PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর ও PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর সহ শিক্ষমূলক সকল বিষয় পাবে এখান থেকে: অধ্যায় ৫.৬ : হবস, এর অতিসংক্ষিপ্ত, প্রশ্নোত্তর,সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ও
রচনামূলক প্রশ্নোত্তর, সাজেশন সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত সকল কিছু জানতে পারবেন। সুতরাং সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। অনার্স ১ম বর্ষের যেকোন বিভাগের সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
অনার্স প্রথম বর্ষ
বিষয়ঃ রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি
অধ্যায় ৫.৬ : হবস
বিষয় কোডঃ ২১১৯০৯
গ-বিভাগঃ রচনামুলক প্রশ্নোত্তর
০১. মানব প্রকৃতি সম্পর্কে টমাস হবসের ধারণা আলোচনা কর।
অথবা, মানব প্রকৃতি সম্পর্কে টমাস হবসের মতবাদটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সপ্তদশ শতকের অনন্যসাধারণ ইংরেজ দার্শনিক ছিলেন টমাস হবস। তিনি আর্মাভা বিজয়ের বছরে ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল ইংল্যান্ডের মেমসবেরী নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। টমাস হবস সামাজিক চুক্তিবাদী দার্শনিক হিসেবে সমধিক পরিচিত ছিলেন।
সতেরো শতকের এই ইংরেজ দার্শনিক তার রাজনৈতিক চিন্তাধারা মানব চরিত্র ও মনস্তত্ত্বের ভিত্তিতে রচনা করেন। টমাস হবস তার ‘লেভিয়াথান’ গ্রন্থে মানব প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
মানব প্রকৃতি সম্পর্কে টমাস হবসের ধারণা : মানব প্রকৃতি সম্পর্কে টমাস হবস অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ধারণা পোষণ করেছেন। মানব প্রকৃতি বিশ্লেষণে তিনি গতিতত্ত্বের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। তার মতে, মানুষ জড়বস্তুর ন্যায় আবেগহীন যন্ত্রবিশেষ।
কোনো নির্দিষ্ট অবস্থায় একটি জড় পদার্থের অবস্থা কেমন হতে পারে তা যেমন পূর্বেই অনুমান করা যায়, তেমনি নির্দিষ্ট কোনো অবস্থায় একজন মানুষের আচরণ কী হতে পারে সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীও করা যায়। তবে হবস মানুষকে যন্ত্রের সাথে তুলনা করলেও মানুষের যে যুক্তির উপাদান আছে’ এটাকে তিনি অস্বীকার করেননি।
তার সাহায্যে সে হিসাবনিকাশ করে অত্যন্ত ফলপ্রসূভাবে তার আকাঙ্ক্ষাসমূহ চরিতার্থ করতে চায়। কিন্তু যুক্তির কথা বাদ দেওয়া হলে মানব প্রকৃতির মধ্যে কতিপয় সাধারণ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়
১. মানুষ মূলত জড় পদার্থ : মানুষ মূলত একটি জড় পদার্থ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক জড়বস্তুর ন্যায় সে কার্যকারণ সম্পর্ক রীতির নিয়মাধীন। মন বলে যে জিনিসের কথা বলা হয় তা একটি ‘ক্ষয়িষ্ণু বস্তু’, ইচ্ছার স্বাধীনতা বা উদ্দেশ্যবাদ বলে কোনোকিছু নেই। এগুলো সবই নিছক মায়া বা ভ্রম। বস্তুত ‘অমূর্ত ব্যক্তি’ হিসেবে মানুষ সম্পর্কে এটিই হলো হবসের যথার্থ ধারণা ।
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর PDFডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক হবস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- অনার্স রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন রচনামূলক প্রশ্নোত্তর PDF
- আরো পড়ুন:- PDF ফ্রি অনার্স: রাজনৈতিক সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স: সেন্ট অগাস্টিন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট অগাস্টিন: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (PDF ফ্রি)
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
২. আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা : মানুষের সব কর্ম প্রচেষ্টা, আবেগ অনুভূতি, আকর্ষণ ও অভিকর্ষণসঞ্জাত আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা দুটি মূল অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি। হবস বিশ্বাস করতেন যে, মনোবিজ্ঞানে ‘অনুভব করা’ (Feeling) ও ‘ইচ্ছা করা’ (Willing) বলতে যা বুঝায় তার সমন্বয়ে ‘উদ্যম’ (Endeavour) সৃষ্টি হয়। আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা এ উদ্যমেরই বিপরীতমুখী দুটি অভিব্যক্তি মাত্র ।
৩. স্বাতন্ত্র্যবাদী : হবসের মতে, মানুষ স্বাতন্ত্র্যবাদী। অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা প্রভাবিত হওয়াকে মানুষ পছন্দ করে না। ষ তার নিজের ধ্যানধারণার দ্বারা পরিচালিত হয় । প্রত্যেক মানুষ প্রতিটি ব্যক্তি একটি স্বাতন্ত্র্য অবস্থান রক্ষা করে চলেছে। একজনের সাথে অন্যজনের কোনো মিল নেই ।
৪. নিরাপত্তাপ্রত্যাশী : হবসের মতে, মানুষ সবসময়ই নিরাপদ থাকতে পছন্দ করে । এটি তার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য যে, সে সবসময় নিজেকের রক্ষা করার চেষ্টা করে। যে কাজ ঝুঁকিপূর্ণ বা মরণঘাতী এমন সব কাজ সে সবসময় এড়িয়ে চলে ।
৫. নতুনত্বের প্রতি আগ্রহী : মানুষের অন্যতম আরেকটি প্রকৃতি হচ্ছে মানুষ সর্বত্র নতুন কিছু করতে চায়। সে সবসময় পুরানোকে পরিহার করার চেষ্টা করে এবং নতুন জিনিসের প্রতি আগ্রহী হয় । হবস মানব প্রকৃতি সম্পর্কে তাই বলেন ।
৬. স্বাধীনতাকামী : হবস বলেন, যদিও প্রত্যেকটি মানুষকে তার নিজস্ব রাষ্ট্রের নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়, কিন্তু এর মানে এই নয় যে সে পরাধীন থাকতে পছন্দ করে। স্বভাবগতভাবে সে মুক্তিপ্রবণ। সে সর্বত্র স্বাধীন থাকতে চায়। পরাধীন জীবন তার কাম্য নয় তাই বলা যায়, মানুষ স্বাধীনতাকামী।
৭. আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দেশ্য: হবস মনে করতেন, আকাঙ্ক্ষার মূল লক্ষ্য ক্ষমতা । আকাঙ্ক্ষা দ্বারা যে সুখ হয় মানুষ তা প্রতিনিয়ত ধরে রাখতে চায় এবং এ কারণেই ক্ষমতার প্রতি তার লোভ বা মোহ জন্ম নেয় ক্ষমতার জন্য তাই সে আজীবন লড়াইয়ে লিপ্ত হয় এবং অব্যাহতভাবে এ লড়াই অক্ষুণ্ণ রাখে। হবস মানুষের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বলেন, “A perpetual and restless desire of power that cease only in death. ”
৮. কল্যাণ ও অকল্যাণ : হবস বলেন, যে জিনিসের কারণে ‘উদ্যম’ গঠিত হয় সেই জিনিসের প্রতি ‘উদ্যমের’ আকর্ষণ বা বিকর্ষণের ফলে আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা জন্মে যে জিনিসের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বা বিতৃষ্ণা কোনোটি জন্মে না, বরং উদাসীনতার মনোভাব সৃষ্টি হয়,
হবস সেটাকে ‘ঘৃণা’ হিসেবে গণ্য করেন মানুষ যে জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে হবসের মতে সেটি তার জন্য কল্যাণকর, আর যে জিনিসের প্রতি মানুষ বিতৃষ্ণা অনুভব করে তা তার জন্য অকল্যাণকর।
তবে কল্যাণ ও অকল্যাণের চূড়ান্ত কোনো অবয়ব নেই তা লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন মানুষের নিকট নানাভাবে প্রতিভাত হতে পারে। অতএব হবসের নীতিশাস্ত্র অতি প্রাকৃতিক কোনো বিষয় নয়। এটা পুরোপুরি প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক বস্তু ।
৯. সংঘর্ষে লিপ্ত : হবস বলেছেন যে, প্রকৃতি মানুষকে এমনভাবে তৈরি করেছে যে, দেহ ও মনের কার্যকলাপের দিক থেকে সব মানুষ মোটামুটিভাবে সমান। এ সমতা সত্ত্বেও মানুষ মনে করে যে, সে অন্যের চেয়ে বলবান বা মানসিক দিক থেকে সচেতন বা মেধাবী। হবস তা স্বীকার করেন না।
তিনি বলেছেন যে, মনের ব্যাপারে সমতা লক্ষ করা গেলেও শারীরিক শক্তির ক্ষেত্রে এ সাম্য ততখানি পরিলক্ষিত হয় না। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মানুষ বিচক্ষণ হয়ে ওঠে। ফলে মানুষ ভাবে সে অন্যের চেয়ে জ্ঞানী অন্যদিকে, যেহেতু সবাই সম ক্ষমতাসম্পন্ন বলে ভাবে তাই সবাই একই জিনিস পেতে চায়। এর ফলে মতবিরোধ, সংঘর্ষ, শত্রুতা এবং কলহের উদ্ভব ঘটে।
১০. শান্তিরক্ষা প্রাথমিক: অনুভূতির কারণে মানুষ মনে করে যে, অন্যকে আক্রমণ ও অন্যের সম্পদ হরণ করার মধ্যে তার আত্মপ্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নির্ভর করে। তাই সমাজে নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য বেশি প্রয়োজন মানব মনে ভয়ভীতি এবং বিরূপতার সঞ্চার করা।
কিন্তু পরবর্তীতে মানুষ যখন নিজের যুক্তি দিয়ে বিচার করে তখন তার মধ্যে এর বিপরীত ধারণা জন্মলাভ করে। এ ধারণা পারস্পরিক সংঘাতের নয়, বরং পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা অর্জনের ধারণা।
১১. উপযোগবাদী মনোভাবাপন্ন : হবস বলেন যে, মানুষ সর্বদা আনন্দ উপভোগে আগ্রহী এবং নিরানন্দ বা দুঃখ বিমুখী। এজন্য সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা দ্বারা মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
১২. স্বার্থপর : হবস বিশ্বাস করেন যে, মানুষ মাত্রই স্বার্থান্বেষী তাদের সব আবেগ অনুভূতি স্বার্থকে ঘিরে আবর্তিত হয়। স্বার্থহানি ঘটলে মানুষ ব্যথিত হয়। স্বার্থ ব্যতীত মানুষ কোনো কাজ করতে এমনকি চিন্তা পর্যন্ত করতে উজ্জীবিত হয় না ।
১৩. স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র : হবস মানুষকে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মানুষ আজীবন কর্মব্যস্ত থাকে। একমাত্র মৃত্যু মানুষের কর্মব্যস্ততার অবসান ঘটিয়ে থাকে ।
১৪. যুক্তিপ্রবণ : হবসের মতে, মানুষ যুক্তিবোধসম্পন্ন প্রাণী। ৯ যুক্তিবোধ মানব প্রকৃতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর দ্বারাই মানুষের কর্মকাণ্ড সংঘটিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানব প্রকৃতি সম্পর্কিত হবসের ধারণাটি অত্যন্ত মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। হবসের মানব প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, মানুষ মূলত স্বার্থপর।
তার সব আবেগ অনুভূতি, কর্মপ্রয়াস ও সাধনা কেবল তার অহংকারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়৷ মানব প্রকৃতি সম্পর্কে হবসের ধারণাটিতে কিছু ইতিবাচক উপাদান লক্ষ করা যায়, যা পরবর্তীতে দার্শনিকগণ তাদের দর্শনের সহায়ক হিসেবে গ্রহণ করেন ।
০২. টমাস হবসের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি আলোচনা কর।
অথবা, হবসের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : টমাস হবস ছিলেন একজন বস্তুবাদী দার্শনিক। তিনি তার রাজনৈতিক দর্শন যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত করেন। তার বিখ্যাত ‘লেভিয়াথান’ গ্রন্থ রাজনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে এক অমূল্য সংযোজন।
রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে হবস হচ্ছেন, একমাত্র ব্যক্তি, যিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা রাষ্ট্রতত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞানই নয়, তার সমস্ত দার্শনিক চিন্তার ভিত্তি বৈজ্ঞানিক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত তার এই বৈজ্ঞানিক নীতিই বস্তুবাদ বলে খ্যাতি লাভ করে।
টমাস হবসের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ : হবস তার দর্শনের সত্যতা প্রমাণের জন্য ইতালীয় দার্শনিক ম্যাকিয়াভেলির ন্যায় ইতিহাসের সাহায্য নেননি। তিনি সমকালীন বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে কাজ করেছেন তিনি মনে করেন, বিশ্বে প্রাকৃতিক ও সামাজিক যেসব ঘটনাই ঘটুক না কেন, তার মূলে কাজ করেছে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ ।
টমাস হবসের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের বৈশিষ্ট্য : হবসের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের বেশকিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আলোকপাত করা হলো- নিম্নে সেগুলো
১. গতিময়তা : হবস মনে করেন, যা কিছুর অস্তিত্ব আছে তাই বস্তু ও তা পরিবর্তনশীল এবং গতিময়। পদার্থবিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বিশ্বের সমস্ত বস্তু গতিময়। আবির্ভাব ও তিরোভাব আবর্তিত হচ্ছে।
গ্রহজগতে এ গতিময়তা আরও প্রকট। এ গতিতত্ত্ব তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন। গতিকে কেন্দ্র করে তিনি দর্শনকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। প্রথমত, ইন্দ্রিয়গোচর বা ভৌত ঘটনা।
একে আমরা পদার্থবিদ্যা ও জ্যামিতি বলি । দ্বিতীয়ত, শারীরবিদ্যা ও মনোবিদ্যা। ব্যক্তির জ্ঞান, অনুভূতি বা চিন্তা দ্বিতীয় স্তরের সঙ্গে যুক্ত। তৃতীয়ত, কৃত্রিম সংগঠন, এটাই হলো রাষ্ট্রীয় সংগঠন ।
২. মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি : টমাস হবস তার বস্তুবাদে মনতাত্ত্বিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। আর এ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হলো তিনি মানুষের সব আবেগ ও অনুভূতিকে আকর্ষণ ও বিকর্ষণের দুটি মূলনীতিতে পর্যবসিত করে। হবসের মতে, মানুষ যার দ্বারা আনন্দ লাভ করে তাই কামনা করে। আর যার দ্বারা দুঃখ ও বেদনা আসে তা সর্বদা পরিহার করার চেষ্টা করে ।
৩. ধর্মনিরপেক্ষতা : হবস তার রাজনৈতিক দর্শন সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ তত্ত্বটি দ্বারা বিশ্লেষণ করেন। সেদিক থেকে তার বস্তুবাদিতায় ধর্মনিরপেক্ষতা লক্ষ করা যায়। কেননা তিনি একজন বস্তুবাদী দার্শনিক। তাই তিনি বাস্তব ছাড়া অবাস্তবে বিশ্বাস করতেন না ।
৪. পরীক্ষানিরীক্ষা : মধ্যযুগে এটা বিশ্বাস করা হতো যে, ঈশ্বর মানুষের অন্তরে যে সহজাত ধারণা প্রদান করেছেন তা থেকেই প্রকৃত জ্ঞানলাভ করা সম্ভব। কিন্তু হবস এটাকে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পরীক্ষানিরীক্ষা মাধ্যমেই বাস্তব জ্ঞানলাভ করা সম্ভব।
৫. মনোবিজ্ঞান : হবস তার রাজনৈতিক দর্শনে মনোবিদ্যার প্রয়োগ ঘটান। তার রাষ্ট্রদর্শনে রাজনীতি ও মনোবিদ্যার বিশেষ সম্পর্ক লক্ষ করা যায়।
৬. জ্যামিতিক পদ্ধতি : রাষ্ট্রদর্শন বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে গতিতত্ত্ব ছাড়া তিনি জ্যামিতির সাহায্য নিয়েছেন। জ্যামিতি তার দর্শনে সর্বাধিক প্রাধান্য লাভ করেছে। এ সম্পর্কে অধ্যাপক ম্যাকগভার্ন বলেন, বস্তুতপক্ষে গণিতশাস্ত্রের প্রতি হবসের অত্যাগ্রহ তাকে সম্পূর্ণভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
- আরো পড়ুন:- (PDF ফ্রি) অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:- অনার্স সেন্ট টমাস একুইনাস: অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর PDF ফ্রি
- আরো পড়ুন:- অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:- (ফ্রি PDF) অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক রচনামূলক প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
- আরো পড়ুন:-অনার্স এরিস্টটল: রাজনৈতিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (ফ্রি PDF)
তার নিকট জ্ঞান ও পরিমাপ প্রায় অভিন্নার্থক দুটি শব্দ। তিনি জ্যামিতির দ্বারা বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং অনুভব করেন যে, অন্যসব বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে জ্যামিতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিৎ। রাজনীতির ওপর লিখিত তার মহাগ্রন্থ ‘লেভিয়াথানের’ সঙ্গে জ্যামিতি সম্পর্কিত পাঠ্যপুস্তকের প্রভূত সাদৃশ্য বিদ্যমান ।
৭. গতিশীলতা : হবসের মতে, পৃথিবীতে যা কিছু বিদ্যমান সবই জড়বস্তু । আর জড়বস্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু পরমাণু দ্বারা গঠিত। এসব পরমাণু স্থিতিশীল নয় । তাদের মধ্যে সর্বত্র গতিশীলতা বিদ্যমান ।
৮. গাণিতিক পদ্ধতি : হবসের বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাণিতিক পদ্ধতি। তিনি তার দর্শনে গাণিতিক পদ্ধতির চর্চা করেন। হবসের রাজনৈতিক দর্শনে জ্যামিতির পাশাপাশি গাণিতিক পদ্ধতির স্থানটিও উল্লেখযোগ্য ছিল।
৯. পদার্থবিদ্যা : টমাস হবস তার বস্তুবাদে আরেকটি বিষয়ের ওপর বেশি প্রাধান্য দেন তা হচ্ছে পদার্থবিদ্যা। তিনি মে করেন, পৃথিবীতে পদার্থ ছাড়া বাকি সবকিছু অবাস্তব, যা পদার্থ নয় তা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অংশ নয় ।
১০. অধিবিদ্যাকে অস্বীকার: হবস ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণ স্বীকার করেন মাত্র, কিন্তু সহজাত ধারণাকে তিনি বিশ্বাস করেন না। অর্থাৎ হবস অধিবিদ্যাকেও অস্বীকার করেন।
১১. অবরোহী পদ্ধতি : বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অবরোহী পদ্ধতি। হবসের অবরোহী পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক নীতি তাঁকে তার পূর্বসূরিদের চেয়ে স্বতন্ত্র করেছে।
তিনি আরোহী পদ্ধতি পরিত্যাগ করে অবরোহী পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। হবসের রাজনীতি বিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয় অত্যন্ত সহজ অনুমানকে ভিত্তি করে আর উপস্থাপিত হয়েছিল জটিলতার মধ্য দিয়ে। হবস তার রাষ্ট্রদর্শন বিজ্ঞান ও যুক্তিকে কেন্দ্র করে আলোচনা করে গেছেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, টমাস হবস হচ্ছেন সব বস্তুবাদীদের নেতা। তিনি সর্বপ্রথম তার যুগের বিকাশমান বস্তুবাদী বিজ্ঞানের ধারাকে মানবজীবন বিশ্লেষণে প্রয়োগ করেছেন।
এটি হবসের অনন্য অবদান বলে সর্বকালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নিকট স্বীকৃত হয়ে আসছে। অধ্যাপক সেবাইন হবসের এই তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ বলে অভিহিত করেছেন ।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ফ্রি পিডিএফ ফাইল এখান থেকে ডাউনলোড করে নিন। PDFডাউনলোড অনার্স রাজনৈতিক হবস: রচনামুলক প্রশ্নোত্তর