PDF অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ও অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা, পর্ব- ১ ( প্রাচীন যুগ ) অধ্যায় ৩-প্লেটো এর অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF সহশিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: পর্ব:- ১ (প্রাচীন যুগ ) অধ্যায়
৩-প্লেটো এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDF অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- অনার্স প্রথম বর্ষ
- বিষয়ঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা
- পর্ব – ১ ( প্রাচীন যুগ )
- অধ্যায় ৩ – প্লেটো
- বিষয় কোডঃ ২১১৯০৩
গ – বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
0১. প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের একটি রূপরেখা বর্ণনা কর।
অথবা, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : গ্রিক নগররাষ্ট্র ব্যবস্থায় এক ক্রান্তিকালে সমৃদ্ধ নগররাষ্ট্র এথেন্স যখন বিপর্যস্ত প্লেটো তখন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্যা রিপাবলিক’ রচনা করেন। এ গ্রন্থে প্লেটো গ্রিসের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পরিহার করে একটি উত্তম রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়ন করেন।
প্লেটোর মতে, উন্নত জীবন হচ্ছে আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য এক্ষেত্রে তিনি তার শিক্ষা গুরু সক্রেটিসের মূলনীতি ‘Virtue is knowledge’ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। তিনি মানুষের মধ্যে ন্যায়ের উপস্থিতিকে বুঝাতে আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণাকে উপস্থাপন করেছেন।
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের একটি রূপরেখা : প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রের একটি রূপরেখা নিম্নে আলোচনা করা হলো,
১. শ্রেণিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান : প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্র একটি শ্রেণিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। তিনি নগররাষ্ট্রের অধিবাসীদের তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন যথা : দার্শনিক শ্রেণি, যোদ্ধা শ্রেণি এবং উৎপাদক শ্রেণি ।
২. শ্রমবিভাজন : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র শ্রমবিভাজন নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তার মতে, মানবাত্মার তিনটি বিশেষ উপাদান বা গুণের ভিত্তিতে সমাজে তিনটি স্বতন্ত্র শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে।
যারা যুক্তি, মেধা, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের দ্বারা পরিচালিত হয়ে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা করবে এবং জনগণের উন্নত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করবে তারা অভিভাবক শ্রেণি।
যারা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিজেদের জীবন দিতে সদা প্রস্তুত থাকবে তারা যোদ্ধা শ্রেণি। আর যারা দৈহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতি পার্থিব প্রয়োজন মিটাবে তারা উৎপাদক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
৩. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : ন্যায়ধর্ম প্লেটোর আদর্শরাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
- আরো পড়ুন:–PDF অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:-অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- ফ্রি PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
৪. ‘সদগুণই জ্ঞান’ নীতি : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হচ্ছে সক্রেটিসের ‘সদগুণই জ্ঞান’ এ নীতিবোধ। এক্ষেত্রে তিনি তার শিক্ষাগুরু সক্রেটিস দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি জ্ঞানের ভিত্তিতে তার আদর্শ রাষ্ট্র পরিচালনার কথা উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রের সকল স্তরের কর্মবিভাজনে তিনি শিক্ষার ওপর গরুত্বারোপ করেন।
৫. আইনের অনুপস্থিতি : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে আইনের প্রয়োজনীতাকে অস্বীকার করেন। কারণ প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ব্যক্তিভিত্তিক, আইনভিত্তিক নয়।
আর দার্শনিক রাজা সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী হন বলেই আদর্শ রাষ্ট্রে আইনের কোনো দরকার নেই। প্লেটোর মতে, শাসক যখন ন্যায়পরায়ণ থাকে, আইন তখন নিষ্প্রয়োজন এবং শাসক যখন দুর্নীতিপরায়ণ তখন আইন অকার্যকর হয়ে পড়ে।
৬. গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি। তিনি গণতন্ত্রকে অজ্ঞতা ও অযোগ্যতার শাসন বলে অভিহিত করেছেন। প্লেটোর মতে, রাজনীতিবিদদের অজ্ঞতা ও অযোগ্যতা গণতন্ত্রের জন্য অভিশাপস্বরূপ।
৭. রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন । তিনি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত দু স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা উল্লেখ করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা এবং উচ্চতর শিক্ষা। প্লেটোর মতে শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তিকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে ব্যক্তি জ্ঞানের বিকাশ লাভ করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
৮. দাসপ্রথাকে সমর্থন : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রকে বাস্তবায়িত করার জন্য দাসপ্রথাকে সমর্থন করেন। কেননা শাসক শ্রেণির সুখশান্তি বিধানে এবং রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য দাসদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৯. নারী পুরুষ সমানাধিকার : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে নারী পুরুষের সমানাধিকার ও সমদায়িত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পুরুষের পাশাপাশি নারী শিক্ষার অধিকার ও সুযোগের কথা বলেন। তিনি মনে করেন জনসংখ্যার অর্ধেক (নারী) পিছিয়ে থাকলে সামাজিক অগ্রগতি অসম্ভব।
১০. বিমূর্ত ধারণা : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা মাত্র প্রায়োগিক দিকের চেয়ে তত্ত্বের দিকেই প্লেটোর দৃষ্টি বেশি নিবন্ধ ছিল। অনেকেই মন্তব্য করেন, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র হচ্ছে কিছু নিছক আদর্শবাদী জটিল এবং অস্পষ্ট ধারণা বা মতবাদ।
১১. সম্পত্তিতে সাম্যবাদ : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের অভিভাবক শ্রেণি ও যোদ্ধা শ্রেণির সম্পত্তির বিলোপ সাধনের মাধ্যমে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতি ছিলেন। এ উভয় শ্রেণির ব্যয়ভার বহন করবে সরকার । সমাজে যাবতীয় সম্পত্তির অধিকারী হবেন উৎপাদক শ্রেণি ।
১২. পরিবার প্রথার অনুপস্থিতি : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রচলিত পরিবার প্রথার বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি মনে করেন, শাসক শ্রেণির যদি পরিবার পরিজন থাকে তাহলে শাসক তাদের প্রতি মায়ামমতার বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। ফলে তিনি সার্বিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কিত প্লেটোর মতবাদ বর্তমান কালের রাষ্ট্রচিন্তায় ব্যাপক প্রভাব লক্ষ করা যায়।
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র মতবাদ অনেকের মতে, কল্পনাপ্রসূত বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও তার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা বর্তমান কালে অত্যাচার, অবিচার ও স্বৈরাশাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
০২. প্লেটো ও এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তার মৌলিক পার্থক্যসমূহ আলোচনা কর ।
অথবা, প্লেটো ও এরিস্টটলের রাজনৈতিক দর্শনের মধ্যে বৈসাদৃশ্যসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : প্লেটো এবং এরিস্টটল ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের দুইজন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। তাদের দুজনের মধ্যে গুরু শিষ্যের সম্পর্ক বিদ্যমান।
মাত্র সতের বছর বয়সে এরিস্টটল প্লেটোর শিক্ষা একাডেমিতে যোগদান করেন এবং সেখানে কুড়ি বছর যাবৎ শিক্ষা লাভ করেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্লেটোর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
কাজেই উভয়ের রাষ্ট্রদর্শনের মধ্যে সাদৃশ্য থাকা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যায় উভয় চিন্তাবিদের মধ্যে রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব ও মতবাদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।
প্লেটো ও এরিস্টলের রাষ্ট্রচিন্তার মৌলিক পার্থক্যসমূহ : প্লেটো ও এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান নিম্নে এগুলো তুলে ধরা হলো-
১. দৃষ্টিভঙ্গি : প্লেটোর দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতির সঙ্গে এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তার দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। প্লেটো ছিলেন একজন গণিত শাস্ত্রের অনুরাগী তার একাডেমির নামফলকে খোদিত ছিল, “গণিত শাস্ত্রে যার কোনো নেই সে যেন এখানে প্রবেশ না করে।” পক্ষান্তরে চিকিৎসকের সন্তান হিসেবে বাল্যকাল থেকেই এরিস্টটলের জীবন বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং সে অনুযায়ী তার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।
২. পদ্ধতিগত : পদ্ধতিগত দিক থেকে প্লেটো ছিলেন একজন ভাববাদী দার্শনিক। তিনি তার রাষ্ট্রচিন্তা বিশ্লেষণে অবরোহ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। কিন্তু এরিস্টটল তার রাষ্ট্রদর্শনে যুক্তিভিত্তিক ও বৈজ্ঞানিক আরোহ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তিনি রাষ্ট্র সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তা বাস্তবতার নিরিখে যাচাই করতেন ।
৩. রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি : প্লেটোর মতে, ঐক্য ও সংহতির মাঝেই রাষ্ট্রের কল্যাণ নিহিত। তাই তিনি আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতির ওপর অত্যধিক জোর দেন। পক্ষান্তরে, এ সম্পর্কে এরিস্টটলের মতামত হলো, অনৈক্যের মধ্যেও রাষ্ট্রের মঙ্গল নিহিত।
৪. ব্যক্তিগত সম্পত্তি : প্লেটো তার সাম্যবাদের ধারণা উপস্থাপন করতে গিয়ে অভিভাবক শ্রেণির জীবন থেকে পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা অস্বীকার করেন তার মতে, অভিভাবক শ্রেণির জীবনে পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা রাষ্ট্রের প্রতি হুমকিস্বরূপ।
পক্ষান্তরে, এরিস্টটল প্লেটোর এ ধারণাকে কাল্পনিক বলে মনে করেন। তিনি সমাজের সকলের ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির পক্ষে মতামত প্রদান করেন।
৫. দাসপ্রথা : এরিস্টটল তার রাষ্ট্রদর্শনে দাসপ্রথাকে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন এবং সমাজে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিন্তু *দাস প্রথা সম্পর্কে প্লেটো সুস্পষ্টভাবে কিছুই বলেননি ।
৬. সাহিত্যকর্ম : প্লেটোর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Republic’ সাহিত্যিক মূল্য, রচনাশৈলী ও প্রকাশভঙ্গির দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম সাহিত্যকর্ম হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু সাহিত্য কর্ম হিসেবে এরিস্টটলের ‘The Politics’ এর স্থান এতটা উচ্চে নয় ।
৭. উপমা প্রয়োগ : প্লেটো তার রচনাশৈলীকে উপমা ব্যবহারের পারদর্শিতা প্রদর্শন করেন। তিনি বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে যুক্তিকে প্রকাশ করতেন। পক্ষান্তরে, এরিস্টটল তার রচনায় উপমার চেয়ে বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করতেন।
৮. শাসক : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রীয় শাসনভার দার্শনিক রাজার হাতে অর্পণ করেন। তার মতে, প্রকৃত দার্শনিকের সদগুণ অন্য সকলের সদগুণ অপেক্ষা শ্রেয় এবং অভিজ্ঞতা অপেক্ষা প্রজ্ঞা শ্রেয়।
পক্ষান্তরে, এরিস্টটল ব্যক্তির হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা ন্যস্ত না করে তা আইনের হাতে ন্যস্ত করেন। তার মতে, নিয়ন্ত্রণ না থাকলে শাসক স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে ।
৯. নীতিশাস্ত্র : প্লেটো নীতিশাস্ত্রকে রাষ্ট্রনীতির অন্তর্গত বিষয় হিসেবে কল্পনা করেন । কিন্তু এরিস্টটল নীতিশাস্ত্র থেকে রাজনীতিকে পৃথক করেন যার ফলে এরিস্টটল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন ।
১০. আদর্শ রাষ্ট্র : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো রোমন্টিকতা। কিন্তু এরিস্টটলের আদর্শ রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো বাস্তবতাভিত্তিক, রোমান্টিকতা নয়।
১১. নারীর অধিকার : প্লেটো তার শিক্ষাব্যবস্থায় নারীদের সমানাধিকারের কথা বলেন। বস্তুত তিনি নারী পুরুষের সমঅধিকারে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু এরিস্টটল এর রাষ্ট্রদর্শনে নারী মুক্তির ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি। তিনি নারীদের কর্মক্ষেত্র গৃহস্থালির কাজের মধ্যে আবদ্ধ রাখেন।
১২. সর্বোত্তম রাষ্ট্র : প্লেটো তার সরকারের শ্রেণিবিন্যাসে অভিজাততন্ত্রকে সমর্থন করেন। তার শাসনব্যবস্থায় উৎপাদক শ্রেণির কোনো স্থান নেই। পক্ষান্তরে এরিস্টটলের মতে, পলিটি বা মধ্যতন্ত্র হলো সর্বোত্তম সরকার ব্যবস্থা। তিনি আদর্শ রাজতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন জ্ঞাপন করেন ।
১৩. ব্যক্তিগত জীবন : ব্যক্তিগত জীবনে প্লেটো ছিলেন একজন অতীন্দ্রিয়, সংযমী, সদাচারী এবং সংসারত্যাগী লোক। পক্ষান্তরে, এরিস্টটল ছিলেন একজন বাস্তববাদী, যুক্তিবাদী ও সাংসারিক ব্যক্তি ।
১৪. চিন্তাধারা : প্লেটো ছিলেন একজন কল্পনাপ্রবণ, সংশ্লেষণবাদী ও সর্বাত্মকবাদী দার্শনিক। যার কারণে তার রচনার মধ্যে ন্যায়বিচার, সদগুণ, সৌন্দর্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রাধান্য লাভ করে। অপরদিকে, এরিস্টটলের রাষ্ট্রচিন্তায় বাস্তবতাকে গুরুত্বারোপ করা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটো ও এরিস্টটলের চিন্তাধারা পার্থক্য এতই তীব্র যে তারা রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে দুই জন দুই মেরুতে অবস্থান করছে।
একজন ভাববাদী দার্শনিক হিসেবে প্লেটো তার রাষ্ট্রদর্শনে শিক্ষা, সাম্যবাদ দার্শনিক রাজা, আদর্শ রাষ্ট্র প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেন। অন্যদিকে এরিস্টটল প্লেটোর প্রতিরূপ তত্ত্ব প্রদান করেন।
এ সম্পর্কে ভি. রাও (V. Rao) বলেন, “To turn from Plato to Aristotle is like coming down from the mountain tops to a well fenced and carefully cultivated land of fields and gardens.”
০৩. গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর ধারণা আলোচনা কর।
অথবা, গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর ধারণা মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ভূমিকা : গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ছিলেন গণতন্ত্র বিরোধী একজন রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। তার মতে, “আদর্শ রাষ্ট্রের বিচ্যুতির তৃতীয় পর্যায়ে যে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয় তাকে বলা হয় গণতন্ত্র তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কোনোক্রমেই উৎকৃষ্ট শাসনব্যবস্থা হতে পারে না। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠীর চক্রান্তে প্লেটোর শিক্ষাগুরু সক্রেটিসকে হত্যা করা হলে তিনি গণতন্ত্রের ঘোর বিরোধী হয়ে ওঠেন।
গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর ধারণা : গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর ধারণা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. আদর্শ বিচ্যুতির ফল : প্লেটো গণতন্ত্রকে আদর্শ রাষ্ট্রের বিচ্যুতির ফল বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, ধনিকতন্ত্রের বিত্তশালীরা অধিকতর সুবিধা ভোগের আশায় সাধারণ জনগণের ওপর শোষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে জনগণ তা থেকে মুক্তির জন্য বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ধনীদেরকে সরিয়ে নিজেরা ক্ষমতায় আসীন হয়।
ফলে উদ্ভূত হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। কিন্তু এ ব্যবস্থায় অচিরেই রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এজন্য প্লেটো গণতন্ত্রকে আদর্শ বিচ্যুতির ফল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
২. অদ্ভুত রকমের শাসনব্যবস্থা : প্লেটো তার ‘দ্যা রিপাবলিক’ গ্রন্থে গণতন্ত্রকে এক অদ্ভুত রকমের শাসনব্যবস্থা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে কারো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যার শাসন করার গুণ আছে সে শাসক হতে বাধ্য নয়। যার আনুগত্য পোষণ করার আবশ্যকতা আছে সে অনুগত হতে বাধ্য নয়।
যে অপরাধী সে দণ্ডিত নয়, যে দণ্ডিত সে অপরাধী নয়। এটা হচ্ছে অদ্ভুত ও অরাজক রকমের এক শাসনব্যবস্থা যেখানে সমান অসমান সকলেই সমান।”
৩. মূর্খের শাসন : প্লেটো গণতন্ত্রের যেসব ত্রুটি কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন তন্মেধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজনীতিদিদের অযোগ্যতা ও অজ্ঞতা। এজন্যই তিনি গণতন্ত্রকে মূর্খের শাসন বলে অভিহিত করেন। তিনি শাসক শ্রেণির অজ্ঞতা ও অযোগ্যতাকে গণতন্ত্রের অভিশাপ মনে করেন।
৪. অস্বাভাবিক শাসনব্যবস্থা : স্বভাবতই প্রতিটি সমাজের মানুষের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। তাই সমাজের সকল মানুষে ভেদাভেদ ঈশ্বর প্রদত্ত। তাই সমাজের সকল মানুষ যোগ্যতা ও মেধার দিক দিয়ে সমান নয়। কিন্তু গণতন্ত্রে সকলের সমান অধিকার ও মর্যাদার কথা বলা হয়। তাই প্লেটো একে অস্বাভাবিক শাসন ব্যবস্থা বলে মনে করেন।
৫. নিকৃষ্টতর শাসনব্যবস্থা : গণতন্ত্রে ধনী-দরিদ্র সকলেই সমান বিধায় এখানে যোগ্যতার কোনো মূল্য নেই। প্লেটোর মতে, “এ ব্যবস্থায় ভালো কিছু আশা করা যায় না।” এজন্য তিনি গণতন্ত্রকে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্টতর শাসনব্যবস্থা বলে উল্লেখ করেন।
৬. দুর্বল ভিত : গণতন্ত্রের মনস্তাত্বিক ভিত্তি হচ্ছে আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং এর ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা পর্যুদস্ত হয়। এমনকি গণতান্ত্রিক নীতিমালার কঠোর প্রয়োগের ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে। প্লেটো বলেন, “স্বার্থপর মানুষের নিয়ন্ত্রণে এসে গণতন্ত্র ধনিকতন্ত্রের রূপ লাভ করে।”
৭. সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণ : রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণে একটি উৎকৃষ্ট শাসনের প্রয়োজনীয়তার উপলব্ধি থেকে প্লেটো ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দার্শনিক রাজার শাসনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। কিন্তু গণতন্ত্র সর্বদা গোষ্ঠী তথা সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণে তৎপর।
৮. নীতিহীন শাসনব্যবস্থা : প্লেটোর গণতন্ত্রকে এক নীতিহীন শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করেন। তার মতে, অন্যান্য শাসনে একটি নীতি থাকে, কিন্তু গণতন্ত্রে কোনো নীতিই নেই। বিশেষ করে রাজনীতিবিদের নীতিহীনতার প্লেটো কঠোর সমালোচনা করেন।
- আরো পড়ুন:- PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF গ্রিক সমাজ ও প্রতিষ্ঠান: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি: রুশো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-PDF রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি রুশো: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-(ফ্রি PDF) রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি লক: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটো ছিলেন দার্শনিক রাজার শাসনে বিশ্বাসী একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। এজন্য তিনি গণতন্ত্রের চরম বিরোধিতা করেন এবং গণতন্ত্রকে অজ্ঞতা, অযোগ্যতা ও মূর্খের দ্বারা পরিচালিত এক অরাজক শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করেন।
যদিও বর্তমান কালে গণতন্ত্র হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা এবং জনমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের একমাত্র উপায়। এজন্যই গণতন্ত্র সম্পর্কে প্লেটোর মতামত বর্তমান কালে বিভিন্নভাবে সমালোচিত হচ্ছে।
০৪. প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র গণতন্ত্র বা কল্পনাবিলাসী কি না? আলোচনা কর।
অথবা, দার্শনিক প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র কি শুধুই কল্পনাপ্রসূত ছিল? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : গ্রিক নগররাষ্ট্র ব্যবস্থায় এক ক্রান্তিলগ্নে সমৃদ্ধ নগররাষ্ট্র এথেন্স যখন বিপর্যস্ত, প্লেটো তখন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Republic’ রচনা করেন।
এ গ্রন্থে প্লেটো গ্রিসের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পরিহার করে একটি উত্তম রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়ন করেন। প্লেটোর মতে, উন্নত জীবন হচ্ছে আদর্শ রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য এক্ষেত্রে তিনি তার শিক্ষাগুরু সক্রেটিসের মূলনীতি ‘Virture is knowledge’ দ্বারা প্রভাবিত হন। তবে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রকে আবার গণতন্ত্রের পরিপন্থি এবং কল্পনাবিলাসী বলে অভিহিত করা হয়।
প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র কল্পনাবিলাসী/গণতন্ত্র বিরোধী কি না : প্লেটোর আদর্শরাষ্ট্র কল্পনাবিলাসী বা গণতন্ত্রবিরোধী কি না তা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
১. কল্পনাবিলাসী: প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রকে অনেকে কল্পনাবিলাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অধ্যাপক ডানিং উক্ত আদর্শ রাষ্ট্রকে ‘নিছক রোমাঞ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে স্বর্গরাজ্যের কথা উল্লেখ করেছেন তা বাস্তবে অসম্ভব।
২. গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি প্লেটোর মতে, গণতন্ত্র হলো সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্টতম শাসনব্যবস্থা। এখানে যোগ্যতার কোনো মূল্য নেই। তিনি মনে করতেন অজ্ঞতা ও অযোগ্যতা গণতন্ত্রের জন্য অভিশাপস্বরূপ।
৩. রাজনৈতিক অধিকার : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে জনগণকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। এটি কোনো আদর্শ রাষ্ট্রের কাম্য হতে পারে না।
৪. দার্শনিক রাজা প্লেটো প্রদত্ত আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনার ভাগ্য সম্পূর্ণরূপে দার্শনিক রাজার ওপর নির্ভরশীল। তিনি দার্শনিক রাজাকে ক্ষমতাশালী করে একচেটিয়া ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
৫. সংবিধানের অনুপস্থিতি : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের কল্পনায় কোনো সংবিধান প্রাধান্য পায়নি তিনি দার্শনিক রাজার শাসনকে জনগণের একমাত্র কল্যাণকর দিক হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “শাসক যদি হয় ন্যায়পরায়ণ আইন তখন নিষ্প্রয়োজন আর শাসক যদি হয় দুর্নীতিপরায়ণ আইন সেখানে নিরর্থক।”
৬. অভিজাততান্ত্রিক রাষ্ট্র : প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র মূলত অভিজাততান্ত্রিক। অবশ্য আদর্শ রাষ্ট্র বুদ্ধি বা মেধার আভিজাত্য, দার্শনিক রাজা অভিজাত সম্প্রদায়ের মাধ্যমে শাসিত। এখানে তৃতীয় শ্রেণির লোকেরা শিক্ষার অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
৭. অরাজক শাসনব্যবস্থা : গণতন্ত্রের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলে প্লেটো গণতন্ত্রকে অরাজক শাসন ব্যবস্থা বলে অভিহিত করেছেন। প্লেটো বলেন “গণতন্ত্র হচ্ছে অদ্ভুত রকমের এক অরাজক শাসনব্যবস্থা যেখানে সমান ও অসমান সকলেই সমান।”
৮. স্বৈরতন্ত্রের অনুসারী : প্লেটো প্রদত্ত আদর্শ রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে দার্শনিক রাজা। তিনি দার্শনিক রাজার আদেশ নির্দেশকে আইন বলে অভিহিত করেছেন। প্লেটো শাসক শ্রেণির ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর ভিত্তি করে স্বাধীনতা প্রদানের মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করেছেন ।
৯. শ্রেণিবৈষম্য : প্লেটো বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা শ্রেণিবৈষম্য দোষে দুষ্ট। প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের কল্পনা করেছিলেন সমাজের সকল প্রকার বিরোধ দূর করে এক ঐক্যবদ্ধ শ্রেণিবৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রত্যাশায়। কিন্তু তিনি আদর্শ রাষ্ট্র কাঠামোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে তাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন।
১০. মানবপ্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে দার্শনিক রাজার সম্পত্তির অধিকার ও বিবাহকে নিষিদ্ধ করেন। তিনি অভিভাবক শ্রেণির জন্য রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিশেষ আইনের মাধ্যমে যৌনমিলনের ব্যবস্থার কথা বলেন। যা মানুষের প্রকৃতি প্রদত্ত স্বাভাবিক নিয়মের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ প্রদর্শন করে।
১১. ব্যক্তিত্ব খর্ব : প্লেটো বলেন, “রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি, ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র নয় ।” তিনি মনে করেন, ন্যায়নীতিতে বিশ্বাসী মানুষকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার ফলে ব্যক্তিত্ব খর্ব হয়।
১২. উৎপাদক শ্রেণিকে অবহেলা : প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রের উৎপাদক শ্রেণিকে সকল প্রকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। আদর্শ রাষ্ট্রে প্লেটো রাষ্ট্রের বৃহৎ এই শ্রেণিকে কোনো সামাজিক মর্যাদা না দিয়ে শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর উৎপাদনকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের মতবাদ কিছুটা কাল্পনিক ও অসামঞ্জস্য হওয়া সত্ত্বেও একথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, তার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা বর্তমান কালের রাষ্ট্রচিন্তায় গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।
আধুনিক কালের ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্লেটোর রাষ্ট্রদর্শনের অবদান যদিও প্লেটো নিজেই স্বীকার করেছেন তার এ আদর্শ রাষ্ট্র কেবল স্বর্গরাজ্যেই পাওয়া সম্ভব তথাপি তার এই ধারণা অন্যায়, অবিচার ও শাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করে ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। PDF অনার্স প্লেটো:পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা রচনামূলক প্রশ্নোত্তর