PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ও PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.৮ : রুশো, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.৮ : রুশো
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০৪. সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্যসমূহ আলোচনা কর ৷
অথবা, রুশোর সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : যে দার্শনিকের সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী আজও পৃথিবীতে বিরাজ করছে তিনি হলেন ফরাসি রাষ্ট্রচিন্তাবিদ জ্যাঁ জ্যাক রুশো। রাষ্ট্রচিন্তার জগতে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তার মধ্যে সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্বটি রাষ্ট্রদর্শনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
তার মতবাদের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব। সাধারণ ইচ্ছাকে তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী করে একে এক বিশিষ্ট আসনে অধিষ্ঠিত করেন। ১৭৬২ সালে প্রকাশিত রুশোর The Social Contract” গ্রন্থে তার সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব বর্ণনা করেন।
সাধারণ ইচ্ছা : সাধারণ ইচ্ছা বলতে রুশো জনগণের কল্যাণকামী ইচ্ছাকেই বুঝিয়েছেন। রুশো বলেন, সাধারণ ইচ্ছার অর্থ হলো জনগণের ইচ্ছা, যার দ্বারা জনগণের কল্যাণ সাধিত হয়।
সাধারণ ইচ্ছার উদ্ভব সম্পর্কে রুশো বলেন, “মানুষ তার দেহ, সম্পত্তি, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সমর্থন ও সহযোগিতার ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদন করে।
এর ফলে চুক্তি সম্পাদনকারী প্রত্যেক সদস্য স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব পরিহার করে এক যৌথ ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি করে। এর যৌথ ব্যক্তিত্বের নাম হলো সাধারণ ইচ্ছা রুশোর সাধারণ ইচ্ছা সম্পর্কে অধ্যাপক জর্জ কাটের বলেন, ” There is common agreement that the central idea in Rousseau’s political thought is the idea of the general will”
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রুশো: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-(ফ্রি PDF) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ফ্রি PDF
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
সকলের ইচ্ছা : সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছাকে রুশো সকলের ইচ্ছা, আর সকলের ইচ্ছা বলতে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ইচ্ছার সমষ্টিকে বুঝিয়েছেন। তাই সকলের ইচ্ছার মধ্যে মানুষের কল্যাণ ও অভিন্ন স্বার্থের প্রতিফলন না হয়ে ব্যক্তির বিশেষ স্বার্থের প্রতিফলন হয়।
সাধারণ ইচ্ছা যেখানে সকলের মঙ্গলার্থে সৃষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান, সকলের ইচ্ছা সেখানে নাগরিকের ইচ্ছার সমষ্টি। তাই সকলের ইচ্ছার মধ্যে মানুষের কল্যাণ ও অভিন্ন স্বার্থের প্রতিফলন না হয়ে ব্যক্তির বিশেষ স্বার্থের প্রতিফলন হয় ।
সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য : রুশোর ধারণা সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছা এক নয়। এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে রুশোর সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হলো-
১: সংজ্ঞাগত পার্থক্য : রুশোর সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলো সংজ্ঞাগত পার্থক্য। সাধারণ ইচ্ছা বলতে জনগণের কল্যাণকামী ইচ্ছাকে বুঝায় আর সকলের ইচ্ছা বলতে নাগরিকের ইচ্ছার সমষ্টিকে বুঝায় সুতরাং সংজ্ঞার দিক থেকে উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
২. গঠনগত পার্থক্য : সাধারণ ইচ্ছা এক জৈব একক, নৈতিক ব্যক্তিত্ব, যৌথ ব্যক্তিত্ব। কিন্তু সকলের ইচ্ছা ব্যক্তি, ব্যক্তিবর্গের ইচ্ছার সমাহার। এতে জনগণের কল্যাণের লেশমাত্র নেই ।
৩. বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য: সাধারণ ইচ্ছার বৈশিষ্ট্য হলো স্থায়িত্ব, ত্রুটিহীনতা, অভ্রান্ত, ঐক্যবদ্ধতা। কিন্তু সকলের ইচ্ছায় এসব বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব ও সকলের ইচ্ছাতত্ত্বের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
৪. লক্ষ্যগত পার্থক্য : রুশোর সাধারণ ইচ্ছার লক্ষ্য হলো সমষ্টিগত স্বার্থ রক্ষা। কিন্তু সকলের ইচ্ছার লক্ষ্য হলো ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা। সুতরাং দেখা যায় লক্ষ্যগত দিক থেকেও সকলের ইচ্ছা এবং সাধারণ ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
৫. প্রকৃতিগত পার্থক্য : প্রকৃতিগত দিক থেকেও রুশোর সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। সাধারণ ইচ্ছা গণতান্ত্রিক। এটি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করে। অপরদিকে, সকলের ইচ্ছা গোষ্ঠীর স্বার্থের পরিবর্তে সংকীর্ণ ব্যক্তি স্বার্থকেই বড় করে। তাই এটি কিছুটা অভিজাততন্ত্রের সহায়ক।
৬. আদর্শের ক্ষেত্রে পার্থক্য : আদর্শগত দিক থেকেও সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণ ইচ্ছা সঠিক বিবেকসম্পন্ন এবং সমাজ সেবার আদর্শে উজ্জীবিত। কিন্তু সকলের ইচ্ছা ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় নিমজ্জিত থাকে বলে উন্নততর আদর্শে উজ্জীবিত হতে পারে না।
৭. সামাজিক চরিত্রের ক্ষেত্রে পার্থক্য : রুশোর সাধারণ ইচ্ছা সমষ্টিগত ইচ্ছার কল্যাণসাধনে প্রয়াসী। সকলের ইচ্ছার ত্রুটিবিচ্যুতি সংশোধন করাই সাধারণ ইচ্ছা। অপরপক্ষে, সকলের ইচ্ছা একটি সাধারণ রূপ যেখানে ব্যক্তি ও সমাজ স্বাভাবিকরূপে অবস্থিত সেখানে হিংসা বিদ্বেষ অতি সাধারণ বিষয়।
৮. স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে পার্থক্য : রুশোর মতে, সাধারণ ইচ্ছা স্থায়ী। কিন্তু সকলের ইচ্ছা সাময়িক। সাধারণ ইচ্ছা জনগণের স্থায়ী মঙ্গল কামনায় সদা ব্যাপৃত থাকে। অন্যদিকে, সকলের ইচ্ছা ক্ষণস্থায়ী মঙ্গলকামনায় ব্যস্ত ।
৯. প্রভাবগত পার্থক্য : সাধারণ ইচ্ছা সমাজের সব জনগণের ওপর সমানভাবে প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু সকলের ইচ্ছা সংকীর্ণ স্বার্থগত বিষয় জড়িত। তাই সকলের ইচ্ছা সামগ্রিকের কল্যাণের কথা চিন্তা করতে পারে না। সাধারণ ইচ্ছা বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ গোষ্ঠীর থেকে কোনো আলাদা সুবিধা ভোগের দাবি করতে পারে না ।
১০. কল্যাণের প্রশ্নে পার্থক্য : সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে কল্যাণের প্রশ্নে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সাধারণ ইচ্ছা সবসময় জনগণের জন্য কল্যাণকর। কিন্তু সকলের ইচ্ছা ব্যক্তির জন্য হলেও সবসময় কল্যাণকর নাও হতে পারে ।
১১. রাজনৈতিক চরিত্রের ক্ষেত্রে পার্থক্য : রুশোর রাষ্ট্রদর্শনে সাধারণ ইচ্ছা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব একটি সুসংহত ও প্রভাববিস্তারকারী মতবাদ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু রাষ্ট্রদর্শনে রুশোর সকলের ইচ্ছা মতবাদ অনেকটাই দুর্বল ও অস্পষ্টতার দোষে দুষ্ট।
১২. ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্নে : সাধারণ ইচ্ছায় অন্যায়ের কোনো স্থান নেই। কেননা সাধারণ ইচ্ছা গোষ্ঠীস্বার্থে নিয়োজিত থাকে বলে গোষ্ঠীর কল্যাণই এর উদ্দেশ্য। অপরদিকে, সকলের ইচ্ছা ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্নে জর্জরিত কারণ এটি ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থে জড়িত।
১৩. স্বার্থের ক্ষেত্রে পার্থক্য : সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে স্বার্থগত পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণ ইচ্ছা সব নাগরিকের সমষ্টিগত ইচ্ছার সমন্বয়সাধন করে এবং অভিন্ন ব্যক্তিস্বার্থের কথা চিন্তা করে। কিন্তু সকলের ইচ্ছা কতিপয় বিশেষ বিশেষ ইচ্ছার যোগফল ছাড়া আর কিছুই নয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রুশোর সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে । পার্থক্য থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সাধারণ ও সকলের ইচ্ছা মতবাদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রুশোর রাষ্ট্রদর্শনে সাধারণ ইচ্ছা মতবাদটি তাকে স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সাধারণ ইচ্ছা গোষ্ঠীস্বার্থে নিয়োজিত বিধায় সমাজের সব শ্রেণির কল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে। আর সকলের ইচ্ছা ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করে বিধায় এটি ব্যক্তির স্বার্থ উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট।
০৫. রুশোর প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কিত মতবাদটি আলোচনা কর ।
অথবা, রুশোর প্রকৃতির রাজ্যের ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ফরাসি বিপ্লবের স্লোগান হলো সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা। এ অমোঘ বাণীর স্রষ্টা জ্যা জ্যাক রুশো ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক। রুশোর রাষ্ট্রদর্শন আলোচনায় নানাবিধ তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। তবে তার রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে প্রকৃতির রাজ্য নিয়ে আলোচনা ছিল অন্যতম।
রুশোর প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে অধ্যাপক ডানিং বলেন, “In the state of nature men are to be found the elements of perfect happiness. He is independent, contented, self-sufficing.”
রুশোর প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কিত মতবাদ : রুশোর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সূচনা হয় প্রকৃতির রাজ্য থেকে। রুশোর অঙ্কিত প্রকৃতির রাজ্য ছিল প্রাক-রাষ্ট্রনৈতিক। তিনি বলেন, সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ যে পরিবেশে বসবাস করতো সেটি ছিল প্রকৃতির রাজ্য।
প্রকৃতির রাজ্য স্বাধীনতা ও সমতার লীলাভূমি । কেউ সেখানে রাজা ছিল না, কেউ প্রজা ছিল না। সবাই ছিল মানব। তাই সেখানে কোনো প্রথার দ্বন্দ্ব বা বিবাদ ছিল না।
প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ কোনো স্থিতিশীল পরিবার গঠন করতে সক্ষম বলে মানুষের হৃদয়ে স্নেহ, ভালোবাসা, আবেগ অনুভূতির মানব চরিত্রের সূক্ষ্ম দিকগুলো গড়ে ওঠেনি। আর এসব না থাকায় তাদের মধ্যে সামাজিকতাবোধের বিকাশ ঘটেনি।
ফলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, আত্মকেন্দ্রিকতা জন্মলাভ করেনি। বিজ্ঞান ও সভ্যতার উন্নতিতে মানুষের মধ্যে স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা জন্মলাভ করে।
সভ্যতার বিভিন্ন স্তরে মানুষের সামাজিক অবস্থা বিচারের মানদণ্ড হলো প্রকৃতির রাজ্য। রুশো তার ”The Social Contract” গ্রন্থে বলেন, “Man is born free but everywhere he is in chains” তার এ উক্তিটির তাৎপর্য হলো মানুষ প্রকৃতির রাজ্যেই স্বাধীনভাবে জন্মাতে পারে কিন্তু সভ্য সমাজে নয়। সভ্যতার পরিবর্তন রুশোর এ প্রকৃতির রাজ্যে সমতা ও শান্তির ভিত্তিমূলে আঘাত করেছে।
প্রকৃতির রাজ্যের মানুষকে রুশো ‘মহান বর্বর’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং যুক্তিবাদী মানুষ’ অপেক্ষা এসব মহান বর্বরদের প্রতি অনুরাগ প্রদর্শন করেছেন। প্রকৃতির রাজ্যের বাস্তবতা সম্পর্কে রুশো বলেন, বর্তমানে এরূপ রাজ্যের কোনো অস্তিত্ব নেই । অতীতেও হয়তো ছিল না এবং ভবিষ্যতেও হয়তো থাকবে না। তথাপি তিনি মনে করেন তার এই ধারণা ঐতিহাসিক, কেবল মনস্তাত্ত্বিক নয় ।
রুশোর প্রকৃতির রাজ্যের বৈশিষ্ট্য : রুশোর প্রকৃতির রাজ্য মতবাদটি বিশ্লেষণ করলে এর কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় নিম্নে এর বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো,
১. প্রাকৃতিক আইন : রুশো প্রকৃতির রাজ্যে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা বা আইনকানুন ছিল না। সেখানে মানুষ ছিল স্বাধীন। প্রকৃতির রাজ্যে কোনো হিংসা, দ্বন্দ্ব, কলহ ছিল না বলে সেখানে কোনো মানবিক আইনের প্রয়োজন ছিল না। প্রকৃতির রাজ্য প্রাকৃতিক আইনেই পরিচালিত হতো।
২. স্বর্গীয় সুখ : রুশোর বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্যে স্বর্গীয় সুখ বিরাজ করতো। মানুষ এখানে অনাবিল আনন্দের মধ্যে জীবনযাপন করতো। এখানে সরলতা, সদ্ভাব, সাম্য ও সহাবস্থানের গুণাবলির এক অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছে। এ রাজ্যকে রুশো ‘মত্যের স্বর্গ’ বলে অভিহিত করেন।
৩. অফুরন্ত : সুখ শান্তি রুশোর প্রকৃতির রাজ্যে ছিল অফুরন্ত সুখ শান্তিতে ভরপুর । সেখানে তারা অপরের জিনিস ভোগ বিলাসের কথা চিন্তা করতো না। প্রকৃতির রাজ্যের মানুষের মধ্যে একে অপরকে দাসে পরিণত করার প্রবৃত্তি ছিল না ।
৪. রাষ্ট্র গঠন : রুশোর মতে, মানুষের রাষ্ট্রপূর্ব সমাজজীবনে এমন কতকগুলো অমঙ্গলের সূত্রপাত হয় যা থেকে মুক্তিলাভের জন্য মানুষ পৌরসমাজ তথা রাষ্ট্র গঠনে আগ্রহী হয়। কিন্তু রুশো মনে করেন, প্রকৃতির রাজ্যে যেসব অমঙ্গল অজ্ঞাত ছিল, রাষ্ট্রীয় জীবনে সেসব অমঙ্গল সর্বজনীন অমঙ্গলে পরিণত হয়।
৫. মানুষ মহান বর্বর : রুশো প্রকৃতির রাজ্যে মানুষকে মহান বর্বর বলে অভিহিত করেন। প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ সম্পর্কে রুশো বলেন, “বর্তমানে এরূপ অবস্থার কোনো অস্তিত্ব নেই। অতীতেও ছিল না এবং ভবিষ্যতেও কোনো দিন থাকবে না।” প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ ছিল স্বার্থহীন ও আবেগপ্রবণ।
৬. দাসত্ব সৃষ্টি : প্রকৃতির রাজ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে রুশো বলেন, “মানুষের দাসত্ব সভ্যতার বিকাশেই সৃষ্ট।” সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায় মানুষের পতন কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তার বিচার প্রকৃতির রাজ্যের মানদণ্ডেই করা সম্ভব।
কেননা সভ্য সমাজে মানুষ শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের আবির্ভাব ও উৎকর্ষের ফলে মানুষের স্বাধীনতা বিনষ্ট হয়েছে। সভ্যতার পরিবর্তন রুশোর প্রকৃতির রাজ্যকে দাসত্বে পরিণত করেছে।
৭. শান্তিপ্রিয় : রুশোর প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ ছিল শান্তিপ্রিয়। প্রকৃতিগত দিক দিয়ে তারা ছিল ভীতু ও সংঘাত বিরোধী। তারা যদিও নিজেদের আত্মরক্ষার কথা ভাবতো, কিন্তু সে কারণেই অন্যকে কোনো প্রকার আঘাত করার ইচ্ছা তাদের মধ্যে দেখা যায়নি । তারা ছিল শান্তিপ্রিয়, নির্লোভ প্রকৃতির সাধারণ মানুষ।
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
৮. সহানুভূতিশীল : রুশোর বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্য ছিল সহানুভূতিশীল । তারা একে অপরের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়ায় হিংসা-দ্বেষ ইত্যাদি পুরমাত্রায় আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি।
রুশো বলেন, প্রকৃতির রাজ্যে যারা বাস করতো তাদের দুটো উদ্দেশ্য ছিল। একটি হলো প্রতিকূল পরিবেশের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা আর অন্যটি নিজেকে ভালোবাসা ।
৯. আত্মকেন্দ্রিকতা : রুশোর প্রকৃতির রাজ্যের মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক বলেছেন তিনি বলেন যে, প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ যে কলহে লিপ্ত হতো তার প্রধান কারণ হলো আত্মকেন্দ্রিকতা । কারণ এটা স্বাভাবিক প্রবণতা। বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশ তাদেরকে আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রুশোর প্রকৃতির রাজ্য বর্তমান সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্রের চেয়ে অনেক উন্নত। এটি ছিল আদর্শ সুখ ও শান্তির স্থান। সেখানে কোনো রাজা বা প্রজা ছিল না, সবাই ছিল সমান।
সেখানে কোনো দ্বন্দ্ব কলহ ছিল না বিধায় সেখানে মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতো। রুশোর এ তত্ত্বের মধ্যেই নিহিত ছিল ফরাসি বিপ্লবের ইন্ধন জোগানো সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার মহান বাণী ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর