PDF ফ্রি অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও PDF ফ্রি অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.২ : এরিস্টটল, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDF ফ্রি অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.৩ : সেন্ট অগাস্টিন
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
খ-বিভাগঃ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
০৬. ”The City of God’ ‘ গ্রন্থ অনুযায়ী অগাস্টিনের রাষ্ট্রদর্শন সংক্ষেপে আলোচনা কর ।
অথবা, ”The City of God’ ‘ গ্রন্থটি অবলম্বনে সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রদর্শন সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর রোমান জাতির জাতীয় ঐক্য ও সংহতিতে চরম সংকট দেখা দেয়। বহিরাগত জাতিগুলো এসে রোমান সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে চরম আঘাত হানে ।
বাট্রান্ড রাসেলের মতে, “দর্শনের সুদীর্ঘ ইতিহাসে অগাস্টিন প্রথম দার্শনিক, যার বিশুদ্ধ দার্শনিক চিন্তা বাইবেল দ্বারা প্রভাবিত।” রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে সেন্ট অগাস্টিন তার এই গ্রন্থ রচনা করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন ।
”The City of God” গ্রন্থ অনুযায়ী সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রদর্শন : সেন্ট অগাস্টিন সুদীর্ঘ তেরো বছর পরিশ্রম করে ৪২৬ খ্রিস্টাব্দে তার বিখ্যাত ”De Civitate Dei’ ev ‘The City of God’ ‘ রচনা করেন। রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
নিম্নে এই গ্রন্থ অবলম্বনে অগাস্টিনের রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. ঐক্য ও সংহতির প্রতীক : গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে যে সংঘর্ষ দেখা দিয়েছিল তার অবস্থানের সূচনা করে “”The City of God’ ‘ অগাস্টিন বলেন, রাষ্ট্রকে গির্জার অধীনে এনে দেশের সর্বত্র খ্রিস্টধর্মের প্রাধান্য স্থাপন করা হবে।
কেননা, মানুষ ধর্মীয় মনোভাপন্ন ও সৎ না হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হলে রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না । – তাই “The City of God” রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতির কথা বলে ।
২. রাষ্ট্রীয় শান্তিশৃঙ্খলা স্থাপন : অগাস্টিনের মতে, রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হলো শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন করা। রাষ্ট্র ও জনগণ খ্রিস্টধর্ম থেকে বিচ্যুৎ হলে সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে।
কেননা রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো ধর্মীয় আনুগত্য। ধর্মবোধ না থাকলে মানুষ পাপাচারে নিমগ্ন হয় এবং বিশৃঙ্খল আচরণ করে। তাই অগাস্টিন এই গ্রন্থের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
৩. ধর্ম ও রাজনীতি: অগাস্টিনের আবির্ভাব লগ্নে মানুষের মূল্যবোধ ও ধর্মের প্রতি আসক্তি কমে যাওয়ায় তিনি ‘সিটি অব গড’ রচনা করেন। তিনি এ গ্রন্থে রাষ্ট্র ও খ্রিস্টধর্মকে পাশাপাশি রেখে অভিমত ব্যক্ত করে বলেন,
ব্যক্তির চরিত্র গঠন ও সমাজকে সুন্দর করতে হলে রাজনীতির চেয়ে ধর্ম ও মূল্যবোধ অধিকতর প্রয়োজন। ধর্ম বর্জিত রাজনীতি মানুষকে কু-পথে পরিচালিত করে । তাই তিনি এ দুটি বিষয়কে একত্রিত করতে চেয়েছিলেন ।
৪. দুই যুগের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনাকারী : গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর ন্যায়বিচার ধারণাকে সেন্ট অগাস্টিন তার এই গ্রন্থে খ্রিস্টধর্মের সাহায্যে বিশ্লেষণ করে নিজের রাষ্ট্রের জন্য ন্যায়বিচার ও শান্তির কথা তুলে ধরে দুই যুগের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করেন। এজন্য অনেকে অগাস্টিনের এই গ্রন্থকে দুই যুগের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনাকারী গ্রন্থ বলে অভিহিত করেছেন।
৫. সৎ এবং অসৎ এর প্রতীক : এই গ্রন্থে অগাস্টিন দুই রাষ্ট্রের কথা বলেছেন। যথা পার্থিব রাষ্ট্র এবং বিধাতার রাষ্ট্র। অগাস্টিনের মতে, বিধাতার রাষ্ট্র হলো সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা ও যাবতীয় মঙ্গলের প্রতীক।
পক্ষান্তরে জড়বাদী সুখ-দুঃখ, কামনা-বাসনার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে পার্থিব রাষ্ট্র। প্রকৃতপক্ষে ‘সিটি অব গড’ হচ্ছে এই সৎ ও অসৎ এর প্রতীক এবং এর মাধ্যমে তিনি সমাজ, তথা রাষ্ট্রীয় জীবনের অসত্য বা অন্যায়ের ওপর সৎ বা ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালিয়েছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসের যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছিল ঞযব ঈরঃু ড়ভ এড়ফ.’ তার মধ্যে অন্যতম। এ গ্রন্থে অগাস্টিন ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তিশৃঙ্খলা, একতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
এ সম্পর্কে অধ্যাপক স্যাবাইন বলেন, “His great book, ‘The City of God’ was written to defend Christianity against the Pagan church that it was responsible for the decline of Roman power.
- আরো পড়ুন:-অনার্স: সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট অগাস্টিন: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ফ্রি
- আরো পড়ুন:- অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
০৭. সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগকে অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ বলে অভিহিত করা হলেও সেন্ট অগাস্টিন তার উদ্ভাবিত বিভিন্ন তত্ত্বের মাধ্যমে এ যুগের তমসাচ্ছন্ন রাজনৈতিক অবস্থায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন অগাস্টিন তার বিখ্যাত ঞযব ঈরঃু ড়ভ এড়ফ’ গ্রন্থে রাষ্ট্র সম্পর্কিত মতবাদ প্রদান করেন ।
সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা : সেন্ট অগাস্টিন তার বিখ্যাত ‘সিটি অব গড’ গ্রন্থে রাষ্ট্র ও গির্জার পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে তার রাষ্ট্র সম্পর্কিত মতবাদ ব্যাখ্যা করেন।
অগাস্টিন মনে করেন, রাষ্ট্র ও সমাজে দুই শ্রেণির মানুষ বসবাস করে। এক শ্রেণি পরম আত্মসুখে অন্ধ থাকে এবং অন্য শ্রেণি সৃষ্টিকর্তার ওপর সব ছেড়ে দিয়ে ঈশ্বর ধ্যানে মগ্ন থাকে।
যার কারণে অগাস্টিন তার বিখ্যাত গ্রন্থে দুই রাষ্ট্রতত্ত্ব, অর্থাৎ পার্থিব রাষ্ট্র ও ঈশ্বরের রাজত্ব সম্পর্কে ধারণা দেন। তার মতে, ঈশ্বরের রাজ্যের মানুষ বিবেক ও যুক্তিবাদ দ্বারা পরিচালিত আর পার্থিব রাষ্ট্রের মানুষ পাপে নিমগ্ন। নিম্নে সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্র সম্পর্কিত এই ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ক. পার্থিব রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা : সেন্ট অগাস্টিনের মতে, সৃষ্টির শুরুতে পার্থিব রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। কারণ পার্থিব রাষ্ট্রের উৎপত্তির উৎস হলো আদি মানব আদমের স্বর্গ হতে বিতাড়ন ।
স্বর্গ হতে আদমের বিতাড়নের ফলে যে পাপের সৃষ্টি হয় সেই পাপের ফলই হচ্ছে পার্থিব রাষ্ট্র। যতদিন পৃথিবীতে পাপ চলমান থাকবে ততদিন পর্যন্ত পার্থিব রাষ্ট্র টিকে থাকবে। এ রাষ্ট্র বর্ণ, গোত্র ও বিভিন্ন শ্রেণিভিত্তিক। তাছাড়া পার্থিক রাষ্ট্র জাতীয়তার আদলে সীমাবদ্ধ এবং বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত ।
সেন্ট অগাস্টিন আরও বলেন, পার্থিব রাষ্ট্র হলো আত্মপ্রেমের অভিব্যক্তি । এই রাষ্ট্রের প্রধান ভিত্তি হলো ক্রোধ, ব্যক্তি স্বার্থ এবং অহংকার। এ রাষ্ট্রের নাগরিকরা সবসময় নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অপরের জন্য প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসা এদের মধ্যে সচরাচর দেখা যায় না। কারণ এরা স্বার্থপর এবং বিধাতার নাম উপেক্ষা করে চলে।
অগাস্টিন বলেন, পার্থিব রাষ্ট্রের জনগণ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এদের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা ও মানবতাবোধ লক্ষ করা যায় না। ফলে এরূপ রাষ্ট্রের লোকেরা প্রকৃত সুখ- শান্তি লাভ করতে পারে না ।
খ. স্বর্গরাজ্য বা বিধাতার রাষ্ট্র : সেন্ট অগাস্টিনের মতে, বিধাতার রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে মানুষের আত্মা। এ রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি হলো এক ও অভিন্ন স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন । তাই এ রাষ্ট্রের নাগরিকেরা অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ এবং আত্মসুখ বিসর্জন দিয়ে ঈশ্বরের প্রতি আসক্ত হন।
এ রাষ্ট্র মঙ্গলময়, ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট যা চিরভাস্বর ও জ্যোতির্ময়। অগাস্টিন মনে করেন। স্থায়ী সুখ কেবলমাত্র বিধাতার রাষ্ট্রেই সম্ভব। যার কারণে বিধাতার সান্নিধ্য লাভকে এর অধিবাসীরা চরম প্রাপ্তি বলে মনে করেন। অগাস্টিন আরও বলেন, বিধাতার রাষ্ট্র জাতীয়তার সংক্ষিপ্ত সীমাবদ্ধতার দ্বারা আবদ্ধ নয়। স্বর্গের দেবদূতগণ এবং যেসব পুণ্যাত্ম অতীতে হারিয়ে গেছেন তারাও এর সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট অগাস্টিন একমাত্র দার্শনিক যিনি তার সুচিন্তিত লেখনী ও তত্ত্বের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় চিন্তাধারার গোড়াপত্তন করেন। বিশেষ করে রোমান সম্রাজ্যের পতনের পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জাতি কর্তৃক রোমান সভ্যতার সংস্কৃতি, আচার-আচরণ ও জীবনযাত্রার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা প্রতিরোধ করা ও রোমান জাতির ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় অগাস্টিন তার রাষ্ট্রতত্ত্ব প্রদান করেন ।
০৮. সেন্ট অগাস্টিনের শান্তিতত্ত্ব আলোচনা কর।
অথবা, সেন্ট অগাস্টিনের শান্তি সম্পর্কিত মতবাদটি সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগে যেসকল দার্শনিক অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে পোপপন্থি দার্শনিক সেন্ট অগাস্টিন অন্যতম। আর সেন্ট অগাস্টিন তার বিখ্যাত ‘সিটি অব গড’ গ্রন্থে যেসব তত্ত্ব প্রদান করেছেন তার মধ্যে শান্তি সম্পর্কিত মতবাদ অন্যতম। সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রদর্শনের একটি বিশেষ অংশজুড়েই আছে তার শান্তি নীতি ।
সেন্ট অগাস্টিনের শান্তিতত্ত্ব : সেন্ট অগাস্টিন ন্যায়বিচার তত্ত্বের মতো শান্তি সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ প্রদান করেছেন । সাধারণত যুদ্ধের অনুপস্থিতিকে শান্তি বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু সেন্ট অগাস্টিন শান্তির যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা ইতিবাচক।
তিনি বলেন, “শত্রু ছাড়া যেমন যুদ্ধ হয় না তেমনি সৌভ্রাতৃত্ব বা মিলনের অংশীদার ছাড়া শান্তি হয় না। প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে সকল মানুষ ও জীবজন্তু এ ইতিবাচক শান্তির অন্বেষণেই লিপ্ত থাকে।” অগাস্টিন যে বিশ্বশান্তির ধারণা দিয়েছেন খ্রিস্টপূর্ব যুগের কোনো প্যাগান রাষ্ট্রে তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
এর অর্থ অবশ্য এ নয় যে, এসব রাষ্ট্রে শান্তির পরিবর্তে যুদ্ধের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কারণ প্লেটো তার ”The Laws’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “যে ব্যক্তির মূল উদ্দেশ্য যুদ্ধ করা সে যথার্থ রাষ্ট্রনায়ক নয়।
একজন প্রকৃত আইন প্রণেতা শান্তির উদ্দেশ্যে যুদ্ধ পরিচালনা করেন না, যুদ্ধের উদ্দেশ্যে শান্তি নয়।” তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সকল রাষ্ট্র যদি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রে পরিণত হয় তবে যুদ্ধ বলে কোনো কিছু থাকবে না। কিন্তু অগাসি যে শান্তির ধারণা দিয়েছেন তা সংঘর্ষের অনুপস্থিতিজনিত শান্তি নয়।
তা হচ্ছে একটি অভিন্ন ব্যবস্থাধীন সকল সদস্যের ঐক্যজনিত শান্তি । অগাস্টিন মনে করেন, বিশ্বজনীন দৈবরাষ্ট্র ছাড়া সত্যিকার শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। পার্থিব রাষ্ট্রগুলোতে যে শান্তি প্রচলিত আছে, তা সত্যিকারের শান্তি নয় ।
এ শান্তি হচ্ছে খণ্ড শান্তি, বিশ্বশান্তি নয় । বিশ্বশান্তির জন্য বিশ্বজনীন রাষ্ট্র প্রয়োজন এবং সে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিবেন গির্জার প্রতিনিধি পোপ এম. বি. ফস্টার M. B. Foster অগাস্টিনের বিশ্বশান্তি সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেছেন, “যে ব্যবস্থায় সকল মানুষ এক স্রষ্টা প্রেমের বন্ধনসূত্রে পরস্পর সক্রিয়ভাবে একতাবদ্ধ তা-ই হচ্ছে অগাস্টিনের বিশ্বশান্তি।
এটা শুধু যুদ্ধের অনুপস্থিতি নয়, কিংবা বৈধ নিয়মাবলির প্রয়োগ সংক্রান্ত নিছক ধৈর্য বিধানও নয়।” প্রখ্যাত রাষ্ট্রচিন্তাবিদ জে. পি. সুধা (J. P. Suda) এর মতে, “To Augustine universal peace means a system in which all men are united with one
another by their common love for God, it is something highly different from more absence of war or peace produced by a system of legal relations as in a state”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট অগাস্টিন মধ্যযুগের অশান্ত পরিবেশের মধ্যে তার শান্তি তত্ত্ব প্রচারের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। যদিও অগাস্টিনের শান্তি তত্ত্বটি নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে তথাপি মধ্যযুগে শান্তি তত্ত্ব প্রচার করে তিনি যে স্রোতধারা প্রবাহিত করেছেন তা পরবর্তীকালে বিভিন্ন দার্শনিক তাদের ন্যায়তত্ত্বের ভিত্তিরূপে গ্রহণ করেছেন ।
০৯. সেন্ট অগাস্টিনের ন্যায়ধর্ম ও শান্তিতত্ত্বটি আলোচনা কর।
অথবা, সেন্ট অগাস্টিনের ন্যায়ধর্ম ও শান্তিতত্ত্ব সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লেখ ।
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের ইতিহাসে যেসকল দার্শনিক রাষ্ট্রচিন্তায় অসামান্য অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে সেন্ট অগাস্টিন অন্যতম। তিনি খ্রিস্টধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার রাজনৈতিক দর্শন আলোচনা করেছেন।
সেন্ট অগাস্টিন তার বিখ্যাত ”The City of God” গ্রন্থে যেসব তত্ত্ব প্রদান করেছেন তার মধ্যে ন্যায়ধর্ম ও শান্তি সম্পর্কিত মতবাদ অন্যতম।
সেন্ট অগাস্টিনের ন্যায়ধর্ম ও শান্তিতত্ত্ব : সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্র সম্পর্কিত মতবাদের মধ্যে ন্যায়ধর্ম ও শান্তিতত্ত্বের গুরুত্ব অপরিসীম।
নিম্নে অগাস্টিনের ন্যায়ধর্ম বা ন্যায়বিচার ও শান্তি নীতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
ক. ন্যায়ধর্ম সেন্ট অগাস্টিনের স্বর্গীয় রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো ন্যায়ধর্ম। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর পরে অগাস্টিনই প্রথম দার্শনিক যিনি ন্যায়বিচার সম্পর্কে মৌলিক ও তথ্যবহুল আলোচনা করেন।
ন্যায়বিচার সম্পর্কে অগাস্টিন বুঝিয়েছেন কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দ যখন ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি বিধান করে তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং উক্ত ব্যবস্থা কর্তৃক আরোপিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচতেন থাকে তখন বলা যায়, উক্ত প্রতিষ্ঠানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানের সদস্যবৃন্দ সকলেই ন্যায়পরায়ণ।
কিন্তু উক্ত প্রতিষ্ঠান যদি সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান না হয়ে উচ্চতর কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশ বিশেষ হয় তবে এ ন্যায়বিচার চূড়ান্ত ন্যায়বিচার হতে পারে না। এ ন্যায়বিচার হবে আপেক্ষিক ন্যায়বিচার। তাই অগাস্টিন বলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বজনীন রাষ্ট্র ব্যতীত অন্য কোনো সমাজের প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না ।
খ. শান্তিতত্ত্ব : অগাস্টিনের ন্যায়ধর্মের ন্যায় অরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলো শান্তিতত্ত্ব। সাধারণত যুদ্ধের অনুপস্থিতিকে শান্তি বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু অগাস্টিন শান্তির যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা ইতিবাচক। তার মতে, “শত্রু ছাড়া যেমন যুদ্ধ হয় না তেমনি সৌভ্রাতৃত্ব বা মিলনের অংশীদার ছাড়া শান্তি হয় না।”
প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে সকল মানুষ ও জীবজন্তু এ ইতিবাচক শান্তির অন্বেষণেই লিপ্ত। তিনি বলেন, বিশ্বজনীন দৈবরাষ্ট্র ব্যতীত সত্যিকার শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
পার্থিব রাষ্ট্রগুলোতে যে শান্তি প্রচলিত আছে, তা সত্যিকারের শান্তি নয় এ শান্তি হচ্ছে খণ্ড শান্তি, বিশ্বশান্তি নয়। বিশ্বশান্তির জন্য বিশ্বজনীন রাষ্ট্র প্রয়োজন এবং সে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিবেন গির্জার প্রতিনিধি তথা পোপ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সেন্ট অগাস্টিন সমাজে ন্যায়ধর্ম ও শান্তিতত্ত্ব প্রতিষ্ঠায় তার বিধাতার রাষ্ট্রের ধারণাটি তুলে ধরেছেন। যদিও অগাস্টিনের ন্যায়ধর্ম ও শান্তিতত্ত্ব উভয়ই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তথাপি মধ্যযুগের রাজনৈতিক দর্শনে তিনি তার এই তত্ত্ব প্রদান করে তৎকালীন সামাজিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
১০. সেন্ট অগাস্টিনের ‘দুই তরবারি তত্ত্ব’ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সেন্ট অগাস্টিনের ‘দুই তরবারি তত্ত্ব’ সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের ইতিহাসে যে কজন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন তাদের মধ্যে সেন্ট অগাস্টিন অন্যতম। মধ্যযুগের রাজনৈতিক ইতিহাসে তেমন কোনো গ্রন্থ রচিত না হলেও অগাস্টিনের ‘দি সিটি অব গড’ গ্রন্থটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।
এ গ্রন্থের একটি উল্লেখযোগ্য তত্ত্ব হলো ‘দুই তরবারি তত্ত্ব’। অগাস্টিন তৎকালীন খ্রিস্টীয় সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তার এই তত্ত্ব প্রদান করেন।
- আরো পড়ুন:- অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি‘এরিস্টটল অতিসংক্ষিপ্ত PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি PDF
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, প্লেটো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- প্লেটো: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি, রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স: রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDFফ্রি)
সেন্ট অগাস্টিনের ‘দুই তরবারি তত্ত্ব’ : সেন্ট অগাস্টিন ছিলেন মধ্যযুগের একজন পোপপন্থি রাষ্ট্র দার্শনিক। এজন্যই তিনি তার তত্ত্বসমূহে খ্রিস্টান ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাকে সর্বোচ্চ স্থান প্রদানে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তবে তিনি গির্জার কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দিলেও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বকে অস্বীকার করেননি।
মূলত তিনি রাষ্ট্র ও গির্জার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জোর প্রচেষ্টা চালন। তার এ নীতির ওপর ভিত্তি করে গির্জা ও রাষ্ট্র, একে অপরের কাজে হস্তক্ষেপ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার ব্যাপারে যে ঘোষণা দেন তাই দুই তরবারি তত্ত্ব’ হিসেবে অভিহিত যদিও
অগাস্টিন তার রাজনৈতিক তত্ত্বগুলোতে রাষ্ট্র ও গির্জাকে দুটি স্বতন্ত্র ও পৃথক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করেছেন তথাপি খ্রিস্টীয় যাজকদের মতে, রাষ্ট্র ও গির্জা দুটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি ঐক্যবদ্ধ ব্যবস্থার দুটি দিক হলো গির্জা ও রাষ্ট্র।
গির্জা এবং এর পুরোহিত মানুষের আধ্যাত্মিক বা পারলৌকিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষের মুক্তির দিশারী হিসেবে কাজ করে। পক্ষান্তরে পার্থিব জীবনের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে রাজা বা সম্রাটগণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে।
অর্থাৎ রাষ্ট্র ও গির্জা দুটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কাজের ধরনও স্বতন্ত্র প্রকৃতির। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করে থাকে। ক্ষমতার এই দ্বৈত নীতির ভিত্তিতেই সেন্ট অগাস্টিন পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ‘দুই তরবারি তত্ত্বের’ ধারণা প্রদান করেন । এক্ষেত্রে অগাস্টিন খ্রিস্টীয় ধর্মযাজকদের মনোভাব কাজে লাগান।
তাদের বিশ্বাসের সাথে সুর মিলিয়ে অগাস্টিন বলেন, পার্থিব ও আধ্যাত্মিক যাবতীয় ক্ষমতার উৎস হলো সৃষ্টিকর্তা তিনি কর্তৃত্বের স্বরূপ হিসেবে একখানি তরবারি পোপকে এবং অন্যটি সম্রাটকে প্রদান করেছেন।
সম্রাট তার তরবারি ক্ষমতা দ্বারা মানুষের বাহ্যিক জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণারোপ করবে। পক্ষান্তরে পোপ তার তরবারি দ্বারা মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনের নিয়ন্ত্রণ করবে। এই তত্ত্বের মূলকথা হলো পার্থিব জগতের সব কিছুর প্রধান কর্তা বা প্রভু হলেন রাজা বা সম্রাট আর আধ্যাত্মিক জগতের নিয়ন্ত্রণকর্তা বা প্রভু হলেন গির্জা বা তার প্রতিনিধি পোপ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো ‘দুই তরবারি তত্ত্ব’। পোপ প্রথম গেলাসিয়াস সর্বপ্রথম এই তত্ত্ব প্রদান করেন বলে একে দী গেলাসিয়াস তত্ত্ব বলেও অভিহিত করা হয়।
সেন্ট অগাস্টিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে গির্জার স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, আধ্যাত্মিক ব্যাপারে গির্জা এবং পার্থিব ব্যাপারে রাষ্ট্রের স্বায়ত্তশাসন, একের ব্যাপারে অন্যের হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি এ নীতি প্রবর্তন করেন।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। PDF ফ্রি অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর