলম্যান, লর্ড কর্নওয়ালিসের খুব বুদ্ধি ছিল। তিনি পারমানেন্ট সেটেলমেন্ট দ্বারা জমিদার করিলেন আর জমিদারগণ লেজ নাড়িতে লাগিল। আপনারা বলেন, কর্নেল ক্লাইভ যুদ্ধ করিয়া বঙ্গদেশ জয় করিলেন নো, নেভার। আই মাস্ট নট টক লাইক এ্যান ইডিয়ট। ইতিহাসকে মিথ্যা করিতে পারিব না। বাংলাদেশের মেরাজ আলীসকল আপন হস্তে ক্লাইভের পকেটে বাংলাদেশ ঘুষড়াইয়া দিলেন। সো লঙ লিভ মেরাজ আলী, লঙ লিভ জমিদার জাতি।
ক. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম বাণিজ্য কুঠি কোনটি?
খ. ইংরেজ জাতি ভারতবর্ষে কেন আসে?
গ. উদ্দীপকের সাহেব ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রকে মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের সাহেবের মন্তব্যটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সত্য।” মন্তব্যটি যাচাই কর।
২৫ নং প্রশ্নের উত্তর
ক.. ইস্ট ই্িন্ডয়া কোম্পানির প্রথম বাণিজ্য কুঠি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ।
খ. প্রাথমিকভাবে ইংরেজ জাতি বাণিজ্য করার জন্যে এলেও এদেশে উপনিবেশ স্থাপনই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
ভাস্কো-দা-গামার আবি®কৃত জলপথে ভারতবর্ষে ইংরেজদের আগমন ঘটে। প্রথমে তারা বাণিজ্য করার বাসনা নিয়ে আসলেও এদেশের সম্পদ দেখে এখানে উপনিবেশ স্থাপন করার স্বপ্ন দেখে। ক্রমে তারা শক্তি সঞ্চয় করে এবং ছলে বলে কৌশলে এদেশের মানুষকে হাত করে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে।
গ. উদ্দীপকের সাহেব ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ক্লাইভ সাহেব চরিত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়।
ইংরেজরা প্রগতিশীলতার শীর্ষে অবস্থান করলেও তারা মানুষকে শোষণ করার নীতি থেকে এক পাও সরে আসেনি। সারা পৃথিবীর দুর্বল কোনো জাতি তাদের আগ্রাসনের হাত থেকে রেহাই পায়নি। তাদের সেই স্বভাবের পরিচয় পাই উদ্দীপকে এবং নাটকে।
উদ্দীপকের সাহেব চরিত্রে ইংরেজদের চরিত্রের সবটুকু ফুটে উঠেছে। সে জমিদারদের হস্তগত করে এদেশের সাধারণ জনগণকে শোষণের পথকে ত্বরান্বিত করে। তার বক্তব্যে ইংরেজদের চরিত্রের যাবতীয় নেতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে।
এমনই একটা চরিত্র ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কর্নেল ক্লাইভ। সে প্রথমে দেশের ক্ষমতালোভীদের সাথে ভালো ব্যবহার করে তাদের সাথে সখ্যতা স্থাপন করে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা হস্তগত করে। উভয় চরিত্রের এখানেই সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের সাহেবের বক্তব্যটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সত্য।” মন্তব্যটি যথার্থ।
এমন কোনো কাজ নেই যে কাজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে ইংরেজ জাতি করতে পারে না। তাদের মজ্জাগত স্বভাব হলো ছলে বলে কৌশলে ক্ষমতা হস্তগত করা, শাসন শোষণ করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়া। উদ্দীপকের এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের এমন রূপেই দেখা যায়।
উদ্দীপকের সাহেবের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে ইংরেজ জাতির প্রকৃত রূপটি। তার মতে কর্নেল ক্লাইভ যুদ্ধ করে বঙ্গদেশ জয় করেনি করেছে ছলনা ও চাতুরীর সাহায্যে। আর তাকে সাহায্য করেছে কিছু কাপুরুষ ক্ষমতালোভী এদেশের ঘৃণ্য চরিত্রের মানুষ। সাহেবের এই বক্তব্যটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সত্য।
নাটকে দেখা যায় ইংরেজ জাতি প্রথমে বাণিজ্য করার নামে এদেশে এলেও ক্রমে তারা এদেশে ক্ষমতার শিকড় গভীরে প্রবেশ করাতে থাকে। এজন্যে তারা নানা চাতুরতা, ষড়যন্ত্র, শক্তি প্রয়োগ করতে থাকে। তাদের সাহায্য করে এদেশের কিছু ক্ষমতালোভী হীন চরিত্রের মানুষ। সে সুযোগ গ্রহণ করে ইংরেজরা এদেশের শাসন ব্যবস্থাকে নিজেদের করায়ত্ত করে। তাই বলা যায় প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।