(PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.২ : এরিস্টটল, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
(PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.৪ : সেন্ট টমাস একুইনাস
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০১. সেন্ট টমাস একুইনাসের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, সেন্ট টমাস একুইনাসের জীবন ও কর্মপরিচিতি উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগ হলো রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্ধকার যুগ। এ যুগে যে কয়জন দার্শনিক তাদের নিজেদের অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সেন্ট টমাস একুইনাস।
তিনি তার নিজের চিন্তাধারা ও লেখনীর মাধ্যমে মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার সর্বাপেক্ষা সফল ও উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। অধ্যাপক ডানিং (Dunning ) এর মতে, “মধ্যযুগের দ্বিতীয়ার্ধের পণ্ডিতদের মধ্যে এবং সমগ্র পণ্ডিতকূলের মধ্যে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি।”
সেন্ট টমাস একুইনাসের জীবন ও কর্ম : নিম্নে সেন্ট টমাস একুইনাসের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
জন্ম ও শৈশব : সেন্ট টমাস একুইনাস ১২২৭ মতান্তরে ১২২৫ খ্রিস্টাব্দে নেপলস শহরের উপকণ্ঠে এক সম্ভ্রান্ত ও বিত্তবান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিত্তবান পরিবারে জন্মগ্রহণ করার দরুন তার শৈশবকাল প্রাচুর্যের মধ্যে অতিবাহিত হয়।
একুইনাস অগাধ জ্ঞান, তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। যেকোনো জটিল বিষয় উপলব্ধি করার প্রখর ক্ষমতা ছিল তার। বলা হয়, একটা বিষয় একবার পড়লে তিনি কোনোদিন তা ভুলতেন না।
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ফ্রি
- আরো পড়ুন:- অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি‘এরিস্টটল অতিসংক্ষিপ্ত PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি PDF
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
শিক্ষাজীবন : একুইনাসকে তার পিতামাতা পাঁচ বছর বয়সে বিনিডিক্টাইন বিদ্যাপিঠে ভর্তি করেছিলেন। সেন্ট টমাস একুইনাস নেপলসের দ্বিতীয় ফ্রেডরিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় বছর অধ্যয়ন করেন।
তিনি ১৯ বছর বয়সে পিতামাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সন্ন্যাসপন্থি যাজকের দলে যোগ দেন। এ যাজক দলের নাম ছিল ডোমিনিকান গোষ্ঠী । বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণের পর সেন্ট টমাস একুইনাস শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন।
অতঃপর উচ্চতর দর্শন চর্চার জন্য ১২৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্যারিস গমন করেন। প্যারিসে অবস্থানকালে একুইনাস মহান আলবার্টের সাহচর্যে আসেন। অচিরেই তিনি আলবার্টের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং তার কাছে দর্শনশাস্ত্র সমাপ্ত করেন।
জীবনের বাকি সময়টুকু তিনি প্যারিসেই কাটিয়ে দেন। প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তিনি রোম, বোলোগনা, অরভিয়েটা, পেরুজিয়া প্রভৃতি স্থানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।
রচনাবলি : সেন্ট টমাস একুইনাস ৪৭ বছর বয়সে বেশ কয়েকটি অনবদ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং এ স্বল্পকালীন জীবনে তিনি ছোট বড় মোট ৭০টি গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। তার গ্রন্থাবলি ছিল প্রধানত দুই ধরনের। যথা : ১. দর্শনতত্ত্ব সম্পর্কিত গ্রন্থসমূহ ও ২. রাষ্ট্রতত্ত্ব সম্পর্কিত গ্রন্থ। তার শ্রেষ্ঠ রচনাবলি হলো ‘সুম্মা থিওলোজিকা’।
এটি তার দর্শন সম্পর্কিত রচনাবলির মধ্যে অন্যতম । এটি তাকে খ্যাতিমান দার্শনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এছাড়া তার অন্য রচনাবলির মধ্যে ”Commentaries on The Politics of Aristotle’ অন্যতম।
মোটকথা টমাস একুইনাস তার জীবদ্দশায় এসব রচনা শেষ করে যেতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার শিষ্যগণ এসব রচনা অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন ।
মৃত্যু : ১২৭৪ খ্রিস্টাব্দে এই মহান দার্শনিক নেপলস যাওয়ার পথে লায়নস্ নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যুগধর্ম বা যুগের দাবিকে উপেক্ষা না করেও সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে একুইনাস যে পরিবর্তন এনেছেন সমকালীন যুগের আলোকে তা অভূতপূর্ব।
যে ধর্মীয় চিন্তা মধ্যযুগকে আচ্ছন্ন করেছিল, খ্রিস্টধর্ম ও ধর্মীয় মতবাদের স্রোতে সে যুগ সম্পূর্ণরূপে ভেসে গেছে। সে যুগেই বিপরীতমুখী না হলেও অনেকটা স্বতন্ত্র চিন্তার খোরাক জুগিয়েছিলেন তিনি।
০২. সেন্ট টমাস একুইনাসের রাষ্ট্রদর্শন মূল্যায়ন কর ।
অথবা, সেন্ট টমাস একুইনাসের রাষ্ট্রতত্ত্বটির ধারণা দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : সেন্ট টমাস একুইনাস মধ্যযুগীয় দার্শনিক হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রচিন্তায় যে অবদান রেখেছেন তা তাকে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। তিনি তার রাষ্ট্রদর্শনে গ্রিসের খ্যাতনামা দার্শনিক এরিস্টটলের দর্শনকে অনুসরণ করে মধ্যযুগের
রাজনীতি থেকে অন্ধকার দূর করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন এবং বহুলাংশে সফলও হয়েছেন। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় একমাত্র একুইনাস পূর্ণাঙ্গরূপে রাষ্ট্রচিন্তাকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন ।
সেন্ট টমাস একুইনাসের রাষ্ট্রদর্শন মূল্যায়ন : মধ্যযুগীয় দার্শনিকদের মধ্যে একুইনাসের রাষ্ট্র সম্পর্কিত মতবাদটি একটি তাৎপর্যবহুল মতবাদ। তিনি তার রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা বিশ্লেষণে মধ্যযুগের অন্য দার্শনিকদের মতো রাষ্ট্রকে পাপাচারের ফলশ্রুতি বলে ভাবেননি।
তিনি এই ক্ষেত্রে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলকে অনুসরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “সামাজিকতা ও রাজনৈতিকতা মানুষের সহজাত ধর্ম। এ স্বভাবের কারণেই মানুষ সংঘবদ্ধ জীবনযাপন করে এবং গড়ে তোলে সমাজ ও রাষ্ট্র।
তার মতে, রাষ্ট্র একটি কল্যাণকর সংস্থা। আর কল্যাণকর সংস্থা হিসেবে রাষ্ট্রের পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত।” মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় প্রতিটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
একুইনাস এরিস্টটলের মতো রাষ্ট্রকে একটি স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান বলে অভিহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক বার্কি (Prof. Berki), “Aquinas considered that man was naturally a social and political animal who always lived in organized communities, states. The state is natural association.” একুইনাস তার রাষ্ট্রদর্শনে রাষ্ট্রের সাথে গির্জার সম্পর্ক, আইনতত্ত্ব, প্রাকৃতিক আইন, সরকার ও সরকারের শ্রেণিবিভাগ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন।
রাষ্ট্র সম্পর্কে একুইনাস আরও বলেন, সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির লোক বাস করে। তাদের সবার স্বার্থ এক রকম নয় তারা বিভিন্নভাবে নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য সমাজে বসবাস করে। ফলে তাদের মধ্যে স্বার্থ ও দ্বন্দ্বের কারণে সংঘর্ষ লেগে থাকত ।
এসব স্বার্থ-দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ দূর করার জন্য একটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই কর্তৃপক্ষই হলো রাষ্ট্র। এ সমালোচনা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট লক্ষণীয় যে, তিনি তার রাষ্ট্রের আলোচনায় রাষ্ট্রকে পাপাচারের ফল হিসেবে না দেখে কল্যাণের প্রতিভূ হিসেবে দেখেছেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট টমাস একুইনাস তার রাষ্ট্রদর্শনে যুক্তির মাধ্যমে সবকিছু বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। একুইনাস তার রাষ্ট্রদর্শনে এরিস্টটলবাদের সাথে খ্রিস্টধর্মের সমন্বয় ঘটিয়ে স্কলাস্টিসিজমকে পরিপূর্ণ করে তুলেছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে তিনি মধ্যযুগের চিন্তাধারার সর্বশ্রেষ্ঠ মুখপাত্র ছিলেন। তাই তার মতবাদে প্রতিফলিত হয়েছে মধ্যযুগের তিনটি মহান চিন্তাসূত্র বিশ্বজনীনতা, পাণ্ডিত্যবাদ এবং এরিস্টটলীয় দর্শন।
০৩. সেন্ট টমাস একুইনাসের আইনের শ্রেণিবিভাগ কর।
অথবা, একুইনাসের আইন তত্ত্বটি আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগীয় ধর্মকেন্দ্রিক চিন্তাধারাকে গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনের সাথে সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তা হলো একুইনাসের আইনতত্ত্ব। একুইনাসের রাষ্ট্রদর্শনের উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো তার আইন সম্পর্কিত ধারণা।
তিনি এরিস্টটলীয় দর্শনের সাথে খ্রিস্টধর্মের সমন্বয় সাধনের অংশ হিসেবে আইনতত্ত্বকে উপস্থাপন করেন। এ আইনতত্ত্বের মাধ্যমে একুইনাস ঈশ্বর, মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে একটি যুক্তিসংগত সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছেন।
একুইনাসের আইনতত্ত্ব : সেন্ট টমাস আইনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, আইন হচ্ছে ক্রিয়াকর্মের পদ্ধতি ও নিয়ম । এ পদ্ধতি ও নিয়মের দ্বারা মানুষ কোনো কাজ করতে প্রলুব্ধ হয় অথবা কোনো কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে। এ সংজ্ঞাটিকে টমাস ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, মানুষের ক্রিয়াকর্মের নিয়ম ও মাপকাঠি বা পদ্ধতি হচ্ছে যুক্তি।
আইনের সাথে যুক্তির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাই তিনি বলেন, “Law is something pertaining of reason” তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র হচ্ছে মানুষের জোট এবং এ জোট ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, যদি নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা ও সম্প্রীতি না থাকে এবং এটি সম্ভব কেবল আইনের দ্বারা। অর্থাৎ, তিনি আইনকে সমাজকল্যাণে বাস্তবায়িত করার একটা পদ্ধতি হিসেবে দেখেছেন ।
একুইনাসের আইনের শ্রেণিবিভাগ : সেন্ট টমাস একুইনাস আইনের সংজ্ঞা প্রদানের সাথে সাথে এর শ্রেণিবিভাগ করেছেন। একুইনাস তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ঝঁসসধ ঞযবড়ষড়মরপধ’ তে আইনকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন। নিম্নে সংক্ষেপে উক্ত আইনসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. শাশ্বত আইন : একুইনাসের মতে, শাশ্বত আইন হলো এমন আইন যা বিশ্বপ্রভু কর্তৃক বিঘোষিত এবং যার দ্বারা বিশ্ব চরাচর প্রতিপালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, যার কোন পরিবর্তন হয় না। একুইনাস শাশ্বত আইনকে সর্বোচ্চ আইনের মর্যাদা দিয়েছেন। এ আইনের নির্দেশ অন্যান্য আইনকে মেনে চলতে হবে।
শাশ্বত আইনকে সমাজবহির্ভূত কোনো বিষয় বলে ধারণা করা বাঞ্ছনীয় নয়। এ আইনের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা। একুইনাসের মতে, শাশ্বত আইন সর্বোচ্চ আইন এবং অন্যান্য আইন এ আইনের অধীন ।
২. প্রাকৃতিক আইন : মূলত শাশ্বত আইনেরই প্রকাশিত রূপ। মানুষের সহজাত প্রবণতা এবং ন্যায়বোধের ধারণা হতে প্রাকৃতিক আইনের উৎপত্তি হয়েছে বলে একুইনাস মনে করেন।
তার মতে, যাবতীয় পার্থিব বিষয় ব্যতীত স্বৰ্গীয় মুক্তি প্রতিফলন হলো প্রাকৃতিক আইন প্রকৃতিগতভাবেই মানুষ যেসব গুণ অর্জন করে সেগুলোর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সে নিরাপদ জীবনযাপন করে। একুইনাস মনে করেন একমাত্র প্রাকৃতিক আইনের সাহায্যে এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
৩. ঐশ্বরিক/দৈব আইন : একুইনাস ঐশ্বরিক আইন ঈশ্বরের পরম আশীর্বাদ বলে অভিহিত করেছেন। ঐশ্বরিক আইন সম্পর্কে একুইনাসের যে ধারণা তা অতি চমৎকার। ঐশ্বরিক আইন বলতে তিনি দৈব আদেশকে বুঝিয়েছেন। দৈব আদেশকে স্বাভাবিক আইনের বিরোধী বলে মনে করা উচিত নয়।
একুইনাস দৈব আইনকে স্রষ্টা কর্তৃক বিরোধ নিষ্পত্তির একটি মাধ্যম বলে অভিহিত করেছেন। সেন্ট টমাস একুইনাস দৈব আইনকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : ১. আদি বিধি ও ২. নব বিধি।
৪. মানবিক আইন : একুইনাস মানুষের পার্থিব কল্যাণের কথা বিবেচনা করে মানবিক আইনের অবতারণা করেছেন। মানবিক আইন সম্পূর্ণ মানুষের তৈরি এবং এ আইন সমাজের সকল আইনকে অন্তর্ভুক্ত করে। সৎ ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য মানুষ তার নিজস্ব যুক্তিবোধ থেকে যে আইন করে তা মানবিক আইন ।
এ আইনে মানুষের নিজস্ব চিন্তা চেতনার বিকাশ লক্ষ করা যায়। এ আইনে আধ্যাত্মিকতার কোনো স্থান নেই। মানবিক আইন হলো ইতিবাচক এবং এর পিছনে জনগণের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট টমাস একুইনাসের আইনতত্ত্বের সমালোচনা সত্ত্বেও আইন সম্পর্কে তার চিন্তাধারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি অভিন্ন কল্যাণ ও যুক্তিবাদিতাকে প্রাধান্য দিয়ে আইনের ভিত্তি অনেকখানি পাকাপোক্ত করে গেছেন। একুইনাসের প্রণীত চার আইন আপাতদৃষ্টিতে পৃথক মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এদের উৎস ও লক্ষ্য এক ও অভিন্ন।
০৪. একুইনাসের মতে ‘শাশ্বত আইন’ কী?
অথবা, সেন্ট টমাস একুইনাসের শাশ্বত আইনের স্বরূপ উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা তৎকালীন প্রচলিত মধ্যযুগীয় প্রবল ধর্মীয় ভাবধারায় প্রভাবিত দর্শন রীতির আবহাওয়ার মধ্যে জন্মগ্রহণ করেও সেন্ট টমাস একুইনাস আইন, ন্যায়বিচার, রাষ্ট্রনীতি ও রাষ্ট্রীয় সংগঠন প্রভৃতি বিষয়ের ওপর বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন। রাষ্ট্রচিন্তায় একুইনাসের আইনতত্ত্বের আলোচনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার আইনতত্ত্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শাশ্বত আইন ।
একুইনাসের মতে, শাশ্বত আইন : একুইনাসের মতে, শাশ্বত আইন হলো এমন আইন যা বিশ্বপ্রভু কর্তৃক বিবেচিত এবং যার দ্বারা বিশ্ব চরাচর প্রতিপালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় এবং যার কোনো পরিবর্তন হয় না। তার মতে, সমগ্র বিশ্বজগৎ এই আইন দ্বারা শাসিত হচ্ছে। শাশ্বত আইন আর ঈশ্বরের প্রজ্ঞা একই ।
এ আইন সর্বব্যাপী। এই আইনের বাইরে কারও অবস্থান নেই । স্যাবাইন বলেন, It is the eternal plan of divine wisdom by which the whole creation is ordered” এ আইন নিখিল বিশ্বের একটা অংশ। তার মতে, শাশ্বত আইন ও দৈব প্রজ্ঞার বিচার বুদ্ধি প্রায় সমার্থক।
দৈব প্রজ্ঞা শাশ্বত আইনের আকারে পার্থিব সমাজে প্রচলিত। টমাস শাশ্বত আইনকে সর্বোচ্চ আইনের মর্যাদা দিয়েছেন। এ আইনের নির্দেশ অন্যান্য আইনকে মেনে চলতে হবে। এই আইন ঈশ্বরের প্রজ্ঞা দ্বারা পরিচালিত হয় বলে সাধারণ মানুষ একে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না।
স্রষ্টার প্রজ্ঞা ও সদাচার মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হয় এবং এ ক্ষমতাবলে সে শাশ্বত আইনে অংশগ্রহণ করতে পারে । অতএব শাশ্বত আইনকে সমাজবহির্ভূত কোনো বিষয় বলে ধারণা করা বাঞ্ছনীয় নয়। এ আইন মানুষের দৈহিক প্রকৃতির এবং এর সামগ্রিকতা মানুষের ধারণার বাইরে।
তবে এটা মানুষের বুদ্ধির কাছে অপরিচিত নয় মানুষ, জিন, ফেরেশতা, কীটপতঙ্গ, বনলতা, সর্বোপরি প্রাণহীন ও প্রাণী জাতীয় সৃষ্টিসহ কোনোটিই এ আইনের বাইরে নয়। সমগ্র বিশ্বে পরিব্যাপ্তি ও ক্রিয়াশীল দৈব প্রজ্ঞার বহিঃপ্রকাশই শাশ্বত আইন ।
এ আইন সৃষ্টিকর্তার অন্তর্জগতে বিদ্যমান; যা দ্বারা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। শাশ্বত আইন সকল মানবিক আইনের ঊর্ধ্বে এবং সার্বিকভাবে তা মানুষের জ্ঞানের ঊর্ধ্বে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আইন সম্পর্কে একুইনাসের চিন্তাধারা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। তার আইনতত্ত্বে শাশ্বত আইনটি একটি চিরন্তন আইন।
এটি মূলত একটি দৈব আইন যা শাশ্বত আইনের আকারে পার্থিব সমাজে প্রচলিত রয়েছে। একুইনাসের মতে, এটি সব আইনের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে এবং সমগ্র বিশ্বজগৎ এ শাশ্বত আইন দ্বারা শাসিত হচ্ছে।
০৫. সেন্ট টমাস একুইনাসকে ‘মধ্যযুগের এরিস্টটলত বলা হয় কেন?
অথবা, “সেন্ট টমাস একুইনাস ছিলেন মধ্যযুগের রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যমণি।” – সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : এরিস্টটলের চিন্তাধারার মাধ্যমে পরবর্তীকালে যেসব দার্শনিক প্রভাবিত হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সেন্ট টমাস একুইনাস। তিনি মধ্যযুগীয় দার্শনিক হওয়া সত্ত্বেও এরিস্টটলকে অনুসরণ করে তার রাষ্ট্রদর্শন প্রণয়নের চেষ্টা করেন । এসব কারণে বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পণ্ডিতবর্গ একুইনাসকে মধ্যযুগীয় এরিস্টটল বলে অভিহিত করার প্রয়াস পেয়েছেন ।
সেন্ট টমাস একুইনাসকে ‘মধ্যযুগের এরিস্টটল’ বলার কারণ : সেন্ট টমাস একুইনাসকে মধ্যযুগীয় এরিস্টটল বলার কারণ নিম্নে দেওয়া হলো—
১. রাষ্ট্রের উৎপত্তি : রাষ্ট্রের উৎপত্তির ক্ষেত্রে একুইনাস এরিস্টটলকে অনুসরণ করে বলেন যে, রাষ্ট্র একটি স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠান এবং মানুষের সহজাত ও ইতিবাচক সামাজিক প্রবৃত্তিই রাষ্ট্রের উৎপত্তির প্রধান কারণ।
তিনি আরও বলেন, মানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধনই রাষ্ট্রের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য সেবার ভিত্তিতে পারস্পরিক চুক্তিবোধের ফলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত ও সুশৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছে।
২. সরকারের শ্রেণিবিভাগ : সরকারের শ্রেণিবিভাগ করতে গিয়ে একুইনাস এরিস্টটলকে পুরোপুরি অনুসরণ করেছেন। তিনি সরকারকে উত্তম ও বিকৃত সরকার এ দু’ভাগে ভাগ করেছেন। তার পূর্বসূরি এরিস্টটলও সরকারের শ্রেণিবিভাগে উত্তম ও বিকৃত এ দু’ধরনের সরকারের কথা উল্লেখ করেছেন।
৩. আইনের ব্যাখ্যা : আইনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও একুইনাস এরিস্টটলকে অনুসরণ করেন। এরিস্টটল বলেন যে, যুক্তি ও ইচ্ছা উভয়ই আইনের উৎস। একুইনাসও একথা সমর্থন করে আইনের ব্যাখ্যা দেন ।
৪. দাসপ্রথাকে সমর্থন : একুইনাস এরিস্টটলের মতো দাসপ্রথাকে সমর্থন করেন। উভয়েই মনে করেন যে, সমাজ গঠনে দাসদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তবে দাস প্রথার উৎপত্তি সম্পর্কে উভয়ে ভিন্ন ধারণা পোষণ করেন। এরিস্টটলের মতে, প্রকৃতিগত বৈষম্যই দাসপ্রথার মূল কারণ। কিন্তু একুইনাস মনে করেন, পাপাচারের ফলশ্রুতি হিসেবে দাসপ্রথার সৃষ্টি হয়েছে।
৫. শ্রেণিভিত্তিক শ্রমবিভাগ : এরিস্টটলের মতো একুইনাসও শ্রেণির ওপর ভিত্তি করে শ্রমবিভাগ করেছেন। তারা উভয়েই সব শ্রেণির মানুষকে স্বাধীনভাবে কাজ ও নিজ নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একুইনাস মধ্যযুগের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজনীতিতে সমাজ কাঠামো বিশ্লেষণে এরিস্টটলের যে আরোহ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন তা রীতিমতো একটি বিস্ময়কর ব্যাপার।
তিনি তার রাজনৈতিক চিন্তাধারা বিশ্লেষণে সর্বদাই এরিস্টটলকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ কারণে পরবর্তীকালে দার্শনিকরা তাকে মধ্যযুগীয় এরিস্টটল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDFফ্রি)অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি অতিসংক্ষিপ্ত MCQ
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) রচনামূলক প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ (PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-(PDFফ্রি) অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ
- আরো পড়ুন:-সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:-রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বেরধারণা(PDFফ্রি)
০৬. সেন্ট টমাস একুইনাস ও সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রচিন্তার সাদৃশ্য লেখ।
অথবা, সেন্ট টমাস একুইনাস ও সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রচিন্তার সাদৃশ্য উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাজনৈতিক দর্শনে সেন্ট টমাস একুইনাস ও সেন্ট অগাস্টিনের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা সনাতন গ্রিক ও রোমান সভ্যতা এবং খ্রিস্টীয় সভ্যতার সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে মানব সমাজের জন্য তাদের অভয়বাণী উচ্চারণ করেন।
এর মধ্যে সেন্ট টমাস একুইনাসের বেশ কয়েকটি অনবদ্য রচনা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ‘সুম্মা থিওলোজিকা’ তার দর্শন সম্পর্কিত রচনার মধ্যে অন্যতম। আবার সেন্ট অগাস্টিনের ”The City of God” রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। রাষ্ট্রচিন্তায় তাদের গভীর অবদান থাকলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান সেন্ট টমাস।
একুইনাস ও সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রচিন্তার সাদৃশ্যসমূহ :
রাষ্ট্রচিন্তায় সেন্ট টমাস একুইনাস ও সেন্ট অগাস্টিনের তুলনামূলক আলোচনার সাদৃশ্যসমূহ উল্লেখ করা হলো—
১. রাষ্ট্র ও গির্জার ক্ষেত্রে : সেন্ট টমাস একুইনাস বলেছেন, একজন সৎ নাগরিক হতে হলে তাকে একজন সৎ খ্রিস্টান হতে হবে । চার্চ ও রাষ্ট্র উভয়ই সে লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম। অন্যান্য খ্রিস্টীয় যাজকদের মতো সেন্ট টমাস একুইনাসও চার্চের সর্বাত্মক নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের কথা বলেছেন।
রাষ্ট্রের লক্ষ্য চার্চের উদ্দেশ্যকে সার্থকভাবে সফল করা, কেননা পার্থিব প্রশান্তি চিরন্তন প্রশান্তির প্রথম সোপান। এভাবে সেন্ট অগাস্টিন ও সেন্ট টমাস একুইনাস রাষ্ট্র ও গির্জার ক্ষেত্রে ধারণা পোষণ করেন এবং প্রাধান্য দেন ।
২. রাষ্ট্র ও সরকার সেন্ট টমাস: একুইনাস রাষ্ট্র সম্পর্ক এরিস্টটলের পথ অনুসরণ করলেও শেষে খ্রিস্টীয় তত্ত্বের বাণী দ্বারা সম্পূর্ণ করে । তার মতে, রাষ্ট্র একটি স্বাভাবিক সংস্থা এবং এর উৎপত্তিমূলে আছে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের সামাজিক কল্যাণের জন্য এ পৃথিবীতে রাষ্ট্রের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। কারণ পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য রাষ্ট্রই কেবল মেটাতে পারে।
এভাবেই সেন্ট অগাস্টিন ও সেন্ট টমাস একুইনাস উভয়ই রাষ্ট্রকে পার্থিব জীবনকে সুন্দর, সৎ, সামাজিক নিরাপত্তা, সুষ্ঠু অর্থনৈতিক অবস্থা গঠন ও সামাজিক কল্যাণের জন্য গ্রহণ করেছেন ।
৩. দাসপ্রথা: অগাস্টিন মনে করতেন যে, দাসত্ব হচ্ছে এক প্রকার শাস্তি। সমসাময়িককালের সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে অগাস্টিন একে ন্যায়সংগত বলে বিবেচনা করেছেন। একুইনাসও দাস প্রথা সমর্থন করেন।
একুইনাস বিশ্বাস করেন যে, দাসত্ব একান্তভাবেই স্বাভাবিক। উভয়ই দাসপ্রথাকে রাষ্ট্রীয় সংগঠনের অস্তিত্ব ও সমৃদ্ধির জন্য ন্যায়সংগত বলে মনে করেছেন।
৪. ধর্মতত্ত্বের জ্ঞানের ক্ষেত্রে : অগাস্টিন বলেন যে, কোনো দেবতার ইচ্ছা বা অনিচ্ছার জন্য অথবা, কোনো আশীর্বাদ বা অভিশাপের জন্য কোনো সাম্রাজ্য ধ্বংস হতে পারে না।
রোমের পতন সম্পর্কে অগাস্টিন মনে করেন, নিঃধর্মীর অবস্থার কবল থেকে রোমবাসীদের অব্যহতি দেয়ার জন্যও সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পার আলোকে সকলকে সঞ্জীবিত করার জন্য রোমের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। শাসকদের লোভ লিপ্সাই ছিল তার কারণ।
এভাবে অগাস্টিন ধর্মতত্ত্ব ও খ্রিস্টীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে, একুইনাস বিশ্বাস করেন যে, দৃশ্যমান এ প্রাকৃতিক জগতের ঊর্ধ্বে আছে আরেক বৃহত্তম জগৎ যা অনুধাবন করতে হলে ধর্মতত্ত্বের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
তিনি মনে করেন প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও দর্শন যারা শুরু করে ধর্মতত্ত্ব তাকে সার্থক করে। তাই উভয় দার্শনিকের লেখনীতে আমরা ধর্মতত্ত্বের প্রতি জ্ঞান দেখতে পাই।
৫. ন্যায়নীতি, শান্তি ও আইনের ক্ষেত্রে : একুইনাস বিশ্বাস করেন যে, যদি রাষ্ট্রকে তার নাগরিকগণকে নৈতিকভাবে উন্নত এবং তাদেরকে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য লাভে সাহায্য করতে হয় পর তাহলে শুধু আইনুযায়ী রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহার বা প্রয়োগ করা কর্তব্য। আইন হলো মূলত যুক্তিরই বহিঃপ্রকাশ।
একুইনাস চার প্রকার আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ন্যায়নীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই সম্পর্কে সেন্ট অগাস্টিন বলেছেন, ন্যায়নীতি ব্যতীত কোনো সঠিক রাষ্ট্র গঠন হতে পারে না এবং যে রাষ্ট্রের ন্যায়নীতি নেই সেখানে আইনও থাকতে পারে না। আর ন্যায়নীতি শুধুমাত্র সে রাষ্ট্রে রূপায়িত হতে পারে যে রাষ্ট্র খ্রিস্টীয় চার্চের নির্দেশের অনুসারী।
উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উভয় দার্শনিকের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও তাদের রাষ্ট্রচিন্তায় মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। কারণ তারা দু’জনই মধ্যযুগের দার্শনিক ছিলেন আর সে সময় ধর্ম নিয়েই বেশি আলোচনা ছিল।
অগাস্টিন প্লেটোকে অনুসরণ করেন এবং তিনি ধর্মীয় বিষয়ের প্রতি কিছুটা হলেও গোঁড়া ছিলেন। কিন্তু টমাস একুইনাস ধর্মের গোঁড়ামি থেকে কিছুটা হলেও বিচ্যুত হয়ে ধর্মের সাথে রাজনীতিকে সমন্বয় করে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর