PDF অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ও PDF অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.২ : এরিস্টটল, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDF অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.৩ : সেন্ট অগাস্টিন
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০১. মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, মধ্যযুগের রাষ্ট্রদর্শনের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসকে আলোচনার সুবিধার্থে পণ্ডিতরা তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন । যথা : প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগ। এর মধ্যে মধ্যযুগ রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
যদিও রাষ্ট্রচিন্তায় মধ্যযুগের সূত্রপাত নিশ্চিত করে বলা খুবই কঠিন। তবে, ৪০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে মধ্যযুগ বলে অভিহিত করা হয়। রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারার অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ : মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তাকে বিশ্লেষণ করলে যেসব বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. ধর্মীয় বিশ্বাসে নির্ভরশীল : মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মীয় বিশ্বাসে নির্ভরশীলতা। এ সময় মানুষের মধ্যে যুক্তির চেয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসই প্রবলভাবে কাজ করতো। মূলত এই যুগের চিন্তাধারা খ্রিস্টধর্মের নীতি দ্বারা এমনভাবে পরিচালিত হতো যে, যেকোনো ব্যক্তি চার্চের সদস্য না হয়ে রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারতো না ।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক জি. এইচ. স্যাবাইন (G. H. Sabine) বলেন, “The interests that went to the making of Christians were religious and Christianity was as doctrine of salvation, not a philosophy or a political theory.” অর্থাৎ, মধ্যযুগের আকর্ষণ ছিল ধার্মিকতার প্রতি, খ্রিস্টীয় মতবাদের প্রতি, যা মূলত পাপমোচনের মতবাদ, দর্শন বা রাজনীতি বিষয়ক নয় ।
২. সামন্তবাদ : মধ্যযুগে গির্জা ও রাজার মধ্যে বিরোধ যখন চরম আকার ধারণ করে এবং প্রত্যেকে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রচেষ্টা চালায় ঠিক সেই সময় সামন্তবাদের আবির্ভাব ঘটে। এ সময় রাজশক্তির দুর্বলতায় সামন্ত প্রভুরা ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে এবং স্ব স্ব এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। প্রকৃতপক্ষে মধ্যযুগে শাসক বলতে সামন্ত প্রভুদের বুঝানো হতো। যা মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
৩. গির্জা ও রাষ্ট্রের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব : মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যেকার পারস্পরিক দ্বন্দ্ব। এ সময় অধিকাংশ রাষ্ট্রচিন্তাবিদ মনে করেন, সারাবিশ্ব এক সার্বজনীন আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত যার সর্বময় কর্তৃত্ব ন্যস্ত আছে চার্চের ওপর এই আইনের মূল লক্ষ্য ছিল সর্বজনীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
সর্বজনীন সমাজ হচ্ছে অপার্থিব আর পোপ হচ্ছে এর মূল প্রতিনিধি। এমনকি রাজার যাবতীয় কাজকর্ম বিচার করার ভার ন্যস্ত থাকবে পোপের ওপর। এ নীতির নাম দেওয়া হয় জাস্টিটিয়া (Justitia)। এ নীতির মধ্যে আরও বলা হয় রাষ্ট্র গির্জার একটি অধীনস্থ সংস্থা।
- আরো পড়ুন:- PDF ফ্রি অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স: সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট অগাস্টিন: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ফ্রি
- আরো পড়ুন:- অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
এ সময় রাষ্ট্রের সার্বভৌম স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি পোপের দ্বারা স্বীকৃতি লাভ করেনি। ফলে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সমগ্র মধ্যযুগব্যাপী চলতে থাকে।
৪. রাষ্ট্রতত্ত্বের অনুপস্থিতি : মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তার প্রথমদিকে এটি কেবল ধর্মীয় চিন্তাধারার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। দৰ্শন বা রাষ্ট্রতত্ত্বসংক্রান্ত কোনো বিষয়ই মধ্যযুগীয় চিন্তাধারায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না ।
তাই অনেক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ এ যুগকে অরাজনৈতিক বলে অভিহিত করেছেন। অধ্যাপক ডব্লিউ. এ. ডানিং (W. A. Dunning) বলেন, “The middle age was unpolitical, its aspirations and ideals centred about the form and content of religious belief..”
অর্থাৎ, মধ্যযুগ ছিল অরাজনৈতিক, এযুগের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং মতাদর্শ ছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের রূপ ও প্রকৃতি দ্বারা পরিবেষ্টিত। বস্তুত মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক বিষয়াদি ছিল গির্জা, রোমান সাম্রাজ্য, সমান্তবাদ এবং জাতীয়তাবাদের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলস্বরূপ।
৫. স্টোয়িকবাদ : মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো স্টোয়িকবাদের প্রভাব। স্টোয়িকবাদের ন্যায় মধ্যযুগের রাজনৈতিক দর্শন ও প্রাকৃতিক আইন, ঐশ্বরিক আইন, সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান প্রভৃতি ধারণায় আস্থাবান ছিল।
৬. বিশ্বজনীনতাবাদ : মধ্যযুগের সকল চিন্তাচেতনা বিশ্বজনীনতাবাদকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। রোমান সাম্রাজ্য ভৌগলিক সীমারেখাকে অতিক্রম করে। খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাবের পূর্বেই রোমে বিশ্ব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সে সময়কার সমগ্র সভ্যজগৎ এর অন্তর্ভূক্ত হয়। রোমানদের বিশ্বাস ছিল তাদের সাম্রাজ্য দৈব অভিপ্রায়েরই অভিব্যক্তি এবং তা শাশ্বত ও বিশ্বজনীন হতে বাধ্য।
কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। রোমান সাম্রাজ্য ভৌগলিক সীমারেখাকে অতিক্রম করে। খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাবের পূর্বেই রোমে বিশ্ব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সে সময়কার সমগ্র সভ্যজগৎ এর অন্তর্ভূক্ত হয়। রোমানদের বিশ্বাস ছিল তাদের সাম্রাজ্য দৈব অভিপ্রায়েরই অভিব্যক্তি এবং তা শাশ্বত ও বিশ্বজনীন হতে বাধ্য ।
৭. সমান্তরালবাদ : রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের মতে, মধ্যযুগীয় সমাজের ওপর গির্জার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলেও রাজা অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করতো। অর্থাৎ পোপের অধীনে রাষ্ট্র থাকলেও এর অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায়নি।
এককথায় রাষ্ট্র ও গির্জা আলাদা অর্থে দুটি সংস্থায় পরিণত হয়। এই দুই সংস্থার জন্য দুই রকম পৃথক সমাজ মধ্যযুগে ছিল না, বরং সমাজ ছিল এক শাসনব্যবস্থা নির্ভর। তাই একে সমান্তরালবাদ বলা হয়েছে।
৮. খ্রিস্টধর্মের প্রাধান্য : মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে খ্রিস্টধর্মের প্রাধান্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সম্পর্কে অধ্যাপক ডানিং বলেছেন, রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে মধ্যযুগের ইতিহাসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউরোপে রোমান সাম্রাজ্যের বাইরেও খ্রিস্টধর্মের প্রতিষ্ঠা এবং গির্জার অগ্রগতি সাধন করা।
৯. পোপতন্ত্রের প্রাধান্য : মধ্যযুগের প্রথমদিকে পোপ তার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ‘নিউ টেস্টামেন্ট’ অপেক্ষা ‘ওল্ড টেস্টামেন্টকে ‘ অধিকতর উপযোগী বলে প্রচার করায় পুরোহিততন্ত্র বা যাজকতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
কেননা, ওল্ড টেস্টামেন্টের শিক্ষা অনুযায়ী, আইন হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার অভিব্যক্তি এবং রাজা ও কর্মচারীদের ক্ষমতা সীমিত, পোপের ক্ষমতা মুখ্য। যা মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার একটি তাৎপর্যমণ্ডিত বিষয় ।
১০. দ্বৈত শাসনব্যবস্থা : দ্বৈত শাসনব্যবস্থা মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। পোপ ও যাজকগণ রাষ্ট্র এবং গির্জাকে একটি ঐক্যবদ্ধ ও অখণ্ড ব্যবস্থা বলে অভিহিত করলেও বাস্তবে সে সময় দ্বৈত শাসন ব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এককথায় মধ্যযুগে গির্জার প্রধান হিসেবে পোপ এবং রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে রাজার প্রাধান্যই প্রতিষ্ঠিত ছিল ।
