SSC |বাংলা ২য় গুরুত্বপূর্ণ ৪টি প্রবন্ধ রচনা | (PDF Download): SSC পরিক্ষায় কমন উপযোগী কিছু প্রবন্ধ রচনা গুলো আলোচনা করা হয়েছে আমাদের এখানে । আপনি চাইলে নিচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ফাইল ডাউনলোড করতে পারেন ।
জনসেবা/মানব সেবা/সমাজসেবা
সূচনাঃ মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বসবাসকারী সকল মানুষের সুখ-দুঃখের সাথে সকলেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ফলে ঐ জনসমষ্টির কল্যাণ সাধনই জনসেবা নামে অভিহিত হয়। ধর্মীয় এবং সামাজিক উভয় দিক থেকেই জনসেবা প্রথম এবং প্রধান কাজ। জনসেবার ভেতর দিয়েই মানুষ জীবনের কর্তব্য শেষ করে পরম সুখ লাভ করতে পারে। প্রখ্যাত এক মনীষী বলেছিলেন, “¯্রষ্টার ইবাদত, মাতা-পিতার সেবা এবং জীবে দয়া”-এ তিনটি প্রধান কর্তব্য।
জনসেবার উদ্দশ্যঃ মানুষ স্রষ্টার সেরা জীব। সকল মানুষ একই ¯্রষ্টার সৃষ্টি একথা কোন শাস্ত্রই অস্বীকার করতে পারবে না। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, সাদা, কালো, কোন মানুষের মধ্যেই দান খয়রাতের ধর্মীয় বিধান পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সে) বলেছেন, “মানুষের মাঝে তিনিই শ্রেষ্ঠ, যিনি মানুষের উপকার করেন।”
জনসেবা ও পারিবারিক জীবনঃ বর্তমান যুগে আমরার নিজ স্বার্থ নিয়েই ছুটে বেড়াই। নিজ পরিবারের অর্থাৎ স্ত্রী-পুত্রকন্যা এদের সমস্যা সমাধানেই কেবল ব্রতী হই। কিন্তু এদের বাইরেও যে অন্য একটি জগৎ আছে তা’ ভাববার আমাদের কোন অবকাশ নেই। আমরা নিজ পরিবারের লোকজনকে যে দরদ ও ভালবাসা দান করি, নিজ আত্মীয়স্বজনকে যে প্রীতির চোখে দেখি, জাতি ধমর্ নির্বিশেষে সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষকে একই দরদ ও ভালবাসা দান করা একান্ত উচিত। পরের দুঃখে কাঁদার শিক্ষা পরের ব্যাথায় ব্যথিত হওয়ার শিক্ষা আমাদের গ্রহণ করতে হবে।
মনীষীদের দৃষ্টিতে জনসেবাঃ পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, সকল যুগের সকল ধর্ম প্রবর্তক ও মনীষীগণ জনসেবাকে জীবনের একটি মহান আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স), যীশুখৃষ্ট, হযরত আবু বকর (রা), হযরত ওমর (রা), হযরত ইব্রাহিম, হাজী মোহাম্মদ মহসীন, গৌতম বুদ্ধ, শীচৈতন্য, স্বামী বিবেকানন্দ প্রভূতি মহাপুরুষগণের জীবনী আলোচনা করলে এ সত্যটি উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) নিজে পেটে পাথর বেঁধে নিরন্নকে অন্নদান করেছেন। হযরত ওমর নিজের আরাম আয়াসকে বিসর্জন দিয়ে পরের কল্যাণে ছদ্মবেশে মদিনার পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন, হাতেম তাই পরার্থে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন, পরের মঙ্গলের জন্যে যীশুক্রশে বিদ্ধ হয়েছেন, গৌতম বুদ্ধ জীবের দুঃখ দূর করার জন্য রাজপরিবেশ ছেড়ে বনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সেজন্যই এ সকল মহাপুরুষের জীবন কথা আজও প্রদীপ্ত ভাষায় জন সেবার মহাত্ম ঘোষণা করছে।
কবিার ভাষায়,
“সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেক আমরা পরের তরে।”
উপসংহারঃ বাস্তবিক অর্থে জনসেবা একটি পরম ধর্ম, সকল উপাসনার শ্রেষ্ঠ উপাসনা। আল্লাহ তার সৃষ্ট জীবনকে খুব ভালবাসের। তাঁর সৃষ্ট জীবনকে ভালবেসে আমরা আল্লাহর ভালবাসা লাভ করতে পারি। সুতারাং যে ব্যক্তি সেবা পায় সে শুধু কৃতার্থ হয় না, যিনি সেবা দেন তিনি ধন্য হন।
তাই আমাদের তরুণ সমাজ যদি জনসেবার মহান ব্রতে উদ্ধদ্ধ হয়ে দেশ, জাতি ও আত্মমানবতার সেবায় জীবন উৎসর্গ করতে পারে, তবেই আমাদের জীবন সার্থক হয়ে উঠবে। “ভোগে প্রকৃত সুখ নেই, ত্যাগেই সুখ”-এ মনোবৃত্তি নিয়ে তাদেরকে সম্মুখের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ/ বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য
ভূমিকাঃ বাংলাশেশে ছয়টি ঋতু নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য নিয়ে একে একে আবির্ভূত হয়। এদের আবির্ভাব এখানে অপরূপ প্রাকৃতিক লীলা বৈচিত্র্য ঘটে থাকে। এ ছয়টি ঋতু গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। এদের বিভিন্ন রূপ বৈচিত্র্যে বাংলাদেশের নৈসর্গিক দৃশ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটে। প্রত্যেকটি ঋতুর আগমনে বাংলাদেশের প্রকৃতি সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যে ঝলমল করে উঠে।
গ্রীষ্মের আগমনঃ গ্রীষ্ম ঋতুর আগমনে সূর্যকিরণ প্রখর হয়ে মাঠ খাঁ খাঁ করতে থাকে। ছোট ছোট পুকুর, খাল-বিল শুকিয়ে যায়। স্থানে স্থানে পানীয় জলের অভাব পরিলক্ষিত হয়। গ্রীষ্মের দুপুরে প্রখর সূর্যতাপ বিকীর্ণ হয় বলে রাস্তাঘাটে মানুষ চলাফেরা করতে অসহ্য যাতনা ভোগ করে।
এ সময় হঠাৎ কালবৈশাকখীর তান্ডব নৃত্য শুরু হয়। প্রবল ঝড়বাদল মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে। পল্লীগ্রামের দরিদ্র কৃষকদের ঘরবাড়ি অনেক সময় উড়ে যায়; তখন তাদের দুঃখের সীমা থাকে না। গ্রীষ্মকালে উদ্যানের সারি সারি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু প্রভূতি ফলবান বৃক্ষ ফলনম্ভারে অপূর্ব শ্রী ধারন করে।
কালবৈশাখীর ঝড়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আম, জাম কুড়ানোর ধুম পড়ে যায়। গ্রীষ্মের খরদৌদ্রের যে দাহ মানুষের জীবনকে ক্লান্ত ও পঙ্গু করে ছিল বর্ষার সজল বারি বর্ষণে তা দূর হয়ে যায়, তাপদগ্ধ মানুষের মুখে হাসি ফুটে।
বর্ষার সমারোহঃ গ্রীষ্ম ঋতুর পর বর্ষার সাড়ম্বর আগমনে বাংলাদেশের প্রকৃতি এক অভিনব রূপ পরিগ্রহ করে। রৌদ্র-দগ্ধ তৃষ্ণাতুর ধরণীর বুক সু¯িœগ্ধ শ্যাম সমারোহে ভরে ওঠে। নিবিড় কৃষ্ণ নীরদের দল আকাশে ভেসে চলে। অবিরাম বর্ষণে খাল-বিল, নদী নালা পানিতে পূর্ণ হয়। মরালের দল সানন্দে পানিতে সন্তরণ করে, মৎস্যরাজি জলাশয়ে ইতস্তত বিচরণ করে। কুমুদ, কহলার প্রভূতি পুষ্পরাজি প্রস্ফটিত হয় এবং বনে যুখী, কেয়া, কদম ফুল ফোটে।
বর্ষার সমারোহে বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলগুলির মধ্যে যেন নবজীবনের সাড়া পড়ে। খাল-বিল, নদী-নালা সমস্ত পানিতে থৈ থৈ করতে থাকে। আকাশ ভেঙ্গে বিপুল বেগে বর্ষণধারা নামে কুহুকেকার আনন্দ ধ্বনি জাগে। ঘরের বাইরে যাওয়া যা কষ্টকর। আকাশ নিবিড় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কখনও কখনও পূবালী বাতাস বইতে থাকে।
রবীন্দ্রনাথ এই দৃশ্য দেখিয়ে গেয়েছেন-
“বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর
আউশের ক্ষেত জলে ভর ভর
কালিমাখা মেঘে ওপারে আঁধার
ঘনিয়াছে দেখ চাহিয়ে।”
শরতের আগমনঃ এর পর ধীরে ধীরে বর্ষার অবসান ঘটে এবং শরৎ তার শুভ্র জ্যোৎ¯œা ও পুষ্প-সুষমা নিয়ে আগমন করে। বর্ষার নিপীড়িতা ধরণী আবার পুলকিত হয়ে ওঠে। শশীর উজ্জল কিরণে কি কাশবন, কি বনের বৃক্ষশীর্ষ, কি গৃহচুড়া, কি নদীর নির্জন বৃক্ষ সমস্তই হাস্যময়ীরুপ ধারণ করে। শরৎকালে শেফালী, কামিনী প্রভূতি ফুল প্রস্ফটিত হলে সৌন্দর্য সৌরভে সবাইকে মুগ্ধ করে। এ সময় কবি গেয়ে উঠেন-
“এবার অবগুণ্ঠন খোল
গ্রহন মেঘ-মায়ায় বিজন বন ছায়ায়
তোমার আঁচলে অবগুণ্ঠন সারা হল
শিউলি সুরভি রাত বিকশিত জোছনাতে
মৃদু মর্মর গানে তব মর্মের বাণী বোলো।”
হেমন্তের আগমনঃ শরৎ বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই হেমন্তের আবির্ভাব। হিম কুয়াশাজালে আশ্বিনের রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ ধূসর বর্ণ ধারণ করে। তখন প্রকৃতির শোভা অপরূপ সুন্দর দেখায়। প্রকৃতি যে আপন রুপে মুগ্ধ হয়ে নিশাকালে শিশির বন্দিজলে আনন্দাশ্রæ বিসর্জন করে। হেমন্তের অবসান হতে না হতে শীতের আভাস পাওয়া যায়।
শীতের আগমনঃ হেমন্তের পর শুরু হয় শীতের পালা। শ্যামল প্রকৃতির যেন সহসা রক্ষমূর্তি ধারণ করে। বৃক্ষরাজি প্রায় পত্রহীন বিবর্ণ হয়ে যায়। উত্তর দিক হতে বাতাস বইতে থাকে। লেপ, চাদর ও গরম কাপড় মুড়ি দিয়ে সবাই শীত হতে রক্ষা পাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যান্য শীতপ্রধান দেশের ন্যায় এখানকার শীত ঋতু তত অসহনীয় নয়। শীত মৌসুমে বাজারে নানা প্রকার তরি-তরকারি দেখা যায়। মানুষের চলাফেরা ও খাওয়া দাওয়ায় সুবিধা হয়।
বসন্তের আগমনঃ অবশেষে ঋতুরাজ বসন্ত অনুগম নৈসর্গিক সৌন্দর্য ল’য়ে আবির্ভূত হয়। এ সময় নতুন পত্র-পুষ্পে, লতা-গুল্মে শীতের শ্রীহীনতা দূর হয়ে যায়। নানা প্রকার ফুল ফোটে এবং আম কাঁঠাল প্রভূতি রসাল ফলের মুকুল বের হয়। মৌমাছি মধুমক্ষিকা গুন গুন রবে ফুল হতে মধু আহরণ করে। আ¤্রকাননের অভ্যন্তরে কোকিল পরম প্রীতিদায়ক এবং উপভোগ্য।
উপসংহারঃ এরূপ বিভিন্ন ঋতুতে বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য্যের বিকাশে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্যের মনোহারিত্ব বৃদ্ধি পায়। এখানকার ছয়টি ঋতুর প্রত্যেকটির যে নিজস্ব সৌন্দর্য সম্ভার রয়েছে তা বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ। প্রত্যেক ঋতুতেই বাংলাদেশর মাঠ-ঘাট, বনভূমি ও বৃক্ষলতা রূপবৈচিত্র্যে রমণীয় হয়ে উঠে।
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
ভূমিকাঃ মানুষের চারপাশে যা কিছু আছে তাই নিয়ে তার পরিবেশ। পরিবেশের সাথে মিলে-মিশে মানুষ বা অপরাপর প্রাণীর জীবনের বিকাশ ঘটে। তারা নিজ নিজ উপকরণ থেকেই প্রয়োজনীয় অংশ ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত অংশ ফিরে যায় সে পরিবেশে। সেখান থেকে তা আবার মানুষ গ্রহণ করে। এভাবে জীবজগৎ ও তার পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থাকার উপকরণের আদান-প্রদান চলে। আদান-প্রদান ভারসাম্যের উপর জীবের অস্তিত্ব নির্ভশীল। এ ভারসাম্য বিঘিœত হলে তাকে বলা হয় পরিবশে দূষণ।
পরিবেশ দূষণের শুরুঃ মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের শুরু। মানুষ শিখল আগুন জ্বালাতে, বন কেটে করল বসত। সেই সাথে সভ্যতার বিচিত্র বিকাশের প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশ হতে থাকল দূষিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে শুরু হল নতুন যুগের নতুন সভ্যতার। শুরু হল নগর জীবনের, গড়ে ওঠল অসংখ্য কারখানা, যানবাহনের প্রাচুর্য দেখা দিল পথে পথে। সবুজ বিপ্লব ঘটাতে এল কীটনাশক। আণবিক ও পারমাণবিক বোমার তৈজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে গেল আকাশে বাতাসে। ফলে পরিবেশ দূষণ দেখা দিল ব্যাপকভাবে।
দূষণের প্রতিক্রিয়াঃ মানুষ যেসব জিনিস করে তৈরি করে তার পরিত্যক্ত বিষাক্ত পদার্থই দূষণের সৃষ্টি করে। বাতাস, পানি ও শব্দ-এ তিন শ্রেণিতে দূষণকে ভাগ করা চলে। বাতাসে জীবনের অস্তিত্বের ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা বেশি হলে তাকে বলে বায়ু দূষণ। ধোঁয়া, ধুলা-বালি, কীটনাশক, তেজস্ক্রিয়পদার্থ প্রভূতি বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। তেলের দহনজাত ধোঁয়া থেকে সালফার ডাই-অক্সাইড, যানবাহরেন ধোঁয়া, ঘরবাড়ি নষ্ট করে, ধুলো রোগবাহক। কীটনাশক হরমোনের ভারসাম্য বিনষ্ট করে। আণবিক ও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যান্সার রোগের কারণ। তা থেকে অঙ্গবিকৃতিও হতে পারে।
পরিবেশ দূষণের ফলঃ পরিবেশ দূষণের জন্য ঝড়, বন্যা, খরা, অনাবৃষ্টি প্রভূতি হচ্ছে। গাছপালার সঙ্গে বৃষ্টির একটা প্রাকৃতিক যোগসুত্র রয়েছে। কাজেই গাছপালা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাত কমে এসেছে। খরা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ফসল পুড়ে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাব। পানির স্তর ধীরে ধীরে নিচে চরে যাচ্ছে। মাটি রসহীন হয়ে পড়ছে। পানীয় জলে অভাব ঘটছে। প্রকৃতির মধ্যে বিপর্যয় নেমে আসছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জীবজন্তু ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার আবশ্যক।
প্রতিকার ও প্রতিরোধঃ পরিবেশ দূষণে মানুষের স্বাস্থ্যহানি, রোগ-শোক, অর্থ ও সম্পদের অপচয় ইত্যাদি যে সব ক্ষতি সাধিত হয় তা থেকে মানুষকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার পথ বের করতে হবে। এর জন্যে নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিকরা আজ সারা বিশ্বের মানুষকে এ পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সর্তক করেছেন। পরিবেশ দূষণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল তার প্রেক্ষিতে দূষণ রোধ করার প্রচেষ্টা চলে। বিভিন্ন দেশে দূষণ নিরোধন আইন হয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে দূষণ বন্ধ করার চুক্তি সম্পাদি হয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে এর মোকাবিলার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি বছর ৫জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয় । আমাদের দেশেও এ ব্যাপারে সচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার এ ব্যাপারে কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।
উপসংহারঃ পরিবেশ দূষণ মানব জাতির জন্য এক মারাত্বক হুমকিস্বরুপ। এ ব্যাপারে সারা বিশ্বের মানুষের সচেতনতা দরকার। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা আরও প্রকট। তবে জাতির স্বার্থেই তার মোকাবেলা প্রয়োজন।
পিতামাতার প্রতি কর্তব্য
ভূমিকাঃ স্রষ্টার সৃষ্টিশীল জগতে স্রষ্টার পরে পিতামাতাই আমাদের সৃষ্টির উৎস। বাস্তব জীবনে পিতামাতাই আমাদের অস্তিত্ব দান করেন। তাঁরা আমাদের লালন-পালন করেন। তাঁদের আদর স্নেহে আমরা বড় হয়ে উঠি। পিতামাতা যেমন আমাদের প্রতি অনেক দায়িত্ব পালন করেন তেমনই পিতামাতার প্রতি আমাদেরও অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে।
পিতামাতার প্রতি ব্যবহারঃ আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো পিতামাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা। তাঁদের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই দুর্ব্যহার করা উচিত নয়। তাঁদের সঙ্গে সবসময় নম্র ও ভদ্র আচরণ করতে হবে। এমন কোনো ব্যবহার পিতামাতার সাথে করা যাবে না, যাতে তাঁরা মনক্ষুণ হন। তাঁদের সাথে এমন ব্যবহার করতে হবে-যে ব্যবহার পেলে আমাদের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
তাঁরা সন্তানকে শাসন করার জন্যে কোন কোন সময় কটুকথা ও কাঠোর আচরণ করলেও তা সন্তানের মঙ্গলের জন্যেই করে থাকেন। পিতামাতার শাসনের আড়ালে থাকে ভালোবাসা।
তাঁদের মতো এমন অকৃত্রিম শুভাকাক্সক্ষী দ্বিতীয় আর নেই। সন্তানের উচিত পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে তাঁদেরকে সম্মানিত করা, তাঁদের আবেগ-অনুভুতিকে মূল্যায়ন করা।
পিতামাতা সন্তানের মুখ দেখলেই মনের অবস্থা বুঝতে পারেন। চোখের আড়ালে থাকলেও সন্তানের কোন অমঙ্গল হলে তাঁরা ঠিকই বুঝতে পারেন। সন্তানের প্রতি পিতামাতার এই যে মায়া-মমতা- অনুভূতি-দায়িত্ব এসবই সন্তানকে যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকে। সন্তানের কাছে তাঁরা বটবৃক্ষের মতো। বটবৃক্ষের মতো ছায়া দ্বারা সন্তানকে শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে সহযোগিতা করেন তাঁরা।
সন্তানের উচিত পিতামাতার ভালোবাসাকে, মায়-মমতাকে মর্যাদাপূর্ণ ও অর্থবহ করতে তাঁদের প্রতি ভালো ব্যবহার করা, নম্র ও ভদ্র আচরণ করা।নম্র ও ভদ্র আচরণের মাধ্যমে সন্তান তার পিতামাতার মনে যেমন শান্তি দিতে পারে তেমনই সে নিজেও তাঁদের নিবিড় সম্পর্কের বন্ধনে জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে কানায় কানায় ভরিয়ে তুলতে পারে।
ভরণপোষণের ব্যবস্থা করাঃ পিতামাতা যেমন আমাদের সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে লালন-পালন করে বড় করে তোলেন তেমনই আমাদেরও উচিত পিতামাতার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। তাঁরা যখন অসহায় হয়ে পড়েন অর্থাৎ যখন তাঁদের কাজ করার কোন ক্ষমতা থাকে না তখন তাঁদের ভারণপোষণের দায়িত্ব সন্তানের নেওয়া উচিত। নিজেরা যা খাবে তাঁদেরও তাই খেতে দিতে হবে।
এমনকী তাঁদের জন্যে মাঝে মাঝে আলাদা খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগে-শোকে সেবা যতœ করতে হবে, ওষুধ-পত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা যেন কোনো দিক দিয়ে মনে কষ্ট না পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
বৃদ্ধকালীন পরিচর্যাঃ সন্তানের উচিত বৃদ্ধকালে পিতামাতার উপযুক্ত পরিচর্যার ব্যবস্থা করা। কারণ বৃদ্ধকালে তাঁরা অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় তাঁদের কাজে ক্ষমতা থাকে না, এমনকী চলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। তাই প্রতিটি সন্তানের উচিত এ সময় তাদের পাশে থাকা এবং তাঁদের প্রতিটি কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।
সন্তানের মনে রাখা উচিত একদিন সে নিজেও পিতা হবে, বয়সে বৃদ্ধ হবে। সে তার পিতামাতার জন্যে যতটুকু করবে তার সন্তানও তার জন্যে ততটুকুই করবে। কারণ তার সন্তান তার কাছ থেকে দেখে এবং শিখবে।
অবাধ্য না হওয়াঃ কোনোভাবেই পিতামাতার অবাধ্য হওয়া উচিত নয়। পিতামতা যা বলে তা শুনতে হবে। তাঁরা যেটা করতে নিষেধ করে সেটা না করা ভালো। কারণ পিতামাতা ভালো জানেন সন্তানের জন্যে কোনটি মঙ্গলজনক। এমন কোনো পিতামাতা নেই যাঁরা সন্তানের অমঙ্গল চান। বায়েজীদ বোস্তামী রেখে গেছেন মাতৃসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বোস্তামীর মাতা ঘুম থেকে জেগে পানি চেয়েছিলেন।
কলসিতে পানি নেই দেখে তিনি রাত দুপুরে চলে যান ঝরনা থেকে পানি আনতে। এসে দেখলেন মা আবারও ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঘুম থেকে জাগালে তিনি কষ্ট পাবেন ভেবে বোস্তামী মাকে ডাকলেন না। মা জাগার পর দেখলেন বোস্তামী পানি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এ অবস্থা দেখে বোস্তামীর মা বোস্তামীর জন্যে প্রাণ খুলে দোয়া করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে বোস্তামী মাতার প্রতি কর্তব্যের এক উজ্জ্বল নজির রেখেে গেছেন।
বিভিন্ন ধর্মের আলোকেঃ পবিত্র হাদিসে উল্লেখ আছে যে, পিতামতার পায়ের নিচে সন্তানের বেসেস্ত। তাই পিতামাতাই আমাদের ইহজগৎ ও পরকালের একমাত্র মুক্তির উপায়। সবার আগে পিতামাতার দোয়া কাজে লাগে। শুধু ইসলাম ধর্মেই নয়, পৃথিবীর সকল ধর্মেই পিতামাতার স্থান সবোর্চ্চ দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা এমন কিছু করব না যে কাজে পিতামাতা অসন্তুষ্ট হন। পিতামাতার সন্তুষ্টির মাধ্যমেই আমাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি সম্ভব।
মৃত্যুর পরের কর্তব্যঃ পিতামাতার মৃত্যুর পরও তাদের প্রতি সন্তানের অনেক দায়িত্ব কর্তব্য থেকে যায়। তাঁদের মৃত্যুর পর প্রত্যেক সন্তানের উচিত তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা। সন্তান যদি পিতামাতার কবরস্থানে গিয়ে দোয়া করে তাহলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করেন। পিতামাতা ঋণগ্রস্থ থাকলে সন্তানেরই তা পরিশোধ করা উচিত।
উপসংহারঃ পিতামাতা প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য লিখে শেষ করা যাবে না। পিতামাতা ছাড়া যেমন আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না তেমনই তাঁদের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন ছাড়া আমাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি ভাবা যায় না। আমাদেরকে বায়েজীদ বোস্তামীর মতো পিতামাতাকে সেবা করার নজির সৃষ্টি করতে হবে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।