HSC | তাহারেই পড়ে মনে | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ১১-১৫ | PDF : বাংলা ১ম পত্রের তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি হতে যেকোনো ধরনের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা ১ম পত্রের তাহারেই পড়ে মনেকবিতাটি হতে গুরুপূর্ণ কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বার:তের বছর বয়সে নাসরিনের বিয়ে হয়। দুরন্ত নাসরিন বিবাহ সম্পর্কে কিছুই বুঝে না। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে সে মুগ্ধ হলেও স্বামীর প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন নয়। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে সে স্বামীর প্রতি কর্তব্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এখন তার একমাত্র প্রিয়জন হলো তার প্রাণপ্রিয় স্বামী। একদিন বেড়াতে বের হলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তার প্রাণপ্রিয় স্বামী এতে সে শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্য এখন তার অন্তরকে স্পর্শ করে না।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার কততম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়?
খ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বসন্তের আগমনে কবি উদাসীন কেন?
গ. স্বামীর প্রতি নাসরিনের ভালোবাসা সুফিয়া কামালের ভালোবাসার সঙ্গে কতটুকু সাদৃশ্যপূর্ণ?:ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘স্বামীর অকাল মৃত্যুতে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য কবির মতো নাসরিনের অন্তরকেও স্পর্শ করতে পারেনি’:‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
১১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকার ষষ্ঠতম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
খ. বসন্তের নয়নলোভা সৌন্দর্য থাকা সত্তে¡ও কবিমনে আজ তীব্র উদাসীনতা, আচরণে অনাকাক্সিক্ষত বিষণœতা। কেননা বসন্তের আগমনের কিছুকাল পূর্বেই যাবতীয় রিক্ততা, শূন্যতা আর নিঃস্বতা নিয়ে শীত ঋতু হারিয়ে গেছে পুষ্পশূন্য দিগন্তে। শীতের প্রকোপে বৃক্ষলতা হয়েছে পত্রহীন, পুষ্পীন, পাণ্ডুর এবং শ্রীহীন। এর আগমন ও বিদায়ে প্রকৃতি থেকেছে নীরব। শীতের এই উদার্য কবির কাছে শীতকে মহিমান্বিত করেছে। তাই কবি শীতকে ভুলতে পারেন নি।
শীতের রিক্ত ও নিঃস্বভাব কবিচিত্তে যে বেদনার সঞ্চার করেছে তার আবেগেই তিনি নির্মোহ এবং নিশ্চল। একটি চরম দুঃখবোধ বা কিছু হারানোর বিলাপ কবির মানসে পূর্ণ আসন দখল করেছে।
তাই কখন চুপিসারে তাঁর দ্বারে বসন্তের আগমন ঘটেছে তা তিনি লক্ষ্য করেন নি। তিনি উদাসীনভাবে বসন্তকে উপেক্ষা করেছেন। ফলে বসন্তের আগমনকে তিনি স্বাগত জানাতে পারেন নি।
গ. স্মামীর প্রতি নাসরিনের ভালোবাসা সুফিয়া কামালের ভালোবাসার সঙ্গে যথেষ্ট সাদৃশ্যপূর্ণ। কিশোরী বয়সের দুরন্তপনার দিনের শুরুত্বে নাসরিনের বিয়ে হয়ে যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও স্বামীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বুঝে ওঠতে পারে না সে।
কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে যতই নাসরিনের স্বামীর কাছাকাছি যেতে থাকে ততই সে নিজের জীবনে স্বামীর গুরুত্বকে উপলদ্ধি করতে শেখে। ধীরে ধীরে সে স্বামীর প্রতি করণীয় সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং স্বামীকে একান্ত আপন করে নিয়ে ভালোবাসতে শুরু করে।
স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা গভীর হতে হতে যখন মহীরূহ আকার ধারণ করে তখন এক সড়ক দুর্ঘটানায় আকস্মিকভাবে তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর মৃত্যু হয়। এতে সে এতটাই শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে, যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক সময় তাকে মুগ্ধ করত, এখন তা আর তাকে স্পর্শও করে না।
তাহারেই পড়ে মনে কবিতায় কবি সুফিয়া কামালেরও স্বামীর প্রতি অনুরূপ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। কবির প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্বামীই ছিলেন তার কাব্য সাধনার প্রেরণার উৎস, উৎসাহদাতা, ভালোবাসার ধন। তাই স্বামীর মৃত্যুতে কবি শোকে বিহŸল হয়ে পড়েন।
নীরব, নিশ্চল, নিস্তব্ধ হয়ে পড়েন তিনি। স্বামী হারানোর বেদনা তার হৃদয়ে এমনভাবে বিধেছে যে, মহাসমারোহে বসন্তের আগমন তার মনে কোনো আবেদনই সৃষ্টি করতে পারেনি।
প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য সকল রূপসজ্জা একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়েছে তার বিরহী মনের রিক্ততার কাছে। স্বামীর প্রতি নাসরিনের ভালোবাসাও কবির অনুরূপ। আর তাই তাদের বেদনার স্বরূপও একইভাবে ফুটে ওঠেছে কবিতা ও উদ্দীপকে।
ঘ. স্বামীকে হারানোর তীব্র শোক কবি সুফিয়া কামালের মতো উদ্দীপকের নাসরিনের বসন্ত উৎসবকে নিরুৎসব করে দিয়েছে। স্বামীকে ভালোবেসে নাসরিন যে সুখের সংসার পেতেছিল তা সারা বছর জুড়েই থাকত বসন্তময়। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা গেলে বসন্তেও তার হৃদয়ে বেজে ওঠে শীতের রিক্ততার করুণ হাহাকার।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির হৃদয়ও একই রকম হাহাকার বসন্তের আগমনকে অর্থহীন করে তুলেছে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটিতে অন্তর্লীন হয়ে আছে কবি সুফিয়া কামালের বিষাদময় রিক্ততার সুর।
কবিতায় শীতের জরাজীর্ণ ও রিক্ততার মধ্যে উৎসারিত হয়েছে কবির জীবনের পুষ্পশূন্য হৃদয়ের ব্যথা:শতরূপে, শতধারায়। সুন্দরের পসরা সাজিয়ে প্রকৃতির উদার প্রান্তরে মহাসমারোহে বসন্ত এসেছে অপূর্ব রূপরাশি ও সৌন্দর্য সম্ভারে সুসজ্জিত হয়ে। কিন্তু মধুবসন্তের এমনতর শুচিস্নিগ্ধ, চিত্তাকর্ষক ও মাধুরীমন্ডিত আন্দনমুখর পরিবেশে কবি আজ উদাসীন, উন্মানা।
লেখনী তার নীরব, নিস্তব্ধ, নিশ্চল। কবির সূ² হৃদয়তন্ত্রীতে বসন্তের সমুদয় আয়োজন, আবেদন যেন আজ ব্যর্থ। কবির সমগ্র চিত্ত দখল করে আছে শীতের রিক্ততা। কারণ কুয়াশা ঘেরা মলিন দিনে বিচ্ছেদের জ্বালা মিলনমালাকে ছিন্ন করে শূন্যতা নিয়ে বেজেছিল কবির হৃদয়ে। কবির মনে আজও সে বিষাদময় ক্ষণটিই ঝংকৃত হয় বেদনার গীতি হয়ে।
বিকশিত যৌবনের মাধুর্য থেকে বঞ্চিত প্রথম স্বামীর বেদনাঘন ছায়া কবির হৃদয়ে ও অস্থিমজ্জায় আজও সঞ্চারিত। তাই বসন্তের প্রাণ মাতানো অবেলাভূমিতে দাঁড়ানো কবির হৃদয়ে সে অনন্ত পারাপারে চলে যাওয়া প্রাণপ্রিয় মানুষটি তার আবেগের সেতার বাজিয়ে চলছে।
এজন্য কবি বসন্ত বন্দনায় নিবেদিতা না হয়ে প্রত্যাবর্তন করেন অতীত স্মৃতির ক্যানভাসে। কবির মতো উদ্দীপকের নাসরিনের হৃদয়েও বসন্তের অপার সৌন্দর্য কোনো সাড়া জাগাতে পারে না।
প্রিয়জন হারানোর শোকেই কবির মতো তার অন্তর শোকাচ্ছন্ন। হারানো স্বামীকে কবির মতো সেও ভুলতে পারে না। তাই কবির অন্তরের মতো নাসরিনের অন্তরও বসন্তের সৌন্দর্যকে স্বাগত জানাতে পারে না।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
উন্মনা ছিলেন তিনি। চারদিকে এত সুর এত ছন্দ, এত ফুল এত গন্ধ ভালো লাগে না তাঁর। বসন্ত সমাগত। অথচ তিনি নির্মোহ নি®প্রাণ। কথাটা তাঁকে জানালে তিনি বললেন কবে এল ফাগুন! বাতাবি লেবুর ফুল ফুটে গেছে? আমের মুকুল ফুটেছে? বাতাসে কি তার গন্ধ ছড়াচ্ছে? তার আগমনী গান কি বেজেছে? সে কি আমারে ডেকেছে তার সৌন্দর্যের সুরে? বলতে বলতে আবারো উন্মনা হয়ে গেলেন তিনি।
ক. অর্ঘ্য অর্থ কী?
খ. কবিভক্তের এরকম মনে হল কেন- ফাগুন বৃথা হল?