১১. দুই তরবারি তত্ত্ব : মধ্যযুগের শাসনব্যবস্থায় পোপ ও রাজার মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল অত্যন্ত প্রকট। তাই অনেক রাষ্ট্র চিন্তাবিদ এই বিরোধ মীমাংসা এবং সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য দুই তরবারি তত্ত্বের কথা বলেন। এই তত্ত্ব অনুসারে পার্থিব বিষয়ের শাসক ছিলেন রাজা এবং অপার্থিব বিষয়ের শাসক ছিলেন পোপ বা গির্জা।
১২. সংগঠিত রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি : মধ্যযুগে কোনো সুসংগঠিত রাষ্ট্রের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় না। তখনকার সময়ে বিশৃঙ্খলা সমাজের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যদিও মধ্যযুগের শেষের দিকে জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছিল তারপরেও এর প্রভাব ছিল অত্যন্ত নগণ্য। ফলশ্রুতিতে সামন্ত প্রভুরা নিজ নিজ এলাকায় ক্ষমতার মালিক হয়ে পড়ে এবং গির্জাও পরাক্রমশালী হয়ে ওঠে।
১৩. রাজনীতি বিষয়ক পুস্তকের স্বল্পতা : রাজনীতি বিষয়ক পুস্তকের স্বল্পতা মধ্যযুগের রাষ্ট্রদর্শনের অন্যতম আরেকটি দিক এই সময়ে রাজনীতি বিষয়ক পুস্তকের স্বল্পতার দরুন সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্বল্প পরিমাণে যেসব রাজনীতি বিষয়ক পুস্তক প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলোও ছিল প্রাচীন পুস্তকগুলোরই পুনরাবৃত্তি।
১৪. ঈশ্বরের করুণাবলে রাজত্ব : “ঈশ্বরের করুণাবলে রাজত্ব করা” মধ্যযুগে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। মধ্যযুগে প্রচলিত রাজনৈতিক ভাবধারার ফলশ্রুতি হিসেবে রাজা জনগণের নিকট হতে তার ক্ষমতা লাভ করেন এবং ঈশ্বরের করুণাবলে রাজ্য শাসন করেন। এরূপ অবৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম দিক ।
১৫. গির্জার প্রভাব হ্রাস-বৃদ্ধি : গির্জার প্রভাব হ্রাস ও বৃদ্ধি মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার একটি লক্ষণীয় দিক। মধ্যযুগের গির্জার অনুসারীরা জনগণকে সৎ ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনের পরামর্শ প্রদান করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা নিজেরাই সরল ও সৎ জীবনপ্রণালি ত্যাগ করে বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে জনগণ তাদের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে এবং গির্জার প্রভাব লোপ পায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাষ্ট্র ও গির্জার মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সবচেয়ে স্মরণীয় ও নাটকীয় ঘটনার যুগ হলো মধ্যযুগ। এ যুগে রাজা ও পোপের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে রাজার সাফল্য আসে এবং পোপের সম্মান ও গুরুত্ব হ্রাস পায়।
তবে একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, আধুনিক কালের সমাজ জীবনকে সুসংহত ও সুবিন্যস্ত করতে এবং নতুন মতবাদ বিকাশের ক্ষেত্রে মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা অত্যন্ত তৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম।
০২. “ইউরোপের মধ্যযুগ ছিল মূলত অরাজনৈতিক।”- – উক্তিটি পরীক্ষা কর।
অথবা, “মধ্যযুগ ছিল অরাজনৈতিক” এর পক্ষে যুক্তি দেখাও ।
উত্তর : ভূমিকা সমগ্র মধ্যযুগ ছিল রাজনৈতিক চিন্তার জন্য এক অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ। এ যুগে মুক্তচিন্তার যেমন অভাব পরিলক্ষিত হয় তেমনি পরিলক্ষিত হয় অশিক্ষা, অসভ্যতা ও বর্বরতা।
আবার এরই পাশাপাশি সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যের উত্থান এবং প্রসার, বিশ্বজনীনতাবাদের প্রচার, স্টোয়িক ধ্যানধারণার প্রভাব, দুই তরবারি তত্ত্ব প্রভৃতি কারণে অনেকে মধ্যযুগকে অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ধর্মীয় আবরণের আড়ালে মানুষের মুক্তচিন্তার পথকে রুদ্ধ করা হয় । মননশীলতা বিকাশের পথ নানা কুসংস্কারে আবদ্ধ ছিল ।
“ইউরোপের মধ্যযুগ ছিল মূলত অরাজনৈতিক।” উক্তিটির ব্যাখ্যা : ষষ্ঠ শতক থেকে এগারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত প্রায় পাঁচশত বছর রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এক প্রকার বন্ধ্যাত্ব বিরাজ করে।
আবার এগারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে জ ষোলো শতকের ধর্মনিরপেক্ষতা উদ্ভবের সময় পর্যন্ত রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে যদিও বন্ধ্যাত্ব ঘুচে গিয়ে সৃজনশীলতার সৃষ্টি হয়, তবুও এই কয়েক শতকের রাষ্ট্রচিন্তা মূলত ধর্মকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। যার কারণে মধ্যযুগকে অরাজনৈতিক ও অসৃজনশীল যুগ বলে অভিহিত করা হয়। নিম্নে উক্তিটির পক্ষে যুক্তি বা কারণ উল্লেখ করা হলো-
১. রাষ্ট্রতত্ত্বের অনুপস্থিতি : মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তার প্রথমদিক কেবল ধর্মীয় চিন্তাধারার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। দর্শন বা রাষ্ট্রতত্ত্ব সংক্রান্ত কোনো বিষয়ই মধ্যযুগীয় চিন্তাধারার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তাই অনেক চিন্তাবিদই এ যুগকে অরাজনৈতিক ও অবৈজ্ঞানিক বলে অভিহিত করেছেন।
অধ্যাপক ডব্লিউ. এ. ডানিং (W.A. Dunning) এ সম্পর্কে বলেন, “The middle age was unpolitical, its aspirations and ideals centered about the form and content of religious belief.” অর্থাৎ, “মধ্যযুগ ছিল অরাজনৈতিক; এ যুগের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং মতাদর্শ ছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের রূপ ও প্রকৃতি দ্বারা পরিবেষ্টিত।”
বস্তুত মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক বিষয়াদি ছিল গির্জা, রোমান সাম্রাজ্য, সামন্তবাদ এবং জাতীয়তাবাদের পারস্পরিক ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়ার ফলস্বরূপ। তাই রাজনৈতিক দর্শন ধর্মীয় ধ্যানধারণা এবং সর্বজনীন ধারণার স্থলাভিষিক্ত হতে সক্ষম হয়নি ।
২. খ্রিস্টধর্ম ও রাজনীতি : মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় খ্রিস্টধর্মের প্রাধান্য ছিল সীমাহীন। এ সম্পর্কে অধ্যাপক বার্কি বলেছেন, “Chritianity was the only agent of unity and continuity.” অর্থাৎ, খ্রিস্টধর্ম ছিল ঐক্য ও ধারাবাহিকতা রক্ষার একমাত্র প্রতিনিধি। এ সময় রাজনীতির সাথে খ্রিস্টধর্মের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
তাই রাজনীতি ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত ছিল তাই মধ্যযুগে রাজনীতির কোনো স্বাতন্ত্র্য অস্তিত্ব ছিল না। যার কারণে এ যুগকে অরাজনৈতিক যুগ বলে অনেকে চিহ্নিত করেছেন ।
৩. ধর্মীয় বিশ্বাসে নির্ভরশীল : সমগ্র মধ্যযুগ ছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের যুগ। যুক্তির চেয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসই ছিল মানুষের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের মুখ্য নিয়ন্ত্রক। ধর্মীয় বিধিবিধান বা আইনের বাইরে মানুষ কোনো কিছু করতো না।
অধ্যাপক স্যাবাইনের মতে, “The interests that went to the making of Christians were religious and Christianity was doctrine of salvation, not a philosophy or a political theory.” অর্থাৎ, মধ্যযুগের আকর্ষণ ছিল ধার্মিকতার প্রতি, খ্রিস্টীয় মতবাদের প্রতি যা মূলত পাপমোচনের মতবাদ। দর্শন বা রাজনীতি বিষয়ক নয় ।
৪. চার্চ ও রাষ্ট্রের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব : মধ্যযুগে গির্জার প্রধান হিসেবে পোপ এবং রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সম্রাটের মধ্যে কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব রাষ্ট্রচিন্তাকে অনেক গুণে প্রভাবিত করে । একদিকে গির্জার প্রধান হিসেবে পোপ এবং অপরদিকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সম্রাট
উভয়েই জাগতিক ও আধ্যাত্মিক জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যত হয়। আর এটি থেকেই দ্বন্দ্ব কলহের সূত্রপাত ঘটে। এ সময় রাজনীতি ধর্মীয় ধ্যানধারণার বাইরে স্বতন্ত্র কোনো অস্তিত্ব প্রকাশ করতে পারেনি।
৫. দুই তরবারি তত্ত্ব : মধ্যযুগের শাসনব্যবস্থায় পোপ ও রাজার মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল অত্যন্ত প্রকট। তাই অনেক চিন্তাবিদ এই বিরোধ মীমাংসা এবং সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুই তরবারি তত্ত্বের কথা বলেছেন।
এই তত্ত্ব অনুসারে পার্থিব বিষয়ের শাসক ছিলেন সম্রাট এবং অপার্থিব বিষয়ের শাসক ছিলেন পোপ। যার এক তরবারির প্রতীক রাজা বা রাষ্ট্র, অন্যটির প্রতীক পোপ বা গির্জা।
কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর ছিল না। ফলে সমগ্র মধ্যযুগ জুড়ে পোপ ও সম্রাটের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে সমগ্র মধ্যযুগ ব্যাপী এক অস্থিতিশীল ও অরাজনৈতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
৬. খ্রিস্টধর্মের প্রাধান্য : মধ্যযুগে খ্রিস্টধর্মের প্রভাব এতো প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে, মানুষকে কেবল বাইবেল নির্দেশিত পথে চলতে বাধ্য করা হতো। যার ফলে মানুষ ধর্মীয় গণ্ডির বাইরের চিন্তার অবকাশ পায়নি।
অধ্যাপক ডানিং বলেন, রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে মধ্যযুগের ইতিহাসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইউরোপে রোমান সাম্রাজ্যের বাইরেও খ্রিস্টধর্মের প্রতিষ্ঠা এবং গির্জার অগ্রগতি সাধন করা।
৭. পোপতন্ত্র : পোপতন্ত্রের উত্থান মধ্যযুগের একটি তাৎপর্যমণ্ডিত বিষয়। পোপরা মনে করতেন, আইন হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার অভিব্যক্তি এবং রাজা ও কর্মচারীদের ক্ষমতা সীমিত এবং গির্জার ক্ষমতাই মুখ্য। যা অনেকেই অরাজনৈতিক ও অবৈজ্ঞানিক ব্যাপার বলে অভিহিত করেন।
৮. টিউটন জাতির প্রভাব : রোমানদের পরাজয়ের পর বর্বর জার্মান বা টিউটন উপজাতি মধ্যযুগে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করে। দৈহিক দিক দিয়ে দুর্র্ধষ টিউটনদের তেজ ও বিক্রম যদিও অতুলনীয় ছিল, তবুও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও প্রশাসনিক যোগ্যতার মাপকাঠিতে রোমানদের সাথে তাদের কোনো তুলনা করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে মধ্যযুগে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা বিকশিত হতে পারেনি ।
৯. রাজনীতি বিষয়ক পুস্তকের স্বল্পতা : রাজনীতি বিষয়ক পুস্তকের স্বল্পতা মধ্যযুগের রাজনৈতিক চেতনা বিকাশের অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে। এই সময় কয়েকটি রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হলেও তা ছিল প্রাচীন গ্রন্থগুলোরই পুনরাবৃত্তি। সেন্ট অগাস্টিন ও সেন্ট টমাস একুইনাস রাষ্ট্রদর্শনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও তা ছিল ধর্মকেন্দ্রিক। ফলে মধ্যযুগ ছিল অরাজনৈতিক ।
১০. স্টোয়িকবাদের প্রভাব : সমগ্র মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় স্টোয়িকবাদের প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণে লক্ষণীয় ছিল। স্টোয়িকবাদের প্রভাবে মধ্যযুগের রাজনৈতিক দর্শন, প্রাকৃতিক আইন, ঐশ্বরিক আইন, সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান প্রভৃতি ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী ছিল, যা অনেকটা অবৈজ্ঞানিক, অসৃজনশীল ও অরাজনৈতিক ছিল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মধ্যযুগের প্রথম অংশে রাষ্ট্রচিন্তা কেবল ধর্মীয় চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। এমনকি এ যুগের দ্বিতীয়ার্ধেও রাষ্টচিন্তা সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় প্রভাবের বাইরে ছিল না।
পার্থিব জগৎ ও রাজনৈতিক ব্যাপারে মধ্যযুগ কখনো মনোনিবেশ করেনি। ফলে সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান, ধর্মীয় কুসংস্কার, গোঁড়ামি, ক্ষমতার লোভ প্রভৃতি কারণে মধ্যযুগকে অরাজনৈতিক ও অসৃজনশীল বলে আখ্যায়িত করা হয়।
০৩. গির্জা বনাম রাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তার বা দ্বন্দ্বের কারণসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, মধ্যযুগে পোপ বনাম সম্রাটের আধিপত্য বিস্তারের কারণগুলো লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসকে আলোচনার সুবিধার্থে পণ্ডিতগণ সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা : প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ। আর মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যেকার বিরোধ।
গির্জা ও রাষ্ট্রের একগুঁয়েমি, অবাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিও নানা কারণে বিরোধ দানা বেঁধে ওঠে এবং এক সময় তা প্রবল আকার ধারণ করে। এককথায় মধ্যযুগে পোপ বনাম সম্রাট বা গির্জা বনাম রাষ্ট্র কেউ কারো অধীনে থাকতে চায়নি এবং প্রত্যেকে নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট ছিল। ফলে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছিল।
- আরো পড়ুন:- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি‘এরিস্টটল অতিসংক্ষিপ্ত PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি PDF
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
গির্জা বনাম রাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তার বা দ্বন্দ্বের কারণসমূহ : মধ্যযুগে গির্জা বনাম রাষ্ট্র অর্থাৎ পোপ বনাম সম্রাটের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার বা দ্বন্দ্বের নানাবিধ কারণ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. পথভ্রষ্টতা : পোপ ও সম্রাটের মধ্যে দ্বন্দ্বের অন্যতম একটি কারণ হলো পথভ্রষ্টতা। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ধর্ম ও রাজনীতি কোনোটি সঠিকভাবে নিজ নিজ পথে পরিচালিত হয়নি।
সম্রাট রাজকার্য অবহেলা করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়। গির্জার অনুসারীরা জনগণকে সৎ ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনের পরামর্শ প্রদান করতেন। কিন্তু দেখা যেত তারা নিজেরাই সরল ও সৎ জীবন পদ্ধতি ত্যাগ করে বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। পুরোহিতগণ এরূপ বিলাসিতার জন্য জনগণের ওপর নানারকম কূটকৌশল প্রয়োগ করতো।
২. গির্জাকে স্বতন্ত্র করার ইচ্ছা : গির্জার নিয়ন্ত্রকরা যখন দেখলেন যে, রাজশক্তির চেয়ে জনগণের ওপর তাদের প্রভাব অনেক বেশি সক্রিয় ও কার্যকর, তখন তারা গির্জাকে কাজে লাগাতে মনোযোগী হয়ে ওঠে।
পোপ ও সামন্তরা গির্জাকে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় তাছাড়া পোপ ও তার অনুসারীরা নিজেদেরকে অনেক মর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক বলে মনে করতেন।
তাই রাজশক্তির অধীনে থাকাকে তারা অবমাননাকর বলে ভাবতেন। এরূপ মানসিকতা থেকে জেগে উঠে স্বাধীন হওয়ার ও গির্জাকে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার বাসনা। ফলে রাজা তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এতে শুরু হয় পোপ ও সম্রাটের মধ্যকার দ্বন্দ্ব।
৩. জনসচেতনতার অভাব : পোপ ও সম্রাটের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হিসেবে সমসাময়িক কালের জনগণের অন্যতম অসচেতনাকে দায়ী করেছেন। ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস, নিরপেক্ষতা প্রভৃতি বিষয়ে সাধারণ মানুষ অজ্ঞ ছিল । এ সুযোগে পোপ ও সম্রাট উভয়ই নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলে বিরোধপূর্ণ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকত ।
৪. গির্জার সম্পদ বৃদ্ধি : মধ্যযুগে গির্জার পুরোহিত ও সামন্ত প্রভুরা উভয়ই রাজার দুর্বলতার সুযোগে রাষ্ট্রীয় দান ও অন্যান্য বেআইনি উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ আহরণ করে।
পুরোহিতগণ পার্থিব লোভ-লালসায় এত বেশি ন্যস্ত থাকতেন যে, তাদেরকে কোনোভাবেই ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি বলা যেত না। গির্জার এই বিলাসিতা দেশজুড়ে সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে।
৫. গির্জার ক্ষমতা হ্রাস : মধ্যযুগের প্রথমাংশে গির্জার ক্ষমতা ছিল অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু সামন্ততন্ত্রের প্রভাব ক্ষুণ্ন হওয়ার সাথে সাথে গির্জার শক্তি হ্রাস পায় এবং রাজার ক্ষমতা ও কর্তত্ব বৃদ্ধি পায়।
এ সময় জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা রাজার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। এ সুযোগে রাজা তার কর্তৃত্ব সুসংহত করতে এবং গির্জার ক্ষমতা সংকুচিত করতে সচেষ্ট হলে রাজার সাথে গির্জার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে ।
৬. গির্জার সম্পত্তিতে করারোপ : সম্রাট গির্জার সম্পত্তির ওপর করারোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে যাজকরা এতে বাধা সৃষ্টি করেন। তারা যুক্তি প্রদান করেন যে, গির্জার সম্পত্তি পরিচালনার ভার ঈশ্বর প্রদত্ত।
তাই ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতার ওপর পার্থিব রাজা বা সম্রাটের হস্তক্ষেপ থাকতে পারে না। তারা আরও বলেন, গির্জার সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয় ধর্মীয় কাজে ব্যয় করতে হবে। এই নিয়ে যাজক ও সম্রাটের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়
৭. যাজক সম্প্রদায়ের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ : মধ্যযুগীয় ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সম্পত্তি অর্জন ও তার সংরক্ষণ করার বাসনাই গির্জার পুরোহিত বা যাজক সম্প্রদায়কে বাধ্য করেছিল রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে।
যদিও প্রথমদিকে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েনি। ফলে পোপ ও অনুসারীরা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় সম্রাট অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন এবং পুরোহিতদের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য আগ্রহী হন । এতে রাজা ও পোপের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ ।
৮. ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার: মধ্যযুগের মানুষ কেবল যে ধর্মীয় মনোভাবাপন্ন ছিল তা নয়, কুসংস্কারাচ্ছন্নও ছিল। যাজকরা পরলোকের ভয় বা পাপ-পুণ্যের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে অর্থ ও আনুগত্য আদায় করতেন।
এটি ছিল তখনকার দিনের রীতি। তাছাড়া রাজার সাথে গির্জার বিরোধে জনগণ প্রায়ই গির্জার পক্ষ অবলম্বন করতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতি পরাক্রমশালী যাজকরা রাজাকে ধর্ম থেকে বহিষ্কার করতেন ।
এছাড়াও রাজার উত্তরাধিকারী কে হবেন যাজকরা তাও স্থির করে দিতেন। এতে যাজক সম্প্রদায়ের সাথে রাজার সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে।
৯. সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের ঘোষণা : সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিক নিজেকে পোপের প্রভাব থেকে মুক্ত করে বলেন যে, পার্থিব এবং অপার্থিব সব বিষয়েই তার অধিকার অপ্রতিহত ও চরম। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করেন।
কিন্তু পোপ চতুর্থ ইনোসেন্ট ফ্রেডারিকের এসব রাজকীয় দাবির প্রতিবাদ করে বলেন, সম্রাটকে পোপের নিকট থেকে ক্ষমতা লাভ করতে হবে এবং পোপের সাথে সহযোগিতা করেই এ ক্ষমতা ভোগ করতে হবে। পোপের এ ঘোষণা সম্রাটের সাথে দ্বন্দ্বের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমগ্র মধ্যযুগে ধর্মের নামে গির্জার শোষণ, সামন্ত প্রভুদের শোষণ, সর্বোপরি রাজার শাসন ও শোষণ শুরু হয়।
তাছাড়া গির্জার সাথে রাজার দীর্ঘস্থায়ী বিরোধের ফলে সমগ্র মধ্যযুগে কোনো সুস্পষ্ট ও সুসংহত রাষ্ট্রতত্ত্ব গড়ে ওঠতে পারেনি। এজন্য মধ্যযুগকে দীর্ঘ শোষণের যুগ বলেও অভিহিত করা হয়। এককথায় সমগ্র মধ্যযুগের ইতিহাস গির্জার ও রাষ্ট্র তথা পোপ ও সম্রাটের আধিপত্য বিস্তারের ইতিহাস।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। PDF অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর