আজকে জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার সহজ উপায় (স্কলারশিপ – শেষ পর্ব) মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং নানান তথ্য জানুন।
উন্নত এবং বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি অন্যতম। শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানাদিক দিয়ে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় দেশ এটি। বিশেষ করে জার্মানির শিক্ষাব্যবস্থা অনেক আধুনিক ও যুগোপযোগী।
এছাড়াও রয়েছে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্য রয়েছে না ধরনের স্কলারশিপ। জার্মানির বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখের মধ্যে ১২ শতাংশের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে থাকেন।
জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার সহজ উপায় –
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিউএস (কোয়াককোয়ারেল সাইমন্ডস) র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ২৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩টিই জার্মানির।
বাংলাদেশের জার্মান রাষ্ট্রদূত আরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চাকরি ক্ষেত্রে নিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করছেন।
এসব সুবিধা ছাড়াও এই ইউরোপিয়ান দেশটির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পড়ালেখার খরচ একদম ফ্রি।
বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই ছাত্র ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে প্রতি বছর জার্মানি আসে।
বিশ্বমানের শিক্ষা ও টিউশন ফি না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে জার্মানি।
কোন স্কলারশিপ সবথেকে ভালো হতে পারে?
টিউশন ফি না থাকার পরেও জার্মানিতে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বেশ কতগুলো স্কলারশিপ আছে যার মধ্যে ইরাসমাস ও ডাড(DAAD) স্কলারশিপের কথা আমরা মোটামুটি সবাই জানি।
DAAD স্কলারশিপঃ
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্যে সবচেয়ে বড় স্কলারশিপ হলো এটা।
German Academic Exchange Service (DAAD) কর্তৃক অর্থায়নকৃত এই স্কলারসশিপ প্রতিবছর প্রায় ১৫০,০০০ ছাত্রছাত্রীদের অর্থায়ন করে থাকে।
যারা আবেদন করতে পারবেনঃ ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পি এইচ ডি, পোস্ট ডক্টোরাল ছাত্রছাত্রীরা।
আরও পড়ুনঃ স্কলারশিপ কি কেন এবং কিভাবে পাওয়া যায়? (বিস্তারিত)
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশিদের জন্য সেরা ১০টি স্কলারশিপ
প্রথমত এই ডাড স্কলারশিপ একাডেমিক পারফরম্যান্স ও আপনার যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে এই দেওয়া হয়।
আপনি যদি স্কলারশিপ পেয়ে যান তাহলে ডাড এর পক্ষ থেকে মাস্টার্স এর ছাত্রছাত্রী দের জন্য প্রতিমাসে ৮৬১ ইউরো সাথে বাসাভাড়া দেওয়া হয়।
ডাড স্কলারশিপ এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো জার্মানির যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার সহজ উপায় –
স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য যা যা করতে হবেঃ
প্রথমত আপনাকে জার্মান ভাষাকে প্রাধান্য দিতে হবে, কারন প্রত্যেকটি দেশেরই একটি নির্দিষ্ট ভাষা আছে।
আর সেই দেশের মানুষ বা এডুকেশন সিস্টেম প্রায়ই তাদের নিজস্ব ভাষায় হয়ে থাকে।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আইএলটিএস হলেই হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জার্মান ভাষাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। তাই জার্মান ভাষা শিখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইএলটিএস কোর্স বাধ্যতামূলক। আপনার পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আপনার এডমিশন পাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে এই আইএলটিএস কোর্স।
স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই স্নাতক পাশ হতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় বছর একাডেমিক পিরিয়ড দেখানো যায়। তবে জার্মান ভাষা সব ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়।
জার্মান ভাষার জন্য বি-১ লেভেলের প্রশংসাপত্র প্রয়োজন। যা আপনাকে আবেদনের সময় তাদেরকে দেখাতে হবে।
মাস্টার্সের জন্য স্কলারশিপের আবেদন করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- এখানে অন্যান্য প্রয়োজনীয় একাডেমিক ডকুমেন্টের পাশাপাশি অন্তত দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে।
জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার সহজ উপায় –
জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আবেদনের উপায়ঃ
স্কলারশিপের জন্য আবেদনের সেরা উপায় হলো অনলাইনে আবেদন। আবেদনপত্র পাওয়া যায় ডাড এর ওয়েবসাইট-এ। সেখানে অনলাইনেই পুরো আবেদন পত্র পূরণ করতে হয়।
এবার ইউরোপাস স্পেসিমেন ফর্ম ডাউনলোড করে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর স্ব-হস্তে স্বাক্ষরসহ সিভি বানাতে হয়।
আরও পড়ুনঃ স্কলারশিপ কি কেন এবং কিভাবে পাওয়া যায়? (বিস্তারিত)
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশিদের জন্য সেরা ১০টি স্কলারশিপ
তৃতীয় পর্যায়ে আসছে মোটিভেশন লেটার যেখানে আবেদনকারির কাজের অভিজ্ঞতা ও রেফারেন্সসমূহ উল্লেখ থাকে।
আবেদনের সাথে গবেষণার প্রস্তাবণা পাঠানো উত্তম কেননা অনেক ক্ষেত্রে স্কলারশিপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার প্রস্তাবণাটি দাবি করে।
এরপর যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাচেলর সম্পন্ন হয়েছে, তাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত রিকমেন্ডেশন লেটার সংযুক্ত করতে হয়।
জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার সহজ উপায় –
আরও পড়ুনঃ স্কলারশিপ কি কেন এবং কিভাবে পাওয়া যায়? (বিস্তারিত)
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশিদের জন্য সেরা ১০টি স্কলারশিপ
ষষ্ঠ ধাপে আবেদনকারী যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের নিকট হতে তার স্বাক্ষরসহ একটি রেফারাল লেটার সংযুক্ত করতে হয়।
জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার সহজ উপায় –
অতঃপর ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ আইএলটিএস এর স্কোরের সনদপত্র আপলোড করতে হবে।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জার্মান ভাষার সনদপত্র যুক্ত করতে হয়।
যে বিষয়টি মনে রাখা জরুরি তা হচ্ছে, উপরোক্ত সাধারণ ডকুমেন্টগুলো ছাড়াও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আরো কিছু তথ্য প্রমাণ চাইতে পারে।
তাই আবেদনের সময় সতর্কতার সাথে বিশ্ববিদ্যালনের ওয়েবসাইটের আবেদনের নীতিমালা জেনে নিতে হবে।
কিছু প্রশ্নঃ
স্কলারশিপ ছাড়া জার্মানিতে কি যাওয়া উচিৎ?
অনেকের স্বপ্নই হচ্ছে জার্মানিতে যাওয়া, সুতরাং অনেকেই চেষ্টা করে স্কলারশিপ না পেলে স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়ার।
তবে এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো যে, মধ্যবিত্তরা ফুল ফ্রি স্কলারশিপ ছাড়া পড়াশোনা করার জন্য জার্মানিতে অসম্ভব।
টিউশন ফি না থাকলেও জার্মানিতে অনেক খরচ।
জার্মানিতে টাকা বলতে আমরা ইউরোকে বুঝি। আপনার সুবিধার্থে বলে দিচ্ছি জার্মানের ১ ইউরো = বাংলাদেশি ৯৭ টাকা বর্তমান সময়ে।
সুতরাং তারা প্রত্যেক সেমিস্টারে আপনার থেকে যদি ৫০০ ইউরো করে শুধু সেমিস্টার ফি নেয়।
আরও পড়ুনঃ স্কলারশিপ কি কেন এবং কিভাবে পাওয়া যায়? (বিস্তারিত)
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশিদের জন্য সেরা ১০টি স্কলারশিপ
তাহলে বাকি খরচ বাদে আপনার ১টা সেমিস্টার ফি দিতেই গুনতে হবে প্রায় ৪৮,৫০০ টাকার উপরে।
তাহলে ভাবুন আপনার ব্যক্তিগত খরচ, বাসা ভাড়া, খাওয়া দাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে এমাউন্ট অনেকটা উপরে উঠে যায়।
যারা নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, আপনি ব্যচেলর করার জন্য যদি জার্মান যেতে চান তাহলে এই চিন্তা আপনি মাথা থেকে বাদ দিয়ে দিন।
তবে হ্যা আপনার জন্য সব থেকে বেশি সুবিধাজনক হবে যদি আপনি দেশ থেকে ব্যাচেলর করে তারপর মাস্টার্স এর জন্য জার্মানকে প্রায়োরিটি দেন।
জার্মানে মাস্টার্স কৃত স্টুডেন্টরা নানা সুবিধা পেয়ে থাকে, অবশ্য এক্ষেত্রে আম পূর্বেই বলেছি আপনাকে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য ২ বছরের পূর্বের অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে।
আরও পড়ুনঃ স্কলারশিপ কি কেন এবং কিভাবে পাওয়া যায়? (বিস্তারিত)
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশিদের জন্য সেরা ১০টি স্কলারশিপ
ব্যাচেলর করার সময় জার্মানিতে স্কলারশিপ এর আবেদন করা যাবে?
ব্যাচেলর করার সময় জার্মানিতে স্কলারশিপের আবেদন করতে পারবেন। তবে প্রথম বর্ষে আবেদন করা বেশি উপকারি হবে বলে আমার মনে হয় না।
আপনি যদি ব্যাচেলর ১ বছর দেশ থেকে করার পর ক্রেডিট ট্রান্সফার করে তারপর স্কলারশিপের আবেদন করেন তাহলে তা আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারি হবে বলে আমার মনে হয়।
তবে স্কলারশিপ না পেলে আপনার উচিৎ ব্যাচেলর দেশ থেকে শেষ করা এবং ২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে মাস্টার্সের জন্য জার্মানিতে স্কলারশিপের আবেদন করা।
মাস্টার্সের ক্ষেত্রে আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই আপনি স্কলারশিপে জার্মানিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ২য় অপশন হিসেবে মাস্টার্সকে ব্যবহার করতে পারেন।
স্কলারশিপ সর্ম্পকে যেকোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।