আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানব, কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে (পর্ব – ২) বিস্তারিতঃ
প্রথম পর্বে আমি মেজর ৪টি বিষয় বা ডিপার্ট্মেন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি।
প্রথম পর্ব পড়ে থাকলে আপনি অনেক বিষয়ে ধারণা ইতিমধ্যেই লাভ করেছেন তা আমি ভালোই বুঝতে পারছি।
তাহলে চলুন এই পর্ব শুরু করা যাক। এই পর্বে আমরা আলোচনা করব মানুষের তর্ক বিতর্ক নিয়ে।
ডিপ্লোমা পড়ুয়া ছাত্রছাত্রিদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় তারা তাদের নিজেদের বিষয় নিয়ে একটু বেশিই বাহবা দেখায়।
যার ফলে নতুনদের সঠিক গাইডলাইন দিতে পারেনা যে, আসলে কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করা উচিৎ।
সেই প্রেক্ষাপটেই আজকের এই আর্টিকেল।
ডিপার্টমেন্টঃ কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে ?
সিভিল ডিপার্টমেন্টঃ
১। সিভিলদের জন্য- আপনারা যে বিষয় নিয়ে পরেন তা গর্ব করার মত।
গর্ব করে বলতে পারেন পৃথিবীর সব স্থাপনা আপনাদের হাতে তৈরী। হ্যা আমার বাড়ি, আমি যে প্রতিষ্ঠানে পড়ি, আমি যে মার্কেটে মার্কেট করি, আমি যে রোড দিয়ে যাতায়াত করি সবই আপনাদের তৈরি তা সত্য।
কিন্তু এটাও সত্য যখন দেখি কিছু অসাধু এবং মেধাহীন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কারনে অনেক বহুতল ভবন ভেঙ্গে পরে।
যখন দেখি কোন কাজ নিতে গিয়ে লাখ লাখ টাকা ঘুষ খায় আবার মুখে বলে ঘুষ হারাম।
যখন দেখি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার একটা বাড়ির মডেল সম্পর্কে সামান্য ধারনাই নেই ইত্যাদি।
তখন আমার মত সাধারন মানুষের খুবই দু:খ লাগে। আবার আমার মত অনেকের কষ্টও হয় এই ভেবে যে আমি যে বাড়িতে থাকি তা হয়তো নিরাপদ না।
যখন দেখি ভবন ধ্বসে শতশত মানুষ মারা যায় তখন আপনাদের গর্ব কোথায় থাকে? যখন দেখি একজন সিভিলের ছাত্র সামান্য প্রিসপেকটিভ সম্পর্কে ধারনা দিতে পারে না তখন সত্যিই দু:খ হয় যে সে কিভাবে একটা আর্কিটেকচারাল ডিজাইন করবে।
তাই বলব আপনার যা কাজ আপনি তাই ভাল করে শিখুন। আপনার বিষয়ে আপনি যদি কিছু না পারেন তাহলে অন্য বিষয়কে কেন আপনি ছোট করে দেখবেন?
আমি যদি প্রশ্ন করি আপনি কি পারবেন ইলেকট্রিক্যাল ছাত্রদের মত ১ইউনিট বিদ্যুত তৈরী করে দেখাতে? আপনি কি পারবেন তাদের মত একটা ট্রান্সফরমারের ডিজাইন করতে?
আপনি কি পারবেন তাদের মত একটা সার্কিট বোর্ড ডিজা্ন করতে?
কম্পিউটার ছাত্রদের মত আপনি কি পারবেন ১০০ লাইন প্রোগ্রাম লিখতে? পারবেন একটা প্রসেসর এর মাত্র ১০টা লজিক এর বর্ননা দিতে যেখানে কয়েক লক্ষ লজিক থাকে?
আপনি কি পারবেন একটা ছোটখাট সফ্টওয়্যার তৈরী করতে যেখানে একটা সফ্টওয়্যারে কয়েকহাজার লাইন থেকে শুরু করে কয়েক মিলিয়ন লাইন কোড লিখতে হয়?
আপনি কি পারবেন একটা যন্ত্রের গঠন বর্ননা করতে?? বলেন পারবেন?? পারবেন না কারন আপনি আপনার সাবজেক্টও ভাল করে জানেন না!! তাহলে আপনি অন্যদের ছোট করে দেখবেন কেন?
ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টঃ
২। ইলেকট্রিক্যালদের জন্য- আপনার অনেক দ্বায়িত্ব আছে মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা পূরনের জন্য। আমাদের দেশে অনেক বিদ্যুত ঘাটতি। দেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুত সবার আগে প্রয়োজন।
কিন্তু দিনে ৫ থেকে ৭ বারও লোডশেডিং হয়। এর কারন বিদ্যুতের অভাব।
বিদ্যুতের অভাব পূরনের জন্য আপনি কি করছেন। আপনি কি আপনার পথে হাটতেছেন নাকি অন্যরা কি পথে হাটতেছে তার দিকে তাকিয়ে আছেন?
অনেকে এমনটাও করেন যে যন্ত্রপাতি থাকা সত্বেও একবারও তাতে হাত দেন নি এই ভেবে যে এ শিখে কি হবে সব চাকরি পায় সিভিলের লোকরা তো আপনার মনোভাব যদি এই হয় তা আপনি কিভাবে কাজ শিখবেন?
আপনি যদি একটা সার্কিট ডিজাইন না করতে পারেন, একটুও থিউরী এবং প্রাকটিক্যালের অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে কিভাবে গর্ববোধ করবেন? ইলেকট্রিক্যালের অনেকেই দেখছি অন্য ডিপার্টমেন্টদের ছোট করে দেখেন।
উপরে ১ নং এর সাথে মিলিয়ে দেখুন যে আপনার যোগ্যতা কতটুকু। আপনি কেন তাদেরকে ছোট করছেন?
কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টঃ
৩। কম্পিউটারদের জন্য – আপনারাও উপরের কথাগুলো পড়ে দেখেন। (হয়তো পারবেন কিন্তু তাতেও কম্পিউটারের সাহায্য নিতে হবে )অনেককেই দেখছি কম্পিউটারে পড়েন কিন্তু কম্পিউটারের ‘ক’ সম্পর্কেও ধারনা নেই।
আবার অনেকের কম্পিউটার আছে কিন্তু হার্ডডিস্ক গান,নাটক,মুভি ইত্যাদি দিয়ে ভরা থাকে।
অনেকে ভাল করে টাইপও করতে পারেন না তারপরও গর্ব করে বলেন অন্যদের থেকে আপনার পজিশন ভাল।
আবার ইন্টারনেট হাতে পেলে তার যত প্রকার অপব্যবহার আছে তা করেন।
আপনি কেন এটার সৎ ব্যবহার করছেন যেখানে অন্যরা এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আপনি বাংলাদেশকে আরও পিছিয়ে দিচ্ছেন..কেন?
আপনার কি ইচ্ছা নেই নতুন কিছু তৈরী করার? নিজে কিছু না পারেন অন্যদের থেকে শিক্ষা নিন। আধুনিক যুগে থেকে কেন পিছিয়ে থাকবেন?
অন্যদের সাফল্য দেখে কেন মনের মধ্যে কষ্ট চেপে মুখে হাসি দেখিয়ে হাত তালি দিবেন? সময়য়ের সৎ ব্যবহার করেন।
একটা মানুষ সারা জীবন সাধনা করেও মনে হয় কম্পিউটারের কাজের ১ লক্ষ ভাগের এক ভাগ শিখতে পারবে না। সেখানে আপনি নাটক আর গান, মুভি দেখে কিভাবে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান?
মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টঃ
৪। মেকানিক্যাল দের জন্য- আপনারাও উপরের কথাগুলো পড়ে দেখেন।
যখন দেখি একজন মেকানিক্যালের ছাত্র অটোমেটা সম্পর্কে কোন ধারনাই রাখে না।
মাত্র ৮-১০ টি গিয়ারের কাজ বলতে বললে হা হয়ে থাকে, মাত্র ১৫টা মোশন তৈরী করার কৌশল জানতে চাইলে মনে হয় আকাশ থেকে পড়ছে।
শুধু কয়েকটা গতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পারে না।
আর এই কয়েকটা মাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে মনে হয় যেন এই প্রথম শুনছে..যেখানে মোট ১১ টি মাত্রা আছে বললে তিনটা ছাড়া বুঝাইতে পারিনা।
তারা যখন গর্ব করে তখন বলতে হয় আপনি আর একটু চেষ্টা করুন..দেখুন নিজেকে ঠকাচ্ছেন কিনা।
কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে ?
আরও কিছু কথা- আমি আমার সাবজেক্ট নিয়ে ভালই আছি।
আমি কখনো এটাকে বড় বা ছোট করে দেখি না। আমি এটাকে বিচার করি আমি কি পারি তাই দিয়ে। আমি নিজেকে কেমনভাবে তৈরি করছি তাই দিয়ে বিবেচনা করি।
আমাকে কেউ ছোট করে দেখলে আমি দু:খ পাই না বরং আমি তাকে আড়াল থেকে দেখার চেষ্টা করি সে আমার থেকে কতটা জানে যে সে আমাকে ছোট মনে করে।
আমি কি সত্যিই তার থেকে ছোট। আমি যদি তার থেকে ছোট হই তাহলে তাকে আমি অবশ্যই সম্মান দিয়ে চলি।
আর তার কথা মিথ্যা হলে তাকে পরে এড়িয়ে চলি যেন সে কখোন আমাকে বড় চোখে না দেখে কারন সে মনে করে সেই বড়!!
আমার নিজস্ব কিছু কথাঃ কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে ?
আমি কম্পিউটারে পড়ে অনেক ভালোই আছি- কারন লম্বা সময় কষ্ট করে কয়েকলাইন প্রোগ্রাম লিখি তখন নিজেকে সার্থক মনে হয়। তখন খুব আনন্দ পাই এই ভেবে যে না আমি কিছু তৈরি করছি। এর সবটুকুই আমার।
নতুন কিছু তৈরী করার মাঝে আনন্দই আলাদা। যখন দেখি বাস্তবে রোবট মানুষের সাথে কথা বলছে, মানুষের সেবা করছে যা বিশ্বস্ত একজন বন্ধু করতে পারবে না তখন ভালই লাগে।
যখন দেখি মঙ্গল গ্রহে মানুষ যেতে না পেরে কম্পিউটার পাঠিয়ে মানুষের জন্য তথ্য আনছে তখন ভালই লাগে।
মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করে আর্কিটেকচারের ডিজাইন করে তা বাস্তব করতেছে তখন ভালই লাগে।
আমার কিছু জানার প্রয়োজন কোন বন্ধু সাহায্য করতে পারছে না যা আমি কম্পিউটারের সাহায্যে করতে পারি তখন ভালোই লাগে।
একজন প্রাগ্রামার খাওয়া বন্ধ করে কোড লিখছে মানুষের সমস্য সমাধানের জন্য তখন ভালই লাগে।
যখন দেখি আমার বন্ধু হাতে স্মার্টফোন দিয়ে সারা পৃথিবীকে দেখছে তখন ভালই লাগে।
আমার এন্টারটেইন প্রয়োজন বাইরে না যেয়ে ঘরে বসে ব্যবস্থা হচ্ছে তখন ভালই লাগে।
ইচ্ছা করলে কোটি কোটি বইয়ের মধ্য থেকে পছন্ধের বইটি পরতে পারছি তখন ভালই লাগে।
কোন ক্রিয়েটিভ কাজ করার ইচ্ছা হয় কম্পিউটার সাহায্য করে তখন ভালই লাগে।
কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে ?
আপনি হয়তো জানেন না আপনার হাতের মোবাইলের প্রোগ্রামগুলো কোন একজন প্রোগ্রাম মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করছেন!
কিন্তু আপনি কয়েকটা চাপ দিলেই কাজ করতে পারছেন ।
আপনি হয়তো জানেন না আপনার ডেস্কে রাখা কম্পিউটারে একটা সফ্টওয়্যারে একজন প্রোগ্রামার দিন রাত পরিশ্রম করে হাজার হাজার লজিক তৈরি করেছেন, লিখেছেন লক্ষ লক্ষ লাইন কোড।
কিন্তু আপনি তার ১০ লাইন কোডও বুঝতে পারবেন না।
আপনি হয়তো ঐ সফ্টওয়্যারের একটা অপশন শিখলেই পরের দিন তা ভুলে যান।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে-তা আপনি কি শিখছেন?
উত্তর: আমি প্রতিটা দিন, প্রতিটা সময় নতুন কিছুনা কিছু শিখার চেষ্টা করি। শেখার মাঝে অনেক আনন্দও পাই।
যা আর কিছু করে পাই না। কম্পিউটার এমনই একটা শেখার ক্ষেত্র যা এক জীবনে শিখে শেষ করা যাবেনা ।
তাই ভালো কিছু শেখার চেষ্টা করি। শিখার জার্নি শুরু করলে মনে হয় আমি মহাকাশের কোন এক কোনায় পরে আছি।
যতই ভিতরে যাই নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার করি।
আর নতুন কিছু আবিষ্কারের মধ্যে যা আনন্দ তা যে করেছেন সেই বুঝবেন।
সবশেষ কথাঃ কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে ?
সবশেষে বলব আপনি যা করতে ভালবাসেন তাই করবেন। নিজেকে কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দিবেন না।
কারো কথা মত বোকার স্বর্গে যাবেন না।
আপনি যা করে আনন্দ পাবেন না তাতে কোন দিনও সফল হতে পারবেন না।
আর কাউকে ছোট করে দেখবেন না। অন্যরা যা পারেন আপনি হয়তো তার কিছুই পারেন না।
তাই নিজেই নিজেকে মূল্যায়ন করুন। অন্যকে খাট করে নিজেকে নিয়ে ভাববেন না।
আপনি পৃথিবীর বড় বড় মানুষদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তারা বেশিরভাগই উদ্দোগতা ছিলেন। এবং বেশিরভাগই টেকনোলজি বিষয়ে।
কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা করলে ভালো হবে ?
তো আপনি কেন চাকরী নিয়ে ভাবছেন?
চাকরী করতে চাইলে প্রতিদিন জব এর সাইটগুলো ভিজিট করুন দেখুন আপনার চাহিদা কেমন।
আমি চাকরী করার থেকে উদ্দোগতা হওয়ায় সম্ভাবনা বেশি দেখি।
বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকেই বিএসসি এমএসসি করে উদ্দোগতা হচ্ছেন তাহলে আপনি চাকরি নিয়ে ভাবছেন কেন?
আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলুন নতুন আইডিয়া মাথায় আনুন। দেখবেন সফল হবেন।
আমি সেই পথেই হাটতেছি এবং আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আপনারা চাইলে ডিপ্লোমার বিষয় সমূহ নিয়ে পরবর্তি আর্টিকেলেঃ
আমরা কোন ডিপার্টমেন্ট বা কোন ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরীর অবস্থা কেমন তা নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি।
উক্ত বিষয় সর্ম্পকে যেকোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
Comments ৪