চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা ব্যাকারণ | ভাষা ও ধ্বনি | PDF: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বিষয়টির ব্যাকারণ অংশ হতে ভাষা ও ধ্বনির গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্টটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
ভাষা
আমি আমার মাকে ভালোবাসি।
উপরের বাক্যটিতে মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসার কথা প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের মনের এই ভাবটি কাউকে বোঝানোর জন্য আমরা তাকে কথাটি বলতে পারি বা লিখে বোঝাতে পারি। যেভাবেই তা করি না কেন উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের কিছু ধ্বনি বা চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে।
মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যেসব অর্থবোধক ধ্বনি বা চিহ্ন ব্যবহার করে তাকে ভাষা বলে। যেমনঃ বাংলা ভাষা, ইংরেজি ভাষা, আরবি ভাষা ইত্যাদি।
মাতৃভাষা :
اَنَا اهِبُّ اُمِّىْ (আনা উহিব্বু উম্মি)
আমি আমার মাকে ভালোবাসি।
উপরে উল্লেখিত বাক্যগুলো লক্ষ কর। তিনটি বাক্যের অর্থ একই। প্রথম দুটি বাক্য আমরা সবাই ঠিকমতো বুঝতে নাও পারি। কিন্তু তৃতীয় বাক্যটি সহজেই বুঝতে পারছি। এর কারণ বাক্যটি আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় লেখা হয়েছে।
মায়ের কাছ থেকে শিশু জন্মের পর যে ভাষা শেখে তা-ই তার মাতৃভাষা। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। ইংরেজদের মাতৃভাষা ইংরেজি। আরবদের আরবি।
ভাষার রূপ ও রীতি :
ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশের দুটি উপায় রয়েছে। একটি কথা বলে, আরেকটি লিখে।
কথা বলার ভাষাকে বলা হয় কথ্য ভাষা। আর লেখার ভাষাকে বলে লেখ্য ভাষা। নিচের ছকটি লক্ষ করি :
আঞ্চলিক ভাষা ও প্রমিত ভাষা :
নিচের বাক্য দুটি খেয়াল করি :
ঔগ্গোয়া মাইন্ষ্যের দুয়া পোয়া আছিল্।
একজনের দুটো ছেলে ছিল।
আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের রয়েছে নিজস্ব ভাষারীতি। এ রীতিকে বলা হয় আঞ্চলিক ভাষা। প্রথম বাক্যটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষারীতি। আবার এই কথাটিই নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষেরা তাদের আঞ্চলিক ভাষায় বলবে ‘অ্যাকজনের দুই হুত আছিল্।’
আঞ্চলিক ভাষা একেক স্থানে একেক রকম বলে এক অঞ্চলের মানুষের পক্ষে অন্য অঞ্চলের ভাষা বোঝা কঠিন হয়। আবার উপরের দ্বিতীয় বাক্যটি এদেশের সব অঞ্চলের মানুষই বুঝতে পারবে। এভাবে সব ধরনের ভাষারীতিরই এমন একটি রূপ রয়েছে যেটির মাধ্যমে সকল শ্রেণির মানুষের কাছেই মনের ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয়। এই রূপটির নাম প্রমিত ভাষা।
সাধু ও চলিত ভাষা :
নিচের বাক্য দুটি পড়ি
তাহারা ফুল তুলিতেছে।
তারা ফুল তুলছে।
দুটি বাক্যের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ কর। প্রথম বাক্যের সর্বনাম পদ (তাহারা)-টির আকার দ্বিতীয় বাক্যের সর্বনাম পদ (তারা)-এর চেয়ে বড়। আবার প্রথম বাক্যের ক্রিয়াপদ (তুলিতেছে)-এর আকার দ্বিতীয় বাক্যের ক্রিয়াপদ (তুলছে)-এর তুলনায় বড়। আকারে বড় অর্থাৎ প্রথম রূপটির নাম সাধু ভাষা, আর আকারে ছোট অর্থাৎ দ্বিতীয় রূপটির নাম চলিত ভাষা।
সাধুভাষা মূলত ব্যবহার করা হয় সাহিত্য রচনায় বা বই পুস্তকে। কথা বলার জন্য আমরা সাধু ভাষা ব্যবহার করি না। চলিত ভাষাতেই আমরা সাধারণত কথা বলে থাকি। তবে বর্তমানে লেখালেখির ক্ষেত্রেও চলিত ভাষার ব্যবহারই বেশি চোখে পড়ে।
সাধু ভাষা : যে ভাষা সাধারণত সাহিত্য রচনায় ব্যবহার করা হয় বা বই-পুস্তকে লেখা হয়, তাকে সাধু ভাষা বলে।
চলিত ভাষা : যে ভাষায় আমরা সাধারণত কথা বলে থাকি, তাকে চলিত ভাষা বলে।
ব্যাকরণ ও বাংলা ব্যাকরণ
প্রতিটি ভাষাই শুদ্ধভাবে বুঝতে, পড়তে, বলতে ও লিখতে হলে কিছু নিয়মকানুন জানতে হয়। এ নিয়মকানুনগুলোকে একসাথে বলা হয় ব্যাকরণ। বাংলা ভাষা শেখার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন।
যে নিয়মগুলো জানলে শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা বুঝতে, পড়তে, বলতে ও লিখতে পারা যায়, সেগুলোকে একত্রে বাংলা ব্যাকরণ বলা হয়।
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | পাঠান মুলুকে | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | কাজলা দিদি | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
- চতুর্থ শ্রেণি | বাংলা | পাখির জগৎ | অনুশীলনী ও অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
ধ্বনি
বই = ব্ + অ + ই
লক্ষ কর, ‘বই’ একটি শব্দ। শব্দটিকে ভাগ করলে আমরা ‘ব’ এবং ‘ই’-এ দুটি বর্ণ পাই। আরও ভাগ করলে পাই ব, অ এবং ই- এই তিনটি ধ্বনি। ‘বই’ শব্দটি উচ্চরণের সময় এ ধ্বনিগুলো আমাদের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে। এগুলো হচ্ছে ‘বই’ শব্দের ক্ষুদ্রতম একক। অর্থাৎ এরপর শব্দটিকে আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না।
শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশের নাম হলো ধ্বনি।
কথা বলার জন্য বা যে কোনো কিছু উচ্চারণের জন্য আমরা আমাদের কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্য নিই। যেমনঃ কণ্ঠনালি, মুখগহŸর, দাঁত, ঠোঁট, নাক, জিহŸা ইত্যাদি। এই সবগুলোকে একসাথে বলা হয় বাগযন্ত্র। বাগযন্ত্রের সাহায্যে নানা রকম ধ্বনি তৈরি হয়। আমাদের উচ্চারিত আওয়াজগুলো বাগযন্ত্রে বাধা না পেলে সৃষ্টি হয় এক রকম ধ্বনি, আর বাধা পেলে সৃষ্টি হয় আরেক রকমের ধ্বনি।
ধ্বনি দুই প্রকার স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
তোমরা ‘আ’ এবং ‘প’ ধ্বনি দুটো উচ্চারণ কর। দেখবে ‘আ’ ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে আসা বাতাস বাগযন্ত্রের কোথাও বাধা পাচ্ছে না। আবার লক্ষ কর, এই ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় এর সাথে অন্য কোনো ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে না। অর্থাৎ এই ধ্বনিটি অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হতে পারে। এ ধরনের ধ্বনিকে বলা হয় স্বরধ্বনি।
যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস বাগযন্ত্রের কোথাও বাধা পায় না এবং উচ্চারণের সময় অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্য প্রয়োজন হয় না সেগুলোকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন : অ, আ, ই, ঈ ইত্যাদি।
আবার লক্ষ কর, ‘প’ ধ্বনিটি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে নির্গত বাতাস বাধা পাচ্ছে। বাতাস এসে দুই ঠোঁটে আটকে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় লক্ষ কর, প = প্ + অ। ‘প’ ধ্বনিটি উচ্চরণের সময় আমাদেরকে ‘অ’ ধ্বনিটিও উচ্চারণ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ উচ্চারণের ক্ষেত্রে অন্য একটি স্বরধ্বনির সাহায্য লাগছে। এ ধরনের ধ্বনির নাম হচ্ছে ব্যঞ্জনধ্বনি।
যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস কোথাও না কোথাও বাধা পায় এবং উচ্চারণে স্বরধ্বনির সাহায্য প্রয়োজন হয়, সেগুলোকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে। উদাহরণ : ক, ঘ, চ, প ইত্যাদি।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।