(PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, অধ্যায়: ৩ প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
(PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ লোকপ্রশাসন পরিচিতি
অধ্যায় ৩ : আমলাতন্ত্র
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৭
গ-বিভাগঃ রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
০১. আমলাতন্ত্র বলতে কী বুঝ? একটি আধুনিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা আলোচনা কর। অথবা, একটি আধুনিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আধুনিক সংগঠনের প্রশাসনিক কাঠামো বা সিভিল সার্ভিসে এটি একটি অপরিহার্য নিয়ামক, যা সব ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রশাসনে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট।
আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রের অপরিহার্য চালিকাশক্তি। বর্তমান পৃথিবীতে শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে এর বিকল্প এখনও তৈরি হয়নি। মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীন সময়েও আমলাতন্ত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
আমলাতন্ত্র আমলারা হলেন রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত স্থায়ীভাবে এমন সব কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ যারা জনপ্রতিনিধি নন এবং ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হননি। অন্যভাবে বলা যায়, আমলাতন্ত্র এমন একটি বৃহদাকার সংগঠন যাতে আমলারা পরস্পর সংযুক্ত থেকে কার্যসম্পাদন করেন। আমলাদেরকে নীতিনির্ধারণ তৈরিকারক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
শাব্দিক অর্থ আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ Bureaucracy এ শব্দের উৎপত্তি ফরাসি শব্দ থেকে। ফরাসি Bureau শব্দের অর্থ ডেস্ক, টেবিল, দফতর বা অফিস। আর গ্রিক Kratia শব্দের অর্থ শাসনব্যবস্থা, সরকার বা রাজনৈতিক শক্তি।
সুতরাং Bureaucracy বলতে দফতরভিত্তিক শাসনব্যবস্থাকে বুঝানো হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফরাসি অর্থনীতিবিদ “জ্যাকুইস ক্লাদে ম্যারি ভিনসেন্ট দ্য গোউনে’ সর্বপ্রথম এ শব্দের প্রচলন করেন ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের (Max Weber) মতে, “Bureaucracy is a system of administration characterised by expertness impartiality and the absence of humanity.” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্র এমন একটি প্রশাসন ব্যবস্থা যা দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, মানবিকতার অনুপস্থিতি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
এইচ. জে. লাস্কি (H. J. Laski) বলেন, “Bureaucracy is a system of government, the control of which is so completely in the hands of the officials that their power jeopardizes the liberties of ordinary citizens.
” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা যার নিয়ন্ত্রণ সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে এমনভাবে থাকে যে তাদের ক্ষমতা সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
অধ্যাপক ফিফনার ও প্রেসথাস (Prof. Pfiffner and Presthus), “Bureaucracy is a systematic organization of tasks and individuals into a pattern which can effectively attain the end of a group effort.” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্র হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে কর্ম ও কর্মীদের একটি পদ্ধতিগত সংগঠন যা কার্যকরভাবে একটি দলগত প্রচেষ্টার ফলাফলকে অর্জন করতে পারে।
অধ্যাপক ফাইনার (Prof. Finer) বলেন, “Civil service/ Bureaucracy is a professional body official’s parmanent, paid and skilled.” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্র একটি স্থায়ী বেতনভুক্ত এবং দক্ষ চাকরিজীবী শ্রেণি ।
অ্যালমন্ড ও পাওয়েল (Almond & Powell ) বলেছেন, “আমলাতন্ত্র হলো এমন একটি বিস্তৃত সংগঠন যার মাধ্যমে আইন প্রণয়নকারীগণ নিজেদের সিদ্ধান্তকে স্থায়ী করার চেষ্টা করেন।”
একটি আধুনিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বের আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটি একটি অপরিহার্য অংশ। আধুনিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের নানাবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ : আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমলাতন্ত্রই অধিকাংশ আইনের সূচনা করে এবং পরবর্তীতে আমলারাই সে আইনটি কার্যকর করে।
যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিল আইনসভায় উপস্থাপন করা হয় সেগুলোর অধিকাংশই প্রশাসনিক বিভাগ দ্বারা গৃহীত হয়। আমলাগণ কোনো আইনকে বিশেষ ক্ষমতা আরোপ করে কার্যকর করে থাকেন ।
২. নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন : আমলারা সরকারি নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলারা এ ক্ষেত্রে সুপরিকল্পিতভাবে প্রশাসনিক জটিলতাগুলো দূর করতে সক্ষম হয়। অপরদিকে, সরকারি নীতি কার্যকর হওয়া নির্ভর করে আমলাদের কর্মদক্ষতা, দৃঢ়তা ও ইচ্ছার ওপর।
৩. প্রশাসনিক নিরবচ্ছিন্নতা : আমলারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, অগণিত রাজনৈতিক দল, দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব, অদক্ষতা, নিয়ন্ত্রণহীনতা ইত্যাদি কারণে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমলারাই প্রশাসনিক নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখেন ।
৪. পরামর্শ প্রদান : বিভিন্ন সরকারি কাজে আমলারাই রাজনৈতিক নেতাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কারণ তারা দীর্ঘদিন একই ধরনের কাজ করতে করতে রাজনৈতিক নেতাদের থেকেও বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ফলে সরকারি নীতিনির্ধারণ ও শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আমলাদেরকে পরামর্শ প্রদান করতে হয়।
৫. বিচারসংক্রান্ত কার্যাবলি : বর্তমান সময়ে আমলাদেরকে বিচারসংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। অনেক দেশেই এখন আদালতের পরিবর্তে প্রশাসনিক সংস্থাসমূহের দ্বারা কিছু বিচারকার্য সম্পাদন হচ্ছে। যেমন- প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল, মোবাইল কোর্ট ইত্যাদি।
৬. সামাজিক পরিবর্তন সাধন: আমলাতন্ত্র সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলাতন্ত্র ঐসব ক্ষেত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে যেগুলো সামাজিক পরিবর্তন ঘটায়।
উদাহরণস্বরূপ- উৎপাদন ব্যবস্থা, প্রশাসন, ভূমি, শিল্প ও শিক্ষা। মূলত, সরকার ব্যবস্থার স্থায়িত্ব নির্ভর করে সামাজিক অবস্থার ওপর। আর এ কাজে আমলাতন্ত্রই প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যোগান দেয় ।
৭. পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন : প্রশাসনে মন্ত্রীদের কাজ হচ্ছে সরকারি নীতিনির্ধারণ করা এবং আমলাদের কাজ হচ্ছে সেসব নীতিগুলো বাস্তবায়ন করা। এক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ভালো থাকতে হবে। তাহলে তা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৮. পররাষ্ট্রসংক্রান্ত কার্যাবলি : বৈদেশিক সম্পর্কের খুঁটিনাটি ও সূক্ষ্ম বিষয়গুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি বাস্তবায়ন আমলাদের দায়িত্বে থাকে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলন, বৈঠক ও আলাপ-আলোচনায় আমলারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সুতরাং পররাষ্ট্রসংক্রান্ত কার্যাবলিতে আমলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়।
৯. অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ : অধস্তন কর্মচারীরা তাদের কাজ সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন আমলাদেরকে অবহিত করেন এবং ঊর্ধ্বতন আমলারাও অধস্তন আমলাদের সাথে ভালো যোগাযোগ রক্ষা করেন । ফলে তাদের মধ্যে কোনো জটিলতা তৈরি হয় না । এভাবেই প্রশাসনে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
১০. প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ : আমলাতন্ত্র তথ্য সরবরাহের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন স্বার্থ গোষ্ঠীগুলো আমলাতন্ত্র কর্তৃক প্রেরিত তথ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকে।
আইন বিভাগকে আইন প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য আমলারাই সরবরাহ করে থাকেন। এছাড়া শাসন বিভাগের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও আমলারা তথ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১১. প্রশাসনের উৎকর্ষ বৃদ্ধি : আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসনের উৎকর্ষ আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে। এ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত দার্শনিক জন ডিউই (John Dewey) বলেন, “A final important function of bureaucracies is that of their own internal management.” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষ বৃদ্ধি করা।
১২. সিদ্ধান্ত গ্রহণ : আমলারা নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন এবং আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সরকারি কাজে তাদের ভূমিকাগুলো অন্যান্য বিভাগের ওপর অর্পিত চাপ কমিয়ে দেয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আমলাতন্ত্র আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলাতন্ত্র আধুনিক, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থার একটি উপসর্গ।
বর্তমান জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের কার্যাবলি ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে কাজেই বলা যায়, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা সামগ্রিক পরিবর্তন সাধনে আমলাতন্ত্র এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
- আরো পড়ুন:- (PDF) অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDFফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অধ্যায় ৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরPDF
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি পিডিএফ) অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ফ্রি পিডিএফ
- আরো পড়ুন:- অধ্যায়২: লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর ৪টি ফ্রি পিডিএফ
০২. আমলাতন্ত্র কাকে বলে? আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য লেখ। অথবা, আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞা দাও। আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে আমলাতন্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্বজনীন ধারণা। জাতিরাষ্ট্র উদ্ভবের অনেক পূর্ব থেকেই আমলাতন্ত্রের সূচনা হয়েছে। আমলাতন্ত্র আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একটি কার্যকরী সংগঠন।
সরকারি নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র এমন একটি সংগঠন যার বিরুদ্ধে শত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে প্রশাসন থেকে আলাদা করা যাবে না।
আমলাতন্ত্র : আমলারা হলেন রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত স্থায়ীভাবে এমন সব কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ যারা জনপ্রতিনিধি নন এবং ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হননি। অন্যভাবে বলা যায়, আমলাতন্ত্র এমন একটি বৃহদাকার সংগঠন যাতে আমলারা পরস্পর সংযুক্ত থেকে কার্যসম্পাদন করেন। আমলাদেরকে নীতিনির্ধারক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
শাব্দিক অর্থ : আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ Bureaucracy এ শব্দের উৎপত্তি ফরাসি শব্দ থেকে। ফরাসি Bureau শব্দের অর্থ ডেস্ক, টেবিল, দফতর বা অফিস। আর গ্রিক Kratia শব্দের অর্থ শাসনব্যবস্থা, সরকার বা রাজনৈতিক শক্তি।
সুতরাং Bureaucracy বলতে দফতরভিত্তিক শাসনব্যবস্থাকে বুঝানো হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফরাসি অর্থনীতিবিদ “জ্যাকুইস ক্লাদে ম্যারি ভিনসেন্ট দ্য গোউনে’ সর্বপ্রথম এ শব্দের প্রচলন করেন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের (Max Weber) মতে, “Bureaucracy is system of administration a characterised by expertness impartiality and the absence of humanity.” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্র এমন একটি প্রশাসন ব্যবস্থা যা দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, মানবিকতার অনুপস্থিতি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
এইচ. জে. লাস্কি (H. J. Laski) বলেন, “Bureaucracy is a system of government, the control of which is so completely in the hands of the officials that their power jeopardizes the liberties of ordinary citizens.
” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা যার নিয়ন্ত্রণ সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে এমনভাবে থাকে যে তাদের ক্ষমতা সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
অধ্যাপক ফিফনার ও প্রেসবাস (Prof. Pfiffner and Presthus ) বলেন, “Bureaucracy is a systematic organization of tasks and individuals into a pattern which can effectively attain the end of a group effort.
” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্র হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে কর্ম ও কর্মীদের একটি পদ্ধতিগত সংগঠন যা কার্যকরভাবে একটি দলগত প্রচেষ্টার ফলাফলকে অর্জন করতে পারে।
অধ্যাপক গার্নার (Prof. Garner) বলেন, “Bureaucracy means the civil servants, the administrative functionaries who are professionally trained for the public service and who enjoy permanency of tenure, promotion within service partly by seniority and partly by merit.
” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্র মানে সরকারি বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা পেশাগতভাবে পাবলিক সার্ভিসের জন্য প্রশিক্ষিত এবং যারা কর্তব্যরত হয়ে স্থায়ী মেয়াদ ও পদোন্নতি ভোগ করে। এটি নির্ধারিত হয় আংশিকভাবে জ্যেষ্ঠতা বা যোগ্যতার ভিত্তিতে।
অধ্যাপক ফাইনার (Prof. Finer) বলেন, “Civil service/ bureaucracy is a professional body officials parmanent, paid and skilled.” অর্থাৎ, আমলাতন্ত্র একটি স্থায়ী বেতনভুক্ত এবং দক্ষ চাকরিজীবী শ্রেণি ।
অ্যালমন্ড ও পাওয়েল (Almond & Powell) বলেন, “আমলাতন্ত্র হলো এমন একটি বিস্তৃত সংগঠন যার মাধ্যমে আইন প্রণয়নকারীগণ নিজেদের সিদ্ধান্তকে স্থায়ী করার চেষ্টা করেন।
” আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য : বর্তমানে আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে সেগুলো বর্ণনা করা হলো—
১. পদক্রম নীতি: পদক্রম নীতি আমলাতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন ও নিম্নতম কর্মকর্তা- কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পরস্পর যুক্ত করা হয়।
এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তির ওপরে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকেন তিনি তার নিম্নতম কর্মকর্তাকে কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য নির্দেশ দেন। পদক্রম নীতির ফলে পরিকল্পনা, সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে ।
২. কর্মবিশেষীকরণ: কর্মবিশেষীকরণ আমলাতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আমলারা কোনো কাজে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ফলে বারবার একই কাজ করার কারণে পরিপূর্ণভাবে কাজটিকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসেন।
কোনো পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের প্রস্তুতি ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। আর এ কারণে বিশেষীকরণের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মবিশেষীকরণের কারণে কোনো কাজের পুনরাবৃত্তি বা সংঘর্ষ সহজেই পরিহার করা সম্ভব ।
৩. নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ : পেশা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা আমলাতন্ত্রের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আমলাতন্ত্রে প্রতিটি পদের কার্যপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয় নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে আরও দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
৪. নিরপেক্ষতা : আমলাতন্ত্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো নিরপেক্ষতা। আমলারা নিরপেক্ষভাবে তাদের কার্যাদি সম্পাদন করবে। দলীয় রাজনীতির সাথে আমলারা কোনো সম্পর্ক রাখবে না। বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে। কিন্তু আমলারা রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে সরকারি নীতি বাস্তবায়নে সাধারণ জনগণের জন্য কাজ করবে।
৫. স্থায়িত্ব : স্থায়িত্ব হলো আমলাতন্ত্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। এটি দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব ভোগ করে। অপরপক্ষে, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্ব মুনাফা অর্জনের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সরকারি সংগঠনগুলোর কার্যাবলি জনকল্যাণমূলক । আর তাই জনস্বার্থের কারণে এরা দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব ভোগ করে ।
৬. নিয়মানুবর্তিতা : আমলাতন্ত্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য নিয়মানুবর্তিতা। এর ভিত্তিতেই একটি রাষ্ট্রে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। নিয়মানুবর্তিতা ছাড়া প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গতিশীলতা আসে না। শক্তিশালী প্রশাসন ব্যবস্থা তৈরির জন্য আমলারা নিয়মানুযায়ী সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
৭. শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা : প্রশাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন। ঊর্ধ্বতন আমলা ও তাদের অধীনস্থরা সর্বদা শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে সকল কার্যাদি সম্পাদন করেন। যদি কোনো আমলা শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ।
৮. কঠোর আইনচর্চা : আমলাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড ও আচরণ কঠোর আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অনুমোদনহীন কাজ আমলারা সম্পাদন করতে পারেন না।
যেসব প্রশাসনিক কাজের জন্য নাগরিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়, সেসব কাজের ক্ষেত্রে আইনের অনুমোদন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ইচ্ছানুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না
৯. লিখিত দলিল : আমলাতন্ত্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো লিখিত দলিল বা প্রমাণপত্র। লিখিত দলিল প্রশাসনকে সাধারণ নাগরিকদের কাছে জবাবদিহি করে তুলে এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। আমলাতন্ত্রে সকল প্রকার প্রশাসনিক আইন, নিয়মনীতি ও সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ আছে।
১০. লাল ফিতার দৌরাত্ম্য : লাল ফিতার দৌরাত্ম্য মূলত আমলাতন্ত্রের একটি সমস্যার দিক । কিন্তু এর ধারাবাহিক অনুশীলনীর কারণে এটি আমলাতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্যে রূপান্তরিত হয়েছে।
আমলারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনমনীয় আচরণ করেন। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম বহুদিন ফাইলবন্ধ অবস্থায় থাকে। ফলে প্রশাসনিক জটিলতার সাথে সাথে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়।
১১. অজ্ঞাতসারে দায়িত্ব পালন : লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা আমলাতন্ত্রের অন্যমত একটি বৈশিষ্ট্য । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমলাদেরকে এটি মেনে চলতে হয়। তারা রাজনৈতিক নেতাদের নামে কার্যসম্পাদন করেন। ফলে প্রশাসনিক কাজের সুনাম বা দুর্নামের ভাগীদার হতে হয় না ।
১২. পদোন্নতি : একটি নির্দিষ্ট সময় পরে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমলাদের পদোন্নতি ঘটে। এটি আমলাতন্ত্রের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতি না হয়ে যদি রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়, তাহলে তা আমলাতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে মানুষের দৈনন্দিন চাহিদাতে পরিবর্তন এসেছে। ফলে সরকারি কাজের পরিমাণ ও জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এজন্য আমলাতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। আমলাতন্ত্র বর্তমানে প্রতিনিয়ত নিজেকে শক্তিশালী ও কার্যকর সংগঠন হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করছে।
০৩. উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ার কারণ আলোচনা কর। অথবা, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়ে ওঠার কারণ কী?
উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহে আমলাতন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোর অপরিহার্য অঙ্গ হলো আমলাতন্ত্র । আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সরকারকে বহুমুখী কার্যাবলি হ সম্পাদন করতে হয়। সরকারের কর্মকাণ্ড ও দায়িত্ব প্রসারের সাথে সাথে আমলাদের কাজ, দায়িত্ব ও কর্তব্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেননা উন্নয়নশীল দেশের সরকারের কার্যাবলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমলাদের ওপর নির্ভরশীল আমলাতন্ত্র আমলারা হলেন রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত স্থায়ীভাবে নিযুক্ত এমন সব কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ যারা জনপ্রতিনিধি নন এবং ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হননি ।
অন্যভাবে বলা যায়, আমলাতন্ত্র এমন একটি বৃহদাকার সংগঠন । যাতে আমলারা পরস্পর সংযুক্ত থেকে কার্যসম্পাদন করেন। আমলাদেরকে নীতিনির্ধারক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ার কারণ : আমলাতন্ত্র আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়ে ওঠার কারণ নিম্নে আলোচনা করা হলো—
১. নীতিনির্ধারণ : প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সরকারি নীতিনির্ধারণের সাথে আমলাদের সংশ্লিষ্টতার কারণে উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা আইনসভায় যেসব সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করেন তার সব তথ্য ও উপাত্ত আমলারাই সরবরাহ করে থাকেন। সুতরাং সব ধরনের নীতিনির্ধারণের সাথে আমলাতন্ত্রের সংশ্লিষ্টতা আছে।
২. নীতি বাস্তবায়ন : আমলাদের প্রধান কাজ হলো নীতি বাস্তবায়ন উন্নয়নশীল দেশে নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছেন আমলারা ফলে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে।
৩. সামাজিক পরিবর্তন সাধন : সামাজিক পরিবর্তনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের সাথে আমলাতন্ত্রের সম্পৃক্ততার কারণে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। মূলত, আমলারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের উপাদানগুলো শনাক্ত, সচল ও পরিচালনা করেন ।
৪. স্থায়িত্ব : উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলে স্থায়িত্ব। আইনসভা, পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশে সরকারের পাশাপাশি আমলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা যেটি রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে সম্ভব নয় । কেবল আমলারাই পারেন নির্দিষ্টি মেয়াদ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রশাসন ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে।
৫. আইন প্রণয়ন : যেকোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনসভার উত্থাপিত বিলের খসড়া আমলারাই সম্পাদন করে থাকেন। সুতরাং আইন প্রণয়নের সাথেও আমলারা জড়িত, যা তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
৬. আইনের প্রয়োগ : উন্নয়নশীল দেশে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমলাদের সংশ্লিষ্টতার কারণে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। কিছু আইনের প্রয়োগ আমলারা নিজেরাই করছেন। ফলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। যেমন- প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল, মোবাইল কোর্ট স্থাপন ইত্যাদি।
৭. মন্ত্রীদের পরামর্শ প্রদান : উন্নয়নশীল দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মন্ত্রিগণ আমলাদের পরামর্শ বা মতামত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করেন। কিন্তু মন্ত্রীরা আমলাদের মতো দক্ষ ও অভিজ্ঞ না হওয়ার কারণে পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য হন। কাজেই আমলাদের ওপর মন্ত্রীদের নির্ভরশীলতা আমলাতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করছে।
৮. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে সমঝোতা : সরকারের সাথে বিভিন্ন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে সমঝোতা করার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তাদের নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করে।
অপরদিকে, সরকারও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে চায় না। ফলে উভয়ের মধ্যে আমলাতন্ত্র সমঝোতা করে। উন্নয়নশীল দেশে সমঝোতাকারী হিসেবে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
৯. প্রশাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষা : প্রশাসনিক ব্যবস্থায় কর্মের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাজনীতিবিদরা প্রশাসনে স্থায়ী নন।
ফলে তাদের পক্ষে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমলারা প্রশাসনে স্থায়ী মেয়াদ ভোগ করেন এবং কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন এ কারণেই উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র এত শক্তিশালী।
১০. পররাষ্ট্রনীতি ব্যবস্থাপনা : বর্তমানে পৃথিবীর এক রাষ্ট্র আরেক রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে পররাষ্ট্রনীতির গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে আমলারাই পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এছাড়া দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের ক্ষেত্রে আমলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ার অন্যতম কারণ এটি।
- আরো পড়ুন:-প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-প্রশাসন ও সংগঠনের নীতিমালা,অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর(PDF)
- আরো পড়ুন:-লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- লোকপ্রশাসন পরিচিতির রচনামূলক প্রশ্নোত্তর(ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- ফ্রি PDF লোকপ্রশাসন পরিচিতি‘র (খ) সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১১. বিচারসংক্রান্ত কার্যাবলি : উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্রের শক্তিশালী হওয়ার কারণ হলো আমলাদের বিচারসংক্রান্ত কার্যাবলিতে সম্পৃক্ততা। অনেক বিচার কার্যক্রম এখন আদালতে না হয়ে প্রশাসনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
যেমন- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপরাধের বিচারের জন্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল রয়েছে। সুতরাং বিচারসংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করার কারণে উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে।
১২. উপযুক্ত নেতৃত্ব : সরকারি নীতির বাস্তবায়ন নির্ভর করে আমলাতন্ত্রের নেতা ও নেতৃত্বের ওপর। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহে দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়ে উঠছে। যোগ্য পরিচালক ও পরিচালনা ব্যতীত কোনো সংগঠন সঠিকভাবে চলতে পারে না।
১৩. গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা : আমলারা প্রশাসনের সমস্যাসমূহ গবেষণার মাধ্যমে বের করেন এবং পরবর্তীতে তা সমাধানের ব্যাপারে সচেষ্ট হন। আর এভাবেই উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
১৪. উপযুক্ত বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি : আমলাতন্ত্রে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে উপযুক্ত বেতন ও ভাতা প্রদান এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করার কারণে তারা আরও উদ্যম নিয়ে কাজ করে। ফলে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
১৫. জবাবদিহিতা : যদিও আমলারা জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নন, তবুও জনগণের কাছে তাদের পরোক্ষ জবাবদিহিতা রয়েছে। তবে যথাযথ জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হওয়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশে আমলাতন্ত্র এত শক্তিশালী হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সরকারের প্রায় সকল কাজ আমলাদের দ্বারা সম্পাদিত হয়। ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের অনুপস্থিতি ঘটলে প্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। উন্নয়নশীল দেশে এটি নির্বাহী বিভাগের অরাজনৈতিক অংশ হওয়ার কারণে দক্ষতা স্থায়িত্বের ভিত্তিতে ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। (PDF) অধ্যায়৩:আমলাতন্ত্র লোকপ্রশাসন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর