অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর এর সজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
অনার্স প্রথম পর্ব
বিভাগ: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস
বিষয়: অখন্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস ও উপমহাদেশের বিভক্তি, ১৯৪৭
বিষয় কোড: ২১১৫০১
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
০১ . সাম্প্রদায়িকতা বলতে কী বুঝ?
অথবা, সাম্প্রদায়িকতা কী?
উত্তর ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে প্রধানত দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। একটি হচ্ছে হিন্দু, অপরটি মুসলিম। ভারতীয় ব্রিটিশ শাসন কায়েম হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় ছিল। কিন্তু ভারতে ব্রিটিশ শাসন কায়েম হলে তা নষ্ট হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে প্রকট বৈষম্য দেখা দেয়।
সাম্প্রদায়িকতা : সাম্প্রদায়িকতা বলতে সাধারণভাবে ধর্মের নামে ধর্মাতিরিক্ত লক্ষ্য সিদ্ধির জন্য কাজ করাকে বুঝানো হয়। এরূপ সাম্প্রদায়িকতাসম্পন্ন কোনো সম্প্রদায় ধর্মকে ধর্মান্ধতায় রূপান্তর করে এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারের কাজে আত্মনিয়োগ করে।
তাই সাম্প্রদায়িকতা কথাটিকে বিভিন্ন অর্থে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করা হয়। সাম্প্রদায়িক মনোভাবসম্পন্ন লোকেরা মনে করেন যে, তাদের ধর্মের অনুরাগীদের সকল স্বার্থ অভিন্ন এবং তা অন্য সম্প্রদায় থেকে পৃথক। এসব লোক ধর্মীয় বিশ্বাসকেই সমাজ ও রাজনীতির ভিত্তি বলে মনে করে থাকেন।
সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মানুষ বা গোষ্ঠী অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যদের আচার আচরণ ও মূল্যবোধকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সাংঘর্ষিক মনে করে।
ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের শাসনকে নিষ্কণ্টক করার জন্য ভাগ কর ও শাসন কর (উরারফব ধহফ জঁষব) নীতি প্রয়োগ কর এদেশে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভয়ংকর সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে এক সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায়ের শত্রুতে পরিণত করে। ১৯৪৬ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সাম্প্রদায়িকতার ফলশ্রুতি।
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বহুলোকের প্রাণহানি ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশে একসময় হিন্দু ও মুসলমানরা ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যায়। তারা একে অন্যের পরিপূরক না ভেবে শত্রু ভাবা আরম্ভ করে। ফলে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোভাব।
মুসলমানরা তাদের ধর্মের ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে ইসলামি জাতীয়তা সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, হিন্দুরাও তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনকে কেন্দ্র করে হিন্দু জাতীয়তাবোধ ভি সৃষ্টি করে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
বদরুদ্দীন উমরের মতে, “কোনো ব্যক্তির মনোভাবকে তখনই সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেওয়া হয় যখন সে এক বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্ম সম্প্রদায় এবং তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধাচরণ এবং ক্ষতিসাধন করতে প্রস্তুত থাকে।”
পণ্ডিত আবু সাইয়্যদি বলেন, “সাম্প্রদায়িকতা হলো ধর্মের চেয়ে ধর্ম সম্প্রদায়কে এবং ব্যক্তির চেয়ে গোষ্ঠীকে বড় করে দেখা।
অর্থাৎ যে নিজেকে সবসময় হিন্দু বা মুসলমান বলে ভাবতে অভ্যস্ত সে সাম্প্রদায়িক মানুষ অন্যের সাথে পরিচিত হলে তার চরিত্র, বিদ্যাবুদ্ধি, রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদির খোঁজ না নিয়ে প্রথমেই জানতে চায় লোকটি ব্রাহ্মণ না শূদ্র, হিন্দু না মুসলমান, ইহুদি না খ্রিস্টান।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করার জন্য ব্রিটিশরা সুকৌশলে হিন্দু ও মুসলমানদেরকে উভয়ের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়।
যার ফলে এতদিন একসাথে বসবাসকারী হিন্দু ও মুসলমানগণ একে অপরের শত্রু ভাবতে থাকে। শুরু হয়ে যায় সাম্প্রদায়িকতা পরবর্তীতে নানা কারণে এ সাম্প্রদায়িকতা তীব্র আকার ধারণ করে । যা শেষ পর্যন্ত অখণ্ড ভারতবর্ষকে খণ্ডিত করে ফেলে ।
০২. বঙ্গভঙ্গের ধারণা দাও।
অথবা, বঙ্গভঙ্গ বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৯০৫ সালের বক্ষাত ব্রিটিশ ভারত শাসনামলের একটি অভ্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। বাংলার বিভক্তি এবং আসামের সকো এর একটি অংশ যুক্ত করে নতুন প্রদেশ গঠনের মাত্র ৬ বছরের মধ্যে তা ব্রিটিশ কর্তৃক বাতিল ঘোষিত হয়। যদিও ব্রিটিশ শাসকরা বা বিভাগকে স্থায়ী ব্যবস্থ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।
বঙ্গভঙ্গ: ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন গভর্নর লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে অখণ্ড বাংলাকে দুটি ভাগে ভাগ করেন। শাসনকার্যের সুবিধার্থে ব্রিটিশ সরকার বাংলা প্রেসিডেন্সি বিভক্তিকরণের কথা চিন্তা করতে থাকে।
এক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার এবং স্যার অ্যান্ড্রু ফ্রেজার। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বড়লাট লর্ড কার্জনও বহুবার বিষয়টি আলোচনা করেন। অতঃপর ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বক্ষ্যতা সম্পন্ন হয়। এসময় বাংলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
১. বাংলা প্রদেশ বাংলা প্রদেশ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয়েছিল। কলকাতা ছিল এর রাজধানী।
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
২. পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ : ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও আসামকে নিয়ে পূর্নবক্ষা ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ গঠিত হয় এবং এর ধানী ঢাকা নতুন প্রদেশের আয়তন ছিল ১,০৬,৫০৪ বর্গমাইল। এর লোকসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ১০ লায়। জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল মুসলমান।
ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে বাভতোর পিছনে প্রধান কারণ ছিল। ব্রিটিশ শাসকদের রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি। উপমহাদেশে তাদের শাসনকে পাকাপোর করতেই তারা বঙ্গভঙ্গ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বঙ্গভঙ্গের কারণ হিসেবে শাসনকার্যের সুবিধাকে প্রাধান্য দিলেও মূলত এর পিছনে অন্যতম কারণ ছিল, ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতি কায়েম করা।
তবে বলতাকে মুসলমানরা স্বাগত জানালেও হিন্দু সম্প্রদায় বলমাতার আচ্ছেন বলে আখ্যা দিয়ে তা বর্জন করে। এর ফলশ্রুতিতে ১৯১১ সালে ইংরেজ সরকার বন্ধাতা রদ করতে বাধ্য হয়।
০৩. বঙ্গভঙ্গের কারণসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, বঙ্গভঙ্গ কেন করা হয়?
উত্তরঃ ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। ঊনিশ শতকের দিকে ব্রিটিশ সরকার জাতীয়তাবাদকে দমনের জন্য বিভেদ নীতি প্রয়োগের চেষ্টা করে। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেস তার ফলে দমিত না হয়ে নিয়মতান্ত্রিক পথে আন্দোলন চালাতে থাকে।
লর্ড কার্জন ভারতের বড়লাট হয়ে আসার পর বৃহত্তর বঙ্গ প্রদেশের শাসনকার্যের সুবিধার জন্য ১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সিকে ভেঙে আলাদা প্রদেশ সৃষ্টি করেন ।
বঙ্গভঙ্গের কারণ : বঙ্গভঙ্গের পিছনে অসংখ্য কারণ ছিল । নিম্নে বঙ্গভঙ্গের কারণসমূহ বর্ণনা করা হলো :
১. প্রশাসনিক কারণ : বাকে বিভক্ত করার প্রশাসনিক যুক্তি দেখিয়ে ১৯০২ সালে লর্ড কার্জন ভারত সচিবকে লেখেন যে, বঙ্গ প্রদেশের আয়তন ২ লাখ বর্গমাইল এবং জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৮৫ লাখ। এ বিশাল আয়তন এবং বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাকে একজন প্রশাসকের পক্ষে সুচারুরূপে শাসন করা সম্ভব নয়।
২. রাজনৈতিক কারণ : বাংলাকে বিভক্ত করার পশ্চাতে আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল রাজনৈতিক। রাজনৈতিক কারণের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো :
ক. জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ : ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (ওহফরধহ ঘধঃরড়হধষ ঈড়হমৎবংং) প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ভারতের হিন্দুসমাজ সচেতন হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে জাতীয়তাবাদী। আন্দোলন গড়ে তোলে। এরূপ জাতীয়তাবাদী চেতনা ও সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার বাংলাকে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
খ. ভাগ কর ও শাসন কর : ব্রিটিশ সরকার ‘উরারফব ধহফ জঁষব’ নীতিতে বিশ্বাসী। তাই বাংলাকে বিভক্ত করে একটি সম্প্রদায়কে নিজেদের অনুকূলে রেখে অপর সম্প্রদায়কে শাসন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে ।
৩. অর্থনৈতিক কারণ : তৎকালে বাংলা প্রেসিডেন্সির (বাংলা, উড়িষ্যা, বিহার ও ছোট নাগপুর) রাজধানী কলকাতাকে কেন্দ্র করে ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। পূর্ববাংলায় পাট উৎপন্ন হলেও পাটকলগুলো গড়ে ওঠে কলকাতায়।
ফলে কলকাতা অল্পদিনে সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হতে থাকে। এরূপ অবস্থার হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব মি. রিজলি প্রশাসনিক ও রাজস্ব আদায়ের সমস্যার কথা উল্লেখ করে বড়লাটকে পত্র লেখেন। উক্ত পত্রের যৌক্তিকতা বিচার করে বাংলা ভাগ করা হয় ।
৪. সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক কারণ : হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের সামাজিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই পূর্ববঙ্গের মুসলমানগণ নিজেদের সামাজিক ও ধর্মীয় আদর্শের ভিত্তিতে নতুন প্রদেশে সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রত্যাশা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গভঙ্গের প্রধান কারণ ছিল প্রশাসনিক ।
মূলত শাসনতান্ত্রিক সুবিধা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং হিন্দু কংগ্রেসবাদীদের প্রভাব কমানোই ছিল এর মুখ্য উদ্দেশ্য। যদিও বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে পূর্ববাংলার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিত ও পশ্চিমবাংলা কলকাতার দ্বারা শোষিত হতো তা রোধ করা সম্ভব হয়। তবে শেষ পর্যন্ত উগ্রবাদী হিন্দুদের তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয় ।
০৪. ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলাফল ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বঙ্গভঙ্গের ফলাফল কী হয়েছিল?
উত্তর: ভূমিকা : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ অবিভক্ত বাংলায় তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯০৫ সালের পূর্বে ‘বাংলা প্রেসিডেন্সি’ ছিল ভারতের ক্তি সর্ববৃহৎ প্রদেশ। ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা প্রদান করা হয় এবং ১৫ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়।
বঙ্গভঙ্গের ফলাফল : বঙ্গভঙ্গের ফলাফল সাময়িক হলেও ল্ড বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায় বেশি লাভবান হয়েছিল নিম্নে বঙ্গভঙ্গের ফলাফল সবিস্তারে আলোচনা করা হলো :
১. মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া : বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকা নতুন প্রদেশের তথা ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ এর রাজধানী হয়। রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ফলে মুসলমানগণ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা লাভে সক্ষম হয়। অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বড় বড় সুরম্য অট্টালিকা গড়ে ওঠায় ঢাকার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
বঙ্গভঙ্গকে মুসলমানগণ তাদের হৃত গৌরব ও মর্যাদা ফিরে পাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে। নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনাটি কার্যকর করার দিন ঢাকায় এক জনসভায় বলেন, “বঙ্গভঙ্গ আমাদেরকে নিষ্ক্রিয়তার হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে। এটি আমাদের উদ্দীপ্ত করেছে কর্মসাধনায় এবং সংগ্রামে।” অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববাংলার গণমানুষের ভাগ্যোন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হয়।
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
২. হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া : বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অবস্থান ছিল খুবই কঠিন। বাংলার উচ্চ ও মধ্যবিত্ত হিন্দুরাই এর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঝড় তুলেছিল কলকাতার আইনজীবী সমিতি মনে করল বঙ্গভঙ্গের অর্থ নতুন প্রদেশে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা করা।
অপরদিকে, কলকাতার সাংবাদিকরাও তাদের স্বার্থ নস্যাৎ হবে জেনে এর বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে। পশ্চিমা শিক্ষিত হিন্দুসমাজ মনে করে যে, পূর্ববাংলায় ক্রমোন্নতিশীল শিক্ষিত ও রাজনীতি সচেতন হিন্দুসমাজের বিকাশ রোধের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার পূর্ববাংলার মুসলমানদের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য এ ব্যবস্থা নিয়েছে।
কাশিমবাজারের এক জনসভায় সভাপতি মহারাজা মহীন্দ্রচন্দ্র নন্দী বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বলেন, “নয়া প্রদেশে মুসলমান জনগণের রাজত্ব হবে– বাঙালি হিন্দুরা হয়ে পড়বে সংখ্যালঘু। আমরা নিজেদের মাটিতে আগন্তুক হয়ে পড়ব। এ সম্ভাবনায় আমি আতঙ্কিত। এ সম্ভাবনা আমাকে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগাকুল করে তোলে।”
৩. মুসলিম লীগের জন্ম : ১৯০৬ সালে কতিপয় মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও ব্রিটিশ সরকারের কাছে তাদের দাবিদাওয়া পেশ করার জন্য সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে মুসলিম লীগের জন্ম হয়। পরবর্তীতে ১৯০৯ সালে মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইনে মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি স্বীকৃত হলে হিন্দু সম্প্রদায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ পূর্ববঙ্গের গণমানুষের মনে এক নতুন আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার করেছিল। ঢাকা নতুন প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় নতুন অফিস আদালত ও সুরম্য অট্টালিকা গড়ে ওঠে এবং ঢাকার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদী মহল ও বর্ণবাদী হিন্দুরা এটা মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে ।
- আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি ২য় অধ্যায় অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সাজেশন
- আরও পড়ুনঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সাজেশন
০৫. ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের গঠন আলোচনা কর ।
অথবা, ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের গঠন সম্পর্কে লেখ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এটি সর্বভারতীয় জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে হিন্দু পক্ষাবলম্বন করে। ফলে মুসলমানদের দাবিদাওয়াগুলো অগোচরে থেকে যায়। মুসলমানরা তাদের অধিকার, দাবিদাওয়া, সমস্যা, ন্যায্যতা ও স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে একটি প্লাটফর্ম গঠন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর বিশেষ উদ্যোগে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর মুসলিম লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ।
মুসলিম লীগ গঠন : ব্রিটিশ সরকার ১৯০৬ সালে নতুনভাবে শাসন সংস্কার চালু করার বিষয় বিবেচনা করার প্রেক্ষিতে মুসলমানরা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর আগা খানের নেতৃত্বে ৩৫ জনের একটি দল বড়লাট মিন্টোর সাথে সাক্ষাৎ করে একটি দাবিনামা পেশ করেন।
এ দাবিনামায় মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নতুন সংস্কার আইনে তাদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার ও আইনসভায় তাদের সংখ্যা অনুযায়ী প্রাপ্য আসনের চেয়ে আরও বেশি আসন দেওয়ার দাবি জানানো হয় ।
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায় যে, সিমলার মুসলিম প্রতিনিধি সম্মেলনের সময় মুসলমান নেতৃবৃন্দ তাদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার আবশ্যকতা অনুভব করেন। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রায় আট হাজার প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে ।
এ সম্মেলনে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ নামক একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাব সমর্থন করেন হাকিম আজমল খান, জাফর আলী খান, মুহম্মদ আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এভাবে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলিম লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতে ব্রিটিশ সরকারের নিকট দাবিদাওয়া পেশ করার জন্য ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় কংগ্রেস গঠিত হয়। পরবর্তীতে কংগ্রেস নিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে কংগ্রেস গঠনের শিক্ষা থেকেই মুসলমানরা ভিন্ন জাতি হিসেবে টিকে থাকার, দাবি আদায়ের জন্য ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠন করার প্রেরণা পান।
একপর্যায়ে ১৯০৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনে মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ফলে বাংলার মুসলমানরা প্রতিবাদের ভাষা প্রকাশের মাধ্যম খুঁজে পায় ।
০৬. লক্ষ্ণৌ চুক্তি কী?
অথবা, লক্ষ্ণৌ চুক্তি বলতে কী বুঝ?
উত্তর: ভূমিকা : ১৯১৬ সালে সম্পাদিত লক্ষ্ণৌ চুক্তি ভারতবর্ষের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এ চুক্তি সম্পাদিত হয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জটিল সময়ের আবর্তে লক্ষ্ণৌ চুক্তি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
লক্ষ্ণৌ চুক্তি : ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন ভারতবর্ষে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতবর্ষের জনগণ এ আইনকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি। ভারতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এদিকে ১৯১১ সালে বাংকা রদ করায় মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারকে বিশ্বাসঘাতক বলে আখ্যায়িত করে।
১৯১২-‘১৩ সালের বলকান যুদ্ধকে মুসলমানগণ ইসলামের তরবারিখ্যাত তুরস্কের প্রতি খ্রিস্টান শক্তির ষড়যন্ত্র বলে ধরে নেয় এবং ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক জার্মানির পক্ষাবলম্বন করায় পরিস্থিতি আরও জটিলতর হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, ভারতীরা। তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের ব্যাপারে এ দুটি রাজনৈতিক সংগঠন ব্রিটিশ সরকারের নিকট যুক্ত পরিকল্পনা পেশ করবেন।
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
এ উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে পৃথক পৃথক শাসনতান্ত্রিক প্রণয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়।
১৯১৬ সালের ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর লক্ষ্ণৌতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হলে উভয়ের অধিবেশনে কমিটি কর্তৃক যুক্ত সাংবিধানিক পরিকল্পনা উত্থাপিত হয় এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ কর্তৃক গৃহীত এ সাংবিধানিক পরিকল্পনাটিই ঐতিহাসিক লক্ষ্ণৌ চুক্তি নামে অভিহিত ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লক্ষ্ণৌ চুক্তি ছিল ভারতের তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে শান্ত করার প্রয়াস। আর বাস্তবক্ষেত্রেও এ প্রয়াস সাফল্য লাভ করেছিল। লক্ষ্ণৌ চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো ব্রিটিশ সরকারের সাথে বৈরী সম্পর্কের সময় এ চুক্তিটি ছিল উভয় সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত । তাই এই চুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।
০৭. দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর ।
অথবা, দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তরঃ ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য তা হলো দ্বিজাতি তত্ত্ব। জিন্নাহর ঘোষিত ‘এক জাতি এক রাষ্ট্র’ এ মতবাদ বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকেই জনসমর্থন লাভ করতে থাকে। ‘হিন্দু-মুসলমান দুটি পৃথক জাতি’ এই নীতির ভিত্তিতে জিন্নাহ মুসলমানদের যে পৃথক জাতিসত্তার দাবি করে তাই দ্বিজাতি তত্ত্ব নামে পরিচিত।
দ্বিজাতি তত্ত্ব : ভারতে ১৯৩৭ সালে স্বায়ত্তশাসন কার্যকর হলেও মুসলমানরা উপেক্ষিত হয়। এমন অবস্থায় ১৯৩৯ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি জিন্নাহ মুসলমান ও হিন্দুদের জাতিসত্তা সম্পর্কে যে তাত্ত্বিক ভাবধারা বিশ্লেষণ করেন তাই দ্বিজাতি তত্ত্ব নামে পরিচিত। এ ভাষণে জিন্নাহ বলেন, “যেকোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মুসলমানরা একটি জাতি ।
তাই তাদের একটি পৃথক আবাসভূমি প্রয়োজন, প্রয়োজন একটি ভূখণ্ডের এবং একটি রাষ্ট্রের।” জিন্নাহ তার দ্বিজাতি তত্ত্বের পক্ষে নিম্নোক্ত যুক্তি পেশ করেন :
১. ভারত একটি দেশ নয়; বরং একটি উপমহাদেশ। জিন্নাহ ভারতকে একটি দেশের পরিবর্তে একটি উপমহাদেশ হিসেবে উপস্থাপন করে অঞ্চল ও জাতিভিত্তিক পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেন ।
২. যে ভিত্তিতে এ মহাদেশে হিন্দুরা একটি জাতি, সে ভিত্তিতে মুসলমানরাও একটি জাতি । জিন্নাহ বুঝাতে চান যে দীর্ঘদিন পাশাপাশি বসবাস করলেও হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক জাতি। তাই স্বতন্ত্র আবাস একটি যৌক্তিক দাবি ।
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
৩. মুসলমানদের ভাষা, সাহিত্য, শিল্পকলা, নৈতিক বিধান, আচারব্যবহার, ইতিহাস, ঐতিহ্য হিন্দুদের থেকে ভিন্ন তিনি আরও বলেন, পৃথক জাতি হিসেবে সংস্কৃতি, সাহিত্য ও শিল্পকলা সবকিছুই ভিন্ন, যা ছিল প্রকারান্তরে মুসলমানদের পৃথক আবাসের দাবি।
৪. হিন্দু-মুসলিম জনগণ অনুপ্রেরণা লাভ করে ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে। অতএব আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞায় আমরা একটি জাতি । জিন্নাহর এ তত্ত্বই দ্বিজাতি তত্ত্ব ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দ্বিজাতি তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো ভারতের মুসলমানরা একটি পৃথক জাতি। এ দ্বিজাতি তত্ত্বই হলো ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মূলভিত্তি। এদিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় দ্বিজাতি তত্ত্বের গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী ।
০৮. লাহোর প্রস্তাব সম্পর্কে লেখ।
অথবা, লাহোর প্রস্তাব সংক্ষেপে সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকাঃ লাহোর প্রস্তাব ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। যা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত।
লাহোর প্রস্তাব : নিম্নে লাহোর প্রস্তাব সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. পরিচয় : ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ সম্মেলনে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক যে প্রস্তাব পেশ করেন, তাই হচ্ছে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব।
লাহোর অধিবেশনে এ প্রস্তাব গৃহীত হয় বলে একে লাহোর প্রস্তাব বলা হয়। লাহোর প্রস্তাব ছিল মূলত ভারতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য মুসলিম লীগের প্রথম গঠনমূলক প্রস্তাবনা
২. লাহোর প্রস্তাবের উল্লেখযোগ্য ধারা : লাহোর প্রস্তাবের উল্লেখযোগ্য ধারাসমূহ নিম্নরূপ :
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
ক. ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সন্নিহিত স্থানসমূহকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে;
খ. এসব অঞ্চলকে প্রয়োজনমতো সীমা পরিবর্তন করে এমনভাবে … গঠন করতে হবে যাতে ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের যেসব স্থানে মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব অঞ্চলে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং
গ. স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম প্রকৃতির ।
এছাড়া এ প্রস্তাবে বলা হয়, “এসব অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তাদের সাথে পরামর্শ করে যথোপযুক্ত কার্যকর ও বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে করতে হবে।
৩. লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্য : নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যসমূহকে সামনে রেখে ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়
ক. মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার নিমিত্তে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়।
খ. বঙ্গদেশের সঠিক ভূসীমা নির্ধারণের নিমিত্তে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়।
গ. সর্বোপরি লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে নিহিত ছিল বর্তমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি হতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর পাকিস্তানে নানা আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে এবং এর একপর্যায়ে পাকিস্তান ভেঙে বর্তমান বাংলাদেশের জন্ম হয় যা ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ।
০৯. লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্যসমূহ ব্যাখ্যা কর ।
অথবা, ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্যগুলো লেখ ।
উত্তরঃ ভূমিকা : আমরা বর্তমানে যে স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করছি তার পূর্ব ইতিহাস বিবেচনা করলে বলা যায় লাহোর প্রস্তাবই এ স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল। ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের কারণেই বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পায়। এককথায় বলা হয় এটি বাঙালির জন্য ছিল আশীর্বাদস্বরূপ ।
লাহোর প্রস্তাবের উদ্দেশ্য : ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ব্যাখ্যা নিয়ে এক সময় বিভিন্ন জনের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও আজ এটি স্বীকৃত যে, স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ (ওহফবঢ়বহফবহঃ ঝঃধঃবং) দ্বারা উল্লিখিত দুটি অঞ্চলে বস্তুত দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে । এ লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক।
তিনি কখনও জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন না। লাহোর প্রস্তাবের কোথাও দ্বিজাতি তত্ত্বের উল্লেখ নেই।
এ প্রস্তাবের কোথাও পাকিস্তান শব্দটিরও উল্লেখ নেই, যদিও তা দ্রুত পাকিস্তান প্রস্তাব হিসেবে পরিচিতি, লাভ করে উপমহাদেশের আন্তঃরাজনৈতিক অবস্থা তথা ব্রিটিশ শোষণ থেকে এ উপমহাদেশের নির্যাতিত মানুষের মুক্তি এবং উপমহাদেশে বিভাজন নীতিই ছিল লাহোর প্রস্তাবের মুখ্য উদ্দেশ্য । এর অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলো হলো :
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
১. মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার নিমিত্তে লাহোর প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
২. বঙ্গদেশের সঠিক ভূসীমা নির্ধারণের নিমিত্তে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয় ।
৩. আন্তঃস্বার্থের সঠিক মীমাংসার জন্য লাহোর প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় ।
৪. স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এ প্রস্তাব পেশ করা হয়। ১৯২৮ সালে প্রকাশিত নেহেরু রিপোর্ট, ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের পর কংগ্রেস শাসিত প্রদেশসমূহে মুসলিম মন্ত্রী অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মতানৈক্য, কংগ্রেস শাসিত প্রদেশগুলোতে দলীয়করণ ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রদর্শন ভারতীয় মুসলমানদের আশা ভঙ্গ করে।
এর ফলে মুসলমান নেতাগণ নিজেদের পৃথক অস্তিত্ব রক্ষায় সচেষ্ট তাহন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রকাশ করেন। এ তত্ত্ব ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগ সম্মেলনে গৃহীত হয়। মূলত লাহোর প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে উপমহাদেশের জনগণকে সুস্পষ্টভাবে দুভাগে বিভক্ত করে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এ. কে. ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব পেশ করেছেন বাঙালির প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও দেশের প্রতি ভালোবাসার এক মূর্ত প্রতীক হিসেবে। তার এ ঐতিহাসিক প্রস্তাবের জন্য আজকের বাংলাদেশ তার কাছে চিরঋণী । এ প্রস্তাব ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের সর্বপ্রথম প্রস্তাব ।
১০. লাহোর প্রস্তাবের ধারাসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কী ছিল?
উত্তরঃ ভূমিকা : লাহোর প্রস্তাব ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়, যা ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত।
লাহোর প্রস্তাবের ধারা : লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় যে, নিখিল ভারত মুসলিম লীগের এ অধিবেশনের সুনিশ্চিত অভিমত এই যে, কোনো সাংবিধানিক পরিকল্পনা এদেশে কার্যকর করা যাবে না বা মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, যদি তা নিম্নরূপ মূলনীতির ওপর পরিকল্পিত না হয় যথা :
ক. ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সন্নিহিত স্থানসমূহকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
খ. এসব অঞ্চলকে প্রয়োজনমতো সীমা পরিবর্তন করে এমনভাবে গঠন করতে হবে যাতে ভারতবর্ষে উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের যেসব স্থানে মুসলমানগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সে অঞ্চলসমূহে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় ।
গ. স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম প্রকৃতির।
অধ্যায়২ঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত *
এছাড়া এ প্রস্তাবে আরও উল্লেখ হয়, “এসব অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তাদের সাথে পরামর্শ করে যথোপযুক্ত কার্যকর ও বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে করতে হবে।
ভারতবর্ষে মুসলমানগণ যেসব স্থানে সংখ্যালঘু সেসব স্থানে তাদেরও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তাদের সাথে পরামর্শ করে যথোপযুক্ত কার্যকর ও বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে সংযুক্ত করতে হবে।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও লাহোর প্রস্তাবে আরও যা ছিল তা হলো প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ও প্রয়োজনমতো অন্যান্য বিষয়ে সর্বক্ষমতা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকবে । লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয়গুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে এর মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।