PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ও PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: পর্ব:- ১ (প্রাচীন যুগ ) অধ্যায় ১, গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা
- পর্ব – ১ ( প্রাচীন যুগ )
- অধ্যায় ২ – সক্রেটিস
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৩
গ – বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০১. সক্রেটিসের দর্শন ও দর্শন চর্চা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর ।
অথবা, গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের দর্শন ও দর্শন চর্চা পদ্ধতির বিবরণ দাও ।
উত্তর ভূমিকা : মানবজীবনে বিকাশ সাধনে যেসব দার্শনিকের দর্শন ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে সক্রেটিসের দর্শন আদি ও অতি প্রাচীন। সক্রেটিসের দর্শন গ্রিক নগররাষ্ট্রের নব যুগের সূচনা করে ।
তার রাষ্ট্রদর্শন আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অপরিহার্য। তিনি ছিলেন গ্রিক দর্শনের সর্বপ্রথম দার্শনিক যাকে সর্বকালের সেরা জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাতারে সামিল করা হয়। তার দর্শনের মূল কথাই ছিল, “Know thyself.” অর্থাৎ, নিজেকে জানো।
তিনিই প্রথম ব্যক্তি যে কি না সব সমস্যা আরোহিত জ্ঞানের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করতেন । সক্রেটিসের দর্শন ও দর্শন চর্চা পদ্ধতি : নিম্নে সক্রেটিসের
দর্শন ও দর্শন চর্চা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
সক্রেটিসের দর্শন : গ্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এক নবযুগের সৃষ্টিকারী দার্শনিক হলেন সক্রেটিস। তৎকালীন গ্রিসের সার্বিক ব্যবস্থার ওপর নৈতিকতাবিরোধী সোফিস্ট গোষ্ঠী যে আঘাত হানে তারই প্রতিবাদস্বরূপ জন্ম নেয় সক্রেটিসের দর্শন
সক্রেটিস ছিলেন একজন নৈতিক দার্শনিক। মানবজীবন ও বিভিন্ন আচরণের মধ্যে পার্থক্যই ছিল তার দর্শনের মূল বিষয়বস্তু। কোনো কাজ কেন মানুষ সম্পাদন করে, নীতিনৈতিকতা, সততা প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত অর্থ এবং সংজ্ঞাই সক্রেটিস খুঁজে বেড়াতেন।
সক্রেটিস দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, সৃষ্টিকর্তা একটি মহান উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তাকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার দর্শনের মূলকথাই ছিল, “Know thyself.” অর্থাৎ, নিজেকে জানো।
তিনি মনে করতেন, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে জানা সম্ভব। কেননা মানুষ নিজেকে জানতে না পারলে তার দায়িত্ব জানতে পারবে না।
কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতি বিষয়ের মধ্যে তার দর্শনের | সর্বপ্রথম কথাই হলো জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে জানো।
সক্রেটিসের দর্শনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো তিনি জ্ঞানকে পুণ্যের সাথে তুলনা করেছেন। তার মতে, “Virtue is knowledge.” অর্থাৎ, জ্ঞানই পুণ্য।
তিনি বিশ্বাস করতেন যার যতবেশি জ্ঞান থাকবে সে ততবেশি পুণ্যের অধিকারী হবে। কেননা জ্ঞান মানুষকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে। কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা তা চিহ্নিত করতে সহায়তা করে।
সক্রেটিসের দর্শনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো নৈতিক তত্ত্ব। এ দর্শনের মাধ্যমে তিনি নৈতিকতার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করতেন। তিনি মনে করেন, আত্মা মানুষের দেহে বন্দি অবস্থায় থাকে মানুষ মারা যাওয়ার পর সেই বন্দি আত্মার মুক্তি ঘটে এবং স্বর্গীয় সুখ লাভ করে।
সক্রেটিস তার দর্শনে তৎকালীন এথেন্সের গণতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন। কেননা অভিজ্ঞতা ও ভাগ্যনির্ধারণের ভিত্তিতে তখন গণতন্ত্র পরিচালিত হতো; যেখানে দর্শনের প্রেক্ষিতে জ্ঞান ও নৈতিকতার স্থান ছিল না। তাই তিনি অভিজাততন্ত্রকে পছন্দ করতেন এবং মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করতেন।
সক্রেটিসের দর্শন চর্চা পদ্ধতি : সক্রেটিস তার দর্শন চর্চায় প্রধানত দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। যথা : ১. জ্ঞান প্রচার পদ্ধতি ও ২. জ্ঞান অর্জন পদ্ধতি।
১. জ্ঞান প্রচার পদ্ধতি : সক্রেটিস সমাজ, মানুষ ও নৈতিকতা সম্পর্কিত জ্ঞান প্রচারকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সৃষ্টিকর্তা তাকে এক বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। আর তা হলো মানুষকে সঠিক পথ দেখানো।
আর এ দায়িত্বকে তিনি পুণ্যের কাজ বলে মনে করতেন। তিনি মানুষের জীবনের করণীয়, বর্জনীয়, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, পাপপুণ্য প্রভৃতি বিষয়ে যেখানে লোক পেতেন সেখানে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করতেন।
তিনি তার জ্ঞান প্রচারের ক্ষেত্রে এক বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করতেন যাকে বলা হয় ‘Dialectic Method’ বা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি। তার এ দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ছিল ‘আলোচনা ও কথোপকথনভিত্তিক’। তিনি মনে করতেন, সঠিক জ্ঞান অর্জনের উপায় হলো নিয়মমাফিক কথোকপকথনের অভ্যাস করা।
কোনো একটি বিষয়ে তিনি বিতর্ক শুরু করতেন এবং এর সমাধান না আসা পর্যন্ত তিনি বিতর্ক চালিয়ে যেতেন এ পদ্ধতিকে ‘সক্রেটিসের আইরনি’ (Irony of Socrates) বলেও অভিহিত করা হয়।
তার বিতর্ক শুরু করার পদ্ধতিটি ছিল অন্যরকম। তিনি প্রথমে কোনো বিষয়ে তার অজ্ঞতা স্বীকার করে কোনো ব্যক্তির নিকট ন্যায়নীতি, সত্য-মিথ্যা, সুন্দর, প্রেম প্রভৃতি বিষয়ে জানতে চাইতেন আর এসব বিষয়ে তিনি তীক্ষ্ণ প্রশ্ন করতেন, যা উত্তরদাতার
পক্ষে উত্তর প্রদান কঠিন মনে হতো আর এভাবে তিনি তার পাণ্ডিত্য প্রকাশ করেন এবং তৎকালীন বুদ্ধিজীবী সমাজের গর্ব ও অহংকার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতেন। আর এভাবেই জ্ঞান প্রচারকে সক্রেটিস নিজের জীবনের ব্রতী হিসেবে বেছে নেন।
২. জ্ঞান অর্জন পদ্ধতি : সক্রেটিস একজন ভাববাদী দার্শনিক ছিলেন। তিনি জ্ঞান অর্জন পদ্ধতিকে দুই ভাগে ভাগ করেন। যথা : ক. আরোহ পদ্ধতি ও খ. অবরোহ পদ্ধতি।
- আরো পড়ুন:- ফ্রি PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রুশো: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-(ফ্রি PDF) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
ক. আরোহ পদ্ধতি : কোনো বস্তু বা ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জিত হয় তাকেই আরোহ পদ্ধতি বলে। আর এ পদ্ধতির মাধ্যমে যদি কোনো ফলাফলে উপনীত হওয়া যায় তাকে সামান্যীকরণ বলে।
যেমন:-কোনো বিশেষ ঘটনা ও কয়েকটি উদাহরণ পর্যবেক্ষণ করে আরোহ পদ্ধতির মাধ্যমে সামান্যীকরণের মাধ্যমে কোনো বিষয়ে সার্বিক ধারণা লাভ করা যায়। উদাহরণ হিসেবে মানুষের মৃত্যুকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝা যায় যে, সব মানুষ মরণশীল।
খ. অবরোহ পদ্ধতি একটি সার্বিক ধারণা থেকে বিশেষ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পৌঁছানোকে অবরোহ পদ্ধতি বলা হয়। যেমন— মানুষ মরণশীল। এটি একটি সার্বিক ধারণা আর এ থেকে বিশেষ জ্ঞানে পৌঁছানো যায় যে, আমি আপনি সবাই একদিন মারা যাব।
সক্রেটিসের মতে, “সার্বিক ধারণার ঘটনা হলো অবরোহ পদ্ধতিতে তর্ক বিচারের কাজ। অনুরূপ সার্বিক ধারণা থেকে কোনো বিশেষ বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে যথার্থ ধারণা করা সঠিক কি না, তা বিচার করাই অবরোহ পদ্ধতি ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জ্ঞানের পিতা সক্রেটিসের দর্শনের মূলকথাই ছিল, “Know thyself.” এবং নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি তথা মানুষের উদ্দেশ্যকে জানা।
আর নিজেকে জানার জন্য তিনি জ্ঞান অর্জন ও প্রচারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। সর্বোপরি তিনি এটিকে পুণ্যের কাজ মনে করতেন। তাই তিনি বলেন, “Virtue is knowledge.” আর পুণ্যের কাজে নিজেকে সারাজীবন নিয়োজিত রেখে গেছেন, যা তাকে অমরত্ব দান করেছে।
০২. রাষ্ট্রচিন্তায় সক্রেটিসের অবদান আলোচনা কর ।
অথবা, রাষ্ট্রদর্শনে সক্রেটিসের ভূমিকা বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সক্রেটিস ছিলেন গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনের ভিত্তি স্থাপনকারী । দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে সক্রেটিস যে অবদান রেখে গেছেন, আজও পৃথিবীতে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
তার জন্মের মধ্য দিয়ে গ্রিসের রাষ্ট্রদর্শনের নতুন যুগের সূচনা হয়। তিনি পূর্ববর্তী সব অনাচার ও অরাজকতা দূর করে তৎকালীন দর্শনকে সুশৃঙ্খল ধারায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।
তার অবদান সম্পর্কে V. Venkata Rao ‘A History of Political Theories’ গ্রন্থে বলেন, “There is no one else in the whole history of European philosophy who has changed the direction of thought so completely as Socrates has done.”
রাষ্ট্রচিন্তায় সক্রেটিসের অবদান : যেসব দার্শনিক দ্বারা গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন বিকশিত হয়, সক্রেটিস ছিলেন তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ও অন্যতম। রাষ্ট্রচিন্তায় তার ছিল অপরিসীম অবদান। নিম্নে রাষ্ট্রচিন্তায় সক্রেটিসের অবদান আলোচনা করা হলো-
১. দর্শন আলোচনা পদ্ধতি : দার্শনিক সক্রেটিস মনে করতেন যে, একমাত্র দর্শনের জ্ঞানই পারে মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে। সক্রেটিস তার দর্শনের জ্ঞান মানুষের নিকট পৌঁছে দিতে এক ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করতেন যাকে বলে ‘দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি’। তার এ পদ্ধতি ছিল আলোচনা ও কথোপকথনভিত্তিক। এ পদ্ধতিতে তিনি প্রশ্ন করতেন বেশি এবং উত্তর করতেন কম।
তিনি কোনো বিষয়ে আলোচনার পূর্বে ঐ বিষয়ে তার অজ্ঞতার কথা স্বীকার করতেন এবং তীক্ষ্ম প্রশ্নের মাধ্যমে তৎকালীন বুদ্ধিজীবীদের দুর্বলতা প্রকাশ করতেন।
কোনো প্রশ্নের সমাধান না আসা পর্যন্ত সক্রেটিস তার আলোচনা চালিয়ে যেতেন। আর এভাবেই সক্রেটিস তার দর্শনের আলোচনা পদ্ধতি গ্রহণ করতেন ।
২. জ্ঞানতত্ত্ব : সক্রেটিসের আলোচনার মূলেই ছিল তার জ্ঞানতত্ত্ব সক্রেটিস জ্ঞান পুণ্যের সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘Virtue is knowledge.” অর্থাৎ, জ্ঞানই পুণ্য।
তিনি বিশ্বাস করতেন, জ্ঞান মানুষের অজ্ঞতা দূর করে আলোর পথ দেখায়। জ্ঞানই পারে মানুষকে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, ভালোমন্দ ত্যাদির বিচার করতে।
যা মানুষে সৎপথে ও পুণ্যের পথে ারিচালিত করতে সহায়তা করবে। তার মতে, জ্ঞানই নীতির উত্তি। সক্রেটিস বলেন, মানুষের নৈতিক জ্ঞান হলো জীবনের মমূল্য সম্পদ। অন্যসব জ্ঞানই নৈতিক জ্ঞানের অধীনে। আর জ্ঞান বলতে সদগুণকেই বুঝিয়েছেন।
৩. আত্মতত্ত্ব : সক্রেটিসের দর্শনের মূল উদ্দেশ্য ছিল “Know thyself.” (নিজেকে জানো)। সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন, মানুষ নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে তার উদ্দেশ্য ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হবেন। অন্যান্য ব্যক্তির তুলনায় সক্রেটিস অধিক জ্ঞানী হলেও নিজেকে কখনোই জ্ঞানী বলতেন না।
তিনি বলতেন, আমরা জগতের প্রকৃতি, উৎপত্তি ও পরিণাম সম্পর্কে কিছুই জানি না; জানি শুধু আমাদের কী করা উচিত, কীভাবে আত্মার উৎকর্ষ সাধন করা যায় ইত্যাদি।
আর এজন্যই তিনি বলেছেন, “Know thyself.” আত্মজ্ঞানই মানুষের পরম কাম্য এবং আত্মজ্ঞানের মহান ব্রতেই সক্রেটিস তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ।
৪. গণতন্ত্র : সক্রেটিস এথেন্সের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, গণতান্ত্রিক শাসন আত্মিক জ্ঞানের গভীরে প্রোথিত নয় বিধায় তা উত্তম শাসনব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত নয়। তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমালোচনা করতেন।
কারণ এ ব্যবস্থায় যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো পদ পূরণ করতে পারে। জ্ঞানের পরিবর্তে এ ব্যবস্থায় অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় । তিনি মনে করতেন, প্রকৃত দর্শনের শিক্ষা না থাকার কারণে এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
৫. আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল : সক্রেটিস এথেন্সের গণতন্ত্রের বিরোধিতা করলেও আইনের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কখনও সমাজ বা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক তিনি তা চাইতেন না। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নগররাষ্ট্রের সব দায়দায়িত্ব পালন করতেন । সর্বদাই আইনকে মান্য করতেন তার প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন ।
জনআদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডাদেশকে অন্যায় জেনেও তিনি সহাস্য বদনে তা স্বীকার করে নেন। কিন্তু তার শিষ্যদের সত্য, ন্যায় ও বিবেকের খাতিরে বিরোধিতা করার পরামর্শ দেন ।
৬. আত্মার অমরত্ব : সক্রেটিস আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করতেন। তিনি মনে করতেন, আত্মা মানুষের দেহে বন্দি অবস্থায় থাকে। মানব দেহের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আত্মার মুক্তি ঘটে।
তিনি এটিও বিশ্বাস করতেন যে, প্রকৃত বা শাশ্বত জ্ঞান অর্জনের জন্য আত্মার মুক্তি অপরিহার্য। মৃত্যুর সময় ক্রন্দনরত তার আত্মীয় স্বজনকে উদ্দেশ্য করে সক্রেটিস বলেন, “তোমরা দুঃখ করো না । মনে রেখ, মৃত্যু কেবল আমার দেহটাকেই বিনাশ করবে, আত্মাকে নয়।”
৭. ধর্মমত : তৎকালীন গ্রিসের বহুদেবতা পূজা সক্রেটিস করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। সক্রেটিসের ধর্মমতে এক ধরনের আধ্যাত্মিকতার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, ঐশ্বরিক শক্তি দ্বারা তিনি পরিচালিত হন। ঐশ্বরিক বলতে তিনি কোনো জাতীয় সত্তাকে নয় বরং সর্বব্যাপক, পরিণামদর্শী ও শাশ্বত সত্তাকে বুঝিয়েছেন।
৮. নীতিবিজ্ঞানের প্রবর্তক : যদিও নীতিশাস্ত্রে সক্রেটিসের অবদান লক্ষ করা যায় না। তারপরও তাকে নীতিশাস্ত্রের প্রবর্তক হিসেবে মনে করা হয়। তার মতে, মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ হলো তার নৈতিক জ্ঞান।
অন্যান্য সব জ্ঞান নৈতিক জ্ঞানের অধীন। জ্ঞানের অন্যান্য শাখার ওপর সক্রেটিস যতটুকু না গুরুত্ব আরোপ করেছেন তার চেয়ে বেশি করেছেন নৈতিক জ্ঞানের ওপর। এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, সক্রেটিস নীতিবিজ্ঞানের প্রবর্তক।
৯. বিজ্ঞানসম্মত যুক্তির অবতারণা : সক্রেটিস সবসময় সব বিষয়ের সংকীর্ণতা পরিহার করে সার্বিকতায় বিশ্বাস করতেন। সার্বিক জ্ঞান অর্জনে তিনি যে প্রযুক্তির অবতারণা করেন তা আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। অজ্ঞতার অসারতা দূর করে মানুষ যাতে সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমে মঙ্গল বয়ে আনতে পারে তিনি সর্বদা সে চেষ্টাই করেছেন।
১০. জ্ঞানের সার্বভৌমত্ব : সক্রেটিসের জন্মের মধ্য দিয়ে গ্রিসে নতুন একযুগের সূচনা হয়। সক্রেটিস পূর্ব গ্রিসের দর্শনের মূলেই ছিল জগতের উৎপত্তি ও স্বরূপ সম্পর্কে বিভিন্ন সমস্যা আলোচনা। সক্রেটিস জড় জগৎ বর্জন করে জ্ঞানের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাষ্ট্রদর্শনে সক্রেটিসের মতো দার্শনিকের চিন্তা রাষ্ট্রচিন্তাকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। যার জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের ওপর ভিত্তি করে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তা গড়ে উঠেছে। আধুনিক রাষ্ট্র সক্রেটিসের মতো দার্শনিকের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে।
০৩. সোফিস্ট রাষ্ট্রদর্শন ও সক্রেটিসের রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
অথবা, প্রাচীন গ্রিকের সোফিস্ট রাষ্ট্রদর্শন ও সক্রেটিসের রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মানবজীবনের বিকাশ সাধনে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশে যে কয়জন ব্যক্তি অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে সক্রেটিস প্রথম ও অন্যতম। প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রদর্শনে সোফিস্ট বা যুক্তি দর্শনবিদদের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে।
তৎকালীন গ্রিসে সোফিস্ট নামে এক ধরনের বুদ্ধিজীবী শ্রেণি ছিলেন যারা কি না অভিজ্ঞতা ও যুক্তির মাধ্যমে সবকিছুর বিচার করতেন। সেখানে দর্শন কিংবা নৈতিকতার স্থান ছিল না।
সেই সোফিস্ট শ্রেণির সাথে সক্রেটিসের দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং সক্রেটিস তার দর্শনের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে সক্ষম হন। সক্রেটিসের দর্শনের মূলকথাই ছিল, “Know theyself.” যা সক্রেটিসের জ্ঞানতত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত ।
সোফিস্ট ও সক্রেটিসের দর্শনের তুলনামূলক আলোচনা : প্রাচীন গ্রিসে সোফিস্ট বা যুক্তিদর্শনবিদরা একটি বিশেষ শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হতো। সোফিস্ট বলতে তাদেরই বুঝানো হতো যারা জ্ঞানবুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ ও বিচক্ষণ ছিলেন।
পেশায় তারা ছিলেন শিক্ষক এবং তর্ক, বক্তৃতা, বাকপটু ও ভালো রাজনীতিবিদ হওয়ার কৌশল মানুষকে শিক্ষা দিতেন। গ্রিসের এথেন্স নগরিতে সক্রেটিসকেও একজন সোফিস্টদের সদস্য মনে করা হতো।
কারণ সোফিস্টদের মতো তার ছিল অসাধারণ যুক্তিবোধ, তর্কবিতর্কের ক্ষমতা, তুলনা করার শক্তি ও অন্যান্য প্রতিভা। তবে সোফিস্টদের চিন্তাধারার কিছু অংশের সাথে সক্রেটিসের মিল থাকলেও উভয় রাষ্ট্রদর্শনের ক্ষেত্রে ছিল বিস্তর পার্থক্য ।
নিম্নে সোফিস্ট ও সক্রেটিসের রাষ্ট্রদর্শনের তুলনামূলক আলোচনা তুলে ধরা হলো- সাদৃশ্যসমূহ : সোফিস্ট রাষ্ট্রদর্শন এবং সক্রেটিসের রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য বিদ্যমান ছিল তা নিম্নরূপ :
১. সক্রেটিসের দর্শন আলোচনা ছিল কথোপকথন আলোচনাভিত্তিক। যাকে দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির মাধ্যমে দর্শন চর্চা করতেন । সোফিস্ট ও সক্রেটিস উভয়ই নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে।
২. মানুষের জীবনের বিকাশ সাধনের চেষ্টা করতেন।
৩. চিন্তার দিক দিয়ে সোফিস্ট ও সক্রেটিস উভয়ই একই বিষয়ে চিন্তা করতেন। আর তা হলো মানবীয় সমস্যা। তারা জ্ঞান, সত্য, নৈতিকতা এসব মানবিক সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতেন ।
৪. সোফিস্ট ও সক্রেটিস উভয়ই জ্ঞানতত্ত্ব আলোচনা করেছেন। জ্ঞানের অপরিহার্যতা তারা সবাই অনুধাবন করতেন।
৫. উভয়ই নৈতিকতা ও মানবতাবোধ দ্বারা উজ্জ্বীবিত হয়েছিলেন । যার মাধ্যমে সব সামাজিক সমস্যার সমাধান দেন।
৬. সোফিস্টরা যুক্তির মাধ্যমে যে সমস্যার সমাধান দিতেন সক্রেটিস তার সমর্থক ছিলেন।
৭. সর্বোপরি সক্রেটিস এবং সোফিস্ট উভয় শ্রেণির তৎকালীন গ্রিসে গ্রহণযোগ্যতা ছিল।
এতসব সাদৃশ্য থাকা তত্ত্বেও তাদের মধ্যে ছিল বিস্তর বৈসাদৃশ্য, যা একে অপরকে শত্রুতে পরিণত করে। বৈসাদৃশ্যসমূহ : সোফিস্ট ও সক্রেটিসের মধ্যে সাদৃশ্যতার চেয়ে বৈসাদৃশ্যের পরিমাণই বেশি ছিল, যা নিম্নে তুলে ধরা হলো,
১. সোফিস্ট দর্শনের মূলকথাই ছিল মানুষের ব্যবহারিক প্রয়োজন মিটানো আর সক্রেটিসের দর্শনের মূলকথাই ছিল নৈতিক অধঃপতন থেকে মানুষকে উদ্ধার করা।
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ফ্রি PDF
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
২. সক্রেটিস তার জ্ঞানতত্ত্বেও সার্বিক জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। অপরদিকে, সোফিস্টরা ব্যক্তিগত জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন।
৩. সোফিস্টদের মতে, সত্যের কোনো সার্বিক মানদণ্ড নেই। অপরদিকে সক্রেটিস বলেন, অধিকর্তা হলো সত্যের মানদণ্ড, অর্থাৎ যা সত্য তাই সার্বিক ।
৪. সোফিস্টদের মতে, প্রকৃতি ও প্রথা পরস্পরবিরোধী এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পক্ষান্তরে, সক্রেটিসের মতে, প্রকৃতি ও প্রথা পরস্পর সম্পর্কিত ।
৫. সোফিস্টগণ মানুষকে বলতো, “নিজেকে জাহির কর।” আর সক্রেটিসের দর্শন ছিল, “Know theyself.” (নিজেকে জানো)।
৬. সোফিস্টগণ তাদের জ্ঞানতত্ত্ব প্রচার করার জন্য মানুষের নিকট হতে মার্শ গ্রহণ করতেন। অপরদিকে, সক্রেটিস তার জ্ঞানতত্ত্ব প্রচারে মানুষের নিকট থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করতেন না।
৭. সোফিস্টগণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। পক্ষান্তরে, সক্রেটিস জ্ঞানের ক্ষেত্রে বুদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
৮. নৈতিকতার ক্ষেত্রে সোফিস্টরা বলত, একজন ব্যক্তি যা ভালো মনে করে সেটিই তার জন্য ভালো। কিন্তু সক্রেটিসের মতে, নৈতিকতার ভিত্তি হতে হবে সার্বিক তা না হলে নৈতিকতা অর্থহীন হয়ে পড়বে।
৯. সোফিস্টরা আত্মা সম্পর্কে কোনো আলোচনা করতেন না। অপরদিকে, সক্রেটিস তার জ্ঞানতত্ত্বে আত্মা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
১০. সোফিস্টদের সকল দর্শন হলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তারা মনে করতো ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত অন্যদিকে, সক্রেটিসের জ্ঞানের ধারণা সার্বিক । তার মতে, জ্ঞান বস্তুর সাথে সম্পর্কিত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নৈতিকতা, সততা, জ্ঞানের দর্শনে সক্রেটিস ও সোফিস্টদের মধ্যে ছিল বিস্তর পার্থক্য। সক্রেটিস তার চিন্তাচেতনায় ছিল বিশাল পরিমণ্ডলের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তিনি সবকিছু সার্বিকতায় বিশ্বাস করতেন অপরপক্ষে, সোফিস্টরা ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। সক্রেটিসের দর্শনের মূলেই ছিল মানুষের কল্যাণসাধন আর সোফিস্ট দর্শনের মূলে ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধার।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর