PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ও PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.৮ : রুশো, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও
রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.৮ : রুশো
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০১. রুশোর রাষ্ট্রদর্শন আলোচনা কর ।
অথবা, রুশোর রাষ্ট্রদর্শন মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ভূমিকা: অষ্টাদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ এবং রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম পথপ্রদর্শক রুশো। রুশোর প্রকৃত নাম জ্যা জ্যাক রুশো। রুশো জেনেভার এক দরিদ্র পরিবারে ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
দরিদ্রতার কারণে রুশো বারো বছর বয়সেই স্কুল ত্যাগ তরে বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়ে শিক্ষানবিশি শুরু করেন। ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে সেখানে সুধী সমাজের নৈকট্য লাভ করেন। তার বিভিন্ন রচনাবলির মাধ্যমে এবং রাষ্ট্রদর্শনেও তিনি বিশেষ স্থান দখল করেছেন ।
রুশোর রাষ্ট্রদর্শন : রুশোর রচনাবলিতে রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিয়ে মতবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি মনে করেন রাষ্ট্র ও জনগণ অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটি ছাড়া আরেকটি কল্পনা করা যায় না।
রুশোর রচনাবলির মধ্যে ”The Social Contract’ ‘ গ্রন্থটি রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে তাকে অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। নিম্নে তার রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. সার্বভৌমত্ব : রুশো রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে যে মতবাদ প্রদান করেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জনগণের সাধারণ ইচ্ছাকে রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি মনে করেন, জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার আধার। অধ্যাপক সেবাইন এ সম্পর্কে বলেন, “রুশো জনগণকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চূড়ান্ত উৎস হিসেবে বর্ণনা করেছেন।”
২. সকলের ইচ্ছা : সকলের ইচ্ছায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত প্রাধান্য পায়। রুশোর সকলের ইচ্ছা সমষ্টিকেন্দ্রিক। মানুষের এ ইচ্ছাকে তিনি নিতান্তই আবেগ দ্বারা পরিচালিত বলে মনে করেন।
তিনি এটাকে মানুষের স্বার্থপর প্রতীকরূপে দেখেছেন তিনি সকলের ইচ্ছার প্রাকৃতিক অন্তর্দ্বন্দ্বমূলক বা সংঘাতমূলক মতবাদ বলেও মত প্রকাশ করেন।
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রুশো: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-(ফ্রি PDF) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ফ্রি PDF
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
৩. সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব : রুশোর সাধারণ ইচ্ছা মতবাদ তার রাজনৈতিক দর্শনে এক উল্লেখযোগ্য অবদান। তিনি যে সাধারণ ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন তা জনগণেরই কল্যাণের ইচ্ছা।
যদিও অনেকে তার সাধারণ ইচ্ছা মতবাদকে সমালোচনা করেছেন তবুও তা সমাজের সাধারণ কল্যাণ ও উদ্দেশ্য সাধনে নিয়োজিত। রুশো তার এ মতবাদ প্রচার করে রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তাধারায় এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করেছেন।
৪. সামাজিক চুক্তি মতবাদ : রুশোর রাষ্ট্রদর্শনে সামাজিক চুক্তি মতবাদ অন্যতম রাজনৈতিক মতবাদ। রুশো তার ”The Social Contract’ নামক গ্রন্থে সামাজিক চুক্তি মতবাদ বিশ্লেষণ করেন।
তিনি বলেন, সমাজ ও ব্যক্তির নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে পরস্পর পরস্পরের সাথে এমন চুক্তি সম্পাদন করে যাতে সমস্ত ক্ষমতা এ চুক্তির নিকট অর্পণ করে এবং এ চুক্তি ব্যক্তি, সমষ্টি ও সমাজের সার্বিক কল্যাণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে।
৫. স্বাধীনতা : রুশো তার লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার যে মর্মবাণী প্রচার করেন তা হবস, লকের রচনায় বিরল। শ্রমজীবী মানুষ তাদের উৎপাদনশীল শ্রম দ্বারা যে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখে সে রাষ্ট্রের শাসনকার্যে তাদের অংশগ্রহণকে তিনি কষ্টসাধ্য উপায়ে সমর্থন করেন। মূলত তিনি শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের কথা বলে তাদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন ।
৬. ব্যক্তিস্বাধীনতা : রুশোর রাষ্ট্রদর্শনের অন্যতম বিষয় ছিল ব্যক্তিস্বাধীনতা। তিনি বলেন, Man is born free, but everywhere he is chains.” তিনি সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন তিনি জনগণের শৃঙ্খলিত অবস্থা লক্ষ করে ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হার্নশ ((Harnshaw) বলেন, “রুশো জনগণকে রাজনৈতিক ক্ষমতার চূড়ান্ত উৎসরূপে প্রদর্শন করেছেন।” রুশো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রকৃত ভিত্তি সম্মতি এবং কর্তৃত্ব ও স্বাধীনতার যৌথ একত্রীকরণ সম্ভব ।
৭. রাষ্ট্র ও সরকার : রুশো তার রাষ্ট্রদর্শনে রাষ্ট্র ও সরকার নিয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেন। তার মতে, রাষ্ট্র সরকারের যে ক্ষমতা নির্ধারণ করে দেয় সরকার তার বাইরে কিছু করতে পারে না। সরকার রাষ্ট্রের কাছে বাধা । অর্থাৎ রাষ্ট্রের ওপর সরকার নির্ভরশীল।
৮. সর্বাত্মক রাষ্ট্র : রুশো গণতন্ত্র অপেক্ষা সর্বাত্মকবাদী রাষ্ট্রের পক্ষে । আধুনিক সর্বাত্মকবাদী রাষ্ট্রগুলো রুশোর সাধারণ ইচ্ছার নিকটবর্তী। সর্বাত্মকবাদী রাষ্ট্রে জনগণের ওপর সিদ্ধান্তসমূহ জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়। রুশোর সাধারণ ইচ্ছার স্থান সবার ঊর্ধ্বে। এজন্য রুশোকে সর্বাত্মকবাদী দার্শনিকও বলা হয়।
৯. রাষ্ট্র ও নৈতিক জীবন : রুশোর রাষ্ট্রদর্শনের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো রাষ্ট্র ও নৈতিক জীবন সম্পর্কে তার মতামত। তিনি রাষ্ট্রকে সৎ ও নৈতিক জীবনযাপনের কথা বলেন।
তিনি মনে করেন, সততা ও নৈতিকতা ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নতি সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্রকে সৎ ও নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে রুশো, প্লেটো ও এরিস্টটল দ্বারা প্রভাবিত হন।
১০. সামাজিক ধর্ম : রুশো সমাজধর্ম বা সামাজিক ধর্মতত্ত্ব প্রবর্তন করে জনগণের স্বাধীনতার পক্ষে মতামত প্রদান করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি এমন একটি মিশ্রিত নাগরিকের বিশ্বাস যার বিধানসমূহ স্বয়ং সার্বভৌম বইপত্র বিন্যাস করে থাকে এবং সেগুলো ধর্মীয় অনুশাসনের আকারে নয়, সামাজিক ও মনোবৃত্তি আকারে।
তার মতে, রাষ্ট্র কোনো মানুষকে সামাজিক ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারে না। তবে যদি তা গ্রহণ না করে তবে রাষ্ট্রীয় নাগরিক হওয়ার অযোগ্য বলে ঘোষণা করা যেতে পারে।
১১. প্রকৃতির রাজ্য ও মানব রাজ্য : রুশোর রাষ্ট্রদর্শনের অন্যতম বিষয় ছিল প্রকৃতির রাজ্য ও মানব রাজ্য। রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করতো। তার মতে, প্রকৃতির রাজ্য ছিল স্বর্গের মতো।
সেখানে মানুষের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। মানুষ ছিল সহজ সরল, শান্তিপ্রিয়। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রকৃতির রাজ্য অশান্তিতে ভরে ওঠে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য পারস্পরিক বুঝাপড়ার ভিত্তিতে চুক্তির মাধ্যমে গড়ে ওঠে রাষ্ট্র।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রুশো রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে যে মতবাদ ব্যক্ত করেন তা বর্তমান রাষ্ট্রচিন্তায় অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। রুশো তার রাষ্ট্রদর্শনে যেসব তত্ত্ব প্রবর্তন করেছেন তা তাকে স্থায়ী আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
রুশোর সাধারণ ইচ্ছা, সামাজিক চুক্তি মতবাদ, রাষ্ট্র সম্পর্কিত মতবাদ প্রভৃতি তার অমর সৃষ্টি । রুশোর চিন্তাধারা মূল্যায়ন করতে গিয়ে অধ্যাপক সেবাইন বলেন, “With Rousseau begins a new era of classical influence on western political thought
০২. রুশোর সামাজিক চুক্তি মতবাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, রুশোর সামাজিক চুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ফরাসি দার্শনিক রুশো সামাজিক চুক্তি মতবাদের একজন প্রখ্যাত দার্শনিক। রুশো তার রাষ্ট্রদর্শনে যেসব মতবাদ প্রদান করেন তার মধ্যে সামাজিক চুক্তি মতবাদ অন্যতম।
তিনি তার ”The Social Contract’ গ্রন্থে সামাজিক চুক্তি মতবাদটি বর্ণনা করেন। রুশো তার সামাজিক চুক্তি মতবাদের মাধ্যমে প্রকৃতির রাজ্যের মানুষের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে জোটবদ্ধ হয়ে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রগঠনের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তার মতে, সামাজিক চুক্তি থেকেই নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
রুশোর সামাজিক চুক্তি মতবাদ : রুশো সামাজিক চুক্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “প্রকৃতি রাজ্যের মানুষ কখনও স্বার্থপর, কলহ প্রিয় ও আত্মকেন্দ্রিক ছিল না।” সময়ের পরিবর্তনের সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।
ফলে মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব, কলহের সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দ্ব কলহ হতে মুক্তির পথ খোঁজে। এভাবে মানুষ একতাভুক্ত হয়ে প্রতিটি সদস্য তার অধিকার সমাজের কাছে অর্পণ করে সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয় ।
সামাজিক চুক্তি মতবাদের বৈশিষ্ট্য : রুশোর সামাজিক চুক্তি মতবাদ আলোচনা পর্যালোচনা করলে এর কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। নিম্নে সামাজিক চুক্তির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-
১. মানব প্রকৃতি ও প্রকৃতির রাজ্য : রুশোর সামাজিক চুক্তির মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানব প্রকৃতি ও প্রকৃতির রাজ্য। প্রকৃতির রাজ্যে যে সাম্য ও স্বাধীনতা বিরাজ করে মানব রাজ্যে তা ছিল সম্পূর্ণ বিলুপ্ত । প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ ছিল সৎ, সহজ, সরল, সাহসী ও সহানুভূতিশীল । সেখানে তারা অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতো ।
২. চিরস্থায়ী : সামাজিক চুক্তি একটি স্থায়ী চুক্তি। এ চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজের কল্যাণসাধন। তাই নিজ নিজ কল্যাণের কথা বিবেচনা করে মানুষ কখনও এ চুক্তি ভঙ্গ করে না। কারণ এটি হচ্ছে সমষ্টিগত চুক্তি। চুক্তিভঙ্গ বা সার্বভৌমত্ব পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই ।
৩. ব্যক্তিস্বাধীনতা : রুশো সামাজিক চুক্তির অবতারণা করতে গিয়ে মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বীকার করেছেন তিনি জনগণের কল্যাণকে সরকারের যথার্থ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, “জনগণের বাণীই ঈশ্বরের বাণী ।
৪. সাধারণ ইচ্ছা : সামাজিক চুক্তির ফলে ব্যক্তিগত ইচ্ছা সাধারণ ইচ্ছায় পরিণত হয়েছে। এ চুক্তির মাধ্যমে প্রত্যেকেই সাধারণ ইচ্ছার কাছে আনুগত্য প্রকাশ করে । অর্থাৎ পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে সব মানুষ তাদের ক্ষমতা সাধারণ ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করল।
৫. সাম্য প্রতিষ্ঠা : সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে বলেছেন । যখন মানুষের হাতে ক্ষমতা ও সম্পত্তি পুঞ্জীভূত হলো এবং মস্তিষ্কে যুক্তিবাদিতা আশ্রয় নিল তখনই মানুষ তার প্রতিবেশীর সাথে দ্বন্দ্ব কলহে লিপ্ত হতে দ্বিধাবোধ করল না। এ দ্বন্দ্ব ক্রমান্বয়ে যুদ্ধে রূপ নেয়। এ যুদ্ধ পরিহার করে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক চুক্তি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
৬. যৌথ সংস্থার আবির্ভাব সামাজিক: চুক্তির ফলে যে সংস্থার আবির্ভাব ঘটেছে তা হবে জনগণের যৌথ জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। জনগণ যৌথ সংস্থা হতে কখনও আলাদা হতে পারবে না। সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে গঠিত যৌথ সংস্থা ব্যক্তি বিশেষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত না হয়ে সবার মঙ্গলে ব্যবহৃত হবে।
৭. সার্বভৌম : রুশোর মতে, সামাজিক চুক্তি হলো সার্বভৌম। অর্থাৎ সামাজিক চুক্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়। তিনি বলেন, যেহেতু সার্বভৌমত্ব সামাজিক চুক্তির ইতিবাচক ফল এবং নাগরিকগণ প্রত্যেকে স্বেচ্ছায় নিজেদের বৃহৎ কল্যাণসাধনের জন্য এ চুক্তি সম্পাদন করেছে সেহেতু চুক্তি পুনরায় অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করা যাবে না।
৮. জনগণ রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ : রুশো বলেন, চুক্তির ফলে যে সংস্থার আবির্ভাব ঘটবে তা হবে “অং ঢ়বৎভবপঃ ধং রঃ পধহ নব ” অর্থাৎ, জনগণ একবার যদি নিজেদেরকে যৌথ জীবনের সাথে মিশিয়ে দেয় তাহলে তারা সম্পূর্ণরূপে একাত্ম হয়ে যাবে। যৌথ সংস্থা বা রাষ্ট্র থেকে জনগণকে আর কখনও আলাদা করা যাবে না।
৯. নৈতিকতার পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ : রুশোর সামাজিক চুক্তির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো জনগণ জীবন, স্বাধীনতা অথবা সম্পত্তি রক্ষার জন্য চুক্তি সম্পাদন করেনি। নৈতিকতার পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য তারা রাষ্ট্রীয় সংগঠনের জন্ম দেয়। তাই সামাজিক চুক্তিতে তিনি রাষ্ট্রকে নৈতিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।
১০. বাস্তব ইচ্ছা ও প্রকৃত ইচ্ছা : রুশোর মতে, মানুষের দুটি ইচ্ছা পরস্পর ক্রিয়াশীল। একটি তার বাস্তব ইচ্ছা অন্যটি প্রকৃত ইচ্ছা। তিনি বাস্তব ইচ্ছাকে ব্যক্তিস্বার্থের নিয়ন্ত্রক ও প্রকৃত ইচ্ছাকে সামগ্রিক কল্যাণের সত্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ প্রকৃত ইচ্ছাকে সাধারণ ইচ্ছা বলে অভিহিত করেছেন। তার এ সাধারণ ইচ্ছার অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে সামাজিক চুক্তি।
১১. শক্তিশালী কর্তৃপক্ষের উদ্ভব : প্রকৃতির রাজ্যে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও মালিকানার উৎপত্তির সাথে সাথে তা রক্ষার জন্য এক শক্তিশালী কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন হয়। জনগণ চুক্তির মাধ্যমে এ শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলে।
১২. রাষ্ট্র ও সরকারের পার্থক্য: রুশো রাষ্ট্র ও সরকারকে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করেননি। তার মতে, উভয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এছাড়া সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে গঠিত রাষ্ট্রকে তিনি বৈধ রাষ্ট্র বলে মন্তব্য করেন।
১৩. সংগঠনকে শক্তিশালীকরণ: জনগণ চুক্তির কার্যকারিতা বা বৈধতা অস্বীকার করতে পারে না। চুক্তির শর্ত মেনে চলার জন্য প্রত্যেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চুক্তিবদ্ধ প্রতিটি ব্যক্তি যৌথ জীবনযাপনের শর্তে আবদ্ধ। এ প্রতিশ্রুতি সংগঠনকে শক্তিশালী করে তুলবে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রুশোর সামাজিক চুক্তি মতবাদ তার রাষ্ট্রদর্শনের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় রুশো তার সামাজিক চুক্তি মতবাদে হবস ও লকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি কাউকেই অনুসরণ করেননি।
রুশোর রাষ্ট্রচিন্তা বর্তমানেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। অধ্যাপক ইবেনস্টাইন রুশো সম্পর্কে বলেন, “রুশো হচ্ছেন আধুনিক রাষ্ট্র তত্ত্বের প্রথম লেখক যিনি নিজেকে সামগ্রিকভাবে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গ করেন।”
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
০৩. রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব ব্যাখ্যা কর।
অথবা, রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : যে দার্শনিকের সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী আজও পৃথিবীতে বিরাজ করছে তিনি হলেন ফরাসি রাষ্ট্রচিন্তাবিদ জ্যা জ্যাক রুশো। রাষ্ট্রচিন্তার জগতে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তার মধ্যে সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্বটি রাষ্ট্রদর্শনে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
তার মতবাদের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব। সাধারণ ইচ্ছাকে তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী করে একে এক বিশিষ্ট আসনে অধিষ্ঠিত করেন। ১৭৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত “The Social Contract” গ্রন্থে রুশো তার সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব বর্ণনা করেন।
রুশোর সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব : রুশোর সামাজিক চুক্তি থেকেই সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্বের উৎপত্তি। সাধারণ ইচ্ছার উদ্ভব প্রসঙ্গে রুশো বলেন, “মানুষ তার দেহ, সম্পত্তি, নিরাপত্তা,
স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সমর্থন ও সহযোগিতার ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদন করে। এ চুক্তির ফলেই সাধারণ ইচ্ছার জন্ম হয়”।
সামাজিক চুক্তি সমাজ ও রাষ্ট্র সৃষ্টির পরেই মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা সমগ্র সম্প্রদায়ের ইচ্ছায় পরিণত হয়। আর এভাবেই জন্ম হয় সাধারণ ইচ্ছার।
সাধারণ ইচ্ছার সংজ্ঞা : রুশোর সামাজিক চুক্তি অনুযায়ী যে রাষ্ট্রের জন্ম হয় তার একটি স্বতন্ত্র ইচ্ছা থাকে। সাধারণ ইচ্ছার অর্থ হলো জনগণের ইচ্ছা। যার দ্বারা জনগণের কল্যাণ সাধিত হয়। রুশোর মতে, যে ইচ্ছা সর্বদাই জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করে তাই সাধারণ ইচ্ছা।
রুশোর সাধারণ ইচ্ছা প্রসঙ্গে ইবেনস্টাইন (Ebenstain) বলেন, “সকলের ইচ্ছার মধ্যে যেসব সংযোজক ও বিয়োজক একটি অপরটিকে বাতিল করে দেয় সেগুলো যদি অপসৃত করা যায় তাহলে যেসব ইচ্ছা অবশিষ্ট তাদের সমষ্টিকে ধরা হয় সাধারণ ইচ্ছা।”
অধ্যাপক ডানিং (Dunning) সাধারণ ইচ্ছার ব্যাখ্যায় বলেন, “রুশোর দৃষ্টিতে ইচ্ছাই রাষ্ট্রের ভিত্তি, যা ব্যক্তির কার্যের অনুকূল এবং ব্যক্তি সর্বদা তাই কামনা করে। অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যক্তির স্বার্থের সাথে তার স্বার্থে সংঘাত দেখা দেয় কিন্তু কোনো কোনো সময় স্বার্থই অভিন্ন হয়। রাষ্ট্র গঠনের পিছনে সাধারণ স্বার্থই কাজ করে। সাধারণ স্বার্থে যা প্রয়োজন, সাধারণ ইচ্ছা তারই বহিঃপ্রকাশ।”
সাধারণ ইচ্ছার ভিত্তি রুশো মনে করেন যে, একজন মানুষের দুধরনের ইচ্ছা থাকে । যথা :
ক. বাস্তব ইচ্ছা ও খ. প্রকৃত ইচ্ছা ক. বাস্তব ইচ্ছা : ব্যক্তির যথার্থ ইচ্ছা হচ্ছে তার যুক্তি বিবর্জিত ও ব্যক্তিস্বার্থের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথার্থ ইচ্ছা সংকীর্ণ, ক্ষণস্থায়ী এবং বিরোধপূর্ণ। ব্যক্তির যথার্থ ইচ্ছা সমাজের কল্যাণসাধনে নিয়োজিত না থেকে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত থাকে ।
খ. প্রকৃত ইচ্ছা : প্রকৃত ইচ্ছা সমাজের কল্যাণে সদা নিয়োজিত থাকে। প্রকৃত ইচ্ছা দীর্ঘস্থায়ী এবং এটা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে । প্রকৃত ইচ্ছা হচ্ছে ব্যক্তির যুক্তিযুক্ত ইচ্ছা । প্রকৃত ইচ্ছার মাধ্যমেই ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়।
সাধারণ ইচ্ছার লক্ষ্য : রুশোর মতে, সাধারণ ইচ্ছাই সমাজের ব্যক্তিবর্গের মঙ্গলকামনা করে। তিনি বলেন, সামাজিক ন্যায়বিচারের মাপকাঠি হলো সাধারণ ইচ্ছা।
সত্যিকার অর্থে জনগণের কল্যাণ এবং মঙ্গলসাধন করাই হলো সাধারণ ইচ্ছার মূল লক্ষ্য। রুশো তার সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্বে বলেন, যদি কেউ মনে করে যে, সাধারণ ইচ্ছার নির্দেশ তার ব্যক্তিগত স্বার্থের পরিপন্থি তাহলে বুঝতে হবে যে কোথায় তার স্বার্থ নিহিত সে নিজেও জানে না।
রুশোর সাধারণ ইচ্ছার বৈশিষ্ট্য : রুশোর সাধারণ ইচ্ছা মতবাদ বিশ্লেষণ করলে এর কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
নিম্নে সাধারণ ইচ্ছা মতবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো—
১. সর্বজনীন : ব্যক্তিস্বার্থ বা ব্যক্তিগত কামনাবাসনার ঊর্ধ্বে থেকে ইচ্ছা, সাধারণ ইচ্ছা হতে পারে না। সাধারণ ইচ্ছা সাধারণত অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে এর উদ্দেশ্যকে সর্বজনীন করে তুলতে হবে। ব্যক্তি যতই ক্ষমতাবান ও মর্যাদাশালী হোক না কেন সাধারণ ইচ্ছার ক্ষেত্রে সবাই সমান ।
২. সার্বভৌম : রুশো বলেন, সাধারণ ইচ্ছা কল্যাণকামী। তাই এটি সার্বভৌম। সাধারণ ইচ্ছার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো জনগণের কল্যাণসাধন। রুশো সাধারণ ইচ্ছাকে শুধুমাত্র সার্বভৌম করেননি, একে চরম ক্ষমতাসম্পন্ন করেছেন।
রুশো মনে করেন, সাধারণ ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কোনো ব্যক্তি পুরো স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। মানুষ বিপথে গেলে সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন সাধারণ ইচ্ছার কাজ হলো সরিয়ে আনা।
৩. গণতান্ত্রিক : রুশো গণতান্ত্রিক আদর্শকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য সাধারণ ইচ্ছার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি একজন মহান চিন্তাবিদ, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দিশারি ছিলেন। এ মতবাদের মাধ্যমে তা প্রসারিত হয়। রুশো অভিমত প্রকাশ করেন যে, তার সাধারণ ইচ্ছার মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
৪. অভ্রান্ত : রুশো বলেন, সাধারণ ইচ্ছা কখনও কোনো ভুল করতে পারে না। জনগণের স্বার্থের পরিপন্থি কোনো কাজ সাধারণ ইচ্ছার কাজ নয়। রুশোর মতে, ব্যক্তি অনেক সময় নিজ স্বার্থে পরিচালিত হয় এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বহু ব্যক্তির মিলনে যৌথভাবে একবার সাধারণ ইচ্ছা প্রতিষ্ঠিত হলে তার মধ্যে ভুলত্রুটি থাকা সম্ভব নয় ।
৫. ক্ষমতার উৎস : রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব অনুযায়ী সব ক্ষমতার উৎস সাধারণ ইচ্ছা। সরকারের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে সাধারণ ইচ্ছা। সরকার এখানে সাধারণ ইচ্ছার ভৃত্য মাত্র। এটি সাধারণ ইচ্ছার মতানুযায়ী কাজ পরিচালনা করে থাকে ।
৬. ঐক্যের প্রতীক : রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। রাষ্ট্রীয় ঐক্যের মাধ্যমে সাধারণ ইচ্ছাকে টিকিয়ে রাখা হয়। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সাধারণ ইচ্ছা প্রতিষ্ঠিত না হলে রাষ্ট্রের ধ্বংস অনিবার্য। তাই রাষ্ট্রকে স্থায়ী করতে হলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সাধারণ ইচ্ছার বাস্তবায়ন করতে হবে।
সমালোচনা : রুশো যেসব দার্শনিক মতামত প্রদান করে রাষ্ট্রচিন্তায় স্থায়ী আসন লাভ করেছেন তার মধ্যে সাধারণ ইচ্ছা অন্যতম। সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্বের ভিত্তিতে রুশো গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা হলেও সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব সমালোচনা হতে মুক্তি পায়নি সমালোচকগণ বিভিন্নভাবে সাধারণ ইচ্ছা মতবাদের সমালোচনা করেছেন। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-
১. অস্পষ্ট : সমালোচকদের মতে, রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব অনেকটাই অস্পষ্ট । তিনি সাধারণ ইচ্ছা বলতে কী বুঝিয়েছেন তা তিনি তার মতবাদে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেননি। সাধারণ ইচ্ছার উদ্ভব কখন, কোথায় হয়েছিল তা রুশোর মতবাদে পাওয়া যায়নি।
২. স্বাধীনতাবিরোধী : রুশো তার সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্বে উল্লেখ করেন যে, কেউ যদি সাধারণ ইচ্ছাকে অস্বীকার করে তাকে প্রয়োজনবোধে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তা মেনে নিতে বাধ্য করা হবে। কিন্তু একথা স্বীকৃত যে রাষ্ট্র পরিচালনায় বলপ্রয়োগ স্বাধীনতাবিরোধী। কেননা বলপ্রয়োগ স্বৈরাচারের পথ প্রশস্ত করে ।
৩. অযৌক্তিক : রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব অযৌক্তিক। তিনি সাধারণ ইচ্ছা ও সকলের ইচ্ছার মধ্যে যে পার্থক্য করেছেন তা অর্থহীন । জন প্লামেনাজ (John Plamenatz) বলেছেন, “রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব অযৌক্তিক ও হাস্যকর।”
৪. বৃহত্তর রাষ্ট্রে অকার্যকর : রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব আধুনিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্রে কার্যকর করা সম্ভব নয়; বরং তিনি রাষ্ট্রের কতিপয় সংঘকে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু জাতীয় জীবনে এসবের গুরুত্ব অপরিসীম যা তিনি অস্বীকার করেছেন।
৫. অসামঞ্জস্য : রুশোর সাধারণ ইচ্ছা অপ্রতিনিধিত্বশীল । বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমন- সংবাদপত্র, বক্তৃতা মঞ, বিভিন্ন সংঘ ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উদ্ভবের ফলে আধুনিক প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থায় সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
৬. বাস্তবতা বিবর্জিত : রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্বের বাস্তব পরিস্থিতির সাথে কোনো মিল নেই। অবশ্য আদর্শের ব্যাখ্যা কখনোই বাস্তবসম্মত হতে পারে না। আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রে সাধারণ জাতীয় ইচ্ছাতত্ত্ব বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রুশোর সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্বটি রাজনৈতিক দর্শনে একটি উল্লেখযোগ্য মতবাদ। তিনি তার রচনার মাধ্যমে সাধারণ ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটান ।
সাধারণ ইচ্ছা ব্যক্তির কল্যাণসাধনে নিয়োজিত থাকে। বস্তুত সাধারণ ইচ্ছার মাধ্যমে রাষ্ট্র, সমাজ, সংগঠনের উন্নয়নে গতি ত্বরান্বিত হয়। রুশোর সাধারণ ইচ্ছা সম্পর্কে অধ্যাপক ম্যাক্সি (Maxey) অভিমত প্রকাশ করেন যে, “রুশোর মতবাদে সাধারণ ইচ্ছা বলতে সমষ্টিগত চেতনা, জনকল্যাণমুখী মনোভাব এবং যৌথ অভিপ্রায়ের কথাই বুঝায়।”
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর