HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | ভাষণ ও বক্তব্য ১৬-২০ | PDF Download : বাংলা দ্বিতীয় পত্র হতে গুরুত্বপূর্ণ সব ভাষণ ও বক্তব্য গুলো আমাদের এই পোস্টে পাবেন ।
প্রিয় ছাত্র ছাত্রী বন্ধুরা আল্লাহর রহমতে সবাই ভালোই আছেন । এটা জেনে আপনারা খুশি হবেন যে, আপনাদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়টির গুরুপূর্ণ কিছু ভাষণ ও বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি ।
সুতরাং সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আর এইচ এস সি- HSC এর যেকোন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সকল সাজেশন পেতে জাগোরিকের সাথে থাকুন।
HSC ● বাংলা দ্বিতীয় পত্র ● বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
১৬. ‘নারী নির্যাতন ও পণপ্রথা বিরোধী’ সেমিনারে বক্তব্য রাখার জন্য একটি লিখিত বক্তব্য/ভাষণ প্রস্তুত কর।
অথবা, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখার জন্য একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, পণপ্রথা’র কুফল আলোচনা শীর্ষক সেমিনারে তোমার বক্তব্য পেশ করার জন্য লিখিত ভাষণ প্রস্তুত কর।
অথবা, ‘যৌতুকের অভিশাপ’ বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা কর।
শ্রদ্ধেয় সভাপতি, আগত সম্মানিত বিশেষ অতিথি, অতিথিবৃন্দ ও সমবেত সুধী, আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ভয়াবহ রূপ নিয়ে দেখা দিয়েছে নারী নির্যাতন। একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে যখন বিশ্বে দিকে দিকে নারীমুক্তির আন্দোলন নতুন মাত্রা লাভ করেছে, দিকে দিকে জয়ধ্বনি ঘোষিত হচ্ছে নারীমুক্তির, ঠিক তখনই বাংলাদেশের সংবাদপত্রের পাতায় প্রতিদিন ছাপা হয়ে চলেছে নারী হত্যাসহ নারী নির্যাতনের এক কলঙ্কিত ইতিহাস।
সুধীবৃন্দ,
বাঙালি সমাজে এক অতি প্রাচীন দুরারোগ্য ব্যাধি পণপ্রথা। কৌলীন্য প্রথা তাকে করে তোলে ভয়াবহ। মানুষের স্বার্থ, সুখপরায়ণতা, লোভ লালসা ইত্যাদি চরিতার্থতার জন্য নর-নারীর বিবাহের মতো একটি শুভ সামাজিক অনুষ্ঠান পরিণত হলো পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের বাজারে। বিবাহের দাঁড়িপাল্লায় পুরুষ নামক চিড়িয়ার বাঙালি পণ্যের ওজন অধিক, নারী জাতীয় পণ্যের ওজনের তুলনায়। তাই ভারসাম্য রক্ষার খাতিরে দাঁড়িপাল্লায় নারীর দিকটি ভরিয়ে দিতে হয় অপরিমেয় অর্থ ও পণ্যের বহুমূল্যমানের সামগ্রী দিয়ে।
এ শুধু নারীত্বের অপমান নয়, গোটা সমাজের অপমান। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে এসিড নিক্ষেপ করে নারীকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ভয়াবহ পরিণতির দিকে। বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাবে উঠতি বয়সের ছেলেদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছে মেয়েরা। সর্বোপরি আছে ফতোয়াবাজদের কুপ্রথা, যা নারীজাতিকে করছে কলঙ্কিত।
সুধীবৃন্দ,
নারীজাতির প্রতি এ নিষ্করুণ নির্যাতন বন্ধ করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জার আর সীমা থাকবে না। এমনকি জাতীয় অগ্রগতিও দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তাই অচিরে শুধু কঠোর আইন প্রণয়নই নয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও নানা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যস্থতায় এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি সমাজকে অর্থ লোভীদের কবল থেকে মুক্ত করে তাকে প্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত করতে হবে। তবেই নারী নির্যাতন ও পণপ্রথার চিরাবসান ঘটবে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
১৭. সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ ও বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ভাষণ তৈরি কর।
শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত শ্রোতামন্ডলী আসসালামু আলাইকুম,
আজ আমরা এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের সমাজের চারদিকে আজ বিশৃঙ্খলা। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে অস্থির সময়। সন্ত্রাসী কর্মকাÐে দেশের সকল উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। বিদেশিরা এদেশে পুঁজি বিনিয়োগে ভয় পাচ্ছে। ফলে দেশের বেকার সমস্যা দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক মেরুদÐ ভেঙে গেছে। বিশ্বের দরবারে আজ বাংলাদেশ এক নম্বর দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।
চাঁদা না দিলে তারা ছেলেমেয়ে কর্তাকে জিম্মি করে নিয়ে যায়, হত্যার হুমকি দেয়। থানা পুলিশ করতে গেলে আরও সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক রাজনৈতিক নেতা কিংবা কোনো কোনো স্থলে টাকা দিয়ে মীমাংসাও করে দেওয়া হয়।
যেমন-
নতুন জমি বা বাড়ি কিনতে গেলে চাঁদা দিতে হয়।
শিল্পকারখানা স্থাপন করতে গেলে চাঁদা দিতে হয়।
সরকারের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হলে যিনি কাজটি নিয়েছেন তাকে ঐ এলাকার চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হয়। এ চাঁদাবাজির জন্য অনেক সময় মারামারি, হানাহানি হয়।
আমাদের সমাজে যত সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে এর প্রায় প্রতিটির পেছনে আছে চাঁদাবাজি। সুতরাং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে হলে যা যা করতে হবে তা হলো-
আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একের বিপদে অন্যদের ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।
সন্ত্রাসীদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করার জন্য নিকটস্থ থানার সহযোগিতা নিতে হবে।
প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে নিরাপত্তা কর্মী রাখতে হবে।
সুতরাং উল্লিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করলে আমরা সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে পারব। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
১৮. “খাদ্যে ভেজাল : তার কারণ ও প্রতিকার” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে একটি ভাষণ তৈরি কর।
“খাদ্যে ভেজাল : তার কারণ ও প্রতিকার” শীর্ষক আলোচনা সভা-২০২১-এর শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত সুধীসমাজ আমার আন্তরিক প্রীতি ও অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
খাদ্য মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অন্যতম। মানুষ খাওয়ার জন্য না- একথা সত্য হলেও বেঁচে থাকতে হলে খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে তা হতে হবে ভেজালমুক্ত। তাই আমাদের একটি ¯েøাগান হোক “জীবনের প্রয়োজনে চাই ভেজালমুক্ত খাদ্য।”
প্রিয় সুধী,
আমাদের এই সমাজে সৎ মানুষ যেমন আছে, তেমনি অসৎ মানুষও আছে। বর্তমান সময়ে অসৎ মানুষের সংখ্যা এবং তাদের দৌরাত্মা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তাদের প্রচÐ প্রতাপে সমাজব্যবস্থার রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকেছে বিষবাষ্প। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে ‘খাদ্যে ভেজাল’ একটি অন্যতম সমস্যা। একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ ও রাতারাতি অধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে খাদ্যকে অখাদ্যে পরিণত করে যাচ্ছে।
তারা খাদ্যকে মুখরোচক করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে, ফলে যার বিরূপ প্রভাব পড়ে দীর্ঘদিন পরে। যেমন— ফাস্ট ফুড নামে যে সংস্কৃতি আমাদের সমাজে শুরু হয়েছে তার প্রভাব পড়ছে শিশু ও তরুণদের ওপরে। তারা এগুলো সুস্বাদু খাবার হিসেবে খেলেও পরবর্তীতে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় একই ধরনের সমস্যা তৈরি করছে।
প্রিয় সুধীবৃন্দ,
আমরা বাজারে মাছ কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়ি, মাছটি হয়তো বিষাক্ত ফরমালিন দিয়ে ভাজা করে রাখা হয়েছে এই সন্দেহে। কাঁচা তরকারির ক্ষেত্রে একই সমস্যা, বিভিন্ন সুস্বাদু ফল পাকানো হয় বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে মিষ্টিতে ব্যবহার করা হয় গাড়িতে ব্যবহারের জ্বালানি, খাবার তেলে বিদ্যুৎ প্লান্টে ব্যবহারের রাসায়নিক পদার্থ। সর্বত্র ভেজাল। এমনকি জীবন রক্ষায় যে ওষুধ তাও ভেজালের আওতামুক্ত নয়। খাদ্যে ভেজালের যত সমস্যা তা থেকে উত্তরণের জন্য এখন থেকেই আমাদের সচেতন হওয়া দরকার। সেই লক্ষ্যে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে–
প্রথমত, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বড় বড় হাটবাজারে পরীক্ষাগার স্থাপন।
দ্বিতীয়ত, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শহর থেকে গ্রামে সর্বত্র অভিযান পরিচালনা।
তৃতীয়ত, বাণিজ্যিক প্রয়োজনে যে সকল প্রতিষ্ঠান খাদ্য উৎপাদন করে তাদের প্রতি ইঝঞও-এর আরও সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
চতুর্থত, ইঝঞও-কে আরও ক্ষমতা প্রদান করা।
পঞ্চমত, ভেজাল প্রমাণের সাথে সাথে প্রশাসনিকভাবে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক থেকে শুরু করে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দ্রæত বিচার আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।
ষষ্ঠত, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ভেজালের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার অভিযান, সভা ও সেমিনার করা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে র্যালি, সচেতনতা অভিযান প্রভৃতি পরিচালনা করা।
প্রিয় বন্ধুগণ!
মাঝে মধ্যে দু-একটি সভা আর বক্তব্য দিলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ মনে করলে আমাদের এ সভার ফলাফল হবে শূন্য। আমাদের আরও সংগঠিত হতে হবে। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে ব্যক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে সমাজ এবং বৃহৎভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই আমাদের এ জাতীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সবার সুস্থ দেহ ও সুন্দর জীবন কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ।
১৯. দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি মঞ্চ ভাষণ প্রস্তুত কর।
অথবা, দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার শীর্ষক আলোচনা সভার প্রধান বক্তা হিসাবে একটি ভাষণ তৈরি কর।
অথবা, “দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজন মূল্যবোধের পরিবর্তন” শীর্ষক সেমিনারের উদ্দেশ্যে একখানি মঞ্চ ভাষণ প্রস্তুত কর।
‘দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন’ শীর্ষক আলোচনা সভার শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও সমবেত সুধীমÐলী সবাইকে শুভেচ্ছা, অভিন্দন।
দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি, জাতীয় উন্নতির প্রধান অন্তরায়। ফলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা দুর্নীতির কারণে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে বাংলাদেশ পরপর কয়েকবার বিশ্বে দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থান করেছে।
সুধীমন্ডলী,
বাংলাদেশের অধিকাংশ অফিস-আদালত দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। ঘুষ ছাড়া কোথাও কোনো কাজ হয় না। মাসের পর মাস ফাইল আটকে রাখা হয় ঘুষের আশায়। শুধু সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আজ ঘুষ-দুর্নীতিতে মারাত্মকভাবে আসক্ত।
দুর্নীতির কারণে থানায় আইনি সেবা পাওয়া যায় না; আদালতের পাওয়া যায় না ন্যায়বিচার। তাই অপরাধীরা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপরাধযজ্ঞ। অন্যদিকে আমরা যারা নিরীহ জনগণ, পাচ্ছি না সঠিক আইনি সহায়তা, তদুপরি ঘুষ না দেওয়ার অপরাধে হয়রানির শিকার হচ্ছি।
বর্তমানে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারে বিরাজ করছে দুর্নীতি। একদিকে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে ইচ্ছানুযায়ী বাড়িয়ে চলছে পণ্যের দাম, অন্যদিকে দোকানিরা ওজনে কম দিচ্ছে, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করছে। খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণে কোনো নীতিমালা না মেনে অধিক মুনাফার লোভে অর্থলিপ্সু ব্যবসায়ীরা খাদ্যে ভেজাল দিয়ে দুর্নীতির চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে চলেছে।
প্রিয় সুধী,
বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রেও দুর্নীতি মারাত্মক আকার ধারণ করছে। স্কুল-কলেজে ঠিকমতো লেখাপড়া করানো হয় না। শিক্ষকরা ক্লাসে সুষ্ঠুভাবে পাঠদান না করে প্রাইভেট বা কোচিং ব্যবসায় মেতে উঠেছেন।
সরকারি সেবা সংস্থাগুলোতে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্পপতি তথা পুঁজিপতিরা সঠিক হারে আয়কর প্রদান করেন না। তারা আয়ের সঠিক হিসাব গোপন করে লাখ লাখ টাকার আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন। তাদের এসব দুর্নীতিতে ঘুষের বিনিময়ে সহায়তা করছেন একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ আয়কর কর্মকর্তা।
উপর্যুক্ত দুর্নীতির করাল গ্রাসে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা আজ হুমকির মুখে। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধ করা না গেলে সমাজ তথা দেশের উন্নতি আদৌ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আমাদেরও উচিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।
তাই আর দেরি না করে আসুন আজই আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলি।
২০. শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আমাদের করণীয় বিষয়ে একটি ভাষণ তৈরি করো।
‘শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ, বিজ্ঞ আলোচকবৃন্দ, উপস্থিত অভিভাবকমÐলী ও শিক্ষার্থী বন্ধুরা- সবার প্রতি রইল আমার সশ্রদ্ধ সালাম।
আপনারা জানেন শিক্ষিত ব্যক্তি একটি দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। তার পাশাপাশি সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবন গঠনের জন্য সুশিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার নানা পর্যায়ের নানামুখী সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো পর্যন্ত আমরা শিক্ষাব্যবস্থার পর্যাপ্ত উন্নতি সাধন করতে পারিনি।
শিক্ষা মানবজীবনে কেন প্রয়োজন, সুশিক্ষার তাৎপর্য কী এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন এই মুহূর্তে কতখানি প্রাসঙ্গিক ইত্যাদি বিষয়ে এই মুহূর্তে বিস্তারিত আলোচনা করা নিষ্প্রয়োজন। সভায় আগত সকলেই এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল আছেন বলেই আমার বিশ্বাস।
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | ভাষণ ও বক্তব্য ৫-১০ | PDF Download
HSC | বাংলা দ্বিতীয় পত্র | দিনলিপি লিখন ১-১০ | PDF Download
সুধীবৃন্দ,
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান অবস্থার দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। শিক্ষার একটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা হলো, ‘যা অর্জিত হলে মানুষের আচরণের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটবে।’ অর্থাৎ মানুষ সত্যিকারের মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। অথচ আমাদের বর্তমান শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো কাঙ্ক্ষিত পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করা।
এটি মানবজীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও শিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্য কেবল এতেই সীমাবদ্ধ থাকলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কতখানি সহায়ক তা গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থার এই দুরবস্থার জন্য বেশ কিছু বিষয় দায়ী। শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ পঠন পাঠনের পক্ষে আদর্শ হয়ে উঠতে পারেনি। অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা উন্নত শিক্ষার অন্যতম অন্তরায়।
তাছাড়া জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের যথেষ্ট ইতিবাচক মানসিকতার অভাবকেও এ অবস্থার জন্য দায়ী করা যায়।
ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের লক্ষ্যেই আমাদের এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে।
আমরা সকলেই জানি যে, বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার অনেকখানি আধুনিকায়ন ঘটেছে, শিক্ষাপদ্ধতি সৃজনশীল রূপ লাভ করেছে। ফলে শিক্ষার সুফল লাভ করার প্রশস্ততর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে।
সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
পাঠ্যবইগুলো অত্যন্ত মনোযোগের সাথে পড়ার পাশাপাশি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে বই থেকে অর্জিত জ্ঞানের সংমিশ্রণ ঘটাতে হবে। বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় সংবলিত বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। মুখস্থবিদ্যার প্রতি ঝোক কমিয়ে বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। সর্বোপরি পড়াশোনাকে উপভোগ করার চেষ্টা করতে হবে।
সম্মানিত সুধী,
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক ও অভিভাবকদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের বোঝাপড়া যত ভালো হবে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানলাভে আগ্রহ ততই বাড়বে। নতুন সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষকদের ভালোভাবে জানতে হবে এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় শিক্ষার্থীর সৃজনশীল প্রতিভার যেন যথাযথ মূল্যায়ন হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
আর এ সব কিছুর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ প্রদানের দিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত সন্তানের পড়াশোনার খোজখবর রাখা এবং তাকে উৎসাহ প্রদানে সচেষ্ট হতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, পাঠক্রমের বাইরের বই নির্বাচন, বিজ্ঞানবিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ ইত্যাদি নানা বিষয়ে সন্তানকে সাহায্য করতে হবে।
সব শেষে বলতে চাই, আমাদের বর্তমান শিক্ষানীতির আওতায় শিক্ষার্থীদের উন্নত পদ্ধতিতে যেসব উন্নত সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত যুগোপযোগী ও জীবনমুখী। কিন্তু শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে এই শিক্ষানীতিকে সর্বাত্মকরূপে কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সকলের সচেতন প্রয়াসেই শিক্ষার মানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।
আমাদের সাথে ইউটিউব চ্যানেলে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং আমাদের সাথে ফেইজবুক পেইজে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন। গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।