গ. উদ্দীপক অবলম্বনে, বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে যে দোলা লাগে তার বিবরণ দাও।
ঘ. উদ্দীপক অবলম্বনে সংবেদনশীল মানবচিত্তে বসন্তের প্রভাব আলোচনা কর।
১২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. অর্ঘ্য অর্থ সম্মানিত ব্যক্তিকে সংবর্ধিত করার জন্য প্রদত্তমালা।
খ. অনুরক্ত কবিভক্ত বসন্তের আগমন উপলক্ষ্যে বন্দনাগীতি রচনার জন্য কবিকে মিনতি জানায় : ‘বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি-এ মোর মিনতি।’ কবিভক্তের বোধঃসুন্দর যদি সুন্দরের কাছে মূল্য না পায়, তাহলে সে সুন্দর বৃথা। সৌন্দর্যপিপাসুকে, দুঃখী-অসুখীকে আনন্দের ছোঁয়া দেওয়ার জন্য প্রকৃতির আঙিনায় বসন্ত আসে।
এসেই সে চায় সুন্দর হৃদয়ের অধিকারী যারা তারা আসুক; এ আনন্দলীলায় আনন্দধারায় স্নাত হোক। যদি কেউ না আসে তাহলে তো বৃথাই হল বসন্তের আগমন। কবি ভক্তের বিশ্বাস-মদির মিলন ঘটাতে বসন্ত আসে। কবি যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, বিস্মৃতির জগতে বিচরণ করেন তাহলে বসন্তকে বরণ করে নেবে কে?
তাই তার এই প্রতীতি জন্মেছে:কবি, বসন্তকে বরণ করে না নেওয়ায় বসন্ত বৃথা হল। যে জন্য বসন্তের আগমন, কবির নিরুৎসাহের কারণে বসন্তের সেই মন রাঙানো কাজটি সম্ভব হলো না। তাই তার ধারণা বসন্ত বৃথা হল।
গ. প্রকৃতি তার রূপ বদলায় সময়ে সময়ে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিতেও লাগে পরিবর্তনের ছোঁয়া। ভৌত পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রকৃতির অন্য কিছু অনুষঙ্গেও পরিবর্তন সূচিত হয়। বৃক্ষ, ফুল, ফল, নদী, পাখি ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখা যায়।
বসন্ত ঋতুর আগমনেও সূচিত হয় পরিবর্তন। উদ্দীপকে এই পরিবর্তনের প্রতি কবি হৃদয়ের আবেগমাখা অভিমান আরোপিত হয়েছে। বসন্তের আগমনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। কবিরা তখন বলেন- আজি দখিনা দুয়ার খোলা। গাছে গাছে লাগে প্রাণের নাচন।
পাতা ঝরানো শীত বিদায় নেওয়ার পর দখিনা হাওয়ার প্রসাদে গাছে গাছে জাগে নতুন পাতা। কোন কোন গাছে দেখা দেয় ফলের সূচনা। বাতাবী লেবুর ফুল এ সময়েই ফোটে। আমের মুকুল দেখা দেয়। আমের মুকুল থেকে উৎসারিত গন্ধে আমোদিত হয় বাতাস। দখিনা বাতাস সে গন্ধে আকুল হয়ে তাকে বয়ে নিয়ে যায় বহুদূর।
যাঁরা কবি স্বভাবের তারা বসন্তের রঙে নিজেদেরকে রাঙিয়ে নেন। তাঁদের কাছে বসন্ত সুদূরের পথ বেয়ে অচিন দেশ থেকে আসা অতিথি। প্রকৃতিতে তার আগমনী গান বাজে আগে থেকেই। প্রকৃতি ফুলসাজে নববধূর বেশ ধারণ করে। এভাবে প্রকৃতিতে লাগে দোলা:সুন্দরের দোলো। সে দোলায় দোলে ফুল, পাখি, বৃক্ষ। দোলে জনচিত্তও।
ঘ. দার্শনিক, বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, কবি:সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন মানুষের মনের ওপর প্রকৃতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ঋতু বদল হয়, অন্য ঋতু আসে। বদলে যায় প্রকৃতির রং ও রূপ। বদলে যায় মানব মন, মানুষের বৃত্তি-আচরণ অনেক কিছু। প্রকৃতি মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে দুই ভাবে। প্রথমত বাহ্যিক জীবনাচরণে দ্বিতীয়ত মনের গতিধারায়।
বসন্তের প্রভাব মানবচিত্তে পড়ে এ দুটি ধারায়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পেশা বা জীবিকায় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে মনের ওপর বসন্তের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। প্রকৃতিতে শীতের হাঁড় কাঁপানি যন্ত্রণা থাকেনা। দখিনা বাতাস মৌসুমী বায়ুকে সাথে নিয়ে প্রবাহিত হয়।
কোমল শীতল বাতাসে শরীর জুড়ায়:মনের ক্লান্তিও কিছু পরিমাণে লাঘব হয়। গলা খোলে মানুষের। গেয়ে ওঠে গান। প্রকৃতির রূপ পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিরাজ্যে এসে যায় নব নব উপাদান:ফুল, ফল, গন্ধ। এগুলো নিয়ে গীতিময় হয়ে ওঠে মানুষের মন।
সংবেদনশীল মানবচিত্ত ‘ফুলের মরশুম’ বসন্তকে বরণ করে নিতে চায়। নতুন পুষ্পসাজে নিজেকে সাজায় শিল্পীরা-কবিরা-বসন্তপ্রেমিরা। অমোঘ কোন কষ্ট না থাকলে কবিরা মনকে রাঙান বসন্তের রঙে। কণ্ঠে তাদের বসন্তগীতি।
তবে মনের গহীনে কষ্টের প্রস্রবণ থাকলে বসন্ত সেখানে প্রভাব ফেলতে পারে না। বেদনার আপেক্ষিকতা বেশি হলে বসন্তের সুর, ছন্দ কিছুই কাজে আসে না। বিষাদ যদি মন ছুঁয়ে যায় সে মনে বসন্ত রং লাগাতে পারে না। যারা সুখী এবং বড় কোন মনোবেদনা নেই এমন মানুষের চিত্তরাজ্যে বসন্ত রঙের ঝরণাধারা সৃষ্টি করে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বসন্তকাল। চারদিকে ফুল, পাখি তার দখিনা পবনের কোরাস। ফুলের এই জলসায় নীরব একজন কবি- যিনি বসন্তকে অনুভব করেন সংবেদনশীল সত্তা দিয়ে। তিনি প্রকৃতিকে হৃদয়ের গহীনে স্থান দিয়েছেন। করে নিয়েছেন আত্মার-আত্মীয়। তারপরও ‘কেন এই নীরবতা’ জানতে চাইলে তিনি বললেন- কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী:গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে- রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে ভুলিতে পারিনা কোন মতে।’ বোঝা গেল তার বেদনার অন্তর্গূঢ় কারণ।
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটির প্রকাশ মাধ্যম লেখ।
খ. কবিভক্তের বসন্তবার্তা জানানোর পর কবি বসন্তের আগমনের ব্যাপারে কী কী ইংগিতধর্মী প্রশ্ন করেছিলেন?
গ. মাঘের সন্ন্যাসী বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে:কেন এ রকম অভিধা, বিশ্লেষণ কর।
ঘ. উদ্দীপকে কবির আত্মকথন/ব্যক্তিগত জীবন আভাসিত হয়েছে:যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।
১৩ং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি ‘মাসিক মোহাম্মদী’ পত্রিকায় নবমবর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যা (১৩৪২) প্রথম প্রকাশিত হয়।
খ. নন্দিত মাতৃমূর্তি সুফিয়া কামালের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটি। একটি ব্যক্তিক অনুভবকে শিল্পীত, পরিশীলিত উপস্থাপনা এবং যথাযোগ্য শব্দ চয়নের মধ্যে সর্বজন হৃদয়বেদ্য করেছেন এ কবিতায়।
কোন এক কবিভক্তের প্রশ্নের এবং কবির উত্তরের নাটকীয় উক্তি প্রত্যুক্তির মধ্যদিয়ে তিনি নিজের দুঃখকে সবার হৃদয়ে সঞ্চার করে দিয়েছেন। ভক্তের প্রশ্ন ছিল:বসন্ত এসেছে, অথচ নিরব কেন কবি? তারই উত্তরে কবি বলেছেন:দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? বাতাবি লেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
এখানে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে তার উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে প্রশ্নগুলোর সরলীকৃত রূপগুলি বসন্তের আগমনী সংকেত। এরপরেও প্রশ্ন- দখিনা বাতাসে কি আমের মুকুলের গন্ধ ভেসে আসে?
অর্থাৎ বসন্তে দখিনা বাতায় বয়, আমের মুকুল ধরে, বাতাসে আমের মুকুলের গন্ধ বহুদূর ছড়িয়ে যায়। বাতাবী লেবুর ফুল ফোটে। ভক্তকে ইংগিতধর্মী এসব প্রশ্নের মাধ্যমে বাসন্তী প্রকৃতিকে চিত্রিত করেছেন কবি।
গ. শীত প্রকৃতিকে উপহার দেয় রিক্ততা। বৃক্ষ হয় পত্রহীন:ফুলহীন। প্রকৃতি থাকে নীরব নিস্তেজ, সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মত। শীতের এই রূপ, বসন্তের বিপরীতে স্থাপিত। প্রকৃতির আঙিনা বসন্তের বিচিত্রফুলে সাজলেও কবির মনজুড়ে থাকে শীতের রিক্ততা। শীত যেন গৃহত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাদর গায়ে জড়িয়ে পত্রপুষ্পশূন্য দিগন্তের পানে চলে গেছে।
শীতের বিদায় স্মৃতিতে কবিচিত্ত উদ্ভ্রান্ত ও বেদনাবিধূর। কবি হৃদয় দুঃখ ভারাক্রান্ত। বসন্তের আনন্দ অপেক্ষা শীতের বিয়োগজনিত ব্যথাই কবিকে বেশি পীড়া দিচ্ছে। কবির প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।
শীত ঋতুর প্রতীকে তাঁকে কবি মাঘের সন্ন্যাসী বলেছেন। মাঘ মাসের কুয়াশার আড়াল দিয়ে সকলের অজান্তে শীত যেমন প্রকৃতির উঠোন থেকে বিদায় নেয়, কবির একান্ত প্রিয় মানুষটিও কবিকে নিঃস্ব করে দিয়ে রিক্ত হস্তে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। কবি তাই তাকে ভুলতে পারেননি।
ঘ. গীতিধর্মিতা ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার একটি বড় গুণ। আর গীতিধর্মিতার বড় গুণ হল কবির আত্মগত ভাবানুভূতির বহিঃপ্রকাশ। কবিভক্তের ব্যাকুল প্রশ্ন চারদিকে এত ফুল এত গন্ধ, এত সুর এত ছন্দ:তারপরও নীরব কেন কবি। তার উত্তরে কবি জানিয়েছেন- ‘মাঘের সন্ন্যাসী’ বিদায় নিয়েছে- তাহাকে ভুলতে পারিনা কোন মতে।
এই একটি বাক্যে এতক্ষণে অনাবি®কৃত কবিকে আবিষ্কার করা গেল। কেন উন্মনা কবি, কেন বসন্তবন্দনায় অনীহ তিনি, কেন বসন্তবিমুখতা, তা জানা গেল। সাহিত্য বা আর্ট হতে হয় নৈর্ব্যক্তিক। কবিভক্ত চেয়েছেন কবি একটা বসন্তগীতি লিখুক। নৈর্ব্যক্তিক আবেগ দিয়ে লিখলে দ্বিধা বা ইতস্তততা থাকার কথা নয়।
বারবার চবৎংড়হধষ জীবনসত্য এসে কবিকে বসন্তগীতি রচনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সেই ব্যক্তিগত জীবন সত্যের পেছনে অবস্থান করে আছেন তাঁর প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন:যাঁর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় তাঁর সাহিত্যের পথে আসা।
স্বামীর মৃত্যু তার মনকে রিক্ত নিঃস্ব করে দিয়েছে। দুঃখ যদি মনকে আচ্ছন্ন করে। তাহলে কোন বিনোদনই উপাদেয় নয়। যার ফলে প্রাণ ভরিয়ে দিতে যে মধুর বসন্ত এসেছে, তার আহŸানে সাড়া দিতে পারেন না কবি।
‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রথম থেকে বসন্ত বন্দনার ব্যাপারে কবির নিরুৎসাহের ফলে পাঠকচিত্তে যে কৌত‚হল জাগে তার অবসান হয় শেষ স্তবকে। সেখানে তিনি তার ব্যক্তিগত বেদনার ঝাঁপিটি খুললেন।
পাঠক জানলো চিরন্তনও অনেক সময় ব্যর্থ হয় ব্যক্তিগত দুঃখবোধ বা সুখবোধের অভিঘাতে। আমরা দাবি করতে পারি উদ্দীপক ও মূল কবিতায় কবি সুফিয়া কামালের ব্যক্তি জীবনের একটি অধ্যায় এবং তার প্রলম্বিত দুঃখবোধ আভাসিত হয়েছে ‘
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
পুষ্প ফুটে কোন কুঞ্জবনে।
কোন্ নিভৃতে ওরে, কোন্ গহনে।
মাতিল আকুল দক্ষিণাবায়ু সৌরব চঞ্চল সঞ্চরণে
বন্ধুহারা মম অন্ধ ঘরে
আছি বসে অবসন্ন মনে,
উৎসরাজ কোথায় বিরাজে
কে লয়ে যাবে সে ভবনে
ক. ‘বরিয়া’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীতের রিক্ততার মধ্যে কবির অতীত জীবনের যে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় তা লেখ।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার কোন বিষয়টি ফুটে ওঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রচ্ছন্ন রূপ:সপক্ষে যুক্তি দাও।
১৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বরিয়া শব্দের অর্থ বরণ করে।
খ. শীত ঋতু প্রকৃতিতে দেয় রিক্ততার রূপ। শীতের প্রকোপে বৃক্ষলতা পত্রহীন, পুষ্পহীন পাণ্ডুর এবং শ্রীহীন হয়ে যায়। এমন রিক্ত নিঃস্ব প্রকৃতিকে তাই সংসার ত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো মনে হয়। রিক্ত শীতের সাথে রিক্ত সন্ন্যাসীর অপূর্ব সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন কবি তাঁর প্রিয়জন হারানো রিক্ত নিঃস্ব অনিকেত জীবনে।
শীতের রিক্ততার মত কবির হৃদয় বেদনাবিধুর। কারণ কবির সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে অনির্বচনীয় শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর কাব্য সাধনায় ছন্দপতন ঘটতে থাকে।
এক দুঃসহ বিষণœতায় কবির মন আচ্ছন্ন হয়ে আছে রিক্ততার হাহাকারে। যে রিক্ততা রয়েছে শীত প্রকৃতিতেও। তাই কবি তাঁর অতীত জীবনের রিক্ততার আশ্চর্য সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন নিঃস্ব রিক্ত শীতের মধ্যে।
গ. কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রিয়জন হারানোর যে বেদনানুভূতি কবি হৃদয়কে আনন্দহীন করেছে তা উদ্দীপকের মূলভাবেও প্রতিফলিত হয়েছে। প্রিয়জন হারানোর বেদনা সব সময়ই মানুষের হৃদয়কে শোকাচ্ছন্ন করে।
কখনো কখনো এ শোক এতটাই তীব্র হয় যে, তা মানবমনের সৌন্দর্যের অনুভূতিতে জাগ্রত আনন্দকেও ম্লান করে দেয়। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি সুফিয়া কামালের ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছে। এ কবিতায় কবির ব্যক্তি জীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে।
তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে তাই বসন্ত এলেও উদাসীন কবি তাই বসন্তের বন্দনা না করে হারানো স্বামীর বেদনার স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আন্মনা হয়ে থাকেন।
কবি হৃদয়ের এ বসন্ত বিমুখতা তার স্বামী হারানোর শোককেই তুলে ধরে। অন্যদিকে উদ্দীপকে ও কবির অনুভুতিতে অনুরূপ অভিব্যক্তির সকরুণ সুর বিষাদময় হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, বসন্তের মতো প্রকৃতি পুষ্পসাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে এবং তারই মধ্যে দক্ষিণাবায়ু সৌরভ মাধুর্য চঞ্চলতায় মেতে উঠেছে।
কিন্তু কবির হৃদয়কে তা স্পর্শ করতে পারছে না। কারণ কবি সুফিয়া কামালের মতো তার হৃদয়ও প্রিয়জন হারানোর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাই প্রকৃতির আনন্দোৎসবের মধ্যেও তিনি অবসন্ন মনে অন্ধকার ঘরে পড়ে আছেন।
তার বন্ধুহারা হৃদয়ে সেতারের যে করুন সুরলহরী ঝংকৃত হচ্ছে তা কবি সুফিয়া কামালের মতো তাকেও সৌন্দর্য সুধা পান করা থেকে বিরত রেখেছে। এভাবে উদ্দীপকটিতে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রিয়জন হারানো মর্মবেদনার বিষাদময় দিকটি ফুটে ওঠেছে।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি পেয়েছে। এদিক বিবেচনায় উদ্দীপকটিকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রচ্ছন্ন রূপ বলা যায়। প্রচ্ছন্ন বলতে বুঝায়, সুপ্ত বা গুপ্ত।
কবিতায় কবিমন শোকাচ্ছন্ন ও বেদনা:ভাবাতুর ছিল বিধায় বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্যের ডালি দিয়েও কবিকে বিমোহিত করতে পারেনি। অপরদিকে, উদ্দীপকেও এমনই এক দৃশ্যপটের অবতারণা হয়েছে।
‘পুষ্প ফুটে কোন কুঞ্চবনে’ চরণটি দ্বারা উলখিত অংশে প্রকাশ পেয়েছে প্রকৃতির প্রতি বক্তার উদাসীনতা যা ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার মূলভাবকেই প্রতিফলিত করছে। কবিতায় কবি শীতের করুণ বিদায়কে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।
কেননা, রিক্ত হস্তে শীতের করুন বিদায় কবিকে মনে করিয়ে দেয় প্রিয় মানুষের চলে যাওয়ার মুহূর্ত। আর উদ্দীপকের বন্ধুহারা মম অন্ধ ঘরে, আছি বসে অবসন্ন মনে চরণটি যেন সে ইঙ্গিতই বহন করছে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির মন দুঃখবারাক্রান্ত। তার কণ্ঠ নীরব, নিঃস্পৃহ।
বসন্তের সৌন্দর্য তার কাছে অর্থহীন। কেননা কবির হৃদয় আচ্ছন্ন রিক্ততার হাহাকারে। শীত ঋতু যেভাবে সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাঁদর গায়ে পত্রপু®পহীন দিগন্তের পথে চলে গেছে তেমনি প্রিয় মানুষের অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমানো কবিকে বিষাদময় রিক্ততার সুরে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মকে মেনে নিতে ব্যথিত কবিচিত্ত তাই প্রকৃতির সৌন্দর্যকে তাহারেই পড়ে মনে কবিতার কবির মতো উলেখিত অংশের কবির হৃদয়েও সাড়া জাগাতে পারছে না। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য যে কোনো মানুষেরই কাম। কিন্তু নিঃসঙ্গতা মানুষকে করে তোলে বিবাগী, বিষাদগ্রস্ত ও উদাসীন।
এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে। প্রিয়জনের অনুপস্থিতি মানবমনকে যে কীভাবে আন্দোলিত করে তা সহজেই অনুভূত হয় উক্ত দুইটি প্রেক্ষাটটে। প্রকৃতির মোহাঞ্জন আবেগ, নিরূপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঋতুবদলের পালায় পরিবর্তিত প্রকৃতির নবরূপ সবই যেন তখন অর্থহীন ও নি®প্রাণ মনে হয়।
হৃদয়ের ভাবাবেগ মানুষকে প্রতিক্ষণে প্রিয় মানুষের স্মৃতি রোমন্থনে বাধ্য করে দেয়। তাইতো ‘ তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি বসন্তের উপস্থিতিতে ভাবলো শহীন। শীতের রিক্ততাই যেন কবির হৃদয়কে বারবার ক্ষত:বিক্ষত করছে। প্রিয় মানুষকে হারানোর আর্তি তাঁর হৃদয়ে জেগে আছে প্রকট রূপে।
আর উদ্দীপকেও এমনি মনোভঙ্গিমার আভাস পাওয়া যায়। বিষণœ হৃদয়ে প্রিয় সৌন্দর্য উপলব্ধি ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বিষয়বস্তুর বিচারে উদ্দীপকটিকে ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতার প্রচ্ছন্ন রূপ বলা অত্যন্ত যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্রকৃতির গতি স্বাভাবিক। কোনো কিছুর সাপেক্ষ নয় প্রকৃতি। কে প্রণোদিত হল, কে ব্যথিত হল; প্রকৃতিকে নিয়ে কে গান লিখলো, কে মুখ তুলে চাইলো না- এতে প্রকৃতির গতি থেমে থাকে না। শুধু প্রশ্নাকুল হয় সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ যারা সৌন্দর্য স্রষ্টার কাছে সুন্দরের প্রত্যাশা করেন। কিন্তু অনেকেই জানে না সুন্দরের আবির্ভাব কবি মনের সুস্থতার ওপর নির্ভর করে। কবিমন যদি সুন্দরের অবস্থানের জন্য উপযুক্ত না হয় প্রকৃতি সেখানে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। কবি মনের ব্যক্তিগত বেদনা বা সুখ কবিতা বা সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। এজন্য কবি ভক্তের আকুতি সত্তে¡ও কবি সুফিয়া কামাল বসন্ত বন্দনায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। বসন্ত চলে গেল কিন্তু কবিচিত্ত জাগলো না সৃষ্টি বেদনা নিয়ে। কারণ কবিচিত্তের ব্যক্তি বেদনার আপেক্ষিক অনুপাত, সৃজন বেদনার চেয়ে বেশি।
ক. তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি কবির কোন কাব্যে স্থান পেয়েছে?
খ. বসন্তের প্রতি কবির তীব্রবিমুখতা কেন?
গ. প্রদত্ত উদ্দীপক ও মূল কবিতা অবলম্বনে কবির মনোজগৎ বিশ্লেষণ কর।
ঘ. সাহিত্য বা শিল্প, কবি বা শিল্পীর স্বতঃস্ফ‚র্ততার ফসল, বহিরারোপিত কোন প্রণোদনার ফসল নয়:উদ্দীপকও কবিতা অবলম্বনে এ বক্তব্যের যথার্থতা প্রতিপন্ন কর।
১৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. তাহারেই পড়ে মনে কবিতাটি কবির ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যে স্থান পেয়েছে।
খ. বিষাদাক্রান্ত মানুষ, অনেক সময় নানা কারণে অন্তর্গত বিষাদের খবর অন্যকে জানতে দেয় না। অনেকটা, দুঃখ বিলাসে মগ্ন থাকে সে। কষ্ট বুকের মধ্যে পুষে রেখে নিঃসঙ্গ থাকতে চায়। সুখানুভবও তার কাছে খুব বেশি আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না।
এই ধরনের মনোবিকল্পনের শিকার কবি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একটি দুঃখকে দোসর করেছিলেন। তাঁর প্রথম স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন ছিলেন তাঁর সাহিত্য সাধনার উৎসাহদাতা।
তাঁর অকাল মৃত্যুতে তিনি বেদনায় মুষড়ে পড়েছিলেন। সেই কষ্ট তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই বসন্তের এত উৎসবের মধ্যেও তিনি বসন্তের প্রতি মনোযোগী হতে পারেননি। বরং দুঃখের প্রাবল্যে সুখ, বিমুখ হয়ে ফিরে গেছে।
গ. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে কবির ব্যক্তি জীবনের বিষাদময় স্মৃতির করুণ কাহিনী বাগ্ময় হয়ে ফুটে উঠেছে। কবিতাটি নিসর্গ সন্দর্শনমূলক। তবে এ কবিতার মর্মমূলে বসন্তের সৌন্দর্য আভার অন্তরালে রয়েছে কবির নিজের জীবনের বেদনার বাণী বিচ্ছেদের নিদারুণ মর্মজ্বালা।
শীতের জরাজীর্ণ রিক্ততার মধ্যে উৎসারিত হয়েছে কবির জীবনের পুষ্পশূন্য হৃদয়ের ব্যথা। কবিতায় বিধৃত ভাবাবেগময় ভাববস্তুর বেদনাঘন বিষণœতার সুর এবং সুললিত ছন্দ এতই মাধুর্যমণ্ডিত হয়েছে যে পাঠকের চিত্তকে তা সহজে স্পর্শ করে। আর এই সূত্রে আবি®কৃত হয়েছে কবির মনোজগৎ।
বসন্ত এসেছে- ফুল ফসলের সম্ভার নিয়ে। কবিভক্ত তাই কবির কাছে এসেছে বসন্তকে ঘিরে গান রচনার তাগিদ নিয়ে। বসন্ত কবিকে অনুপ্রাণিত করবে এটা প্রত্যাশিত। কিন্তু কবি মনের বেদনাকে অস্বীকার করতে পারছেন না।
ইচ্ছে করলে ভুলে থাকতে পারেন কিন্তু তেমন ইচ্ছেকে অন্তরে ঠাঁই দিতে পারছেন না। ভেতর থেকে কে যেন কবিকে নিরুৎসাহ করে রাখে। কবির বিবেকও সায় দেয়না আনন্দযজ্ঞে সামিল হতে। যে মানুষটি তার সত্তাকে জুড়ে ছিল দীর্ঘদিন তাকে স্মৃতিতে ধরে রাখাটা উচিত বলে মনে করেন কবি।
প্রথম স্বামীর স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে আছেন কবি। এটা কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞতার পরিচায়ক। কবির মনোজগৎটা সৌন্দর্যবিমুখ নয়। বরং ভালোবাসার প্রতি সকৃতজ্ঞ:বিবেক চালিত।
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | PDF Download
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | বহু নির্বাচনি প্রশ্নসমুহ | PDF
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর | PDF
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ১-৫ | PDF
HSC | ঐকতান | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ৬-১০ | PDF
ঘ. সাহিত্য বা শিল্পকে অ্যারিস্টটল বলেছেন অনুকরণ। শিল্পী মনের বাইরের কোন বস্তু বা ভাব যেভাবে শিল্পী চিত্তে প্রণোদনা সৃষ্টি করে, সেভাবে তার একটা অনুকরণ তৈরি হয় মনের মধ্যে। মন সেই বস্তু বা ভাবের প্রতীকে তৈরি করেন একটি সৌন্দর্য সত্তা যার নাম শিল্প।
এজন্য অৎঃ কে বলা হয় জবভষবপঃরড়হ ড়ভ সরহফ. এক্ষেত্রে যে প্রণোদনাটি বাইরে থেকে আসে সেটি মনের ওপর প্রতিফলন ফেলে শুধু জোর খাটায় না। প্রাপ্ত প্রতিফলন মন যদি গ্রহণ করতে পারে:তাহলে গ্রহণের মুহূর্ত থেকে শুরু হয় অনুকরণের কাজ। তারপর একসময় সৃষ্টি কর্ম রূপে বেরিয়ে আসে শিল্পবস্তু।
পুরো প্রক্রিয়াটা সংঘটিত হয় মনের স্বতঃপ্রণোদনায়। বাইরের কোন উদ্দীপক চাপ সৃষ্টি করলে বা অনুকরণীয় বস্তু বা ভাব শিল্পী মনের ধারণ ক্ষমতা বা বোধের বাইরের বিষয় হলে মন সেটাকে ফিরিয়ে দেয়। ফলে কিছুই সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ থাকে না।
যদি কোন অনুরোধ (যেটাকে ফরমায়েশ বলা হয়) বা দর্শন (রংস) বাইরে থেকে প্রভাব বিস্তার করে এবং মন যদি গ্রহণ করার জন্য বাধ্য হয়, তাহলে যে অৎঃ উৎপন্ন হয় শিল্পবোদ্ধারা তার নাম দিয়েছেন ইধফ ধৎঃ. এড়ড়ফ ধৎঃ সব সময় শিল্পীর বা কবির মনের স্বতঃস্ফ‚র্ত বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সহজ কথায় মনের স্বতঃস্ফ‚র্ততাই শিল্পের বড় উৎপাদক।
উদ্দীপক এবং ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শিল্প সৃষ্টিবিষয়ক এই সত্যটি কাজ করেছে। বসন্ত, শিল্প সৃষ্টির জন্য বাহ্যিক প্রণোদনা হিসেবে দ্বারলগ্ন। কবিভক্তও মিনতি জানাচ্ছেন। কিন্তু কবিচিত্ত বহিরারোপিত এই উদ্দীপকটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নয়।
কারণ তার মনের সবটাই দখল করে রেখেছে তার প্রথম স্বামীর সাথে যাপিত জীবনের স্মৃতি। তাকে কোনমতে ভুলতে পারেন না। মন সেখানেই নিবদ্ধ। তাই বসন্তকে ফিরে যেতে হয়:বসন্ত বন্দনা রচিত হয় না।
বহিরারোপিত সুর ও সৌন্দর্য পারেনি কবি মনের আগল সরাতে। অর্থাৎ সারকথা হল সাহিত্য আত্মগত স্বতঃস্ফ‚র্ততার ব্যাপার, বহিরারোপিত কোন প্রণোদনার ফসল নয়।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।