PDF File সহ -সাধারণ বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : SSC- সাধারণ বিজ্ঞান হতে যেকোনো ধরনেরসৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয়া ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেন আপনার খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য সাধারণ বিজ্ঞান হতে গুরুপূর্ণ কিছু প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এসএসসি- SSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDF File সহ -সাধারণ বিজ্ঞান সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সমুহ:
প্রশ্ন -২৬ পৃথিবীতে জীবনের উৎপত্তির রেখাচিত্র নিম্নরূপ :
[শহীদ লে. জি.এম মুশফিক বীর উত্তম উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম]
ক. টেস্টটিউব বেবি বলতে কী বুঝ?
খ. নতুন প্রজাতি সৃষ্টির দুটি কারণ লেখ।
গ. রেখাচিত্রের ‘ক’ অংশটি আলোচনা কর।
ঘ. বিজ্ঞানী ল্যামার্ক দৃষ্টান্তের সাহায্যে ‘খ’ এর উপর মতবাদ দিলেও তা গৃহীত হয়নিÑ উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
২৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃত্রিম উপায়ে দেহের বাইরে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে প্রাথমিক ভ্রƒণ উৎপাদন করে তা স্ত্রী লোকের জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে যে শিশুর জন্ম দেয়া হয় তাই টেস্ট টিউব বেবি।
খ. নতুন প্রজাতি সৃষ্টির দুটি কারণ হলো :
১. মূল প্রজাতি থেকে পৃথক হয়ে যাওয়া।
২. সংকরায়ণ।
গ. জীবের অভিব্যক্তির প্রবাহ চিত্রানুসারে চিত্রের ‘ক’ অংশটি হলো প্রোটোজোয়া।
প্রোটোজোয়া হলো এককোষী সুগঠিত নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট জীব। এরা অতি ক্ষুদ্রাকার, তাই খালি চোখে এদেরকে দেখা যায় না। এদের চলন অঙ্গ ফ্ল্যাজেলা, সিলিয়া বা ক্ষণপদ। এদের খাদ্য অন্তঃকোষীয় পরিপাকের মাধ্যমে পরিশোষিত হয়। প্রতিকূল পরিবেশে এরা সিস্ট নামক বহিরাবরণ তৈরি করে বেঁচে থাকে।
মূলত এরা অকোষীয় ভাইরাস আদিকোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে উন্নত প্রকৃত কোষী জীব। বহুকোষী জীবদের মতো জৈবনিক প্রক্রিয়া এরা একটিমাত্র কোষ দিয়ে সম্পন্ন করে। এদের কিছু সদস্যের দেহে ক্লোরোফিল সৃষ্টি হওয়ায় এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে শুরু করল এবং পরিবেশে অক্সিজেন সৃষ্টি হলো।
ঘ. উদ্দীপকের প্রবাহচিত্রের খ অংশটি হলো বহুকোষী জীব।
ল্যামার্কের মতে কোনো জীবের জীবনকালে যেসব বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়, সেসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছু দৃষ্টান্ত ল্যামার্ক ফুটিয়ে তুলেছেন। যেমন :
১. ক্রমাগত পানিতে সাঁতার কাটার ফলে জলজ পাখির পায়ের আঙুলের অন্তর্বতী স্থানগুলোতে পাতলা চামড়া দ্বারা সংযুক্ত হওয়ায় লিপ্তপদে পরিণত হয়।
২. সাপের পূর্বপুরুষদের গিরগিটির মতো চারটি পা ছিল, যা ক্রমাগত অব্যবহারের ফলে বর্তমানের বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয়েছে।
৩. জিরাফের সুদীর্ঘ গ্রীবা, উঁচু গাছ থেকে পাতা সংগ্রহের জন্য যা অর্জিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরবর্তী বংশে প্রতিফলিত হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে অর্জিত বৈশিষ্ট্য যে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালিত হয় এর পক্ষে বংশগতিবিদগণ কোনো প্রমাণ পাননি। তাই বলা যায়, বহুকোষী জীব থেকে যে অর্জিত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতি সৃষ্ট সম্পর্কিত ল্যামার্কের মতবাদ যথার্থ নয়।
প্রশ্ন -২৭ নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জামান বিবর্তন অধ্যায়টি ভালো বুঝতে না পেরে তার বাবার কাছে যায়। বাবা সমসংস্থ বিবর্তন সম্পর্কিত প্রমাণটি বুঝিয়ে দিলেন। এরপর জামান তার বাবার কাছে বিবর্তন মতবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ল্যামার্কের মতবাদ ও ডারউইনের মতবাদ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। [মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল, সিরাজগঞ্জ]
ক. সেক্স ক্রোমোসোম কাকে বলে?
খ. বিবর্তন বলতে কী বোঝায়?
গ. বাবা কীভাবে বিবর্তন সম্পর্কিত উল্লিখিত প্রমাণটি ব্যাখ্যা করেন।
ঘ. বাবার বুঝিয়ে দেয়া মতবাদ দুটির মধ্যে কোনটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য? তুলনামূলক আলোচনা করে মতামত দাও।
২৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মানবদেহের প্রতি কোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম থাকে। এই ২৩ জোড়ার মধ্যে ২২ জোড়া নারী ও পুরুষে একই রকম, একে অটোজোম বলে। বাকি ১ জোড়া ক্রোমোসোমকে সেক্স ক্রোমোসোম বলে।
খ. পৃথিবীর উৎপত্তি ও জীবনের উৎপত্তির ধারাবাহিক ঘটনা প্রবাহে সবলদেহী জীব থেকে জটিলদেহী জীবের উৎপত্তিকে বিবর্তন বলে। পৃথিবীর উৎপত্তির সময় এককোষী বা আদিকোষী জীবের জন্ম হয়। কালের বিবর্তনে জটিলদেহী জীবের আবির্ভাব ঘটে। এই ঘটনা প্রবাহ বিবর্তন বা অভিব্যক্তি।
গ. জামানের বাবা সমসংস্থ অঙ্গ দ্বারা বিবর্তন ব্যাখ্যা করেন। আপাতদৃষ্টিতে আকৃতিগত পার্থক্য থাকলেও অভ্যন্তরীণ গঠনগত অস্থিবিন্যাস মৌলিক প্রকৃতির হয় সে সকল অঙ্গকে সমসংস্থ অঙ্গ বলে।
পাখির ডানা, বাদুড়ের ডানা, তিমির ফ্লিপার, সিলের অগ্রপদ, মানুষের হাত ইত্যাদি সমসংস্থ অঙ্গ। হিউমেরাস, রেডিও আলনা, কার্পাল, মেটাকার্পাল ও ফ্যালাঞ্জেস অস্থিগুলো উপর থেকে নিচের দিকে পরস্পর সজ্জিত রয়েছে। বহিরাকৃতিতে যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে তা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হওয়ার জন্যই ঘটেছে।
পাখি ও বাদুড়ের ডানা ওড়ার জন্য, ঘোড়ার অগ্রপদ দৌড়ানের জন্য, মানুষের হাত কোনো জিনিস ধরা ও অন্যান্য সৃজনশীল কাজের জন্য পরিবর্তিত হয়েছে। সমসংস্থ অঙ্গগুলো থেকে বোঝা যায় যে, সংশ্লিষ্ট অঙ্গ তথা জীবগুলো উৎপত্তিগতভাবে এক। যদিও সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার ফলে বর্তমানে তাদের গঠন বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
এভাবে জামানের বাবা সমসংস্থ অঙ্গের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দ্বারা বিবর্তনের প্রমাণটি ব্যাখ্যা করেন।
ঘ. জামানের বাবা বিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞানী ল্যামার্ক ও বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন এর মতবাদ ব্যাখ্যা করেন। বিবর্তন সম্পর্কে ল্যামার্কের প্রতিপাদ্যগুলো হলো :
১. অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহার জীবদেহে পরিবর্তন সূচিত করে।
২. পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে জীবের স্বভাব ও দৈহিক পরিবর্তন ঘটে।
৩. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশাণুক্রমের জন্য এবং প্রতিটি প্রজন্মে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জিত হওয়ায় ধীরে ধীরে একটি প্রজাতি থেকে অপর একটি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়।
ডারউইনের বিবর্তন সম্পর্কিত প্রতিপাদ্য হলো :
১. অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য।
২. পৃথিবীর আয়তন সীমিত হওয়ায় বাসস্থান ও খাদ্য সীমিত।
৩. জীবন সংগ্রামে সবলেরা দুর্বলদের পরাস্ত করে টিকে থাকে।
৪. কালক্রমে জীবদেহে অঙ্গসংস্থানিক পরিবর্তন ঘটে।
৫. প্রকৃতিতে সর্বদাই সবলেরা জয়ী হয়।
সুতরাং বলা যায় যে, জামানের বাবার বুঝিয়ে দেয়া মতবাদ দুটির মধ্যে ডারউইনের মতবাদটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
প্রশ্ন – ২৮ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
জিতুর বয়স ১৪ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে সে তার শরীরে ও চিন্তাভাবনায় কিছু পরিবর্তণ লক্ষ করছে যা সে বুঝতে পারছে না। এ কথাগুলো সে কাউকে জানাতেও পারছে না লজ্জা, ভয় ও সংকোচের কারণে। ধীরে ধীরে বাবা-মায়ের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার ফলে সে খারাপ ছেলেদের সাথে মিশতে শুরু করে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। একটা পর্যায়ে জিতুর বাবা-মা বুঝতে পারেন যে সে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। [অধ্যায় : ১ম ও ৩য়]
ক. বিবর্তনের বলিষ্ঠতম প্রমাণ কী?
খ. মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসা কীভাবে করতে হয়?
গ. জিতুর বাবা-মা কী দেখে বুঝলেন যে সে মাদকে আসক্ত? আলোচনা কর।
ঘ. জিতুর বাবা-মা কী ভূমিকা পালন করলে তার এই অবস্থা হতো না? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
২৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বিবর্তনের বলিষ্ঠতম প্রমাণ জীবাশ্মঘটিত প্রমাণ।
খ. কোনো ব্যক্তি ড্রাগের ওপর আসক্ত হলে তা বন্ধ করা বেশ কঠিন কাজ। কারণ ড্রাগ আসক্ত মানুষ দেহে মাদকের কুপ্রভাব বুঝতে পেরেও তা ছাড়তে পারে না। চিকিৎসা ব্যবস্থায় মাদকদ্রব্যে আসক্তি কমানো যায়, তবে সে ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি যদি সহযোগিতা না করে তাহলে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। মাদক নিরাময় হাসপাতাল অথবা কেন্দ্রে তাকে ভর্তি করতে হবে এবং খুব সহানুভূতির সাথে ড্রাগে আসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করতে হবে।
গ. জিতুর বাবা-মা তার মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখে বুঝলেন যে, সে মাদকে আসক্ত।
যে ব্যক্তি মাদকদ্রব্যে আসক্ত, তার মধ্যে কতগুলো লক্ষণ প্রকাশ পায়। এমন লক্ষণগুলো সাধারণত স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো
১) খাওয়ার প্রতি আকর্ষণ কমে যায়;
২) সবসময় অগোছালোভাব;
৩) দৃষ্টিতে অস্বচ্ছতা এবং চোখ লাল হওয়া;
৪) কোনো কিছুতে আগ্রহ নষ্ট হওয়া ও ঘুম না হওয়া;
৫) কর্মবিমুখতা ও হতাশা;
৬) শরীর থেকে অত্যধিক ঘাম নিঃসরণ;
৭) সবসময় নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখা;
৮) আলস্য ও উদ্বেগ ভাব;
৯) মনঃসংযোগ নষ্ট হওয়া, টাকা-পয়সা চুরি করা ও বাড়ির জিনিসপত্র উধাও করা ইত্যাদি।
উদ্দীপকের জিতুর মধ্যেও তার বাবা-মা উপরিউক্ত অস্বাভাবিক আচরণ ও লক্ষণগুলো দেখে বুঝতে পারেন যে, সে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
ঘ. আমার মত হলো, জিতুর বাবা-মা বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল ভূমিকা পালন করলে তার এই অবস্থা হতো না।
জিতু মাদকে আসক্ত। এর কারণ তার একাকীত্ব ও অসহায়ত্ব।
কোনো ব্যক্তির মাদকে আসক্তি নানাভাবে জাগতে পারে, যেমন : কৌতূহল, সঙ্গদোষ, হতাশা দূর করার জন্য, মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য, নিজকে বেশি কার্যক্ষম করার উদ্দেশ্যে, পরিবারে অশান্তি এবং পারিবারিক অভ্যাসগত। ১৪ বছর বয়সী জিতু বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে।
এ সময়ে টেস্টোটোরন নামক হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে তার ভিতরে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হতে থাকে। যেমন : গলার স্বর ভারী হওয়া, মুখে দাড়ি ও গোঁফ গজানো, দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি, রাতে ঘুমের মধ্যে বীর্যপাত বা স্বপ্নদোষ, মেয়েদের প্রতি আকর্ষণবোধ করা ইত্যাদি।
কিন্তু এসব সমস্যা সে কাউকে বলতে পারে না কারণ বাবা-মায়ের সাথে তার মানসিক দূরত্ব রয়েছে। ফলে একাকীত্ব, হতাশা, মানসিক যন্ত্রণা লাঘব ইত্যাদির আশায় সে খারাপ সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং ক্রমান্বয়ে মাদকে আসক্ত হয়। অথচ জিতুর বাবা-মা যদি এসময় তার পাশে থাকতেন তাহলে সে অসহায় বোধ করত না। জিতুর বাবা-মা এক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করতে পারতেন তা হলো Ñ
জিতু বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনগুলো উপলব্ধি করা।
এ পরিবর্তনগুলোর কারণ জিতুর কাছে ব্যাখ্যা করা।
জিতুকে বোঝানো যে এ সময় পরিবর্তনগুলো খুবই স্বাভাবিক।
খোলাখুলি সবকিছু আলোচনা করা ও বন্ধুসুলভ আচরণ করা।
মানসিক ও আবেগজনিত দিকসহ অন্যান্য সকল ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদান করা।
আমার মতে, জিতুর বাবা-মা উপরিউক্ত ভূমিকা পালন করলে সে একাকী ও অসহায় বোধ করত না এবং সঙ্গদোষে আক্রান্ত হয়ে মাদকাসক্ত হতো না। কাজেই বাবা-মায়ের সহানুভূতিশীল ও বন্ধুত্বসুলভ ভূমিকা থাকলে জিতুর এই অবস্থা হতো না।
প্রশ্ন -২৯ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
তানিশার বয়স ১৫ বছর। সে ইদানীং শারীরিকভাবে বেশ দুর্বলতা অনুভব করে। প্রতি মাসের নিয়মিত রক্তক্ষরণই এর কারণ। এ ছাড়া তার মানসিক ও আচরণগত অনেক পরিবর্তন হচ্ছে। [অধ্যায় : ৩য় ও ৪র্থ]
ক. কোন বয়সসীমাকে বাল্যকাল বলা হয়?
খ. কৈশিকজালিকা বলতে কী বোঝ?
গ. তানিশার দেহে যে উপাদানটির ঘাটতি হয়েছে তার কাজ বর্ণনা কর।
ঘ. তানিশার পরিবর্তনগুলো আলোচনা কর।
২৯ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ছয় থেকে দশ বছর বয়স পর্যন্ত বয়সসীমাকে বাল্যকাল বলা হয়।
খ. ধমনি ও শিরার সংযোগস্থলে অবস্থিত কেবল এক স্তরবিশিষ্ট এন্ডোথেলিয়াম দিয়ে গঠিত যে সূক্ষ্ম রক্তনালি জালকের আকারে বিন্যস্ত থাকে, সেগুলোকে কৈশিক জালিকা বলে। কৈশিক জালিকার রক্ত ও কলারয়ের মধ্যে ব্যাপন প্রক্রিয়ার দ্বারা পুষ্টিদ্রব্য, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, রেচন পদার্থ ইত্যাদির আদান-প্রদান ঘটে।
গ. তানিশার দেহে রক্তের ঘাটতি হয়েছে।
১৫ বছর বয়সী তানিশা বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে। এ সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের প্রভাবে তার ঋতুস্রাব ও মাসিক হয়। অর্থাৎ প্রতিমাসে নিয়মিত রক্তক্ষরণ হয় তার দেহ থেকে, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু তানিশার ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণটি স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে বেশি মাত্রায় হয়। ফলে তার দেহে রক্তের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নিচে রক্তের সাধারণ কাজগুলো বর্ণনা করা হলো :
১) শ্বাসকার্য : রক্ত অক্সিজেনকে ফুসফুস থেকে টিস্যু কোষে এবং টিস্যু কোষ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে ফুসফুসে পরিবহন করে। লোহিত কণিকা ও রক্তরস প্রধানত এ কাজটি করে।
২) হরমোন পরিবহন : অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করে।
৩) খাদ্যসার পরিবহন : দেহের সঞ্চয় ভাণ্ডার থেকে এবং পরিপাককৃত খাদ্যসার দেহের টিস্যু কোষগুলোতে বহন করে।
৪) বর্জ্য পরিবতন : নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থগুলোকে বৃক্কে পরিবহন করে।
৫) উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ : দেহে তাপের বিস্তৃতি ঘটিয়ে দেহের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৬) রোগ প্রতিরোধ : দেহে রোগজীবাণু প্রবেশ করলে মনোসাইট ও নিউট্রোফিল শ্বেত কণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণুকে গ্রাস করে ধ্বংস করে। লিম্ফোসাইট শ্বেত কণিকা অ্যান্টিবডি গঠন করে দেহের ভেতরের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং বাইরের থেকে জীবাণু দ্বারা আক্রমণকে প্রতিহত করে।
ঘ. তানিশার পরিবর্তনগুলো হলো মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন।
তানিশার বয়স অনুযায়ী তার এখন বয়ঃসন্ধিকাল চলছে। এ সময়ে ছেলেমেয়েদের হরমোনজনিত কারণে শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। যেমন : তানিশার শরীরে মাসিক ও ঋতুস্রাবসহ অন্যান্য পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়াও তার মানসিক ও আচরণগত যে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে তা নিচে আলোচনা করা হলোÑ
মানসিক পরিবর্তন
ক) অন্যের, বিশেষত নিকটজনের মনোযোগ, যতœ ও ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছা তীব্র হওয়া;
খ) আবেগ দ্বারা চালিত হওয়ার প্রবণতা;
গ) ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হওয়া;
ঘ) বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়া;
ঙ) নেশাদ্রব্য, যেমন : সিগারেটের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়া;
চ) মানসিক পরিপক্কতার পর্যায় শুরু হওয়া;
ছ) পরনির্ভরতার মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে আত্মনির্ভর হওয়ার পর্যায় শুরু হওয়া।
আচরণগত পরিবর্তন
ক) প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করা;
খ) সে যে একজন আলাদা ব্যক্তি এ বিষয়টি বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা;
গ) প্রত্যেক বিষয়ে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা;
ঘ) দুঃসাহসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে প্রবৃত্ত হওয়া;
ঙ) নিজেকে পরিপাটিরূপে সাজিয়ে রাখা।
প্রশ্ন -৩০ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
৫ বছরের শিহাব রাতে কম দেখে এবং প্রায়ই নানারকম অসুখে ভোগে। তার বড় ভাই শাকিলের এসব সমস্যা নেই। কিন্তু তার কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটছে। তার আচরণগুলোও দিন দিন বদলে যাচ্ছে। তাদের বাবা দুজনকেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার শিহাবের ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা ও শাকিলের হরমোনজনিত সমস্যার কথা বলেন। [অধ্যায় : ১ম ও ৪র্থ]
ক. বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো কয় রকম?
খ. কিশোরীদের গর্ভধারণের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো ব্যাখ্যা কর।
গ. শিহাবের শরীরে কোন ভিটামিনের ঘাটতি রয়েছে? আলোচনা কর।
ঘ. শাকিলের সমস্যাটি বিশ্লেষণ কর।
৩০ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো তিন রকম।
খ. কিশোরী গর্ভধারণের ফলে তাদের মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং অশান্তিতে ভোগে। শারীরিক দিক থেকেও চলাফেরা করতে সমস্যায় পড়ে। বিদ্যালয়ে পড়ার সময় যদি কোনো মেয়ে গর্ভধারণ করে তবে সে লজ্জায় আর বিদ্যালয়ে যায় না। ফলে পড়াশুনা ছেড়ে দেয়।
গ. শিহাবের শরীরে ভিটামিন অ এর ঘাটতি রয়েছে। যার কারণে সে রাতে ভালো দেখতে পায় না ও অসুখে ভোগে। অর্থাৎ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও চোখের ত্রুটি রয়েছে। এটা হয় ভিটামিন অ এর অভাবে। ভিটামিন অ যেসব কাজ করে সেগুলো হলো :
১) দেহের স্বাভাবিক গঠন ও বর্ধন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার কাজ নিশ্চিত করে।
২) দেহের বিভিন্ন কলা যেমনÑ ত্বক, চোখের কর্নিয়া ইত্যাদিকে স্বাভাবিক ও সজীব রাখে।
৩) অস্থি ও দাঁতের গঠন, দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখে।
৪) দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
৫) দেহে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
ঘ. শাকিল বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে।
এ সময়ে ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এ সময় ছেলেমেয়েদের যে সকল পরিবর্তন সাধিত হয় তার জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যেগুলোকে বলা হয় হরমোন। হরমোন শরীরের ভেতরে স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়।
ছেলে ও মেয়েদের শরীরের হরমোন এক নয়। মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য দায়ী দুই ধরনের হরমোন। এগুলো হলো ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন। এসব হরমোনের প্রভাবে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি, বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের আকার বৃদ্ধিসহ অন্যান্য পরিবর্তন ঘটে।
অপরদিকে এ বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য দায়ী হলো টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন এর প্রভাবে ছেলেদের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। মুখে দাঁড়ি ও গোঁফ গজায়, দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি হয়।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, শাকিলের বয়ঃসন্ধিকালে বিভিন্ন সমস্যার জন্য হরমোনজনিত পরিবর্তন দায়ী।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।