HSC | বাংলা ২য় | আলোচ্য বিষয়ঃ খুদে গল্প ১১-১৫ | PDF Download: বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব খুদে গল্প গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু খুদে গল্প নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
১১. ‘বিজয়’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
বিজয়
আনন্দের মধ্যেও অমলের চোখ জলে ভরে উঠেছে। অমলের ইচ্ছে করছে তার দলের সব খেলোয়াড়দেরকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে। তাদের ক্রিকেটের দলটাকে মানসিকভাবে তৈরি করা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সবকিছুর পেছনে রয়েছে তা অক্লান্ত পরিশ্রম।
অমল জানতো ভালো কোনোকিছুই সহজে লাভ করা যায় না। সেই পরিশ্রমের ফলই হাতে পেয়েছে তারা। প্রায় বছর পাঁচেক আগের কথা, তাদের গ্রামের প্রায় দুই গ্রামের পরের এক খেলোয়াড়কে তাদের গ্রামের হয়ে খেলার জন্য ভাড়া করতে যায়।
কিন্তু সেই খেলোয়াড় খেলতে তো আসেই না, বরং অনেক বেশি টাকা চেয়ে নানান কথা বলে অমলকে অপমান করে। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা আর ভেতরের আত্ম-সম্মানবোধ তাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেয়।
অমল মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে একদিন সে এমন একটা দল তৈরি করবে যা দেখে চারপাশের এলাকার সবাই বিস্মিত হয়ে যাবে। তখন সে বাড়িতে কিছু না বলে চলে যায় ঢাকায়। পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয় বিকেএসপিতে। এ খবর জেনে পরিবারে সবাই ভীষণ খুশি হয়। একসময় খেলাটা সে শেখে পাকাপোক্তভাবে।
তারপর সে গ্রামে ফিরে আসে। শুরু করে গ্রাম থেকে খেলোয়াড় নির্বাচন। কৃষক, জেলে, ভ্যানচালক, মুদি দোকানদার এ রকম বিশজন মানুষকে বেছে বের করে ট্রেনিং দিতে শুরু করে অমল। শত অসুবিধা মোকাবিলা করে ট্রেনিং নেয় সে ছেলেগুলো। নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে শুনতে হয় মানুষের নানান সমালোচনা। তবুও তারা তাদের শেখা বন্ধ করে না।
নিজেদের কাজের পাশাপাশি তারা একেক জন একেক বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠার চেষ্টা করে। কেউ ব্যাট করে, কেউ বল। আবার মাঝে মাঝে আশে পাশে এলাকার ছেলেদের সাথে ম্যাচ খেলে। এত পরিশ্রম করার সত্তে¡ও কোন না কোন কারণে তারা হেরে যায়। এরপর লোকের মুখে শুনতে হয় নানান সমালোচনা। কিন্তু অমলরা থেমে যায় না। তারা নতুন উদ্যামে আবার প্র্যাকটিস শুরু করে। এবার অমলের জীবনে একটি বিশেষ সুযোগ আসে।
সে খেলার সুযোগ পায় সেই খেলোয়াড়ের বিপক্ষে যাকে বছর পাঁচেক আগে সে ভাড়া করতে গিয়ে অপমানিত হয়েছিল। এবার সে জান প্রাণ দিয়ে খেলবে বলে প্রতিজ্ঞা করে, আর দলের সবাইকে সে ঘটনা খুলে বলে। সবার মধ্যেই এক ধরনের জেদ তৈরি হয় ম্যাচ জেতার। আজ সেই জেদই বিজয়ী হয়ে অমলের চোখ থেকে আনন্দের অশ্রæ পড়ছে।
১২. ‘পরিবেশ দূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
পরিবেশ দূষণ
রাস্তার পাশে ডাস্টবিনের বাইরে বর্জ্যপদার্থগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রিমার এখন আর এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে না। চারপাশটা মশা মাছি তে পরিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, দুর্গন্ধে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অব¯’া হয় ওর প্রতিদিন।
সাদা রঙের স্কুল ড্রেসে যখন মাছিগুলো উড়ে এসে পড়ে তখন নিজেকেও নোংরা মনে হয় রিমার। মাস দুয়েক আগে রিমা আর ওর ছোট ভাই লিমন প্রায় একই সঙ্গে জ্বরে পড়েছিল।
সেই জ্বর আর কিছুতেই ছাড়ছে না। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় দুই ভাই বোনকে। রক্ত পরীক্ষার পর জানা যায় ওদের ডেঙ্গু জ্বর। মশার কামড় থেকেই জ্বরটা হয়েছিল। রিমা জানে ময়লা আবর্জনাতে মশার জন্ম হয়। আবার এই মাত্র কয়েকদিন আগে ঘটনা। স্কুল থেক্র ফিরছিল রিমা। ডাস্টবিনের পাশে শুয়ে থাকা কুকুরগুলো হঠাৎ ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করতে শুরু করে। রিমা সেদিন ভীষণ ভয় পেয়েছিল।
ভেবেছিল কুকুরগুলো বুঝি ওকে কামড়ে দিবে। কিন্তু সেই মুহূর্তে একটা রিকশাওয়ালা এসে জায়গাটা পার করে দেয়। এসব ঘটনা রিমার ভেতরে ভীষণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। স্কুলে গিয়ে ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিমা। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাল ওরা ¯’ানীয় কাউন্সিলের কাছে যাবে। গিয়ে একটা দরখাস্ত দিয়ে আসবে। আজ রাতেই সে দরখাস্ত লিখবে।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে রিমার দাবি- ডাস্টবিনটা যেন মেরামত ও সুন্দর করা হয়। শুধু তাই নয়, ডাস্টবিনের চারপাশে ফুলের বাগান করার ইচ্ছার কথাও প্রকাশ করে রিমা।
সকাল সকাল তৈরি রিমা ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে যায় কাউন্সিলরের কাছে। দরখাস্তটা পড়ে ভীষণ খুশি হল কাউন্সিলর সাহেব। রিমাদের অনেক বড় মানুষ হওয়ার জন্য দোয়া করেন তিনি। সেখান থেকে রিমা বন্ধুদের সঙ্গে সোজা চলে যায় স্কুলে।
স্কুলে গিয়ে শুনতে পায় আর এক খুশির খবর। ওদের স্কুল পনেরো দিনের জন্য বন্ধ। রিমা জানে ছুটি মানেই মায়ের সঙ্গে লিমনের হাত ধরে মামা বাড়ি যাওয়া। মামাবাড়িতে গিয়ে অনেক আনন্দ করেছে রিমা ও লিমন। পিঠাপুলি খেয়েছে, মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়িয়েছে। এবার ওরা পুকুরে সাঁতার কাটতেও শিখেছে। এতকিছুর মাঝেও রিমা ওই নোংরা ডাস্টবিনের কথা ভুলতে পারে নি।
আজ স্কুল খুলেছে। স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে আর ভয় পাচ্ছে ঐ নোংরা আর দূষিত রাস্তাটার কথা ভেবে। কিন্তু উপায় নেই। স্কুলে যাওয়ার জন্য ওটাই একমাত্র রাস্তা। তাই স্কুল ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে রিমা স্কুলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ডাস্টবিনটার কাছে গিয়ে অবাক হয়ে যায় রিমা। রাস্তায় কোন ময়লা আবর্জনা নেই। ডাস্টবিনের চারপাশে গোলাপ গাছের চারা লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে একটা বড় সাইনবোর্ড লেখা আছে- ‘ডাস্টবিনের বাইরে ময়লা ফেললে বিশেষ শাস্তির ব্যবস্তা রয়েছে।’ রিমা মনের আনন্দে স্কুলের দিকে হাটতে থাকে।
১৩. ‘গ্রামে ফেরা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
গ্রামে ফেরা
নাগরিক জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মুহিত সাহেব উপলব্ধি করলেন- অনেক হয়েছে, আর না। এবার ফিরতে হবে শেকড়ে। অফিসে বসে বসে এমনটাই ভাবছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লেন। সোজা গেলেন বাসায়। গিয়ে দেখলেন তাঁর স্ত্রী শরিফা বেগম নারী উন্নয়ন সমিতির একটি মিটিং করছেন। তিনি স্ত্রীকে নিজের ঘরে ডাকলেন।
শরিফা বেগম ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলেন স্বামীর ঘরে। বললেন, কী হয়েছে তোমার? এভাবে ডাকলে যে! মুহিত সাহেব বললেন, আমার এ শহুরে জীবন আর ভালো লাগছে না। চল গ্রামে ফিরে যাই। সঙ্গে সঙ্গে রেগে গেলেন শরিফা বেগম।
মাঝে মাঝে কী হয় তোমার বলো তো? তোমার যেতে ইচ্ছে করছে তুমি যাও, আমি যাব না। এই বলে মিসেস মুহিত আবার সেই মিটিংয়ে যোগ দিলেন। মুহিত সাহেব এবার ছেলের ঘরে গেলেন।
ছেলেকে বললেন একই কথা। ছেলে বলল, বাবা সামনে আমার পরীক্ষা, এখন তুমি এসব কী বলছ? মুহিত সাহেবের মেয়ে বলল, বাবা আমি এই শহরে জন্মেছি, এখানে বড় হয়েছি। আমি এ শহর ছেড়ে কোথাও যাব না। হতাশ হয়ে পড়লেন মুহিত সাহেব। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, কেউ না গেলেও তিনি একাই যাবেন। জীবনে বাকিটা সময় তিনি গ্রামেই কাটাবেন। এই চিন্তা থেকেই পরদিন সকালে রওয়ানা দিলেন।
সঙ্গে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র। গ্রামের উদ্দেশ্যে বাসে চড়লেন। বাসে উঠে বসে পড়লেন নিজের নির্ধারিত সিটে। এরপর ধীরে ধীরে মনে পড়ল তাঁর সেই গ্রামের কথা। যে গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন, বড় হয়েছেন, শৈশব কৈশোর পার করেছেন সেখানে একসময় তাঁর বাবা মা ছিলেন, দাদা দাদি ছিলেন। আজ তারা কেউ নেই। কিন্তু সেই গ্রাম তো আছে, গ্রামের মানুষ তো আছে। আর আছে গ্রামের শান্ত, স্নিগ্ধ, মায়াবী সেই প্রকৃতি।
সে প্রকৃতিতে কেটেছে মুহিতের জীবনের সবচেয়ে স্বর্ণালী সময়। মুহিতের তখন মনে পড়ল গ্রামের মানুষের কথা। মুহিত যখন ঢাকায় পড়তে যাবেন, তখন গ্রামের লোকজন সবাই মিলে চাঁদা তুলে তাকে অর্থ দিয়েছিলেন। সেই অর্থে ঢাকায় পড়াশুনা করেছিলেন তিনি। তারপর চাকরির পিছনে হন্যে হয়ে না ঘুরে শুরু করেছেন ব্যবসায়। ঢাকার গুলিস্তানে ছোট একটি কাপড়ের দোকান দিয়েছিলেন। সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের কারণে তিনি আজ ঢাকা শহরের সম্ভ্রান্ত মানুষদের একজন।
এখন তার চারটি পোশাক কারখানা, দুটি বাড়ি, চারটি গাড়ি-সব মিলিয়ে মুহিত এখন অনেক ধনী। কিন্তু জীবনের দীর্ঘ সংগ্রাম আর ঢাকা শহরের ব্যস্তময় জীবন-যন্ত্রণা আর ভালো লাগে না তার। তাছাড়া যে গ্রাম তাকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার খোরাক জুগিয়েছে, সে গ্রামের প্রতিও তার কিছু দায়িত্ব আছে। সেই সঙ্গে নগর জীবনের যান্ত্রিকতা, কোলাহল, সময় ধরে চলা, কৃত্রিমতা সবকিছুতে তিনি একেবারে হাঁপিয়ে উঠছিলেন।
এ কারণে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতেও তিনি যেতে চান জন্ম¯’ান রসুলপুর গ্রামে। এমন অনেক কথাই ভাবতে থাকেন তিনি। চোখের কোণে ভিড় করে অজস্র স্মৃতি। বাবা, মা, ভাই, বোন, বন্ধুদের স্মৃতি। স্মৃতিময় পুণ্যভূমিতে যাবেন তিনি। বেড়াতে নয়, জীবনের বাকিটা সময় সেই ভূমির অধিবাসীদের সঙ্গে একাত্মা হয়ে, তাদের সুখ দুঃখের অংশীদার হয়ে থাকতে। এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় বাস থেমে যায়। তিনি নেমে পড়েন বাস থেকে।
হাঁটতে থাকেন গ্রামের দিকে। গ্রামের ভেতরে ঢোকার সময় প্রথম ধাপ ফেলতেই তা হৃদয়ে দোলা দিয়ে ওঠে। তিনি মাটির দিকে একবার তাকালেন। দেখলেন, নিজের অজান্তে নিজেরই চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রæ ঝরে পড়েছে সেই মাটিতে।
১৪. ‘যানজট’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
যানজট
হাইওয়েতে এসে গাড়িটা আচমকা দাঁড়িয়ে গেল। আরিফ সাহেব দেখলেন তার গাড়ির সামনে অন্তত কয়েকশ গাড়ি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের গøাসটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন পেছনেও এমন কয়েকশ গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এমনিতেই প্রচন্ড গরম, তার উপর ঢাকা শহরে মাত্রাঅতিরিক্ত তাপমাত্রা। এমন অবস্থায় রাস্তায় গাড়ির ভেতরে এভাবে বসে থাকাটা শুধু অস্বস্তিকর নয়, প্রচন্ড বিরক্তিকরও।
আরিফ সাহেব বারবার ঘড়ির দিকে চোখ বোলাচ্ছেন। অফিসের সময় প্রায় শেষ হয়ে গেল। সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে না পারলে বস রেগে যাবেন। তাছাড়া সকাল সাড়ে নয়টায় তাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। এ কারণে অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছিল। আরিফ সাহেব ড্রাইভারকে এসিটা বাড়িয়ে দিতে বললো। ড্রাইভার বললো, ‘স্যার, মনে হয় এক ঘন্টা আগে জ্যাম ছাড়বে না।’ ড্রাইভারের কথাটি শুনতে গিয়ে আরিফ সাহেব শুনতে পেলেন, ‘পেপার লন, পেপার।
এই যে প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, জনকণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন। পেপার লন, পেপার। গাড়ির জানালার বাইরে তাকিয়ে আরিফ সাহেব দেখতে পেলেন ১৩-১৪ বছরে একটি ছেলে হাতে কতগুলো পেপার ভাঁজ করে রেখেছে আর প্রায় প্রতিটি গাড়ির জানালা ধরে গিয়ে বলছে, ‘পেপার লন, পেপার।’ কালের কন্ঠ, জনকণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন…। দীর্ঘ যানজটে আটকে গিয়ে অনেকেই পেপার কিনছেন এবং সময় কাটানোর জন্য পড়ছেন।
ছেলেটিকে দেখে আরিফ সাহেবের মনে পড়ল তার জীবনে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। ঢাকা শহরে এভাবেই একদিন পেপার বিক্রি করতেন তিনি। সারাদিন পেপার বিক্রি করে যে টাকা পেতেন তা দিয়েই তার ও তার মায়ের সংসার চলত। এ রকমই একদিন পেপার বিক্রির সময় এক ভদ্রলোক মানিব্যাগ বের করে টাকা দিতে গিয়ে হঠাৎ করে পড়ে যায় সে মানিব্যাগ। আর সে সময় গাড়িটি দ্রæত চলে যায়। এরপর আরিফ সে মানিব্যাগটি কুড়িয়ে নেন।
ব্যাগ খুলে দেখেন কতগুলো পাঁচশ টাকার নোট। সেই সঙ্গে ব্যাগের মালিকের অফিসের কার্ড। আরিফ সেদিন সারাদিন ঘুরে ঘুরে ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেই অফিসে ঢুকে আরিক মানিব্যাগটির মালিকের কাছে ব্যাগটি পৌঁছে দেয়। ব্যাগটি পেয়ে ভদ্র লোক খুব বিস্মিত হন এবং খুশিতে আরিফকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর সেই ভদ্রলোকের কল্যাণেই আরিফ আজ এই প্রতিষ্ঠিত হওয়া। বলা যায় সততার পুরষ্কার।
গাড়ির পাশে ছেলেটিকে দেখে আরিফ সাহেবের আজ সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ল। আরিফ সাহেব দেখতে পেলেন সামনের গাড়িগুলো হঠাৎ করেই চলতে শুরু করেছে। ফলে সেই পেপারওয়ালা ছেলেটি আর বের হওয়ার রাস্তা ঠিক করতে পারছে না। এরই এক পর্যায়ে একটি সি এন জি ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে দ্রæত পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আরিফ সাহেব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হলেন। হঠাৎ করে আবার গাড়ি থেমে গেল।
আরিম সাহেব বুঝতে পারলেন আবার জ্যাম। তিনি দ্রæত গাড়ি থেকে নেমে ছেলেটিকে তার গাড়িতে তুলে আনলেন। ছেলেটি মুখ, মাথা, নাক, কান অনবরত রক্ত পড়ছে। আরিফ সাহেবের সিট ও পাশের সিট দ্রæত রক্তে ভিজে গেল। আরিফ সাহেব বুঝতে পারলেন, যে করেই হোক ছেলেটিকে দ্রæত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তার সামনে বিশাল জ্যাম। গাড়ি দুই তিন ধাপ এগিয়ে আবার থেমে যায়। আরিফ সাহেব ভাবলেন, ছেলেটিকে কোলে করে দৌঁড়ে যাবেন হাসপাতালে।
কিন্তু ড্রাইভার জানালেন তা সম্ভব নয়। তাতে অন্তত ঘন্টা দুয়েক লাগবে। আরিফ সাহেব ছেলেটিকে কোলে নিয়ে গাড়ি ছাড়ার অপেক্ষা করছেন। ক্রমেই ছেলেটি নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। প্রায় এক ঘন্টা পর গাড়ি ছাড়ল দ্রæত গতিতে। হাসপাতালে পৌঁছে মাত্র ডাক্তার জানালেন, ছেলেটি দশ মিনিট আগে মারা গেছে।
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৬১-১৮৫ | PDF Download
HSC | বাংলা ২য় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১৪১-১৬০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | কলেজ ভিত্তিক অনুবাদ ১২১-১৪০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় | বোর্ড ভিত্তিক অনুবাদ ১০১-১২০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | অনুবাদ ৬১-৮০ | Onubad | PDF Download
১৫. ‘মিথ্যাবাদীর শাস্তি’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
মিথ্যাবাদীর শাস্তি
মিলিটারির বুটের আওয়াজে উর্মিলার বুক ধড়ফর করে ওঠে। উর্মিলা বেশ নিশিন্তই ছিল। কিন্তু তার সেই নিশ্চয়তা মিথ্যা প্রমাণিত হলো উর্মিলা শুনতে পেল মিলিটারির বুটের আওয়াজ। উর্মিলা তার কোলের শিশুটিকে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরে আছে।
উর্মিলার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা নির্মল আজ বাড়িতে। প্রায় তিন মাস পর নির্মল গতকাল এসেছে বাড়িতে। আজই চলে যাবে। নির্মলের যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় হঠাৎ বুটের আওয়াজ।
নির্মল বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। হাতের স্টেনগানটি নিয়ে সে একাই শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য বেরিয়ে পড়তে পা বাড়ায়। উর্মিলা দৌঁড়ে এসে নির্মলের পায়ে পড়ে। উর্মিলা বলে, ‘তুমি একা ঐ নরপিশাচদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পেরে উঠবে না।’ এই বলে উর্মিলা নির্মলের অস্ত্রটিকে ঘরের একটি বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখে। স্বামীকে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে উর্মিলা শুধু শিশুটিকে নিয়ে বসে থাকে। এমন সময় উর্মিলা বুঝতে পারে মিলিটারির বুটের আওয়াজ ক্রমেই আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
এক পর্যায়ে উর্মিলা শুনতে পায় তার দরজায় লাথির আঘাত। উর্মিলা দরজা খুলে দিতেই দেখে এই এলাকার ট্যারা রাজাকার দাঁত বের করে হাসছে, আর তার পাঁচ-ছয়জন পাকিস্তানি সেনা। তারা ঘরে ঢুকেই নির্মলকে খুঁজতে থাকে। উর্মিলা এক হাতে কোলের শিশুটিকে আঁকড়ে ধরে আর অন্য হাতে রাজাকারের পায়ে পড়ে। কিন্তু রাজাকারটি ঠিকই নির্মলকে খাটের নিচ থেকে টেনে বের করে।
নির্মলের সামনেই মিলিটারিরা উর্মিলাকে নির্যাতন করে আর কোলের শিশুটিকে বেয়নেট দিকে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এরপর নির্মলকে গুলি করে হত্যা করে হাসতে হাসতে চলে যায়। উর্মিলা কোনমতে তাকিয়ে দেখে তার স্বামী ও কোলের শিশুর ক্ষতবিক্ষত লাশ। উর্মিলা শুনতে পায় অজস্র নারীর চিৎকার আর গুলি শব্দ। উর্মিলা ঘরের জানালা দিয়ে দেখতে পায় পাশের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে রাজকারটি।
উর্মিলা ভাবতে থাকে এই ট্যারা রাজাকার গতকাল সবাইকে বলেছে, আগামী সাত দিন এ গ্রামে মিলিটারিরা আসবে না। গ্রামের সহজ সরল মানুষ তার কথা বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু ট্যারা রাজাকার মিথ্যা কথা বলে পরের দিনই মিলিটারিদের গ্রামে এনেছে আর মিলিটারিরা পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে গ্রামবাসীর ওপর। উর্মিলা চিন্তা করে যেভাবেই হোক এর বদলা নিতে হবে।
মিথ্যাবাদী ট্যারা রাজাকারকে শাস্তি তো দিতেই হবে, সেই সঙ্গে মিলিটারিদেরও। দিন সাতেক পর উর্মিলা একদিন যায় ট্যারা রাজাকারের বাসায়। ট্যারা রাজাকার উর্মিলাকে দেখে বলে, তুই ক্যান আইচস। উর্মিলা বলে যে, ’আমি সব ভুলে গেছি ট্যারা ভাই। আমার বাড়িতে কাল আপনাদের দাওয়াত। আমাকে তো বাঁচতে হবে।’ রাজাকার খুশি মনে উর্মিলার কথায় সায় দেয়। উর্মিলার বাসায় একদিন ট্যারা রাজাকার দুজন মিলিটারি নিয়ে যায়।
উর্মিলাকে দেখে রাজাকার ও মিলিটারিরা খুব খুশি। উর্মিলাও বেশ খুশি। রাজাকার ও মিলিটারিদের স্বাগত জানিয়ে সে তাদের বসতে দেয় ড্রয়িং রুমে। এরপর বলে ট্যারা ভাই আপনারা হাত মুখ ধুয়ে আসুন, আমি খাবার দিচ্ছি। রাজাকার ও মিলিটারিরা অস্ত্র রেখে হাত ধুয়ে খেতে বসে। উর্মিলা তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসে। রাজাকার ও মিলিটারিরা মনের আনন্দে খাবার খেতে শুরু করে। ট্যারা রাজাকার বলে, ‘খুব ভালো রানছস উর্মিলা।
তোর কোন চিন্তা নাই।’ উর্মিলা বলল, ‘আর একটু মাংস আনি?’ ট্যারা বলল, ‘যা আন।’ উর্মিলা মাংস আনার জন্য ঘরে যায়। ঘরের কোণে স্বামীর রেখে যাওয়া স্টেনগানটি হাতে তুলে নেয়। এরপর জানালার পাশে এসে দেখে ট্যারা রাজাকার ও মিলিটারি দুটো মনের আনন্দে মাংস চিবুচ্ছে। উর্মিলা জানালা দিয়ে তাদের এক এক করে লক্ষ্য করে মিথ্যাবাদী ও কুখ্যাত ট্যারা রাজাকার ও নরপশু পাকিস্তানি মিলিটারি দুটোকে হত্যা করে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।