নামঃ শহীদ মো. ইমন মিয়া

প্রতিষ্ঠানের নামঃ শিবপুরের সরকারি শহীদ আসাদ কলেজ।

নাগরিকত্বঃ বাংলাদেশী

জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী

জেলাঃ নরসিংদী

পেশাঃ ছাত্র

আন্দোলনঃ কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো

মৃত্যুর সময় ও কারণঃ নরসিংদীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ইমন মিয়ার মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাসার বলেন, গুলিবিদ্ধ শহীদ ইমন মিয়ার লাশ মৃত ঘোষণার পরই তাঁর স্বজনেরা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে চলে গেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনঃ

শহীদ মো. ইমন মিয়া।। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন বা সর্বাত্মক অবরোধ চলাকালে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘাত ও সহিংসতায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত ২৭ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১১ জন শিক্ষার্থী, ১ জন সাংবাদিক, ২ জন রিকশাচালক, ১ জন পথচারী রয়েছেন। অনেকের পরিচয় জানা যায়নি।

নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগের শরীরে গুলির অথবা মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শুধু ঢাকাতেই ১৯ জন নিহত হয়েছেন, বাকি ৮ জন চট্টগ্রাম, নরসিংদী, মাদারীপুর, সিলেট, রংপুর ও ঢাকার সাভারে মারা গেছেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে গত মঙ্গলবার সারা দেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারদলীয় সংগঠন ও পুলিশের সংঘর্ষকালে ছয়জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছিলেন চারজন।

উত্তরায় ১১ জনের মৃত্যু
রাজধানীর উত্তরায় পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে দিনভর সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতাল সূত্র বলছে, আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে। গতকাল বেলা ১১টার পর সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ ও র‍্যাব বিপুল পরিমাণ রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছোড়ে। এতে দিনভর বহু আন্দোলনকারী আহত হন। আহত ব্যক্তিদের আন্দোলনকারীরাই উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সাব্বির আহমেদ খান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর হাসপাতালে মৃতের সংখ্যা ৬। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথমে আনা হয় নর্দান ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রকে, তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরায়। তাঁর নাম আসিফ। তিনি ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। ৫টার দিকে আরেকজনকে আনা হয়। তিনি হাসপাতালে আসার পর মার যান। তাঁর বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল। নাম সাকিল।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, সাড়ে পাঁচটার দিকে মাথায় ও বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন নিয়ে আরও তিনজন আসেন। তাঁদের আনা হয় মৃত অবস্থায়। সন্ধ্যায় আরেকজনকে আনা হয় মৃত অবস্থায়।

বিকেলের দিকে উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে চারজন মারা গেছেন। হাসপাতালটির পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চারজনের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। দুজনের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। হাসপাতালটিতে বহু আহত আন্দোলনকারী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান তিনি। উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা গেছেন আরেকজন।

রেসিডেনসিয়ালের ছাত্র নিহত
ধানমন্ডিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নিহত হয় ফারহান ফাইয়াজ (রাতুল)। সে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল।

রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একটি সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি জানায়, গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মোহাম্মদপুর এলাকার সিটি হাসপাতালে ফারহানের মৃত্যু হয়। তার শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে।

ঢাকায় আরও ৭ জন নিহত
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ চলার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত আরও পাঁচজনের মরদেহ এসেছে। তাঁদের মধ্যে একজন সাংবাদিক রয়েছেন। নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদী ঢাকা টাইমস–এ কর্মরত বলে জানা গেছে। সন্ধ্যার পর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে তাঁকে আনা হয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাঁর শরীরে ছররা গুলির ক্ষত রয়েছে।

নিহত ওয়াসিমকে (৩০) আনা হয় যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত এলাকা থেকে। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত নাজমুলকেও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আনা হয়েছে। ২০–২২ বছর বয়সী নাজমুলের শরীরে কোপের আঘাত রয়েছে। এ ছাড়া নিহত মোহাম্মদকে আনা হয়েছে আজিমপুর এলাকা থেকে। আনুমানিক ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদের শরীরে ছররা গুলির ক্ষত রয়েছে।

এদিকে যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম-ঠিকানা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত রিকশাচালকের বয়স আনুমানিক ৩০ বছর বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া রামপুরায় দুজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে রাত ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রামপুরার ফরাজী হাসপাতালে আরও কয়েকজনের লাশ এসেছে। তবে তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।

ঢাকার বাইরে নিহত ৮
চট্টগ্রাম নগরেও সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। বিকেলে নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের মধ্যে তাঁরা গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তাঁদের একজনের বয়স ১৮, আরেকজনের ২২ বছর। আন্দোলনকারীদের দাবি, নিহত দুজনই আন্দোলনে ছিলেন।

বিকেলে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন।

ঢাকার সাভারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থী মারা যান। তাঁর নাম শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন। তিনি মিরপুরের এমআইএসটির কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনচার্জ মো. ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর বুকের মধ্যে অনেকগুলো গুলি (ছররা গুলি) লেগেছে। আনুমানিক তিনটার দিকে তাঁকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।’

নিহত ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন বলেন, তাঁরা সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায় থাকেন। তাঁর ছেলে ব্যাংক টাউন এলাকায় নামাজ পড়ে বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলন দেখতে গিয়েছিল। কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছিল। সংঘর্ষে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট তাঁর ছেলের গায়ে লাগে।

নরসিংদীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এই দুজন হলেন নাম তাহমিদ তামিম (১৫) ও মো. ইমন মিয়া (২২)। নিহত তাহমিদ তামিম নরসিংদী শহরের নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের কারারচর এলাকার মো. ইমন মিয়া শিবপুরের সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের শিক্ষার্থী।

তাহমিদ তামিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান জানান, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাহমিদকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

ইমন মিয়ার মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাসার বলেন, গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণার পরই তাঁর স্বজনেরা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে চলে গেছেন।

মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের হামলার সময় ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় লেকের পানিতে পড়ে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম দীপ্ত দে (২১)। তিনি জেলা শহরের আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা ও মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। দীপ্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাদারীপুরের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সহপাঠীরা।

এ ছাড়া সংঘর্ষে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এবং রংপুরে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। সূত্র

উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.