HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | অভিজ্ঞতা বর্ণনা ২১-৩০ | PDF Download : বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব অভিজ্ঞতা বর্ণনা গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু অভিজ্ঞতা বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
২১. বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
উত্তর : গোপালগঞ্জ জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এসেছি। সেখানে নিজ বাড়িতে বাবা আমার পাশে শায়িত রয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও শাহাদাত বার্ষিকীতে শুধু নয়, সারা বছরই হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসে, তার আত্মার শান্তির জন্য মোনাজাত করে।
আমরাও চার বন্ধু পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এবং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখতে। বাইগ্য নদীর পাড়ের এই গ্রামটি সবুজ গাছপালা ও বন বনানীবেষ্টিত, সামনে রয়েছে সবুজ ফসলের মাঠ। বড় রাস্তা থেকে গ্রামে ঢুকতেই বামে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, দিঘি, একপাশে হেলিপ্যাড।
সামনে কিছুদূর গেলেই বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স। দৃষ্টিনন্দন গেট দিয়ে ঢুকে একপাশে পাঠাগার ও মিউজিয়াম, গবেষণা কেন্দ্র, প্রশাসনিক ভবন, মসজিদ, ক্যাফেটেরিয়া। অন্য পাশে মুক্তমঞ্চ বকুলতলা চত্বর, লেকচার থিয়েটার, বাগান। পুকুর ঘেরা বাগানটি মন জুড়িয়ে দেয়।
কমপ্লেক্স এর মূল আকর্ষণ ‘টম্ব’ অর্থাৎ মূলসৌধ। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে গম্বুজ আকারে এই সৌধ নিঃসন্দেহে দৃষ্টিনন্দন। বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিনম্রচিত্তে শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম। ভেতরে একপাশে বঙ্গবন্ধুর কবর, অন্যপাশে তার পিতা মাতার কবর। আবেগাপ্লুত হয়ে সূরা ফাতেহা পাঠ শেষে মোনাজাত করলাম। আরো অনেকেই ছিলেন আমাদের সাথে। সবাই অশ্রæসিক্ত। চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি আমরাও।
পাশে পুরনো একতলা বাড়ি, যেখানে ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চের জন্মে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। চারপাশে গাছপালা, বন-বনানী। পাঠাগারে গেলাম। এখানে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কিত বই ছাড়াও রয়েছে সৃজনশীল অনেক বই। কিছু বই দেখলাম, খুব ভালো লাগলো। দোতলায় উঠতে দুপাশে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম কান্ডের ছবি দিয়ে সাজানো। এখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত স্মৃতিবিজড়িত জিনিসপত্র, তার শবদেহের কফিন আর অসংখ্য ছবি।
ক্যাপশন পড়ে পড়ে আমরা বঙ্গবন্ধু বিষয়ক কর্মকান্ড এবং বিশ্ব ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ববৃন্দের সঙ্গে পরিচিত হলাম। এরপর ক্যাফেটেরিয়ায় খেয়ে নিলাম তাজা খাবার। ততক্ষণে বিকেল হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম কি এক আকর্ষণে আমাদেরকে ধরে রাখতে চাই। আমাদের সবার চোখেই পানি। যুগ যুগ ধরে মানুষের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে বেঁচে থাকবেন বঙ্গবন্ধু। টুংগীপাড়া কে বিদায় জানিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটে চলল ঢাকার দিকে।
২২. বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
উত্তর : স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটি আজ ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’। অথচ ১৯৬২ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন,
১৯৭১ এর অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ ও স্বাধীনতা ঘোষণার পরিকল্পনা প্রণয়ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় দেশি-বিদেশি ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার প্রধান ও সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট শোনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই বাড়িটি।
এই বাড়িটি থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বহুবার গ্রেফতার করেছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে এই বাড়িতেই তাকে সপরিবারে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট প্রাণ দিতে হয়েছিল।
১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হলে তিনি এটি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এর কাছে হস্তান্তর করেন। ট্রাস্ট এই বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করে।এসব গুরুত্বপূর্ণ কথা আব্বার কাছ থেকে শুনে ঐতিহাসিক তাৎপর্যমÐিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি খালাতো ফুফাতো ভাই বোন মিলে দেখতে গেলাম।
কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ৩০ টাকার বিনিময়ে টিকিট কিনে ভেতরে প্রবেশ করলাম। একতলার প্রথমেই চোখে পড়ল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, মনে হল যেন বঙ্গবন্ধুই দাঁড়িয়ে আছেন। মাথা নুয়ে এলো শ্রদ্ধায় কৃতজ্ঞতায়।
ঐতিহাসিক মুহূর্তের অনেক দুর্লভ ছবি সুবিন্যস্তভাবে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে। মার্শাল টিটো, ইন্দিরা গান্ধী, সালভাদর আলেন্দে, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, আনোয়ার সাদাত, ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি একেবারেই জীবন্ত মনে হয়। চীনের নেতৃবৃন্দ, কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দ, জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা, ও আই সি সম্মেলন সহ বহু অজানা বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হলাম।
এটি ছিল ড্রয়িং রুম, এর পাশের কক্ষটিই তার পড়ার ঘর। শুনলাম এখানে বসে পড়ার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করতেন। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে দৃষ্টি থমকে গেল দেয়ালে, গুলিবিদ্ধ অনেক ছিদ্র। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে অসংখ্য গুলি ছোড়া হয়েছিল ব্রাশফায়ারে, সেই নিদর্শন এখনো তাজা মনে হয়। এখানে বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটি প্রতিকৃতি রয়েছে।
একবারের বেশি তাকানো যায়না অশ্রæসিক্ত হয়ে আসে দৃষ্টি। দোতালায় প্রথমেই বঙ্গবন্ধুর শোবার ঘর, তারপর হাসিনা-রেহানা, কামাল ও জামালের ঘর। এগুলোতে রয়েছে তাদের ব্যবহৃত নানা আসবাব ও জিনিসপত্র। প্রদর্শন সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শেখ রাসেলের বল, হকিস্টিক ব্যাট, হেলমেট, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত পাইপ, চশমা সহ বিভিন্ন জিনিস।
কেউ নেই আজ, কেবল তাদের ব্যবহৃত জিনিস গুলো রয়েছে মূল্যবান স্মৃতি হয়ে। গাইডের আবেগঘন বর্ণনায় দুচোখ বুজে এসেছে বারবার। চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলাম হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক স্মৃতিধন্য ৩২ নম্বরের বাড়িথেকে। কখনো ভুলবো না, কোনদিন এই ভুলবো না বঙ্গবন্ধুকে, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের নিদর্শনগুলোকে।
২৩. সুন্দরবন ভ্রমণের একদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
উত্তর : খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি হিমেল যাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছে। মাঝারি সাইজের একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ, বৈঠা, লগি, দড়ি, দিয়াশলাই ইত্যাদি প্রস্তুত করে রাখা। ওদের এলাকার ৭ নং ফরেস্ট রেঞ্জ এর মধ্যে। তাই হিমেল ওর বাবাকে দিয়ে স্থানীয় ফরেস্ট অফিসারের কাছ থেকে বনের অধিক গভীরে প্রবেশ না করার শর্তেও সুন্দরবনের প্রবেশের একখানি অনুমতি পত্র জোগাড় করেছে।
হিমেলের এলাকার আরো দুই বন্ধু আমাদের সফর সঙ্গী হলো। আমাদের নৌকাটি একটি ছোট নদীর ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলছে। দুপাশে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ চোখে পরলো। গেওয়া, কেওড়া, ওরা ইত্যাদি। ১ ঘন্টা চলার পর আমাদের নৌকা প্রবেশ করল একটা বড় নদীতে। হিমেল জানালো এর নাম হরিণ খালি নদী। নদীর ওপারেই সুন্দরবন।
হরিণখালির অনেক শাখা নদী সুন্দরবনের ভেতরে প্রবেশ করেছে এবং তারই কোন একটা পথ দিয়ে আমাদের নৌকা সুন্দরবনে প্রবেশ করছে। উপসাগরের কোলঘেঁষে প্রকৃতি আপন হাতে গড়ে তুলেছে বিশ্বের বিস্ময় রহস্য ঘেরা সুন্দরবনকে।
এ বন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। বাংলাদেশের মধ্যে এর বিস্তৃতি ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে সুন্দরবনকে স্বীকৃতি দেয়। এখানে রয়েছে পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সুদৃশ্য চিত্রল হরিণ, বানর, হনুমান, অজগরসহ নানা প্রজাতির সাপ, কুমির এবং শতাধিক প্রজাতির বিভিন্ন আকৃতির রংবেরঙের পাখি। জরিপ মতে প্রায় ৫০০ বাঘ এবং ৩০ হাজার চিত্রল হরিণ রয়েছে সুন্দরবন এলাকায়।
প্রায় দু’ঘণ্টা হলো আমরা বনের ভেতর প্রবেশ করেছি, কিন্তু কোন হরিণ বা বানর এখনো চোখে পড়েনি, শুধু চেনা-অচেনা কয়েক প্রজাতির পাখি ছাড়া। আমাদের নৌকাটি বনের সেই গভীর নিরবতা ভেঙ্গে অনর্গল শব্দ করে এগিয়ে চলছিল। হঠাৎ হিমেল নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল।
বলল, তীরে লক্ষ্য করো। ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখতে পেলাম একটি হরিণের পাল দৌঁড়ে পালাচ্ছে। নৌকা তীরে ভিড়িয়ে আমরা নামলাম। হিমেল বলল, বেশি দূরে যাওয়া যাবে না। যেহেতু হরিণ আছে এখানে, সেহেতু বাঘও থাকতে পারে। কাজেই আমাদের তাড়াতাড়ি নৌকায় ফিরতে হবে।
এখানে সুন্দরী গাছের ঘনত্ব অন্যান্য গাছের তুলনায় একটু বেশি। যার কারণে আমাদের চলতে কষ্ট হচ্ছিল, তবুও চলছিলাম। প্রায় একঘন্টা বনের স্থল ভাগ ঘুরেছি। হরিণ বানরের পাশাপাশি দেখতে পেলাম অনেক রকমের পাখি, গুইসাপ, বন বিড়াল এবং গোলপাতা নামক এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ। স্থানীয়রা এগুলো দিয়ে ঘরের চাল তৈরি করে। একদল মৌয়ালের সঙ্গে দেখা হলো। তারা মধু সংগ্রহ করছে বিশেষ প্রক্রিয়ায়। হিমেল তাড়া দিল ফেরার জন্য। অনিচ্ছা সত্তে¡ও আমরা ফেরার পথ ধরলাম।
২৪. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ‘বৈসাবি’ উৎসব পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
উত্তর : ‘বৈসাবি’ পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাহাড়িদের নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার উৎসব। টিপরারা (ত্রিপুরা) পালন করে ‘বৈসুব’ মারমারা পালন করে ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমারা পালন করে ‘বিজু’- এই তিনটি উৎসবকে একত্রে বলে বৈসাবি।
বৈসাবি’র প্রথম দিন দুই ভাতিজি আমাকে প্রথমে নিয়ে গেল চাকমা পাড়ায়। পুরো পাড়াটি যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং ফুল দিয়ে সাজগোজের মহড়া দিচ্ছিল। চাকমা কিশোর-কিশোরীরা পাহাড়ি বন থেকে ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজিয়ে তোলায় ব্যস্ত। চাকমাদের মতো মারমা ও টিপরারাও উৎসবের প্রথম দিন ফুল দিয়ে ঘর সাজায়, গৃহিণীরা ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে।
পুরনো দিনের সমস্ত ক্লান্তি দুঃখ-বেদনা ঝেড়ে ফেলার জন্য তারা যেন বাড়ির সবকিছু ধুয়েমুছে পবিত্র করে তোলে। দ্বিতীয় দিন খুব ভোরে ভাতিজির আমাকে ঘুম জড়ানো চোখে চাকমা পাড়ায় টেনে নিয়ে চলল। সেখানে দেখি, পাহাড়ি ঝরনায় স্নান করে শরীরকে পবিত্র করে নেওয়ার জন্য বয়স্করা ছেলেমেয়েদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন।
স্নান সেরে প্রতিটি বাড়িতে কাচকলা, পেঁপে, পটল, আলু, বেগুন, কচি কাঁঠাল ইত্যাদিসহ কমপক্ষে পাঁচ প্রকার সবজি ‘পাচন’ রান্না করা হয়েছে। আগত অতিথিদের পাচন পরিবেশন করে আপ্যায়িত করা হচ্ছে। আমরাও ফৌজিয়ার এক বান্ধবীর বাড়িতে পাচন খেতে বসে গেলাম।
স্বাদ অমৃত! প্রচলিত ধারণা, কমপক্ষে ৫ ঘরের পাচন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বৈসাবি’র দ্বিতীয় দিন মারমা তরুণ-তরুণীরা মধ্যকার পানি বর্ষণ অনুষ্ঠানের বৈচিত্র সৌন্দর্য ও রোমান্স এখন মিডিয়ার বদৌলতে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও বিনোদনের অন্যতম বিষয়। বৈসাবি’র তৃতীয় দিন বাঙালির পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। নতুন পোশাকে সজ্জিত হয়ে আমরা বৈশাখী মেলায় গেলাম। পাহাড়ি লোকেরাও বৈশাখী মেলায় শামিল হল।
রাতে চাকমা, মারমা, টিপলাম সবার বাড়িতেই সামাজিক ও ধর্মীয় নানা আচার ও উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে নতুন বছরকে শুভ কামনায় বরণ করে নেওয়া হয়। চাকমারা বৌদ্ধভিক্ষুদের ডেকে মঙ্গলসূত্র শোনার অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল। মারমারা মন্দির বা কিয়াংয়ে নানা মোমবাতি জ্বালিয়ে নতুন বছরের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনার অনুষ্ঠান করে।
আর সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী টিপরারা করেছিল দেওয়ালী দিপাবলী উৎসব। একে অপরকে রং মাখিয়ে নতুন বছরকে তারা রঙিন করে তুলেছিল। ‘বৈসাবি’ উৎসবে রয়েছে সামাজিক বহুমাত্রিকতা ও বৈচিত্র্যময়তা। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ‘বৈসাবি’ উৎসবের তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আমার দুই ভাতিজির সঙ্গে আমাকেও প্রচুর আনন্দ দান করেছে।
২৫. তোমার কলেজ জীবনের কোনো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
উত্তর : আমার কলেজ জীবন ছিল বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। বিভিন্ন সময়ে আমি বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের সাথে বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করেছি। এগুলোর মধ্যে সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো একুশে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন। প্রথমে আমরা ছাত্র ও শিক্ষক মিলে কীভাবে মাতৃভাষা দিবস পালন করব তা নিয়ে আলোচনা করি। অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশে আমাদের তিনটি ধাপে তিনটি কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরা একজন একজন করে শিক্ষকের নেতৃত্বে দশজন ছাত্র মিলে একটি করে দল গঠন করি।
একেক দল একেক নামে পরিচিত হয়। যেমন-শাপলা, দোয়েল, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ইলিশ ইত্যাদি। দুটি দলের দায়িত্ব ছিল কলেজ প্রাঙ্গের সাজসজ্জা। তারা বাংলাদেশের পতাকা, লাল-সবুজ কাগজ ও ভাষা-শহীদদের ছবি দিয়ে খুব সুন্দর করে কলেজ প্রাঙ্গন সাজায়। একুশে ফেব্রুয়ারির দিল সকাল বেলা ছাত্র শিক্ষক সকলে মিলে আমরা খালি পায়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান গেয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করি। শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে অধ্যক্ষ স্যার একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা ও তাৎপর্য বর্ণনা করেন। শহীদদের জন্য দোয়া মোনাজাত করেন কলেজ মসজিদের ইমাম সাহেব।
প্রথম পর্বের পর হালকা নাশতা বিতরণ শেষে শুরু হয় রক্তদান কর্মসূচি। কলেজ ছাত্র- শিক্ষক-কর্মকর্তা ও আশেপাশের অনেক সাধারণ মানুষ এই রক্তদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। আমরা যতœসহকারে তাদের দেওয়া রক্ত সংরক্ষণ করি। আমি এই দলে কাজ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। এ সময় আমরা সাধারণ মানুষকে রক্তদানের গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতামূলক তথ্য দান করতে থাকি।
দুপুরের পর শুরু হত তৃতীয় পর্ব। তৃতীয় পর্বে শুরু হয় বইমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ওপর আমার নিজের লেখা একটি নাটিকা পরিবেশিত হয়। সেখানে আমি ও আমার বন্ধুরা অভিনয় করি। নাটিকাটি দেখে দর্শক ও শিক্ষকরা খুব খুশি হন।
সেদিন আমার খুব ভালো লেগেছিল। এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় ও একক নাচ এবং গান পরিবেশিত হয়। বিকেলের দিকে প্রচুর লোক সমাগম হয় কলেজ প্রাঙ্গণে। বাবা মা তাদের সন্তান্দের অনেক বই কিনে দেন। সব শেষে অধ্যক্ষ স্যারের সমাপমী ভাষণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। আমি মনে করি প্রতিটি স্কুল কলেজে এভাবে মাতৃভাষা দিবস পালন করা উচিত। আমি কোনোদিনই আমার কলেজের মাতৃভাষা দিবস পালনের অভিজ্ঞতা ভুলব না।
২৬. নবীনবরণ অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
উত্তর : গতকাল ছিল আমার কলেজজীবনের বিশেষ একটি দিন। আমরা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা মিলে শিক্ষকদের নির্দেশনা ও সহযোগিতায় কলেজে নবীনদের বরণ করে নিতে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যক্ষ মহোদয়।
সকাল নয়টার আগেই আমি কলেজে উপস্থিত হই। নয়টা থেকেই নবীন শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। আমরা কলেজ অডিটরিয়ামে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। একটি করে গোলাপ ও একগুচ্ছ রজনীগন্ধা দিয়ে নবাগত ভাই-বোনদের স্বাগত জানাই। তাদের চোখে-মুখে স্বপ্নমাখা দীপ্তি অবলোকন করে মনে পড়ে গত বছরও আমাদের এভাবেই এ বিদ্যাপীঠে বরণ করে নিয়েছিলেন আমাদের পূর্বসূরিরা।
শুভেচ্ছা জানানোর পর শুরু হলো মূল অনুষ্ঠান। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর স্বাগত বক্তব্য রাখলেন অধ্যক্ষ মহোদয়। একে একে অন্যান্য শিক্ষক মহোদয় বক্তব্য রাখলেন। কলেজের বড় ভাই হিসেবে আমরাও তাদের উদ্দেশে কিছু নিয়মকানুন ও নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখলাম। নবাগত ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করার সুযোগ দেওয়া হলো। এরপর মধ্যাহ্নভোজের বিরতি।
বেলা তিনটায় পুনরায় অনুষ্ঠান শুরু হলো, যা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয় ধারাবাহিকভাবে চলতে লাগল। আমাদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি নবাগত ছাত্রছাত্রীরাও এতে অংশগ্রহণ করে। বিকাল ৫টায় সভাপতি মহোদয়ের সমাপনী ভাষণের মধ্য দিয়ে দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
২৭. জাতীয় স্মৃতিসৌধ দর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
উত্তর : কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ৫০জন ছাত্রছাত্রী সাভার উপজেলার নবীনগরে যাচ্ছি। এটি ঢাকা থেকে ৩৫কি.মি. উত্তর পশ্চিমে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখানে গণকবর ও বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়। এ কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য ত্যাগ ও শৌর্যের স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এখানে নির্মাণ করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স। ইতিহাসের হায়দার স্যার ব্রিফ করছেন, আমরা মনযোগ দিয়ে শুনছি। অধিগ্রহণকৃত ৮৪ একর জমিতে সমগ্র কমপ্লেক্স এবং প্রায় ২৫ একর জুড়ে রয়েছে সবুজ বনভূমি।
১৯৭২ সালের ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রথম পর্যায়ে ভূমি সংগ্রহ ও প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণ, দ্বিতীয় পর্যায়ে গণকবর, হেলিপ্যাড, পার্কিংয়ের জায়গা, পেভমেন্ট নির্মাণ তৃতীয় পর্যায়ে কৃত্রিম লেক, সবুজ বনভূমি, ক্যাফেটেরিয়াসহ মূলস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোর নকশা তৈরি করেছেন স্থপতি মঈনুল হোসেন।
স্তম্ভটির সামনে রয়েছে বেশ কয়েকটি গণকবর ও একটি প্রতিফলন সৃষ্টিকারী জলাশয় স্মৃতিসৌধের উপকরণগুলো প্রতীকী ভাবনা থেকে বিন্যস্ত করা হয়েছে, যেমন – মূল স্তম্ভের সাতটি দেয়াল সাতটি জাতীয় আন্দোলনের (ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, শাসনতন্ত্র আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, গণঅভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা সংগ্রাম) প্রতীক, চত্বরের লাল ইট রক্তাক্ত সংগ্রামের, জলাশয় অশ্রæর, গণকবর শহীদদের উপস্থিতি, সবুজ বেষ্টনী শ্যামল বাংলা এবং উঁচু নিচু পথ স্বাধীনতার চড়াই উতরাইকে নির্দেশ করেছে।
কয়েকজন বলে উঠল, ঐ যে দেখা যাচ্ছে স্মৃতিসৌধ। আমাদের বাস পার্কিংয়ের জায়গায় এসে থামল। বাস থেকে নেমে আমরা দুই সারিতে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকলাম। দুপাশের বাহারি ফুলের বাগান আমাদের ক্লান্তি দূর করে দিল। আমরা উঁচু নিচু এলাকা ও পেভমেন্ট অতিক্রম করার সময় দুপাশের গণকবর দেখছি আর ভাবছি কত মানুষকে কী নির্মম অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছে। পাশেই রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্বোধনকৃত লিপি আর তার কাছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার চারটি লাইন-
‘‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই ওরে ভয় নাই
নিঃশেষ প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’’
আমরা কৃত্রিম লেক দেখছি এবং লেকের উপর নির্মিত সেতু পার হচ্ছি। মূল স্মৃতিসৌধের সামনে আমরা। অবাক হয়ে দেখছি আর মনে পড়ছে সাতটি ধাপের অর্থাৎ আন্দোলনের কথা। প্রাচীরগুলো মাঝখানে একটি ভাঁজ দ্বারা কোণাকৃতির এবং একটির পর একটি সারিবদ্ধভাবে বসানো।
কাঠামোটির সর্বোচ্চ শীর্ষবিন্দু ১৫০ ফুট উঁচু। কাঠামোটি এমনভাবে বিন্যস্ত যে, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ভিন্ন ভিন্ন মনে হয়। এরপরে আমরা সবুজ চত্বরে ঢুকলাম। এখানে নানা রকম ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রয়েছে। খুব সুন্দরভাবে সাজানো। অনেকক্ষণ ঘুরে ফিরে এলাম ক্যাফেটেরিয়ায়। যার যার পছন্দমতো খেয়ে নিলাম। বাসে ওঠার আগে আর একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স। হৃদয়জুড়ে ভালোবাসা নিয়ে ফিরে এলাম।
২৮. একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
উত্তর : বাস গোয়ালন্দ অতিক্রম করার পরই মনে হলো কেমন একটা স্বব্ধ পরিবেশ। আকাশে দু চারটা কালো মেঘ ছড়ানো। কাশিয়ানি ঢুকতেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। আমি একা। একটু একটু ভয় পাচ্ছিলাম। প্রথমবার যাচ্ছি গোপালগঞ্জ শহরে। মুষলধারা বৃষ্টি শুরু হলো কীভাবে যাব, বাড়ি খুঁজে পাব কিনা, কোথায় কী করব ইত্যাদি ভাবনা উঁকি দিচ্ছে মনে। একটা কাগজে লেখা ছিল ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বর, সেটাও ফেলে এসেছি বাসায়। তবে ভদ্রলোকের নাম মনে আছে, আর কোথায় জিজ্ঞেস করতে হবে সেটাও মনে আছে। এটুকুই ভরসা।
মনকে সাত্বনা দিলাম, একটা কিছু ব্যবস্থা হয়েই যাবে। পুলিশ লাইনের কাছাকাছি আসতেই মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু হলো। গাড়ি থামল সামনেই। ঘন্টাখানেক পর বৃষ্টি কমে এলো। নামছে অনেকেই। কিন্তু পানি জমে গেছে। রাস্তার পাশে অনেক দোকান। দোকানের ভেতরেও পানি।
আমি নেমে ভারী ব্যাগটা হাতে নিলাম উঁচু করে। একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে বসে রইলাম। পথে রিকশা, স্কুটার কিছু নেই। রাত প্রায় ৯টা বাজে। বেশ কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা এলো ব্যাটারিচালিত। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি তখনও হচ্ছে। রিকশাটাকে থামিয়ে উঠে পড়লাম। গন্তব্য সম্পর্কে ধারণা দিলাম, রিকশাওয়ালা বুঝল। রাস্তায় পানি।
ঘোরানো পেঁচানো পথ পাড়ি দিয়ে একজায়গায় এসে থামল। আঙুল দিয়ে দেখাল এইতো মসজিদ, আপনি কার বাড়িতে যাবেন? নাম বললাম। সে বলল, ‘উঠেন স্যার আপনেরে উনার বাড়ির সামনে নামাইয়া দিমু।’ বাড়িওয়ালা বেরিয়ে এলেন। আমি তাকে চিনলাম না।
বাড়িওয়ালা জানতে চাইলেন কার বাড়িতে যাব। আমি তার বর্ণনা দিয়ে পুরো নাম বললাম। তিনি চিনলেন এবং কীভাবে যেতে হবে রিকশাওয়ালাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন। রিকশাওয়ালা যখন আমাকে নামিয়ে দিল তখন রাত প্রায় এগারোটা এবং বর্ষণও থেকে গেছে।
২৯. বিজ্ঞান মেলা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। নতুন নতুন উদ্ভাবনে দেশের সার্বিক উন্নতি ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। নতুন উদ্ভাবনে বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও অবদান রাখার জন্য সচেষ্ট। এই বড় ও খুদে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন আবিষ্কার নিয়ে গত সপ্তাহে কক্সবাজার কে.জি. স্কুলে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।
মেলায় ঘুরে দেখা যায়, শহর ও আশেপাশের ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের আবিষ্কৃত ও উদ্ভাবিত বিভিন্ন তথ্য জানতে শিশু কিশোর ও অভিভাবকরা ভিড় করেছে মেলা প্রাঙ্গণে। মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী রাহীনা আক্তার খুশির বিদ্যুৎবিহীন ফ্রিজ। খুশি জানায়, তিন ফুট উচ্চতার এ ফ্রিজ তৈরি করতে খরচ লাগবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এটা তৈরিতে লাগবে ধাতব পাত্র, তুষ কিংবা কাঠে গুঁড়ি, প্লাস্টিক পাত্র, বরফ পানি ইত্যাদি।
এছাড়া মেলায় এসেছে চোর ধরার যন্ত্র, সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানোর পদ্ধতি, স্বল্প খরচে শীতাতপ পানি নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, ওয়াটার হিটার, তাপ নিরোধক জ্যাকেট, ইটের ভাটা থেকে উৎপন্ন তাপশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদব, তিন শত টাকায় আইপিএস,
হাইড্রোলিক লিফট, পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলসহ আরও অনেক কিছু। সেদিন বন্ধের দিন হওয়াতে মেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। অনেকে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে, অনেকে বাবা মার সঙ্গে মেলায় উপস্থিত হয়েছে। তবে তাদের সবারই উৎসুক দৃষ্টি নতুন বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের প্রতি। এমন একটি মেলা পরিদর্শন করে আমিও যথেষ্ট আনন্দিত ও উজ্জীবিত।
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | ভাষণ ও বক্তব্য ৫-১০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | দিনলিপি লিখন ১-১০ | PDF Download
৩০. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লেখ।
উত্তর : বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবময় সাহসী এক অধ্যায় এদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিজয় ছিনিয়ে আনে। সেসব সংগ্রামের সাহসী কাহিনি, তথ্যচিত্র, আলোকচিত্র এবং ইতিহাসের নানান স্মারকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আট জন ট্রাস্টির উদ্যোগে ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকাস্থ সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দ্বার উন্মুক্ত হয়। এই জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ আমার একদিন এসেছিল।
আমরা ক’জন সকাল ৯টার মধ্যে জাদুঘরে পৌঁছলাম। জাদুঘর ভবনের প্রবেশ মুখে ছোট প্রাঙ্গণে দেখলাম শহীদ ড. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বির ব্যবহৃত একটি গাড়ি।
জাদুঘর ভবনটি তিনতলা। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় প্রদর্শনী চলে। নিচতলার প্রথম কক্ষে রয়েছে দুটি গ্যালারি। ১ম গ্যালারিতে রয়েছে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য ও জনপদের বিভিন্ন শিল্পকর্মের নির্দশন। ২নং গ্যালারিতে রয়েছে ঔপনিবেশিক শাসন শোষণের বিভিন্ন তথ্য ও চিত্র। দ্বিতীয় কক্ষে রয়েছে পাকিস্তানের জন্ম ইতিহাসের ছবি। নিচতলায় তৃতীয় কক্ষে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কর্মকান্ড ও ইতিহাস।
চতুর্থ কক্ষে ১৯৪৮-৫২, ‘৬৮, ‘৬৯ এবং ‘৭০ এ ঘটে যাওয়া আন্দোলন ও কর্মসূচিত প্রদর্শিত ছবি। ৫ম কক্ষে রয়েছে ২৫ মার্চের গণহত্যার চিত্র, বাংলার গর্জে ওঠার চিত্র, ভারতের শরণার্থী শিবিরের মানবেতর জীবনচিত্র।
এরপর গেলান ভবনের দ্বিতীয় তলায়। এ তলার প্রথম কক্ষে দেখলাম শহীদদের ব্যবহার করা ব্রিফকেস, চশমা, কলম, হাতঘড়ি, মানিব্যাগ ইত্যাদি। দ্বিতীয় কক্ষে আছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, নৌকমান্ডারদের ছবি ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র। ৩য় কক্ষে যুদ্ধকালীন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও ছবি। দ্বিতীয় তলার ৪র্থ কক্ষে বিভিন্ন বধ্যভূমি থেকে উদ্ধারকৃত শহীদদের ব্যবহৃত সামগ্রী, মাথার খুলি, হাড় ইত্যাদি।
ভবনের নিচতলায় রয়েছে জাদুঘরের নিজস্ব লাইব্রেরি। প্রতি বছরই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নতুন প্রকাশিত বই এখানে সংগ্রহ করা হয়। জাদুঘরে একটি অডিটোরিয়ামও রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন প্রকার সভা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি, নিদর্শন দেখে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় আমার মন ভরে উঠল। আমি মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী চেতনায় চেতনাদীপ্ত হলাম।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।