অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ৩ এর সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয়: অখন্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস ও উপমহাদেশের বিভক্তি, ১৯৪৭
বিষয় কোড: ২১১৫০১
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর
২.০৮. “লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার ফলে ভারতের বিভক্তি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।” –বিশ্লেষণ কর।
অথবা, লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই কি ভারত বিভক্তি অনিবার্য ছিল? বিস্তারিত আলোচনা কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ একটি অনন্য স্মরণীয় দিন। কেননা এদিন মুসলমানদের প্রাণের দাবিসমূহ লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে উত্থাপিত হয়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক জগতে মুসলিমদের বেশির ভাগ সময় সংখ্যালঘু জাতি হিসেবে ধরা হতো।
কিন্তু লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় মুসলমানদের রাজনৈতিক ভাবধারা ভিন্নপথে পরিচালিত হয়। তারা নিজেদেরকে পৃথক সত্তা হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করার দাবি জানান ।
“লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার ফলে ভারতের বিভক্তি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।” —উক্তিটির বিশ্লেষণ : হিন্দু ও মুসলমানদেরকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে যদিও পৃথক দুটি জাতি হিসেবে ধরা হয় তবুও লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তারা উভয়ই ঐক্যবদ্ধভাবে অখণ্ড ভারতের জন্য আন্দোলন করে আসছিল।
কিন্তু লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর ভারতের বিভক্তি অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। নিম্নে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো :
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
১. স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন : মূল লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় যে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ও পূর্বাঞ্চলে যে স্থানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে তাদের জন্য একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠিত হবে। প্রয়োজনে এসব এলাকার সীমানা পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ এ প্রস্তাবে সুস্পষ্টভাবে ভারতের বিভক্তির কথা বলা হয়। পরবর্তীতে মুসলমানরা এ দাবিতে সমর্থন জানায় ।
২. যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান : মুসলমানরা লাহোর প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে সকল সাংবিধানিক পরিকল্পনাকে নতুনভাবে বিবেচনা করতে বলেন। কেননা মুসলমানরা মনে করেন এতে মুসলমানদের কোনো প্রকারে লাভ হবে না। কিন্তু ভারতের মতো এত বড় রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ছাড়া শাসনকার্য পরিচালনা করা অসম্ভব।
অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা বাতিল হলে ভারত বিভাগের পথ সুগম হয়।
৩. হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব : হিন্দু ও মুসলমানরা ভারতের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে অখণ্ড ভারতের স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম করে আসছিল। লক্ষ্ণৌ চুক্তি, অসহযোগ আন্দোলন, বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদনের সময় হিন্দু ও মুসলমানদের সম্পর্ক ছিল পরস্পরের সহায়ক ও পরিপূরক। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের ফলে তাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের মধ্যে ভাটা পড়ে।
এমনকি ভারতের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা বেধে যায়। অর্থাৎ হিন্দু মুসলমানদের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে ভারতের বিভক্তিও অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
৪. প্রদেশসমূহের স্বায়ত্তশাসন : লাহোর প্রস্তাবের ধারায় আরও উল্লেখ করা হয় যে, নতুনভাবে যেসব রাষ্ট্রসমূহ গঠিত হবে তার প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্যসমূহ হবে স্বায়ত্তশাসিত। অর্থাৎ এতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলা হয়।
কিন্তু দেখা যায় যে আঞ্চলিকভাবে প্রদেশসমূহ স্বায়ত্তশাসন পেলে কেন্দ্রের প্রভাব উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পাবে। অর্থাৎ তা ভারতের বিভক্তিতে উৎসাহিত করবে।
৫. ব্রিটিশ সরকারের নমনীয়তা : ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ব্রিটিশ সরকারও তাদের সকল কর্মকাণ্ড অখণ্ড ভারতের জন্য পরিচালিত করে। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবে ভারতের বিভক্তির কথা বলা হলে ব্রিটিশ সরকারও তার ধ্যানধারণার পরিবর্তন করেন।
ব্রিটিশ সরকার লাহোর প্রস্তাবের ফলে উপলব্ধি করেন যে, হিন্দু ও মুসলমানদেরকে অখণ্ড ভারতের আওতায় রাখা নির্বুদ্ধিতার শামিল। অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকারের এরূপ মনোভাব ভারতের বিভক্তিকে ত্বরান্বিত করে ।
৬. মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক প্রচার : লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর মুসলিম লীগ সাম্প্রদায়িক প্রচার চালাতে থাকে যা ভারতের বিভক্তি ডেকে আনে। মুসলিম লীগ দাবি করে যে, মুসলমানরা হিন্দুদের থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র একটি জাতি।
ভারত অখণ্ড থাকলে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরাই এর কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে। এতে মুসলমানদের কোনো প্রকার লাভ হবে না। মুসলিম লীগের এরূপ প্রচার মুসলমাদের চিন্তাচেতনাকে পরিবর্তন করে দেয় ।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
৭. হিন্দু নেতাদের মনোবল বিনষ্ট : লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার কারণে ভারতের অনেক হিন্দু নেতাদের মনোবল বিনষ্ট হয়ে যায়। যারা এতদিন অখণ্ড ভারতের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন তারাও উপলব্ধি করতে থাকেন যে, ভারতের বিভক্তি ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই । কেননা হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সবদিক থেকেই ব্যাপক মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান।
হিন্দু নেতাদের বিরূপ মনোভাব ভারতের বিভক্তিতে ইন্ধন জোগায় ।
৮. মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রসার : ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার ফলে মুসলিম জাতীয়তাবাদের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এসময় মুসলমানরা ভারতীয় জাতীয়তাবোধের পরিবর্তে ইসলামি বা মুসলিম জাতীয়তাবাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় ।
তারা সমবেতভাবে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি থেকে শুরু করে পৃথক সরকার গঠনের দাবি জানায়। মুসলমানদের এরূপ জাতীয়তাবোধ অখণ্ড ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব ভারতে হিন্দু-মুসলমানদের সম্পর্ককে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়। হিন্দু ও মুসলমানদের মনে এ প্রস্তাবের ফলে একথা বদ্ধমূল হয় যে, যেহেতু রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় দিক থেকে হিন্দু ও মুসলমানরা সম্পূর্ণ ভিন্ন, অতএব তাদের আবাসভূমিও হবে পৃথক।
এরই ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি লাহোর প্রস্তাবই ভারত বিভক্তির কারণ ছিল।
২.০৯. “ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল।” —উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
অথবা, লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে কি স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল? বিশ্লেষণ কর।
উত্তর ভূমিকা : ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর ফলে ভারতবর্ষের অবহেলিত মুসলমানরা আলাদাভাবে তাদের অস্তিত্ব চিন্তা করতে থাকে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় লাহোর প্রস্তাব ছিল এক মোড় পরিবর্তনকারী ইস্যু।
কেননা এ ঐতিহাসিক প্রস্তাব গ্রহণের পর মুসলমানদের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে তার সার্থক পরিণতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং পরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ।
“ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল।” —উক্তিটি বিশ্লেষণ : ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে গৃহীত লাহোর প্রস্তাব ছিল মুসলমান জনগণের জাগরণ ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তাছাড়া ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজও নিহিত ছিল । নিম্নে তা বিশ্লেষণ করা হলো :
১. পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবি : লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ভারতবর্ষের হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমানরাও ঐক্যবদ্ধ ভারতের জন্য আন্দোলন করে আসছিল।
কিন্তু লাহোর প্রস্তাবে ঐক্যবদ্ধ ভারতের পরিবর্তে মুসলমানরা যেসব অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ যেসব অঞ্চলে একাধিক পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয় যার ফলে এটি বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ।
২. স্বার্থের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত : ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে । এতদিন হিন্দু ও মুসলমানরা যে ঐক্যবদ্ধ স্বার্থ নিয়ে কাজ করে আসছিল লাহোর প্রস্তাব তা নষ্ট করে দেয়। যার ফলে উভয় সম্প্রদায় তাদের নিজেদের স্বার্থের প্রতি মনোযোগী হয়।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
৩. মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি : ভারত উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমান দুটি জাতি বসবাস করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুসলমানরা উপেক্ষিত ছিল। বেশির ভাগ সুযোগ সুবিধা হিন্দুরা গ্রহণ করতো।
এতে করে মুসলমানদের মধ্যে ধীরে ধীরে ক্ষোভ জমা হতে থাকে। ১৯৪০ সালে মুসলমানদের দাবি সংবলিত লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হলে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।
৪. নির্বাচনে ব্যবধান বৃদ্ধি : লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর নির্বাচনে ব্যবধান বেড়ে যায়। ভারতবর্ষের দুইটি দল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে মুসলিম লীগ ৪৮৫টি মুসলিম আসনের মধ্যে ১০৯টি আসন লাভ করে ।
কিন্তু লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ ৪৯২টি মুসলিম আসনের মধ্যে ৪২৮ টি আসন লাভ করে, যা বিরাট ব্যবধানের সুস্পষ্ট প্রমাণ।
৫. ভারতবর্ষের বিভক্তি : লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর হিন্দু ও মুসলমানদের সম্পর্কের প্রচণ্ড অবনতি ঘটে। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের পর পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির দাবিতে মুসলমানরা ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালন করে এসময় গোটা ভারতবর্ষে শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা।
হিন্দু ও মুসলমানদের সম্পর্কের চূড়ান্ত ও চরম অবনতি ঘটলে ভারতর্ষের সকলেই উপলব্ধি করতে পারে যে ভারতবর্ষ বিভক্তি করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। এরই ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
- আরও পড়ুনঃ (১ম অধ্যায়) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সাজেশন
- আরও পড়ুনঃ (১ম অধ্যায়) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সাজেশন
৬. বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি স্থাপন : লাহোর প্রস্তাব শুধু পাকিস্তান রাষ্ট্রেরই জন্ম দেয়নি; বরং এই প্রস্তাবের ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিও স্থাপিত হয়েছিল।
লাহোর প্রস্তাবে শুধুমাত্র একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের কথাই বলা হয়নি, এতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রদানের কথাও বলা হয়। পরবর্তীতে স্বাধীন পাকিস্তানে বাঙালিরাও প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানায় ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায়।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
৭. ভাষা আন্দোলন : ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে বাঙালিদের মধ্যে যে জাতীয় ঐক্যবোধ তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটে তা পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন বাঙালিদের মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় তখন বাংলার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এর প্রতিবাদ জানায় ।
৮. ১৯৬৬ সালের ৬ দফা কর্মসূচি : বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে অভিহিত ৬ দফা কর্মসূচি যখন ১৯৬৬ সালে ঘোষণা করা হয় তখন তার মধ্যে লাহোর প্রস্তাবের প্রত্যক্ষ রূপ দেখা যায়।
৬ দফার প্রথম দফাতেই উল্লেখ করা হয় যে, ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি সত্যিকার যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানসহ সকল প্রদেশকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান করতে হবে। পরবর্তীকালে ৬ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৬ দফাভিত্তিক ব্যাপক গণআন্দোলন শুরু হয়।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
৯. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান : পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। যদিও আইয়ুব সরকারের স্বৈরাচারিতাসহ আরও অনেক ঘটনা এই গণঅভ্যুত্থানের জন্য দায়ী, তবুও এর পিছনে মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে লাহোর প্রস্তাবে উত্থাপিত প্রদেশসমূহের স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্বের যৌক্তিক দাবি।
১০. স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা : প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান তথা লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অসম্মতি জ্ঞাপন করলে বাঙালিরা ক্রমান্বয়ে আন্দোলনমুখর ও স্বাধীনতাকামী হয়ে ওঠে। এক সময় পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করতে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
বাঙালিরা তাদের ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদে বলীয়ান হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে এবং দীর্ঘ ৯ মাস এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দেয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল কথাটি যথার্থ। কেননা লাহোর প্রস্তাবে উত্থাপিত স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্বের দাবি বাঙালিদের অন্তরে গেঁথে যায় এবং তৈরি হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ। আর এ জাতীয়তাবাদই বাঙালিদেরকে আন্দোলনমুখী করে তুলেছিল।
এ লাহোর প্রস্তাবের দাবির ভিত্তিতে বাঙালিদের আন্দোলন একসময় চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের উৎসাহ দেয়। সৃষ্টি হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র।
২.১০. অখণ্ড স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর । অথবা, অখন্ড স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল? আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভিন্ন সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৭ সালে ‘অখণ্ড স্বাধীন বাংলা’ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন । তবে এ পরিকল্পনার বিষয়বস্তু ছিল বাংলায় একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হবে যার প্রধানমন্ত্রী হবে মুসলমান ।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর এ প্রস্তাবে তৎকালীন পার্লামেন্টের অনেকেই সাড়া দেয়। তারা বাংলার শাসনতান্ত্রিক কাঠামোও রচনা করেন। এ অখন্ড বাংলার প্রস্তাবে মুসলিম লীগের একটি গ্রুপ বিরোধিতা শুরু করে।
অখণ্ড স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে গৃহীত পদক্ষেপ লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাধীন অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। নিম্নে অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রয়াসে নানারকম পদক্ষেপ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো :
১. পরিকল্পনা গ্রহণ : লর্ড মাউন্টব্যাটেন তার পরিকল্পনা প্রকাশের পূর্বেই বাংলার বিষয়টি কংগ্রেস ও মুসলীম লীগ নেতৃত্বের নজরে চলে আসে। বাংলার ভবিষ্যৎ প্রশ্নে আলোচনার জন্য তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল দিল্লিতে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে আলোচনা করেন।
সে আলোচনায় জিন্নাহ কী অভিমত দিয়েছিলেন তা অজ্ঞাত থাকলেও ঐ আলোচনার কিছুদিন পরই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী ‘স্বাধীন বাংলার’ পরিকল্পনা উন্মুক্ত করেন।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
২. মন্ত্রিসভার কাঠামো : অবিভক্ত বাংলা গঠনের পরিকল্পনায় বলা হয় বাংলার এক নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হবে যার প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন মুসলমান। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ মুসলমান ও পঞ্চাশ ভাগ অমুসলমান থাকবেন। এরপর প্রাপ্তবয়স্কদের সরাসরি ভোটে মন্ত্রিপরিষদ নির্বাচিত হবে।
বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম থাকবে; না পাকিস্তানে যোগদান করবে, নাকি ভারতে যোগদান করবে, সে বিষয়ে নতুন মন্ত্রিপরিষদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
৩. সাবকমিটি গঠন : বঙ্গভঙ্গ রোধ এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার গঠন কাঠামো কী ধরনের হবে সে প্রসঙ্গে হিন্দু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কার্যকরী পরিষদের দেওয়া ১৯৪৭ সালের ৩০ এপ্রিল তারিখের সভায় মওলানা আকরম খাঁর সভাপতিত্বে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়।
এ সাব কমিটির সদস্যরা হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, হাবিবুল্লাহ বাহার, হামিদুল হক চৌধুরী, ইউসুফ আলী চৌধুরী, ফজলুর রহমান ও নূরুল আমীন ।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
৪. গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সমর্থন প্রদান : প্রাদেশিক মুসলিম লীগের উদ্যোগের প্রতি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের প্রধান সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ, কংগ্রেস পার্লামেন্টারি দলের কিরণশঙ্কর রায় এবং ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শরৎচন্দ্র বসু আশানুরূপভাবে সাড়া দেন। ২৮ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত বাংলার হিন্দু মুসলমান নেতৃবৃন্দ যুক্তবাংলা প্রশ্নে বিভিন্ন বৈঠকে মিলিত হন।
সেসময় গান্ধী কলকাতায় অবস্থান করছিলেন যুক্তবাংলা বিষয় নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে পর্যায়ক্রমে শরৎ বসু একাকী, শরৎ বসু ও আব্দুল হাশিম, সোহরাওয়ার্দী ও ফজলুল রহমান এবং ১২ মে সোহরাওয়ার্দী, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী এবং আবুল হাশিম গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধী তখন এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।
তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নেতৃবর্গ তার কাছে এসেছিলেন তার সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে। তবে তিনি স্বাধীন বাংলার বিষয়টি সুচতুরভাবে এড়িয়ে যান । তবে শরৎ বসু একটি চিঠি লিখে আশ্বস্ত করেন যে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটিতে তাদের প্রস্তাব পৌঁছে দিবেন।
৫. হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়সাধন : ১৯৪৭ সালের ১২ থেকে ২০ মে পর্যন্ত অখণ্ড বাংলা গঠনের উদ্দেশ্যে সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ বসু প্রস্তাবসমূহ নিয়ে বাঙালি হিন্দু-মুসলিম সম্মতি প্রতিষ্ঠার জন্য নেতাদের মধ্যে আলোচনা করেন।
মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী মুসলিম লীগের প্রাদেশিক সেক্রেটারি আবুল হাশিম, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, ঢাকার ফজলুর রহমান (মন্ত্রী), বঙ্গীয় কংগ্রেস নেতা কিরণশঙ্কর রায়, সত্যরঞ্জন বখশী ও ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শরৎচন্দ্র বসু প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ ২০ মে শরৎচন্দ্র বসুর বাসায় এক সম্মেলনে বসে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর খসড়া তৈরি করেন।
এ খসড়া চুক্তির শর্তসমূহ ছিল নিম্নরূপ :
র. বাংলা হবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারতের অন্য অংশের সঙ্গে তার সম্পর্ক কী হবে তা এই স্বাধীন রাষ্ট্রই স্থির করবে।
রর. হিন্দু ও মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাতে আসন সংখ্যা বন্টন করে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে যৌথ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলা আইন পরিষদ গঠিত হবে।
জনসংখ্যার অনুপাতে হিন্দু ও তফসিলি সম্প্রদায়ের মধ্যে আসন সংখ্যা বণ্টন করা হবে, অথবা তারা যেভাবে মেনে নেন সেভাবে আসন সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
ররর. স্বাধীন বাংলার এরূপ পরিকল্পনা ব্রিটিশ সরকার মেনে নিলে বা বাংলা ভাগ করা হবে না এরূপ ঘোষণা দিলে, বাংলার বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হবে এবং সে স্থানে একটি অন্তর্র্বতীকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। এই মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হবে একজন মুসলমান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন একজন হিন্দু ।
রা. নতুন সংবিধান অনুযায়ী আইন পরিষদ ও মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ সকল চাকরি বাঙালিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং চাকরিতে সমানসংখ্যক বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান নিয়োগ করা হবে।
ঠ. বাংলার ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার জন্য যে গণপরিষদ গঠিত হবে সেই গণপরিষদের মোট ৩০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। তার মধ্যে ১৬ জন মুসলমান ও ১৪ জন হিন্দু সদস্য হবেন।
বর্তমান আইনসভার হিন্দু ও মুসলমান সদস্যগণই উক্ত গণপরিষদের সদস্য নির্বাচন করবেন । গণপরিষদের সদস্য নির্বাচনকালে বর্তমান আইনসভার ইউরোপীয় সদস্যগণের কোনো ভোটাধিকার থাকবে না।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
৬. বাংলা বিভক্ত : বাংলার হিন্দু ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের সংসদ সদস্যগণ ১৯৪৭ সালের ২০ জুন মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনানুযায়ী পৃথক পৃথক বৈঠকে বসেন। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধিবর্গ ১০৬৩৫ ভোটে অখণ্ড বাংলার প্রতি সমর্থন প্রদান করেন।
অপরপক্ষে, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধিবর্গ বর্ধমানের মহারাজের সভাপতিত্বে মিলিত হয়ে ৫৮ : ২১ ভোটে বাংলা বিভক্তির পক্ষে মত দেন। ফলে বাংলা পূর্ববাংলা ও পশ্চিম বাংলা এ দুই অংশে বিভক্ত হয়।
পূর্ববাংলার প্রতিনিধিবর্গ ১০৭ : ৩৪ ভোটে পাকিস্তানে যোগদানের পক্ষে এবং পশ্চিম বাংলার প্রতিনিধিবর্গ ৫৮ : ২১ ভোটে ভারতবর্ষে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । পূর্ববাংলার যে ৩৪ জন বাংলা বিভক্তির পক্ষে ভোট দেন তারা সকলেই ছিলেন কংগ্রেস দলীয় সদস্য। তাদের মধ্যে কিরণশঙ্কর অন্যতম।
অপরপক্ষে, পশ্চিম বাংলার যে ২১ জন বাংলার বিভক্তির বিপক্ষে ভোট দেন তারা সবাই ছিলেন মুসলিম লীগ দলীয় সদস্য। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ দলভুক্ত ছিলেন কিন্তু এ. কে. ফজলুল হক ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।
৭. পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় স্থাপন : বঙ্গভঙ্গের ভোটাভুটি সম্পন্ন হলে সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভা কলকাতা ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সময় ২৭ জন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরি সভায় মাত্র ৬ জন সদস্যের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে ঢাকায় স্থাপিত হবে পূর্ববঙ্গের রাজধানী ।
এভাবেই বাংলা বিভক্তির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় । ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ১৮ জুলাই ১৯৪৭ ভারত স্বাধীন আইনে বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পশ্চিম বাংলাকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত এবং পূর্ববাংলাকে পাকিস্তানের অংশ বলে ঘোষণা করে। এভাবেই স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
অনার্স ১ম পর্ব (২১১৫০১-২য় অধ্যায়) রচনামূলক পর্বঃ১ *
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অখণ্ড বাংলা গঠনের যে উদ্যোগ লাহোর প্রস্তাবের পর গ্রহণ করে তা বাস্তবায়িত হলে কংগ্রেসের ক্ষমতা এবং মুসলিম লীগের ক্ষমতার সমাধি রচিত হতো। তাই কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হাইকমান্ড বাংলাকে কখনোই সমর্থন করতে পারেনি।
বাংলা বিভক্তি হলে পশ্চিম বাংলার ক্ষতি হতো না বরং সেখানে হিন্দুদের পক্ষে চিরকালই প্রাদেশিক সরকার গঠন করা সম্ভব। কিন্তু ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গেব কারণে এটা চিরতরে ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।