শহীদ মো. জিল্লুর শেখ।। গোপালগঞ্জের শেখ হাসান ও শাহনাজ বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান শেখ জিল্লুর রহমান। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে `বড় অফিসার’ বানাবেন, সেজন্যই গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আসেন তারা।
কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলা সহিংসতার মধ্যে ঢাকার বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জিল্লুর নিহত হওয়ায় তাদের সে স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই রয়ে গেল।
শেখ হাসানের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কাঠি ইউনিয়নের কাঠি পশ্চিমপাড়া গ্রামে। ভাই নূর আলম শেখের সঙ্গে ঢাকার মেরুল বাড্ডায় তার মাছের আড়ৎ রয়েছে। বাড্ডার আফতাব নগরেই পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি।
আরও পড়ুন-
স্বামীকে হারিয়ে ছেলের জন্য চাকরি চাইছেন গণির স্ত্রী
মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে? প্রশ্ন জুয়েলের বাবার
চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে জিল্লুর একাদশ শ্রেণির ছাত্র, মেঝ ছেলে দশম শ্রেণিতে, ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে আর সবার ছোট মেয়েটির বয়স দুই বছর।
জিল্লুর বনশ্রীর ফয়জুর রহমান আইডিয়াল স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.৯৬ পেয়ে সম্প্রতি আফতাব নগরের ইম্পেরিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল।
শেখ হাসান বলেন, “আমার ছেলেটা সারাদিন পড়াশোনা নিয়েই থাকত। সেদিন দুপুরে নামাজ পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু ফিরল লাশ হয়ে। কি অপরাধ ছিল তার?”
পড়াশোনায় বেশ ভালো হওয়ায় জিল্লুরকে ঘিরে তার বাবা-মায়ের অনেক আশা ছিল বলে জানান জিল্লুরের ফুফা ইমদাদুল মোল্লা (৪০)।
তিনি বলেন, “জিল্লুরের বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় অফিসার বানাবেন। সন্তানদের ভালো পড়াশোনা নিশ্চিত করতেই তারা গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে কষ্ট করে চলছিলেন। কিন্তু একটি গুলি তাদের সব স্বপ্ন-আশা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।”
তিনি জানান, ১৭ জুলাই দুপুরে ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে নিহত হয় জিল্লুর। পরের দিন সকাল ৮টায় কাঠি সপ্তপল্লী ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পশ্চিমপড়া কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
ইমদাদুল মোল্লা বলেন, ঢাকায় থাকলেও গ্রামের প্রতি অন্যরকম টান ও ভালোবাসা ছিল জিল্লুরের। সর্বশেষ কোরবানির ঈদে সে বাড়িতে আসে। অত্যন্ত বিনয়ী বন্ধুবৎসল জিল্লুর খুব সহজে সবার সঙ্গে মিশতে পারতো।
তিনি বলেন, “জিল্লুরের নিহতের খবর শোনার পর আমরা সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। কেন অকালে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হল জিল্লুরের মতো মেধাবী ছেলেকে?”
জিল্লুরের ফুফু শিউলী (২৫) বলেন, “আমার বাবার (ভাইপো) কী অপরাধ ছিল? তাকে কেন নৃশংসভাবে বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করতে হয়েছে? সে তো অল্পবয়সী ছেলে, কয়দিন হলো কলেজে ভর্তি হয়েছে, সে তো কোনো রাজনীতি করে না। তারপরও কেন তাকে মেরে ফেলতে হলো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ হত্যার বিচার চাই।” সূত্র
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।