অধ্যায় ২ : প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা | রচনামূলক প্রশ্নোত্তর> অনার্স প্রথম বর্ষ, লোকপ্রশাসন পরিচিতি, অধ্যায় ২ : প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭ এর রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF: লোকপ্রশাসন পরিচিতি বিষয়টি হতে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য অনার্স প্রথম বর্ষ, লোকপ্রশাসন পরিচিতি, অধ্যায় ২ সহ সকল বিষয়টি হতে গুরুপূর্ণ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্ন উত্তর দিচ্ছি।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর Honours 1st year |অনার্স প্রথম বর্ষ এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি
- অধ্যায় ২ : প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭
- গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- ০১. সংগঠনের সংজ্ঞা দাও। সংগঠনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
- অথবা, সংগঠন কী? সংগঠনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্রশাসন পরিচালনায় সংগঠন একটি অপরিহার্য অঙ্গ। সুষ্ঠুভাবে সমাজের প্রতিটি কার্যসম্পাদন করতে সংগঠনের বিকল্প নেই। তেমনি লোকপ্রশাসনের আলোচনায়ও সংগঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় । সংগঠনের মাধ্যমেই যথার্থ মানব কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব।
মূলত একটি দেশের প্রশাসন ব্যবস্থাকে গতিশীল ও কার্যকর রাখতে সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একমাত্র সংগঠনের মাধ্যমে মানবসমাজের সব উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব হয়।
সংগঠন : সাধারণত কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য যখন অধিকাংশ জনগণ সমষ্টিগত ও সহযোগিতাপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করে থাকে তখন ঐসব জনগণ কর্ম সম্পাদনের জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাই সংগঠন।
ডিমক এর মতে, প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখার হাতিয়ার হলো সংগঠন। অর্থাৎ সংগঠন হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে অধিকসংখ্যক জনগণ কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য কর্মসম্পাদন করে থাকে। প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
লুথার গুলিক (Luther gullick) এর মতে, “Organisation is the formal structure of authority through which work subdivision are arranged, defined and co-ordinated for the defined objectives.” অর্থাৎ, সংগঠন হচ্ছে কর্তৃত্বের আইনগত কাঠামো যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কর্মের লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপবিভক্তি, বিন্যাসিতকরণ ও সমন্বিতকরণ করা হয়
এল. ডি. হোয়াইট (L. D. White) এর মতে, কোনো স্বীকৃত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুবিন্যস্ত বণ্টনকেই সংগঠন বলা হয়, ই. এন. গ্লাডেন (E. N. Gladen) এর মতে, “কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কর্ম সম্পাদনের জন্য যে কার্যকরী সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে তাই সংগঠন।”
জন ডি. মুনি (John D. Mooney) এর মতে, “Organisation is the form of every human association for the attainment of common purpose.” অর্থাৎ, সংগঠন হচ্ছে মানবসমাজের এমন সংঘ যা অভিন্ন উদ্দেশ্য অর্জনে গড়ে ওঠে।
- উন্নয়ন প্রশাসন‘র রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (Honours 1st)
- Honours 1st: উন্নয়ন প্রশাসন‘র রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- Honours 1st | উন্নয়ন প্রশাসন‘র অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
জে. এম. ফিফনার (J. M. Pfiffner) এর মতে, ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির এবং গোষ্ঠীর সম্পর্কের ভিত্তিতেই সংগঠন সৃষ্টি যা শ্রমবিভাজনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।
সংগঠনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য : সংগঠনের প্রক্রিয়ায় Chain of Command বিদ্যমান রয়েছে, যা সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে নিম্নে সংগঠনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো-
১. সংগঠন পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি : সংগঠনের অন্যতম প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য হলো তা পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি সুপরিকল্পিতভাবে সংগঠন গড়ে ওঠার কারণ হলো কতিপয় দল বা গোষ্ঠীর কতিপয় অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধন। মানবসমাজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধন এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সুপরিকল্পিতভাবে সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে।
২. সংগঠন আইনগত কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত : সংগঠন হলো মানবসমাজের সেই ব্যবস্থা যা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনে আইনগত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে সংগঠন পরিচালিত হয়। কেননা সংগঠনে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
৩. ব্যক্তি ও দলের সমন্বয় : সংগঠন হলো ব্যক্তি ও দলের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা। কতিপয় ব্যক্তি এবং দল হচ্ছে সংগঠনের অন্যতম উপাদান । কেননা সংগঠন কেবল কতিপয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গঠিত হয়। তবে উদ্দেশ্য সাধনে উক্ত ব্যক্তি বা দলের মধ্যে অবশ্যই চেইন অব কমান্ড থাকে ।
৪. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য : প্রতিটি মানব সংগঠনই সুনির্দিষ্ট কতিপয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে গড়ে ওঠে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন ছাড়া জনগণের সমষ্টিগত ও সহযোগিতামূলক কর্মপ্রচেষ্টা ধরে রাখা সম্ভব নয় । তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনের উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে সংগঠন গড়ে তোলা হয় ।
৫. আদর্শ ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত : প্রতিটি মানব সংগঠনই আদর্শ ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কেননা সমাজের মানুষের অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধন কেবলমাত্র আদর্শ ও মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত। তাই আদর্শ ও মূল্যবোধ ছাড়া সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা এবং লক্ষ্যার্জন সম্ভব হবে না ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংগঠন হলো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পর্কযুক্ত সেই সংঘ যা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের সাথে সম্পৃক্ত।
সংগঠন ছাড়া মানবসমাজের সাধারণ উদ্দেশ্য সাধন করা সম্ভব নয়। সংগঠনের মধ্য দিয়েই কেবলমাত্র মানব কল্যাণ নিশ্চিতকরণ সম্ভব হয়। আধুনিক জনকল্যাণ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সংগঠন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা একান্ত কাম্য।
- ০২. সংগঠনের উপাদানসমূহ আলোচনা কর।
- অথবা, সংগঠনের উপাদানসমূহের বর্ণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রীয় কার্যাবলির সুষ্ঠু সম্পাদনা ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। সংগঠন ছাড়া প্রশাসন ব্যবস্থা অচল, প্রতিটি সংগঠনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু উপাদান বিদ্যমান থাকে । কেননা উপাদান ছাড়া কোনো সংগঠন কল্পনাও করা যায় না। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কতিপয় উপাদান সক্রিয় থাকে।
সংগঠনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সব উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। উক্ত উপাদানসমূহ সংগঠন ও প্রশাসন ব্যবস্থায় অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সংগঠন ছাড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তাও করা যায় না।
সংগঠনের উপাদানসমূহ : প্রতিটি সংগঠন গড়ে উঠার পিছনে কতিপয় উপাদান কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে সংগঠনের উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. ব্যক্তিগত উপাদান : সংগঠন গড়ে উঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানুষ। কেননা ব্যক্তি বা মানুষ ব্যতীত কোনো সংগঠনই গড়ে উঠতে পারে না। মানুষ তার নিজ প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী সংগঠন সৃষ্টি করে এবং তা দ্বারা চাহিদা মেটানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে।
অনেকের মতে সংগঠন হচ্ছে মানুষের উদ্দেশ্য সাধনের একটি উপায় মাত্র। মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলতে থাকে। মানবজীবনে সংগঠনের প্রভাব খুব বেশি। সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে মানুষ সমষ্টিগতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। যা সংগঠন গড়ে উঠার অন্যতম কারণও বটে।
জন্মের পরবর্তী ব্যক্তির উন্নত জীবনধারণ, উন্নত জীবনযাত্রার মান ও সুকুমার বৃত্তির পরিপূর্ণ বিকাশ বহুলাংশে সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল এবং সংগঠনের সৃষ্টির মূল পটভূমিও মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনকেন্দ্রিক।
একমাত্র সংগঠনের মাধ্যমে মানুষ খুব সহজে সমাজবদ্ধ জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয় এবং নতুন নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে প্রয়াসী হয়।
মানুষের প্রচেষ্টা দ্বারা সংগঠন গড়ে তোলার মাধ্যমে স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত ইত্যাদি গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। মানুষের কর্মপ্রচেষ্টাই সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। তাই মানুষ বা ব্যক্তি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা ছাড়া সংগঠন সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।
২. রাজনৈতিক উপাদান : রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ হতেই লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি। রাজনীতি প্রশাসনিক সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাজনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদনে সংগঠনের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে। রাজনৈতিক কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সংগঠনের বিকল্প নেই।
সরকারি কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয় রাষ্ট্রের অন্তর্গত বিভিন্ন সংগঠনের প্রকৃতি ও গঠন এবং কার্যাবলির ওপর।
রাষ্ট্রীয় সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগ এবং সরকারের বিভিন্ন অঙ্গসমূহের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের প্রকৃতি ও পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রশাসনিক সংগঠনের উদ্ভব ঘটে। কার্ল মার্কস আইন ও নির্বাহী বিভাগকে সংগঠনের স্রষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।
৩. পরিবেশগত উপাদান : সংগঠন গড়ে উঠার ক্ষেত্রে যেসব উপাদান সক্রিয় রয়েছে সেগুলোর মধ্যে পরিবেশগত উপাদান অন্যতম, কেননা সংগঠন গড়ে উঠার ক্ষেত্রে পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।
উপযুক্ত পরিবেশ ব্যতীত সংগঠন গড়ে উঠার সম্ভাবনা খুবই কম। কেবল উপযুক্ত পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে সংগঠন গড়ে তোলা সম্ভব হলে তা প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয় এবং সংগঠনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনও সম্ভব হয়।
তবে সব পর্যায়ে একই পরিবেশ বিরাজ করে না বিধায় সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্থানীয় পরিবেশ, রাজনৈতিক উপাদান ইত্যাদি বিষয়ের ওপর খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৪. প্রযুক্তিগত উপাদান : সংগঠন গড়ে উঠার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কেননা আধুনিককালে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের জটিল কার্যাবলি সম্পাদনে প্রযুক্তিগত উপাদানের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে সংগঠনের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রযুক্তিগত উপাদানের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
সংগঠনের কাজের মান, স্থায়িত্ব ও সফলতা বহুলাংশে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। নতুন প্রযুক্তির ব্যবস্থায় সমাজ সংগঠনের আমূল পরিবর্তন সাধন করতে সক্ষম হয়। প্রযুক্তির ব্যবহার সংগঠনকে নতুনত্ব দান করে এবং কার্যক্ষেত্রে ফলাফল প্রাপ্তি দ্রুত সময়ে নিশ্চিত করে।
৫. প্রায়োগিক উপাদান : সংগঠনের অন্যতম একটি উপাদান হলো এর প্রায়োগিক উপাদান। সমাজের প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে বহুবিদ জটিল কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। যেগুলোর জন্য কারিগরি দক্ষতা ও বিশেষ ধরনের নৈপুণ্যের প্রয়োজন হয়।
কার্ল মার্কসের মতে সংগঠনের জন্য প্রায়োগিক উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। সংগঠনের যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকে তাদের কর্মের দক্ষতা ও নিপুণতা থাকা একান্ত আবশ্যক।
বিশেষ করে কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, চিকিৎসা, প্রকৌশল ইত্যাদি সংগঠনগুলোতে প্রায়োগিক উপাদানই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সুষ্ঠুভাবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, কর্মের নৈপুণ্য ও দক্ষতার প্রয়োগের মাধ্যমে সংগঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় ।
- Honours 1st | অধ্যায় ৪: উন্নয়ন প্রশাসন‘র সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- ফ্রি অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
৬. ভৌগোলিক উপাদান : সংগঠনের অন্যতম উপাদান হলো এর ভৌগোলিক উপাদান। রাষ্ট্রীয় সংগঠনের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক উপাদানের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। প্রশাসন ও পরিকল্পনা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ইত্যাদি সংগঠন ভৌগোলিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
স্থানীয় পর্যায়ে যেসব সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেগুলোর কাজ সহজ প্রকৃতির কিন্তু কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক পর্যায়ে গঠিত সংগঠনগুলো বিষয়ের গুরুত্ব ও ব্যাপকতার কারণে জটিল পদ্ধতির হয়ে থাকে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংগঠন গড়ে তোলা, পরিচালনা ও অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এসব উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। উপর্যুক্ত উপাদানসমূহ ছাড়া সংগঠন যেমন গড়ে তোলা সম্ভব নয়, তেমনি সংগঠনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনও সম্ভব হবে না।
তবে পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থায় সংগঠনের উপাদানসমূহ সুনির্দিষ্ট ও স্থির নয়। সুষ্ঠু পরিচালনা ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপাদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়
- ০২. প্রশাসনিক সংগঠনের আধুনিক মতবাদ আলোচনা কর।
- অথবা, প্রশাসনিক সংগঠনের আধুনিক মতবাদটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা প্রশাসনিক সংগঠনের সনাতন ও নব্য সনাতন মতবাদের অপূর্ণাঙ্গতার পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক মতবাদ জন্মলাভ করে। সনাতন মতবাদে অতিরিক্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করায় তা দীর্ঘকাল ধরে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
এমনকি নব্য সনাতন মতবাদ কর্মচারী কেন্দ্রিক কাঠামোর কারণে সাংগঠনিক ব্যবস্থায় সর্বজনীনতা লাভ করতে ব্যর্থ হয় । সংগঠনের অসংখ্য তত্ত্ব ও মতবাদ কালের বিবর্তনে উপস্থাপিত হয়েছে যার সর্বশেষ পর্যায় হলো আধুনিক মতবাদ ।
প্রশাসনিক সংগঠনের আধুনিক মতবাদ : সংগঠন সম্পর্কিত তত্ত্বের বা মতবাদের ধারাবাহিক বিভাজনের সর্বশেষ পর্যায় হলো আধুনিক মতবাদ বা তত্ত্ব (Modern Theory)। প্রশাসনিক কাঠামোতে বিকল্প হিসেবে ১৯৫০ এর দশকে আধুনিক মতবাদ জন্মলাভ করে। এ তত্ত্বের প্রথম ও প্রধান প্রবক্তা হলেন C. I. Barnard (সি. আই. বার্নার্ড)। আধুনিককালের সাংগঠনিক মতবাদীরা এ মতবাদকে একটি পরিকল্পিত সামাজিক ব্যবস্থা হিসেবে মূল্যায়ন করেন।
কেননা এখানে সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ মতবাদ জন্মলাভ করেছে। আধুনিক মতবাদে সংগঠনের কর্মীদেরকে কোনো যন্ত্র বা কর্ম সম্পাদনের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা না করে বরং কর্মীদের সাথে মানবিক আচরণের মাধ্যমে সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়। এ মতবাদের কর্মচারীদের মাধ্যমে মূল্যায়নের চেষ্টা করা হয়
আধুনিক তত্ত্ব মূলত একটি ধারণা ও বিশ্লেষণাত্মক তত্ত্ব। এ তত্ত্বের প্রধান বক্তব্য হলো কোনো সংগঠনকে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করতে হলে সংগঠনকে একটি ব্যবস্থা বা সিস্টেম হিসেবে আলোচনা করা প্রয়োজন।
আধুনিক মতবাদ অনুযায়ী সংগঠন পরস্পর নির্ভরশীল উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা সংগঠনের আধুনিক মতবাদ এর পূর্ববর্তী সনাতন ও নব্য সনাতন মতবাদে অনুল্লিখিত কিন্তু পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে ।
প্রশ্নগুলো হলো.
ক. ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দিক বা অংশ কোনগুলো?
খ. বিভিন্ন অংশের মধ্যে নির্ভরশীলতা কী প্রকৃতির?
গ. ব্যবস্থার প্রধান প্রক্রিয়াসমূহ কী কী?
ঘ. ব্যবস্থার প্রক্রিয়াসমূহ সংগঠনের বিভিন্ন অংশকে কীভাবে সংযুক্ত করে এবং বিভিন্ন অংশের মধ্যে কীভাবে সমন্বয়সাধন করে?
ঙ. ব্যবস্থার মাধ্যমে কী উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করা হয়?।
।নোবার্ট ইউনার সংগঠনের পদ্ধতি বিশ্লেষণ তত্ত্বের অন্যতম একজন অগ্রদূত। তিনি সংগঠনকে সংযোগ রক্ষা কৌশলের সমন্বয়ে তুলনামূলক বিজ্ঞানের এমন একটি পদ্ধতি হিসেবে মনে করেন যেখানে ইনপুট (Input), প্রক্রিয়া (Process), আউটপুট (Output), ফিডব্যাক (Feedback) ও পরিবেশ (Environment) ইত্যাদি বিষয়সমূহ কার্যকর থাকে।
পার্শ্ব চিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো- আধুনিক মতবাদের অংশ সংযোজনকারী প্রক্রিয়া হিসেবে কিছু বিষয় উল্লেখ করা যায়। যেমন— সংযোগ প্রক্রিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভারসাম্য মতবাদ, মানব সম্পর্ক এবং বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আধুনিক তত্ত্বের কর্মপরিধি পরিব্যাপ্তি লাভ করে।
আধুনিক মতবাদের বৈশিষ্ট্য : একটি নতুন ও যুগোপযোগী মতবাদ হিসেবে আধুনিক মতবাদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান আধুনিক মতবাদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :
১. আধুনিক সংগঠন তত্ত্ব একটি পদ্ধতিবিশেষ যার মৌলিক উপাদানগুলো হচ্ছে উৎপাদন, পরিবেশ প্রক্রিয়া ইত্যাদি।
২. এ মতবাদ সংগঠনের প্রতিটি স্তরের গুরুত্ব ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় দিক দিয়ে বিবেচনা করে।
৩. আধুনিক মতবাদ গতিশীলতার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করে থাকে ।
৪. এ মতবাদ সাফল্যের ব্যাপারে পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়।
৫. আধুনিক মতবাদে শৃঙ্খলার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
৬. আধুনিক মতবাদে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার সাথে সংগঠনকে খাপখাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ মতবাদে সংগঠনের কোনো উপাদানকেই অস্বীকার করা হয়।
৭. না, বরং সব উপাদানকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় আধুনিক মতবাদে সনাতন ও নব্য সনাতন তত্ত্বের বহু উপাদান অন্তর্ভুক্ত আছে।
৮. তবে এসব উপাদান সংযোজন, বিয়োজন ও গতিশীলতার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
৯. এ মতবাদে সংগঠনকে সামগ্রিকভাবে আলোচনা করা হয়।
১০. এ মতবাদ মানবিক সংগঠনের মূল্যায়নের জন্য গবেষণামূলক তত্ত্বের সৃজনশীল সংযোজন ।
১১. এতে সংগঠনের আলোচনা ব্যবস্থার মধ্যে অবস্থানরত ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির পারস্পরিক ক্রিয়া বিশ্লেষণ করে।
১২. আধুনিক তত্ত্ব সনাতন ও নব্য সনাতন তত্ত্ব হতে পৃথক । এতে মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় সাধিত হয়েছে।
আধুনিক মতবাদের সীমাবদ্ধতা : সংগঠনের আধুনিক মতবাদ কতিপয় সীমাবদ্ধতার কারণে নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে যেমন.
- ক. সামগ্রিক ব্যবস্থায় কোনো উপব্যবস্থা ব্যর্থ হলে এ ব্যবস্থা অনেক সময় অকার্যকর হয়ে পরে।
- খ. আধুনিক মতবাদ অনুসারে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো অনেক সময় জটিল হয়ে পড়ে যা সংগঠনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
- গ. এ মতবাদ সাংগঠনিক কাঠামো এবং নব্য সনাতন মতবাদের মৌল নীতিমালার আলোকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা যায় না।
- ঘ. এ মতবাদ অত্যধিক আধুনিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট। এখানে সংগঠনের কাঠামোগত দিককে অস্বীকার করা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সংগঠনের তিনটি মতবাদের মধ্যে আধুনিক মতবাদ অধিক স্বাতন্ত্র্য ও গতিশীল। বিষয়বস্তুর সমসাময়িকতার গুরুত্ব, পরিধির বিচারে আধুনিক মতবাদ অন্যান্য মতবাদের চেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য।
তবে সংগঠনের মতবাদসমূহের কোনোটিই পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নয়, বরং পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বর্তমান প্রশাসনিক চিন্তাধারা তার প্রয়োগ সম্পর্কিত বিষয়ে এ তত্ত্ব বা মতবাদসমূহের যথেষ্ট ‘প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
০৪. আনুষ্ঠানিক সংগঠন ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।
অথবা, আনুষ্ঠানিক সংগঠন ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের বৈসাদৃশ্য বর্ণনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : যেকোনো রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সংগঠনের প্রয়োজন অপরিহার্য, যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটা প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় তাকে সংগঠন বলে।
কালের বিবর্তনে প্রশাসনিক প্রয়োজনীয়তা ও পরিধির চাহিদা অনুযায়ী অসংখ্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে সুসংগঠিত সংগঠন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যে সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামো যত বেশি ক্রিয়াকৌশলী সে সংগঠন তত বেশি কার্যকরভাবে টিকে থাকে ।
আনুষ্ঠানিক সংগঠন ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে পার্থক্য : সংগঠনের কাজের ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে কতিপয় পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
১. সংজ্ঞাগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে এমন সংগঠনকে বুঝায় যেটি কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠামো বা নীতিমালার ভিত্তিতে গঠিত হয়ে থাকে। এসব সংগঠনের পিছনে কোনো আইন প্রক্রিয়ার সমর্থন থাকে না। অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠন বলতে এসব সাংগঠনিক কাঠামোকে বুঝায় যেখানে আনুষ্ঠানিক সংগঠনের দোষত্রুটি পরিহার করে প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনয়ন করতে চেষ্টা করা হয়।
২. কাঠামোগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি শক্তিশালী আইনগত কাঠামো দ্বারা পরিবেষ্টিত। এ সংগঠন আইনি কাঠোমোর বাইরে গিয়ে কোনো কার্যক্রম সম্পাদন করে না। আনুষ্ঠানিক সংগঠনের প্রতিটি ধাপেই সুনির্দিষ্ট কাঠামোর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পক্ষান্তরে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের কোনো সুনির্দিষ্ট কাঠোমো নেই। এ জাতীয় সংগঠন কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে বিধায় এর কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই।
৩. উৎপত্তিগত : সাধারণত কোনো আইনগত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সংগঠন জন্ম লাভ করে। এ ধরনের সংগঠন কতিপয় সুপ্রতিষ্ঠিত বিধিবিধানের আলোকে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠন হঠাৎ করে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে জন্মলাভ করে। এটি অনেকাংশে মানুষের মনের কোনো আকস্মিক আবেগগত সম্পাদনের লক্ষ্যে উৎপত্তি লাভ করেছে।
৪. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য পরিচালিত হয়। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূর্বনির্ধারিত এবং মূলত মুনাফা অর্জন ও সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ ধরনের সংগঠন গড়ে ওঠে। অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকলেও তা হঠাৎ অর্জনের জন্য নয়, বরং সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই পরিচালিত হয়।
৫. কর্তৃত্বের বিচার : সাধারণত আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা সর্বদা পদসোপান নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয় এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উপর হতে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে এ জাতীয় সংগঠনে প্রতিটি কর্মী সুনির্দিষ্ট কর্তৃত্বের অধিকারী। পক্ষান্তরে অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সর্বদা মাঠ পর্যায় থেকে উপরের দিকে প্রবাহিত হয় বিধায় এখানে ব্যক্তি কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো কর্তৃত্ব লাভ করে না।
৬. কর্মীদের আচরণ : কর্মীদের আচরণগত দিক থেকেও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীরা সংগঠনের নিয়মনীতির আওতাধীন থেকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে বিধায় আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের আচরণ অনেকটা প্রশংসিত। অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের আচরণ তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় তা দলীয় আচরণ হিসেবে পরিগণিত হয় ।
৭. ব্যবস্থাপনাগত সাধারণত আনুষ্ঠানিক সংগঠন যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে কর্মী সংগঠনের জন্য কঠোর ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুসরণ করা হয়ে থাকে । কিন্তু অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়িত হয় বিধায় এখানে ব্যবস্থাপনা অতটা জোরালো হয় না ।
৮. আইনগত ক্ষেত্রে ভিন্নতা : আনুষ্ঠানিক সংগঠন একটি সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ আইনগত কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে সব কার্যক্রম আইনগতভাবে সম্পাদিত হয়। অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই এবং তা প্রচলিত রীতিনীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
৯. সংগঠনের পূর্ণাঙ্গতায় আনুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পূর্ণাঙ্গরূপে পরিচালিত হয় বিধায় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সংগঠন হিসেবে বিবেচিত। এখানে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কথা সুনির্দিষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে কিন্তু অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের কোনো সুনির্দিষ্ট বর্ণনা থাকে না বিধায় তা অপূর্ণাঙ্গ সংগঠন হিসেবে বিবেচিত।
১০. নিয়ন্ত্রণগত : আনুষ্ঠানিক সংগঠনে কর্মীদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। কেউ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারে না। অপরপক্ষে, অনানুষ্ঠানিক সংগঠনে আইনগত দিকের চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর জোর দেওয়া হয় বলে তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাংগঠনিক কাঠামো ক্ষমতা ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের মধ্যে বহুবিধ পার্থক্য বিদ্যমান। কালের বিবর্তনে অনানুষ্ঠানিক সংগঠন প্রসার লাভ করলেও আনুষ্ঠানিক সংগঠনের উপযোগিতা এখনো বিদ্যমান ।
এতৎসত্ত্বেও এই দুই প্রকার সংগঠনের মধ্যে সাংগঠনিক কোনো উপাদান খুঁজে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন বিচারে কতিপয় পার্থক্য থাকলেও এই দুই ধরনের সংগঠন প্রশাসনিক কর্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।